অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৪

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৪
লিজা মনি

সকালটা একদম শান্ত। থাকে না কোনোরকম কোনো হৈচৈ।বাতাস আসে নিঃশব্দে, নিঃশ্বাস ফেলার মতো কোমলতায়। রাতের গাঢ় অন্ধকার যখন ক্লান্ত হয়ে জেগে ওঠা পাতার উপর থেকে পিছলে যায়। ঠিক তখনই দিনের প্রথম আলো কারো স্নেহমাখা আঙুল ছুঁয়ে যায় জানালার কাচ। পাখিরা ডাকে না প্রথমে। প্রথমে ডাকে বাতাস। একটা হালকা ঠাণ্ডা হাওয়া এসে পর্দার কোণ ছুঁয়ে উড়ায় । মনে হয় আকাশ তার চুল খুলে ঘরের ভিতর ঢুকছে।
তারপর একে একে পাখিরা কিচিরমিচির শুরু করে তাদের স্বর ধানের গন্ধে ভেজা গানের মতো।
সূর্য তখনও পুরো উঠেনি। দিগন্তে সে লুকিয়ে আছে রক্তিম আলোর পেছনে। আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে কমলা, গোলাপি আর হালকা সোনালি রঙের মায়া।

কেউ তুলির আঁচড়ে সকালটাকে এঁকে দিচ্ছে নতুন করে। ঘুমন্ত শহর ধীরে ধীরে জেগে ওঠে।
মেঝেতে শুয়ে থাকা রোদ টানতে টানতে উঠে যায় দেয়ালের কোণে। ছাদ গরম হতে শুরু করে।
গাছের পাতাগুলো আলোর ওজনে জ্বলে উঠে।
আর ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে একরাশ উজ্জ্বলতা।
মনে হয় আজকের সকালটা শুধু আলো না এক বিরাট আশা নিয়ে এসেছে। কোনো একটা জানালা খুলে যায় ধীরে। কেউ এক কাপ চায়ের ধোঁয়া মিশিয়ে দেয় সকালের বাতাসে। আবার কোনো মা তার শিশুকে ঘুম ভাঙাতে চুলে বিলি কেটে দেয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কোনো প্রেমিকা দাঁড়িয়ে থাকে বারান্দায়, উষ্ণতা খোঁজে বাতাসে। এভাবেই সকালটা আসে প্রতিদিন।
না শব্দ করে, না হুঙ্কার দিয়ে। সে আসে কোমলতায়, ভালোবাসায়, জেগে থাকা একটা নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি হয়ে। পুরো জায়গায় সূর্যের তেজ আছড়ে পড়ে। ইয়ানা বারান্দার রেলিং – এ হেলান দিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন।
রুয়ানা রুমে ডুকে দেখে ইয়ানা বিছানায় নেই। ইয়ানাকে দেখতে না পেয়ে কিছুটা অবাক হয়ে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে তাকায়। ওয়াশরুম দেখার জন্য সামনে এগিয়ে আসে। চোখের সামনে ভেসে উঠে ভাঙ্গা কাচ। রুয়ানা মেঝে থেকে চোখ সরিয়ে ভাঙ্গা জায়গায় তাকায়। সাথে সাথে দুই ঠোঁট ফাক করে হা করে তাকায়। দেয়ালের আয়না ভেঙ্গে আছে। বেসিনের দিকে তাকাতে চোখ আরও বড় বড় হয়ে যায়। বেসিন উপরের অংশ হেলে গিয়েছে। রুয়ানা অবাক হয়ে কোমরে হাত দিয়ে ইয়ানাকে খুঁজতে থাকে। বেলকনির কাছে গিয়ে কপাল কুচকে তাকায়। ইয়ানা রেলিং -এ হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রুয়ানা দ্রুত ইয়ানার কাছে গিয়ে হালকা ধ্বাক্কা দিয়ে বলে,,,,

“” আপু!, এই আপু। এখানে কেনো শুয়ে আছো রুম রেখে?
রুয়ানার বার বার কন্ঠধ্বনি ইয়ানার কানে পৌছাতেই হালকা পিটপিট করে তাকায়। ঘুমের রেশ এখন ও কাটে নি। চোখ দুটি অসম্ভব ফুলে আছে। কান্না নাকি ঘুমের কারনে সেটা বুঝা মুশকিল। ইয়ানাকে তাকাতে দেখে রুয়ানা পুনরায় আওড়ায়,,,,,,,
“” এই আপু এখানে শুয়ে আছো কেনো?
রুয়ানার প্রশ্নে ইয়ানার মস্তিষ্কের টনক নড়ে। রাতের ঘটনা মস্তিষ্কে পুনরায় হানা দেয়। উনি রাগারাগি করে চলে গিয়েছিলো। এরপর সে কাঁদতে কাঁদতে এখানেই ঘুমিয়ে পড়ে। ইয়ানাকে এমন স্তব্দ হয়ে থাকতে দেখে রুয়ানা পুনরায় জিজ্ঞাসা করে,,,,,

“” আপু কি হয়েছে তোমার? আর তোমার রুমের বেসিন আর আয়না ভাঙলো কিভাবে?
ইয়ানা ভাবনা থেকে বের হয়ে এসে রুয়ানার প্রশ্নে কেঁশে উঠে। বারান্দা থেকে দ্রুত রুমে ডুকে। বেসিন আর আয়নার অবস্থা দেখে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে।
লজ্জা আর বিরক্তি নিয়ে হাশঁফাশঁ করতে থাকে। ইয়ানা মনে মনে দাঁত পিষে বলে,,,
“” আরে ভাই অঘটন ঘটানোর যখন এত ইচ্ছে ছিলো তখন আমার বাপের বাড়িতে কেনো ঘটালি। নিজের বাড়িতে কি জায়গা – সম্পদের অভাব ছিলো। কন্ট্রোলল্যাস লোক!
ইয়ানাকে বিরবির করতে দেখে রুয়ানা ধাক্কা দিয়ে বলে,,,,

“” কি ভাবছো? এত বড় ঘূর্নিঝড় হলো কিভাবে? আর তোমার ঠোঁট এমন লাল হয়ে ফুলে আছে কেনো?
রুয়ানার প্রশ্ন ইয়ানা ভড়কে যায়। মাথায় ভালোভাবে উড়না দিয়ে গলা ঢেকে নেয়। ইয়ানা রুয়ানার দিকে তাকায়। এরপর মেকি হাসি দিয়ে নিজের শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বিছানায় বসে বলে,,,,,,
“” ওই রুই কাল রাতে হয়েছিলো কি? একটা অনেক বড় উড়ন্ত পোকা রুমে ডুকে গিয়েছিলো। বিছানায় ঘুমাচ্ছিলাম কিন্তু প্রচুর ডিস্ট্রাব করছিলো। পরে আর উপায় না পেয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। পোকাটাকে রুম থেকে বিদায় করার জন্য ওর সাথে যুদ্ধ শুরু করলাম। বুঝতেই পারছিস উড়ন্ত পোকা। তখন মারার জন্য বেসিনের কাছে যেতেই পোকাটা সরে যায় আর আঘাত গিয়ে লাগে আয়নার উপর। বেসিনের উপর নিজের ওজন রেখেছিলাম তাই হালকা হেলে,পড়েছে। পড়ে এক প্রকার যুদ্ধ করে রুম থেকে বের করলাম।
রুয়ানা বিশ্বাসের মাথা নাড়ায়। ইয়ানা রুয়ানার মুখের দিকে তাকায়। রুয়ানা পুনরায় কপাল কুচকে বলে,,,,,

“” বাহিরে কেনো ঘুমিয়েছিলে আপু?
ইয়ানা — ভালো লাগছিলো না তাই শেষ রাতে গিয়ে রাতের আকাশ দেখছিলাম। এরপর হুট করে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ি।
রুয়ানা — ওহহ আচ্ছা তাই বলো।
ইয়ানা — এইসব আব্বু বা আম্মুকে জানানোর দরকার নেই। আমি বেসিনটা ঠিক করে দিচ্ছি। আর আয়না এইটা পাল্টিয়ে অন্যটা লাগিয়ে দিচ্ছি।
রুয়ানা — তোমার ইচ্ছে আপু। আমি প্রাইভেটে যাচ্ছি। তোমাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য এসেছিলাম। আল্লাহ হাফেজ আপু।
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” আল্লাহ হাফেজ।

রুয়ানা চলে যায়। ইয়ানা অনেক বড় নিশ্বাস নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে। এর মধ্যেই মোবাইলের রিংটন বেজে উঠে। ইয়ানা বিছানা থেকে উঠে বেড সাইড থেকে মোবাইল তুলে নেয়। মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে মিরা নামটা ঝলঝল করছে। তার উপর আবার ভিডিও কল।
ইয়ানা ফোন রিসিভ করতেই সুমু আর মিরার মুখ ভেসে উঠে।
মিরা — আমার ভাসুরের এক মাত্র বউ আপনি কি আর বাড়িতে ফিরবেন না? কি ম্যাডাম আসবেন না নাকি?
মিরার কথায় ইয়ানা হালকা হেসে বলে,,,
” একদিন মজা করে বলেছিলাম তোমাকে আমার দেবরের বউ বানাব। কিন্ত কে জানত ভাগ্য আগে থেকেই লিখে রেখেছে। আর হয়ে ও গেলে।
সুমু– তর আরেকটা দেবর থাকার উচিত ছিলো ইয়ানা।
ইয়ানা — কেনো?
সুমু ঠাট্টা করে বলে,,,,,

“” আরুর লাইন হয়ে যেতে।
সুমুর কথায় মিরা আর ইয়ানা হেসে উঠে। ইয়ানা মজা করে বলে,,, ,
” হয়ে যাবে চাপ নিস না। এখন বল আজ ভার্সিটি আসবি না?
সুমু– আমি যাব না বাট মিরা যাবে।
ইয়ানা — চলে আয় সুমু। আমি আরু তাদের জানিয়ে দিচ্ছি।
ইয়ানার কথায় সুমু মুন খারাপ করে বলে,,,,,
“” সরি আজ যেতে পারব না। এই কয়েকদিনের ধকলে শরীরটা,নেতিয়ে পড়েছে। আরু তারা কেউ আর প্রতিনিয়ত ভার্সিটির ক্লাসে জয়েন হয় না।
মিরা — ইয়ানা তুমি চলে আসো, কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়া যাবে।
ইয়ানা — ওকে।
মিরা — তাহলে দেখা হচ্ছে আল্লাহ হাফেজ।
ইয়ানা ফোন কেটে দিয়ে মনিটরে অগ্নির ছবির দিকে তাকিয়ে রেখে দেয়। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে সোজা নিচে নেমে আসে।

আসাদ হোসেন সোফায় বসে খবরের পেপার পড়ছিলো। ইয়ানাকে দেখে প্রশ্ন করে,,,,,
“” অগ্নি বাবা কি এখন ও দেশে আসে নি ইয়ানা? ”
আসাদ হোসেনের প্রশ্নে ইয়ানা থমকে যায়। ধীর পায়ে আসাদ হোসেনের পাশে গিয়ে বসে আমতা আমতা করে বলে,,,,,
“” আব্বু উনি এসেছে। এখন তোমার শরীর কেমন লাগছে?
আসাদ হোস খবরের পেপার থেকে চোখ সরিয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” তাহলে বলো এখানে চলে আসতে। আমাদের বাড়িতে তো কখনো আসে নি।
ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আসাদ হোসেন বিচক্ষন নজরে বলে,,,,,
“” অগ্নি তো ভার্সিটির প্রফেস্যার ছিলো। এইটা ছেড়ে দিয়েছে কেনো?
ইয়ানা — এইটা উনার প্রফেশন নয় আব্বু।
আসাদ হোসেন গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,

“” তাহলে করতে গিয়েছিলো কেনো?
ইয়ানা আমতা আমতা করে বলে,,,,,
“” গোপন ছদ্দবেশী কাউকে খুঁজার জন্য এই প্রফেশনে গিয়েছিলো। কাজ শেষ তাই চাকরি ও শেষ। উনি ব্যবসায়ী আব্বু কোনো প্রফেস্যার নয়।
আসাদ হোসেন কিছুক্ষন গম্ভীর হয়ে বসে পুনরায় প্রশ্ন করে,,,,,
“” গোয়েন্দাগিরি কেনো করতে গিয়েছিলো? মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম মন্ত্রী প্লাস প্রফেস্যার ভেবে কিন্তু এখন হয়ে গেলো বিজন্যাসমেন।
ইয়ানা মেকি হাসি দেয়। উনি কোনো ভার্সিটির প্রফেস্যার নয় কিংবা কোনো বিজন্যাসমেন বা মন্ত্রী ও নয়। উনার এমন এক প্রফেশন যা শুনলে তোমাদের চোখের ঘুম চলে যাবে। মেনে নিবে তো তুমি? নাকি জানার পর শুরু হবে এক তান্ডব।

ভোর আলো কাউচ ভেদ করে জিম রুমে প্রবেশ করছে। জিমঘরটা ঘামে, জেদে, রাগে চারপাশ ভারী হয়ে উঠে। ইয়ানার কাছ থেকে এসেছে পর থেকে সে এখানে সময় ব্যয় করছে। বারে যায় নি তাই রাগ মেটাতে জিম করাটাকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নেয়।
অগ্নি পুশ আপ দিচ্ছিলো এমন সময় ইউভি, রায়ান, আরিফ ডুকে। অগ্নির পুরো শরীর ঘামে জবজব। ফর্সা জিম করা বডিতে ঘাম চিকচিক করছে। লম্বা চুলগুলোর পাশ দিয়ে ঘাম পড়ছে।
আরিফ অগ্নিকে দেখে বিরিবির করে বলে,,,,,
“” ক্রাশ খেলাম।

আরিফের কথায় ইউভি আর রায়ান ভ্রু নাচিয়ে তাকায়। তাদের তাকানো দেখে আরিফ থমথমে খেয়ে যায়। কথা টা তো সে মনের ভুলে বলে ফেলেছিলো। রায়ান এক ভ্রু নাচিয়ে বলে ,,,,,
“” কবে থেকে তর ছেলেদের প্রতি আকর্ষন বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করেছে আরিফ? এই তুই ঠিক আছিস তো? তর ইয়ে তে কোনো প্রবলেম দেখা দেয় নি তো আবার? সত্যিটা বলবি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে তাহলে।
রায়ানের কথায় আরিফ চুপসে যায়। সামান্য লজ্জা পেয়ে যায়। রায়ানের উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” এক লাইন কথাকে রচনা বানিয়ে দিচ্ছো ভাই। তেমন কিছুই নয়। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ড্যাশিং লাগছিলো তাই বলেছি। এ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে প্রশংসা করেছি অন্যকিছু নয়।
আরিফের থমথমে মুখ দেখে রায়ান শব্দ করে হাসে।
ইউভি তাদেরকে দেখে অগ্নি উঠে দাঁড়ায়। হাতের গ্লাবস খুলে একটা টাওয়াল হাতে নেই। এরপর শরীরের ঘাম মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে বলে,,,,,

” তরা এখানে কি করছিস?
রায়ান — বউ ছাড়া দেবদাসকে দেখতে এসেছি। কাল রাতে কোথায় গিয়েছিলি?
অগ্নি কাউচের উপর বসে পানি খেয়ে বলে,,,,,
“” নজরদারী করছিলি?
ইউভি — একদম না। শুধু ছাদে হাঁটছিলাম। এমন সময় দেখলাম অগ্নি চৌধুরি অধৈর্য হয়ে কোথাও যাচ্ছে। কাউকে মাটিতে পুতে ফেলতে গিয়েছিলি নাকি ইয়ানার কাছে গিয়েছিলেন বস??
অগ্নি টাওয়ালটা রেখে গম্ভীরতা নিয়ে বলে,,,,,,
“” ইয়ানা – টিয়ানা কাউকে চিনি না আমি।
অগ্নির স্বীকার উক্তিতে সবাই তাজ্জব বনে যায়। এই ছেলে নাকি ইয়ানাকে চিনে না? এত দিন কার জন্য এমন পাগলামি করেছে? মাথা ঠিক আছে এই ছেলের।
আরিফ অবাক হয়ে বলে,,,,,

“” ভাই আপনি আপনার বউকে চিনেন না?
অগ্নির সরল উক্তি —
“” নাহহ। কোনো বিয়াদপকে মনে রাখার কথা নাকি?
রায়ান সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,,,
“” তুই সত্যি ভুলে গিয়েছিস অগ্নি ? ওয়েট কর আমি তকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। তর বউ দেখতে পাঁচ ফুট তিন, গায়ের রং হলুদ ফর্সা, চুলগুলো ঘন কালো কোমর ছাড়িয়ে পড়েছে। চোখগুলো টানা টানা, ঠোঁটগুলো এত মোটা ও না আবার এত চিকন ও না। যখন বেচারী স্বামীর অত্যাচারের ভাগিদার হয় তখন ঠোঁটগুলো ফুলে যায়। দেখতে একম কিউট পুতুলের মত। ওর একটা ঘারত্যারা জামাই আছে। মনে পড়ছে কিছু তর?
রায়ান উৎসুক হয়ে অগ্নির দিকে তাকাতেই অগ্নির হাতের থাবার সম্মুখীন হয়। রায়ানের শার্টের কলার মোট করে ধরে দেয়ালের কাউচের সাথে চেপে ধরে দাঁত কটমট করে বলে,,,,,,,

“” তুই আমার বউয়ের এত কিছুর নজর কেনো দিয়েছিস? ওর ঠোঁট কেমন, চোখ কেমন, চুল কতটুকু এইসব কেনো দেখেছিস? দেখতে বলেছি আমি তকে। আমার অনুমতি ছাড়া কেনো দেখলি?
অগ্নির হিংস্র থাবায় রায়ান মিনমিনিয়ে বলে,,,,,,
“” নাউযুবিল্লাহ ভাই অন্যকিছু ভেবে নিস না। ঘরে বউ রেখে এসেছি। বাসর করিনি এখনও । বউ এইসব শুনলে ডিভোর্স ঠুকে দিয়ে চলে যাবে। আজ মনে রেখেছি বলেই তুই তর বউকে মনে করতে পেরেছিস। নাহলে তো তর মনেই ছিলো না ইয়ানা কে?
অগ্নি কটমট চোখে রায়ানের দিকে তাকিয়ে ইউভির উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,
“” ইউভি এই ইডিয়েটকে নিয়ে সুমুর আচলের ভিতরে ডুকিয়ে দিয়ে আয়। আই সয়ার নাহলে এখন আমার হাতে খুন হবে।
ইউভি সরলভাবে বলে,,,,,

“” আমি বন্ধু হয়ে বন্ধুর বউয়ের আচল কিভাবে ধরব.? আচল ধরতে না পারলে তো ডুকানো ও যাবে না। এই কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। খুব চরিত্রহীন কঠিন কাজ। আমার চরিত্র ভাই ফুলের মত পবিত্র।
ইউভির কথায় অগ্নি গম্ভীর শ্বাস ছেড়ে রায়ানের কলার ছেড়ে দেয়। এরপর বিরক্তি নিয়ে পুনরায় কাউচের উপর গিয়ে বসে। সবগুলো এক একটা বদের হাড্ডি। শয়তান যখন নিজের কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায় তখন এদেরকে তার কাছে পাঠায়।
কিছুটা গম্ভীর হয়ে আরিফের উদ্দেশ্যে বলে,,,,

” গাড়ি বের কর আরিফ। আমি রেডি হয়ে আসছি।
রায়ান — কার কাছে যাবি অগ্নি? ইয়ানার কাছে নাকি?
অগ্নি কটমট চোখে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” আরেকবার আমার বউয়ের নাম মুখে নিবি গলা কেটে কুকুরকে খাওয়াব ।
অগ্নি আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে গটগট পায়ে চলে যায়। ইউভি, আরিফ আর রায়ান একে অপরের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠে।
রায়ান — হাসি থামা ভাই নাহলে সত্যি সত্যি গলা কেটে ফেলবে।
ইউভি — বউকে চিনে না, দেখতে ও যাচ্ছে না অথচ এখানে বসে বসে ছটফট করছে। শালা ভাঙবে কিন্ত মচকাবে না।
রায়ান সিরিয়াস হয়ে গম্ভীর ভঙ্গিমায় বলে,,,,,

” কিন্তু এখন ও ভয় কাজ করে ইউভি। বার বার বিচ্ছেদ মান – অভিমান জানি না ভালোবাসার সমাপ্তি কি হয়।
আরিফ — মৃত্যু ছাড়া তাদের আলাদা অসম্ভব ভাই। উপরওয়ালা না চাইলে বস কখনো ভাবিকে ছাড়বে না। আমি তো ভাইয়ের সাথে প্রতি মুহূর্ত থাকি তাই সব পাগলামীর স্বাক্ষী ও আমি। আজ মাথায় প্রচুর আগুন দেখা যাচ্ছে। জানি না এই রাগের স্বীকার,কে হয়? আমার তো যেতেই ভয় করছে।
ইউভি — দ্রুত যা নাহলে সব রাগ তর উপর গিয়ে পড়বে।
আরিফ আর না দাঁড়িয়ে চলে যায়। ইউভি নিজের কাজের উদ্দেশ্যে একটু বাহিরে যায়।

লিভিং রুমে বসে শিখা চৌধুরি আর সাজিদ চৌধুরি ব্যবসা সম্পর্কে আলোচনা করছেন। সামনে বসে আছে ইউভি। মূলত সে নিজের বাবা – মা থেকে ব্যবসায়ীক শিক্ষা গ্রহন করছে। মুখে তার বিরক্তি স্পষ্ট। এক প্রকার বাধ্য হয়ে সে বসে আছে।
অরিদ — আম্মু আমি বাহিরে যাচ্ছি। আমার ভার্সিটির কিছু কাজ আছে। বাকি জ্ঞান অন্যদিন নিব। সত্যি বলছি একটু ও এনার্জি নেই এইসব মস্তিষ্কে ডুকানোর।
শিখা চৌধুরি অরিদের কথায় খুব হতাশ হন। তারা ধীরে ধীরে বৃদ্ধ হচ্ছে। কয়েকদিন পর ব্যবসা সামলানোর সেই শক্তি না ও থাকতে পারে। এখন যদি ব্যবসা বুঝিয়ে না দেওয়া হয় ভবিষ্যতে সামলাতে পারবে কিছু?
শিখা চৌধুরি — কাজ আর জীবন নিয়ে এত হেয়ালি করা চলে না অরিদ। বুঝতে হবে তোমাকে। বিয়ে হয়েছে কয়েকদিন পর বাচ্চার বাবা হবে পরিবারের দায়িত্ব তো নিতে হবে নাকি?

মায়ের কথা শুনে অরিদের চোখ বের হয়ে আসার উপক্রম। কাল বিয়ে না হতেই আজ বাচ্চা! খুব রাগ আর বিরক্ত হন মায়েরর কথা।যেখানে মেয়েটাকেই সহ্য করতে পারে না সেখানে বাচ্চা আসাটা বিলাসিতা।
কিছুক্ষনের মধ্যেই মিরা রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। পড়নে সাদা আর পিন্ক কালারের ফুলের মধ্যে টু পিছ। মাথায় ছোট করা হিজাব বাঁধা। মিরা নিচে নামলে অরিদের চোখাচোখি হয়। অরিদ বিরক্তি নিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। মিরা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে শিখা চৌধুরি আর সাজিদ চৌধুরির উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,,
” আঙ্কেল – আন্টি আজ ভার্সিটির কিছু দরকারি কাজ ছিলো তাই যেতে হচ্ছে।
সাজিদ চৌধুরি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,

“” আঙ্কেল – আন্টি কেনো ডাকছিস মা। আহিয়া যেমন আমার মেয়ে তেমনি তুই আর ইয়ানাও। এখন থেকে বাবা – মা সম্মোধন করবি।
মিরা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
“” জি বাবা।
শিখা চৌধুরি — অরিদ তুমি তো ভার্সিটি যাচ্ছিলে। যাও মিরাকে নিয়ে এখন।
অরিদ ডিভান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,,,,,
“” অসম্ভব আম্মু! আমি গাড়ি দিয়ে যাব না, বাইক নিয়ে যাব।
শিখা চৌধুরি — বাইক কি গাড়ির মধ্যে পড়ে না? যা দিয়েই যাচ্ছো সেটা দিয়েই নিয়ে যাও।
অরিদ কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,,,
” জোর করে বিয়ে দিয়েছো আম্মু। এখন প্লিজ জোর করে ঘাড়ে চাপিয়ে দিও না। এই মেয়েকে তো ইহজনমে ও নিজের বাইকের পিছনে বসাব না।

শিখা চৌধুরি — এই মেয়ে, এই মেয়ে কাকে বলছো? মিরা তোমার বিবাহিতা স্ত্রী অরিদ। জোর পূর্বক বিয়ে হলেও কবুল বলে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছো। সেটাকে স্বাভাবিক করে গড়ে তুলো , অগ্নির মত হেলাফেলা করো না।
মিরা এতক্ষন মা – ছেলের তর্কের নিরব দর্শক ছিলো। কখন চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়েছে হয়ত নিজের ও খেয়াল নেই। সবার আড়ালে চোখের পানি মুছে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” আমাকে কেউ পৌছে দিতে হবে না আম্মু। আমি রিক্সা করে চলে যাব।
সাজিদ চৌধুরি — তুমি অরিদের সাথেই যাবে মা। আর ও তোমাকে নিয়ে যেতে বাধ্য।
সাজিদ চৌধুরি অরিদের দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে গম্ভীর আওয়াজে বলে,,,,,,
” মিরাকে তুমি যাবে কি না? আমি রেগে যেতে বাধ্য করো না অরিদ।
বাবার রাগান্বিত আওয়াজে অরিদ চুপসে যায় । বাইকের চাবি হাতে নিয়ে এক প্রকার রাগ দেখিয়ে বলে,,,,
“” আসতো বলো।
অরিদ চলে যায়। মিরা সাজিদ চৌধুরির উদ্দেশ্যে মিহি সুরে বলে,,,,,,

“” কি দরকার ছিলো বাবা জোর করার? আমি একাই রিক্সা নিয়ে চলে যেতে পারতাম।
শিখা চৌধুরি — দায়িত্ব নেওয়া শিখতে হবে।
মিরা মেকি হাসি দিয়ে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। বাইকের কাছে গিয়ে দেখতে পায় অরিদ গম্ভীর মুখে বসে আছে।
মিরাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অরিদ দাঁত কটমট করে বলে,,,,
” আপনাকে কি এখন ইনভাইটেশন কার্ড দিয়ে আনতে হবে।
অরিদের ধমকে মিরা মুখ বাঁকিয়ে বাইকের পিছনের সিটে গিয়ে বসে। এরপর কিছুক্ষন ফাঁকা রেখে সরে যায়।
অরিদের বিরক্ত কন্ঠ,,,,
” একদম ধরবে না আমাকে?
মিরা — যদি পড়ে যায় তাহলে?
অরিদ — পড়ে গেলে পড়ে যাও আই ডোন্ট কেয়ার। বাট টাচ করবে না আমাকে।
মিরা বিরবির করে বলে,,,,,,

” কোন দুর্ভার্গ্যের কারনে এই ঘারত্যারার সাথে আসতে গিয়েছি আমি। এর চেয়ে ভালো ছিলো হ্যান্ডসাম ড্রাইভার হান্নান ভাই । স্মার্ট ছিলো গেলেও শান্তি পেতাম।
অরিদ — আমার বাড়ির ড্রাইভারের দিকে নজর দেওয়া শুরু করলে।
মিরা — অতিরিক্ত স্মার্ট তাই।
অরিদ — চোখ আর রুচি খারাপ হলে যা হয়।
অরিদ গাড়ি স্ট্রাট দেয়। মিরা প্রস্তুত ছিলো না। স্ট্রাট দেওয়ার সাথে সাথে ভয়ে অরিদকে আকড়ে ধরে শার্ট খামচে ধরে। গাড়ি থেমে যায়। কিছু মুহূর্তের জন্য অরিদ স্তব্দ হয়ে যায়। শরীরে ঘাম ছুটে যাওয়ার উপক্রম। মিরা নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে সরে এসে বসে। নিজের কাজে নিজেই বিরক্ত হয়। এখন নিশ্চয় তাকে অনেকগুলো কথা শুনাবে। বলবে যেই সুযোগ পেয়েছো এমনি উপরে উঠে গিয়েছো। কিন্তু মিরার ভাবনাকে মিথ্যে প্রমান করে অরিদ শান্ত কন্ঠে আওড়ায়,,,,,,

” হালকা ভাবে ধরে বসো নাহলে পড়ে যাবে।
মিরা অবাক হয়ে বলে,,,,,
” এই মাত্র না বললেন টাচ যাতে না লাগে?
অরিদ কিড়মিড়িয়ে বলে,,,,,,,
“” অযথা কাজ একটা কাজ চাপিয়ে দিয়েছে আমার ঘাড়ে । তুমি পড়ে যাও অথবা মরে যাও সেটা নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। বাট সাজিদ চৌধুরি আর শিখা চৌধুরি তোমাকে আমার সাথে পাঠিয়েছে। কিছু হলে তো আমাকে ধরবে তাই না। নিজেকে ব্যালেন্স করার ক্ষমতা ও তো নেই। তার নমুনা এই মাত্র দেখলাম। একটু হলে পড়ে যেতে আর সব দোষ হয়ে পড়ত আমার ঘাড়ে।
অরিদ এক প্রকার রাগ দেখিয়ে গাড়ি সট্রাট দেয়। ভিতরে থাকলে মিরা সব কথার উত্তর দিত। কিন্তু আশে – পাশে গার্ড আছে তর্ক করাটা ভালো দেখাবে না। তাই সে নিশ্চুপে সহ্য করে যায়।

রুয়ানা স্কুল শেষ করে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আজ তার স্কুল দ্রুত ছুটি হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পড় একটা হুয়াইট মার্সিডিজ গাড়ি তার সামনে এসে থামে। রুয়ানা অন্য কারোর গাড়ি ভেবে কিছুটা সরে দাঁড়ায়।
ঠিক তখন ওই একটা শব্দ এসে কানে কম্পন সৃষ্টি করে,,,
” লিটল গার্ল”
রুয়ানা সামনে থেকে চোখ সরিয়ে সেদিকে তাকায়। ইউভি গাড়ির কাউচ নামিয়ে সেদিকে মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। রুয়ানার মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠে। রুয়ানা এক গাল হেসে বলে,,,,,
” ইউভি ভাইয়া আপনি এখানে? কোনো কাজে এসেছিলেন?
ইউভি কিছুক্ষন রুয়ানার মিষ্টি মুখটার দিকে তাকায়। এই পিচ্চিটা কি তার অনুভুতির আওয়াজ শুনতে পায় না? এত, এত আদুরে কেনো এই মেয়ে? উফফফ ইউভি কন্ট্রোল। একটা হাসি দিয়ে তর শক্তি গায়েব করার ক্ষমতা রাখে এই মেয়ে। আমার লিটল গার্ল।
ইউভি নিজের ভাবনায় নিজেই হেসে রুয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,

” এসেছিলাম তো একটা কাজে। বাট দুর থেকে দেখলাম একটা পিচ্চি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটু সামনে এগিয়ে আসতেই দেখতে পায় আমার খুব পরিচিত একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। তাই চলে আসলাম তোমার কাছে।
ইউভির মুখে পিচ্চি শুনে রুয়ানা ভাবুক হয়ে পড়ে। সে ক্লাস নাইন থেকে টেনে উঠবে এখন ও পিচ্চি রয়েছে। আয়নার সামনে তো প্রতিনিয়ত নিজেকে দেখি দেখতে তো আপুর মত ওই বড়। তাহলে আমাকে পিচ্চি বলে কেনো?
রুয়ানা মিহি সুরে বলে,,,,,
” আমি পিচ্চি নয় ভাইয়া।
রুয়ানার কথায় ইউভি শব্দ করে হেসে বলে,,,,,
” আমিও তো চাই লিটল গার্ল তুমি অনেক বড় হও। আমার কাজে একটু সুবিধা করে দাও।
রুয়ানা — বুঝিনি ভাইয়া?
ইউভি — সময় আসলে বুঝে নিও। চলো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।
রুয়ানা নাখোঁজ করে বলে,,,,,,
” না ভাইয়া কষ্ট করতে হবে না। আমি একটা রিক্সা নিয়ে চলে যাব।
ইউভি — সমস্যা নেই লিটল গার্ল। গাড়িতে উঠো।
রুয়ানা উঠতে না চাইলে ইউভির কথায় এক প্রকার বাধ্য হয়ে উঠতে হয়।
রুয়ানা গাড়িতে উঠলে ইউভি মিররের দিকে তাকায়। রুয়ানা আর তাকে এক সাথে মিলিয়ে বিরবির করে বলে,,
” নাহহ এতটা ও ব্যবধান নয়। এখন কাজে লেগে পড়তে হবে।

মিরা আর ইউভি ভার্সিটির প্রায় কাছাকাছি চলে আসে। এমন সময় হুট করে অরিদ বাইক থামিয়ে দেয়। মিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,,
” থামিয়েছেন কেনো?
অরিদের গম্ভীর আওয়াজ —
— নামো।
মিরা— কিহহ! আমাকে এখন এখানে নামিয়ে দিবেন। বাকি রাস্তা কি হেঁটে হেঁটে যাব?
অরিদ — আগে নামো। এতদিন তো বসে বসে খেয়েছো। এখন হাটার মাধ্যমে ব্যায়াম করো।নহলে একদিন ভুড়ি হয়ে যাবে।
মিরা — আপনার বাড়ির খাওয়ার খুঁটা দিচ্ছেন?
ইউভি — খাচ্ছো সেটা তো আর মিথ্যে না। সেটা খুঁটা দিলেই কি আর না দিলেই কি। আর খবদার ভার্সিটিতে আমার কাছাকাছি ঘেষবে না। ইভেন কেউ যাতে না জানে আমাদের বিয়ে হয়েছে।
মিরা বাইক থেমে নেমে গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,

” আপনার মত অভদ্রকে স্বামী হিসেবে পরিচয় দিতে আমি মিরা বসে নেই। আপনার আর আমার সম্পর্ক না রুমে আছে, আর না বাহিরে। পরিস্থিতি বুঝেন? সেই পরিস্থিতির কারনে থাকতে হচ্ছে এক সাথে। নাহলে রাস্তা আলাদা ওই হত।
অরিদ — সেটা মাথায় রেখে চলবে সবসময়। যাতে কেউ কিছু জানতে না পারে।
মিরা — ভার্সিটিতে অনেক স্মার্ট ছেলে আছে তাদের সাথে লাইন মারলে আমার কাজে আসবে। আপনার মত জোকারের সাথে কে গিয়ে কথা বলব হ্যা?
মিরা আর দাঁড়ায় না। নির্ঘাত এখন এক বজ্রপাত হবে। দাঁড়িয়ে মরার চেয়ে দ্রুত জায়গা ত্যাগ করা ভালো।
মিরার কথায় অরিদ রাগান্বিত চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু কিছু বলার সুযোগ হয় নি তার আগেই মিরা চলে যায়। ভার্সিটির মধ্যে সুদর্শন ব্যক্তিটাকে এই মেয়ে জোকার বলছে। নির্ঘাত এই মেয়ে পচা খাবার খেয়ে বড় হয়েছে। তাই ভালো আর খারাপের মর্ম বুঝে না।
মিরা ভার্সিটির কাছে যায়। পাশে রয়েছে এক নামী – দামী কফিশপ। তার পাশেই খোলা আকাশের নিচে ছোট একটা কফিশপ। মিরা এগিয়ে যায় সেদিকে। আর কিছুক্ষনের মধ্যে ইয়ানার দেখা মিলে। এক গাল হেসে ইয়ানার সামনে গিয়ে বসে।

— — সরি লেইট হয়ে গিয়েছে।
ইয়ানা– ইটস ওকে। আমি যে কারনে তোমার সাথে দেখা করেছি সেটা আগে আলোচনা করা যাক।
মিরা — হুম বলো।
ইয়ানা শান্ত সুরে জিজ্ঞাসা করে,,,,,,
“” ভাইয়ার সাথে সম্পর্ক কেমন চলছে মিরা? মেনে নিয়েছে তোমাকে? বিয়ের দিন তো চলে আসতো হলো তাই জিজ্ঞাসা করছি।
মিরা — এই লেজ কাটা বাদরের কথা জিজ্ঞাসা করো না ইয়ানা। আগে জানতাম মেয়েরা শুধু ঝগড়া করে এখন উনাকে দেখে ধারনা পাল্টে গিয়েছে। এত ঝগড়ুটে ছেলে জীবনেও দেখিনি।
ইয়ানা হালকা হেসে বলে,,,,,,,
“” তোমাকে মানিয়ে নিতে হবে মিরা। অরিদ ভাইয়া খারাপ ছেলে নয়। বিয়েটা যেভাবে হয়েছে তাতে ভাইয়া মানসিকভাবে ডিস্ট্রাব। সম্পর্কটা মানতা পারছে না। আর তোমাদের সম্পর্ক প্রথম থেকেই শত্রুতা এত তাড়াতাড়ি নরমাল হওয়ার নয়।
মিরা শ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,,,

” মানিয়েই তো নিতে চাচ্ছি ইয়ানা। বাবাকে অনেক কষ্টে মানিয়েছি। শুধু দোয়া করো আমার জন্য। আমার সাথে বিয়াদবি করলে আমিও তেমন ভাবেই সোজা করব।
মিরার কথায় ইয়ানা শব্দ করে হাসে।
মিরা — তোমার আর ভাইয়ার দুরত্বের কারন?
ইয়ানার মনটা বিষিয়ে উঠে। কান্না গলায় এসে আটকে যায়। বুকটা ধুক করে উঠে। ইয়ানা কান্না আটকিয়ে বলে,,,,,,
‘” সময়ের সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয় মিরা। দুরত্ব কি যায় আসে। আমার পুরোটা জুড়েই তো উনি মিরা। সবাই নায়েকের জন্য অপেক্ষা করে আমি না হয় আমার গল্পের ভিলেনের জন্য অপেক্ষা করলাম।
মিরা — অপেক্ষা যাতে সীমিত হয় ইয়ানা। কারন সবকিছুর এক নির্দিষ্ট সময় থাকার প্রয়োজন। বেশি বা কম হলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ইয়ানা মলিন হাসে।
মিরা কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,,,,,,,,

“” আজ সকালে জিম থেকে আসার পর ভাইয়াকে খুব অগুছালো লাগছিলো। চুলগুলো এলোমেলো, চোখ- মুখ লাল হয়ে আছে। কেউ ভয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করে নি। ভাইয়া ও কারোর সাথে কোনো কথা না বলে উপরে চলে যায়। কিছুক্ষনের মধ্যে রেডি হয়ে গম্ভীরভাবে আরিফ ভাইয়ের সাথে চলে আসে। একটা প্রশ্ন ছিলো ইয়ানা।
ইয়ানা — হুম বলো?
মিরা — বলছিলাম ভাইয়ার সাথে থাকতে তোমার ভয় হয় না?
মিরার প্রশ্নে ইয়ানা শব্দ করে হেসে উঠে। কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলে,,,,,,,
“” কেমন প্রশ্ন এইটা মিরা? হয়ত আর পাঁচ জন সাধারন দম্পত্তির মত আমাদের সংসার না তাই বলে ভয় পেতে যাব কেনো?
মিরা — সত্যি ভয় পাও না? বিশ্বাস করবে না ইয়ানা এক বাড়িতে থাকি সেটা ভেবেই আমার লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়।
ইয়ানা চুপসে যায়। মুখের মধ্যে বিরাজ করে একঝাঁক দুর্বলতা। মিহি আওয়াজে বলে,,,,,,,

“” আগে ভয় পেতাম না মিরা। সবার মত স্বাচ্ছ্যন্দে সংসার করেছি। কিন্তু এখন ভয় পায় প্রচুর। জনি, সেই ফুচকাওয়ালা আরও অনেকের বিকৃত লাশের দৃশ্য ভুলে যায় নি। সেই গোপন কক্ষের ভয়ানক সেই মানুষগুলো। যাদেরকে অগ্নি চৌধুরি নিজের কাছে রেখেছে এত বছর। সেই রাতের ভয়ানক খুনের দৃশ্য কিছুই ভুলে নি মিরা। উনি কাছে আসলেই ভয় কাজ করে কিন্তু নিজেকে সামলে রাখি কঠিনভাবে। এরপর ও শক্ত কথা বলে ফেলি মনের ভুলে। আমার বিষাক্ত কথা উনি সহ্য করতে পারে না মিরা। কিন্তু তবুও নিজেকে আটকাতে পারি না। কি করব সব অতীত আর ভয়াভহতা চোখে ভেসে উঠে। কি করব মিরা? কিভাবে স্বাভাবিক হব বলো আমাকে?
ইয়ানার চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ে। মিরা আশ্বস্ত করে বলে,,,,,,

” নিয়তি বলে মেনে নাও ইয়ানা। শুধু মনে রাখবে তোমার জীবনে কোনো নায়েকের আগমন ঘটেনি। ঘটেছে এক ভিলেনের আগমন। মানতে হবে আর সেটা মেনে নাও।
ইয়ানা গম্ভীর হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” হুম।
মিরা — আমি তো মাঝে মাঝে ভেবেই অবাক হয়ে যায়। আমি অগ্নি চৌধুরির সাথে এক বাড়িতে থাকছি।
সেই অগ্নি চৌধুরি যার আঙ্গুলের এক ইশারায় কানডা থমথমে খেয়ে যায়। যার শরীরে থাকে সবসময় কালো হুডিতে আবৃত ছদ্দবেশী আস্তরন। খুব কাছের কেউ ছাড়া তার চেহারা কেউ কখনো দেখে নি। শুধু হালকা ব্রাউন কালারের চোখ দুটি সবার পরিচিত। উনার স্টাইল, এ্যাটিটিউড আর সেই ব্রাউন চোখেতেই সব মেয়েরা ফিদা হয়ে থাকে। এক নজর দেখার জন্য কত মেয়ে মরিয়া হয়ে আছে। আর সেখানে আমি মিরা এক বাড়িতে বসবাস করছি তাও আবার সম্পর্কে আমার বড় ভাই হয়। এইটা কি আমার দুর্ভাগ্য নাকি সৌভাগ্য?
ইয়ানা — দুর্ভাগ্য।
মিরা ঠোঁট উল্টে বলে,,,,,

” এইভাবে বলো না। একসময় আমার ও ক্রাশ ছিলো।
ইয়ানা কপাল কুচকে তাকায়। ইয়ানার তাকানো দেখে মিরা বলে,,,,,,
“” আরে এইভাবে তাকিও না। আগে জামাইর চোখে ক্রাশ খেতাম আর এখন বড় ভাইয়ের চোখে খায়। সম্পর্ক বদলে গেলো এক পলকে!এই আরকি।
মিরার বাচ্চামো দেখে ইয়ানা হেসে দেয়।
মিরা — হাসো না ইয়ানা। তোমার জামাই কে আমি লিমিট ছাড়া ভয় পায়। যখন ভাবি অগ্নি চৌধুরি সাথে আমি এক বাড়িতে বসবাস করি তখন ওই আমার গলা শুকিয়ে আসে। ভাইয়া তো বাড়িতে থাকে না, খুব রাতে আসে। তখন থেকে শুরু হয় আমার ভয়। সুমুকে ও ডাকতে পারি না কারন রায়ান ভাইয়া থাকে। ভাববে তার বউ আমি নিয়ে চলে যাচ্ছি। তোমার প্রানপ্রিয় দেবর তখন ভয় কাটানোর সঙ্গী হয়। উনি আসলে চুপচাপ শুয়ে পড়ি। তখন আর ভয় কাজ করে না।
মিরার কথায় ইয়ানা ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,,
“” যাক আমার দেবর তাহলে একটা কাজে আসে। রোমান্সে না আসলে ও ভয় কাটানোর কাজে আসে।
ইয়ানার কথায় মিরা থমথমে খেয়ে যায়।

একটা বিলাশ বহুল কফিশপে রেশব আর অগ্নি মুখোমুখি হয়ে বসে আছে। কানাডায় প্রায় রেশব আর অগ্নি দেখা করত। রেশবের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে রেশব ব্যবসা সামলাতে গিয়ে সবার কাছ থেকে দুরে সরে যায়। তার উপর বোনের উশৃংখল জীবন যাপন। সব মিলিয়ে সে প্রচুর ব্যস্ত। রেশব কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,,,,,,
‘ আন্টি বলেছে বিয়ে করেছো। বিবাহিত জীবন কেমন চলছে তোমার ভাইয়া?
অগ্নির গম্ভীর আওয়াজ —
— ভালো।

রেশব কিছুটা অবাক হয়। অগ্নির সম্পর্কে তার মুটামুটি সব জানা। নারী বিরোধী ব্যক্তি সুখে সংসার করছে উত্তরটা রেশবকে অনেকটা অবাক করে। অবাক হয়েছে ও বটে।
অগ্নি আর রেশব কিছুক্ষন কথা বলে। অগ্নির গুরুত্বপূর্ন কল আসায় রেশব উঠে যায়। তার ও কিছু কাজ ছিলো। এর মধ্যে আগমন ঘটে একজন ব্যক্তির। অগ্নি চোখ তোলে তাকাতেই বিরক্তিতে নিশ্বাস ছাড়ে।
ঝর্না কাঁধের ব্যাগটাকে কাউচের উপর রেখে আহ্লাদ গলায় বলে,,,,,,,
“” হাই বেইবি কি করছো?
অগ্নি মোবাইলের মনিটরে চোখ রেখে গম্ভীর আওয়াজে বলে,,,,,,,
” আমি কি ডায়াপার্ট পড়া ঝর্না?
ঝর্না চুপসে গিয়ে বলে,,,,,,
” হুয়াট! কি সব বলছো? ডায়াপার্ট কেনো পড়তে যাবে।
অগ্নি গম্ভীর মেজাজে বলে,,,,,,

” তাহলে বেইবি, বেইবি বলে কান তব্দা লাগাচ্ছো কেনো? দেখতে পাচ্ছো এডাল্ট এক যুবক বসা আর সেখানে বেইবি সম্মোধন করছো।
ঝর্না — এইটা তো আমার ভালোবাসার ডাক আহান।
অগ্নি — ডোন্ট কল মি আহান ফা*কিং গার্ল। আমার নাম অগ্নি চৌধুরি। আর ভালোবাসা হুহহহ! চেয়েছি আমি? হুয়াই আর ইউ অ্যাক্টিং শেইমলেস হোয়েন আই নেভার ওয়ান্টেড ইট? ইউ আর ক্যারেক্টারল্যাস ঝর্না।
অগ্নির কথার অপমানে ঝর্নার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। অসহায় হয়ে পড়ে সে। মিনতি সুরে বলে,,,,,,
“” আমি এমন ছিলাম না অগ্নি। তোমাকে পাওয়ার জন্য আজ আমার এই দশা। বেশ্যা হয়ে গেলাম দেখো। সমাজ আর নিয়তি কোথায় নিয়ে গেলো আমাকে। সবটা জুড়ে তো তুমি ছিলে। হারিয়ে ফেললাম কিভাবে?
অগ্নি তাচ্ছিল্য হাসে। একই ভঙ্গিমায় বলে,,,,,,

“” পতিতালয়ের এক নির্লজ্জ মেয়ে যখন অন্যকে ভুলতে বা নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য নিজের সতিত্ব বিলিয়ে দেয় এরপর ঘৃনার চোখে বলে সেই লোক অথবা সমাজ আমাকে বেশ্যা বানিয়েছে ঠিক কোনো এক জায়গায় আরেকটি মেয়ে নিজের সতিত্ব বাঁচানোর জন্য প্রান প্রন চেষ্টা করছে। নিজেকে আটকাতে বা ধরে রাখতে চাইলে অনেক রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায় নাহলে পাবে শুধু অযুহাত। তাই তোমার নষ্টামির পিছনে আমাকে কেন্দ্র করে অযুহাত টানবে না ঝর্না। ভালো সবাই হতে পারে না। ভালো কাকে বলে সেটা আমার ইয়ানাকে দেখো? যার শরীরে প্রথম স্পর্শকারী পুরুষ আমি। ও আমার হৃদয়ে গড়ে উঠা এক নিষ্পাপ ফুল। যার চরিত্রে কোনো দাগ নেই। রাস্তায়, হাটে – ঘাটে, পতিতায় অনেক সুন্দরী মেয়েরা থাকে কিন্ত নিজের চরিত্র আর স্বামীর প্রথম ছোঁয়া পায় কয়জন।
ইয়ানার কথা শুনে ঝর্নার মাথা আগুন জ্বলে উঠে। সে জানে ইয়ানা ভালো কিন্তু তার থেকে তার অগ্নিকে কেড়ে নিয়েছে। কি করে সে ইয়ানাকে সহ্য করবে?

ঝর্না — আমাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় না অগ্নি? বিশ্বাস করো প্রচন্ড ভালোবাসি তোমাকে?
অগ্নি — পরেরবার এই বাক্যটা উচ্চারন করো না ঝর্না। আমি রেগে গেলে তোমার নিশ্বাস ও নিয়ে নিতে পারি।
অগ্নি উঠে বের হয়ে যায়। ঝর্না ও পিছন পিছন আসে। তার হাটু পর্যন্ত একটা লাল শর্টস পড়া। হাতা কাটা , গলার অনেক জায়গা ভাসমান। ঝর্নাকে আসতে দেখে অগ্নি দাঁড়িয়ে যায়। তবে সে তার দিকে তাকায় না।
অন্যদিকে তাকিয়ে তিরিক্ষি মেজাজে বলে,,,,,,,,

” পিছে কেনো আসছো? মরার শখ জেগেছে। ওয়ার্নিং দিচ্ছি আর ভালোবাসা এইসব ন্যাকামো নিয়ে আসবে না।
অগ্নি গাড়ির কাছে যাবে এমন সময় চোখ আটকে যায় দুরে থাকা এক রমনীর দিকে। যে এই মুহূর্তে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখে পানি চিকচিক করছে তা দৃশ্যমান। ঠোঁটগুলো অসম্ভব ভাবে কাঁপছে।
অগ্নি ঠোঁট চেপে গম্ভীর নিশ্বাস ছাড়ে। নির্ঘাত এই মেয়ে এখন উল্টাপাল্টা জিনিস ভাববে।
ইয়ানা আর দাঁড়ায় না। এখানে কফি শপে এসে এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফুর্তি করছে। ভালো ওই তো। সে জন্য তো তার কোনো খোঁজ নেয় না। এতগুলো দিন তাকে ছাড়ায় কাটাচ্ছে। তাহলে এই হলো আসল রহস্য। তলে তলে সবাই এগিয়ে যাচ্ছে শুধু আমি বোকা রয়ে গেলাম।
ইয়ানাকে চলে যেতে দেখে মিরা আটকে দিয়ে বলে,,,,,,,
” ইয়ানা ভাইয়া! প্লিজ কথা বলে যা।
ইয়ানা এগিয়ে যেতে যেতে বলে,,,,,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৩

“” অপরিচিত কারোর সাথে কথা বলতে আমি ইচ্ছুক নয় মিরা। যে আমাকে ভুলে যায় তাকে কেনো আমি মনে রাখব। সে বলেছে আমি যাতে তাকে আমার এই মুখ না দেখায়
কারন উনাকে মুখ দেখানোর মানুষ আছে। চলে আয় তুই।
ইয়ানা কিছুটা এগিয়ে যেতেই কেউ তার হাত শক্তভাবে আকড়ে ধরে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৫