ধূসর রংধনু পর্ব ৫০
মাহিরা ইসলাম
স্নিগ্ধ সকাল। উত্তাল প্রকৃতি।
সঙ্গে উদ্বীগ্ন তাসফির চিত্ত।চিন্তায় তার কপালের ভাঁজ দীর্ঘ হচ্ছে। দুদিন যাবত আশাকে ফোনে পাচ্ছে না সে।জরুরি দরকারে লাগাতার ফোন করে যাচ্ছে অথচ মেয়েটার ফোন কিনা দুদিন যাবত বন্ধ আশ্চর্য। কি করছে,কোথায় গিয়ে ঘামটি মেরে আছে কে জানে।
নিস্তব্ধ’র আজ সারাদিন বাড়িতে থাকা হবে না। হসপিটালের বদলির কাজে তাকে একটু ঘাটাঘাটি করতে হচ্ছে।
সেটা বলার জন্যই তাসফিকে খুঁজছিলো।
মেয়েটা কি যে করছে সকাল থেকে কিচেনে কে জানে।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিস্তব্ধ রেডি হতে হতে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে তাসফিকে লক্ষ করার চেষ্টা করলো।ফিসফিস শব্দে নিস্তব্ধ আড় চোখে বেলকনির দিকে চাইলো।
থাইগ্লাস পার করে নিস্তব্ধ স্পষ্ট দেখতে পেল তাসফি কারো সঙ্গে ফিসফিস করে ফোনে কথা বলছে।
ব্যাপারটা সে আরো দুদিন যাবত লক্ষ করছে। সে কাছে গেলেই ঠাস করে ফোনটা কেটে দেয়।
তার থেকে লুকিয়ে মেয়েটা কার সঙ্গে এত কথা বলছে। নিস্তব্ধ’র কপালে চিন্তায় দীর্ঘ ভাঁজ পরলো।
সে নিশ্চিত এখন সে এগিয়ে গেলে তাসফি চট করে ফোনটা কেটে দেবে।
নিস্তব্ধ নিঃশব্দে এগিয়ে গেল।
কিছু কথা তার কানে বাজলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” তাহলে এটাই ডান? আচ্ছা আচ্ছা আমি রেডি থাকবো।”
তাসফি পেছনে কারো উপস্থিতি লক্ষ করতেি চট করে ফোনটা কেটে পেছনে ঘুরলো।
নিস্তব্ধকে দেখে সে কিছুটা ঘাবড়ে গেল বোধহয়।
হঠাৎ নিস্তব্ধ কে এই মুহুর্তে সে আশা করে নি।
লোকটা তো ওয়াশরুমে ছিলো বেরোলো কখন।
তাসফি বোকা হাঁসার চেষ্টা করে সুধালো,
-” ওও আপনি কখন এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন?”
নিস্তব্ধ ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করলো,
-” সেটা ইম্পর্টেন্ট নয়।কার সঙ্গে কথা বলছিলে?”
তাসফি আমতাআমতা করে প্রত্যুত্তর করলো,
-” কই নাতো কই কথা বলছিলাম।”
-” তো আমি কি ভুল শুনেছি? ফোন এমনিতেই কানে রেখেছিলে বুঝি?”
তাসফি চট করে বলে উঠলো
-” কি,কি শুনেছেন? ওই ওই আসলে, ফেন্ড।সর্নিধি? সর্নিধি ওর সঙ্গেই কথা বলছিলাম।আপনি চেক করতে চাইলে চেক করুন।নিন।”
তাসফি ফোন এগিয়ে দিলো।নিস্তব্ধ সেটা না নিয়ে বলল,
-” আজ দিনে ফেরা হবে খানিকটা রাত ওও হতে পারে ফোন নাও ধরতে পারি।টেনশন করবে না।”
তাসফি মাথা নাড়লো।
নিস্তব্ধ তাসফির ঘাবড়ে যাওয়া মুখখানা কয়েক সেকেন্ড জহুরি চোখে অবলোকন করলো।সে চলে যেতে নিলেই তাসফি সুধালো,
” বললেন না তো কি শুনেছেন?”
নিস্তব্ধ থেমে গেল পিছু না ফিরে বলল,
-” নাথিং।”
নিস্তব্ধ চলে যেতেই তাসফি হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
ব্রেকফাস্ট করে নিস্তব্ধ বেরিয়ে পরলো।
সকাল তখন এগারোটা প্রায়। সূর্য্যের উত্তপ্ততা বেড়েছে খানিকটা।
বাসন্তী, অনিমা বেগম, নিলয় সাহেব, ফিরোজা বেগম ওও রুম্পা সবাই ওসমান ভিলার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ড্রাইবার গাড়ি আনতে গেছে।
তাদের সকালের উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া।
দাদু সেখানে আগে থেকেই আছেন।
নানির শরীরটা ভালো না বলে রুম্পাকে ও সঙ্গে নিতে হচ্ছে। নানিকে বুঝিয়েও রেখে যাওয়া যাচ্ছে না। তিনি সঙ্গে যাবেনই। পান্নার কান্নাকাটিতে আয়েশার ওও যেতে হচ্ছে। ভালোই হলো। অনেকদিন পর তারও গ্রামটা ঘুরে আসা হবে।
সকলের এমন জোট বেঁধে যাওয়ার কারণ আছে বৈকি।গ্রামে যাচ্ছে চাচাতো দাদী শ্বাশুড়ি সহ সকলকে দাওয়াত করতে। গ্রামের মানুষের একটু ভিন্ন অভিমতি। শুধু কার্ড পাঠালে তারা মোটেও আসবেনা বরং মুখ ছিটকাবে। তাদের নিজেদের গিয়ে নিমন্ত্রণ করে আসতে হবে।
অনিমা বেগম তাসফি আর ইনায়া দুই বৌমার উদ্দেশ্যে বলল,
-” তোমাদের দুজনের হাতে দুদিনের জন্য বাড়ির দ্বায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি। কাল বাদে পরশুই আমরা এসে পরবো।তোমাদের ওও নিয়ে যেতাম। তবে রিসিপশনের আগে তো তাসফি কে নেওয়া যাচ্ছে না।
আর তাসফি একা কি করবে তাই ইনায়া তোমায় ওও রেখে যাচ্ছি। সাবধানে থেকো দুজনে।”
ইনায়া শুধু মাথা নাড়লো।তার ভাব ভঙ্গি বোঝা দায়।
তাসফি শ্বাশুড়ি মা কে আশ্বস্ত করে বলল,
-” আপনি একদম চিন্তা করবেন না মা।আপনার ছেলে তো আছেই। আপনারা সাবধানে যাবেন।”
নিলয় সাহেব তাসফির মাথায় হাত বুলিয়ে আরো কিছু সাবধানি বানীর ভাষণ দিয়ে গাড়িতে উঠে পরলেন।
মিনিটের মাঝেই সাদা রঙয়ের গাড়িটা ওসমান ভিলার গেট পেরিয়ে বেরিয়ে গেল।চোখের সামনে গাড়ির যাত্রা শেষ হতেই তাসফি বাড়ির ভিতরে ফিরে এলো।
ফাঁকা বাড়ি দেখে তাসফির দুঃখ পাওয়ার কথা থাকলেও এই প্রথম সে মোটেও দুঃখবোধ করছে না।
কয়েক মিনিট পরের কথা,
তাসফি ড্রয়িংরুমে কিছু একটা করছিলো।
ইনায়াকে দেখা গেল হাতে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে নিচে নেমে আসতে।
রুম্পা ছাড়া তার এবাড়িতে নিজে নিজে কাজ করে খাওয়া অসম্ভব।
তাসফি তাকে দেখে অবাক কন্ঠে সুধালো,
-” কোথায় যাচ্ছেন ভাবী?”
-” শোন আমি একটু বাপের বাড়ি যাচ্ছি। তুমি থাকো।”
তাসফি চোখ ছোট ছোট করে চাইলো।”
ইনায়া কয়েক কদম হেঁটেও আবার ফিরে এলো।
তাসফিকে সতর্ক করে বলল,
-” শুনো মেয়ে আমি যে যাচ্ছি এ কথা শ্বাশুড়ি মাকে আবার বলতে যেও না তারা ফিরে আসার আগেই আমি ফিরে আসবো বুঝেছো?”
তাসফি ভদ্র মেয়ের মতো নাথা নাড়লো।
তার বলার কোনো প্রশ্নই উঠে না।বরং সে যাচ্ছে বলে তাসফির আর একটু সুবিধা হলো।
যদিও উনি থাকলেও তার বেশি অসুবিধা হতো না।
ইনায়া চলে যেতেই তাসফি নিজের কাজ সারতে লাগলো দ্রুত কদমে।
সূর্য ডোবার কিছুক্ষণের মাঝেই অন্ধকার চারিদিকে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে।
রাত তখন প্রায় দশটার কাছাকাছি।
নিস্তব্ধ বাড়ি ফিরলো তখন।
কয়েকবার বেল বাঁজানোর পরেও কেউ দুরজা খুললো না। বিরক্তিতে তার কঁপাল কুঁচকে গেল। রুম্পাটা নিশ্চিত ঘুমিয়ে পড়েছে।
মূলত নিস্তব্ধ জানতো না আজ সবাই গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে।কেউ তাকে বলেও নি।
সন্দেহ বশত নিস্তব্ধ চাবি দিয়ে দরজা খুললো।
ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। কি আশ্চর্য কেউ কি আজ ড্রয়িংরুমে বাতি গুলো ওও জ্বালায় নি।
ভেবেছিলো বাইরের অন্ধকার পেরিয়ে বাড়িতে আলো দেখতে পাবে।কিন্তু না।
বিরক্তি নিয়ে লাইটের সুইচ দিতে গেল সে। সুইচ টেপার আগেি হঠাৎ চারপাশে ঝিলমিলি, লাল,হলুদ,নীল রংয়ের ফেইরিলাইট জ্বলে উঠলো।
নিস্তব্ধ হঠাৎ এমন কান্ডে কিছুটা চমকে উঠলো।
মস্তিষ্ক সজাগ করে চট করে সামনে তাকাতেই নিস্তব্ধ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো।তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হওয়ার উপক্রম প্রায়।
বাকরুদ্ধ নিস্তব্ধ’র হাতে থাকা ব্যাগটা ঠাস করে নিচে পরে গেল।
তাসফি লজ্জা মিশ্রত মুখে আড়ষ্টতার সহিত দাঁড়িয়ে আছে।তার পরনে খয়েরী রঙের সিল্কি শাড়ী।তাসফির ফর্সা ত্বকে দ্বারুন ভাবে ফুটে আছে তা। তার মশ্রিণ,স্লিম পেট উন্মুক্ত।
নিস্তব্ধ কয়েকপল তার থেকে চোখ ফেরাতে পারলো না। বিয়ের পর এই প্রথমবার প্রিয়তমাকে শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখছে সে তাও এমন নেশা ধরানো রুপে। অর্ধাঙ্গীনির মোহনীয় রুপে কোনো পুরুষ কি সুস্থ মস্তিষ্কে থাকতে পারে?উহু।নিস্তব্ধ’র জন্য এতবড় একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিলো তার কল্পনায় ওও ছিলো না।
অর্ধাঙ্গিনীর রুপের দমকে হৃদয়ে জাগছে কবিতা,
~~তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রুপে শত বার
জনমে জনমে,যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার,
কত রুপ ধরে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
…
আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে
মিলনবধূর লাজে____
পুরাতন প্রেম নিত্যনতুন সাজে।~~
~অনন্ত প্রেম/রবিঠাকুর ~
নিস্তব্ধ’র চাউনি লক্ষ করে তাসফি লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে। নিজে থেকে পদক্ষেপ নেওয়া কি তার একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে গেল?
এভাবে পোশাক পড়ে থাকতে তার আরো লজ্জা লাগছে। সব দোষ সর্নিধি।মেয়েটা ইচ্ছে করে তাকে এভাবে সাঁজিয়ে দিয়ে গেছে।ইশশ!
নিস্তব্ধ ঘোরগ্রস্ত বদনে এগিয়ে গেল প্রেয়সীর নিকট।
পেছন থেকে ঝাপটে জরিয়ে ধরলো।
তাসফি কেঁপে উঠলো।
নিস্তব্ধ তাসফির ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
-” আমায় মেরে ফেলার ধন্ধা করেছ নাকি বউ? আজ নির্ঘাত তোমায় না পেলে আমার মরণ অনিবার্য। ”
তাসফি চোখ বন্ধ করে নিলো।
কোনো রকমে নিস্তব্ধ’র বাঁধন ছেড়ে বেরিয়ে বলল,
-” কে..কেক কাটি।”
নিস্তব্ধ কে কিছুটা অস্থির দেখালো। উদ্ধিগ্ন স্বরে প্রত্যুত্তর করলো,
” আবার কেক কেন।”
তাসফিও রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,
-” কেক মানে আমি নিজে হাতে বানিয়েছি আর আপনি কাটবেন না।”
নিস্তব্ধ চমকে তাকালো।
তাসফি তাকে ঠেলে খানিকটা সামনে টেবিলে রাখা কেকের কাছে নিয়ে এলো।
নিস্তব্ধ অবাক হয়ে কেকের দিকে তাকিয়ে রইলো।
কেকের উপরে স্পষ্ট করে লেখা,
” হ্যাপি ম্যারেজ এনিভার্সারি ফর সিক্স মান্থ ডক্টর সাহেব। ”
তাসফিও ফিসফিস করে একি কথা বলল।
নিস্তব্ধ অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
-” এই কেক তুমি বানিয়েছ?”
তাসফি মাথা নাড়লো।
-” চাকু কই দাও কাটি।একটু টেস্ট করি।কেমন কেক বানালো মিসেস নিস্তব্ধ।তারপর তো আসল টে…. ”
তাসফি গরম চোখে তাকিয়ে নিস্তব্ধ’র বাহুতে থাপ্পড় বসালো।বেচারি আজ লজ্জায় আড়ষ্ট।
তাসফি চাকু এগিয়ে দিলো।
নিস্তব্ধ কেক কেটে প্রথমে তাসফিকে খাইয়ে দিলো।তারপর নিজে খেয়ে বলল
” দারুণ। ”
তাসফি খুশি হলো, মুচকি হাঁসলো।
নিস্তব্ধ পুনরায় নিজের মুখে কেক পুরে নিলো,
তার অশান্ত মস্তিষ্কে খেলা করছে দুষ্টুমির ঝোলা।
-” তাসফি কিছু বুঝে উঠার আগে তাদের দুজোড়া ওষ্ঠ একে অপরকে আলিঙ্গন করলো।
তাসফি দম নিয়ে কোনো রকমে বলল,
-” খাবার খেয়ে নেই।আমি রান্না করেছি তো।”
নিস্তব্ধ মাদকীয় স্বরে ফিসফিস করে বলল,
“খাওয়া দাওয়া পরে হবে, আই নিড ইউ বউ প্লিজ ।”
তাসফি পারেনা এখনি মাটি ফাঁক করে ঢুকে যায়।
“ওয়াইফ, আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ এনিমোর।প্লিজ
সামথিং …”
তাসফি নিজ হাতের সাহায্য নিস্তব্ধ’র মুখ চেপে ধরলো।
নিস্তব্ধ সঙ্গে সঙ্গে সে প্রেয়সীকে কোলে তুলে নিলো।
তাকে নিয়ে ঠাস করে সোফায় শুইয়ে দিলো।
তাসফি আমতাআমতা করে বলল,
-” উপরে যাই?”
নিস্তব্ধ দুষ্টু স্বরে সুধালো,
-” টাইম এন্ড টাইড ওয়েট ফর নান। সো টাইম লস করা বোকামি মাই মিসেস।”
তাসফি চোখ পিটপিট করে চাইলো।
নিস্তব্ধ নিচু হয়ে তাসফির পানে চেয়ে বলল
-” আজও কি অনুমতি প্রয়োজন।”
তাসফি লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
আজ নিজে থেকে সে একধাপ এগিয়ে এসেছে।সেখানে অনুমতি প্রশ্নই আসে না।
অতঃপর..অতঃপর, অতঃপর কপোত-কপোতীর মধুর মিলনের সাক্ষী হলো এই অন্ধকারে মোরা নিস্তব্ধ রাত।
জায়ার স্পর্শে কাতর হলো পতি।
সময় যত গড়ালো তাদের আলিঙ্গন গভীর থেকে গভীর তর হলো।নিস্তব্ধ’র ফ্রেস হওয়া হলো না।হলো না রেস্ট নেওয়া।
দূর আকাশের চাঁদমামা তার কলঙ্ক গায়ে মেখে মুচকি হাঁসছে।আজ তার খুশির দিন কিনা।
আজ বুঝি স্বামীর সোহাগে ওই সুন্দরী রমণীও মেখে নিবে নিজের গায়ে কলঙ্ক স্বইচ্ছায়, স্বগর্বে।
তাতে নেই কোনো ভয়, অপবিত্রতার ছোঁয়া।যাতে মিশে আছে শুধু হালাল সম্পর্ক, হালাল স্পর্শ।
আহাঃ এতেই যে চিরসুখ।
এই নিস্তব্ধ মধূর রাতে দূর হতে পেঁচার ডাক শুনতে ওও মধূর লাগছে।হৃদয়মাঝে বাজছে গান।
যেন তারা গাইছে গান মিষ্টি কন্ঠে ,
ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে
ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে।
ডালে ডালে ফুলে ফলে পাতায় পাতায় রে,
আড়ালে আড়ালে কোণে কোণে।
ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে,
ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে,।
সময় গড়িয়েছে অনেকটা।দীর্ঘ রজনীর পেরিয়ে খানিকটা।
নিস্তব্ধ’র উন্মুক্ত বক্ষে তাসফি মাথা রেখে শুয়ে আছে।
নিস্তব্ধ প্রেয়সীর ললাটে চুমু খেল।
হঠাৎ কিছু মনে হতেই সন্দেহ জনক কন্ঠে সুধালো,
-” সকালে ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছিলে?”
-” আপনাকে তখনই বললাম তো সর্নিধির সঙ্গে।”
-” সত্যিই? তবে ওভাবে ভয় পাচ্ছিলে কেন?”
” আসলে আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। আপনি কিছু শুনে ফেললে তো সব ভঙ্গ হয়ে যেত।তাই ভয় পাচ্ছিলাম আপনি আবার সব শুনে ফেলেননি তো।সর্নিধি তো আমায় এই আইডিয়া দিয়েছিল।আমায় সাজিয়ে দিয়ে গেল।ডেকোরেশনে সাহায্য করলো।”
নিস্তব্ধ ঠাট্টার ছলে বলল,
-” দেখেচ হাসবেন্ড ব্যতীত ওদের মাথায় কত বুদ্ধি আর তোমায় মাথায়? অন্যের থেকে বুদ্ধি ধার করতে হয়।”
তাসফি ভেঙচি কেটে বলল
-” কচু।”
নিস্তব্ধ তাসফিকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল,
-” থ্যাংকিউ, থ্যাংকিউ সো মাচ ওয়াইফ।এত সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। সঙ্গে আজ রাতের জন্য তোমার কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। আজ রাতটা এতটা স্পেশাল করার জন্য তোমায় এত্ত গুলা ধন্যবাদ।”
তাসফি লজ্জায় নিজ অর্ধাঙ্গের বক্ষে মাথা গুজলো।
তাদের আলিঙ্গনের ভেতরেই কেটে গেল দীর্ঘ একটি রজনী।
নিয়ম মাফিক সময় পার হলো।সূর্য্যিমামা ঊদয় হলো ধরণীর বুকে পূর্ব দিগন্তে।
চারদিকে আলো জ্বলমল করে উঠলো।
ধূসর রংধনু পর্ব ৪৯
সকাল তখন দশটা প্রায়।
কপোত-কপোতীর ঘুমকে হারাম করতে কলিংবেল বেঁজে উঠলো।
এই অসময়ে আবার কে এলো।
কারও তো আসার কথা নয় আজ।তবে..?