অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭৩
নুসাইবা ইভানা
নীল রঙের শাড়ী, সাথে সাদা রঙের ব্লাউজ, শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুঁজে রাখা। চুলগুলো খোপা করা। কোমড়ে জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। রমনী ব্যস্ত হাতে রান্না করছে৷ হাতে রিনিকঝিনিক করছে সাদা,নীল রেশমি কাঁচের চুড়ি৷
” অনিকেত ঘুম থেকে উঠেছে বেলা করে। এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সায়নাকে দেখছে৷ কি দারুণ লাগছে! যখন তরকারি নেড়ে দিচ্ছি৷ চুড়িগুলো শব্দ করছে৷ অনিকেতের ইচ্ছে করছে সায়নার চুলগুলো খুলে দিতে। ধীরে পায়ে সায়নার পেছনে যেয়ে দাঁড়ালো।
“সয়না ঘাড় না ঘুরিয়ে বলল,টেবিলে ওটস পুডিং রাখা আছে খেয়ে নিন।
” তুমি কি করে বুঝলে আমি এসেছি৷
“সায়না খুন্তি হাতে সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো৷ কোমড়ে এক হাত রেখে বলে,আমার মাথায় তো বুদ্ধি আছে তাই বুঝেছি।
” সব সময় এমন সাপের মত ফোঁসফোঁস করো কেন!
“কারন তুমি সব সময় করলার মত কথা বলো তাই।
” অনিকেত সায়নার দিকে তাকিয়ে আছে৷ একবার সায়নার উন্মুক্ত কোমড়ের দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার চেহারার দিকে৷
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এভাবে কি দেখছো আগে কখনো দেখোনি?
“অনিকেত চোখ বন্ধ করে বলে,আমার ইচ্ছে করছে, তোমাকে কোলে তুলে সোজা বেড রুমে নিয়ে যেতে।
” সায়না আরো দু’কদম সামনে এসে দাঁড়ালো। তোমার কি ইচ্ছে করছে?সেটা তুমি করতে পারবে? ওই সাহস তোমার আছে?
“অনিকেত ফট করে চোখ খুলে সায়নাকে কোলে তুলে নিলো৷ গ্যাস বন্ধ করে সোজা চলে গেলো বেডরুমে।
” সয়না অনিকেতের গলা জড়িয়ে ধরে আছে।
“অনিকেত সায়নাকে বেডে বসিয়ে দিয়েই সাথে সাথে সায়নার ঠোঁট দু’টো আঁকড়ে ধরলো নিজের ঠোঁট দিয়ে৷ দীর্ঘ সময় পর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে সায়নার চোখের উপর আঙুল রেখে বলে,তুমি চোখ খুললে আমি লজ্জা পাবো৷ চোখ বন্ধ রাখো। আমার ভিষণ প্রেম পাচ্ছে। এই অবেলায় এমন প্রেম করতে লজ্জা তো লাগবেই তাইনা।
” বৌকে আদর করতে বেলা অবেলা লাগে নাকি হাঁদারাম।
“চুপ একদম কথা বলবে না। কথা বললে কিন্তু ঠোঁট নাড়াতে পারবে না৷ কামড়ে ধরে রাখবো।
” সায়নার ভিষণ লজ্জা লাগছে। তার লাজুক বরটাও কিনা শেষমেশ বেশরম হয়ে উঠলো।
” দুপুর একটা বাজে ডাক্তার সাহেব তার বৌকে ভালোবাসায় সিক্ত করে দিতে ব্যস্ত। এ যেনো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য। অনিকেতের কানের কাছে ফিসফিস করে কথাটা বলল,সায়না৷
নাস্তা করে রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো চৌধুরী বাড়ির উদ্দেশ্যে৷
জাহানারা বেগম দুপুরের খাবার খেয়ে বিকেলে যেতে বলেছিলো৷ কিন্তু জিয়ান তাকে বুঝিয়ে বলে চলে গেলো নয়নাকে নিয়ে।
“গাড়িরতে পাশাপাশি বসে আছে দু’জনে৷ নয়নার মনে আজ যেনো বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ। এই যে একটা মানুষ, সেই মানুষটা কেবল পাশে আছে বলেই নয়নার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। নয়না জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,জানেন?
” উঁহু জানাও জানতে চাই।
“সবচেয়ে আনন্দ যে মানুষটা দিতে পারে, সেই মানুষটাই সবচেয়ে বড় কষ্ট দিতে পারে৷ সে ছাড়া জগতে আর কারো সাধ্য নেই অমন কষ্ট বা সুখ অনুভব করানোর৷
” জিয়ান নয়নাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলে,জগতে সুখর,দুঃখ দুটো একে অপরের পরিপূরক। দুঃখ না থাকলে সুখের সময়টা অমন করে অনুভব করা যায় না। আবার কেউ সারাজীবন সুখে থাকলে সুখটাকেও পানসে মনে হয়৷
“আপনি কি আমার দুঃখের কারন হবেন?
” দেখো আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ আমরা যাদের ভালোবাসি পৃথিবীর সব সুখ তার নামে লিখে দিতে চাই৷কিন্তু আমারা নিজেদের অজান্তেই তাদের দুঃখও দিয়ে থাকি।
“নয়নার মন ভার হয়ে গেলো৷ চুপ করে রইলো সে৷
” জিয়ান আঁচ করতে পারলো নয়নার মন খারাপ। আলতো করে নয়নার গাল টেনে বলে,ভালোবাসি বৌ এবার একটু হাসো।
“নয়না হাসলো না৷ সে যেনো মনে মনে পণ করেছে হাসবে না৷
” তুমি চাইছো আমি তোমাকে কাতুকুতু দেই?
“উঁহু। শুনেন আপনি মোটেও আমার মন মত উত্তর দেননি তাই আমি রেগে আছি৷ হাসবো না।
” রেগে আছো মানে?
“আমি কি করলাম!
” আপনি তো উত্তর দিতে পারতেন জীবনেও আমাকে কষ্ট দিবেন না৷ কিন্তু আপনি কি উত্তর দিলেন! সরেন আমাকে একদম টাচ করবেন না আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না৷
“আরেহহহ জান আমি শুধু বাস্তবতা বললাম। এই কান ধরছি আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ ক্ষমা করে দাও।
“নয়না জিয়ানের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,আহা পাইলট রেজা চৌধুরী কান ধরে ক্ষমা চাইছে৷
“যাকে ভালোবাসি তারজন্য সব করতে পারি৷
” নয়না জিয়ানের হাত ধরে বলে,আমার না জাহিন ভাইয়াকে ভালো লাগে না৷ আপনিই বলুন আমি তার বড় ভাইয়ের বৌ আমার সাথে এরকম মজা করার কোন মানে হয়! আবার আপনার মত সেম পাঞ্জাবি পরেছে৷
“তুমি একটু বেশিই ভাবছো জান। আমি জাহিনের সাথে কথা বলবো। বেচারা নিজেও লজ্জিত।
জাহিনের ফোন সুইচড অফ। সে যেনো নিজের কাছেই বারবার হেরে যাচ্ছে। ভালোবাসার মানুষের দেয়া ক্ষত মানুষকে ভেতর থেকে শেষ করে দেয়। এতো ভালোবাসার পরেও মানুষ কি করে সেই মানুষটাকে ঠকাতে পারে! সারারাত এসব যন্ত্রণা তাকে তাড়া করেছে৷ ঘুমাতে পারেনি পুরো রাত৷ সকালে ঘুম ভাঙলো বেলা এগারোটায়৷ মোবাইল অন করে প্রথমে কল করলো অন্তর কে৷ অন্তরে ফোন ওয়েটিং। মোবাইল বেডের উপর রেখে ফ্রেশ হয়ে আসলো৷ অন্তরে একটা টেক্সট করে ফোনটা আবার সুইচড অফ করে রাখলো।
” এভোকাডো টোস্ট আর ব্ল্যাক কফি দিয়ে সকালের নাস্তা শেষ করে। বের হলো বাসা থেকে।
অন্তর জাহিনের টেক্সট দেখে। তুষিকে কল করে বলল,আজকেই তোমার সমস্যার সমাধান করে ফেলবো৷ জাহিন দেশে ফিরে এসেছে৷
“তুষিও খুব আনন্দিত। এতোদিন ধরে মনের মধ্যে গিল্টি ফিলিংসটা তাকে নয়নার কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছিলো৷ এটার সমাধান হলে সে নয়নার কাছে ক্ষমা চাইবে৷
” জাহিন বসে আছে আরামবাগের একটা গোডাউনে। ব্ল্যাক শার্ট, ব্ল্যাক জিন্স, ব্ল্যাক সানগ্লাস, ব্ল্যাক ওয়াচ। দু’ঠোঁটে চেপে রাখা সিগারেট। তাকে এখন মাফিয়া কিং লাগছে৷ এটা হলো জাহিন আর অন্তরের সিক্রেট মিটিং রুম। কেউ ধারনাও করতে পারবে না। এই মাটির নিচে এমন কোন রুম থাকতে পারে৷
“অন্তর যখন আরামবাগ পৌঁছালো। তখন বেলা তিনটে বাজে৷ অন্তরের ফোনে পরপর কয়েকটা মেসেজ আসলো। সাথে অনেকগুলো অডিও ক্লিপ। অন্তরের হাত পা কাঁপছে৷ চোখদুটো লাল হয়ে উঠেছে। জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে এগিয়ে গেলো। বাসাটার দিকে৷ গলির শেষ মাথায় এক তলা একটা বাসা। বাসার এক সাইডে সুতার গোডাউন।তার ঠিক নিচেই তাদের সিক্রেট মিটিং রুম। অন্তর ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। তারপর গোপন দরজার সাহায্যে পৌঁছে গেলে কাঙ্ক্ষিত স্থানে৷
” জাহিন তখন পায়ের উপর পা তুলে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে।
“অন্তর নিজের পকেটে থেকে পি’স্তল বের করে জাহিনের মাথা বরাবর তাক করে বলে,আমি তোকে নিজের ভাই ভেবেছি৷ তুই না রাখলি বন্ধুত্বের সম্পর্ক আর না ভাইয়ের। আমার বোনের খুনিদের সাহায্য করেছিস। আমি তোকে বাঁচিয়ে রাখবো না। তোকে মারতে আমার কষ্ট হবে৷ তবে আমি চাইনা তোরমত কর্মকর্তার জন্য দোষীরা এভাবে ঘুরে বেড়াক। আইন তো মানুষকে রক্ষা করার জন্য। তুই বলেছিলে এই গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যুক্ত হয়েছিস মানুষকে ন্যায় বিচার দিতে। অথচ সামন্য টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেলি! তোর তো টাকার অভাব ছিলো না জাহিন৷ তবুও কেন করলি তুই এসব৷
” জাহিন নিজের ব’বন্দুক সোজা অন্তরের কিডনি বরাবর তাক করে বলে,আমি যা করেছি তাতেই ভালো৷ তুই কি ভেবেছিস আমি না বুঝে এসব করেছি?
“মান্নাত মেয়েটা তোর উপর ভরসা করে আছে৷ তার বিশ্বাস তুই তার বাবা মায়ের হত্যাকারীকে শাস্তি দিবি।
” অন্তর অন্যের জন্য নিজের জীবন ঝুঁকিতে কেন ফেলেবো!এটা রাজনীতি দাবা এখানে চাল ঘুরতে থাকে। ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শোন।
“অন্তর তাচ্ছিল্য হেসে বলে,আমার বোনটাকে ওরা মেরে ফেললো। আর তুই তাদের বাঁচিয়ে দিলি! আজ এখান থেকে যেকোন একজন জীবিত বের হবে৷ হয়ত তুই নয়ত আমি।
” জাহিন চৌধুরীকে কেউ হারাতে পারে না। তুই আমার বন্ধু তোকে মারার কোন ইচ্ছে আমার নেই। আমার কথা শোন নিজের জীবন নিয়ে বেঁচে থাক।
মেহরনুর সব লাগেজ গুছিয়ে নিয়েছে৷ আগামী কাল তার ফ্লাইট। এখানে আর পরে থাকার মানে হয় না।
“মিতা বেগম অনেক বুঝিয়েছে। কিন্তু মেহনুর এখানে থাকতে রাজি নয়৷ মেহনুর সোফায় বসে সংবাদ দেখছিলো৷ হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজে দরজার দিকে ফিরে তাকালো৷
” একজন সার্ভেন্ট দরজা খুলে দিলো।
অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭২
“মেহনুর দেখলো, জিয়ান আর নয়না দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে৷ নয়নার পড়নে মেরুন রঙের একটা পাকিস্তানি থ্রিপিস। নয়নার হাত জিয়ানের হাতে আবদ্ধ। কি যত্নে আগলে রেখেছে জিয়ান নয়নার হাত। মেহনুরের চোখের কোনে অশ্রু জমা হলো৷ পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে যাদের কপালে ভালোবাসা পাওয়ার ভাগ্য থাকে না। মেহনুরের নিজেকে সেই দুর্ভাগা মনে হচ্ছে। দ্রুত চোখের কোণে জমা থাকা জলটুকু মুছে নিলো সকলের আড়ালে৷
golpo ta Valoi aro romantic golpo Chai