মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৭

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৭
ইশরাত জাহান

হো হো করে হেসে দেয় সোনালী।রুদ্রকে স্ক্রল করে নেয় একবার।তারপর ব্যাঙ্গ করে বলে,”ভালোই দুষ্টুমি করতে শিখেছিস।কিন্তু এখন তো এসবের সময় না।যত রকমের অভিনয় পরে দেখা।এখন সর আমাকে আমার কাজ করতে দে।”
ফিচেল হেসে রুদ্র বলে,”একচুয়ালি ইউ আর রাইট।তোমাকে এখানে না সোজা আমার আস্তানায় নিয়ে যেতে হবে।তাহলে হয়তো বুঝতে পারবে কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা।”
এবার যেনো মুখের হাসি নিভে গেলো সোনালীর।রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,”এসবের মানে কি?তুই কবে থেকে CID অফিসার হয়েছিস?”

এবার ব্যাঙ্গ ভাব আসে রুদ্রের চোখে মুখে।সোনালীর চোখে চোখ রেখে বলে,”যেদিন থেকে জানতে পেরেছি আমার আসল পরিচয় ঠিক সেদিন থেকে।”
ঘাবড়ে যায় সোনালী।রুদ্র নিজের পরিচয় জানে মানে কি?কিভাবে জানবে সে?যার জানার কথা তাকে তো শেষ করে দিয়েছে সোনালী।বিভান এবার তেড়ে আসে সোনালীর কাছে।সোনালীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,”এগুলোর মানে কি সোনালী?এটা আবার কোন নাটক!”
আদ্রর দিকে তাকিয়ে রুদ্র আর আদ্র দুজনেই হেসে দেয়।তারপর রুদ্র বলে,”নাটক তো সাজিয়েছিলেন আপনারা আর শেষ করব আমরা।এই নাটকের শেষ আজ হবে।”
“দুদিনের শিশু আমাদেরকে টক্কর দেও।তোমাদের থেকে বড় বড় মাপের লোক আমার সাথে টক্কর দিয়ে হেরে গেছে।”(অহংকারের সাথে বলে বিভান)

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মায়া রাগ বাড়ানোর জন্য বলে,”একটু ভুল করলেন।বড় বড় লোক আপনাদের সাথে টক্কর দিলেও আপনাদেরকে টুপি পরিয়ে এভাবে ঘোল খাওয়ায় না।যেটা আমরা খাইয়ে দিয়েছি।তাহলে বুঝুন কত ট্যালেন্টেড আমরা।”
বিভানের ইগোতে লেগেছে কথাটি।কিন্তু সে কিছু বলার আগে মোহন সরদার বলে,”রুদ্রর আসল পরিচয় মানে কি সোনালী?এসব কি বলছে রুদ্র? আর তুমি কবে থেকে জব করো?”(শেষের কথাটি রুদ্রকে বলে)
“আপনি কোনো দিন ছেলে সন্তানের জন্ম দিতে পারেননি মিস্টার মোহন সরদার।আপনাকে এতগুলো বছর ধরে ঘোরে রাখা হয়েছিলো।”(মায়া বলে)

সোনালী এবার মায়াকে ধমকে বলে,”হে ইউ!একদম চুপ।তুমি রুদ্রকে ভুলভাল বুঝিয়েছো।কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে? শোন রুদ্র এই মেয়ে তোকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।মনে নেই তোকে ড্রিংক করিয়ে মিথ্যা ভিডিও বানায়।তারপর ওই জেসিকে দিয়ে ভুয়া প্রেগনেন্ট বানিয়ে অপমান করে তোকে।আসলে ও চায় না তুই সরদার বাড়ির সম্পত্তির মালিক হ।ও তোকে বিভ্রান্ত করছে এসব বলে।”
রুদ্র কিছু বলতে যাবে ওমনি আদ্র বলে ওঠে,”ওহ রিয়েলি!তারমানে আমার ভাইকে আমি যেটা বলেছি সেটা ভুল আপনি পালিত মা হয়ে ঠিক।এতদিন তাহলে রুদ্রের মনে যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে ওটা মিথ্যে।আমাদের মা বাবাকে যে আপনি আগুনে পুড়ে মেরেছেন ওটাও মিথ্যে?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ সব মিথ্যে।এই মেয়ে যা বলেছে সব..”
কিছুক্ষণ চুপ করে সোনালী বলে ওঠে,”কি বললে তুমি!তুমি ওকে সব বলেছো আর তুমি ওর ভাই।মানে কি এসবের?”

“মিস্টার আহান এন্ড মিসেস অবনি চিনতে পারছেন?আমরা তারই সন্তান।আমি বড় সন্তান আর রুদ্র ছোট সন্তান।এবার নিশ্চয়ই সব ক্লিয়ার।”
আদ্রের কথা শুনে মোহন সরদার বলে,”এরা কারা সোনালী?রুদ্র তাহলে আমার সন্তান না?”
সোনালী এবার ঘাবড়ে যায়।যে করে হোক খেলা পাল্টে দিতে চায় সে।তাই রুদ্রর দুই গাল ছুঁয়ে বলে,”শোন রুদ্র এরা মিথ্যে বলছে।আসলে তুই আমার ছেলে।এই সরদার বাড়ির ছেলে।এদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই।শুধু মিথ্যে বলে উস্কে দিচ্ছে তোকে।তুই হিয়াকে নিয়ে লুকিয়ে থাক।আমি সবকিছু নিয়ে তোদের বিয়ে দিয়ে দিবো।এই কাটা গুলোকে উপড়ে ফেলতে হবে।এরা তো তোকে বদনাম করেছিলো।তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় এই রাজ।ওদেরকেও আমরা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।আমি তুই হিয়া এরা রাজত্ব করব।”

সোনালীর দুই হাত ধরে গাল থেকে ছাড়িয়ে রুদ্র বলে,”আমাকে ওই বাড়ি থেকে প্ল্যান করে বের করে দেওয়া আমার ইচ্ছায় হয়।আসলে মায়ার উদ্দেশ্য ছিলো এটা।ও চেয়েছিলো আমার দ্বারা মোহন সরদারকে অপদস্থ করবে।ইনফ্যাক্ট সেটা করতে পেরেছে।আজ মোহন সরদার পুরো সমাজের সামনে কলঙ্কিত।তার মুখ দেখানোর কোনো জায়গা নেই।ওহ হ্যাঁ!সেদিন মায়া আমাকে কোনো ড্রিংক দেয়না।সেদিন যেটা মায়া আমাকে দেয় ওটা পানি থাকে।কিন্তু তুমি ভেবে নেও আমি ড্রিংক করে ওগুলো বলেছি।আসলে সবাইকে বোঝাতে চেয়েছিলাম মোহন সরদার আর সোনালীর সন্তান অবৈধ।এমনকি তারা চলেও তার মতো করে।মায়ার এই ইচ্ছাটা সাকসেস।আর আমাকে বাড়ি থেকে তাড়ানো হয় না আমিই বের হয়ে যাই।কেনো জানো?”

সোনালী মাথা নাড়িয়ে জানতে চায়।রুদ্র বলে ওঠে,”কারণ আমাকে লন্ডন যেতে হতো তাই।মানিকের খোঁজ পেতে আমি আমার লোক নিয়ে চলে যাই লন্ডন।তানাহলে তো আমরা মানিকের খোঁজ পাবো না।আমি আর জেসি মিথ্যে স্বামী স্ত্রী সেজে লন্ডনে গিয়েছিলাম।তোমরা যে আশ্রমে মানিককে রেখেছিলে ওখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মানিক বর্তমানে মিস্টার বিভানের কোম্পানিতে কাজ করে।ওকে ওখান থেকে উদ্ধার করতেই আমাকে যেতে হয়।ওকে উদ্ধার করার পর ওই জায়গার কিছু সিক্রেট হেল্পিং হ্যান্ডদের বের করে জেলে দেই।আমি তোমার কাছে কৌশলে জেনে নেই কে তোমার আরেক পার্টনার।তুমি আমাকে বলেও দেও।আমি ওটা মায়াকে টেক্সট করে দেই।আর তার ঠিক দুই মিনিট পর হাসির কল আসে মায়ার ফোনে।”

এবার মায়া বলে ওঠে,”এক্সাক্টলি তাই।আপনি যখন আমার সাথে কথা বলছিলেন তখন হাসির কল আসে।কল রিসিভ করার আগে ফোনের স্ক্রিনে কল এর সাথে আমি রুদ্রের এসএমএস দেখে নেই।তারপর আমি আমার মত করে প্ল্যান করি।যদি হাসি বেচে যায় তাহলে ওকে হসপিটালে সেন্সলেস রোগী বানিয়ে রাখব আর যদি মারা যায় তাহলে আপনাদের সামনে মিথ্যে অভিনয় করব।ইনফ্যাক্ট জানেন তো আপনাদের মিহির এখন কোথায়?”
বলেই মায়া আঙ্গুলটা উপরের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।আকাশের দিকে ইশারা করে বলে,”নিজের মায়ের খুনের হিসাব দিচ্ছে। আর আপনাদের বিষয়ে প্রমাণ তো আমি পেয়েছি হাসির করে রাখা ভিডিও দেখে।আমার এক মাকে বাঁচাতে আমার আরেক মাকে জীবন দিতে হয়েছে।এই সব আপনাদের জন্য।”
কথাগুলো বলেই মায়া তেড়ে যেতে থাকে।রাজ এসে মায়াকে আটকে বলে,”শান্ত হও মায়াবতী।আমার মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণ হবে।তবে বাকিদের হিসাবটাও তো বুঝে নিতে হবে।”

মায়ার আরেক কাধে মালিনী হাত রেখে বলে,”একটু শান্ত হও।আমরা বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা।যার জন্য তোমার মায়ের এই অবস্থা তাকে দেখলে তোমার যেমন লাগছে ঠিক আমারও স্বামীর মৃত্যুতে সন্তান থেকে দূরে থাকা এমনকি বাবার মৃত্যুতে এমন লেগেছিলো।কিন্তু আমি অসহায় ছিলাম।ভাগ্য হয়তো তোমার হাত দিয়ে তোমার ইচ্ছা দ্বারা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করবে।তাই বলছি একটু শান্ত হও।”
মালিনীর কথা শুনে মায়া শান্ত হয়।তার থেকেও বড় কথা মায়ার মাথাটা এখন রাজের বুকের সাথে মিশে আছে।যেটা মায়াকে খুব ভালোভাবে শান্ত করে দেয়।রাজের বক্ষে মায়ার শান্তি।মায়া শুধু ফোঁসফোঁস করতে থাকে।এদের এসবকিছু পাত্তা না দিয়ে সোনালী বলে,”তার মানে এই চক্রান্ত শুরু থেকে তোর?আমার পিঠ পিছে তুই এসব করেছিস!তোকে নিজের ছেলের জায়গা দিয়েছিলাম।বাবা মা মারা গেলেও আমি তোকে অনাথ করিনি।আর তুই আমাকে ধোঁকা দিলি।”

রুদ্র এবার রক্তচক্ষু করে সোনালীর কাছে এসে ওর গলা চেপে ধরে।সোনালী রুদ্রের হাত ধরে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।রুদ্র বলে ওঠে,”লজ্জা করে না তোর একটা মায়ের কোল থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান চুরি করতে?লজ্জা করে না নিজের জন্ম দেওয়া সন্তানকে ওই অন্ধকার রাতে অন্য শিশুর স্থানে রেখে দিতে?আর এই মিথ্যা লুকাতে তুই আবার খুন করেছিলি আমার বাবা মাকে।”

কথাগুলো বলে রুদ্র আরো জোরে গলা টিপে ধরে সোনালীর।ঘরে থাকা বাচ্চারা এমনি ভয় পেয়েছিলো এখন আবার খুশি হয়।কারণ সোনালী খারাপ ছিলো ও মায়াকে মারতে আসে।বাচ্চাদের কাছে মায়া মহান।তাই তো মায়াকে যারা মারতে চায় আর তাদেরকে মারতে দেখে বাচ্চারা খুশি হয়।আশেপাশে গার্ডগুলো এখন মায়ার লোকের দ্বারা আহত।তারা নিজেরাই উঠতে পারছে না।আধমরা হয়ে পড়ে আছে মাটিতে।মিলি কান্না করে দেয়।রুদ্রর এই রূপ আবার রুদ্রর কাছে ভিন্ন কথা।এই সোনালী কি কি করেছে তা যেনো একদিনে সব প্রকাশ হতে থাকে।মাথা ঘুরে উঠছে মিলির।মায়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।রাজের বুকে মুখ রেখে রুদ্রের এই দৃশ্য দেখে হাসতে থাকে মায়া।আদ্র এসে রুদ্রকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”আইনকে আইনের মত করে ব্যাবহার কর ভাই।নিজের হাতে আইন নিয়ে নিস না।যদি এমনটাই হতো তাহলে এতদিনে এই সোনালীকে আমি বা মায়ারাজ জীবিত রাখতাম না।কবেই শেষ করে দিতাম।”
চেঁচিয়ে ওঠে মোহন সরদার।আর্তনাদ নিয়ে বলে,”কি হচ্ছে টা কি?আমাকে স্পষ্ট করে সবকিছু বলো।”

আদ্র পকেটে হাত রেখে বলে,”মিসেস সোনালী যখন কনসিভ করেন তখন আপনি শর্ত দেন যে আপনার ছেলে সন্তান লাগবে।ছেলে হলে আপনি মিসেস সোনালীকে মেনে নিবেন।কিন্তু আপনাদের কোনো ছেলে হয়নি।আপনি আপনার উত্তরাধিকারী হিসেবে কোনো ছেলে পাননি।পেয়েছিলেন মেয়ে সন্তান। যখন মিসেস সোনালী নিজের মেয়েকে দেখেন তখন তিনি বুদ্ধি করে নার্স ও ডাক্তারকে টাকা দিয়ে বাচ্চা বদল করেন।ওইদিন একই হসপিটালে সদ্য জন্ম নেয় আমার ভাই রুদ্র।আমি আর বাবা তখন মায়ের পাশের বেডে ঘুমিয়ে ছিলাম।মাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয় সাথে আমাদের খাবারে ঘুমের ঔষধ।কিন্তু ওইদিন আমরা এগুলো কিছু বুঝে উঠতে পারি না।পরদিন যখন ভাইকে খুঁজে পাওয়া যায় না তখন মা আর বাবা হাসপাতালে ঝামেলা করে।

নার্স আর ডাক্তারের একটাই কথা মা ওইদিন মেয়ে জন্ম দিয়েছিলো।আমিও মা বাবার সাথে তাল মিলিয়ে বলি যে আমার ভাই হয়।কিন্তু ডাক্তার হাসপাতালের রেপুটেশনের জন্য আমাদের মিথ্যা বলেন বারবার।ইনফ্যাক্ট একটা ফ্যাক রিপোর্ট ধরিয়ে দেয়।পুলিশ এসেও মিথ্যা রিপোর্ট দেখে আমাদের বকতে থাকে।কিন্তু আমার বাবা থেমে থাকেনি।মেয়েটিকে বাসায় আনার পর ওকে যত্ন করে মা।অন্যদিকে বাবা চলে যায় আরেক পুলিশের কাছে।তাকে সবকিছু ফুল ডিটেইলস বললে সে হেল্প করতে থাকে।কিন্তু যথাযত প্রমাণের অভাবে কেউ কিছু করতে পারে না।এদিকে রুদ্রের মুখের সাথে আমার মায়ের চেহারার মিল থাকে অনেক।যেটা মিসেস সোনালীর বড় বোন ধরে ফেলেন।কারণ তিনি আমার মায়ের বান্ধবী।চেহারার মিল ছাড়াও মায়ের কাছে শুনেছিলো ডেলিভারির রাতে রুদ্র হারিয়ে যায়।তার বদলে অন্য মেয়ে আসে।

একই রাত একই হাসপাতালের নাম শুনে ওই আণ্টি বুঝে যান এই কাজ মিসেস সোনালী করেন।কারণ তার মতে মিসেস সোনালী মোহন সরদারের জন্য পাগল।তাকে পেতে এগুলো করতে পারে মিসেস সোনালী।রুদ্রকে কোলে নিয়ে তিনি রুদ্রের নাম ঠিক করেন।মূলত ওই আন্টির কাছে মা বলেছিলো আমার ছোট ভাইয়ের নাম রুদ্র দিবে।আদ্রর ভাই রুদ্র।তাই হলো।মিসেস সোনালী মেনে নিলেন।তারপর যেই আপনাকে মিসেস সোনালী বিয়ে করেন তার পরের দিন ওই আন্টি মাকে সব বলে দেন।অন্যদিকে মিসেস সোনালীকে বোঝাতে থাকেন যার সন্তান তাকে দিয়ে দিতে।মা নিজেও অনেকবার দাবি করেন।কয়েকবার আসতে চায় সরদার বাড়ির ভিতর কিন্তু মিসেস সোনালী রুদ্রের ক্ষতি করে দিবে বলে ভয় দেখায়।শুধু তাই না মা বাবা মিসেস সোনালীর দুই নাম্বার ব্যাবসার ব্যাপারে জেনে যান।সাথে জেনে যান মায়ার ব্যাপারে।তাই কোনো কিছু না পেরে যোগাযোগ করেন শাহানা আন্টির সাথে।”
অদ্রকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সোনালী বলে,”সবকিছু বুঝলাম কিন্তু আমার সেই মেয়ে কই?তাকে কি মেরে দিয়েছো তোমরা?”

আদ্র ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে দেয়।তারপর বলে,”ওসব নোংরা কাজ আপনি করতে পারেন আমরা না।এতগুলো মানুষের জীবন নষ্ট করেছেন আপনি।আমরা শুধু তারই ফল দিচ্ছি আপনাকে।কিন্তু এতগুলো বছর পর আপন সন্তানের খোঁজ যখন চাচ্ছেন তাহলে দেখিয়েই দেই সেই সন্তানকে।”
বলেই আদ্র আঙুল তাক করে দেখায়।সোনালী আর মোহন সরদার তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।সোনালীর মুখ থেকে বের হয়,”মৌ!”
আঙ্গুল সরিয়ে হাত পকেটে রেখে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আদ্র বলে,”হ্যাঁ আপনার আর মোহন সরদারের মেয়ে এই মৌ।যাকে কোলে পিঠে বড় করেছে শাহানা আণ্টি আর মায়া।”

মৌয়ের চোখে পানি।মুখটা এদিক ওদিক করছে সে।মায়া তাকিয়ে দেখছে মৌকে।মুখ ফুটে বলে,”কষ্ট হচ্ছে বোন?”
মৌ কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,”এদের মতো বাজে বাবা মায়ের জন্য কখনও কষ্ট হয় না আমার।”
কথাগুলো শুনে অনুতপ্ত হলো মোহন সরদার।তার মেয়েরা আজ তাকে ঘৃণা করে।মোহন সরদার বলে,”ছিঃ সোনালী ছিঃ।এতগুলো অভিনয় করলে তুমি।আমার সন্তানেরা আজ আমাকে ঘৃণা করছে।”
“ওহ হেলো মোহন সরদার।তোমাকে কেউ আমার জন্য ঘৃণা করেনি।কি বলো তো।তুমি আগে যেমন লোক ছিলে তাতে মৌকে মেনে নিতে না।বরং অস্বীকার করে আমাকে আর মৌকে পথে বসিয়ে দিতে।দেখ মা আমি যা করেছি তাতে তোর ভালো হয়েছে।এই লোক কখনোই নিজের স্বার্থ ছাড়া বোঝেনি।আজ নাটক করছে ভালো সাজার।কারণ ওর কাছে তো কোনো অপশন নেই।”
“অপশন আজ তোমার কাছেও নেই সোনালী।আমি যে ফিরে এসেছি।জলজ্যান্ত প্রমাণ হয়ে।আর তোমার সব সত্যতা ফাঁস করতে।”

মায়ের কণ্ঠ পেয়ে পিছনে ঘুরে দাঁড়ায় মায়া।শাহানা পারভীনকে দেখে মায়া যেনো থমকে আছে।বিশ্বাস হচ্ছে না তার চোখকে। দৌড়ে যেয়ে মায়া জড়িয়ে ধরে শাহানা পারভীনকে।এতগুলো বছর পর মা মেয়ে আজ এক হলো।সেই কালো বর্ণের যুবতীকে আজ বয়স্ক মহিলা রূপে দেখছে মোহন সরদার।মায়া ওর মাকে জড়িয়ে বলে,”তুমি কখন সুস্থ হলে?আমাকে কেউ জানায় নি কেনো?”
পিছন থেকে সিয়া বলে,”আসলে আজকে সকালে আমি যে রুমে ছিলাম ওই রুমে গ্লাস ভাঙার শব্দ পাই।সন্দেহ হয় তাই আমি আন্টির ঘরে যাই।দেখতে পাই আয়রা ওয়াশরুমে তাই আন্টি পানি খেতে উঠতে চেষ্টা করে।আদ্র আমাকে বলেছিলো আন্টি যেকোনো মুহূর্তেই সুস্থ হয়ে যাবেন।কারণ আন্টিকে নতুনভাবে আদ্র যেভাবে অপারেশন করেছিলেন তাতে আদ্র 95% শিওর ছিলো খুব তাড়াতাড়ি রিকোভার করবে আন্টি।আমি অদ্রকে বারবার কল করি এই জন্য।কিন্তু ওর কোনো খোঁজ পাই না।মনে পড়ে কাল রাতে তুমি ফোনে কাকে বলেছিলে আজ আশ্রমে আসবে।আমি তো এগুলোর কিছু জানতাম না তাই তোমাকে খোঁজ দিতে আসি যে আন্টি উঠে বসেছেন।কিন্তু এখানে আসার আগে তো আয়রাকে বলেছিলাম আন্টির সাথে থাকতে।”

শাহানা পারভীন এবার সবাইকে দেখতে থাকেন।মোহন সরদারের দিকে চোখ যেতেই তার ঘৃণা বেড়ে যায়।তারপরও সে চোখ সরিয়ে নেয়।সেই দৃষ্টিগুলো বুঝে যায় মোহন সরদার। তিনিও কিছু না বলে মাথা নত করে।আশেপাশে মালিনী ও বিভানের লোকগুলোর দেহ পড়ে আছে।শাহানা পারভীন ওদের দেখে বলেন,”আমার মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে।মায়ের অন্যায়ের বিচার করতে শিখেছে।আমার শাহমীর বাবাটাও অনেক বড় হয়ে গেছে।”
মায়া মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে বলে,”সে যাই হোক।তুমি এখানে আসতে গেলে কেনো?”
শাহানা পারভীন মায়ার মুখে হাত রেখে বলেন,”শোনো মেয়ের কথা!আমার মেয়ে এত বড় মিশনে এসেছে আমি তার পাশে থাকব না?আমি আজ সুস্থ হয়েই আয়রার কাছে শুনলাম তোর কথা।তাই ওর বারণ না শুনেই এখানে ছুটে এসেছি।”

পিছনে পিছনে দৌড়ে আসে আয়রা।হাঁফাতে থাকে সে। আয়রাকে দেখে বিভান বলে ওঠে,”এই মেয়ে জেল থেকে ছাড়া পেলো কিভাবে?”
সোনালীর মন চাচ্ছে এবার বিভানকে মেরে ফেলতে।রাগ দেখিয়ে বলে,”বোকার মতো কথা বলো না।রুদ্রের মত একজন অফিসার থাকতে তার আর কিছু লাগে? আর যার জন্য জেলে ঢোকানো হয় সে এখনও জীবিত।ভিকটিম তো সে নিজেই।যত্তসব অকর্মা লোক। স্বাদে কি আর আজ এই অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়।”
রুদ্র এবার সোনালীকে খোচা মেরে বলে,” এই না হলে ডাইনির বুদ্ধি।আসলে এই বুদ্ধি নিয়েই তো এতগুলো মানুষের জীবন নিয়েছো।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৬

মাহমুদ সরদার এবার রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলেন,”সেসব কথা বাদ।আসল কথায় আসা যাক।তুমি কবে থেকে এসব জানো আর জানো যখন আমাদের বলো নি কেনো?”
রুদ্র কিছু বলার আগে সোনালী বলে,”আর এই আদ্র বেচে গেলো কিভাবে?ওকে তো ওখানেই শেষ করে এসেছিলাম।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৮