মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৬৫
ইশরাত জাহান
ফর্মুলার কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে আসে সবাই।এখন সবার একটাই কাজ।সিয়া আর হিয়ার বিয়ে।কেনাকাটা সব কমপ্লিট। কাল আশ্রমে অনুষ্ঠান করে বিয়ে করবে।এটা সিয়া আর হিয়ার একান্ত মতামত।আদ্র ও রুদ্র এই মতামত গ্রহণ করেছে।বিশেষ করে হিয়া চায় এমনটা।ওর অনুষ্ঠান করে বিয়ে করা ভালো লাগে না।এর থেকে ভালো খুশির দিনে বাচ্চাদের কিছু খাওয়ানো।এছাড়া ওখানে কিছু পথশিশু আনা হবে।সবার সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ।এখন ঘুমানোর সময়।মায়া ও রাজ ঘরে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে পড়েছে। আস্তে আস্তে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রাজ।ঠিক তখন মায়া উঠে যায়।এই প্রেগন্যান্সিতে মায়াকে কিছুতেই বাইরে একা যেতে দিবে না রাজ।
তাই মায়া অপেক্ষায় ছিলো রাজের ঘুমের।আজকে সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো মায়া।কারণ আজকে তার কাছে এই দরজার চাবি আছে।সবথেকে বড় কথা এই বাড়ির শত্রু এখন শেষ।তাই মায়া সদর দরজা দিয়ে বের হতে পারছে।গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে থাকে মায়া।আজকে তারেককেও বলেনি।তারেক এখন মিলিকে সাপোর্ট করতে ব্যাস্ত।বেচারি মা বাবার কর্মের ফল ভোগ করছে।কেউ কিছু না বললেও মা বাবাকে নিয়ে লোকের কটু কথা সন্তান হিসেবে মিলি নিতে পারে না।তাই এখন মিলির সব থেকে আপনজন তারেক তাকে সামলাচ্ছে।ড্রাইভ করে নিজের কোম্পানির সিক্রেট রুমের সামনে আসলো মায়া।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মুখে রহস্যের হাসি দিয়ে দরজা খুলছে।দরজা খুললেও ঘরটি সেই আগের মতই অন্ধকার।সুইচ অন করে সামনে তাকালো মায়া।অবাক হয়ে চারপাশ দেখছে সে।এটা কিভাবে সম্ভব বুঝতে পারছে না সে।পুরো দল কি তাহলে তার সাথে ছলনা করলো?কোথায় গেলো রুবি? আর এখানে এত ফুল দিয়ে সজ্জিত কেনো?ঠিক তখনই মায়ার কর্ণপাত হয়,”আমার বক্ষে তোমাকে স্বাগতম মায়াবতী।”
না তাকিয়ে মায়া বুঝলো এটা তার লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।ক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”এগুলোর মানে কি মন্ত্রী মশাই?তুমি জানো ওই রুবি কি করেছে?ও তোমার মৃত মায়ের নামে কলঙ্ক ছড়িয়েছিলো।কোনো আইডিয়া আছে তোমার?কত বড় নিকৃষ্ট মনের মেয়ে হলে এমন মিথ্যা কলঙ্ক দিতে পারে। ও আমাদের নতুন শত্রু হয়ে এসেছে।তুমি তাকে সরিয়ে এখানে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছো? বাহ!”
মায়ার প্রত্যেকটি কথা মায়ার দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো রাজ।মায়ার গালে হাত দিতেই মায়া থেমে যায়।মায়া নিজেও ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছে।রাজ মায়ার ঠোঁটের উপর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে স্লাইট করতে থাকে আর বলে,”আমার মায়াবতী আমার বক্ষের রানী। আর আমার সন্তান আমার কলিজার টুকরো।এদের দুজনকে এই অবস্থায় কি করে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে দেই?ইচ্ছা যখন মায়াবতীর পূরণ তখন হবেই।আমি পূরণ করব আমার মায়াবতীর ইচ্ছা।”
“কিভাবে মন্ত্রী মশাই?তুমি তো ওদের এখান থেকে সরিয়েছো।”
“ওদেরকে আমার আস্তানায় রেখেছি মায়াবতী।ভুলে যেও না তোমার গর্ভে আমাদের সন্তান।তাকে নিয়ে আমাদের অনেক কিছু ভাবতে হবে।মাথা গরম করে নয় মাথা ঠাণ্ডা করে যুদ্ধে জয় লাভ করতে হয়।”
“আচ্ছা তবে তাই হোক।আমি না করি তুমিই করলে কাজটি সম্পুর্ণ।কিন্তু কোনো বেঈমানকে প্রশ্রয় দিতে পারব না মন্ত্রী মশাই।বেঈমানের জায়গা এই মায়ার কাছে মাটির নিচে।”
“তবে তাই হবে।চলো আমার সাথে।”
বলেই মায়ার হাত ধরে নিয়ে যায় রাজ।মায়াকে গাড়িতে উঠিয়ে ড্রাইভ করতে থাকে।রাজের বাংলোর সামনে এসে থামে গাড়ি।সেখানে রাজের কিছু লোকজন আছে।মায়াকে ইশারা করে তাকাতে বলে রাজ।মায়া সেদিকে তাকিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায়।সবার কাছে এসে মায়া দেখতে পায় সেখানে একটি লাশ।মায়া আবারও ঘুরে তাকালো রাজের দিকে।রাজ ফিচেল হাসে।মায়া বুঝলো এটা রুবি। একটু একটু ঝুঁকে রুবির মুখ থেকে সাদা কাপড় সরাতে যাবে রাজ ওমনি এসে মায়ার হাত ধরে বলে,”এসব অশুভ মানুষের মুখের কাপড় তোমার শুভ সময়ে ধরো না মায়াবতী।”
মায়া উঠে দাড়ালো।রাজের ইশারা পেয়ে একজন লোক কাপড় সরিয়ে রুবির মুখ দেখলো।মৃত রুবির লাশ দেখে কোনো কষ্টের অনুভূতি হলো না মায়ার।রাজকে প্রশ্ন করে,”তুমি কিভাবে জানলে যে রুবি এসব করেছে?”
হালকা হেসে রাজ বলে,”মিহিরের মৃত্যুর পরে সোনালীর রিয়েকশন একদম নরমাল ছিলো।যেখানে মারা যাওয়ার কথা আমার ছিলো সেখানে মিহির মারা গেছে।এই খবর তো এই মেয়েটি দিয়েছিলো।ইনফ্যাক্ট তোমার ফ্যাক্টরির মেয়েদের সরাতে সাহায্য করেছিল রুবি।শুধু একটু আড়ালে।বাকিটা মিহির সোনালীর সাথে কথা বলে করে নিতো।কিন্তু তোমার আর আমার আমাদের ইচ্ছাশক্তির কারণে ও সফল হয়নি।”
“তুমি কি করে জানলে যে রুবি আর মিহির সোনালীর সাথে এক হয়ে ছিলো।রুদ্র তো রুবির কথা বলেনি।শুধু মিহিরের কথা বলেছিলো।”
“মানিককে আমি গোপন রাখার জন্য শিবচরে যাই।যেই সময়টাতে তুমি আর মা নাটক সাজিয়েছিলে মাকে মরার।ওইদিন আমি রুবিকে দেখি গভীর রাতে একা ড্রাইভ করে জঙ্গলের পাশ দিয়ে যাচ্ছে।সন্দেহ ঠিক তখনই হয়।তোমাদের ফ্যাক্টরির সকল কাজ রাত আটটার মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে।গ্রাম হওয়ায় তুমি মেয়েদের আলাদা সেফটি দিয়েছো।তাহলে রুবি কেনো ওখানে?এটা নিয়ে আমার সন্দেহ থাকে।তোমার থেকে জানতে পারি মিহির ওখানে নেই।সন্দেহ আরো বেশি বেড়ে যায়।রুদ্র জানালো মিহির সোনালীর সাথে মিশে আছে কয়েকমাস ধরে।সন্দেহের পরিমাণ আরো বেশি বাড়ল।লোক লাগালাম রুবির পিছনে।মিহিরের মৃত্যুর কারণেই হয়তো রুবি কিছুদিন চুপ ছিলো।তাই আমিও ওকে ধরতে পারিনি।
কিন্তু আমার লোক ওকে ফলো করতো।ফর্মুলা পাবলিকের আগেরদিন আমি জানতে পারি রুবি আসলে তোমার ফ্যাক্টরির মালিক হওয়ার জন্য এসব করেছে।ও নিজেও অনৈতিক কাজে যুক্ত।বীরের মৃত্যুর পর মিহির আর রুবি একসাথে সোনালীর সাথে মিলেছিলো।মিহির চায় ফর্মুলা,রুবি চায় তোমার ফ্যাক্টরির দলিল।যেটা নিজের নামে করার চাবিকাঠি। আর সোনালী মেয়ে পেলে রুবিকে আরো কিছু কমিশন দিবে। লোভ দ্বিগুণ হওয়ায় ওরা রাজি হয়।তাই আমি আমার লোকদের বলি রুবিকে নজরে রাখতে।ওরা রাখে।রুবি এখানে আসার আগে আমার লোক আমাকে জানিয়ে দেয়।কিন্তু ও যে আমার মাকে নিয়ে এত নোংরা কথা সাজাবে বলবে এটা বুঝতে পারিনি।বুঝতে পারলে ওকে আমি অনেক আগেই শেষ করে দিতাম।”
শেষের কথাগুলো চোখমুখ লাল করে বলল রাজ।মায়া রাজের হাতদুটো ধরে বলে,”আমাদের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে মন্ত্রী মশাই। আর কোনো বাধা নেই।চলো তাহলে বাড়ি ফেরা যাক।আমাদের বাড়িতে। কাল বোনেদের বিয়ে হবে।”
মায়া আর রাজ উঠে বসলো গাড়িতে।জানালাটা একটু খুলে শেষ শত্রুকে দেখে নিলো মায়া।মনে মনে ভাবলো,”আদৌ কি শত্রু দমন হয়েছে?নাকি মা যেটা বলেছিলো ওটাই ঠিক।শত্রুর কোনো শেষ নেই।জীবন যতোদিন আছে শত্রু ততদিন থাকবে।সে যেভাবেই হোক না কেনো?”
আশ্রমে এসে পৌঁছেছে সবাই। কাজী এসেছে মাত্র।সাথে রেজিস্টার নিজেও।আজ কাজী ও রেজিস্টার দুজনেই পরিপাটি হয়ে এসেছে।তাদের মুখেও হাসি। মায়ারাজ আর মিলি তারেকের বিয়ের সময় যেমন পাঁজাকোলা করেছিলো তেমন আর এবার হয়নি। মায়ারাজের বিয়ের সময় তো তাও শীত ছিলো তাই সোয়েটার পরা ছিলো কিন্তু মিলি আর তারেকের বিয়ের সময় গরম থাকায় কাজী লুংগি আর রেজিস্টার হাফ প্যান্ট পরেছিলো। কাজী আর রেজিস্টার দুজনের কাজ করছে।কাগজপত্র দেখছে।রাজ আসতেই ওরা দুজনে দাড়ালো।রাজ ওদেরকে দেখে সাথে সাথে ফ্লাইং কিস দিলো। কাজী হকচকিয়ে গেলো।রেজিস্টার বিষম খেলো।রাজ এবার ওদের কাছে এসে বলে,”ভয় নেই বুইরাগন।তোমরা এবার তোমাদের বউকে বিয়ে সুখে থাকতে পারো।কারণ আমার মায়াবতী আমাকে বাবা বানিয়ে দিয়েছে।”
শান্তির নিশ্বাস নিলো দুজনে।মাঝে মাঝে এরাও মায়ার মতো করে ভাবে,”এই ব্যাটাকে মন্ত্রী বানালো কে?”
অবশেষে দুই জোড়া বিয়ে সম্পন্ন হলো।চারজনের মুখ থেকে কবুল শুনে এখন ওরা রেজিস্ট্রি করে নিলো।এখন সবাই আনন্দে মেতে আছে। ঢাক ঢোল পিটিয়ে সবাই নাচ করছে।রাজ মানিক রুদ্র যেনো একটু বেশি নাচতে থাকে।একজন নাচতে থাকে বাবা হবে বলে আরেকজন নাচতে থাকে সখের নারীর স্বামী হয়েছে তাই। আর মানিক সে তো খুশিতে সামিল।বাচ্চা সহ আরও অনেকে নাচতে শুরু করেছে।নাচের মধ্যে রুদ্র দেখলো মিলি হাসি মুখে দেখছে সবাইকে।রুদ্র এসে মিলির হাত ধরে বলে,”আয় বোন ভাইয়ের বিয়েতে নাচবি।”
ক্ষণিকের জন্য রুদ্র ভুলে গেছিলো সব।মিলির মুখের রিয়েকশন দেখে মনে পড়ল।কিন্তু কোনো বিপরীত ভঙ্গি না দেখিয়ে হাসি মুখেই মিলিকে নিয়ে নাচতে থাকে রুদ্র।মিলিও এবার বাজনার তালে তালে দুই হাত উচু করে নাচতে থাকে। আদ্রকেও নিয়ে এসেছে রুদ্র।রাজ তার দুই বোনকে নিয়ে এসেছে।তারেক আর পিয়াশকেও টানতে টানতে নিয়ে এসেছে রাজ ও রুদ্র।সবাই একসাথে এখন নাচতে থাকে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছে।মায়া ওর পেটে হাত দিয়ে ওদের দেখছে।মৌয়ের কোলে প্রলয়।এখনও অতটা সুস্থ না মৌ।তাই প্রলয়কে নিয়ে বসে আছে একটি চেয়ারে। পিয়াশকে সহ সবাইকে আনন্দ করতে দেখে হেসে দেয় মৌ।কিছুক্ষণ পরপর প্রলয়কে দেখতে থাকে।সবার আনন্দের মাঝে মৌ ডাকে মায়াকে।বলে,”দেখো আপু।বাবুটা কি শুরু করেছে?এখনই বাবা মামাদের নাচ দেখে হাত লাফাচ্ছে।”
“তা হবে না ওদের মতো?বাবা মামা কেউ কি কম।ওদের সন্তান ওদের মতোই হবে।”
“তোমার মন্ত্রী মশাইয়ের সন্তানও কি তাহলে এমন হবে আপু?যেমনটা তোমার মন্ত্রী মশাই আছে।”
“কানমলা দিয়ে ঠিক করে দিবো।”
হু হু করে হেসে দেয় মৌ।সবার আনন্দের মধ্যে এখন মাহমুদ সরদার যুক্ত।সবার সাথে হাসিমুখে নাচগান করছেন ঠিকই কিন্তু মনে মনে তিনিও মোহন সরদারকে অনুভব করছেন।নাচতে নাচতে তার চোখের কোনা থেকে পানি পড়তে থাকলো।কেউ দেখেনি এই পানি।কিছুটা দূরে এসে দাঁড়ালেন তিনি।কল্পনা করলেন দূরে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবি পরে হাসছেন মোহন সরদার।ভাইকে কল্পনায় দেখলেও নিজের কাছে বাস্তব মনে হতে থাকে।মোহন সরদার হাসছেন আর মাহমুদ সরদারের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল।কাধে কারো স্পর্শ পেতেই মাহমুদ সরদার দেখলেন রাজ তার কাধে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।বাবার চোখের পানি মুছে দিলো রাজ।বাবাকে কিছু না বলে শুধু জড়িয়ে ধরে।তারপর বলে,”মেয়েদের বিদায় দিতে হবে তো। চলো এখন।”
মাহমুদ সরদার সবার সামনে আসলেন।সিয়া আর হিয়া এবার তাদের বাবাকে জড়িয়ে ধরেছে।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।এখন বাইরে থাকা কারো জন্যই ভালো না। আরও কিছু নিয়ম কানুন আছে।যেগুলো শশুর বাড়িতে যেয়ে পূরণ করবে ওরা।তাই এত তাড়াহুড়া।বিদায়ের কথা শুনতেই কান্না শুরু করে দিলো সিয়া আর হিয়া।মাহমুদ সরদারের দুই কাঁধে দুই মেয়ে।হিয়া তো কান্নারত কণ্ঠে বলেই দেয়,”সিয়া গেলে যাবে।কিন্তু আমি যাবো না।রুদ্র ভাই তো এই বাড়িতেও ছিলো এতদিন।এখনও থাকবে।আমি আমার বাবা মায়ের কাছে থাকবো।”
হিয়ার কথা শুনে সিয়া হিংসাতুক কণ্ঠে বলে,”তোর কথায় হবে নাকি।আমি নিজেও বাবাকে ছেড়ে যাব না।”
সবাই হাসবে নাকি কান্না করবে বুঝতে পারছে না।সিরিয়াস মোমেন্টেও এদের দুই বোনকে যুদ্ধ করতে হয়।দুই বোন কথা কাটাকাটি করতে শুরু করেছে।শেষ হওয়ার নাম নেই।না পেরে দুঃখী দুঃখী মনের রাজ এবার বলেই দেয়,”ব্যাটা আদ্র আর রুদ্র।এখন চলতেই থাকবে এদের যুদ্ধ।তোমরা থেমে থেকো না।বরেদের এভাবে ভেঙ্গে পড়ল চলবে না।সোজা মিশন শুরু করে দিতে হয়।তোমরাও তাই করো।”
রাজের এহেন কথায় দুই ভাই একে অপরকে দেখে তাদের বউদের পাঁজাকোলা করে নিলো। কাজী বসেই ছিলো চেয়ারে।ভালো সেবাযত্ন পেলে কি আর যেতে চায়?বসে বসে মিষ্টি খাচ্ছিলো সে।আদ্র আর রুদ্রের এমন কাজে কাজী খুকখুক করে কেশে দিলো।মাহমুদ সরদার যেনো পালাতে পারলে বাঁচে।এতদিন ছেলে বউমা ছিলো এখন তার দুই জামাই হাজির।মনে মনে বলেন,”আমার কপালেই এমন কেন জুটলো?ছেলে আর বউমা কি কম নির্লজ্জ ছিলো!এখন জামাই দুটোকেও নির্লজ্জের তালিকায় রাখতে হলো।”
সিয়া আর হিয়া লাফাতে লাফাতে বলে,”ছাড়ো।আমরা বাবার কাছে যাবো।বাবা দেখো তোমাদের মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে। বাঁচাও বাবা বাঁচাও।তোমার থেকে তোমার মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে।”
রাজ এবার ধমক দিয়ে বলে,”দিলমে লাড্ডু ফোটানোর সময় মনে ছিলো না বাবার কথা?আমার মত অকালে আইবুড়ো থাকলে বুঝতে,বিয়ে না করার কি জ্বালা।বিয়ে দিয়েছি এবার সুখে সংসার করো।বাবাকে তো আমি দাদু বানিয়েছি তোমরাও নানু বানিয়ে দিও।”
মাহমুদ সরদার আর দাড়ালেন না ওখানে।ছেলে এখন বাবা হবে।তাকে জনসম্মুখে শাসন করা বেমানান।লাজলজ্জার মাথা খেয়ে তিনি মালিনীর হাত ধরে চলে গেলেন।কাজী এবার মুখে আটকে থাকা মিষ্টি গিলে নিলো।পাশে থাকা রেজিস্ট্রারকে ফিসফিস করে বলে,”বুঝলে ভাই।এই পরিবার পুরাই পাগল।এই পাগলের পাল্লায় যে পড়বে তার জীবন ওখানেই শেষ।”
“তাই আর বলতে!দেখছেন না মাহমুদ সরদারকে?নিরীহ লোকটির কপালে কি না পাগলের ছানা জুটলো।”
সিয়া আর হিয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে দরজা লাগিয়ে দেওয়া হয়।গাড়িতে উঠে দুই বোন দুই দিকে মুখ ফুলিয়ে আছে।আদ্র আর রুদ্র কম নাকি।আদ্র ড্রাইভিং সিটে বসে আর তার পাশে রুদ্র।ওরা ওদের মতো গাড়ি চালাচ্ছে আর গল্প করছে এদিকে সিয়া ও হিয়া মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর রুদ্রকে ইচ্ছামত মারতে থাকে হিয়া।জোরে জোরে বলে,”এমনিতেই নষ্ট পুরুষ ছিলেন এখন নষ্ট জামাই হলেন।শ্বশুরের সামনে এমন কেউ করে?”
হিয়ার মার খেতে খেতে রুদ্র বলে,”ওরে আমার বউ রে।আমার শ্বশুরকে নিয়ে তো তোদের এত চিন্তা ছিল না।কান্নাকাটি করে সোজা চলে আসলেই হতো।তা না করে দুই বোন ঝগড়া করে আমাদের বাসরের টাইম পিছিয়ে দিচ্ছিলি।”
“তাই বলে বাবার সামনে এভাবে পাঁজাকোলা করবেন?”
“এখন যেয়ে কত কাজ করতে হবে জানিস!তাতেই বারোটা বেজে যাবে।বাসরটা কি ঠিকভাবে পেতাম তোদের জ্বালায়?”
“আপনি কিন্তু ঠোঁটকাটা হয়ে যাচ্ছেন রুদ্র ভাই।”
“রাখ তোর ঠোঁটকাটা।কত টাকা খরচ করে বিয়ে করলাম।কোথায় বাসর করে টাকা উশুল করবো তা না বউয়ের নেকা কান্না দেখতে হবে।ধুর তাহলে টাকা খরচ করে তোদের পার্লারে সাজিয়েছি কেনো?পার্লারে সাজিয়েছি কারণ ওই রূপের জাদুতে বাসর ইনজয় করবো।উল্টো তোরা আমার শ্বশুরের কাধে কাজল মাখা কালি পানি মাখায় ব্যাস্ত ছিলি।”
মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৬৪
হিয়া আড়চোখে দেখলো আদ্রকে।দুলাভাই আবার ভাসুর তার সামনে মান সম্মান রাখলো না রুদ্র।তাই চুপ করে নিজের জায়গায় বসে পড়ল।রুদ্র পাঞ্জাবির গলা ঠিক করে কনফিডেন্ট এর সাথে আদ্রকে বলে,”বুঝলে ভাই!বউয়েদের মুখ ফোটে রকেটের গতিতে।চুপ হয়ে যায় প্রেমের বাণীতে।