অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৭
লিজা মনি
রাতটা কেমন যেন অস্বাভাবিক নীরব। মেঘলা আকাশে একফালি চাঁদও মুখ লুকিয়েছে।তারাও এই রাতের সাক্ষী হতে চায় না। জানালার বাইরে ছড়িয়ে থাকা শহরের আলো-আঁধারিতে ভেসে আসে নিঃশ্বাসের শব্দ, গাড়ির দূরন্ত গতি, আর ভেতরে একটি মৃত্যু স্তব্ধতা।
রানবীর বসে আছে তার প্রাসাদসম দপ্তরের মাঝখানে। চারদিক কাচ, স্টিল, আর ধূসর দেয়ালে ঢাকা এক নির্মম সৌন্দর্যের অভিজাত জেলখানা।
ডেস্কের উপর রাখা বিশাল স্ক্রিনে হঠাৎ জ্বলজ্বল করে উঠে একটাই বাক্য—
“ACCOUNT BALANCE: 0.00”
প্রথমে সে ভুল ভাবে হয়তো নেটওয়ার্কের সমস্যা।
দ্বিতীয়বার চেক করে চোখের পাতা কাঁপে না, কিন্তু বুকের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসে এক চাপা, অদৃশ্য আগুন।
তৃতীয়বার লেখাটা ভেসে উঠতেই চোখে এক ঝড় নামে। মস্তিষ্ক কম্পিত করে উঠে। সে উঠে দাঁড়ায় ধীর পায়ে। তার কালো শার্টের বোতাম খোলা। বুকের মাঝখানে উল্কি আঁকা এক শিকলছেঁড়া ড্রাগনের মতোই আজ সে নিজেও লাগামহীন।
তার শরীরটা কাঠের মতো শক্ত হয়ে আছে।
ঠোঁট কামড়ে ধরে রাখে যেন ঠাণ্ডা না ভেঙে ভয়াল হুঙ্কারে রূপ নেয়। সে হাঁটে ধীরে ধীরে ঘরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। প্রতিটি পায়ের শব্দ যেন মৃত্যুর প্রতিধ্বনি।
চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার ইতিহাস—
সেই টাকা দিয়ে কত মানুষ কিনেছে। সে
কত রক্ত বেচেছে, কত শহর দখল করেছে।
আজ সেই টাকা উড়ে গিয়েছে বাতাসে। ব্যাংক খালি হয়ে পড়ে আছে।
না বাতাস যায় নি চুরি হয়ে গেছে। কেউ একজন হ্যাক করেছে সুক্ষ্মভাবে। প্রবেশ করেছে তার মগজের মতোই সুরক্ষিত সিস্টেমে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রানবীর আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
এক ভয়াল ছায়া দাঁড়িয়ে আছে আয়নার এপারে।
তার নিজস্ব প্রতিচ্ছবি যে আজও অটুট কিন্তু ভিতরে একেবারে খালি।
রানবীর আয়নায় নিজেকে দেখে আর ঠাণ্ডা গলায় ফিসফিস করে—
“” কে করেছে এমন কাজ? কে! কে করেছে? কে!
তার আঙুলে ধরা সিগারেট পুড়ে ছাই হয়ে ঝরে পড়ে কার্পেটে। সে লক্ষ্যই করে না।চোখ তার জ্বলছে।
সেই আগুন কোনো বাহ্যিক ক্ষোভ নয়,
সেই আগুন একটা শত্রু খুঁজে বের করার জন্য মরিয়া হওয়া রাজপিশাচের শপথ।
তার ডেস্কের পাশে রাখা গ্লাসের বোতল তুলে এক চুমুকে খালি করে সে।
তারপর দেয়ালে ঝোলানো বড় ঘড়ির দিকে তাকায়
রাত ২:47 বাজে। এমন রাতে শহর ঘুমিয়ে থাকে,
কিন্তু আজ এই শহরের তলায় জন্ম নেবে একটি দুর্ভাগ্য।
তার ঠোঁটে খেলে যায় হালকা এক বিকৃত হাসি।
রানবীর চিৎকার দিয়ে ওঠে,,,,,,
“শূন্য আমাকে থামাবে না।
বরং আমি শূন্য থেকে শুরু করে তর অস্তিত্ব মুছে ফেলবো। কে করেছিস এমন? ”
তার আঙুলের চাপে গ্লাস ভেঙে পড়ে মেঝেতে।
রক্ত ঝরে, কিন্তু সে ব্যথা পায় না। কারণ তার ব্যথা আজ রক্তের নয়, রাজত্বের। আমি টাকা হারাইনি। আমি আগুন খুঁজে পেয়েছি। এখন তুই পুড়বি।আমার মতো, কিন্তু ফেরার সুযোগ ছাড়া।
রানবীর পাগলের মত চিৎকার করে উঠে। তার চিৎকারে প্রতিটি দেয়াল কেঁপে উঠে। বেরিয়ে যায় রুম থেকে। বারে গিয়ে আতিকের কাছে বসে। খুলে বলে সবকিছু। আতিক গম্ভীর হয়ে বসে।
রানবীর পাগলের মত ব্যবহার করছে। পাঁচশত কোটি টাকার ব্যাংক শূন্য হয়ে আছে। এত দিনের জমানো সব টাকা হুট করে গায়েব হয়ে গিয়েছে। গ্লাসের পর গ্লাস ওয়াইন শেষ করছে। রায়হান , আতিক পাশেই বসে আছে। আতিক গম্ভীর হয়ে কিছু একটা ভাবছে।
হুট করে মোবাইল বের করে অগ্নির নাম্বারে মিসডকল দেয়। আতিকের নম্বর দেখতে পেয়েই অগ্নি রহস্যময় হেসে রিসিভ করে নমনীয় সুরে বলেন,,,,,
” হ্যা ভাই বলো।
আতিক গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,
” রানবীরের ব্যাংক খালি হয়ে পড়ে আছে। কে হ্যাক করেছে এইসব?
অগ্নি অবাক হয়ে বলে,,,,,
” কিসব বলছো ভাই হ্যাক হয়েছে মানে? কার এত বড় দুঃস্বাহস হতে পারে।
আতিক — প্রশ্ন সেটা আমার ও। কানাডা কেনো ব্যাক করছিস না।
অগ্নি — করব। আগামী মাসেই চলে আসছি। এরপর দেখছি কে এমন কাজ করছে।
আতিক — তাহলে কি এত দিন বসে বসে আঙ্গুল চুষব? আগামী মাস অনেক দেরী। দ্রুত ফিরে আয়।
অগ্নি গম্ভীর হয়ে উত্তর দেয়,,,,
“” হুম। দ্বীতিয় টর্চার সেলের কাজ শেষ? সব ঠিকঠাক হয়েছে?
আতিক — মোটামোটি। ওইদিন রাতে পাঠানো হয়েছে।
অগ্নির ভারী গম্ভীর স্বরে আওড়ায়,,,,,
” গুড জব। এরপরে আরও পঞ্চাশ জন হবে।
আতিক– এতজন কোথায় পাবি?
অগ্নির কন্ঠে কুটিলতা আর বর্বরতা,,,,
” আমি তো কিছুই করব না ভাই। না কোনোদিন এইসবে জড়িয়েছি, আর না সেই জায়গায় পা দিয়েছি। যা করার লোকেরা করবে। আমার একটা ইশারা ওই যথেষ্ট। এখন আপাযত রানবীর ভাইকে সামলাও।
অগ্নি ফোন কেটে দেয়।
রায়হান আতিকদের হুশিয়ারি দিয়ে বলে,,,, ,
“” আমি তোমাদের বলছি ডেড অগ্নি গভীর জলের মাছ। চিনতে পারো নি, ধরতে পারছো না তাকে। ও তোমাদের ধ্বংসের কারন হবে। জনি মরেছে পরও নিশ্চুপ ছিলো আজ তুমি দেওলিয়া হয়েছো পরও নিশ্চুপ। কেনো এত নিশ্চুপ? যদি ওর কিছু হত তাহলে পুরো কানাডা আগুন লাগিয়ে দিত। তোমাদের ধ্বংসে এত নিশ্চুপ কেনো শুনি?
আতিক — মাথামোটা জীবনে একটু বুদ্ধি ভিক্ষে নে কারোর থেকে। বিশ্বাস কেউ কাউকেই করে না। প্রয়োজনে শুধু একজন আরেকজনের সাথে হাত মিলিয়ে চলে।
রানবীরের চোখ – মুখ লাল হয়ে আছে। মাতলামো গলায় বলে,,,,,
” আমাকে পথে বসিয়ে ছাড়লো। কোন শুয়** বাচ্চার এত বড় বুকের পাঠা এই রানবীরের ব্যাংকে হাত দেয়। শুধু একবার জানি ওর হাত আমি কেটে গঙ্গায় ভাসাব। শু** বাচ্চা!
আতিক — শান্ত হ।
রানবীর হুংকার দিয়ে উঠে,,,,
” মাথায় আগুন ধরেছে। রক্ত চাই আমার! তাজা রক্ত দেখতে চাই।
আতিকের ইশারাতে কয়েকজন লোক কে তাদের সামনে নিয়ে আসে। তাদের মাথায় কালো কাপর দিয়ে বাঁধা। হাত বেঁধে দেওয়া হয়েছে পিছন দিক দিয়ে। লোকগুলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রানবীর এক পৈশাচিক হাসি দিয়ে একটা ধারালো ছুঁরি হাতে নেয়। ছুঁরিটা ধরে একটা লোকের সামনে দাঁড়ায়। এরপর বর্বরতা নিয়ে এক কোপে দেহ থেকে গলা আলাদা করে ফেলে। লোকটা চিৎকার ও করতে পারে নি। একদম নিশ্বঃব্দ, আর ভয় নিয়ে লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে। তাজা রক্ত গিয়ে ছিটকে পড়ে রানবীরের পুরো শরীরে। কিছু রক্ত ভেদ করে গিয়ে পড়ে আতিকের মুখে। বিরক্তি নিয়ে আতিক মুখ অন্য পাশে সরিয়ে ফেলে। রানবীর পৈশাচিক হাসি আর বর্বরতার সাথে বাকি পাঁচজনের ও ঠিক এক দশা করে। মেঝে রক্তের স্রোতে ভেসে যায়। মেঝেতে পড়ে আছে ছয়টা মাথা ছাড়া দেহ। মাথা আলাদা হয়ে ছিটকে পড়ে আছে কাছে, আবার অনেক দুর। দেহে নেই প্রান। তারা হয়ত কারোর বাবা, কারোর সন্তান, কারোর ভাই, কারোর স্বামী। কিন্তু বেঁচে থাকতে পারে নি এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায়। রানবীরের মত এক জানোয়ারের রক্তের খেলার গুঁটি হতে হয়েছে। রানবীর তাজা রক্ত নিয়ে কপালে লাগায়।চোখে হিংসা, ধ্বংসের আগুন জ্বলজ্বল করছে।
দুপুরের আজান পড়েছে অনেক আগে। মিরা, সুমু, আহিয়া তিনজন মিলে বাগানের পাশে হাটাহাটি করছিলো।
মিরা চারদিকে তাকিয়ে মোহিত কন্ঠে বলে,,,,,
” বাগানটা খুব সুন্দর আহিয়া। ইসস চলে গেলে মিস করব খুব।
আহিয়া কিঞ্চিত ভ্রুক কুচকে বলে,, ,,,,,
” নিজের বাড়ি রেখে কোথায় যাবে আপু?
আহিয়ার প্রশ্নে মিরা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। কথাটাকে এড়িয়ে হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” এমনি মনের ভুলে বলেছি ।
পার্কিং এড়িয়াতে গাড়ির শব্দ পেয়ে মিরা ঘাড় কাৎ করে সেদিকে তাকায়। মিরার ধারনা অনুযায়ী অরিদের গাড়ি দেখতে পেয়ে মাথায় এক শয়তানি বুদ্ধি চাপে। মিরা কিঞ্চিত হেসে বাড়ির ড্রাইভারের কাছে যায়। সে এই মুহূর্তে গাড়ি পরিষ্কার করছিলো। মিরার উপস্থিতি পেয়ে সামনে ঘাড় উচু করে দাঁড়ায়।
মিরা একটা,ব্লাশিং হাসি দিয়ে বলে,,,
“” হাই হ্যান্ডসাম কি করছো?
ড্রাইভার মিরাকে দেখে প্রচন্ড খুশি হয়। সে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” গাড়ি পরিষ্কার করছি ম্যাডাম।
মিরা কিছুটা মন খারাপ করে বলে,,,,,
” কি ম্যাডাম, ম্যাডাম বলছেন?
ড্রাইভার — তাহলে কি বলে ডাকব?
মিরা — মিরা! মিরা বলে ডাকবেন। অথবা আয়াত বলে ও ডাকতে পারেন। এই নামটা আমার প্রিয়জন ছাড়া কেউ ডাকে না। বাট আপনাকে ডাকার রাইট দিলাম।
ড্রাইভার — সামান্য ড্রাইভার আর মালি হয়ে বাড়ির বউকে নাম ধরে ডাকব?
মিরা — আপনাকে গাড়ি পরিষ্কার করতে দেখে কি ভালো লাগে আপনি জানেন মালি সাহেব? অনেক হট আর ড্যাঁশিং দেখা যায় তখন।
অরিদ দুর থেকে দেখেছে মিরা আর ড্রাইভার হেসে হেসে কথা বলছে। বিরক্তি নিয়ে এইসব মাথা ঘামায় নি। গাড়ি পার্ক করে বাড়ির ভিতরে যেতে নিবে তখন মিরার লাস্ট বাক্যে পথ আটকে যায়। থমকে দাঁড়ায় সে। মিরা মিটিমিটি হাসছে। অরিদকে যেতে দেখে সে এই শব্দটা উচ্চারন করেছে।
সুমু জানে অরিদকে জেলাসি ফিল করাতে মিরা ড্রাইভারের সাথে প্রায় মজা করে। কিন্তু লাস্ট কথার জন্য সে ও প্রস্তুত ছিলো না। হা করে তাকিয়ে আছে মিরার দিকে। একবার মিরাকে দেখছে আরেকবার অরিদকে।
অরিদ শান্ত পায়ে ড্রাইভারের কাছে আসে। ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে ঠাট্টা করে বলে,,,,
” দুনিয়ায় আর কোনো মেয়ে পাও নি মান্নান ভাই। এর মত জংলীর সাথে তোমার কথা বলতে হয়? এত বাজে রুচি তোমার আসে কোথা থেকে? আমার সামনে এমন ঢলাঢলি করলে তো ঠাটিয়ে কয়েকটা থাপ্পর লাগাতাম। এমন বেহায়া মেয়ের সাথে তুমি ও তাল মিলাচ্ছো। ছিহহ মান্নান ভাই এইটা আশা করিনি আমি তোমার থেকে। এরপর থেকে থাপ্পর দেওয়ার লাইসেন্স আমি তোমাকে দিয়ে গেলাম। দুই হাত আছে যাস্ট কাজে লাগাবে।
অরিদ আর দাঁড়ায় না চলে যায়। অরিদের কথা শুনে মিরা এখনও তব্দা লেগে আছে। ওকে জংলি বলে গেলো! কত বড় বিয়াদব। মিরা রাগে ফুঁসে উঠে। ড্রাইভার এখন ও কল্পনার জগতে পড়ে আছে। বাড়ির ছেলে তার বউকে মারার জন্য লাইসেন্স দিয়ে যায়।
মিরা আর দাঁড়ায় না রাগ নিয়ে সোজা অরিদের উদ্দেশ্যে যায়। এর জবাব তো সে দিয়েই ছাড়বে।
মিরা চলে যেতেই আহিয়া সুমুর উদ্দেশ্যে বলে,,,,,
” আপু এতক্ষন কি হলো বলোতো? সব কেমন মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে? মিরা আপু মান্নান ভাইয়ের এত প্রসংশা, অরিদ ভাইয়ার এমন ত্যারা কথা। সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।
সুমু হেসে আহিয়াকে এক পাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,
” বয়স হয় নি বুঝার। বড় হয়ে নিন এরপর বুঝবেন সব। এখন চলো রেডি হয়ে নেই ইয়ানার কাছে যেতে হবে তো।
আহিয়া — হুম চলো।
মিরা রুমে প্রবেশ করে অরিদের দিকে এগিয়ে যায়। অরিদ সেদিকে তাকায় না। মিরা দাঁতে দাঁত পিষে বলে,,,,,
” জংলি কেনো বলেছেন আমাকে? ড্রাইভারের সামনে অপমান কেনো করলেন?
আরিদের গম্ভীর কন্ঠে,,,,
” প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয়। আউট! বের হও রুম থেকে।
মিরা — আপনি বাধ্য। কেনো অপমান করলেন এইভাবে।
অরিদ — ইগো হার্ট হয়েছে?
মিরা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” একদম না। খারাপ লাগছে এমন একজন স্মার্ট লোকের সামনে আপনার মুখে কু – কথা শুনে। উফফ মান্নান ভাই। ওহহ সরি মান্নান ভাই কেনো বলছি? ভাই নয় শুধু মান্নান।
অরিদ ভ্রুঁ কিঞ্চিত কুচকে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” বয়সে তোমার অনেক বড়। নাম ধরে ডাকতে লজ্জা করছে না?
মিরা — লজ্জা কেনো করবে আজব। হ্যান্ডসাম, সুন্দর ব্যক্তিদের নাম ধরে ডাকা যায়, সেটা আপনি বুঝবেন না। কাক কিভাবে বুঝবে ময়ুরের মর্ম। আগে বলোন আমাকে অপমান কেনো করে এসেছেন?
আরিদ হাত মুষ্টি করে রাগ নিয়ন্ত্রন করে,,,
“কেনো তোমার হট বয় ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিয়ে দেয় নি? দেখে তো মনে হচ্ছে প্রচুর রেগে আছো। ভালোবেসে কাছে টেনে শান্তনা দিয়ে দেয় নি বুঝি।
মিরার চোখে পানি টলমলিয়ে উঠে। নোংরা ইঙ্গিত যে করেছে সেটা সে ভালোভাবেই বুঝেছে। মিরা জেদী কন্ঠে বলে,,,,
“” লিমিট ক্রস করে কথা বলছেন না? যেমন আপনি নোংরা তেমন আপনার মস্তিষ্কও। অসভ্য!
মিরা কথাটা বলে রুম থেকে বের হতে যাবে এমন সময় অরিদের হেচকা টানে দেয়ালের সাথে ধ্বাক্কা খায়। মিরার দুই বাহু ধরে অরিদ চেপে ধরে দেয়ালের সাথে। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে। অরিদের চেপে ধরা জায়গায় মিরা ব্যাথায় নাক মুখ কুচকে ফেলে এক সেকেন্ডের জন্য। কিন্তু চোখ খোলার পর অরদিকে এতটা কাছে দেখে স্তব্দ হয়ে যায়। সমস্ত কাঁয়া কাঁপুনি দিয়ে উঠে। অরিদের উত্তপ্ত নিশ্বাস তার গলায় স্পর্শ করে যাচ্ছে। অরিদকে এত কাছে দেখে বুকের ভিতরে ধ্রিম ধ্রিম শব্দ বাজতে থাকে। মস্তিষ্ক খালি হয়ে গিয়েছে। এতটা কাছে জীবনের প্রথম কোনো ছেলে এসেছে। মিরার ভিতর যেন ছিঁড়ে আসছে। হৃদস্পন্দন বেপোরোয়াভাবে ছুটে যাচ্ছে। মিরা আতঙ্কিত হয়ে অরিদের চোখের দিকে তাকায়। অরিদের রক্তাভ রাগে জ্বলছে। চোয়ালের পাশের পেশি খিঁচে উঠেছে। মিরার বাহু আরও জোরে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,,,,,,,
” এমনিতে তোমাকে সহ্য করতে পারি না। আরও অসহ্যের কারন হয়ে উঠো না। আমাকে জ্বালাতে আসলে আমার ভয়ংকর রুপ দেখতে পাবে। ধারনা ও নেই অরিদ চৌধুরি ঠিক কতটা জঘন্য। অগ্নি চৌধুরির ছায়াতলে আমি বড় হয়েছি। দ্যাটস হুয়াই আই’ম ইউ আ্য ওয়ার্নিং স্ট্যাপ ব্যাক হুয়াইল ইউ স্টিল হ্যাভ টাইম।
অরিদের কথা কানে যেতেই মিরার চোখ ছলকে উঠে। রাগ, অপমান, উত্তেজনায় সিটিয়ে যায়। তার হাত দুইটি দেয়ালের দুই পাশে অরিদ চেপে ধরেছে। পিঠ জ্বলে যাচ্ছে নরম প্লাস্টারের ছুঁয়ায়। হাত দুটি দেয়ালে ঠেস দিয়ে ধরে রাখায় আরও ব্যাথা করছে। মনে হচ্ছে শিকার ধরা পড়েছে এক অনন্ত শিকলের মাঝে।
মিরা আহত আওয়াজে আওড়ায়___
” ব্যাথা পাচ্ছি।
মিরার কন্ঠ কর্নপাত হতেই অরিদ আচমকে ছেড়ে দেয়। এক মুহূর্তের ভিতরে দুরে সরে আসে। মিরা অরিদের দিকে এক পলক তাকিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
সুমু গুনগুন করে গান বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করে। বিছানায় বসে সামনের দিকে তাকাতেই “আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া ” করে চিৎকার দিয়ে উঠে। আকস্মিক চিৎকারে রায়ান ভড়কে যায়। দ্রুত আয়না থেকে সরে এসে সুমুর মুখে এসে চেপে ধরে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না টাল সামলাতে না পেরে সুমু গিয়ে বিছানার উপর পড়ে। আর রায়ান সুমুর উপরে। উন্মুক্ত লোমযুক্ত ভেজা শরীর। সুমু এখন ও চোখ বন্ধ করে রেখেছে। তারা এক বিছানায় শুয়েছে কিন্তু অনেক দুরত্ব রেখে। কখনো সজাগ অবস্থায় রায়ানকে এত কাছে অনুভব করে নি। চোখ মেলে তাকালে প্রথম চোখ আটকে যায় রায়ানের ফর্সা লোমযুক্ত বুকে।
” এই কি করছো? এইভাবে চেঁচাচ্ছো কেনো?
রায়ানের কথায় সুমুর চেতনা ফিরে। সুমু চোখ মেলে তাকায় রায়ানের দিকে। মুখ চেপে ধরাতে কথা বলতে পারছে না। রায়ানের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিয়ে উমম উমম শব্দ করছে। রায়ান সুমুর ইশারা পেয়ে মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। এরপর উঠে বসে তার উপর থেকে। সুমু লজ্জায় আরষ্ঠ হয়ে যায়। রায়ানের শরীরে কোমর পর্যন্ত সাদা টাওয়েল ছাড়া আর কিছু নেই। লজ্জায় রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে। রায়ান সুমুর লজ্জা দেখে হালকা হাসে।
সুমুর দিকে সামান্য ঝুঁকে নিম্ন আওয়াজে বলে,,,,,
” তাকাও আমার দিকে সুমু ”
সুমু হাত দিয়ে মুখ আকড়ে ধরে মাথা দিয়ে না জানায়।
রায়ান — কেনো?
সুমু– আগে ড্রেস পড়ে আসুন।
রায়ান — আমি তো টাওয়েল পেচিয়ে আছি তাহলে লজ্জা কেনো পাচ্ছো?
সুমু — জানি না।
রায়ান সুমুর লজ্জা দেখে সামান্য শব্দে হেসে চেইঞ্জ করে নেয়। সুমু এখমও চোখ চেপে ধরে রেখেছে। রায়ান সুমুর সামনে এসে হাত দুটি আলতো স্পর্শের মাধ্যমে ছাড়িয়ে দেয়। সুমু চোখ বন্ধ করে রেখেছে। রায়ান কিছু না ভেবে সুমুর বন্ধ চোখের পাতায় ঠোঁট ছোয়ায়। রায়ানের ঠোঁটের ছোয়া পেতেই সুমু চট করে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে।
সুমুকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রায়ান হেসে বলেন,,,,,
” সবাই লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। আর তুমি উল্টো চোখ খুলে রেখেছো।
সুমু আচমকা বলে উঠে,,,,
” কি করলেন এইটা?
রায়ান — কি করেছি?
সুমু চোখের উপর ইশারা দিয়ে বলে,,,,
” এই যে এইমাত্র করলেন?
রায়ান — কি করেছি আমার তো মনে নেই। তোমার মনে থাকলে বলো কি করেছি?
সুমু আমতা আমতা করে বলে,,,,,,
” চুমু কেনো খেয়েছেন?
রায়ান শান্ত চোখ নাড়ে,,,,,,
” অনেক কিছুই করব শুধু অনুমতির অপেক্ষা।
সুমু লজ্জায় আর দাড়ায় না। ইয়ানার কাছে যাবে তাই ফ্রেশ হওয়ার জন্য এক প্রকার পালিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে।
ইয়ানা ডিভানে বসে টিভি দেখছে আর চিপস খাচ্ছে। মেইন দরজা খুলতে দেখে টিভি থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সেদিকে তাকায়। অগ্নিকে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে আসে। অগ্নি লিভিং রুমে আসে হাতে থাকা ব্লেজারটা ইয়ানার হাতে দিয়ে পাশে বসে পড়ে। ইয়ানা অগ্নিকে দেখে টিভি বন্ধ করে দেয়।
অগ্নির মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,,
” আজ এত তাড়াতাড়ি চলে আসলেন?
অগ্নি চোখ তুলে ইয়ানার দিকে তাকায়। এই ডাগরডোগর মায়াবী চোখ, গোলাপি নেশালো ঠোঁট,
সূর্যের তীর্যক রশ্মীর ন্যায় চোখ ধাধানো মুখ।
সে নারীটা তার সামনে তীর্যক চোখে ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে আছে। অগ্নির কাছে মনে হচ্ছে সন্ধ্যার শেষ আলোয় জ্বলজ্বল করা এক মোহময় আগুন। ডাগরডোগর চোখজোড়া শরতের আকাশে জমে থাকা কালো মেঘ যেখানে রহস্য আছে, আহ্বান আছে, আর অজস্র অস্থিরতা।
অগ্নি চৌধুরীর মতো মানুষ যে একপলকেই ট্রিগার টিপে দিতে পারে, যার ঠান্ডা চোখ দেখে সময়ও থমকে যায়।সে-ও আজ হঠাৎ থমকে গেল। বুকের গভীরে কোথা থেকে যেন অদ্ভুত একটা কাঁপন উঠে আসলো। এমন নয় যে ভয়, বরং এক অচেনা ঘোর। এমন কিছু যা সে কখনো কাউকে দেখে অনুভব করেনি। কায়া কাঁপছে তার, কিন্তু সেটা অস্ত্রের ভারে নয় সেটা নারীর সৌন্দর্য আর স্পর্শ না পাওয়া ভালোবাসার যন্ত্রণায়।
তার গলার কাছটা শুকিয়ে এলো। গলা দিয়ে কথা না উঠে স্রেফ দৃষ্টিতে বলল,
” এত ধৈর্যহারা কেনো করো আমাকে। ল্যাপটপে দেখে শান্তি পাচ্ছিলাম না। এতটা বিয়াদব কেনো তুমি? আমাকে পদে পদে নাজেহাল করে তুলছো। যত্তসব ফাকিং অনুভুতি মাথায় চেপে ধরে হুট করে জান।
ইয়ানা নড়ে উঠে। অগ্নির কন্ঠ মোটে ও স্বাভাবিক ঠেকছে না। কেমন ছন্নছাড়া আর বেপোরোয়া লাগছে। ইয়ানা নিজেকে গুঁটিয়ে নিয়ে মিহি আওয়াজে বলে,,,,
‘ এমন লাগছে কেনো আপনাকে? কিছু কি হয়েছে?
ইয়ানার কথায় অগ্নি গভীর নয়নে দৃষ্ট মেলে।
এই নারীটার প্রতিটা নড়াচড়া যেন ধোঁয়ার মতো আলগা, ছায়াময়, কিন্তু নেশার মতো ঘিরে রাখে তাকে। সেও জানে তার ভালোবাসা ফুলের মতো কোমল নয়। বরং ছুরির মতো ধারালো যেখানে প্রেম মানে জ্বালা, আগুন, অধিকার আর অপূর্ণতা।
সে চায় ছুঁতে চায়, আটকে রাখতে, চায় গিলে নিতে পুরোটা নারীকে নিজের অস্তিত্বের মধ্যে। কিন্তু সে জানে এই ভালোবাসা কোন কাব্য নয় এটা এক ধ্বংসাত্মক টান। যার নাম ভালোবাসা কিন্তু যার স্পর্শ মৃত্যু থেকেও গভীর। অগ্নি ইয়ানার গলা থেকে উড়নাটা সরিয়ে সেখানে মুখ ডুবায়।
ইয়ানা কেঁপে উঠে প্রতিবারের মত। অগ্নির গরম নিশ্বাস গলায় স্পর্শ করছে বার বার। ইয়ানার সুরসুরির কারনে শুকনো ঢোক গিলে বলে,,,,
“” ছাড়ুন সুরসুরি লাগছে।
অগ্নি হাত বাঁকিয়ে ইয়ানার নরম স্লিম মেদহীন কোমর চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নিজেকে খুব দুর্বল মনে হচ্ছে। দিশেহারা হয়ে ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে। ইয়ানা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,,,
” কি করছেন যে কেউ চলে আসবে। এইটা লিভিং রুম।
অগ্নি — কে আসবে?
ইয়ানা — স্টাফ তারা তো যে কোনো সময় আসতে পারে।
অগ্নি — রুমে চলো তাহলে?
ইয়ানা অগ্নির কথায় থমকে যায়। এই লোকটাকে তার মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। যে কোনো সময় নেকড়ে রুপ নিয়ে নিবে। তার আগে কিছু একটা বলে আয়ত্তে নিয়ে আসতে হবে। ইয়ানা গলা কেঁশে বলে,,,,
” চলুন কিছুক্ষন গল্প করা যাক।
অগ্নি — আই’ম নট ইন্টারেস্টেড
ইয়ানা — বাট আই’ম ইন্টারেস্টেড।
অগ্নি বিরক্তি নিয়ে ইয়ানার দিকে মুখ তুলে তাকায়। ইয়ানা ঠোঁট চেপে অগ্নির দিকে ছোট ছোট চোখে তাকায়। অগ্নি ঠিকভাবে ডিভানে হেলান দিয়ে বসে বলে,,
“” ঠোঁট চেপে ধরে নেগেটিভ ফিল দিবে না। ঠিক করো নিজেকে।
সাথে সাথে ইয়ানা ঠোঁট ফাক করে ফেলে। সে তো অজান্তেই এইভাবে ঠোঁট চেপে ধরেছিলো। ইয়ানা কিঞ্চিত হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” মনে করেন আমি আপনার সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিয়েছি তখন কি করবেন আপনি?
অগ্নি গম্ভীর হেসে বলে,,,,,
” সব হারিয়ে আমি না হয় তোমার মধ্যে বাঁঁচব।
ইয়ানা — আপনাকে খুন করার জন্য ছুঁরি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি তখন কি করবেন?
অগ্নি — তোমাকে আগলে রেখে সেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করব।
ইয়ানা — কিছু বলবেন না?
অগ্নি — ওহুম। শুধু বলব আর কিছুদিন একসাথে বাঁচলে কি এমন হত?
ইয়ানার শরীর সামান্য শিহরন বয়ে যায়। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,,,,
” যদি কখনো হারিয়ে যায়।
অগ্নি তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,,,,
“” এমন কিছুই হবে না ইয়ানা। আমি বেঁচে থাকতে তোমার কিছু হবে না।
ইয়ানা — মনে করুন হারিয়ে গিয়েছি। বাস্তবতা তো আর বলছি না।
অগ্নি — -আকাশ,, পাতাল, জমিন, সমদ্রের তলদেশ সব খুঁজব। প্রয়োজনে মাটি খুঁড়ে বের করব। এরপর ঠাটিয়ে কয়েকটা থাপ্পর দিব।
অগ্নির এমন উত্তরে থমথমে খেয়ে যায়।
ইয়ানা — একটা সন্তান দিবেন আমাকে?
অগ্নি চট করে ইয়ানার দিকে তাকায়। মুখে গম্ভীরতা ভর করে। ধারালো কন্ঠে উত্তর,,,,
” ফারদার এমন পদক্ষেপ মাথায় তুলবে না। দাম্পত্য জীবন সন্তান ছাড়া ও ভালো থাকা যায়। একজনকে জীবনের সাথে জড়িয়ে পদে পদে ভয় নিয়ে বাঁচতে হয়। আর কাউকে জড়াতে চাই না।
ইয়ানা কিছু বলে না শান্ত হয়ে যায়। কিছুক্ষন পিনপিন নিরবতা কাটিয়ে ফের প্রশ্ন করে,,,,,
” এতটা ডেম্পারেট কেনো হয়ে যান আমাকে নিয়ে?
অগ্নির সরল উত্তর,,,,, এমনি।
ইয়ানা সামান্য হেসে বলে,,,,,,
” জানেন সমাজ কি বলে? সমাজ বলে পুরুষ হতে টাকা লাগে আর নারী হতে লাগে রুপ। কিন্তু আমি তো আহামরি সুন্দরী না। আমার থেকে এমন হাজার ও সুন্দরী রমনি আনাচে – কানাচে পড়ে আছে।
অগ্নি ভ্রু কুচকে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে। হুট করে বলে,,,,,,
” এইসব ফা*কিং চিন্তাভাবনা কে ডুকিয়েছে তোমার মাথায়? পুরুষ হতে xy ক্রোমোজোম আর নারী হতে xx ক্রোমোজোম। ব্যাস এভাবেই জীবের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।
অগ্নির উত্তরে ইয়ানা কেঁশে উঠে। কিন্তু সেই কাঁশি যেন চিরস্থায়ী হতে চাচ্ছে। কাঁশি থামার নাম ওই নিচ্ছে না। ইয়ানাকে এইভাবে অনবরত কাঁশতে দেখে ছোট টেবিল থেকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। ইয়ানা পানিটা খেয়ে নিজেকে শান্ত করে।
অগ্নি অধৈর্য হয়ে ইয়ানার চোলগুলো পিছনে নিয়ে বলে,,,,,
” কি হয়েছে এইভাবে কেঁশে উঠলে যে? শরীর খারাপ লাগছে? ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব?
ইয়ানা অগ্নিকে থামিয়ে দিয়ে বলে,,,,,
” শরীর খারাপ লাগছে না তবে আপনার উত্তরে যক্ষা রোগী হওয়ার চান্স আছে। একটু সময় কাটাতে চেয়েছিলাম গল্পের মাধ্যমে। কিন্তু আপনি আমাকে যক্ষা রোগী বানিয়ে দিচ্ছেন ভাবা যায়!
ইয়ানার এমন উদ্ভট কথায় অগ্নি নিরলস ভাবে উঠে দাঁড়ায়। এরপর ইয়ানার হাতে ধরে বলে,,,
“” উঠো।
ইয়ানা — কোথায়?
অগ্নি — রুমে।
ইয়ানা শুকনো ঢোক গিলে বলে,,,,,
” নিজেকে আগে ঠিক করুন। আপনার চোখ দুটি কেমন অস্বাভাবিক লাগছে।
অগ্নি — তুমি রুমে গেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
ইয়ানা — একটু পরে যায়?
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে এক পলকের ভিতরে কোলে তোলে নেয়। ইয়ানা হতভম্ভ হয়ে তাকায়। থমকে যায় সে। শরীর মুচরাতে চাইলেও অগ্নির শক্তপোক্ত দেহ আরও গভীরভাবে চেপে ধরে নিজের সাথে।
অগ্নির কন্ঠে ঝাঁঝালো চাপা গর্জন,,,,
” আমার একটু শান্তি চাই ইয়ানা । আমি আর পারছি না, প্লিজ আই বেগ ইউ।
অগ্নি গভীর নিশ্বাস নিয়ে ইয়ানার ঠোঁটের কিনারায় গাঢ় চুমু খায়। কোলে তোলে আর সামনে এগিয়ে যেতে পারে নি তার আগেই কারোর চিৎকারে দরজার দিকে তাকায়। অগ্নি রাগে দাঁত পিষে তাকায়। শালার জিন্দেগী এই বন্ধু নামক কাল সাপ ভুল সময় ওই এন্ট্রি হয়। অগ্নি ইয়ানাকে পুনরায় ডিভানে বসিয়ে দেয়। ইয়ানা দ্রুত নিজের শরীরে ভালোভাবে উড়না পেচিয়ে নেয়। অগ্নি রাগ, জেদ আর কিছুটা হুংকার নিয়ে বলে ,,,,
” তরা এখানে কি করছিস?
ইউভি, রায়ান, অরিদ, সুমু, মিরা অগ্নির প্রশ্নে সেদিকে চট করে তাকায়।ভয় পেলেও তারা পিছু পা হয় না। তারা লিভিং রুমে যখন ডুকে তখন ওই ভেসে উঠে অগ্নি ইয়ানাকে কোলে নিয়েছে। সাথে সাথে তারা নিজেরদের চোখ ঢেকে ফেলে।
অগ্নির প্রশ্নে ইউভি হাসি দিয়ে বলে,,,,
” বেড রুম রেখে লিভিং রুমে কি করছিস দোস্ত। বউকে নিয়ে রোমান্স করবি দরজাটা লাগিয়ে নিবি তো।
অগ্নি বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
” পার্সোনাল জিনিস নিয়ে মজা করা আমি পছন্দ করি না ইউভি। কি কারনে এসেছিস এখানে? বেরিয়ে যাহ পার্সোনাল সময় প্রয়োজন।
ইয়ানা অগ্নির এমন লাগামহীন কথায় লজ্জায় সিটিয়ে যায়।অরিদ ডিভানে গিয়ে ঠেস মেরে বসে অগ্নির উদ্দেশ্যে বলে,,,,,
” পার্সোনাল সময়ের জন্য সারারাত পরে আছে।ভাইয়ের সংসারে ভালোমন্দ খেতে আসলাম। ভাই আমার বাপের বাড়ি থেকে আলাদা হয়ে বউ নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকছে। ছোট ভাই হিসেবে কর্তব্য পালন করতে এসেছিলাম কিভাবে চলছে তাদের সংসার। কিন্তু এসে যে এমন দৃশ্য দেখতে পাব কল্পনা ছিলো না। যায় হোক কি রান্না করেছো বউমনি?
অগ্নি — তর মনে হয় আমি আমার বউকে এখানে রান্না করার জন্য এনেছি?
অরিদ — ওহহ পার্সোনাল সময় কাটানোর জন্য এনেছো?সরি ভুলে গিয়েছিলাম ভাইয়া। যায় হোক স্টাফকে বলো রান্না বসাতে রাতের খাবার খেয়ে যাব।
অগ্নি কটমট চোখে অরিদের দিকে তাকায়। রাগে ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” রুমে চলো।
ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রায়ান অগ্নিকে বসিয়ে বলে,,,,
” এত ডেম্পারেট কেনো হচ্ছিস ভাই? পুরো রাত পড়ে আছে। ট্রাস্ট মি তখন একটু ও বাঁধা দিব না।
অগ্নি রক্তচক্ষু ন্যায় সবার দিকে তাকায়। কিন্তু সবার ডোন্ট কেয়ার ভাব। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে ভরকে যায়। কিন্তু মুহূর্তে অগ্নির কথা ভেবে ঠোঁট চেপে হাসে। ইয়ানা সুযোগ বুঝে মিরা আর সুমুকে নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠে। এইদিকে অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠে। অসময়ে সবগুলো এসে হামলে পড়ে। অনেক্ষন পর স্টাফ কিছু হালকা খাবার নিয়ে হাজির হয়।
অরিদ খাবারগুলো নিজের কাছে টেনে আনে। একটা প্লেটার যেখানে অনেক খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।চিজ প্লেটার বোর্ডে ফল আর কিছু শুকনো খাবার। বেকিং ট্রে তে পাস্তা ও লাসাগ্না। গ্লাসে ঠান্ডা পানীয় আর জুস।
অরিদ কিছু ফল মুখে দিতেই মিরা ধীর আওয়াজে বলে,,,,
” খাবার দেখলে আর হুস থাকে না।
অরিদ মিরার দিকে না তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,,,,
” তোমার বাপেরটা তো আর খাচ্ছি না।
মিরা — আমার বাপেরটা আপনাকে খাওয়াব ও না।
অরিদ ব্যাঙ্গ করে বলে,,,,
” আমার বাপেরটা ঠিক খাচ্ছো।
ইয়ানা মিরা আর অরিদকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়।
অগ্নি ইউভি আর রায়ানকে ইশারা দিয়ে মোবাইল চেক করতে বলে।
মেসেজ * আতিকের ব্যাংক খালি করতে সফল হয়ে গিয়েছি। ওদের ধ্বংসলীলা শুরু।
ইউভি আর রায়ান মেসেজ পেয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। অবাকের চরম পর্যায়ে ঠোঁটে রহস্যময় হাসির রেখে দেখা দেয়।
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৬
অগ্নি * মেসেজ,,, খুব দ্রুত কানাডায় ব্যাক করতে হবে। সামনাসামনি আসার সময় এসে গিয়েছে। অতি শীঘ্রয় শুরু হবে এক তান্ডব লীলা। যেখানে কারোর মৃত্যু আর পরাজয় নিশ্চিত। সময় হয়ে গিয়েছে সে সময়ের যেখানে সত্য আর অসত্যের মুখোমুখি হবে। শত্রুকে ধ্বংস করতে হিংস্র দাবানলে ঝাপিয়ে পড়ব। হয় জয় নাহলে পরাজয়।
রায়ান আর ইউভির ভিতরে আতঙ্কে কেঁপে উঠে। ভয়ে ভয়ে ইয়ানার দিকে তাকায়। এই হাসিমুখ খানা কি চিরস্থায়ী হবে?