অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৯
লিজা মনি
নিশুতি রাত। আকাশে চাঁদ নেই। সে ও কোনো এক অনাকাঙ্খিত ভয়ে গাঁ ঢাকা দিয়েছে। নড়ছে না গাছের একটা পাতাও। চারপাশের বাতাস থমকে গিয়েছে। গাঁ- চাপা অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া সেই অন্ধকার জঙ্গলটায় কোনো এক সত্তা উপস্থিত থাকার সাহস রাখে না। ঝোঁপের আড়ালে সেই অন্ধকার গাঁ ছমছমে টর্চার সেল । জায়গাটা এক মৃত কামড়ার মত। একটা পুরনো ধ্বংসপ্রাপ্ত কসাইখানা। অনেক সময় বাতাসের সাথে ভেসে আসে নোনা লোহা আর পঁচা রক্তে রগন্ধ। মেঝেতে জঁমাট বাঁধা কুকুর, পচা শুয়রের রক্ত, পোকায় ধরা হাড়গুড়, পচা মৃতদেহের দুর্গন্ধ, মাঝে মধ্যে কাঁচা হাড়ের কড়কড় গন্ধ।
আর দেয়ালের রক্তের ছোপছোপ দাগ যেগুলো শুকিয়ে কালচে হয়ে গিয়েছে। ছাদের উপর ঝুলে থাকা মরিচের খাঁচা থেকে চুঁইয়ে পড়ছে কালচে পানি। সেই পানির স্পর্শেই ধাতব মেঝেতে দগ্ধ চামরার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। টর্চার সেলের প্রতিটি কোণা থেকে ঝরে পড়ছে রক্তের প্রতিটি স্রোত। মনে হয় এইটা অনেক বছর আগের অন্ধকার এক মৃতপুরী। যেটা একজনের ছোঁয়ায় মাঝে মাঝে ব্যক্তিগত ল্যাবরেটরি হয়ে উঠে। টর্চার সেলের ভিতরে ডুকলেই মনে হয় ফুসফুসে কেউ পঁচা মাংস গুঁজে দিয়েছে। শ্বাস নিয়ে গেলেই বমি চলে আসে। দেয়ালে রাখা আছে বুক চিঁরে নিয়ে আসা মানব অঙ্গ জিভ, চোখ, নখের আচরে গেথে যাওয়া কান।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সেই কামড়ায় এক কোণে শুইয়ে রাখা হয়েছে একজন ছয় ফুট উচ্চতার শক্তপোক্ত দেহের ব্যক্তিকে। স্টিলের টেবিলের উপর শুয়ানো। তার পাশে ছড়িয়ে – ছিটিয়ে আছে ধারালো ছুঁরি, কাঁচি, করাত। যার যে কোনো একটা তার বুক ছিঁরে ফেলতে পারে এক মুহূর্তেই। কিন্তু আশ্চর্য কেউ এখানে হাত দেয় নি। এই যেন মৃত্যুর আগের প্রস্তুতি চুরান্ত ভয়ের মহড়া। চারপাশে এমন এক নিস্তব্দতা, শব্দ বলতে কিছু নেই। শুধু জঙ্গল থেকে পশু – পাখির ভয়ংকর আওয়াজ ভেসে আসছে । ব্যক্তিটা সেখানে সজাগভাবে শুয়ে আছে। ভিতরে ভয়, চাপা আর্তনাদ আর আতঙ্কে ভরা শ্বাস নিচ্ছে। তার শরীরের নিচে রাখা হয়েছে শুয়রের গলে যাওয়া পঁচা মাংস।
ছ্যাঁকা খাওয়া চামড়া, রক্তাক্ত ছিন্ন হাঁড়। লোকটা বার বার চোখ উল্টে বমি করে যাচ্ছে। অতিরিক্ত বমিতে লোকটা নেতিয়ে পড়ে। সহ্য করতে পারছে না চারপাশের এমন বিষাক্ত, নোংরা গা ছমছমে পরিবেশ। তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে রাবারের দঁড়িতে। কিন্তু এত শক্তভাবে পেচানো যে রক্তচাপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। তার চোখের সামনে খোঁলা হাঁড়ি যার ভিতরে আধা পচা আঙ্গুল, চোখের পাতা আর গলে যাওয়া দাঁতের ছোয়া। লোকটা সহ্য করতে পারছে না বার বার বমিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে চারপাশ। এত বিষাক্ত দুর্গন্ধ মনে হচ্ছে কোনো পচনশীল জায়গায় চলে এসেছে।
একটা ধাতব দরজা ক্রিইইইক করে খুলে যায়। ভয়ংকর কেঁচ – কেঁচ শব্দ। কান্নার মত ভারী রক্তের মত ঘন তার উপস্থিতি।স্টিলের উপর আধ শোয়া ব্যক্তিটা আতঙ্কিতে হয়ে সেদিকে তাকায়। একটা ঠান্ডা বাতাস নেমে আসে পুরো কামড়ায়। বাতাস ভারী হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে একটা ছায়া পড়ে স্টিলের উপর এরপর নেতিয়ে পড়ে থাকা ব্যক্তিটার উপর। ছায়াটা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। প্রতিটা পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে কামড়ার প্রতিটি আলো ও কেঁপে উঠে। দেয়ালে লেগে থাকা ছারপোকা আর ইঁদুরগুলো ও দৌড়ে পালায়। তার পা থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত কালো কাপড়ে ঢাকা। গায়ে জড়িয়ে আছে হাটু অব্দি কালচে লং লেদার কোর্ট। চোখে সানগ্লাস মুখে কালো মাক্স। পায়ের নিচে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত চিরে চিরে চপচপ শব্দ করে। প্রতিটা পদক্ষের নিচে কারোর না কারোর আত্না চাপা পড়ে আছে। তার এক হাতে দাঁরালো করাত।
ধীরে ধীরে ব্যক্তিটার দিকে এগিয়ে আসে। ব্যক্তিটা নিভু নিভু পল্লবে তাকায়। তার দিকে এগিয়ে আসছে কানাডায় বেড়ে উঠা এক নরপশু। যার টর্চার সেল একটা মৃতপুরী আর সেই ব্যক্তিটা এক মানুষরুপী জানোয়ার। ব্যক্তিটা টেবিলের পাসে এসে দাঁড়ায়। মুখে কোনো কথা নেই মুখেশের আড়ালে এক ঠান্ডা রহস্যময় হাসি।চারপাশে বাতি জ্বলছে না।শুধু টিমটিমে একটা লাল আলো মাথার উপর থেকে পড়ে শুয়ে থাকা লোকটার মুখে।যার চোখ বন্ধ, কিন্তু নিঃশ্বাস তীব্র। সে টের পাচ্ছে মৃত্যুর ধাপ গুনে গুনে তার দিকে এগিয়ে আসছে।কামরাটা হঠাৎ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ওঠে। গন্ধ আরও তীব্র পচা রক্ত, শরীরের গন্ধ, ভয়, ঘাম সব মিলিয়ে যেন এক নরকের নিঃশ্বাস। লোকটা বাঁকা হাসে। কিন্তু সেটা হাসি নয় একটা মানবিক অনুভুতির ছাপ। এই এক মৃত্যুর তৃপ্তি ছায়া।
দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটা ঝুঁকে পড়ে গলায় ফিসফিস করে বলে,,,,
“ভেবেছিলে পালিয়ে বাঁচবি? আমার কলিজা, আমার বেঁচে থাকার এক মাত্র অবলম্বনকে ট্রিগার টিপে মারতে গিয়েছিলি। কিন্তু হায় আফসোস তর হৃদয়ের ট্রিগার ওই আমি আজ টেনে বের করব। অগ্নি চৌধুরি নিজের শিকারকে কখনো ভুলে না। নিজের বউকে নিয়ে খুব পজেসিভ। সামান্য বাতাসকে ও সে হিংসে করে। আর সেখানে তার জীবন নিতে গিয়েছিলো কেউ!
তার স্বর এত ঠান্ডা। এক নিশ্বব্দ ভয়াল। সাপের ফণা ছুঁয়ে গেল কানের পাশ দিয়ে। এই জায়গায় কেউ চিৎকার করলেও কানে যাবে না বাইরের দুনিয়ার কারো। কিছু মুহূর্তেই সময় থেমে আছে। লোকটা আতঙ্কিত গলায় বলে,,,,
” একজনকে মেরে আরেকজন আসবে। কিন্তু তুমি জানবে ও না কে সেই গোপন শত্রু। তার টার্গেট তোমার ধ্বংস। আর তোমার দুর্বলতা তোমার বউ। তুমি পুরো মাফিয়া রাজ্যের বস। শক্তি, ক্ষমতা আর বিচক্ষনতা সবার থেকে আলাদা। শক্তিশালী হয়ে ও লাভ নেই যদি কেউ পিছন থেকে আঘাত করে মোকাবেলা করতে পারবে না। আমি তোমাকে বলছি অগ্নি চৌধুরি তুমি হয়ত ভালো কিন্তু তবুও এক নরপশু। তোমাকে হারানোর ও কারোর ক্ষমতা আছে। আর সে তোমাকে হারাবে। তার দরকার প্রতিশোধ, তোমার সিংহাসন আর ক্ষমতা।
অগ্নি এতক্ষন অর্ধমৃত থাকা ব্যক্তিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টি একদম শান্ত। চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে। মাথা থেকে হুডিটা খুলে ফেলে। ঘারে ভেসে উঠে সাপের ফনা তুলা এক ট্যাটু। অগ্নির দৃষ্টি শান্ত কিন্তু চোখ থেকে যেন লোহিত রক্ত কণা গড়িয়ে পড়ছে।
অগ্নি হালকা আর ভারী গলায় বলে,,,,
” জানি উত্তর দিবি না এরপর ও প্রশ্ন করছি কে সে ব্যক্তি? কে আমার পিছনে লাগার দুঃস্বাহস দেখিয়েছে? মাফিয়া রাজ্যের কেউ?
স্টিলের উপর থাকা ব্যক্তিটা হাসে,,,
” মৃত্যু আজ আমার নিশ্চিত। কোনো সাধারন মৃত্যু না। অগ্নি চৌধুরির হাতের সেই ভয়ানক মৃত্যু। যখন মরেই যাব তখন জবান বন্দি কেনো দিব?
অগ্নির ঠান্ডা স্বর,,,,
” মারব না, কিছু করব না। মুক্তি পাবি যদি সত্যিটা বলিস। নিজের বউকে রক্ষা করতে তৈরি করা নিয়ম হাজার বার ভাঙতে পারি।
লোকটা অবাকতার সাথে উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলে,,,,
” ভাবা যায় গোল্ডেন অফ মাফিয়া গ্রুপের লিডার অগ্নি চৌধুরিও কারোর প্রতি দুর্বল। শুধু দুর্বল নয় অতিরিক্ত পাগল। বউ কি জানে তুমি কে, কি তোমার পরিচয়, তুমি ঠিক কতটা বিকৃত।
অগ্নি হুট করে লোকটার কন্ঠনালী চেপে ধরে গর্জে উঠে,,,,,
” সীমা ছাড়িয়ে যাস না বিচ। অতিরিক্ত কথা আমার কোনোদিন ওই পছন্দ না। আমার বউকে তুই মারতে চেয়েছিস এরপর ও ছেড়ে দেওয়ার অফার দিয়েছি। সত্যিটা বলা মুক্তি পাবি।
কন্ঠনালী চেপে ধরাতে লোকটার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। চোখ লাল হয়ে আসে। চোখ মনে হচ্ছে উল্টে আসবে। পায়ে শিকল বাধা এরপর ও পায়ে পা ঘেষে ছটফট করে উঠে। শরীরের নিচে পচে গলে পড়ে থাকা মাংসগুলো আরও ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। অগ্নি ছেড়ে দেয়। লোকটা শান্ত হয়ে আসে। অতিরিক্ত দুর্গন্ধ মনে হয় নাড়িভুঁড়ি সব চলে আসবে এখন ওই। আর বমি করার শক্তি নেই।
লোকটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,,,,
” তোমার নাকে গন্ধ লাগে না। শরীরে ঘৃনা কাজ করে না এমন বিষাক্ত কিছুতে। আমি তো বেঁচে আছি সাধারন কেউ আসলে এতক্ষন মৃত্যুর দরজায় পৌঁছাত। তোমার এই টর্চারসেল এত জঘন্য ভাবছি কানাডার সেই বিশাল টর্চার সেল কেমন।
অগ্নির ঠান্ডা স্বর,,,,
” অতিরিক্ত কথা বলছিস না ডাফার। টর্চাসেলে নিজে থাকার জন্য নয় তদের জবান বন্ধ করার জন্য সৃজন করা হয়েছে। যেখানে কর্মফল অনুযায়ী একেকজনের সময় একেক রুপ নেয়। তরটা একটু বেশি জঘন্য রুপ নিয়েছে। দেখতে ভালোই লাগছে। সত্যিটা বল?
লোকটা হালকা শব্দ করে হেসে বলে।,,,,,
” একবার যেহেতু আটক হয়েছি তাহলে বেঁচে ফিরব না আমি জানি। সত্যিটা জানার পর ওই মেরে ফেলবে। বাঁজপাখির ন্যায় চোখ তোমার অগ্নি চৌধুরি। সাথে গার্ডদের ও ভালো প্রশিক্ষন দিয়েছেন। ঠিক আপনার মত ধারালো দৃষ্টি। ভিখারী সেজে রাস্তায় হাটছিলাম। এরপরও কিভাবে বুঝে গেলো। আর ধরে ও ফেলল। যত প্রসংশা করি তত কম হবে কিন্তু প্রসংশা করব না।। আমাদের বস রাগ করবে। তবে একটা মেসেজ দিয়ে যায় মুল ব্যক্তিকে ধরতে না পারলে আমার মত এমন অনেক লোককে দেখতে পাবে। আমি মরলে আরেকজন আসবে। সে মরলে আরেকজন আসবে। আসতে থাকবে। একদিনে দেখবে হুট করে তোমার বউকে…..
আর বলতে পারে না। কথা আটকে যায়। ছটফট করে উঠে। কপালের রগগুলো কালচে হয়ে ভেসে উঠে। পুরো মুখ লাল হয়ে যায়। অগ্নি ব্যক্তিটার কন্ঠনালীতে সরু একটা সুঁই ডুকিয়ে দেয়। যেটা শ্বাসনালী বরাবর ছিদ্র করে। লোকটা চোখ নিভে আসে। কিন্তু দম বন্ধ হয়ে যায় নি। শ্বাস এখনও চলছে। তবে সেটা খুব ধীরগতিতে। অগ্নির মুখে এক নরপশুর ছায়া পড়ে। হিংস্রতার সাথে হাতে এক ধারালো করাত তুলে নেই। লোকটার বুকের ঠিক মাঝখানে বসিয়ে দেয়। লোকটা গগন কাঁপানো এক আর্তচিৎকার দিয়ে উঠে। কিন্তু সেটার সময় নির্ধারন করা অক্ষম। লোকটা মৃত্যুর দরজায় ডুকে পড়ে। দেহ দুই ভাগ হয়ে যায়। চোখ উল্টে বেরিয়ে আসে। জিহ্বা কমপক্ষে এক হাত বেরিয়ে আসে। মুখের সাইট থেকে লালা পড়ছে গড়িয়ে গড়িয়ে। অগ্নি করাতটা রাখে পাশে। চোখ বন্ধ করে করে এক শ্বাস টানে।।হাতে তুলে নেয় এক ধারালো ছুঁরি। সেটা করাতের দাঁতের মত ধারালো।
হাতে নিয়ে লোকটার মাথা আলাদা করে ফেলে। কন্ঠনালি কাটে না তাই আবার আঘাত করে। ছিন্ন – বিচ্ছন হয়ে যায় মাথাটা। লোকটার গলায় রাবারের দঁড়ি বাঁধা ছিলো তাই মাথাটা ছিটকে না পড়ে দঁড়ির সাথে আটকে থাকে। মাথা কাটা শেষে নেমে আসে নিচের দিকে। পা দুটি খন্ড – বিখন্ড করে ফেলে অজস্ত্র ছুঁরির আঘাতে। ঠিক কতটা টুকরা করা হয়েছে তার পরিমান নেই। নিচে পড়ে থাকা গলিত মাংসের সাথে তাজা তরল রক্ত মিশ্রন হয়ে যায়। বক্ষের প্রতিটা হাড্ডিকে টেনে টেনে আলাদা চিঁরে করে ফেলে। দুই পাশের প্রতিটি হাড্ডিকে আলাদা আলাদা করে এক পাশে রাখে। খুব সাবধানতার সাথে পেটের মধ্যখান ছুঁরি দিয়ে কাটে। একদম নিখুঁত কসাইয়ের মত। পেট দুই হাত দিয়ে টান দিয়ে ফা*ক করে। বাঁকা হেসে পেটের ভিতরে হাত হাত দিয়ে কলিজা খুঁজতে থাকে। যকৃত বা কলিজা সাধারনত মানুষের শরীরে পেটের ডান দিকে , ডায়াফ্রামের নিচে অবস্থান করে।এটা শরীরের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ অঙ্গ এবং রক্ত পরিশোধন, পুষ্টি সংগ্রহ, বিষাক্ত পদার্থ দূর করা, হজম সহায়তা ইত্যাদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। অগ্নি দক্ষভাবে হাত চালায়। পেটের ডান পাশে পাঁজরের ঠিক নিচের পাশ থেকে কলিজা টেনে বের করে বর্বরতার সাথে। কলিজাটা চোখের সামনে হাতে রাখে তাচ্ছিল্যভাবে বলে,,,
” ছেহহ বালের জিন্দেগী। এইটুকু কলিজা নিয়ে এসেছিলো অগ্নি চৌধুরির বউকে মেরে ফেলতে। ডাফার!
অগ্নি কলিজাটা টর্চার সেলের হিংস্র কুকুরগুলোকে দিয়ে দেয়। এরপর লোকটার পুরো শরীর ছিন্ন – বিচ্ছিন্ন ভাবে টুকরো টুকরো করে। অন্ডকোষ আলাদা করে এসিডে ডুবিয়ে দেয়। কাজ শেষ হয়ে
গেলে ছুঁরিটা পাশে রাখে। রক্তে হাত লাল হয়ে গিয়েছে। কালো কোর্টে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ বসে গিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে এখানে কোনো পশু জবাই দেওয়া হয়েছে। অগ্নি চেয়ারে বসে। শান্ত দৃষ্টি রেখে স্টিলটার দিকে তাকায়। যেখানে লোকটার পুরো শরীর খন্ড – বিখন্ড হয়ে আছে। অগ্নি বিকৃত হাসি দিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে কাউকে ডাক দেয়। ডাক দেওয়ার সাথে সাথে দুজন বিশালদেহী ব্যক্তি সামনে এসে হাজির হয়। অগ্নির ঠান্ডা স্বর,,,,
” সালফিউরিক এসিডি ডুবিয়ে দাও দেহের প্রতিটি খন্ডকে।
যাস্ট এইটুকু কথায়। অগ্নি আর কোনোদিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে যায় টর্চার সেল থেকে। নিজের মার্সিডিজ গাড়িতে উঠে রাতের অন্ধকারে জঙ্গল ভেদ করে বাহিরে বেরিয়ে আসে। চোখ- মুখে এখন ও কাঠিন্যতা বিরাজমান। কে এই গোপন শত্রু? রায়হান আর ঝর্না ? নাহহ তাদের সব কিছু আমার জানা। কে তাহলে? আতিক আর রানবীর! নো, নো তাদের প্রতি সেকেন্ডের আপডেট আমার কাছে চলে আসে। ওদের এক একটা নিশ্বাস ও আমি জানতে পারি। তাহলে কে হতে পারে? অগ্নির গাড়ি গিয়ে থামে অফিসের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে লিফ্টে উঠে একদম নিজের ফ্লোরে চলে যায়। নিজের বরাদ্দ করা পার্সোনাল রুমে ডুকে ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে শরীরের সাথে জড়ানো কোর্টটা খুলে ফেলে। এরপর ধীরে ধীরে শার্টের বোতাম খুলে মাঝেতে ফেলে দেয়। মার্বেল মেঝে দিয়ে রক্তের সাথে পানি মিশে গড়িয়ে পড়ছে। পুরো শরীর থেকে রক্ত ছাড়িয়ে নিয়ে অগ্নি বাথটপে শুইয়ে পড়ে। বাথটপে মাথা রেখে চোখ – বন্ধ করে বড় বড় নিশ্বাস টানে। উন্মুক্ত বুকের প্রতিটি বক্ষ উঠা- নামা করছে। মস্তিষ্কে ঘোরপাক খাচ্ছে,,,
“” কে এই গোপন শত্রু ”
রাত নয়টা বেজে ত্রিশ মিনিট।
অরিদ বিছাছানায় বসে কিছু দরকারি কাজ করছিলো। সাজিদ চৌধুরি কাল তাকে জোর করে অফিসে নিয়ে যায়। কিছু কাজ দিয়ে গিয়েছে। বলেছে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কমপ্লিট করে জমা দিতে। অরিদের রাগ, জেদ আর বিরক্তি নিয়ে ল্যাপটপ আর ফাইল নিয়ে বসে। মিরা চারদিকে হাটছে আর গুন গুন করছে। গান বলছে নাকি নিজে নিজে কথা বলছে সেটা বুঝার ইয়াত্তা নেই। মিরা ধপাস করে গিয়ে ডিভানে বসে। হাতে মোবাইলটা নিয়ে হল্লা পার্টির গ্রুপ কলে জয়েন হয়। কলে অবনি- আকাশ, সুমু, ইয়ানা, আরু, রুহান আর এখন মিরা জয়েন হয়। কথা চলতে থাকে। মিরার উচ্চস্বরে কথা বলাতে অরিদ বিরক্তি নিয়ে সেদিকে তাকায়। মিরা হল্লা – পার্টির সাথে হেসে যাচ্ছে। অরিদের তাকানো বা বিরক্তি এইসবে ভ্রুঁ- ক্ষেপ নেই। অরিদ রাগে ফুঁস করে পুনরায় কাজে মনযোগ দেয়। কিন্তু বরাবর মিরার উচ্চ আওয়াজে কথা বলাতে কাজ করতে বাঁধা হচ্ছে।
অরিদ দাঁতে দাঁত চেপে ধমকে উঠে,,,,
” এই মেয়ে ধীরে কথা বলতে পারো না। কাজ করছি দেখতে পারছো না এখানে? আরেকবার ব্যাঘাত ঘটলে ঠাটিয়ে এক থাপ্পর দিব।
অরিদের ধমকে মিরা ভ্রুঁ – কুচকে তাকায় সেদিকে। কল মিউট করে এরপর ল্যাপটপে দৃষ্টি দিয়ে বলে,,,,
” ওরে আল্লাহ বাপের হোটেলে খাওয়া ছেলেটাও দেখছি আজ কাজ করছে!
অরিদ থমথমে মুখে বলে,,,,
‘ বেশি বলছো না।
মিরা — আপনার থেকে কম। কথা উচ্চস্বরে না বললে কিভাবে বলব?
অরিদ বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,
” ধীর আওয়াজে বলো। এমন ভাবো কথা বলছো যেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে বাদাম বিক্রি করছো। গলা দেখে তো মনে হচ্ছে রাজ হাঁস ঘাঁত ঘাঁত করছে।
মিরা ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলে,,,,
” এক্সকিউজ মি , আপনার ধারনা আছে কার কন্ঠস্বর নিয়ে কথা বলছেন? আমার এই কন্ঠের কত সুনাম পেয়েছি আপনি জানেন?আমার স্বর নিয়ে ভার্সিটিতে প্রতিটি ছেলে- মেয়ে প্রসংশা করেছে। বিশেষ করে ছেলেদের।
অরিদ — যারা করেছে তারা তোমার মত ওই ঘাঁত ঘাাঁত করা কন্ঠের অধিকারী। আর খুব ভালো লাগছে ছেলেদের প্রসংশা পেয়ে তাই না?
মিরা– কাক কি করে বুঝবে ময়ুরের মর্ম। আপনার মত ফাঁডা গলা তো আমার না।
অরিদ — ভাষার কুরবানি দিয়ে দিচ্ছে অসভ্য।
মিরা — আমি এমন ওই। যে যেমন তার সাথে ঠিক তেমন ব্যবহার করি। ভার্সিটির জাওয়াদ ভাইয়াকে খুব মিস করি সে কতটা মিষ্টি ছিলো। সময় হলে তার সাথে দেখা করাব। একটু শিখে নিয়েন ব্যবহার কি?
অরিদ ভ্রুঁ নাচিয়ে দাঁত পিষে প্রশ্ন করে,,,,,
” জাওয়াদ কে?
মিরার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,,,,
” আমার ক্রাশ। সেটা আপনার না জানলে ও চলবে।
অরিদ মিরার দিকে কটমট চোখে তাকায়। নির্লজ্জ মেয়ে পুরুষদের উপর ক্রাশ খায়। অসভ্য!
মিরা পুনরায় কলে জয়েন হলে অরিদের সুর,,,,
” ধীর আওয়াজে কথা বলবে।
মিরা — সরি আমি কোনো বিদেশীর বউ না যে ধীর আওয়াজে কথা বলব। যদি কখনো বিয়ে হয় বিদেশীর সাথে তখন স্লো আওয়াজে কথা বলব। এখন সরি।
অরিদের ঝাঁঝালো কন্ঠ,,,,,
” এই রাতে আমাকে একদম রাগাবে না মিরা। আমি রেগে গেলে সাজিদ চৌধুরি আর শিখা চৌধুরি ও কিছু করতে পারবে না। অতিরিক্ত করলে মাটির নিচে জ্যাঁন্ত কবর দিয়ে আসব।
অরিদের ঠান্ডা, গম্ভীর স্বরে থমথমে খেয়ে যায়। অগ্নির কথা মনে পড়ে যায়। দুই ভাই সেইম সেইম। সামান্য ভয় হলেও হাসি উপহার দেয় অরিদের দিকে। অরিদ গম্ভীরতা নিয়ে তাকিয়ে আছে। মিরা ধীর পায়ে ডিভান থেকে উঠে বারান্দায় চলে যায়। যেতে যেতে অরিদকে হাজারটা গালি দিয়ে যেতে ভুলে নি।
অরিদ মিরার প্রতিটি পদক্ষেপে তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। মুহূর্তেই সৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে আসে।
ইয়ানা বিছানায় হেড বোর্ডে হেলান দিয়ে শুইয়ে আছে। উহুম শুয়ে নয় অগ্নির জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিছুক্ষনের মধ্যে চোখে ঘুম এসে জমা হয়েছে। গলায় কারোর গরম নিশ্বাস অনুভব করতে পেরে ঘুমটা ছুটে যায়। চোখ খুলে তাকাতেই অগ্নির অবয়ব ভেসে উঠে।
ইয়ানা অগ্নির মাথায় হাত রেখে বলে,,,,
” এসে পড়েছেন? অপেক্ষা করছিলাম এতক্ষন। অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘুমিয়ে পড়েছি।
অগ্নির মাদকতা আর স্লো ভয়েস,,,,
” তোমার শরীরের ঘ্রাণে আ্যলকোহল মিশানো থাকে জান ? আমি কাছে আসলেই এমন মাতাল হয়ে যায় কেনো? ট্রাস্ট মি আ্যলকোহলে ও এতটা মাতাল হয় না যতটা মাতাল আমি তোমার কাছে আসলে হয়।
ইয়ানা লজ্জায় সামান্য হাসে। পুনরায় অগ্নির কন্ঠ ভেসে আসে তবে সেটা ধারালো,,,
” তোমাকে আমার জীবনের সাথে জড়ানো উচিৎ হয় নি। একদম উচিৎ হয় নি আমার অন্ধকার রাজ্যে তোমাকে প্রবেশ করানো। দুরে রাখতে চাই আমার থেকে তোমাকে। আমার ছায়া তোমার জন্য বিষাক্ত হয়ে উঠছে। ধীরে ধীরে সেই বিষ তোমার শরীরে প্রবেশ করতে চাইছে।
ইয়ানা কেঁপে উঠে অগ্নির শক্ত কথায়। নিশ্বাস টেনে বলে,,,,,
” কিসব বলছেন? কি হয়েছে? কোথায় গিয়েছিলেন আজ?
অগ্নির গম্ভীর হাসি,,,,,
” জেনে কি করবে? সহ্য করার ক্ষমতা নেই তো তোমার। আচ্ছা ইয়ানা থাকতে পারবে আমাকে ছাড়া? দুরে চলে যেতে পারবে?
ইয়ানা অগ্নির মাথার চুল আকড়ে ধরে। ভিতরে ডুকে কেঁদে উঠে কিন্তু শব্দ হয় না। অগ্নি এখনও ইয়ানার গলায় মুখে গুঁজে আছে। ইয়ানা শান্ত কন্ঠে বলে,,,,
” হঠাৎ আজ অগ্নি চৌধুরির কন্ঠে আমি ভয়ের আভাস পাচ্ছি? ব্যাপারটা কিন্তু হজম যোগ্য নয় জানোয়ার সাহেব।
অগ্নি ইয়ানার গলায় জোরে কামর বসায়। ইয়ানা ব্যাথা নাক – মুখ কুচকে ফেলে। অগ্নি মাথা তুলে তাকায় ইয়ানার দিকে। ইয়ানাও তাকায় সেদিকে। দুজনের দৃষ্টি মেলে। অগ্নি ইয়ানার গলে স্পর্শ করে বলে,,,,,
” ভয় নামক কোনো শব্দ আমার ধাঁচে নেই। আবার মনে করিয়ে দেয় আল্লাহ আর তোমার চলে যাওয়া ছাড়া অগ্নি চৌধুরি কাউকে ভয় পায় না।
ইয়ানার করুন চাহনি — ভালোবাসেন আমাকে মি, চৌধুরি?
অগ্নির সোজা উত্তর,,
” নাহহ। না ভালোবাসব আর না দুরে যেতে দিব।
ইয়ানা মনটা বিষিয়ে উঠে। অগ্নির থেকে সরে যেতে চায়। কিন্তু অগ্নি পুনরায় ইয়ানার গলায় মুখ রাখে। কিছুক্ষন পাগলামো করে হিসহিসিয়ে বলে,,,,
” আজ আমার এই শক্তপোক্ত দেহের নিচে তোমার নরম দেহটা চাই সুইটহার্ট। মানসিক শান্তি চাই একটু।
ইয়ানা — নিজেকে দুর্বল ফিল করছি।
অগ্নি থেমে যায়। ইয়ানার কপালে আলতো ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলে,,,,
” ঘুমাও।
ইয়ানা অগ্নির বুকে মাথা রেখে বলে,,,,,
“” আপানাকে আমি খুব ভালোবাসি মি, চৌধুরি।
অগ্নি চাপা হেসে ইয়ানার কানে কানে বলে,,,
” বালিকা তোমার প্রেমের পদ্ম দিও না এমন জনকে। যে ফুলে ফুলে উড়ে মধু পান করে অবশেষে ভাঙ্গে মনকে। সো বেগম সাহেবা নিজেকে আটকে রাখুন।
ইয়ানা অগ্নির বুক থেকে মাথা তুলে চোখে চোখ রাখে। দৃষ্টিতে ক্রোধ ঢেলে বলে,,,,
” কেনো কথায় যাবেন আপনি?
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,
” আমার কাছে থাকা তোমার জন্য অনিরাপদ।
ইয়ানা এক ঝটকায় অগ্নিকে ছাড়িয়ে নেয়। এরপর বুঝে উঠার আগেই অগ্নির বুকের উপর বসে পড়ে। অগ্নি ছোট ছোট চোখ করে ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানা অগ্নির শার্টে শক্ত করে চেপে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,,,,
” কেনো? এখন অনিরাপদ হবে কেনো? যখন বিয়ে কিরেছিলেন তখন মনে ছিলো না আপনার কাছে থাকা অনিরাপদ হবে? যখন আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছিলেন তখন মনে হয় নি অনিরাপদের কথা? যখন আমাকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন, যখন আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ, আলিঙ্গন করেছিলেন তখন মনে হয় নি অনিরাপদের কথা। অনেক্ষন ধরে আপনার এইসব কথা সহ্য করছি। কি ভেবেছেন এইসব বললে আমি কান্না- কাটি করে বুক ভাসাব? নো মি, অগ্নি চৌধুরি অহেতুক কান্না করতে যাব না। স্বামী চলে গেলে হয়ত অনেকে কেঁদে কেঁদে বন্যা বানিয়ে ফেলে। কিন্তু আমি প্রথমে আপনাকে খুন করব। এরপর জেলে বসে বসে সারাজীবন কাঁদব।
ইয়ানা থামে। হাঁপিয়ে উঠে সে। এক সাথে এতগুলো কথা বলে বড় করে নিশ্বাস নেয়। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা সামান্য ঘাবরে যায়। রেগে গেলো না তো আবার?
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” এই না বললে নিজেকে দুর্বল ফিল করছো? মাত্র একটা লাইন বলেছি তুমি তো একদম মিসেস অগ্নি চৌধুরি হয়ে উঠেছো।
ইয়ানার রাগান্বিত সুর,,,,
” আলাদা হওয়ার কথা কেনো বললেন তাহলে?
অগ্নি ভ্রুঁ নাচিয়ে বলে,,,,,
” তোমার মনে হয় তোমাকে একা রেখে আমি চলে যাব? এতটা ভালো মনে হয় আমাকে হুম! আমি অগ্নি চৌধুরি যতক্ষন সজ্ঞানে আছি ঠিক ততক্ষন মিসেস অগ্নি চৌধুরি তার অধীনে তার পার্সোনাল প্রপার্টি। তোমাকে নিজের থেকে আড়াল করাটাও আমার জন্য দুঃস্বপ্ন। যদি পারতাম তোমার শ্বাসটা ও নিজের অধীনে করে ফেলতাম। আপনার এই জনমে আর ছাড় নেই মিসেস চৌধুরি। যুদ্ধের এক ভয়ানক খাঁচায় আপনি বন্ধী। যেখান থেকে মুক্তি অসম্ভব।
ইয়ানা কৃত্রিম হাসে। যেই হাসিতে লুকিয়ে আছে চাপা কষ্ট আর চাপা খুশি। সবকিছুর মিশ্রন হয়ে উঠেছে এই জীবন।
অগ্নি — বুকের উপর বসাতে নেগেটিভ ফিল হচ্ছে ইয়ানা। যেকোনো সময় কিছু করে বসব। এলার্ট দিচ্ছি।
ইয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে। এক ঝটকায় অগ্নির উপর থেকে নেমে আসে। মুখ থেকে বেরিয়ে আসে একটা শব্দ,,,,
” ছিহহ! কি অশ্লিল।
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,
” তুমি করতে পারবে আর আমি বললেই দোষ!
ইয়ানা নাক – মুখ খিঁচে বলে,,,,
” আল্লাহর দোহায় লাগে একটু চুপ করুন। বেহায়া কথা ছেড়ে একটু সভ্য হন।
অগ্নির গম্ভীর আওয়াজ — অসম্ভব। এমন পাপ করতে পারব না।
ইয়ানা অবাক কন্ঠে বলে,,,,,
” সভ্য হওয়া পাপ!
অগ্নি — বউয়ের সামনে সভ্য হওয়া ঠিক নয় জান। পুরো পৃথিবীর কাছে আমি সহস্রবার সভ্য হতে রাজি কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে এক সেকেন্ড ও সভ্য হতে পারব না।
ইয়ানা — শিখা চৌধুরি আপনাকে জন্ম দেওয়ার সময় লজ্জার মেশিন কানেক্ট করতে ভুলে গিয়েছে।
অগ্নি — শুক্রিয়া করো তারা লজ্জার মেশিন কানেক্ট করে নি। নাহলে এত এত আদর থেকে তুমি বঞ্চিত হয়ে পড়তে। লজ্জাশীল হলে এই জনমে আর বাবা ডাক শুনতে পারব না।
লাস্ট বাক্যে অগ্নি নিজেই হতভম্ভ হয়ে যায়। বাবা ডাক কে শুনতে চায়? আমি তো বাবা হতে চাই না ? প্রয়োজন নেই কাউকে। আর কোনো দুর্বলতা চাই না।
ইয়ানা ভ্রুঁ কুচকে তাকায়। হালকা হেসে বলে,,,,,
” আপনি তো সন্তান চান না। তাহলে কি আপনি ও বাবা হতে চা…..
ইয়ানা কথাটা শেষ করতে পারে নি। অগ্নির গম্ভীর আর ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর,,,,
” স্টপ! এমন কিছুই নয়। ঘুমিয়ে পড়ো।
ইয়ানা গম্ভীর নিশ্বাস ফেলে। মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক কাহিনী। এই ছন্নছাড়া আর বেপোরোয়া লোকটাকে সে কিভাবে ঠিক করবে? কিভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবে? এই ধ্বংস ধ্বংস খেলা কবে বন্ধ হবে?
সকালে আসাদ হোসেন চায়ে চুমুক দিচ্ছি। সেলিনা হোসেন কিচেন রুমে রান্নার কাজে ব্যস্ত। রুয়ানা টেবিলে বসে সকালের নাস্তা করছে।
হঠাৎ করে কলিং বেলের শব্দে সবাই দরজার দিকে তাকায়। রুয়ানা দরজা খুলার জন্য উঠতে চাইলে আসাদ হোসেন থামিয়ে বলে,,,,
” খাবার খেয়ে নাও। আমি খুলে দিচ্ছি।
রুয়ানা পুনরায় চেয়ারে বসে যায়। আসাদ হোসেন চায়ের কাপটা মিনি টেবিলের উপরে রেখে উঠে দাঁড়ায়। এরপর দ্রুততার সাথে দরজার সামনে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার সামনে ডেলিভারি বয়কে দেখে কপাল কুচকে তাকায়।
আসাদ হোসেন– কি চাই? দেখে তো মনে হচ্ছে ডেলিভারি বয়। কিন্তু কেউ তো কিছু অর্ডার করে নি।
ডেলিভারি বয়ের হাসিসুলভ কন্ঠ,,,,,,
” স্যার আপনার নামে পার্সেল এসেছে।
আসাদ হোসেন চিন্তিত হয়ে বলে ,,,,,
” আমি তো কিছু অর্ডার করি নি। তাহলে কে দিয়েছে এইসব?
ডেলিভারি বয় — একজন ব্যক্তি পাঠিয়েছে আপনাকে দেওয়ার জন্য। আপনি খুলে দেখতে পারেন।
ডেলভারি বয় আসাদ হোসেনের হাতে বক্সটা দিয়ে চলে যায়। আসাদ হোসেন চিন্তিত ভঙ্গিতে দরজা লাগিয়ে পুনরায় সোফায় গিয়ে বসে। সেলিনা হোসেন এগিয়ে এসে বলে,,,,
” দেখে তোমাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে? কে পাঠয়েছে এইসব?
আসাদ হোসেন — জানি না কিছুই। বলল একজন ব্যক্তি পাঠিয়েছে সেটা খুলে দেখতে।
রুয়ানা — খুলে দেখো আব্বু কি আছে।
আসাদ হোসেন ধীরে ধীরে বক্সটা খুলে। বক্সের ভিতরে কিছু কাগজ আর ছবি দেখে দৃষ্টি গম্ভীর হয়ে আসে। কপালের ভাঁজ প্রখর হয়। ছবি গুলো হাতে নেয়। সাথে সাথে কপালের ভাঁজ সোজা হয়ে যায়। একজন কালো হুডি পড়া ব্যক্তি হাতে রক্তাক্ত ছুঁরি। আরেকটা ছবিতে অগ্নি আর ইয়ানার ছবি। তিন নাম্বার ছবিতে অগ্নির পুরো হাত রক্তাক্ত দৃষ্টি ভয়ানক। আসদ হোসেনের বুক ধুক করে উঠে। কাঁপা হাতে কাগজ গুলো খুলে। কানাডার মাফিয়া বস অগ্নি চৌধুরি। আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যাংস্টার। যার রাজত্ব পুরো মাফিয়া জগৎ জুড়ে। একজন হায়েনা, একজন কালো দুনিয়ার ঢেকে যাওয়া গ্যাংস্টার। আসাদ হোসেনের হাত থেকে কাগজগুলো পড়ে যায়। বুকের এক পাশে চাপ অনুভব হতে থাকে। নিজের মেয়েকে নিজ হাতে কুরবানী দিয়ে দিলো। শেষে কি না এক খুনির সাথে বিয়ে দিয়েছে। আসাদ হোসেনের এমন অবস্থা দেখে রুয়ানা খাবার খাওয়া ছেড়ে চলে আসে। সেলিনা হোসেন এগিয়ে আসে।
রুয়ানা আসাদ হোসেনের পাশে বসে বলে,,,,,
” কি হয়েছে আব্বু? হার্টের ব্যথা উঠেছে? কি আছে এই কাগজে।
আসাদ হোসেনের চাপা আর্তনাদ —
” এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা! আলোর পিছনে লুকিয়ে আছে এত বড় অন্ধকার। কি করে ফেললাম আমি। নিজের মেয়েকে এক গ্যাংস্টারের হাতে তুলে দিলাম।
রুয়ানা আশ্চর্য হয়ে বলে,,,,,
” কিহহহ! গ্যাংস্টার? কি বলছো এইসব আব্বু?
রুয়ানা দ্রুত ছবি আর কাগজ দেখতে থাকে। আপনা – আপনি মুখ হা হয়ে যায়। কানাডার বিশ্ববিখ্যাত মাফিয়া অগ্নি চৌধুরি আর ভাইয়া তাহলে এক ব্যক্তি! একজন ব্যক্তির দুইটা রুপ? নাহহ এইটা কেমন বাস্তবতা? এইটা অসম্ভব। ভাইয়া তো অনেক ভালো ব্যক্তি। কোনো হিংস্রতা দেখতে পাই নি কখনো। তাহলে উনি কিভাবে একজন গ্যাংস্টার হতে পারে। আর সেই ব্যক্তি এতদিন আমাকে এত ভালোবাসা দিয়েছে। কি ধরনের বাস্তবতা এইটা?
সেলিনা হোসেন কান্না করে বলে,,,,,
‘ আমার মেয়েটা ঠিক আছে আসাদ? গ্যাংস্টাররা খুব খারাপ হয়। তারা অনেক নির্যাতন করে। আমার মেয়েটাকে নির্যাতন করে নি তো?
আসাদ হোসেন নিশ্বাস নিয়ে বলে,,,,,
” হাজারটা গ্যাংস্টার আর অগ্নি চৌধুরির ব্যবধান আছে সেলিনা। অগ্নি চৌধুরি সম্পর্কে তোমার ধারনা নেই। হাজারটা খবরের সিরোনামে সে থাকে। সে কালো হুডিতে সবসময় ঢাকা থাকে। তার চেহারা কেউ দেখে নি। নারী – শিশু পাচার, অস্ত্র, বিষাক্ত জিনিস সবকিছু ওর অধীনে হয়ে থাকে। কারন সে সবার বস। আমার মেয়েটাকে আমি নিজের হাতে অন্ধকারে ঢেলে দিলাম। আদর্শ আর ন্যায়পরায়ন ভেবে বিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু আজ এইটা কোন সত্যের সম্মুখীন হতে হলো।
আসাদ হোসেন হাঁপিয়ে উঠে। বড় বড় নিশ্বাস নিতে থাকে। বুকে হাত দিয়ে এক পাশে হেলে পড়ে। রুয়ানা আব্বু বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। সেলিনা হোসেন কান্না করতে করতে বলে,,,,,,
” রুই এম্বুল্যন্স ফোন দে। এখন ওই হসপিটালে নিতে হবে।
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৮
রুয়ানা দ্রুত এম্বুল্যান্স কল করে। আসাদ হোসেনের হার্টে সমস্যা তাই সবসময় চিকিৎসা বিষায়ক জিনিস আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখা। আসাদ হোসেনে জ্ঞান হারায় নি। তবে ব্যাথা ছটফট করছে। রুয়ানা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। কিছুক্ষনের মধ্যে এম্বুল্যান্স চলে আসে। আসাদ হোসেনকে সেখানে ডুকানো হয়।
রুয়ানার হেচকি উঠে যায়। কথা বলতে পারছে না এরপরও চাপা আর্তনাদে বলে,,,,,
” চোখ বন্ধ করবে না আব্বু। কিছু হবে না তোমার। চোখ খোলা রাখো।