অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫১

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫১
লিজা মনি

প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা ঘণ্টা
নিঃশব্দে, নির্ভুল ছন্দে এগিয়ে চলে সময়ের সূঁচে গাঁথা হয়ে।
কেউ থামায় না,কেউ ফেরাতে পারে না জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে পেছনে ফেলে সময় নিজের গতিতেই হাঁটতে থাকে নির্লিপ্ত, নির্বিকার। সময় অপেক্ষা করে না কারো জন্য সে অনুভব করে না কারো কষ্ট বা ক্লান্তি। তবুও আমরা প্রতিনিয়ত তার সঙ্গে যুদ্ধ করি।

চাই একটুখানি থামতে, ফিরে যেতে, অথবা ধরে রাখতে কোনো প্রিয় মুহূর্তকে।কিন্তু সময়! সে শুধু চলে। চলে যায় সামনে, আর আমাদের ফেলে রেখে যায় পিছনে স্মৃতি আর আফসোসের ধূসর ধুলোয় ঢাকা একাকীত্বে। আসাদ হোসেনকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। এখন উনি পুরো পুরি ভাবে সুস্থ। ইয়ানাকে সেদিন সকালে চৌধুরি বাড়িতে দিয়ে অগ্নি নিখোঁজ। অগ্নি কোথায় আছে সেটা কেউ জানে না। এমনকি আরিফও না। ইউভি আর রায়ান প্রথম দুইদিন না ভাবলেও এখন বেশ চিন্তিত। হুট করে কোথায় গিয়েছে? নিজেকে গোম করার পিছনে নিশ্চয় কোনো কারন আছে। অগ্নি গভীর জলের মাছ। ওর চালচলন বুঝা কষ্টসাধ্য। জীবনে কাউকে কিছুর কৈফিয়ত দেয় নি।আর নিতে যাওয়াটাও বোকামি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অগ্নির এমন কঠিন সত্য উদঘাটনের পর চৌধুরী বাড়ির প্রতিটি কোণ যেন ভারি হয়ে উঠেছে।
নরম বাতাসেও এক অজানা আতঙ্ক ঘোরাফেরা করে। চোখে চোখে রয়েছে বিস্ময় আর অস্থিরতা
হল্লা – পার্টি এক প্রকার নির্বাক এই পরিস্থিতিতে আনন্দ ভ্রমণ? সাজেকের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য কি আদৌ মনকে শান্তি দেবে। যখন ঘরের মেয়েটির জীবন তলিয়ে গেছে এক ঘোর অন্ধকারে? তাই সবাই সাজেক যাত্রা বাতিল করে দিয়েছে। ইয়ানা যার মুখে একটুকু হাসিও এখন অনেকদিনের অতিথি। তার কষ্টকে পাশ কাটিয়ে কেউ নিজেকে আনন্দে ভাসাতে চায়নি। তবে ইয়ানা চেয়েছিলো, এই থমথমে বাতাসটা একটু নরম হোক। চেয়েছিলো অরিদ আর মিরার চিরকালের দূরত্ব একটু ঘুচুক। সত্যিই তো হানিমুন না হোক, একটা ছোট্ট ভ্রমণ হয়তো তাদের সম্পর্ককে আরেকটা সুযোগ দেবে!

চুপিচুপি সবার মনে সেই কথাই ঢোকানোর চেষ্টা করেছে ইয়ানা। “তোমরা যাও’ অরিদেরও তো মানসিক পরিবর্তন দরকার বলে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে। যখন সবাই তাকে জিজ্ঞাসা করেছে “তুমিও যাবে তো?” সে নরম গলায় ক্লান্ত হাসিতে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। কেউ তার সেই বিষাদভরা চোখ উপেক্ষা করতে পারেনি। একটা মেয়ে যার জীবন একের পর এক যন্ত্রণায় পুড়ছে। তার কীভাবে আনন্দে মেতে ওঠা সম্ভব? তাই শেষমেশ কেউ আর কোথাও যায়নি। অরিদ গিয়েছে তবে পরের দিন আবার চলে আসে।
হল্লা – পার্টি সবাই ক্যাম্পাসে বসে আছে। সবার মধ্যে পিন পিন নিরবতা। এমন সময় মিরা এক গভীর আর ভাবুক কণ্ঠে সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে—

‘ মিরা তুই কি আগের থেকে সব জানিস? সব সত্যি জানার পর আমরা যেভাবে ট্রমায় ছিলাম তুই এত স্বাভাবিক ছিলি কিভাবে? বড্ড ভাবায় কিন্তু।
মিরা মাথায় রাখা উড়নাটা খুলে এক পাশে রেখে বিছানায় বসে উত্তর দেয়,,,
” হুম জানতাম।
আরু হুট করে বিছানা থেকে উঠে বসে। চোখ বড় বড় করে অবাকতার সাথে বলে,,,
‘ কিহহহ! তুই সব জানতি?
মিরা — আমি কানাডায় থেকেছি পাঁচ বছর আরু। তার পর ইয়ানার সাথে সম্পর্ক। জেনে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়। ভাইয়া নিজেই ধরা দিয়েছে আমার সামনে।
সুমু শুকনো ঢোক গিলে বলে,,,

‘ জানার পরও এত নিরব কিভাবে ছিলি? ভয় করে নি ভাইয়ার সাথে কথা বলতে?
মিরা হেসে বলে,
” করাটা কি স্বাভাবিক নয়?
আরু মৌন গলায় গালে হাত দিয়ে বলে,,,
‘ বিশ্বাস কর বোন ক্লাস টেনে যখন পড়তাম তখনও ভিতু ছিলাম। রাস্তায় পুলিশ দেখলে আম্মুর কাপড়ে ধরে রাখতাম। আর সেখানে একজন গ্যাংস্টারের সামনে হাজার বার গিয়েছি তাও আবার ভয় ছাড়া। বুঝতে পেরেছিস কত সাহসী হয়েছি আমি।
মিরা আর সুমু আরুর কথায় হাসে।

রুহান — প্রচুর সাহসী হয়েছিস। পাগল দেখলেও ভয়ে দৌড় শুরু করিস। আবার আসছিস সাহসী হতে।
আরু কটমট চোখে তাকায় রুহানের দিকে। রোহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে জুসে চুমুক দেয়।
মিরা– কিন্তু সেই হিংস্র গ্যাংস্টার এই একটা মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসে। ভাইয়ার ভালোবাসা কখনো শুনিনি কিন্তু দুর থেকে অনুমান করেছি। অনেক বার অনেক কিছুর সাক্ষী হয়েছি আমি। তখন দেখেছি ভাইয়ার পাগলামো আর তীব্রতা। মাঝে মাঝে ভাবি একজন মানুষ এতটা তীব্রভাবে কি করে আগলে রাখতে পারে। তাদের সংসার হয়েছে ঠিক কিন্তু সেই সংসার আর সাজাতে পারে নি। সেই অগুছালোভাবেই পড়ে আছে।
সুমু আনমনেই বলে,,,,

” আদৌ কি হবে?
সুমু আর আরু বিষন্নভাবে তাকায়। সুমুর হুট করে মনে পড়ে যায় রায়ানের কথা। রায়ান তো গোয়েন্দা অফিস্যার তাহলে একজন ক্রিমিনালের ফ্রেন্ড কিভাবে হয়? রায়ান কি আদও গোয়েন্দা অফিসার নাকি শুধু নাম মাত্র। সেও কি ঘুরে ফিরে কোনোভাবে এইসবে যুক্ত? সুমুর ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে।
আকাশ ঘড়ির দিকে তাকয়ে বলে,,,
” ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। এখন যাওয়া যাক।
সুমু– হ্যা চল।
হল্লা পর্টি সবাই ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওয়া দেয়। কিছু দুর যেতেই মিরা ” আহহ ” আর্তনাদ করে পা চেপে বসে পড়ে।
আরু, আকাশ, রুহান, সুমু সবাই এক সাথে মিরার দিকে তাকায়। আরু পায়ের নিচে চাপ দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। চোখে – মুখে ব্যাথার ছাপ স্পষ্ট। সুমু অধৈর্য হয়ে মিরার সামনে বসে বলে,,,

” কি হয়েছে মিরা? ব্যাথা পেয়েছো নাকি?
মিরার ভাঙ্গা আওয়াজ,,,
‘ লোহার মধ্যে আঘাত পেয়েছি। মেবি রক্তক্ষরন হচ্ছে।
আরু — রক্তপাত হচ্ছে!
আকাশ পকেটে হাত দেয় রুমাল খুজার জন্য কিন্তু রুমাল আনেনি আজ। মৃদু আওয়াজে “শিট ‘ বলে মিরার দিকে এগিয়ে যায়। রুহান ও রোমাল ব্যবহার করে না। লোহা একদম গেথে গিয়েছে জুতা সহ। অতিরিক্ত ব্যাথায় মিরার চোখ নিভু নিভু হয়ে আসে। কোনো মতে তাকিয়ে থাকে।
আরু কোনো উপায় না পেয়ে চলে যায় অরিদের কাছে। অরিদ এই মুহূর্তে জিসান আর সিমিদের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত। আরুর উপস্থিতি পেয়ে তারা পিছন ফিরে তাকায়।
অরিদ কপাল কুচকে প্রশ্ন করে,,,

” কি ব্যাপার আরু? আর ইউ ওকে? এইভাবে হাপাচ্ছো কেনো?
আরু মিহি আওয়াজে বলে,,,
‘ ভাইয়া মিরার পায়ে লোহা গেঁথে গিয়েছে একদম। একটু রক্তপাত হয়েছে কিন্ত উঠে দাড়াতে পারছে না। আপনাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলাম তাই জানাতে এসেছি। যেহেতু আপনি ভার্সিটিতেই আছেন।
অরিদ গম্ভীর হয়ে বসে। বিরক্তি নাকি অন্য কিছু বুঝা মুশকিল।
সিমি — কি বলো! কোথায় আছে এখন মিরা?
আরু– ক্যাম্পাসের পাশে।
জিসান অরিদকে এইভাবে খাপছাড়া ভাবে বসে থাকতে দেখে,,,

‘ তর বউ আঘাত পেয়ে বেহুশ হয়ে আছে আর তুই শালা খাম্বার মত বসে আছিস?
অরিদ কিড়মিড়িয়ে বলে,,,
” খবরদার জিসান বউ সম্মোধন করবি না। ওই মেয়ে অরিদ চৌধুরির বউ নয়।
জিসান গালে হাত দিয়ে অবুঝের মত বলে,,
” কবুল কি আমার বাপে বলেছিলো? প্রতি রাতে রুমে কি মিরার সাথে কোনো ছাগল থাকে? বাসর করে ভার্জিনিটি নষ্ট করে বসে আছে আর শালায় বলে বউ সম্মোধন না করতে।
অরিদ — বাসর করলে এতদিনে এই মেয়ের পেটে বাচ্চা থাকত ইডিয়েট।
জিসান হাসি দিয়ে বলে,,,

‘ দেশ অনেক ডিজিটাল হয়েছে বাবা। হয়ত প্র…
অরিদ ধমকে উঠে,,,
” খবরদার জিসানের বাচ্চা বাক্যটা শেষ করলে তকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলব।
আরু চোখ বড় বড় করে তাকায়। কি বলে এইসব? তারা তো দেখছি আমাদের থেকেও এগিয়ে।
জিসান চুপ হয়ে যায়। অরিদ আরুর উদ্দেশ্যে গম্ভীর হয়ে বলে,,
” চলো।
আরুর সাথে অরিদ, জিসান আর সিমি এগিয়ে যায়। মিরা যেখানে আঘাত পেয়েছে দেখানে নিয়ে যায়। রুহান মিরাকে পাজা কোলে নিতে যাবে এমন সময় আকস্মিক অরিদের ভারী গম্ভীর স্বর,

” ডোন্ট টাচ! আমি দেখছি রুহান।
সবাই তাকায় অরিদের দিকে। সবার চোখে – মুখে অবাকতা। সুমু অবাক হয়ে বলে,,,
” ভাইয়া আপনি?
অরিদ কিছু বলে না গম্ভীর হয়ে তাদের দিকে এগিয়ে যায়। সুমু আরুর দিকে ইশারা করে জিজ্ঞাসা করে,
” তুই বলেছিস?
আরু মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানায়। সুমু হালকা হাসে। অরিদ মিরার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে দাঁত চেপে বলে,,,
” হাটার সময় কি চোখ আকাশে রেখে হাটো। দেখে হাটতে পারো না। কতটুকু রক্তক্ষরন হয়েছে এডিয়েট।
মিরা নিভু নিভু চোখে অরিদের গম্ভীর মুখের দিকে তাকায়। কত বড় খারাপ হলে সাহায্য না করে এইভাবে ধমকায়। কে বলেছে উনাকে আসতে? আমি তো বলিনি। আরু নাহয় আবেগের বশে বলেছে উনি এড়িয়ে গেলেই তো পারতেন।
মিরা নিচু আওয়াজে বলে,,,

” সুমু বলে দে বিপদ কাউকে বলে আসে না। কে বলেছে এখানে আসতে? আমাকে একটু ধর, আমি গাড়ি দিয়ে চলে যাচ্ছি।
মিরা সুমুর হাত শক্ত করে ধরে উঠে দাঁড়ায়। পুরো মাথা হুট করে ঘুরে যায়। মিরা পড়ে যেতে নিলে আরু শক্ত করে ধরে। মিরা সুমুর হাতে ধরে এগিয়ে যাবে এমন সময় হুট করে শূন্যে ভেসে উঠে। আকস্মিক এমন হওয়াতে ভয়ে কারোর শার্টের কলার চেপে ধরে। সবাই অবাক আর স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে আছে। আরু খুশির উত্তেজনায় রুহানকে চিমটি কেটে বলে,,
‘ দোস্ত কি দেখতে পাচ্ছিস?
রুহান — চিমটিটা ধীরে দিলেও পারতি ডাইনি। দেখতে পাচ্ছি মাখামাখি প্রেম। শুধু আমি না পুরো ভার্সিটির স্টুডেন্টরা তাকিয়ে আছে।

সুমু চারদিকে তাকায়। ক্যাম্পাসের প্রতিটি মানুষের নজর অরিদ আর মিরার দিকে। এক একটা মেয়ে মুখ হা করে তাকিয়ে আছে। সবার চোখে – মুখে বিষন্নতা আর হিংসা। সুমু ঠোঁট চেপে হাসে।
ভার্সিটির গেইটের সামনে আসতেই মিরার টনক নড়ে। অরিদের কোলে ভাবতেই চোখ বড় বড় করে ফেলে। অরিদের মুখের দিকে তাকিয়ে ছটফটিয়ে উঠে নামার জন্য। কত বড় নির্লজ্জ হলে সবার সামনে কোলে তুলে নিয়ে এসেছে। এই মুখ আমি কিভাবে দেখাব!
মিরা সামান্য রাগান্বিত কন্ঠে বলে,,
” বলেছিলেন ভার্সিটির কাউকে না বলি আপনার আর আমার বিয়ের কথা? আমি ও বলে নি। ইভেন কখনো আপনার সামনে ও যায় নি। তাহলে আজ সবার সামনে কোলে তোলে নিয়ে আসার মানে কি অরিদ চৌধুরি। যখন কাল সবার সামনে প্রশ্ন বিদ্ধ করবে কে আমি? তখন এসে আবার আমাকে দোষ। দিবেন। কেনো আমাকে কোলে তুলেছেন তখন কি বলবেন?
অরিদ মিরাকে গাড়ির ভিতরে বসিয়ে দিয়ে বলে,,,

” নিজেকে বড় ভাবাটা বন্ধ করো। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তাই করতাম। যাস্ট মানবতা তাই অন্য কিছু ভাবার প্রয়োজন নেই।
মিরা হালকা হেসে বলে,,,
‘ এইরকম মানবতা বুঝি সবার সাথেই করেন? মানবতা দেখিয়ে কয়টা মেয়েকে কোলে নিয়েছেন শুনি?
আকস্মিক অরিদ মিরার দুই বাহু চেপে ধরে। মিরা ব্যাথায় হালকা মুখ কুচকে ফেলে। অরিদ দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,,,,
” নোংরা ইঙ্গিত দিলে কলিজা টেনে নিয়ে আসব। রাগাবে না আমাকে।
মিরা হেসে বলে,,,
” ওমা এই মাত্র তো বললেন মানবতা দেখিয়ে আমাকে সাহায্য করেছেন। তাহলে নিশ্চয় অন্য জনকে ও করেছেন। আমি তো মাত্র জজ্ঞাসা করেছি এত রেগে যাচ্ছেন কেনো? আপনার রাগ দেখে মনে হচ্ছে ক্ষমার অযোগ্য কিছু বলে ফেলেছি।
অরিদ ব্যাক সিট থেকে ফাস্টেড বক্স নিয়ে বলে,,,
” প্রশ্নের উত্তর তো আমি আমার বাবা- মাকেই দেয় না। তাহলে তুমি কিভাবে আশা করো আমি তোমার কথার উত্তর দিব। আরেকটা কথা বললে মাঝ রাস্তায় ফেলে দিয়ে যাব। খোদার কসম কথার নড়চড় হবে না।
মিরা নিশ্চুপ হয়ে যায়। অরিদ মিরার পায়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রুঁ নাচিয়ে বলে,,

” পা উপরে তুলো।
মিরা — কেনো?
অরিদ — মেডিসিন লাগাব তাই।
মিরা চোখ বড় বড় করে ছটফটিয়ে উঠে।
— না প্লিজ এমন করবেন না। মেডিসিনে প্রচুর জ্বালা করবে। আমি এইসবে প্রচুর ভয় পায়।
অরিদ মিরার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে তাকায়। সারাদিন ঝগরা লেগে থাকার সময় শরীর তেজ দেখলে মনে হয় কালনাগিনী। আর এখন মেডিসিনে ভয় পাচ্ছে!
অরিদ জোর করে মিরার পা তুলে নিজের উড়ুর উপর রাখে। মিরা অবাকতা রেখে ভয়ে নিজের জামা খামচে ধরে।
— প্লিজ এমন করবেন না। জ্বালা করবে প্রচুর।
অরিদ ধমক দিয়ে বলে,,,

” ছটফট করলে গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিব। চুপচাপ বসে থাকো।
অরিদের ধমকে মিরা চুপসে যায়। অরিদ হালকা স্পর্শে তুলো দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করে নেয়। এরপর হালকাভাবে পরিষ্কার করে মেডিসিন লাগাতে যাবে এমন সময় আবার ও চেঁচিয়ে উঠে। অরিদে রাগান্বিত চোখে তাকাতেই আবার চুপসে যায় । অরিদ ফুঁ দিয়ে মলম লাগিয়ে দেয়। হালকা জ্বালা করলেও দাঁত চেপে অরিদের শার্ট খামচে ধরে। পায়ে ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করে মিরার দিকে তাকাতেই কপাল কুচকে আসে। মুখ খিঁচে দুই হাত দিয়ে তার শার্ট খমচে ধরে আছে। অরিদের কপালের ভাঁজ প্রসারিত হয়। ছোট ছোট চোখ করে তাকায়। হুট করে শরীরটা হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে। চোখ বন্ধ করে বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে হঠাৎ ধাক্কা মেরে মিরাকে নিজের থেকে সরিয়ে নেয়। হঠাৎ ধাক্কায় মিরা টাল সামলাতে না পেরে কিছুটে দুরে সরে যায়।
অরিদ মিরার পা নিচে নামিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বলে,,
‘ কাছে ঘেঁষবে না একদম।
মিরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,,,
” এতটাও খারাপ দিন চলে আসিনি আমার যে আপনার কাছে ঘেঁষব। ক্ষেপা বাঘ একটা।
অরিদ — একটু চুপ করবে প্লিজ। আমার কানটাকে একটু রেহায় দাও। নাহলে বৃদ্ধ হওয়ার আগেই কালা হয়ে যাব।
মিরা বিরবির করে অরিদকে হাজারটা গালি দিয়ে চুপ করে বসে থাকে। অসভ্য একটা?

ইয়ানা জানালার কাছে চুল ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। জীবনটা কেমন বেরঙ্গিন হয়ে যায়। একটা কষ্ট ভুলতেই আরেকটা কষ্ট এসে হামলে পড়ে। ইয়ানার মুখটায় কেমন উজ্জলতা কমে গিয়েছে। বিষন্নতা আর নির্ঘুম রাতের ছাপ স্পষ্ট। আজ শাওয়ার নেওয়া হয় নি তাই জানালার কাছ থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। মনে পড়ে যায় ওদের জীবনের প্রথম ধাপের কথা। এই শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে একসময় নির্ভয়ে অগ্নির বুকে মাথা রাখত। যেখানে ঠোঁটে লেগে থাকত লজ্জামিশ্রিত মুচকি হাসি। সামান্য স্পর্শে শরীর কেঁপে কেঁপে উঠত। লজ্জায় ইচ্ছে করত মাটির সাথে মিশে যেতে। সুক্ষ্ম আলিঙ্গন হালকা স্পর্শে লজ্জায় নেতিয়ে পড়ত মেয়েটা। একরকম ভালোলাগা কাজ করত। নিজেকে সবচেয়ে সুখী নারী মনে করত। মনে হত এই লোকটা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আল্লাহ বুঝি খুশি হয়ে এমন একজন স্বাামী উপহার দিয়েছে। অতিরিক্ত রাগী আর গম্ভীর ছিলো কিন্তু সেটাই তো সবচেয়ে বেশি ভালো লাগত।

সুন্দর করে সংসারটা মাত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয় নি। মাত্র একটা ঘূর্নিঝরে হৃদয়টাকে ছিন্ন- বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে যায়। কারোর পেট ছিদ্র করে কলিজা টেনে বের করার মত বর্বর দৃশ্য। সেই বদ্ধ ঘরে রাখা ভয়ানক গা ছমছমে মানুষগুলো! তার আসল পরিচয়! সব তো আমাকে নিঃশ্বেস করে দিয়েছিলো অগ্নি চৌধুরি। মানসিক ট্রমাতে চলে গিয়েছিলাম আমি। আমার মনের অবস্থা যদি একবার বুঝতে পারতেন তাহলে নির্ঘাত পাগল হয়ে যেতেন। কলিজায় ক্ষত হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু সেটা বাহ্যিকভাবে নয় অভ্যন্তরীনভাবে। ধীরে ধীরে মানাতে শুরু করলাম আপনার সাথে। ঘৃনা করতাম কিন্তু সর্বশেষ ভালোবাসি। আপনার অতীত জানার পর বুঝলাম আপনার এমন হওয়ার পিছনে বিরাট বড় কারন আছে।

আপনার ভয়ংকর অতীতকে দোষ দিয়ে পুনরায় স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করছিলাম। মানিয়ে নিতে গিয়েও আবার,মাঝ পথে হেরে গেলাম। আপনার এত এত রুপ সহ্য করার মত ক্ষমতা আল্লাহ কেনো দেয় নি আমাকে? এত কিসের টাকার প্রয়োজন? পুরো কানাডার বাদশাহহ হয়ে ও একজন নারী আর শিশুর নিরাপত্তা আপনার কাছে নেই। আপনার একটা ইশারা সবাই এইসব বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু আপনি ইশারা করেন না উল্টো স্বাক্ষর নামাই সাইন করেন। কারন এখানে টাকার ৫০% ভাগিদার আপনি। কতটা জঘন্য আপনি। এত পাপ করে কোথায় ঠাই হবে আপনার? আমার কি হব? যখন আমাকে আপনার সাথে জড়ালেন তাহলে এই পাপের অংশীদার কেনো বানালেন? স্বামী হয়ে যখন মনের ভিতরে প্রবেশ ওই করলেন তখন আমার সপ্নের পুরুষটা কেনো হলেন না? এমন জীবন তো আমি চাই নি অগ্নি চৌধুরি? আমি চেয়েছিলাম সাধারন দুনিয়ার অসাধরনভাবে বাঁচতে। এত বড় সম্রাজ্য আমি চাই নি। যেখানে মানবকুলের আর্তনাদ লেগে আছে। কিন্তু সেটা হলো না। কি করব আমি? কি করে আপনাকে ফিরিয়ে আনব? একবার সব ছেড়ে আমার জীবনে ফিরে আসুন নিজের নিশ্বাসটা ও আপনার অধীনে রেখে দিব। ইয়ানা দুই হাটুর মাঝ খানে মুখ রেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠে। ভিতরটা মনে হচ্ছে কেউ ছুঁরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে।

প্রায় এক ঘন্টার মত শাওয়ারের নিচে বসে থাকে। একসময় শরীরে কাঁপুনি উঠে যায়। নিজের হুসে এসে শাওয়ার বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়। কাপর চেইঞ্জ করে দরজা ঠেলে বাহিরে বের হবে এমন সময় আহিয়া রুমে ডুকে। আহিয়ার হাতে সেই ছোট্ট কাঠবিড়ালটা। যেটা ইয়ানার অনুপস্থিতিতে আহিয়া এতদিন আগলে রেখেছে। ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বিড়ালটা নিজের বুকে নিয়ে নেয়। আহিয়া ইয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে বিষন্ন মনে প্রশ্ন করে,,,
‘ এতক্ষন কান্না করছিলে বউ মনি?
আহিয়ার এমন প্রশ্নে ইয়ানা থমথমে খেয়ে যায়। ইয়ানা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে ,,,
” কি বলছো কান্না করব কেনো?
আহিয়া — কষ্ট সবসময় আড়াল করা যায় না বউমনি।
কষ্টের ছাপ মুখে একটু হলে ও ভেসে উঠে। প্রমান হিসেবে আছে তোমার এই ফোলা ফোলা লাল চোখ। মুখের বিষন্নতা।
ইয়ানা মুচকি হাসে,,

” এমন কিছুই নয় আহিয়া।
আহিয়া ইয়ানার হাতে ধরে বলে,,
” আমার দাদাভাই খারাপ নয় বউ মনি। আমি ও জানতাম না কিছু। যখন জেনেছি বিশ্বাস করবে না বউ মনি মনে হয়েছিলো এইটা কোনো মিথ্যে অপবাদ। স্তব্দ হয়ে গিয়েছিলাম। তুমি তো দাদাভাইয়ের নরম রুপটা দেখেছি কঠিন রুপ খুব কম দেখেছি। মনে হয়েছিলো কোনো সপ্ন দেখছিলাম। আসলেই কি আমার দাদাভাই এমন চক্রের সাথে যুক্ত বউমনি?কিন্তু আমার দাদাভাই অনেক ভালো। আমি নিজের বোন না তবুও আমাকে সবার উর্ধ্বে আগলে রেখেছে। এতটা ভালোবাসা দিয়েছে যে একটা বোনের সপ্ন থাকে প্রতিটা ভাইয়ের কাছে। তোমাকে তো দাদাভাই নিজের জীবনের থেকেও ভালোবাসে। তুমি দাদাভাইকে রেখে কোথাও যেওনা বউমনি। দাদাভাই পাগল হয়ে যাবে।
আহিয়া ফুঁপিয়ে উঠে। ইয়ানা আহিয়াকে নিজের বাহুবন্ধনে আগলে নিয়ে বলে,,,,

” এমন কিছুই নয় বোন। কোথাও যাচ্ছি না আমি। বলতে পারো যাওয়ার ক্ষমতাই আমার নেই। কোথায় যাব আমি বলোতো? আকাশে, জমিনে, সমুদ্রের নিচে নাকি মাটির নিচে? কোথাও আমার ঠাই হবে না সুইটি? প্রয়োজনে উনি সমুদ্রের নিচ থেকে খুঁজে বের করবে।।তাই আর যায় হোক চলে যাওয়ার চান্স নেই।
আহিয়া ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
‘ তোমাকে মন খারাপ দেখে আমার ও ভালো লাগে না। একটা কাজ করো বউমনি আমাকে একটা বাবাই অথবা মা এনে দাও। তাহলে দেখবে ভাইয়া ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে সেসব রাস্তা থেকে ফিরে আসবে।
আহিয়ার এমন কথায় ইয়ানা থমথমে খেয়ে যায়। বলে কি এই মেয়ে? তাই বলে এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চার কথা বলবে? ইয়ানা ঠোঁট চেপে হাসে।

আহিয়া — আমি সিরিয়াস বউমনি?
ইয়ানা — তাই?
আহিয়া — হুম।
ইয়ানা — বাচ্চা দিয়ে যদি প্রতিটি মানুষকে সঠিক পথে ফিরে আনা যেত তাহলে প্রতিটি নারী তাদের বাচ্চাকে হাতিয়ার করত সুইটি।
আহিয়ার ছোট মাথায় এমন কথা ডুকেছে কি না জানা নেই। সে এইটাকে ভুলে অন্য কথায় চলে যায়।
আহিয়া — চলো বউ মনি আঙ্কেলকে আজ দেখে আসি।
ইয়ানা – যেতে বলছো?
আহিয়া — হুম।

ইয়ানা — তাহলে রেডি হয়ে থাকো আমি আসছি। আব্বুকে দেখার জন্য আমার মন ও ছটফট করছে।
আহিয়া হেসে চলে যায়। ইয়ানা বিষন্ন মনে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বুকে হাত গুঁজে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে।উনি যদি অতীতের অভিশাপে এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে আমি সেই অতীতকেই ভেঙ্গে দিব। তার জীবন যদি কেবল ছায়া আর স্মৃতির কবর হয়ে থাকে তাহলে আমি নিজের আলো দিয়ে টেনে আনব। কষ্টকে আগলে নিব আর দুস্বপ্নকে প্রতিদিন সকালে হার মানাতে শিখাব। আমি ওনাকে ঘৃনা করি। নতুন করে আর ভালোবাসব না। সেই ঘৃনা থেকেই উনাকে নতুন করে চিনতে শেখাব। ওনি যদি ভাবেন উনার গল্প শেষ তাহলে আমি সেটা পুনরায় পাঠ করব। জানি হাজারটা ঝড়ের সম্মুখীন হব। বার বার নিজের গন্তব্য হারিয়ে ফেলব কিন্তু নতুন করে আবার উঠে দাড়ানোর প্রয়াস চালাব। আর এইটা ইয়ানা আপনাকে কথা দিলো অগ্নি চৌধুরি। তবে মনে রাখবেন ভালোবাসা শব্দটার থেকে ঘৃনা শব্দটার ভার বেশি বহন করছে হৃদয়ে।

প্রাইভেট জেট আকাশ কেটে চলছে। নিচে পৃথিবী ছোট হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।আর ভেতরে জমে আছে এক অসহনীয় নীরবতা। চামড়ার গাঢ় কালো সোফায় বসে আছেন তিনি । প্রচণ্ড গম্ভীর মুখ। পাথরের মতো কঠিন হয়ে আছে তাঁর চোয়াল। চোখদুটো রোদচশমার আড়ালে থাকলেও তার নিঃশ্বাসের ভারে পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে ভেতরে ঝড় বইছে। এক হাত বুলেট প্রুফ ঘড়ির পাশে শক্ত করে রাখা। অন্য হাতে একটা সিগারেট জ্বলছে কিন্তু ধোঁয়া ছাড়া আর কিছু নেই। সামনের স্ক্রিনে ভেসে আছে কোনো গোপন লোকেশনের মানচিত্র। কিন্তু তার চোখ তাতে স্থির নয়
সে অন্য কোথাও তাকিয়ে অন্য কোনো প্রতিশোধের গহ্বরে গুমরে মরছে। এই মুহূর্তে কেউ যদি পাশে এসে বসে তবে তার গায়ের প্রতিটি লোম দাঁড়িয়ে যাবে।

কারণ এ শুধু গম্ভীরতা নয় এ এক নিষ্ক্রিয় আগ্নেয়গিরি। যার বিস্ফোরণ কেবল সময়ের অপেক্ষা।
চারপাশে দেহরক্ষীরা আছে, কিন্তু কেউ সাহস করছে না একটাও শব্দ করার। তিনি বসে আছেন নিঃশব্দে। কিন্তু তার উপস্থিতিই সবচেয়ে বড় হুঙ্কার। এই জেটের প্রতিটি কাঁপুনি যেন তাঁর রাগের প্রতিধ্বনি হয়ে আকাশে মিশে যাচ্ছে। রাগে নাক – মুখ রক্তবর্ন হয়ে আছে। হেলান দিয়ে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে।
ক্রোধে ফেটে পড়ে পুরো শরীর। কিড়িমিড়িয়ে হুংকার ছেড়ে বলে,,,
” আলবার্ট! ”
হুট করে মোবাইলে মেসেজ আসাতে সেদিকে দৃষ্টি রাখে,,,,

” শুনেছি কানাডায় ছিলে এই দুদিন। আমার পরিচয়ও নির্ঘাত জেনে গিয়েছো। হ্যা অগ্নি চৌধুরি আমি সেই আলবার্ট যার ভাইকে তুমি মাফিয়া প্যেলেসে নির্মম মৃত্যু দিয়েছলে। জীবনে আর যায় করি কেউ তো তোমার মনে ভয় ডুকাতে সক্ষম হয়েছে। তুমি ভয় পাচ্ছো অগ্নি চৌধুরি! ভাবতেই অবাক আর খুশি হচ্ছি। প্রতিশোধের প্রথম ধাপ শুরু অগ্নি চৌধুরি। তর শশুর বাড়ির প্রতিটা লোকজনকে দিয়ে শুরু করলাম। এরপর ধীরে ধীরে সবাইকে শেষ করব। শুনেছি তর জন্মদাত্রী বাবা – মা বেঁচে নেই। যারা আছে তারা থাকবে দ্বিতীয় ধাপে। তৃতীয় হবে তর বন্ধুরা। চতুর্থ তুই আর তর বউ। পুরো বংশ আমি মাটির সাথে মিশাবে। যাস্ট আর মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড বাকি আছে। এরপর তর শশুর বাড়ি পুরে ছাই হয়ে যাবে সাথে মানুষজন ও। পারলে তকে আগেই জানাতে পারতাম কিন্তু আমি জানি তুই যদি ভুলে ও জানতি তাহলে তাদের বাঁচিয়ে নিতি। কিন্তু আফসোস এখন তর কদম ফেলার আগেই সবাই পুরে ছাই হয়ে যাবে।
মেসেজে অগ্নি স্তব্দ হয়ে যায়। জীবনের প্রথম তার ভিতরে ভয় কাজ করছে। চোখের সামনে ভাসে ইয়ানার ছবি। মোবাইলটা চেপে ধরে স্তব্দ আওয়াজে বলে,,,

” ক্ষমা করে দাও আমাকে বউ। তোমার জীবনের বিষ হয়ে গেলাম। তোমার চোখের পানি ঝরার আগে যাতে আমার বুকের হৃদস্পন্দন থেমে যায়।
এদিকে ইয়ানা আর আহিয়া গাড়ি থেকে নামে। ইয়ানা হাসি দিয়ে বাড়ির দিকে তাকায়। এরপর আহিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে হাত ধরতে যাবে এমন সময় এক বিকট শব্দে আহিয়া আর ইয়ানা থমকে যায়। ঘার বাঁকিয়ে রাস্তা থেকে বাড়ির দিকে তাকাতেই হাত থেকে ব্যাগ পড়ে যায়। পুরো দুনিয়া স্তব্দ হয়ে যায়। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। শ্বাস আটকে আসে। মনে হচ্ছে কেউ গলা টিপে ধরে রেখেছে। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আগুনের ধোঁয়ার কুন্ডলী চোখ জ্বালিয়ে দেয়। চিৎকার দিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে।
আহিয়া চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাঁপা গলায় বলে,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫০

” বউমনি বাড়িতে তো আঙ্কেল আন্টি আর রুয়ানা আছে। এইটা কি হলো বউমনি?
আহিয়ার উচ্চশব্দ চারদিকের বাতাস ও ভারী হয়ে উঠে। আহিয়া ইয়ানাকে স্পর্শ করলে ইয়ানা নেতিয়ে পাশে হেলে পড়ে। চোখ বন্ধ হয়ে যায়। জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ে আহিয়ার বাহুডরে। আহিয়া উচ্চস্বরে চিৎকার করে ইয়ানাকে নিজের সাথে ঝাপটে ধরে। ততক্ষনে আশে- পাশের সবাই সেখানে জড়ো হয়ে যায়। সবার মুখে আতঙ্ক। এক বাড়িতে আগুন লাগাতে গিয়ে পাশের একটা বাড়িতে আগুন লেগে যায়। সেই বাড়িতে ও ছিলো একটা হাসি – খুশি পরিবার। এলাকার মানুষ সবাই চাপা আর্তনাদ করে উঠে। হঠাৎ করে আগুন লাগাতে সবাই স্তব্দ। হাহাকার আর চিৎকারে আতঙ্কিত হয়ে উঠে চারপাশ।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫২