ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৪৩

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৪৩
সারিকা হোসাইন

উত্তাল সমুদ্র সেই সাথে বড় বড় ঢেউ,।সেই গর্জে আসা ঢেউয়ের বুক চিড়ে ছুটে চলেছে চার তলা উচ্চতার মাঝারি আকারের সাদা রঙা বাণিজ্যিক জাহাজ।জাহাজটির দূতলা পর্যন্ত মালামালে বোঝাই আর তিন তলা চার তলা খালি।চার তলার পুরোটা জুড়েই ওপেন ডেক।সেই ওপেন ডেকে মোটা একটা স্টিলের খুঁটির সাথে পিছ মোড়া করে বেঁ*ধে রাখা হয়েছে সুবহান শেখ আর তার একমাত্র গুণধর পুত্র শেরহাম ফাইয়াজ কে।করুন চোখে ছেলের র*ক্তা*ক্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছেন এই বৃদ্ধ।এতো গুলো বছর পেরিয়ে যাবার পরে আজকে প্রথম ছেলের জন্য তার মনে মায়ার উদ্রেক হলো।

সুবহান শেখ নিজের বৃদ্ধ ঝাপসা চোখের অশ্রু নিয়ন্ত্রণে আনতে নীরবে চোখ বুজে ফেললেন আর সাথেই সাথেই অক্ষিপটে ভেসে উঠলো শেরহামের মায়ের মায়াবী মুখ খানি।
কতো নরম মনের মানুষ ছিলেন ভদ্র মহিলা।নবনিতাকে ঠিক ছোট বোনের মতো স্নেহ করতেন।ভদ্র মহিলার এতো ভালমানুষী ই যেনো তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ালো।
নবনীতার প্রতি সুবহান শেখের হিং*সা আর আ*ক্রোশ শুরুতেই ধরতে পেরেছিলেন শারমিন।এজন্য বার বার এতটা নিকৃষ্ট হতে বাঁধ সেধেছেন তিনি সুবহান শেখ কে।
কিন্তু শয়তান কে কেউ কোনো দিন পোষ মানাতে পেরেছে?
তবুও সুবহান শেখের অনিষ্ট থেকে নবনিতাকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা গোপনে গোপনে করেছেন তিনি।হঠাৎ একদিন নবনীতার মৃত্যু হ*লো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সারা বছরই কম বেশি অসুস্থ থাকতেন নবনীতা।যুবরাজ এর জন্ম হবার পর সেই অসুস্থতা আরো দ্বিগুন হারে বাড়তে লাগলো।উচ্চবিত্ত সাদাফ দেশ বিদেশের বহুত ডাক্তার দেখালেন।কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না নবনীতার।যুবরাজকে পাঁচ বছরের রেখে পরপারে পাড়ি জমালেন।অসহায় ছোট মাতৃহীন শিশুকে নিয়ে সাদাফ শাহীর বেশ বিপদে পড়লেন।শেষ ভরসা হিসেবে শারমিন এর কাছে সাহায্যের হাত পাতলেন।
নরম মনের অধিকারী শারমিন ও রাজপুত্রের মতো দেখতে যুবরাজকে বুকে আগলে রাখতে হাপিত্তেস করে উঠলেন।
কিন্তু নিজের জঘন্য রূপটা তখনই দেখালেন সুবহান শেখ।
সাদাফ শাহীরের সাথে শারমিনের যোগাযোগ এর সকল পথ বন্ধ করে দিলেন শুধু তাই নয় সাদাফ শাহীরের কাছে শারমিন কে জড়িয়ে পৃথিবীর নিকৃষ্ট তম মিথ্যে কথা গুলো বললেন।
শারমিন নিজের ছেলে রেখে যুবরাজকে মানুষ করতে পারবেনা এমন কঠিন অসত্য কথাও খুব দুঃখ দুঃখ মুখে সাদাফ চৌধুরীর কাছে পেশ করলেন নিকৃষ্ট সুবহান।

হঠাৎ শারমিনের এতো পরিবর্তন এ মনে বেশ কষ্ট পেলেন সাদাফ চৌধুরী।শেষমেশ বাধ্য হয়ে নিজের নিঃসন্তান বোনের হেফাজতে বড় করলেন যুবরাজকে।এখানেই ঘটনার শেষ নয়।
শেরহাম ছোট থেকেই স্কিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলো।এই রোগের সঠিক চিকিৎসা না করিয়ে যুবরাজকে শেষ করে দেবার জঘন্য খেলায় মেতে উঠলেন সুবহান।নিজের চোখের সামনে নিজের সন্তানের প্রতি এতোটা অবিচার মেনে নিতে পারলেন না শারমিন।সুবহান শেখের হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে শুরু করলেন।শুধু তাই নয় নিজের ছেলে কে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবেন সেই আকুতি ও জানালেন।

শারমিনের এতো কাকুতি মিনতি মোটেও সহ্য হলো না সুবহান শেখের।অসুস্থ শেরহামের সামনেই বে*ধড়ক পে*টা*তে*ন শারমিন কে।সুবহন শেখের প্রতিটা আঘাতে র*ক্তা*ক্ত হতো শারমিন।
এই মা/র/ধ*রের দৃশ্য দেখে প্রথমে শেরহাম খুবই ভয় পেতো।দুই হাতে কান চেপে ঘরের অন্ধকার কোনায় লুকিয়ে থাকতো।কিন্তু এক পর্যায়ে এমন নৃশংসতাই সবচেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে উঠলো শেরহামের।মানুষকে আ/ঘা*ত করে কষ্ট দিয়েই স্বগীয় শান্তি অনুভব করতো শুরু করলো শেরহাম।এক পর্যায়ে নিজেকে পুরোটাই গুটিয়ে নিলেন শারমিন।কিন্তু নিজেকে শেষ রক্ষা আর করতে পারলেন না।ছেলে কবে কবে নিজের কল্পনার জগতে নর*খা*দ*কে রূপান্তরিত হয়েছে শারমিন ঘূর্ণাক্ষরেও তা টের পায়নি।

ছেলেকে শেষ বারের মতো নিজের বুকে আগলে নিতে চেয়ে অনুরোধ করলেন
“বাবা শেরহাম!মানিক আমার বুকে ফিরে আয় তোর বাপের পাপের সাম্রাজ্য ছেড়ে।চল তুই আমি দূরে কোথাও পালিয়ে যাই”এসব পাপ কাজ আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না বাবা”
ব্যাস চটে গেল শেরহাম।ঘরের কোণে থাকা হকি স্টিক দিয়ে সজোড়ে শারমিনের কান বরাবর এক বা*ড়ি বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলো
“বেশি কথা বলা একদম পছন্দ করি না মম”

আর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না শারমিনের।ধড়াস করে মেঝেতে পড়ে গেলো সেই সাথে উষ্ণ রঞ্জন পদার্থে রঞ্জিত হলো পুরো মেঝে।দুই চোখ বোজার আগে ছেলের ভয়ানক চেহারা দেখে কেঁপে উঠলো শারমিনের শীর্ন দেহ খানা।পরিশেষে মায়াবী চোখ দুটো থেকে খসে পড়লো উষ্ণ দুফোঁটা জল।
মেঝেতে র*ক্তে*র বন্যা দেখে শেরহামের যেনো আনন্দ রাখার জায়গা ধরলো না।আনন্দে হাসতে হাসতে হলি খেলায় মেতে উঠলো সে।
নিজের বড় চাপাতি ,চাইনিজ চপার আর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে পি*স পি*স করে ফেললো শারমিন কে মুহূর্তের ব্যাবধানেই।

না হলো কোনো অনুশোচনা না হলো কোনো দুঃখ।
নিজের কাজ শেষ করে বিশাল সস প্যানে নিজের পছন্দের স্পাইস, সস আর বিদেশি এলকোহল এর সমন্বয়ে রান্না হলো শারমিনের কঙ্কাল সার দেহের হাড় যুক্ত মাংস।
চকচকে চোখে সেই মাংস খুব মজা করে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুললো শেরহাম।
“তোমার পাপের সাম্রাজ্যের শেষ তবে হলো নর পিচাশ সুবহান শেখ”
শারমিনের ধিক্কার জনিত অট্ট হাসিতে ধরফড়িয়ে চোখ মেলে তাকালো সুবহান শেখ।এদিকে শেরহামের জ্ঞান ও ফিরেছে।

ছেলের দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু বলার চেষ্টা করলেন সুবহান শেখ।কিন্তু কোনো কথাই গুছাতে পারলেন না।
সমুদ্রের গর্জনের শব্দ ভেদ করে হুংকার দিয়ে উঠলো যুবরাজ।
“তোদের বাপ ছেলেকে কি এখানে ঘুমানোর জন্য ধরে নিয়ে এসেছি”?
যুবরাজের ভয়ানক ধমকে কেঁপে উঠলেন সুবহান শেখ।কিন্তু শেরহামের অবস্থার কোনো উন্নতি হলো না।
হাঁপিয়ে উঠা স্বরে হা হা করে হেসে উঠলো শেরহাম।সেই হাসি দেখে যুবরাজের শরীরে যেনো জ্বালা ধরে গেলো।
নিজের বিশ্রী হাসি থামিয়ে শেরহাম বলে উঠলো
“আমাকে তুলে নিয়ে এসে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলি যুবরাজ।তোর জ্বালে আমি ইচ্চে করেই ধরা দিয়েছি।কেনো জানিস?

যুবরাজ দৃষ্টি ছোট করে ভ্রু কুঁচকে শেরহামের ভাবাবেগ বোঝার চেষ্টা করলো।
“আমার কাছে জিপিএস ট্র্যাকার আছে।এটা ধরেই সোয়াট পুলিশ এখানে এসে তোকে ডিরেক্ট ক্রস ফায়ার করবে।আর আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।তোর মৃ*ত্যু*র পর তোর সুন্দরী বউ আমার শয্যা সঙ্গী হবে”
এমন নোংরা কথা গুলো বলে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো শেরহাম।সুবহান শেখ ছেলের বুদ্ধিতে বুকে বেশ বল পেলেন।ছেলের আনন্দে শামিল হয়ে যুবরাজকে অস্রাব্য গালিগালাজ করতে শুরু করলেন।
বাপ ছেলের এমন নোংরা খেলা দেখে ক্রোধে ফেটে পড়লো যুবরাজ।

পাশে থাকা লোহার পাইপ নিয়ে সমানে আঘাত করতে লাগলো বৃদ্ধ সুবহান কে।
যুবরাজের শক্তিতে কুলাতে না পেরে মুহূর্তেই রক্তাক্ত হলেন বৃদ্ধ সুবহান।নিজের চোখের সামনে রক্তাক্ত সুবহান কে দেখে অস্থির হয়ে উঠলো শেরহাম।তার চোখ চকচক করে জিভ লকলকে বেরিয়ে এলো।রক্তের ঘ্রানে বদ্ধ উন্মাদের ন্যায় আচরণ করতে লাগলো।
এবার মহা খুশিতে ফেটে পড়লো যুবরাজ।চোখের ইশারা দিতেই দুজন ছেলে শেরহাম কে বাঁধনমুক্ত করতে এলো।
এই দৃশ্য দেখে বৃদ্ধ সুবহান দুর্বল গলায় চিৎকার করে উঠলেন।
কাকুতি মিনতি করে মাফ চাইতে লাগলেন যুবরাজের কাছে।
‘বাবা যুবরাজ ওর বাধন খুলে দিও না।দরকার পড়লে আমাকে মাঝ সমুদ্রে ছেড়ে দাও।রহম করো প্লিজ।আমি সারা জীবন তোমার গোলামী করবো”

“তোর গোলামীর কোনো প্রয়োজন আমার নেই সুবহান শেখ।তোকে পৃথিবীর চূড়ান্ত কষ্টটা দেবো বলেই তো তোর ছেলেকে এতদিন ধরে বাঁচিয়ে রেখেছি।না হলে কবেই তো দুনিয়া ছাড়া করতাম”
শেরহাম কে বাধন মুক্ত করে একটা স্টিলের চেয়ার টেনে পায়ের উপর পা তুলে বসে পড়লো যুবরাজ।
“সামনে বসে সিনেমার ট্রেইলার দেখার মজা যে আলাদা”
হামাগুড়ি দিয়ে সুবহান শেখের কাছে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে শেরহাম।অনেক দিন বাদে র*ক্তে*র স্বাদ নেয়া যাবে।

“তোমার র*ক্তে*র টেস্ট মমের চাইতে বেশি সুস্বাদু হবেনা তাই না পপ্স?কারন শয়তানের রক্ত যে নোংরা র*ক্ত”
ছেলের ভয়ানক চেহারার দিকে তাকিয়ে থর থর করে কেঁপে উঠলেন সুবহান শেখ।
চিৎকার করার ও এর কোন সুযোগ পেলেন না।পাশে থাকা লোহার পাইপ খানা তুলে নিয়ে মাথা বরাবর সজোড়ে এক আঘাত করে বসলো শেরহাম।শারমিনের মতো ঠিক একই পরিণতি হলো সুবহান শেখের।
জাহাজের অপেন ডেক র*ক্তে রঞ্জিত হলো।
কুকুরের মত জিভ বের করে সেই র*ক্ত চেটে খেতে লাগলো শেরহাম।
জম্বির মতো ভয়ানক র*ক্তা*ক্ত মুখে যুবরাজের দিকে তাকিয়ে আপ্লুত কন্ঠে শেরহাম বলে উঠলো
“পপ্স এর র*ক্ত একদম মজা নয় যুবরাজ”

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৪২

সারা পতেঙ্গা সৈকতের জাহাজ নৌকা কোনো কিছু খুঁজেও যখন যুবরাজের হদিস পাওয়া গেলো না তখন সকলের খেয়াল হলো এখানে শেরহাম ফাইয়াজ ও নেই।চতুর বেনজির আশফী নিজের জিপিএস ট্র্যাকার অন করতেই মাঝ সমুদ্রে শেরহামের লোকেশন দেখালো।
সাথে সাথেই কানে থাকা ব্লুটুথ ডিভাইস ক্লিক করে কমান্ড দিলেন
“হেলিকপ্টার রেডি করো,যুবরাজ শেরহামকেও কিডন্যাপ করেছে!

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৪৪