অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৭

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৭
সাদিয়া শওকত বাবলি

শীর্ষ কটমট করে তাকাল রবির দিকে। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“সেই মনের ঘরের দরজায় আমি মারলাম একটা লাথি।
ওমা ভিতর থেকে দেখি,
বেরিয়ে এলো এক সান্ডার নাতি‌।
সেই সান্ডার নাতিকে করলাম ভাজা ভাজা
জাপটে ধরে খাইয়ে দিলাম তোকে হা’রাম’জা’দা।”
আলভী এবং নয়ন ফিক করে হেসে দিল রবি, শীর্ষর কবিতা শুনে। রবি সোজা হয়ে দাঁড়াল। নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“ছি, ছি শীর্ষ তুই কিনা শেষ পর্যন্ত আমাকে সান্ডা খাওয়াতে চাইছিস? এই তোর বিবেক, এই তোর বন্ধুত্ব!”
“ওটা সান্ডা হবে না, সান্ডার নাতি হবে। শীর্ষ স্যার আপনাকে বড়ো সান্ডা না। বরং সান্ডার পুঁচকে নাতিকে খাওয়াতে চাইছে।”

নয়নের কথা শেষ হতে না হতে আলভী বলল,
“কি বিশাল কপাল তোর! একদম সিঙ্গাপুরের রাস্তার মতো বিশাল। বাংলাদেশের মাটিতে বসেই আরবের সান্ডা গিলতে পারবি। কেমন আরব শেখদের মতো ব্যাপার স্যাপার।”
রবি কটমট করে তাকাল আলভীর দিকে। আলভী পাত্তা দিল না ততটা। বরং মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“ওভাবে তাকাবি না। শীর্ষ তো বলেছে সান্ডার নাতিকে ভাজা ভাজা করে খাওয়াবে। আমি আর ঐ ভাজা ভাজির ঝামেলায় যাব না। কাঁচাই খাইয়ে দেব, বেয়াদব।”
রবি খ্যাপে গেল। ওষ্ঠ ফাঁকা করল শক্ত কিছু বলার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কণ্ঠ থেকে কোনো শব্দ বের করার পূর্বেই শীর্ষ থামিয়ে দিল তাকে। কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তোদের ফালতু কথা সব বন্ধ কর। আমরা এখানে যে কাজের জন্য এসেছি তাই কর। আশেপাশে দেখ কয়টা কলেজ আছে। সবাই আলাদা আলাদা কলেজে চলে যা।”
কেউ আর কোনো কথা বাড়ালো না। আলভী রবির দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো একটা অতঃপর চলে গেল নিজের কাজে। এখন কলেজ খুঁজতে হবে। আর তারপর ত্রয়ীকে।
কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। রবি এই মুহূর্তে একটি কলেজের অভিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। ইন্টার থেকে অনার্স পর্যন্ত এ কলেজে শিক্ষাদান করা হয়। মাত্রই সে কলেজ থেকে বেরিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছে। ত্রয়ীর খোঁজ নিয়েছে পুরো কলেজে কিন্তু কোথাওই ঐ নামের কাউকে খুঁজে পায়নি সে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুঁজল সেখানেও দেখা নেই। রবি পকেট থেকে মোবাইল বের করল শীর্ষকে কল করার উদ্দেশ্য। তাকে সবটা জানাতে হবে। কিন্তু তখনই তার সম্মুখভাগ থেকে ভেসে এলো একটি মেয়েলি কণ্ঠ,

“এই বিটকেল লোক? আপনারা এখনো যাননি? গতকাল তো একদম ঢাকায় যাবেন, ঢাকায় যাবেন করে হেদিয়ে ম’র’লে’ন। আমাদের বাড়িতেও থাকলেন না।”
রবি চোখ তুলে তাকাল। প্রথমে চিনতে না পারলেও স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই সে চিনতে পারল মেয়েটিকে। এ তো ঐ তামিমের বোন। যে ফেস প্যাক দিয়ে গতকাল তার মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি বাঁধিয়েছিল। তবে পরক্ষণেই রবির স্মরণে এলো এই মেয়েটি তাকে বিটকেল বলেছে। মেজাজ বিগড়ালো তার। এই মেয়েটা গতকালও তাকে অপমান করেছে, আজ আবার বিটকেল বলল। রবি কটমট করে বলল,,

“তুমি কি বললে? আমি বিটকেল?”
“তা নয় তো কি? গতকাল আমার ফেসপ্যাকটা নষ্ট করে দিলেন। বিটকেল লোক একটা।”
“যত বড়ো মুখ নয় তত বড়ো কথা! বড়োদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও শেখোনি? অভদ্র মেয়ে।”
“আপনি কি আমার মুখের আকার আর কথার আকার মিলিয়ে দেখেছেন যে কোনটা বড়ো আর কোনটা ছোট? নয়তো বুঝলেন কিভাবে আমার যত বড়ো মুখ নয় তত বড়ো কথা।”
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে রবি কি জবাব দিবে ভেবে পেল না। শুধু দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

“বেয়াদব মেয়ে।”
“মানুষ কথায় পেরে না উঠলে এমনই বলে।”
রবি এবার খ্যাপে গেল আরও। রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
“এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলো। নয়তো এমন থা’প্প’ড় মা’র’ব দুই দিন ঘুরতে থাকবে।”
তৃপ্তি কিঞ্চিৎ এগিয়ে এলো রবির দিকে। মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“দেখি আপনার হাতে কত জোর। মা’রু’ন তো থা’প্প’ড়।”
“আমি কিন্তু সত্যি সত্যি থা’প্প’ড় মে’রে দেব।”
“তাহলে আমিও শীষ দেব। আর শীষ দেওয়ার সাথে সাথে মনে করবেন আমার সব বন্ধু বান্ধবরা ছুটে আসবে। তারপর আমাকে থা’প্প’ড় মা’রা’র অপরাধে আপনাকে এমন কেলান কেলাবে না, হেঁটে আর বাড়ি যেতে পারবেন না।”

রবি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। তাকাল আশেপাশে। এ এলাকা তার নয়। এখানকার তেমন কাউকে চিনেও না। সে এখানে একদম নতুন। সে যদি বিপদেও পড়ে কেউ তাকে বাঁচাতে আসবে না। আর আজকালকার যে ছেলে মেয়ে। এরা বয়ঃসন্ধিতে পা দিলেই নিজেদের বিশাল কিছু ভেবে বসে। শরীরে টগবগে রক্তের দাপটে দিশেহারা হয়ে ওঠে। এই তৃপ্তি একটি ডাক দিলে দেখা যাবে এরা দলবল নিয়ে হাজির। তারপর তার কোনো কথা নেই, বার্তা নেই মারামারি শুরু। তার থেকে এই মুহূর্তে এখানে কথা না বাড়ানোই শ্রেয়। রবি একটু কেশে গলা পরিষ্কার করল। ঢোক গিলে বলল,

“আজ আমার একটা জরুরি কাজ আছে বলে চলে যাচ্ছি। নয়তো তোমার শীষের জোর কত দেখে যেতাম।”
কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না সে। লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল ঐ স্থান থেকে। তৃপ্তি ভেংচি কাটলো। সেও আর দাঁড়াল না। ওদিকে ক্লাসের ঘন্টা পড়েছে। দ্রুত চলে গেল ক্লাসে।

মধ্য দুপুর। আকাশের সূর্যটা তেজ ছড়িয়ে যাচ্ছে এখনো। তৃপ্তি কেবলই ফিরল কলেজ থেকে। এসেই বসে পড়ল বসার কক্ষের সোফায়। সাথে সাথে রান্নাঘর থেকে খুন্তি হাতে বেরিয়ে এলেন আলেয়া বেগম। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন,
“কত দিন তোকে বলেছি কলেজ থেকে এসেই এভাবে এখানে সেখানে ধুপধাপ বসে পড়বি না। বাহির থেকে এসেছিস। কত ধূলোবালি গায়ে রয়েছে। আগে ফ্রেশ হবি তারপর বসবি।”
ত্রয়ী আজ কলেজে যায়নি। সকালে সবাই অফিস এবং কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাওয়ার পর বাড়িতে থাকে শুধু আলেয়া বেগম এবং লুৎফা বেগম। তার উপর আবার তামিম অসুস্থ। তাই আজ ত্রয়ীও থেকে গেছে। তামিমের একটু দেখভাল করলে বা টুকটাক কাজে এগিয়ে দিলেও মা চাচির উপর চাপ কম পড়বে। আলেয়া বেগমের ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর শুনে বেরিয়ে এলো সে। মায়ের কথার মধ্যে বাঁধ সেধে বলল,

“ওকে এভাবে বলছ কেন? সারাদিন পর বাসায় এসে হয়তো একটু ক্লান্ত বোধ করছে তাই বসে পড়েছে।”
পরপর ত্রয়ী তাকাল তৃপ্তির দিকে। নরম কণ্ঠে বলল,
“তোমার রুমে যাও। ফ্রেশ হয়ে নাও। দেখবে ভালো লাগবে।”
তৃপ্তি উঠে দাঁড়াল। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে থেমে গেল আবার। পিছন ঘুরে বলল,
“ওহ, আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি…..”
আলেয়া বেগম কপাল কুঁচকে শুধালেন,

“কি‌ কথা?”
“ঐ বিটকেল লোকটাকে আজ আমাদের কলেজের সামনে দেখেছি।”
“কোন বিটকেল লোক?”
“ঐ তামিম ভাইয়ার সাথে যে এসেছিল, গতকাল আমার ফেসপ্যাক নষ্ট করল তাকে।”
আলেয়া বেগম অবাক হলেন। কণ্ঠে অবাকতা নিয়েই বললেন,
“ওরা না গতকালই ঢাকার জন্য চলে গেল?”
“কি জানি! আজ তো দেখলাম আমার কলেজের সামনে।”
“ওরা যদি বরিশালেই থেকে থাকে তাহলে আমাদের বাসায় থাকল না কেন?”
“আমি কি জানি! আমি দেখেছি তাই বললাম।”
“দাঁড়া তামিমকে জিজ্ঞেস করে দেখি।”

আলেয়া বেগম চলে গেলেন। তৃপ্তিও আর দাঁড়াল না ওখানে। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চলে গেল নিজ কক্ষে।
শীর্ষ, আলভী, রবি এবং নয়ন একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে বসেছে। ইটের দেয়াল বিশিষ্ট টিনের চাল যুক্ত হোটেলটা, পরিবেশও তেমন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন নয়। এখানে আশেপাশে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টও নেই যে সেখানে খেতে যাবে। তেমন রেস্টুরেন্ট খুঁজতে হলেও ঐ ঘন্টাখানেকের পথ আবার পাড়ি দিয়ে মূল শহরে যেতে হবে। সকাল থেকে এই পর্যন্ত তারা সবাই মিলে খুঁজেছে ত্রয়ীকে কিন্তু কোথাও পায়নি। গেল কোথায় মেয়েটা? কাল তো এই এলাকাতেই দেখেছে। আর আজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আর এভাবে খুঁজতে গেলেও তো সময় লাগবে অনেকটা অর্থাৎ আরও কিছুদিন তাদের এখানে থাকতে হবে। সারাদিন এই এলাকায় থাকা আবার রাতে মূল শহরে গিয়ে হোটেলে ওঠা। ব্যাপারটা একটু কষ্টসাধ্য। তার উপর তাড়াহুড়োতে তারা তেমন কোনো জামা কাপড়ও আনেনি। ঐ শরীরে যা জড়িয়ে আছে তাই। এখানে থাকতে হলে তাদের জামাকাপড় প্রয়োজন। শীর্ষর কাছে টাকা আছে। চাইলেই সে এখান থেকে জামা কাপড় কিনতে পারে। কিন্তু বেহুদা এই অপচয় করে কি লাভ? ঢাকায় তো তার জামা কাপড়ের অভাব নেই। এখানে আবার কতগুলো কিনবে। শুধু শুধু অর্থ অপচয়। শীর্ষ কিছুক্ষণ ভাবলো। এরপর নয়নকে বলল,

“আমাদের এখানে আরো কিছুদিন থাকা হবে। খেয়ে দেয়েই তুই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবি। আমাদের জামাকাপড় এবং প্রয়োজনীয় সব নিয়ে আবার কাল বরিশালে ফিরবি।”
“তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু এখানে থেকেও বা কি করব আমরা? এখানকার কিছুই তো চিনি না। কোথায় খুঁজব ত্রয়ীকে?”
আলভীর কথা শেষ হতেই রবি বলল,
“তামিমের বাড়িতে গেলে কেমন হয়? আমরা এই জায়গাটা না চিনলেও ও তো চিনে।”
“কিন্তু ও তো অসুস্থ। তাছাড়া আমরা ও বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে এসেছি।”
শীর্ষ চুপচাপ শুলনো রবি এবং আলভীর কথা। রবি ভুল কিছু বলেনি। তাদের এখন তামিমদের বাড়িতে যাওয়াই বোধ হয় ভালো হবে। তামিম এই এলাকার স্থানীয়। সে অসুস্থ থাকার কারণে নিজে তাদের সাথে যেতে না পারলেও কাউকে দিতে তো পারবে। তাকে নিয়েই না হয় ত্রয়ীকে খোঁজা যাবে। শীর্ষের ভাবনার মধ্যেই হঠাৎ তার পকেটে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠল। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল সে। তামিম কল করেছে। ছেলেটার কথা বলতে না বলতেই সে কল করেছে। শীর্ষ কলটা ধরল। কানের কাছে মোবাইলটা নিয়ে বলল,

“হ্যালো, আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছেন?”
তামিম সালামের জবাবটা দিল। এরপর বলল,
“ভালো আর থাকলাম কোথায়? রবি, আলভী, নয়ন নাকি আমাদের এলাকাতেই আছে। কিন্তু ওদের আমাদের বাড়িতে থাকতে বললাম। থাকল না। ঢাকায় ফিরবে বলে চলে গেল। আমরা কি এমন অপরাধ করলাম যে বরিশালে থেকেও তারা আমাদের বাসায় থাকল না। ঢাকায় যাবে বলে চলে গেল।”
“আরে না, আপনারা ভুল ভাবছেন। ওরা কালই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি বরিশালে আসব বলে ওদের যেতে বারণ করেছি। পরে ওরা আপনাদের বাড়িতে যেতে চেয়েও লজ্জায় আর যায়নি। কারণ আপনারা নাকি ওদের রাখতে চাইছিলেন কিন্তু ওরা বিদায় নিয়ে চলে এসেছে তাই।”
“আপনিও বরিশালে এসেছেন?”
“হ্যা।”

“আরে আগে বলবেন না? আর আমাদের বাড়িতে আসতে লজ্জা কি? আপনারা আমার জীবন বাঁচিয়েছেন। আপনাদের থেকে বড়ো শুভাকাঙ্ক্ষী আর আমার কে আছে? আপনারা এখনই চলে আসুন আমাদের বাড়িতে।”
মনে মনে তো শীর্ষ এটাই চাইছিল। তবুও একটু ইতস্তত করল সে। নিজের দাম বাড়াতে বলল,
“এতগুলো মানুষ আপনাদের বাড়িতে যাব আপনাদের বিরক্ত করতে….”
এইটুকু বলতেই তাকে থামিয়ে তামিম বলল,
“আরে না কিসের বিরক্ত? আপনারা আমাকে বাঁচিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। হাজার কাজ থাকা সত্ত্বেও সেখানে আমাকে দেখতে আসতেন। তাতে কি আপনারা বিরক্ত হতেন? তাড়াতাড়ি আপনারা আমাদের বাড়িতে চলে আসুন। নয়তো আমি কিন্তু খুব রাগ করব।”
শীর্ষ হাসলো। মাথা নাড়িয়ে বলল,
“আচ্ছা আসছি।”

সন্ধ্যার সময়। চারিদিকটা ধীরে ধীরে আঁধারের চাদরে ঢেকে যেতে শুরু করেছে। শীর্ষ, আলভী এবং রবি কেবলই এসে পৌঁছাল তামিমদের বাড়িতে। নয়ন আসেনি। সে ইতোমধ্যে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে।
বাড়িতে ঢুকে শীর্ষরা এবার আর বসার কক্ষে বসলো না। সোজা তামিমের কক্ষে এলো। তামিম অসুস্থ, তার হেঁটে বসার কক্ষ অব্দি আসা আবার পরে নিজ কক্ষে ফেরাটা কষ্টসাধ্য। এ বাড়ির মধ্যে শীর্ষরাও চিনে শুধু তামিমকে। তামিমকে ছাড়া বসার কক্ষে একরা বসে থেকেও বা কি করবে? আলেয়া বেগম এবং লুৎফা বেগম দৌড়ে ঝাঁপিয়ে চা নাস্তার ব্যবস্থা করলেন দ্রুত। আলেয়া বেগম শীর্ষদের অভিমুখে চায়ের ট্রেটা রেখে বললেন,
“কি হলো তোমরা নিচ্ছো না কেন? নাও।”
আলভী এক কাপ চা হাতে নিল। ইতস্তত করে বলল,

“আমাদের জন্য কিছু জামা কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন আন্টি? আসলে তাড়াহুড়োতে আমরা কিছুই আনিনি। নয়নকে আনতে পাঠিয়েছি। ও আগামীকালের মধ্যে নিয়ে চলে আসবে।”
আলেয়া বেগম সৌজন্য সূচক হেসে বললেন,
“তোমারা চিন্তা করো না। আমি এখনই দিচ্ছি।”
আলেয়া বেগম লম্বা লম্বা পায়ে এলেন নিজ কক্ষে। সোহরাব হোসেনের তিনটা লুঙ্গি আর টি শার্ট নিয়ে বেরিয়ে এলেন তিনি। পথিমধ্যে দেখা হলো ত্রয়ীর সাথে। ত্রয়ী এতক্ষণ নিজের কক্ষের ছিল। তবে বাইরে একটু বেশি জনমানবের সমাগম পেয়ে বেরিয়ে এসেছিল। আর এসেই মায়ের সাথে দেখা। আলেয়া বেগম ত্রয়ীকে দেখে আর গেলেন না তামিমের কক্ষে। হাতের লুঙ্গি আর টি শার্ট গুলো ত্রয়ীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

“তামিমের বন্ধুরা এসেছে। এগুলো একটু ওদের দিয়ে আয়। আমি রান্নাঘরে যাই। সবার জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।”
ত্রয়ী ইতস্তত করল। কারা না কারা এসেছে। ত্রয়ীর তাদের অভিমুখে যেতে কেমন অস্বস্তি লাগল। সে আমতা আমতা করে বলল,

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৬

“তুমি দিয়ে আসো। আমি বরং রান্নাঘরে যাই।”
“লাকরির চুলায় রান্না তুই পারবি না। তার থেকে তুই লুঙ্গি গুলো দিয়ে আয়।”
কথাটা বলে আলেয়া বেগম আর দাঁড়ালেন না। লুঙ্গি, টিশার্ট গুলো ত্রয়ীর হাতে গুঁজে দিয়ে চলে গেলেন। ত্রয়ী মাকে ডাকতে গিয়েও ডাকল না। লুঙ্গি গুলোর দিকে এক নজর তাকিয়ে হাঁটা ধরল তামিমের কক্ষের দিকে।

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৮