চেকমেট পর্ব ৪৮
সারিকা হোসাইন
সুফিয়ান চৌধুরীর সাথে রূপকথা মায়া চৌধুরীর ব্যাপারে সব কিছু শেয়ার করলো।কিভাবে মায়া চৌধুরী কে ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় পাওয়া গিয়েছে সেটাও সবিস্তারে জানালো।পুরো ঘটনা শুনে শিউরে উঠলেন সুফিয়ান আর রেখা।সুফিয়ান অকথ্য ভাসায় রুদ্রকে বেশ গালাগালি ও করলেন।কিন্তু অবশেষে সারফরাজ যে জীবিত অবস্থায় তার মাকে ফিরে পেয়েছে এটা নিয়ে শুকরিয়া আদায় করলেন।
সুফিয়ানের থেকে ফোন নিয়ে রেখা বলে উঠলেন
“তুমি উনাকে দেখে রেখো রুপকথা।বেচারি এতগুলো বছর অনেক সাফার করেছেন।উনি সুস্থ হলে তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে এসো।তোমাকে ছাড়া থাকতে আমাদের ও ভালো লাগছে না।দরকার হলে সারফরাজ এর মাকে সহ নিয়ে এসো।উনি না হয় আমাদের সাথেই থাকবেন।
রুপকথা মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠলো
“ঠিক আছে আমি এখন রাখছি।এখানে এখন ভোর সকাল।আমাকে সকালের ব্রেকফাস্ট বানাতে হবে সবার জন্য।
রেখা ঘড়িতে নজর বুলালেন।তাদের এখানে কেবল সন্ধে নামলো আর ওখানে ভোর?মায়া আর কথা বাড়ালেন না।মেয়েকে সাহস দিয়ে ফোন রেখে সুফিয়ানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন
“মেয়েটা হুট করেই বড় হয়ে গেলো তাই না কথার বাবা?
মেয়ে বড় হবার কথা শুনে সুফিয়ানের বুকে সূক্ষ্ণ ব্যথা অনুভূত হলো।তিনি বুক মালিশ করতে করতে বলে উঠলেন
“একদিন মেয়েটা আমাদের রেখে পরের ঘরে চলে যাবে।তখন কিভাবে থাকবো আমরা বলো তো?
রেখা তপ্ত শ্বাস ফেললেন।এরপর প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন
“তুমি বসো আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসছি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রেখা উঠে চলে গেলেন কিচেনে।কিন্তু সুফিয়ানের মন থেকে ব্যথা সড়লো না।তিনি আনমনে ভাবতে লাগলেন সারফরাজ এর সাথে রূপকথার বিয়ে হলে রূপকথা আজীবন বিদেশের মাটিতে থাকবে।বাবা মায়ের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।ভিডিও কল ই শেষ ভরসা থাকবে তখন।মন চাইলেও তখন আর মেয়ের হাতটা পরম ভালোবাসায় স্পর্শ করা যাবে না।খাওয়া যাবে না আদর মাখা চুমু।মন খারাপের বিষন্ন বিকেলে রূপকথাকে নিয়ে বাগানের বেঞ্চে বসে আর সন্ধ্যা তারা টাও দেখা হবে না।বাবা আর মেয়ের মাঝে থাকবে হাজার হাজার কিলোমিটার এর দূরত্ব।নিয়তি বুঝি এতোটাই নিষ্ঠুর কন্যার পিতার জন্য?
সুফিয়ান মন থেকে হতাশা দূর করতে চাইলেন।কিন্তু তা আরও জেঁকে বসলো।সুফিয়ান পকেট হাতড়ে ফোন বের করলেন এরপর ডায়াল করলেন এসপি আবির মাহতাব এর নম্বর।
ফোন রিং হতেই আবির ফোন তুললো।স্ক্রিনে সুফিয়ান চৌধুরীর নম্বর।
“হ্যালো স্যার।ভালো আছেন?ম্যাডামের শরীর ভাল?
পুলকিত হয়ে প্রশ্ন গুলো জিজ্ঞেস করলো আবির।কিন্তু সুফিয়ান চৌধুরী থমথমে গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন
“কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছো আবির।মেয়েকে হৃদয়ের সব ভালোবাসা নিংড়ে দিও না।মেয়ে বড় হয়ে পরের ঘরে চলে গেলে সইতে পারবে না।কলিজা ছিঁড়ে হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হবে।
আর কথা বলতে পারলেন না সুফিয়ান।তার গলা ভার হলো।খট করে লাইন কেটে দিয়ে চোখের কোনে জমা জল মুছে নিলেন।এরপর মনে মনে বলে উঠলেন
‘দরকার পড়লে ঘর শশুর হয়ে মেয়ের জামাই বাড়িতে গিয়ে উঠবো।ঘর জামাই হতে পারলে ঘর শশুর হওয়া যাবে না কেনো?
মনে মনে কথাটি ভেবে সারফরাজ এর নম্বর ডায়াল করলেন সুফিয়ান।রিং বেজে ফোন কেটে গেলো সারফরাজ তুললো না।সুফিয়ান দাঁত পিষে ঠোঁট কামড়ে সারফরাজ কে কয়েক দফা গালাগালি করলেন।গালাগাল শেষ হতে না হতেই সারফরাজ এর ফিরতি ফোন এলো।সুফিয়ান কপাল মুখ কুঁচকে রিসিভ করলেন তা।যেনো মুখে করল্লার রস চালান করেছেন মাত্রই।সুফিয়ান হ্যালো বলবার আগেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে সারফরাজ বলে উঠলো
“সকাল সকাল জ্বালাতন করতে এসে গেছেন না?সারা রাত পর একটু ঘুমালাম সহ্য হলো না।আচ্ছা আপনার কোন জন্মের শত্রু আমি বলুন তো!
সুফিয়ান গলা উঁচিয়ে বললেন
“শোন হতচ্ছাড়া তুই আমার আজীবনের শত্রু।তোর কারনে আমার মেয়ে আমার হাতছাড়া হয়েছে।তোকে তো আমি …শুয়োর কোথাকার
বলেই থেমে গেলেন সুফিয়ান।সারফরাজ কিটকিটিয়ে হাসলো সুফিয়ানের মেকি রাগে।এরপর বলে উঠলো
“গত রাতে ঝাল তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে ছিলেন বুঝি?নীচে উনুনের ন্যয় জ্বলছে তাই না?তাই বিষ ঝাড়তে কল করে আমার ঘুম ভাঙ্গালেন?
সুফিয়ান ধমকে বলে উঠলেন
“গজব পড়ুক তোর মুখে।খালি বিশ্রি কথাবার্তা নিয়ে ঘোরে সারাক্ষন।ফাতরা ছেলে কোথাকার?
“তাইলে ফোন করেছেন কেনো?
অবাক হয়ে জানতে চাইলো সারফরাজ।সুফিয়ান এবার নড়েচড়ে বসলেন। কেশে গলা ঝাড়লেন।এরপর বলতে আরম্ভ করলেন
“শোন ফাজিল ছেলে আমি কিন্তু আমার মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারবো না।আমি কিন্তু ঘর শশুড় থাকবো।যদি অমত করেছিস তবে মেয়ে পাবি না।শর্তে রাজি আছিস কি না বল।
সুফিয়ান এর কথা গুলো সারফরাজ এর ঘুমন্ত মস্তিষ্কে ক্যাচ করতে সময় লাগলো।যখন পুরোটা সারফরাজ এর মাথায় খেলে গেলো সারফরাজ চোখ বড় বড় করে উঠে বসলো।এরপর গায়ের ব্ল্যাঙকেট সরাতে সরাতে উচ্ছসিত গলায় বললো
“আমার বিয়ে?কবে কমিশনার সাহেব?উফ কত দিন ধরে এই দিনের স্বপ্ন দেখছি।আপনার মেয়েকে বিয়ে করে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।ওহ হো রে।কি সুন্দর সকাল আজ।ইশ।আচ্ছা বিয়েটা কবে?
সুফিয়ান নাক ফুলিয়ে চট করে বলে উঠলেন
“লাল শুক্রবার।যেই মাসে লাল শুক্রবার হবে ওই মাসে তোর বিয়ে শালার ব্যাটা।শর্তে রাজি না হয়েই সে ঘুমাতে চলে এসেছে আমার মেয়েকে ধরে।
বলেই ফোন কেটে দিলেন।সারফরাজ কেটে যাওয়া ফোনের পানে কতক্ষন দৃষ্টি স্থির করে রাখলো।এরপর মাথা চুলকে ঠোঁট কামড়ে বলে উঠলো
“আমার বিয়ে?
ভাবতেই লজ্জায় লাল হলো সারফরাজ এর সফেদ গাল।লজ্জায় সারফরাজ কম্বলের তলায় লুকালো।এরপর আবার মাথা বের করে বলে উঠলো
“আমার বিয়ে!
রান্না ঘরে টুকটাক হাতের কাজ সেরে নিলো রূপকথা।এরপর কি নাস্তা বানাবে এটা নিয়ে ভাবতে লাগলো।রেখা কখনোই তাকে রান্না ঘরের আশেপাশে যেতে দেয়নি।হালকা নুডলস পাস্তা আর ডিম ভাজি আলু ভর্তা করতে পারে রূপকথা।এ’কদিন সারফরাজ ই রান্না করে খাইয়েছে তাকে।কিন্তু গত রাতে লসএঞ্জেলস থেকে ভোরে ফিরেছে সারফরাজ।উঠবে কখন তার ঠিক নেই।এদিকে মায়া চৌধুরীর সকালে মেডিসিন রয়েছে।ডক্টর বলেছে টাইম টু টাইম মেডিসিন গুলো দিতে।এখন সারফরাজ কখন উঠবে সেই আশায় বসে থাকলে কারোর পেটে দানাপানি পড়বে না।অভিরূপ টারও আসার কোনো নাম নেই।
নানান ভাবনা ভাবতে ভাবতে রূপকথা ভাবলো সে রুটি আর ডিম ভাজি করবে।যদিও আজই প্রথম রুটি বানাতে চলেছে সে।কুলসুম এর কাছে বহুবার দেখা হয়েছে এই ক্রিয়া কর্ম।এহেন বিশেষ কিছু নয়।রুটি বানানোর জন্য আধ্যাতিক কোনো জ্ঞানের ও প্রয়োজন নেই।আটা পানি দিয়ে মাখলে আর বেলনী দিয়ে বেললেই হয়ে যায় গোল গোল রুটি।
যেই ভাবনা সেই কাজ।
গামলা ভর্তি ময়দা ঢাললো রূপকথা।এরপর গপাগপ তাতে পানি ঢাললো।যখন হাত লাগিয়ে মাখাতে গেলো তখন সেগুলো চিটকে হাতে লেগে এলো।এবার এই ভরা শীতে ঘাম ছুটলো রূপকথার।সে কুলসুমের মতো টাইট করে মাখতে পারছে না এগুলো।কেমন সব ঢিলে ঢালা হয়ে গেছে।এবার দুই হাত লাগালো।মুসিবত আরো বাড়লো দুধাপ।এবার দুই হাত ই আঠালো চিটকে চিটকে হলো।দুই হাত গামলা থেকে তুলে চোখের সামনে এনে বিস্ফারিত নজর বুলালো রূপকথা।মস্তিষ্ক জানালো পানি বোধ হয় বেশি পড়েছে।টাইট করার জন্য আটা প্রয়োজন।রূপকথা ইচ্ছেমতো আটা ঢেলে মাখাতে লাগলো।এবার গামলা ভরে গেলো।রূপকথার হাত ধরে এলো।সে এতগুলো খামির মাখাতেই পারছে না।এবার রুটি হবে কি করে তবে?
সারফরাজ এর আর ঘুম হলো না।সে ফ্রেস হয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলো।সিঁড়ি ধরে নামতে নামতে দেখলো রান্না ঘরে নাজেহাল অবস্থায় রূপকথা কিছু করছে।চোখ বাঁকা করে ভ্রু কুঁচকে সারফরাজ বুঝার চেষ্টা করলো
“ইয়েহ শালি কার কিয়া রাহি হে?
সারফরাজ তড়িৎ পা চালিয়ে কিচেনে এলো।এরপর চারপাশের অবস্থা দেখে রূপকথার পিছনে এসে দাঁড়ালো।চিন্তিত রূপকথার লতানো কোমর জড়িয়ে কাঁধে থুতনি রেখে সারফরাজ ফিক করে হেসে দিয়ে শুধালো
“কয় হাজার মানুষের রুটি বানাতে বসেছো জান?
রূপকথা আটা মাখা আঠালো হাত উঁচু রেখেই ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো
“রুটি হচ্ছে না কেনো?
সারফরাজ রূপকথাকে কোমরে ধরে বেসিন সারফেস এর উপর বসালো।এরপর রূপকথার পানে গভীর নজর বুলালো।মেয়েটির নাকে,গালে কপালে ময়দার ছড়াছড়ি।সারফরাজ তপ্ত শ্বাস ফেলে একটা কিচেন টিস্যু নিয়ে রূপকথার নাক,গাল, কপাল মুছে বলে উঠলো
“আমাকে ডাকলে না কেনো?
“তুমি সকালে এসে ঘুমালে তাই জন্য।
সারফরাজ আটা ভর্তি গামলা দূরে সরিয়ে পোলাও চাল বের করলো।এরপর ঘচঘচ করে কয়েক পদের সবজি কেটে পাতলা খিচুড়ি বসালো।ওপর চুলায় ডিম ভাজলো ,ফ্রিজ থেকে ছোট চিংড়ি নামিয়ে ভর্তার জন্য রেডি করে নিলো।প্রেসার কুকারে দিয়ে দিলো আলু সেদ্ধ।রূপকথা অবাক নয়নে সারফরাজ এর হাতের কাজ দেখলো।সব কিছু গুছানো পরিপাটি।রূপকথার মনে হলো সারফরাজ মেয়ে রুপি পুরুষ মানুষ।নয়তো মেয়েদের মতো নিখুঁত করে একটা ছেলে কী করে সব মেইনটেইন করতে পারে?
রূপকথার ভাবনা শেষ হবার আগে প্রেসার কুকার সিঁটি দিলো।রূপকথা আনমনে চমকে উঠলো।সারফরাজ অল্প হেসে রূপকথার নাক টেনে বলে উঠলো
“এতো ভয় কোথায় থাকে?
রূপকথা উত্তর করলো না।কিচেন এপ্রোনে সারফরাজ কে কেমন অসহ্য সুন্দর লাগছে।বেহায়া নজরে রূপকথা ড্যাব ড্যাব করে সারফরাজ কে দেখতে লাগলো।সারফরাজ রূপকথার চাহনি তে প্রশস্ত হেসে শুধালো
“এভাবে কি দেখছো?আমার কাজ করতে অস্বস্তি হচ্ছে।
‘কিন্তু আমার ভালো লাগছে
চট করে আনমনে উত্তর করলো রূপকথা।রূপকথার উত্তরে কাজ ফেলে রূপকথার একদম সন্নিকটে এলো সারফরাজ।এরপর কপালে কপাল ঠেকালো।তাতেও বিন্দু মাত্র পলক ফেললো না রূপকথা।সারফরাজ রূপকথার চোখের পানে তাকিয়ে। ফিসফিস করে বলে উঠলো
“ভেবেছিলাম আমি একাই বোধ হয় নির্লজ্জ্ব কিন্তু এখন তো দেখছি তুমি আমাকেও ছাপিয়ে।
রূপকথা সারফরাজ এর ঠোঁটে আঙ্গুল বুলিয়ে বলে উঠলো
“তোমাকে অপলক দেখার জন্য যদি আমাকে নির্লজ্জ খেতাবে ভূষিত হতে হয় তবে আমি তাই।
“কন্ট্রোললেস হতে ইচ্ছে করছে।
বলেই রূপকথা গলার ভাঁজে মুখ নামালো সারফরাজ
এমন সময় মায়া মিহি গলায় বলে উঠলো
“কি করছো তোমরা?
মায়ার গলা কর্ণকুহরে বাড়ি খেতেই সারফরাজ কে সজোড়ে এক লাথি মারলো রূপকথা।তাল সামলাতে না পেরে সারফরাজ দূরে ছিটকে গেলো।রূপকথা শরীর ঝেড়ে তাড়াহুড়ো করে নেমে বলে উঠলো
“ক ক কিছুনা আন্টি।রান্না করছিলাম।
মায়া হাসি মুখে বলে উঠলো
“খিদে পেয়েছে আমার।
রূপকথা মায়াকে নিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে বলে উঠলো
“একটু অপেক্ষা করুন এখনই হয়ে যাবে।
সারফরাজ গজগজ করতে করতে খিচুড়ি আর ডিম ভাজা টেবিলে এনে রাখলো।এরপর কড়া গলায় রূপকথাকে বললো
“এখানে বসে বসে খাওয়া চলবে না।যাও শীল পাটায় চিংড়ি বাটো।
সারফরাজ এর কঠিন মুখের পানে তাকিয়ে রূপকথা মুখ বেকিয়ে বলে উঠলো
“মাত্রই বর্ষা কাল চলছিলো আর এখনই ভাদ্র মাস হয়ে গেলো?এতো খড়খড়ে?
সারফরাজ ব্যস্ত হাতে আলু ছিলতে ছিলতে বলে উঠলো
“জতো নষ্টের মূল তুমি।খুব শীঘ্রই বাপের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি দাঁড়াও।বাপ মেয়ে দুটোই জ্বালিয়ে জীবন ছারখার করে দিচ্ছ।ধুর ছাতা আলু ছিলে না কেনো?
মায়া প্লেটে খিচুড়ি নিতে নিতে বলে উঠলো
“মেয়েটা কি তোমার বউ বাবা?
সারফরাজ আড় চোখে রূপকথাকে দেখলো।এরপর উত্তর করলো।
“ঠিক বউ না।কিন্তু বউয়ের চাইতে কম কিছুও না।ও আমার জ্বালাতুন্নেসা।
মায়া অবাক হয়ে শুধালো
“সে আবার কি?
আলু ভর্তার বাটি মায়ার সামনে রেখে সারফরাজ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে উঠলো
“জ্বালাতে জ্বালাতে ভাজা ভাজা করে ফেলছে মা।সেই ছোট থেকে জ্বালাচ্ছে।এখনো জ্বলিয়েই যাচ্ছে।কোন ভাবেই পালাতে পারছি না।
রূপকথা মায়ার অপজিটে বসে বলে উঠলো
“আপনার ছেলে কিন্তু এবার বেশি বেশি বলছে আন্টি।আমি কিন্তু এবার চুপ থাকবো না বলে দিলাম
রূপকথা আর সারফরাজ এর খুনসুটি ময় ঝগড়ায় মন খোলে হাসলেন মায়া।দীর্ঘ বছর পর আজ রাতে শান্তির নিদ্রায় গিয়েছিলেন তিনি।সেই সাথে সকাল সকাল মনটাও ফুরফুরে লাগছে।খিচুড়ির লোকমা মুখে তুলে মায়া রূপকথাকে আদুরে গলায় শুধালো
“তোমার নাম কি মা?
রূপকথা মিষ্টি হেসে উত্তর করলো
“রূপকথা।
সারফরাজ রূপকথাকে চোখ টিপে বলে উঠলো
“ও মিথ্যে বলছে মা।ওর নাম রূপকথা নয়।জ্বালাতুন্নেসা।
“সারফরাজ এর বাচ্চা সারফরাজ
বলেই জুসের গ্লাস থেকে সারফরাজ এর উপর জুস ছুড়ে মারলো রূপকথা।জিভ দিয়ে ঠোঁটের আশেপাশের জুস চেখে সারফরাজ বললো
“জুসে চিনি দাওনি জ্বালাতুন্নেসা?
রূপকথা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলো
“আপনার ছেলে একটা জঘন্য বজ্জাত আন্টি।শাসন করে একটু মানুষ করুন।নয়তো আমি ওর মাথা ফাটিয়ে দেবো।
বলেই না খেয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো রূপকথা।
মায়া আলু ভর্তা দিয়ে খিচুড়ি মুখে তুলে চোখ বুঝে ফেললেন।এই স্বাদ তার খুব চেনা।কর্নেল সাহেব এভাবে তাজা ধনিয়া পাতা,কাঁচা মরিচ আর কাঁচা পেঁয়াজ দিয়ে আলু ভর্তা করতেন।গরম ভাত আর ঘিয়ের সাথে বেশ লাগতো।স্বামীর কথা মনে পড়তেই চোখের কোনে জল গড়ালো মায়ার।আরো বেশি করে আলু ভর্তা মুখে পুরে মাথা নিচু করে ফেললেন মায়া।এরপর বলে উঠলেন
“বাবার থেকে শিখেছিস?
সারফরাজ হাত গুটিয়ে ভারী শ্বাস ফেললো।এরপর বললো
“যেদিন তুমি হাত ভেঙে সিএমএইচ এ ভর্তি ছিলে তখন পাপা আর আমি রান্না করে খেয়ে ছিলাম।তখনই দেখা হয়েছে।
হাত ভাঙার ঝাপসা স্মৃতি মনে পড়লো মায়ার।এরপর বললো
“খুব দুস্টু ছিলি তুই।বেকায়দায় ঝাঁপ মেরে ছিলি আমার উপর তাই না?
সারফরাজ চোখের জল মুছে বলে উঠলো
“আমি এখন শান্ত হয়ে গেছি মা।আর ঝাপঝাঁপি করি না।তোমায় আর ব্যথা দেবো না।এখন থেকে পাপার মতো তোমায় আগলে রাখবো।
মায়া নিঃশব্দে খাওয়া আরম্ভ করলেন।এরপর বললেন
“থেকে থেকে মাথায় অনেক স্মৃতি ভেসে উঠে।কিন্তু পরক্ষনেই ভুলে যাই।আমি কবে নাগাদ সুস্থ হবো বাবা?
সারফরাজ ভাঙা গলায় বলল
“খুব শীঘ্রই।
অভিরূপের পরিবারের সকলের ভিসা হয়ে গেছে ক্যালিফোর্নিয়ার ।সেই সুসংবাদ দিতেই দুপুরের আগে আগে নেলিদের বাড়ি এলো অভি।অভিকে পেয়ে বেশ খুশি হলেন সেলিনা।আমজাদ হায়দার ছাদ বাগান থেকে দৌড়ে এসে কুশলাদি বিনিময় করে সোফায় বসালেন।
অভিরূপ চলে যাবে শুনে আমজাদ,সেলিনা দুজনেই মন খারাপ করলেন।নেলি দূর থেকে শুনেই কেঁদে ফেললো।অভিরূপ চলে গেলে সে কিভাবে থাকবে?তাছাড়া পাঁচটা বছর কি চাট্টি খানি কথা?কিন্তু নিজের ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে নিজেকে বুঝালো নেলি।
সেলিনা অভিরূপ কে বোঝালো
“বাবা মাঝে মাঝে বেড়াতে এসো।আর নেলির জন্য অপেক্ষা করো।ও তোমাকে বেশ পছন্দ করে।
আমজাদ হায়দার একটু মন ভার করলেন।পরক্ষনেই অভিরূপ এর হাত টেনে ধরে বলে উঠলেন
“ছাদে বড় বড় গেন্ডারী হয়েছে।রসে ভরা।চলো খাবে।
অভিরূপ অল্প হেসে আমজাদ হায়দার এর সাথে ছাদে গেলো।ছাদের এক কোনে পাতা চেয়ারে অভিকে বসতে দিয়ে একটা মোটা বড় গেন্ডারী নিয়ে এলেন আমজাদ।
এরপর অভির হাতে দিতে দিতে বলে উঠলেন
চেকমেট পর্ব ৪৭ (২)
“নেলির মনটা আজ কাল খুব ভার।সব বুঝতে পারি।কিন্তু আমি নিরুপায়।বলছিলাম যদি তোমাদের আকদ করিয়ে রাখি।ওই নেলি মাঝে মাঝে গেলো এলো।কোনো সমস্যা আছে?আমার মনে হচ্ছে তুমি চলে গেলে নেলি সম্পর্ক থাকবে কি থাকবে না এই ভয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারবে না।কিন্তু মেয়ে নামকরা ডক্টর হবে এ আমার বহু দিনের স্বপ্ন বাবা।
অভিরূপ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেলো।অধিক উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে বলে উঠলো
“ডেট সিলেক্ট করে আমায় জানাবেন।আপনারা যেভাবেই চান আমি ওভাবেই রাজি।