তাজমহল পর্ব ৩০

তাজমহল পর্ব ৩০
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী

“মানুষ যখন আর কিছু বলার জন্য খুঁজে পায় না। তখন এইসব বলে। সিরিয়াস কথায় আসি, তুমি বাড়ি চলে আসো। তোমার আব্বাকে বলো তুমি চলে যেতে চাও। এইসব রংতামাশা অনেক হয়েছে শাইনা।”
শাইনা মৃদুস্বরে বলল,”আমি এখনো সুস্থ না।”
তাজদার গম্ভীর মুখে বলল,”তবে এটাই শেষ নাইওর।”
“কীসের শেষ নাইওর?”
“মানে আমি যতদিন দেশে আছি ততদিন তুমি আর নাইওর যেতে পারবে না।”

শাইনার ব্যালেন্স চলে গিয়েছে। সে আর কোনো রিপ্লাই করতে পারলো না। শাহিদা বেগম ডাকছে।
“শানু এই বেলায় চুল খোলা রেখে ঘাটে বসে আছিস কেন? ঘরে ঢুকে আয়।”
শাইনা প্লেটে মরিচ গুঁড়া নিয়ে তাতে লবণ আর সরিষার তেল দিয়ে মেখে পেয়ারা খাচ্ছে। তাদের গাছের পেয়ারাগুলো ডাঁশা ডাঁশা। শাইনা কখনো ছুঁয়েও দেখতো না। এবার কেন যেন খেতে ইচ্ছে হলো।
শাহিদা ফেলন ডাল নিয়ে এলেন ঝাকায় করে। শাইনা বলল,
“এগুলো কখন ভিজতে দিয়েছ?”
“সকালে দিয়েছি। একটু হাত লাগাবি নাকি একটু শুবি?”
“না আর শুবো না। দাও ছিলে দিই। কি দিয়ে রাঁধবা?”
“রুই মাছের মাথা আছে। ওগুলো দিয়ে রাঁধব।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শাইনা ডাল ছিলে নিতে লাগলো নখের সাহায্য। চাচীরা এসেও যোগ দিল সেখানে। ওই বাড়ি থেকে কে কি শুনেছে সেইসব নিয়ে কথাবার্তা চলছিল। শাইনা একদম চুপ করে শুনলো। সবাই হাতে হাতে ডালের ছোলা ছিলে দিচ্ছে। পাশের বাড়ির একজন জেঠিও ছিল সেখানে। উনি কথায় কথায় বললেন,
“শানুর বোধহয় অসুখ বন্ধ হয়নাই?”
শাইনা চুপ করে রইলো। শাহিদা বেগম শাইনার চেহারা দেখে বিরক্তি টের পেল। বলল,
“না এখনো বন্ধ হয়নাই।”
তারপর সাথে সাথে শাইনাকে বলল,
“শানু ফোন নিয়ে আয় তো ঘর থেকে। আনিস ফোন দেবে অফিস থেকে বেরোনোর সময়। কিছু বাজার সদাই নিয়ে আসতে বলবো।”

শাইনা মায়ের কথা শুনে ঘরে চলে গেল। ফোনটা পাঠালো তার চাচাতো বোনকে দিয়ে।
সে চলে যেতেই শাহিদা বেগম সবার উদ্দেশ্য বলল,
“ওর সামনে এইসব কথা বলিয়েন না ভাবি। আমাদেরও কিছু বলতে চায় না।”
“না তাজদার তো চলে যাবে। তাই বলছিলাম।”
শাহিদা বেগম বলল,”দোয়া কইরেন। আল্লাহ মুখ তুলে চাইলে আর কি।”

“মেয়ে নিয়ে যাওয়ার আগেই ওরা আমার মেয়ে দোষ ধরা শুরু করেছে। নিয়ে যাওয়ার পর কি করবে? আমার কাছে ফোন রেকর্ডগুলো আছে। ওরা মাফ না চাইলে আমি আর একটা ফোনও তুলবো না। আমার মেয়ের নামে আজেবাজে কথা কেন বললো্?”
তাজউদ্দীন সিদ্দিকী গর্জন করছেন। রওশনআরা পেছনে এসে দাঁড়ালেন। বললেন,
“আপনি এখানে দাঁড়িয়ে চেঁচাচ্ছেন কেন? ভেতরে যান। মানুষে শুনবে।”
তাজউদ্দীন সিদ্দিকী গর্জন করতে করতে ভেতরে চলে গেলেন। তৌসিফের কাছে এইমাত্র তাজদারের ফোন এসেছে। সে জানতে চাইল,

“নুভা নাকি অসুস্থ?”
“দুই পরিবারের ঝামেলায় নিয়ে টেনশন করছিল।”
“এখন টেনশন করলে কি হবে। কাজ করার আগে ভাবা উচিত ছিল।”
তৌসিফ বলল,”তুমি বাড়ি কবে আসবে?”
“কবে আসব সেটা তোর জানার কথা।”
তৌসিফ চুপ করে রইলো। তাজদার জানতে চাইল,
“ওরা কি ডিসিশন নিয়েছে?”
“বড় আম্মু বলছিল শাইনাকে নিয়ে আসার কথা। কিন্তু বড় আব্বু বললো….
তাজদার শীতল কণ্ঠে জানতে চাইল,
“মানা করেছে?”

তৌসিফ আমতাআমতা করে বলল,
“তুমি এসব বাড়িতে বললে আমি ফেঁসে যাব। বড় আব্বু আমাকে বকাঝকা করবে তখন।”
তাজদার একটা ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“ওরা সবাই মিলে অপমান করে এসেছে। এখন আনতে যাব আমি?”
তৌসিফ চুপ করে রইল। তাজদার ফোনের ওপাশে গর্জাতে লাগলো। তৌসিফ চুপ করে রইলো। সে বাজারের কাছাকাছি আছে। শাওন এসে পিঠ চাপড়ে দিল। তৌসিফ ফোন রেখে তার সাথে হাসলো।
“কোথায় গিয়েছিস?”
“মাঠে ছিলাম। বাজার করবি?”
“হ্যাঁ, আর বলিস না। তোর বোনের জামাই আমার মাথা নষ্ট করে দেবে।”
“কেন?”

“বউ বাপের বাড়িতে চলে গেছে তাই মাথা খারাপ।”
শাওন বলল,”চলে যেতেও বলবে। চলে গেলে আবার মাথা নষ্ট!”
তৌসিফ বলল,”আর বলিস না ওর কথা। বিয়ে করছে ও। দুনিয়ার সব ঝড় তুফান যাচ্ছে আমার উপর দিয়ে। বউ সামনে থাকলেও দোষ। চলে গেলেও দোষ। এদিকে আমরা বেকার বলে বউ’ই পাইনা।”
শাওন শব্দ করে হেসে উঠলো।
“ধুর ভাই তোদের ইউরোপ আমেরিকায় মামা চাচা আছে। চিন্তা নেই। ওখানে গেলে বউ পেয়ে যাবি। আমরাই হতভাগা। শালার একটা ভালো চাকরি নাই এই গরিবের দেশে। সবার কি রেজাল্ট ভালো থাকবে? কোনোমতে টেনেটুনে পড়াশোনা তো শেষ করছি। এখন চাকরি না পেলে গরু ছাগলের ব্যবসা দেয়া ছাড়া আর উপায় নেই।”
তৌসিফ বলল,”পেয়ে যাবি, পেয়ে যাবি। চিন্তা নেই। বাজার করবি?”
শাওন বলল,
“মেঝ ভাই বাজারে আসতে বলছিল। তাই এলাম। দাঁড়া ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে নিই।”
ওরা দু’জন হাঁটতে হাঁটতে বাজারের ভেতর চলে গেল।

বাচ্চারা পড়তে এসেছে আছরের পর। ছুটি হতে হতে মাগরিবের আজান দিয়ে ফেলেছে। শাইনা মাগরিবের নামাজ পরে নিল। নামাজ পরা শেষে বাচ্চাদের হোমওয়ার্ক দিয়ে ছুটি দিয়ে দিল। বাইরে আঁধার তাই সে ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে বাচ্চাদের পেছন পেছন উঠোনে এল। মাগরিবের সময় বাড়ির ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা একসাথে বসে গজল গায়। শাইনা মেঝ চাচা, ছোট চাচার ছেলেমেয়েরা গজল গাইছে।
বাচ্চারা যে যার বাড়ি চলে যেতেই শাইনাও বাড়ির দিকে পা বাড়াচ্ছি ঠিক তখুনি শাইনা শাইনা বলে কেউ একজন ডাকলো। শাইনা চট করে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। রওশনআরার কণ্ঠস্বর!
শাইনা সাড়া দিল,”জি।”

“এদিকে আসো। একটু কথা আছে।”
শাইনা পা বাড়ালো। রওশনআরাকে কেমন অস্থির দেখাচ্ছে। শাইনা জানতে চাইল বলল,
“কি হয়েছে বড়আম্মু?”
রওশনআরা বললেন,”তাজ তোমাকে ফোন দিয়েছে?”
“না।”
“তুমি দাওনি?”
শাইনা দুপাশে মাথা নাড়লো।
“না আসলে..
রওশনআরা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

“ও দেয়নি কিন্তু তোমার দেয়া উচিত ছিল না? দুজনেই এরকম করলে কিভাবে হবে? তোমার তো ওকে ফোন দেওয়া উচিত ছিল। সব এখন আমি শিখিয়ে পড়িয়ে দেব? ঝামেলা যা হয়েছে তা নিয়ে তো বসে থাকা যাবে না। তাজ ওর আব্বাকে ফোন করে বললো তোমাকে নাকি ও নিতে আসবে কাল। কিন্তু বাড়িতে নিয়ে যাবে না। ও নাকি বাসা ঠিক করছে। ওই বাসায় নিয়ে যাবে। এই বাড়িতে তোমাকে আর কোনোদিন আসতে দেবেনা। তুমি ওকে ফোন করে বলো তোমার বড় আব্বুর উপর রাগ করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে। বাপ ছেলে কি শুরু করেছে বুঝতে পারছিনা।”
শাইনা বলল,”তুমি ফোন করেছ?”
“না, ও তো বলেছিল আমার সাথে কথাবার্তা বলবে না। আমি ফোন দিলে ও কথা বলবে না।”
শাইনা বলল,”আচ্ছা আমি দেখি।”
“দেখি না। ওকে বলো তোমার বড়আব্বু এখন তাসনুভার এইসব নিয়ে ঝামেলায় আছে। তাই রেগে কি না কি বলেছে।”

শাইনা তো জানে রাগে সত্যিটাই বলেছেন বড়আব্বু। সে তবুও আশ্বাস দিল রওশনআরাকে। বলল,
“আমি ফোন দেব।”
শাইনা কিছুক্ষণ পর ফোন করলো। তাজদার রিসিভ করলো না। শাইনা একনাগাড়ে ফোন দিতে লাগলো। রিসিভ না করে কতক্ষণ থাকবে? সে দশ মিনিট ধরে ফোন দিয়েই গেল। শেষবার ফোন রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে কাঠখোট্টা কণ্ঠস্বর বলল,
“হ্যালো! তাজদার সিদ্দিকী স্পিকিং!”
শাইনা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

“আপনি কি শুরু করেছেন এইসব? আমাকে অশান্তিতে রাখেন ভালো কথা। আমি তো পরের মেয়ে। কিন্তু নিজের বাড়ির মানুষ? কাউকেই শান্তি দিচ্ছেন না। আপনি ওদিকে ঝামেলা করবেন। আর সমস্ত দোষ চাপবে আমার ঘাড়ে। নিজের খাসিয়ত পাল্টান। নইলে এমন একটা সময় আসবে যে নিজের পাশে কাউকে পাবেন না। একদম একা হয়ে যাবেন। বাসা নিলেই আমি আপনার সাথে ধেইধেই করে চলে যাব? চৌকাঠ আমাকে না মাড়াতে বলেছেন। আমি মাড়াব না। সেটা হোক কলতান নিবাস কিংবা অন্য কোনো বাসাবাড়ি। আমি যাব না মানে যাব না। আপনাকে বুঝতে হবে মুখ আছে বলে যা তা বলে দেওয়া যায় না। আমি যদি আপনাকে একবার বলতাম আমাদের বাড়ির চৌকাঠ কখনো মাড়াবেন না তাহলে আপনি কোনোদিন আসতেন? আপনি মুখে যা আসে তা বলে দেবেন, আমি কষ্ট পাব, তারপর আপনার মনে হবে আপনি ভুল করেছেন তা দেখে আমি আবার ধেইধেই করে আপনার সাথে ফিরে যাব তাহলে ভুল ভাবছেন। আপনার এইসব বাজে খাসিয়ত যতদিন না কমবে ততদিন আমি আপনার কাছে যাব না।”
রাগে তাজদারের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।

“তোমার সাহস!”
“আমার সাহসের এখনো কি দেখেছেন? সাহস শুধু আপনার আছে? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন যা করছেন তা ঠিক করছেন কিনা।”
“বাড়তি কথা বলবে না। একদম বলবে না। আমাকে যেগুলো বললে সেগুলো তোমার শ্বশুর শ্বাশুড়িকেও বলো। কারণ তারাও তোমাকে অপমান করেছিল।”
শাইনা ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,
“যে বিয়ে করেছে সেই হাঁটতে বসতে করে। ওরা কোন ছাই।”
“হোয়াট! আমি আর তারা….

” থামলেন কেন? আপনি আর তারা আলাদা নয়। আপনি করেন তাই ওরাও সুযোগ পায়। আপনি কোনদিন আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলেছেন মনে করুন তো।”
“মাথায় তুলে নাচতে বলছো?”
“বউকে মাথায় তুলে সবাই নাচতে পারেনা। মেরুদণ্ড থাকা লাগে। গাটস লাগে। মন লাগে। আপনি শেখেননি কিভাবে একটা মেয়েকে সম্মান দিতে হয়। যদি শিখতেন আমি বউ নয় মেয়ে হওয়ার কারণে হলেও একটু সম্মান পেতাম। বউ হিসেবে মাথায় ওঠা তো বহুদূর। আপনি তো শুধু বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করেছেন। আর কিচ্ছু শেখেননি। নিজে সব ঝামেলা তৈরি করেন আর তারপর সব আমার ঘাড়ে তুলে দেন। আশেপাশের মানুষজন বলছে বউ নিয়ে যাওয়ার পর থেকে ওদের বাড়িতে ঝামেলা লেগে আছে। যাদের নিজেদের ছেলেই হাজারটা ঝামেলা তৈরি করে সেখানে পরের মেয়েটা কি করবে? আপনি ঠিক হলেই তবে আমাকে কথা শোনানোর আগে দুইবার ভাববে। নিজেই তো সুযোগ দিচ্ছেন সবাইকে।”

তাজদার সিদ্দিকী ফোন কেটে দিল।
এরপর একদিন, দুইদিন, তিনদিন, চারদিন এক সপ্তাহ কেটে গেল কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না তার। তার কোনো খোঁজখবর পরিবারের কেউও পেল না।
তার এইসব দেখে শেষমেশ তৌসিফের বাবা তৈয়ব উদ্দীন সিদ্দিকী আর তাজদারের মামা, ফুপা, খালার সবাই এসে শাইনাকে নিয়ে গেল। আফসার সাহেব বললেন,

“আপনারা এসেছেন বলে আমি মেয়ে ছাড়ছি এমন না। আমার মেয়ে নিজেই ঝামেলা সইতে না পেরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এবার যদি আমার মেয়েকে আর ছোট করা হয় ও আর কোনোদিন ওই বাড়িতে যাবে না।”
শাইনা এমনি এমনি রাজী হয়নি। বিয়ের পর থেকে তাজদারের সমস্ত বিহেভিয়ার, পরিস্থিতি সংক্ষেপে উল্লেখ করে সে স্প্যারোস গ্রুপে পোস্ট করেছিল। সেখানে বেশিরভাগ মেয়েই তাজদারকে তুলোধুনো করেছে। বলা যায় ৬০% মেয়েই তাকে পরামর্শ দিয়েছে তাজদার সিদ্দিকী না আসা পর্যন্ত সে যেন না যায় শ্বশুরবাড়িতে। বাকি ৪০% মেয়ের মধ্যে ১০% তার দোষ দিয়েছে, ১০% স্বামীভক্তি দেখিয়ে চলে যেতে বলেছে, অবশিষ্ট ২০% মেয়ে, মহিলারা দুই দলের চেয়ে একটু ভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে। তাদের পরামর্শগুলো যৌক্তিক এবং বাস্তবিক লেগেছে শাইনার কাছে।
তাদের মধ্যে একজনের কমেন্ট খুব বড় ছিল। শাইনা সেটি মনোযোগ দিয়ে পড়েছে। মহিলাটি লিখেছেন,
“সাংসারিক জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে নার্সিসিস্ট ও ডোমিনেটিং স্বভাবের পুরুষদের সঙ্গে ত্যাড়ামি করে পাল্টা জবাব দিলে,, ঘৃণা দেখালে লাভ হয় না। বরং তারা আরও বেশি জেদি হয়ে ওঠে। এদের সঠিকভাবে সামলাতে হলে গলার আওয়াজের বদলে বুদ্ধি খাটিয়ে, মাথা ঠান্ডা রেখে চাল দিতে হয়।

আপনি কয়েকদিন একদম যত্ন আত্তির করতে থাকেন। একমাস তার মনের মতো করে চলেন। যেরকম বলে সেরকম করেন। আপনার পোস্ট পড়ে বুঝলাম আপনি একবারও ভালো করে কথা বলেননি। মানে বউ জামাই দুজনেই রুঢ় গলায় কথা বলেন। এখন থেকে আপনি তার সাথে মিষ্টি করে কথা বলার চেষ্টা করুন। আগবাড়িয়ে তার কাপড়চোপড় ধুয়ে দিন। আইরন করে দিন। খাবার দাবার বেড়ে দিন। তাকে ফিল করান যে সে এতদিন যোগাযোগ বন্ধ করে রাখায় আপনি কষ্ট পেয়েছেন। আপনাদের সম্পর্ক আরও গাঢ় করুন। তাকে আরও এক্সপ্লোর করুন। তাকে পুরোপুরি জানুন। তারপর একমাস পর যত্ন নেয়া ছেড়ে দিন। মানে ব্যাপারটা আপনাকে খুব স্মার্টলি হ্যান্ডেল করতে হবে যাতে তার কাছে অতিরঞ্জিত না লাগে। আবার যখন ইগনোর করা শুরু করবেন তখন যেন মনে না হয় আপনার আগের কাজগুলো অভিনয় কিংবা আপনার একটা প্ল্যান ছিল। আপনি ইগনোর করা শুরু হলে তার আসল রূপ বেরিয়ে আসবে। সে আপনার ইগনোর করার কারণ জানতে চাইবে, বুঝতে চাইবে, তাকে ভাবাবে। আর যদি না ভাবায়, আগের মতো বিহেভ করে তাহলে বলবো ওরকম জামাইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে আসবেন। সুযোগ বারবার দেওয়া উচিত নয়।

আপনি যেহেতু বললেন আপনি বিয়েটার প্রতি সিরিয়াস হতে চান, সম্পর্কটাকে সুযোগ দিতে চান, বিয়ে ভাঙা এইসব পসিবল না তাই আপনার জন্য আমার এই সাজেশন রইলো। কারণ এতে করে আপনিও আপনার মধ্যে চেঞ্জেস আনতে পারবেন, তারমধ্যেও চেঞ্জেস আনাতে পারবেন। বোন সংসারে বুদ্ধি খাটিয়ে চলতে হয়। সব নিজেকেই আদায় করে নিতে হয়। আপনাকে কেউ সমর্থন করবে না। আপনি যা চান তা কখনোই কেউ সহজে মেনে নেবে না। যেখানে নিজের পরিবার আপনার কথা শোনোনি সেখানে পরের ছেলেটা আপনাকে বুঝে ফেলবে এমন আশা রাখাটাই ভুল।
সে যদি সরি বলতে না জানে তাহলে আপনিই প্রথমে সরি বলে তাকে শেখান সরি বলতে শেখান। সে কারো কথা শোনেনা, আপনি তার কথা মন দিয়ে শুনুন। সে আপনাকে দেখে থুতু ছুঁড়তো তাই আপনি তাকে দেখে তো আর থুতু ছুঁড়ে জবাব দিতে পারবেন না। সে ভাববে তার আর আপনার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাহলে সে যা করছে তাই ঠিক।

এতকিছুর পরও যদি না শেখে, না বোঝে, না শুনে তখন ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি আপনার সিচুয়েশন বুঝতে পারছি। আপনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। ভাইদেরও উপর বসেও খেতে চাচ্ছেন না আবার বরের কাছেও ফিরতে পারছেন না। আপনাকে আমি যা বলেছি তা একবার ট্রাই দেখুন। আর আপনি যদি নিজ থেকে যান তার কাছে তাহলে আমার মনে হয় আপনিই উঁচুতে থাকবেন। কারণ আপনিই সুযোগটা দিয়েছেন। তার মধ্যে যদি এতটুকু মনুষ্যত্ব বেঁচে থাকে তাহলে সে এই সুযোগ দেওয়ার আপনার উপর কৃতজ্ঞ থাকবে। ভালো থাকুন। আল্লাহ আপনার সহায় হোক।”
শাইনার মনে হলো এই ধরণের একটা গাইড তার প্রয়োজন ছিল। বাকিগুলো কমেন্ট তার কাছে তুচ্ছ মনে হলো। এতদিন ধরে সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল, সঠিক পরামর্শের অভাবে কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না, এমনকি নিজের ভুলগুলোও চোখে পড়ছিল না। এবার সবকিছু যেন পরিষ্কার হয়ে গেল। শক্তি ফিরে পেল সে। এই অস্ত্র তো সে আগে থেকেই জানত কারণ সে নিজেও এরকম স্বভাবের মেয়ে। শুধু মাঝখানে, তাজদার সিদ্দিকীর সঙ্গে টেক্কা দিতে গিয়ে, নিজেকে বদলাতে চেয়েছিল। নিজের চারপাশে একটা মেকি খোলস গড়ে তুলেছিল কিন্তু তা তাকে শান্তি তো দেয়ইনি উল্টো তাকে ভুল পথে ঠেলে দিয়েছিল।

কলতানে ফিরে যাওয়ার পরদিন রাত সাড়ে দশটার দিকে তাজদার সিদ্দিকী এল বাড়িতে। বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই সবাই ভেতরে ভেতরে উচ্ছ্বসিত হলো। তিতলি দৌড়ে দৌড়ে মাকে গিয়ে খবরটা দিয়ে এল।
কারো দিকেই তাকালো না তাজদার। সোজা ভেতরে ঢুকে এল আনোয়ারা বেগমের একটা প্রশ্নের জবাব দিয়ে।গালের দাঁড়ি হালকা বেড়েছে। চেহারা একদম শক্ত। তবে আগের মতো উজ্জ্বল নেই। কিছু একটা বেশকম হয়েছে তা তার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে।

তাজমহল পর্ব ২৯

বাড়ির ভেতরে পা রাখতেই দেখলো শাইনা মেঝেতে বসে টিভি দেখছে। সে যেতে যেতে থমকে দাঁড়ালো!
বহুবছর আগেরকার একটা দৃশ্য। তফাত হচ্ছে শাইনা মমতাজ তখন প্রতিবেশী ছিল, আর আজ বউ। কিছুক্ষণ পর শাইনার পাশে তিতলিও এসে বসলো। তৌসিফও এল। তারা লুডু খেলছে টিভি দেখতে দেখতে।

তাজমহল পর্ব ৩১