একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৪
Mousumi Akter
মৃন্ময় তরীকে কোলে নিয়ে ফুল বিছানো ফ্লোর দিয়ে হেঁটে রুমের মধ্য প্রবেশ করল। তরী মৃন্ময় এর গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে যদি পড়ে যায় সেই ভ’য়ে। মৃন্ময় এর গলা জড়িয়ে ধরে তরী লজ্জায় যেন ম’রি ম’ রি অবস্থা। লজ্জায় তরীর নাক লাল হয়ে গিয়েছে। মুখ তুলে তাকাতে পারছে না। ইস কি ভীষণ লজ্জা! প্রতিটা মেয়ের জীবনে বোধহয় এই ভয়ংকর লজ্জার রাতের চেয়ে আর কোনো ভয়ংকর লজ্জার রাত নেই। এই ভয়ংকর লজ্জার রাত বোধহয় প্রতিটা মেয়েকেই ফেস করতে হয়।
বাসরসজ্জা এই নামটার সাথেই বোধহয় মেয়েদের লজ্জার দারুণ এক সংযোগ রয়েছে। তরী মুখটা মৃন্ময়ের বুকে গুজে রেখেছে। তাকে কেউ পাথর ছুঁ’ ড়’ লে’ও মুখ তুলবে না। এমন ভাবে মুখ গুজে রেখেছে মৃন্ময়ের বুকের ভেতর ঢুকে যেতে পারলে সেখানেই হয়ত ঢুকে যেত। মৃন্ময় তরীর লজ্জা টের পাচ্ছে। সে দারুণ ভাবে তরীর লজ্জা উপভোগ করছে। তরীর এই লজ্জা মৃন্ময়কে অদেখা, অজানা এক অনুভূতির ঘ্রাণ দিচ্ছে। ঘরে ঢুকতেই মৃন্ময় বন্ধুদের মাঝে হাসি ঠাট্টা করা সেই রুপ থেকে বেরিয়ে শান্ত শিষ্ট এক রুপে এলো। কিছুক্ষণ আগের মৃন্ময় আর এ মৃন্ময়ের মাঝে অনেক তফাৎ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মৃন্ময় তরীকে বিছানার ওপর বসিয়ে ঘরের দরজা লক করে দিলো। তরী বিছানার চাঁদর খামচে ধরে বসে আছে নিচু দিকে তাকিয়ে। তার দৃষ্টি তার পায়ের দিকে। কিছুতেই দৃষ্টি তুলছে না। মৃন্ময় সিটকিনি লাগিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে বিছানায় গিয়ে বসল। মৃন্ময় বিছানায় বসতেই তরীর বুকের ভেতর ধুক করে কেঁপে উঠল৷ কি ভয়ানক লজ্জা। সমস্ত শরীর কাঁপতে শুরু করেছে। মৃন্ময় তরীর আপাদ মস্তক তাকিয়ে দেখছে। মৃন্ময়ের চোখে আফিমের মত নেশা। সে নেশাতুর চোখে চেয়ে আছে তরীর দিকে। আহামরি সাজগোজ নেই তরীর। কেবল ই একটি লাল বেনারসীতে চোখ ফেরানো দায়। কি আশ্চর্য! সৃষ্টিকর্তা সব সৌন্দর্য্য নিংড়ে তরীর মাঝেই কি দিয়ে দিয়েছেন।
মৃন্ময় একটা শুকনো কাশি দিয়ে বলল,
” মায়াবিনী আপনার স্বামী আপনার সামনে বসে আছে। নিচে নয়। চোখে তুলে সামনে তাকান।”
তরী লজ্জায় চোখ দু’টো আরো গভীর ভাবে নিচের দিকে নিক্ষেপ করল। দৃষ্টি একদম নিচে। বিছানার চাঁদর আরো হোরে খামচে ধরল তরী। মৃন্ময় আবার ও শুকনো কাশি দিয়ে বলল,
” নিচে কি আছে? আমার কিন্তু খুব হিংসে হচ্ছে। তোমার দু’চোখ যা দেখবে মোহনীয় দৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্তা যেন আমাকে তাই বানিয়ে দেন। সারাক্ষণ তোমার চোখের তারায় আমি ভাষতে চাই মায়াবিনী। ”
তরী এবার আরো লজ্জা পেল। মৃন্ময় সেই লজ্জাকে আরো খানিকটা বাড়িয়ে দিতে তরীর দুই হাতের ওপর নিজের দুই হাত রাখল। মৃন্ময়ের হাতের স্পর্শ পেতেই তরী আতকে উঠল। কাঁপুনি দিয়ে উঠল সমস্ত শরীর। আত্মা কেঁপে উঠল ভয়াবহ ভাবে। তরী হাত সরিয়ে নিতে গেলেই মৃন্ময় তরীর হাত বিছানার সাথে চেপে ধরল। জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে নিজেও খানিকটা লাজুক কণ্ঠে বলল,
” এত লজ্জা পাচ্ছো কেন মায়াবিনী? তাকাও আমার দিকে? তাকিয়ে দেখো একবার আমার দিকে। আমি তৃষ্ণার্ত চাতকের ন্যায় অপেক্ষায় আছি তোমার জন্য। ”
বাসর ঘরে স্বামীর মুখে রোমান্টিক কথা তরী আরো ভীষণ লজ্জা দিলো। তবে লজ্জায় তার ভাল লাগছে। নতুন এক অনুভূতির সৃষ্টি করছে ভেতরে।।দূর থেকে অদ্ভুত এক সুবাস তার নাকে আসছে। নতুন এক অনুভূতি তার ভেতরে সৃষ্টি হচ্ছে। এই অনুভূতির নাম কি তরী জানেনা। এই অনুভূতির নাম ভালবাসা। পৃথিবীতে এই একটাই অনুভূতি আছে যা মানুষের বেঁচে থাকার আনন্দ দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।
মৃন্ময় তরীর থুতনি ধরে মুখ তুলল। তরী চোখ বন্ধ করে রেখেছে। মৃন্ময় তরীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” মাশাল্লাহ। চোখ খোলো।”
তরীর ভীষণ লজ্জা করছে। সে আস্তে ধীরে চোখ খুলল। চোখ খুলেই মৃন্ময়ের মুখের দিকে তাকাল। তরী তাকাতেই মৃন্ময় বিশ্বজয়ের একটা হাসি দিলো।
সেই হাসি দেখে তরী লজ্জায় আবার চোখ নামাল। চারদিকে ফুল আর ফুল৷ বেলি ফুলের মিষ্টি সুবাসে মৌ মৌ করছে চারদিক। এত এত ফুলের মাঝে তরীকেই বেশী মিষ্টি লাগছে। হঠাৎ মৃন্ময় খেয়াল করল, তরীকে ভয়াবহ সুন্দরী লাগছে। অদেখা এক মোহনীয়া মৃন্ময় কে টানছে।
এত মোহনীয় কেন দেখাচ্ছে তাকে। অদ্ভুত এক শক্তি ভেতর থেকে মৃন্ময়কে তরীর দিকে টানছে। ঠিক যেমন হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুর। মৃন্ময়ের পরণে সাদামাটা একটা মেরুণ রঙের পাঞ্জাবী। যদিও এটা দ্বীপ সাজেস্ট করেছে পরার জন্য। তরীর লাল রঙের শারীর সাথে ম্যাচিং করার জন্য। তরীর লজ্জায় লাল হয়ে বসে আছে। চারদিকে বেলি ফুলের সুবাস। শুধু বেলি ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজিয়েছে। বেলি ফুলের এত অপূর্ব ঘ্রাণ মৃন্ময় আগে খেয়াল করেনি। ফুলের সুঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে মৃন্ময় মোমবাতির পাশে রাখা ফুলের ডালা থেকে একটা বেলি ফুলের গাজরা নিয়ে তরীর খোপায় গুজে দিলো।
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৩
মৃন্ময়ের হাতের স্পর্শে তরী কেঁপে উঠল। তরীর কম্পন মৃন্ময়কে আরো নেশালো করে তুলল। সে তরীর খোপায় নাক ডোবালো ফুলের ঘ্রাণ নিতে। খোঁপা থেকে নাক আর ঠোঁট এসে ডুবল তরীর ঘাড় আর গলায়। অদ্ভুত এক শিহরণে তরী বিদ্যুৎ এর ন্যায় কেঁপে উঠে ছুটে পালালো। ছুটে পালাবে কোথায়। বন্ধ ঘরে লুকানোর জায়গা নেই। লজ্জায় সে আজ মা’রা’য় যাবে। ছুটে গিয়ে ওয়ালে মুখ লুকাল। মৃন্ময় সেই লজ্জা দ্বিগুন বাড়িয়ে দিতে তরীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। সাথে সাথে তরীর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। মৃন্ময় আলত করে তরীর গালে চুমু দিতেই থাকল। সেই চুমুতে লজ্জা আর ভাললাগার মিশ্রিত | তরীর ভাল লাগছে, মৃন্ময়ের স্পর্শ তার ভাল লাগছে৷ এই ভাল লাগা থেকেই দু’জন দুজনের আরো কাছাকাছি হল। পবিত্র আলিঙ্গন, পবিত্র স্পর্শে শুরু হল নতুন যাত্রা।