অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭৪
নুসাইবা ইভানা
জিয়ান ল্যাপটপে কাজ করছে। নয়না জিয়ানের কোলে বসে আছে৷
“আপনি কিসের লেটার লিখছেন?
” তোমাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন পত্র।
“কিন্তু আমার তো সামনে ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম।
” ওটা দিয়েই যাবা।
“আচ্ছা পড়ালেখা না করার কোন অপশন নেই?
বিয়ের পর পড়ালেখা করছি ব্যপারটা কেমন বেমানান তাই না?
” যতই বাহানা দাও কোন কাজ হবেনা অন্তত অনার্স শেষ করতে হবে৷
“আমি তো জব টব করবো না৷ তাহলে এতো পড়ে কি হবে?
” শিক্ষিত গৃহিণী হবা তুমি৷
“নয়না সামনের দিকে ঘুরে জিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,আপনার ঠোঁট এতো গোলাপি কেন!
“জিয়ান নয়নার নাক টেনে বলে, খুব দুষ্ট হয়ে গেছো বৌ।
” আহা বলো না।
“জিয়ান নয়নার নিচের ঠোঁটে আঙুল রেখে বলে,এতো সুন্দর কমলার মত ঠোঁটে চুমু খাবো তাই।
” আচ্ছা আমার ঠোঁট বেশি গোলাপি নাকি আপনার?
“আমার ঠোঁট তো রুক্ষ। তোমার উষ্ণ রক্তিম ঠোঁট তার কাছে এটা তো কিছুই না বেব।
” নয়না টুপ করে জিয়ানের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলে,মানুষ যে বলে চুমু খেলাম।চুমুতে খাওয়ার মত কি আছে?
“জিয়ান মুচকি হেসে বলে,কি আছে জানোনা?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” উঁহু জানিনা। অনুভূতির বিষয়টা আলাদা৷ কিন্তু খাওয়ার মত কি আছে!
“জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,খাওয়ার মত আছে নিশ্বাস, আর লালা৷
” নয়না নাক সিটকে বলে ইয়াক৷ ছিহহহহ এসব কোন কথা! সরেন আজকে থেকে কিস টিস খাওয়া বাদ। নিশ্বাস না হয় মানলাম তাই বলে!
“জিয়ান নয়নার কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,তাই বলে এটা কোন ব্যাপার না ম্যাডাম।
” ছিহহহ আমি ওসব খেতে টেতে পারবো না৷
“জিয়ান নয়নার কামিজ ভেদ করে উন্মুক্ত কোমড় স্পর্শ করে বলে,এখনো কি খাওয়া বাকি আছে ডার্লিং?
” নয়না কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো। আসলেই তো এই বিষয়ে তো কখনো ভেবে দেখেনি৷ চোখ ছোট করে বলে আর এসব হবে না৷
“জিয়ান আরো গভীর ভাবে নয়নার কোমড় স্পর্শ করে বলে,যখন হয় তখন কি হুঁশ থাকে বাটার মাশরুম। অবচেতন মন তখন ডুবে যায় অন্য কোন জগতে।
“নয়না জিয়ান হাতের উপর হাত রেখে বলে,এই ভরদুপুরে কোন দুষ্টমি চলবে না। আপনি বলেছেন আমরা সিলেট যাবো৷ কবে নিয়ে যাবেন?
” খুব তাড়াতাড়ি। আমাদের হানিমুন এখনো বাকি৷
“নয়না জিয়ানের কোল থেকে নেমে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,কেন ভুলে গেছেন কক্সবাজারের কথা?
” জিয়ান নয়নার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে বলে,তখন কি করতে দিছো? একটা চুমুও খেতে দাওনি।
“আহা শখ কত। আমার সাথে কি কি করেছিলেন ভুলে গেছেন!
” তুমি আমার ঠোঁটের কি অবস্থা করেছিলে ভুলে গেছো?
“একদম বেশ করেছি৷ এ-ই শুনেন…
” শোনাও বাটার মাশরুম।
“আমি আম্মুর কাছে যাই৷ আপনি একটু ঘুমিয়ে নিন৷
“এখন আম্মুর কাছে কি? আমরা সবাই একসাথে লাঞ্চ করলাম।এখন নিশ্চয়ই আম্মু রেস্ট করছে৷ জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো৷ এরপর নয়নাকে কোলবালিশের মত জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, একদম নড়বে না৷ আমি ঘুমাবো। নড়লে কিন্তু এই বিকেলে আবার শাওয়ার নেয়ার ব্যবস্থা করবো বাটার মাশরুম।
” আপনি খুব ডেঞ্জারাস।
“বৌয়ের সাথে আমি রোমান্টিক, বেহায়া, অসভ্য, নির্লজ্জ থাকতে চাই৷ ডেঞ্জারাস না জান।
🌿অন্তর কখনো কল্পনা করেনি জাহিন তাকে গু’লি করতে পারে৷ যদিও গু’লিটা চমড়ার উপর দিয়ে গেছে কিন্তু এইটুকুও অন্তরের জন্য অকল্পনীয় ছিলো৷
” অন্তর জাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে৷ পেটের কাছটাতে চামড়া উঠে টকটকে লাল রক্ত ছড়ে নীল শার্টটা ভিজে যাচ্ছে।
“জাহিন এবার পিস্তল তাক করলো ঠিক অন্তরের খুলি বরাবর। শান্ত কিন্তু প্রলয়ংকরী কথাগুলো বললো,দেখ আমি তোর মত বোকা নই৷ যা করেছি তাতেই আমাদের ভালো৷ এই জগতে সৎ লোকের কোন মূল্য নেই। তুই আমি কেউ পারেবো না। ওই লোকগুলোকে শাস্তি দিতে৷ আমরা একদিক থেকে প্রমাণ জোগাড় করবো। কয়দিন পর আমাদের চাকরি থাকবে না। আমরা সিক্রেট গোয়েন্দা অফিসার। কাউকে বলতেও পারবো না। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছি আমি। তুই আমার কথামতো কাজ করলে লাভাংশ তোকেও দেবো। তুই আমার বন্ধু না ভাই।
” অন্তর ঘুরে জাহিনের পেটে লাথি মারলো। জাহিনও পাল্টা লাথি মারলো। এভাবেই মারপিট চলল কিছুক্ষণ। হটাৎ জাহিনের আক্রমণে অন্তর ছিটকে পরে দেয়ালের সাথে মাথায় আঘাত পায়৷ মূহুর্তেই অন্তর পরে যায় ফ্লোরে৷ মাথা ফেটে গলগল করে গড়িয়ে পরতে থাকে টকটকে তাজা র’ক্ত।
নিভু নিভু চোখে অন্তর তাকায় জাহিনের দিকে৷ তার দুনিয়া চারদিক থেকে অন্ধকার হয়ে আসছে। সে অন্ধকার ভেদ করে তার সামনে ভেসে উঠে ছোট বেলা থেকে একসাথে বেড়ে উঠা বন্ধুর সাথে কাটানো মূহুর্তে স্মৃতি। একটা চকোলেট যারা অর্ধেক, অর্ধেক ভাগ করে খেতো। সেই বন্ধুর দেয়া আঘাতে সে তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে।
“জাহিন দ্রুত অন্তরের মাথা কোলে তুলে নিলো৷ অন্তরে ডাকতে লাগলো। এই অন্তর ওঠ। চোখ খোল ভাই আমার৷ আমি যা করেছি সব অন্যায় কিন্তু তাতেই তোর আমার ভালো৷ এই ওঠ। ওঠ না৷ রক্তে ভিজে যাচ্ছে ফ্লোর৷ কোলে তুলে নিয়ে বের হয়ে আসলো বাহিরে। গাড়িতে বসিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে দিয়ে নিজে ড্রাইভা করে নিয়ে আসলো হসপিটালে। জাহিন মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ ডাক্তার বলেছে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। প্রচুর ব্লাড ঝড়ে গেছে। জাহিন দু’হাতে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে বসে আছে। চোখ দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। অন্তরের ফোনটা বেজেই চলেছে৷ বাজতে, বাজতে কেটে যাচ্ছে। একটু পর আবার বেজে উঠছে। বিরক্ত হয়ে ফোন সাথে সহজ সুইচড অফ করে দিলো জাহিন।
সায়না এসেছে বাবার বাড়িতে অবশেষে তাদের বিয়েটা মেনে নিয়েছে সায়নার পরিবার। বাসায় এসে অভিমান করে অনিকেতের, কল, টেক্সট কোন কিছুর রিপ্লাই করছে না৷ অভিমান করার কারন হলো,আসার সময় অনেকবার অনিকেতকে বলেছিলো,সায়নার সাথে এই বাসায় আসতে। বাসায় না আসলেও অন্তত সায়নাকে গেট পর্যন্ত পৌঁছে দিতে৷ কিন্তু ডাক্তার অনিকেত মাহমুদ সায়নার কোন কথা রাখেনি!
তাই রাগ করেই কল,টেক্সটের রিপ্লাই করছে না সায়না৷
অনিকেত হসপিটালে পৌছেঁ সায়নাকে কল করলো৷ রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। এরপর টেক্সট করলো৷ টেক্সটের রিপ্লাই আসছে না। অনিকেত পুরো দিনে যখনই সময় পেয়েছে সায়নাকে কল করেছে, টেক্সট করেছে। কিন্তু কোন রেসপন্স পায়নি৷ অবশেষে উপায় না পেয়ে জিয়ানের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে সায়নার আম্মুকে কল করলো৷ তার সাথে কুশল বিনিময় করে বলল,আন্টি সায়নাকে একটু দেয়া যাবে?
“সায়না তখন বলো না তুমি আমার মুভিটা দেখছে৷ ফোন কানে নিয়ে বলে,আর কোন সময় পেলেন না! এখন ডিস্টার্ব করতে হলো?
” কি এমন ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করছো তুমি?
“মুভি দেখছি।
” মুভির নাম কি?
“বলো না তুমি আমার।
” বলার কি আছে? আমি তো তোমারই জান।
সায়না কল কেটে দিলো। নিজের ফোন থেকে নয়নাকে কল করলো।
“কুশল বিনিময় শেষ করে বললো,
আজকে বিকেলে থেকে একজনের, কল, টেক্সট কোন কিছুর রেসপন্স করিনি৷ এরপর আম্মুর ফোনে কল করেছে৷
“কি করো তুমি ফোন কেন রিসিভ করছো না৷ টেক্সটের রিপ্লাই ও করছো না!
” মুভি দেখি।
“মুভির নাম কি?
” বলো না তুমি আমার।
“বলার কি আছে! আমি তো তোমারই জান৷
” নয়না হেসে বলে, তোমার বর তো ভালোই রোমান্টিক ননদী।
“রোমান্টিক না ছাই ভাবি। তুমি নাম্বার কেন দিয়েছো?
“কার নাম্বার দিয়েছি?
অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭৩
” আম্মুর নাম্বার৷
“আমি দেইনি। তোমার ভাই দিয়েছে মনে হয়। থাক আর অভিমান করে আমার দেবরটাকে কষ্ট দিওনা৷
“এ বাসায় না আসা পর্যন্ত এ অভিমান ভাঙ্গবে না। তাকে বলে দিও তুমি। আমি কঠিন অভিমান করে আছি৷