একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৬

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৬
Mousumi Akter

দীর্ঘদিন পর সারাহ’র ফোনে ছোঁয়ার নাম্বার থেকে ফোন এসছে। সারাহ’র বুকের মাঝে খুব জোরে বাড়ি মেরে উঠল। এত দিন, এত কাল পরে ছোঁয়া ফোন দিয়েছে। সারাহ ঝ’ড়ে’র গতিতে ফোন নিয়ে বেলকনিতে ছুটে গেল। ফোন রিসিভ করেই উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
” ছোঁয়া কোথায় হারিয়ে গিয়েছিস তুই?”
ছোঁয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

” জীবন আমাকে এক কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছে সারাহ। গভীর সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছি আমি। নিঃশ্বাস নিতে পারতেছি না। তন্ময়ের অসুখ আমাকে ক্যান্সার ব্যাধির মত যন্ত্রণা দিচ্ছে। ”
সারাহ আবেগী কণ্ঠে কেঁদে দিয়ে বলল,
” কথা বলব না তোর সাথে, মোটেও কথা বলতে চাইনা। আই হেইট ইউ ছোঁয়া। ”
” আই নো ইউ লাভ মি।”
” কিন্তু তুই তো ভালবাসিস না। তুই জানিস না তোকে ছাড়া কত কষ্ট হয় আমার, কত যন্ত্রণা হয় আমার। আমার সুখ দুঃখের একমাত্র সাথী তুই। কীভাবে আমাকে ভুলে গেলি। ”
ছোঁয়া ঘন ঘন দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়ল। ব্যাথিত কণ্ঠে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” একটা শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করবি আমার? তোর কাছে আর কোনদিন কিছু চাইব না আমি। প্লিজ সারাহ! আমি তোর পায়ে ধরি। নইলে আমি শেষ হয়ে যাবো। আমি বাঁচব না।”
সারাহ’র বুকের মাঝে ছ্যাঁত করে উঠল। শেষ ইচ্ছা মানে। ছোঁয়া ম’রে যাবে মানে। সারাহ দ্রুত অস্থির কণ্ঠে বলে উঠল,
” কি ইচ্ছা বল আমাকে। তোর বেঁচে থাকার জন্য, ভাল থাকার জন্য আমি সব করতে পারি। বল কি করতে হবে৷ ”
ছোঁয়া মিনিট খানিক দম নিলো। আবার ও দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
” আমি তন্ময় কে দেখতে চাই। তন্ময় কে ছাড়া আমি বাঁচব না। আমি এখনি তন্ময়ের কাছে যেতে চাই। ওরা কুয়াকাটা গিয়েছে। এই রাতেই আমি যেতে চাই। প্লিজ তুই চল আমার সাথে। আমার হাতে বেশী টাইম নেই। আমার মানসিক কন্ডিশন ও ভাল নয়। আমি একা যেতে পারব না। প্লিজ চল আমার যাথে। ”
এখনি যাওয়া সারাহ’র পক্ষে সম্ভব হবে কীনা সারাহ জানেনা। ছোঁয়ার এই চাওয়া সারাহ’কে ভাবাল। সে চিন্তিত কণ্ঠে জানাল,

” এখনি?”
” হ্যাঁ এখনি, প্লিজ সারাহ!”
সারাহ নিশ্চিত নয়, সে যেতে পারবে কীনা! তাই নরম গলায় বলল,
” আচ্ছা আমি দেখছি। ”
ফোন কাটা শেষ হলে সারাহ পেছন ফিরতেই তাকিয়ে দেখল, ক’ লি’জা কালারের কলার দেওয়া গেঞ্জি, কালো ট্রাউজার পরে, ট্রাউজারের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে রোশান সিদ্দিকী। চোখে খয়েরী ফ্রেমের চশমা। সারাহ বেলকনির পর্দা সরিয়ে তার শ্যামসুন্দর পুরুষের দিকে তাকাল। চাহনিতে কেমন যেন অসহায়তা। রোশান সিদ্দিকী’র বুকের মাঝে ছ্যাঁৎ করে উঠল। তার প্রিয়তমা স্ত্রীর মুখখানা মলিন কেন? যে মুখের একটুখানি হাসি রোশান সিদ্দিকী ভাল থাকার মেডিসিন। সারাহ’র পরণে কালো প্লাজু, সাথে লং গেঞ্জি, গলার দু’পাশে কালো জরজেট ওড়না ঝুলানো। এমন ঘরোয়া পোশাকেও সারাহ’কে কেমন রানির মত লাগছে। রোশান সিদ্দিকী এক হাতে বেলকনির দরজা লাগিয়ে দিলেন, অন্যহাত দিয়ে সারাহ’র কোমর স্পর্শ করলেন। সেই স্পর্শের শিহরণে কেঁপে উঠল সারাহ। জিভ দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভেজালো। রোশান সিদ্দিকীর এক হাত সারাহ’র কোমরে, আরেক হাতর আঙুল গুলো সারাহ’র হাতের আঙুলের ভাজে রেখে দরজার সাথে চেপে ধরল সে হাত। দৃষ্টিজোড়া সারাহ’র চোখের তারায়। কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা উষ্ণ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,

” যার মুখের হাসির জন্য সারা শহরে আন্দোলনের বন্যা বইয়ে দিতে পারি, মিছিলি মিছিলে স্লোগানে ভরিয়ে দিতে পারি সেই মুখ এমন মলিন কেন? মলিনতা কি মানায় এ চাঁদ মুখে? এই মুখ যখন হাসে না তখন মনে হয় চাঁদে যেন কলঙ্ক। ”
রোশান সিদ্দিকী’র কথা শুনে সারাহ আবেগী হয়ে পড়ল। কণ্ঠ ভিজে এলো। কি আশ্চর্য! এই মানুষটা তার মাঝে কি পেয়েছে? কেনই বা এত ভালবাসে? কাউকে তাবিজ করলেও তো এতটা বশে থাকেনা। সারাহ নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে রোশান সিদ্দিকী’র দিকে। রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র কোমর ধরে একটু টান দিলো তার সিকে। এক টানে সারাহ’র মাথা গিয়ে রোশান সিদ্দিকী’র বুকে পড়ল। রোশান সিদ্দিকী তখন সারাহ’র দুই গালে আলতো চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে বলল,

” শুনতে পাও হৃদয়ের কম্পন?”
সারাহ রোশান সিদ্দিকী’র বুকে মাথা রাখল। সত্যিই তার হৃদয়ের কম্পন শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সারাহ অমনযোগী। তার মন পড়ে আছে কীভাবে রোশান সিদ্দিকী’র কানে কথাটা তুলবে। সে রোশান সিদ্দিকী’র রোমান্সে সাড়া দিতে পারছে না। যতটুকু দিচ্ছে অন্যমনস্ক ভাবে। রোশান সিদ্দিকী দরজায় সারাহ’র আঙুলের ভাজে আঙুল রেখেই আরেক হাত দিয়ে সারাহ’কে জড়িয়ে ধরল নিজের সাথে। সারাহ’র কানে ঠোঁট মেশালো। শিষ দিয়ে যাওয়া পাখির মত বলল,
” ভালবাসো আমাকে?”
সারাহ অন্যমনস্কভাবে উত্তর দিলো,

” বাসি।”
রোশান সিদ্দিকী কিঞ্চিৎ হাসল। সেই হাসিতে মাদকতা। হেসে জবাব দিলো,
” তাহলে ভালবাসি বলো। ”
সারাহ ছোঁয়ার চিন্তায় মগ্ন হয়ে বলল,
” হুম বাসি।”
রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র কানে আলতো চুমু দিয়ে বলল,
“কানে কানে বলো ভালবাসি তোমাকে।”
সারাহ রোশান সিদ্দিকী’র কানে কানে বলল,
” ভালবাসি আপনাকে। ”

রোশান সিদ্দিকী জোরালো আবদার করল,
” আপনি নয়, তুমি শুনতে চাই।”
সারাহ লজ্জা পেল। লজ্জামাখা কণ্ঠে বলল,
” ইস! এমন বয়স্ক লোককে তুমি বললে গুনাহ হবেনা।”
রোশান সিদ্দিকী সারাহ’কে পাজা কোলে তুলে নিয়ে দুষ্টু কণ্ঠে বলল,
” এমন বয়স্ক লোকের সাথে রাতে ঘুমোতে লজ্জা লাগেনা তাইনা? আজ তোমার নিস্তার নেই। ”
সারাহ রোশান সিদ্দিকী’র বুকে মাথা গুজে আদুরে গলায় বলল,
” কেন মা’র’ বে’ন বুঝি। ”
রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র গালে চুমু দিয়ে বলল,

” এভাবে মা-র-ব, সারারাত মা’র’ব। আমাকে বয়স্ক বুড়ো বলার শাস্তি পাবে আজ তুমি। ”
সারাহ লজ্জায় রোশান সিদ্দিকী’র বুকে নাক ঘষতে ঘষতে বলল,
” ছাড়ুন না। আমার লজ্জা করছে।”
” আমিতো কিছুই করছিনা, তাহলে লজ্জা কেন?”
” তাহলে কোলে নিয়েছেন কেন?”
” বউ তো বাচ্চা, বাচ্চাদের তো কোলে নিতেই হয়। ” বলেই সারাহ’কে বিছানায় ফেলে দিলো রোশান সিদ্দিকী। সারাহ লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রইলো। রোশান সিদ্দিকী নিজেও সারাহ ওপর ঝুঁকে পড়ল। সারাহ’র লজ্জা রাঙা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

” ইস! ইস! কি সর্বনাশ! এইভাবে লজ্জা পেলে শেষ হয়ে যাবোতো ম্যাডাম। আকাঙ্খা আরো বেড়ে যাবে। ”
সারাহ উঠতে যেতেই রোশান সিদ্দিকী সারাহ’কে জড়িয়ে ধরে বলল,
” কোথায় যাচ্ছেন ম্যাডাম?”
” আমার খুব লজ্জা লাগছে, ছাড়ুন। পড়তে বসব।”
” ইটস রোমান্স টাইম।”
সারাহ পড়ল মহা বিপদে। এখন কীভাবে সে বলবে, সে এখন বাহিরে যেতে চায়৷ রোশান সিদ্দিকী আলতো করে নিজের ঠোঁট জোড়া সারাহ’র ঠোঁটে মিশিয়ে দিলো। তখন ই সারাহ’র ফোন বেজে উঠল। সারাহ ফোন হাতড়াতে লাগলে রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র হাত ধরে বলল,

” ফোন ধরা যাবেনা এখন।”
সারাহ মিহি কণ্ঠে বলল,
” কোনো ইমারজেন্সি কল হতে পারে।”
রোশান সিদ্দিকী ভারী গলায় বলল,
” এই টাইমটুকুর চেয়েও ইমারজেন্সি টাইম আর হতে পারেনা মিসেস সারাহ সিদ্দিকী। ”
সারাহ’র ভেতরটা অস্থিরতায় ফেটে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই ছোঁয়া ফোন দিচ্ছে। ক্রমাগত ফোন বেজে যাচ্ছে। সারাহ রোশান সিদ্দিকী’কে জোরে ধাক্কা মেরে ফোন হাতে নিলো। রোশান সিদ্দিকী বেশ খানিকটা অবাক হল। সারাহ এভাবে ধাক্কা মারল কেন? সে কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করল,

” কার ফোন?”
সারাহ মিহি কণ্ঠে বলল,
” ছোঁয়া।”
রোশান সিদ্দিকী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” তখন কথা শেষ করোনি?”
সারাহ আমতা আমতা করে বলল,
” না।”
রোশান সিদ্দিকী আবার ও প্রশ্ন করল,
“কেন?”
” আপনার সাথে আমার একটু কথা ছিলো।”
রোশান সিদ্দিকী ভ্রু যুগল কুঁচকে বলল,
” হোয়াট?”

” আপনি তো জানেন ই ছোঁয়ার সাথে দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই। তন্ময় আর ওর একটা সম্পর্ক আছে। ও এখন ইমিডিয়েট কুয়াকাটা যেতে চাইছে। দ্বীপ,তরী, তন্ময় ওখানেই আছে। ছোঁয়া যেতে চাইছে।”
রোশান সিদ্দিকী কপালের চামড়া টানটান করে বলল,
” তো, এ নিয়ে তুমি চিন্তিত কেন? যেতে চাইছে যাক।”
” আসলে ছোঁয়ার মানসিক অবস্থা ভাল নয়। ও আমাকে সাথে নিতে চাইছে।”
রোশান সিদ্দিকী হাত উল্টে ঘড়ি দেখে নিয়ে বলল,
” এখন? সময় দেখেছো?”
” ছোঁয়া ওর গাড়ি নিয়ে যাবে। ”
” আমি কাল তোমাকে নিয়ে যাবো। এভাবে এত রাতে তোমাকে আমি ছাড়ব না। ”
সারাহ খুব অনুনয় করে বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৫

” আপনার কাছে আমি জীবনে কিছু চাইব না। প্লিজ! আমাকে আমার বন্ধুত্ব রক্ষা করতে দিন। ”
” নিষেধ তো করছি না। অচেনা জায়গা তোমাকে এত রাতে একা ছাড়ছি না।”
” একা কোথায়? ওখানে দ্বীপ, তন্ময়, মৃন্ময়, তরী সবাই আছে।”
রোশান সিদ্দিকী কপালে দু ‘আঙুল চালিয়ে বললেন,
” দ্বীপ, তন্ময়, মৃন্ময় ওরাও ছেলে। আমি তোমার বেলায় কাউকে একশ ভাগ বিশ্বাস করতে পারব না। আমার বউকে আমি এভাবে ছাড়তে পারব না। ”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৭