মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৫৩
সাদিয়া
কলিংবেলের আওয়াজ পেতেই মায়রা দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ক্লান্ত শরীর নিয়ে দুই হাত ভর্তি বাজার করে এসেছে ইহাম। ফোন করে মায়রা কে বলেছিল কি কি আনতে হবে। আনাড়ি মেয়েটা আমতাআমতা করে জবাব দিয়েছিল “আপনার যা ইচ্ছা।”
বাজার হাতে নিয়ে সামনে তাকাতেই মায়রাকে দেখে বিহ্বল ইহাম একেবারে থমকে গেল। বিস্ময়কর চোখ দুটিতে ভাসছে যেন এক দলা আগুন। হাত থেকে আপনাআপনি ব্যাগ ফেলে দিয়ে বুকের বা পাশ টা খামছে নিয়ে চোখ মুখ এক করে নিল। আচমকা ইহাম কে বাজার ভর্তি ব্যাগ ফেলে বুক ধরতে দেখে মায়রা চিন্তিত হয়ে যায়। শঙ্কিত মুখশ্রী তে দ্রুত প্রশ্ন করে,
“ক্যাপ্টেন সাহেব কি হয়েছে আপনার?”
বিমোহিত নয়ন গুলি মুগ্ধ হয়ে দেখে যায় শাড়িতে মুড়া স্ত্রী কে গভীর ভাবে। মেয়েটার চারদিক থেকে রঙ্গিন দ্যোতি সব কিছুকে যেন হার মানায়। সত্যি তার বুকের বা পাশটায় এই ভয়ংকর সৌন্দর্যে কাঁপন ধরে। চিনচিন করে শিহরন বয়ে যায়।
অস্ফুট স্বরে বলে ইহাম, “ব্যথা?”
ইহামের কথায় একেবারে ভড়কে যায় মায়রা। এগিয়ে এসে ধরে ইহাম কে। চিন্তিত আর আতংকিত কন্ঠে শুধায়, “বেশি ব্যথা?”
“খুব।”
“হায় আল্লাহ এখন কি করব আমি!”
“একটু ঔষধ দাও।”
“কি ঔষধ দিবো এখন আমি আপনায়?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আধোআধো কন্ঠে জানায়, “তুমি নাম ঔষধটা।” ভ্রু দুটি সংকোচিত করে নেয় মায়রা। ভালো ভাবে পরখ করে সে। তখনি ইহাম হাত পেঁচিয়ে ধরে তার কোমরে। নিজের সাথে একেবারে মিশিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে, “তোমার ওই ভয়ংকর রূপ আমার বুকে কাঁপন ধরিয়েছে মেয়ে। ধড়ফড় করছে সেখানে। এই দেখো।” অন্য হাত দিয়ে ইহাম মায়রার হাতটা চেঁপে ধরে নিজের বুকে। শরীর ঝাঁকি দিয়ে উঠে মায়রার তখনি। আসলেই মানুষটার বুকটা বেগতিক হারে উঠানামা করছে। “হার্ট অ্যাটাক একে এই বুঝি আমি মরে গেলাম বউ গো।”
ফোঁস করে নিশ্বাস ঝাড়ে মায়রা। সে কি না কি ভেবে ভয় পেয়ে গেছিলো। “আপনার সবসময় আজেবাজে কথা। ছাড়ুন।”
“খবরদার আরেকবার ছাড়ুন ছাড়ুন করলে আছাড় মারব। আমায় নিজের রূপের আগুনে ঝলসে দিয়ে আপনি এভাবেই চলে যেতে চান ম্যাডাম? হুমম?”
লজ্জায় মেয়েটা মুখ নুয়ে আনে। অদ্ভুত একটা অনুভূতি পেট মুচড়ে ধরে তার।
“আপনার আগুনে আজ আমি স্বেচ্ছায় ঝলসে যেতে চাই মিসেস চৌধুরী। এই অনলে আমার মরণ সুনিশ্চিত।”
“ছা ছাড়ুন।”
“ছাড়ুন না। ধরব তবে একটু পর।”
লজ্জায় মায়রার মুখ ফুলে উঠে। ঠোঁট খিঁচে রাখে অতি কষ্টে। ইহামের মুখ বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টা বুঝেই প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে, “বাজার গুলি পড়ে গিয়েছে সরুন।”
ইহামের ধ্যান ভাঙ্গে। নিচে তাকিয়ে দেখে আলু পেঁয়াজ সব লুটোপুটি খাচ্ছে। মায়রা চুল খোঁপা করতে হাত উপরে তুলতেই ফর্শা মেদবিহীন পেটের একাংশ উন্মুক্ত হয়ে যায়। যা নজরে আসতেই তেজে যেন চোখ দুটি জ্বলে উঠে ইহামের। হৃদপিন্ডটা ধক করে বারি দেয়। বজ্রবেগে মায়রার কোমর টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে ফিসফিস করে,
“নিজেই নিজের সর্বনাশ ডাকতে তোমায় লাল শাড়ি পরতে বলেছিলাম?”
“….
“আমি বড্ড অসুস্থ অনুভব করছি মায়রা।”
ইহামের কন্ঠ কেমন নেশালো শুনালো। সেই কন্ঠই যেন মায়রার শরীরের লোম গুলি জাগিয়ে দেয়। ভেতরে কম্পন সৃষ্টি হয় তার। ইহামও কেমন খেই হারিয়ে মেয়েটার গলায় মুখ গুঁজে মিষ্টি সুভাস নেয় নাক টেনে। মোহাগ্রস্থের মতো বিমোহিত ঘ্রাণ টুক টেনে নেয় নিজ গহ্বরে। গলার পাতলা চামড়ায় ভিজে ওষ্ঠের স্পর্শ পেতেই ইহামের ইউনিফর্ম টা খামছে ধরে মায়রা। হাপানি রোগীর মতো পরপর শ্বাস টানে। তাকে এমন উদগ্রীব হতে দেখে ছোট্ট হাসে ইহাম। কানের লতিতে মুখ বাড়িয়ে দিয়ে হিসহিস করে জানায়,
“নিজের ভেতরের আগুন টা বাড়িয়ে দিন মিসেস চৌধুরী। আমায় পূর্ণাঙ্গ ভাবে ঝলসে দিতে যেন কমতি না পড়ে। ভয় নেই, আমি পুড়ে মরতে রাজি। শুধু নিশ্চিত করুন, তেজের অভাবে আমার কোনো অংশ বেঁচে না যায়। যাতে আমার অস্তিত্বের প্রতিটি শিরা উপশিরা আপনার উষ্ণতায় পুড়ে ছাই হয়ে যায় মিসেস চৌধুরী।”
ইহামের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে প্রাণ ভরে মায়রা গহীনে শ্বাস টেনে ধরে। বুকটা বেগতিক হারে উঠানামা করছে তার বেসামাল অনুভূতি তেই। ভেতর থেকে আসা স্পন্দনের ধ্বনিতে যেন কলরব নেমেছে। লোকটা আসলে সবকিছুতে বেশিবেশি।
“সময় ছিল না। বউ এর কাছে আসার তাড়া ছিল খুব তাই বাজার করতে পারিনি তেমন করে। এরপর বেশিবেশি করে আনব। এসব বাজার কাজার করা আমায় দিয়ে পুষায় না তাই ইবরাহিম কে সাথে নিয়ে যেতে হয়েছে।”
ভিজে মাথা টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে ইহাম কিচেনে এগিয়ে এলো। মায়রা তখন হতবাকে মুরগি হয়ে বিমূঢ় দাঁড়িয়ে।
“এতএত বাজার করলেন তাউ বলছেন কমকম?”
“কমই তো। ইবরাহিম অবশ্য বলেছিল আমরা দুজন মানুষ বাজার সদাই কম নেওয়া ভালো। কিন্তু পরে ভাবলাম যদি লাগে?”
“আপনি রাক্ষস না আমি রাক্ষস?”
“হোয়াট দ্যা হেল? রাক্ষস হতে যাবো কেন?”
মায়রা বিরক্ত হয়ে বলল, “তো এতএত বাজার কেন করতে গেলেন? এক মাসেও তো মনে হয় না এত বাজার শেষ হবে। ফলের বাজার থেকে কি সব তুলে এনেছেন? এতএত ফল ফ্রিজে রেখে খাওয়া যাবে নষ্ট হয়ে যাবে না? আর এত গোশতও কেন আনতে গেলেন? গরু খাসি মুরগী। তো হাঁস আর মহিষ টা বাদ দিলেন কেন?”
“সিরিয়াসলি মায়রা তুমি মহিষের গোশত খাও? আগে জানলে তো…”
মায়রা চোখ গরম করে দিতেই ইহাম কথা থামিয়ে দেয়। সূক্ষ্ম নজরে এক পলক তাকিয়ে দেখে মায়রা কে। লাল শিল্কের শাড়িটা পেঁচিয়ে কোমরের এক পাশে গুঁজে রেখেছে। সেখান থেকে পদ্ম ফুলের মতো উঁকি দিচ্ছে মায়রার আকর্ষণীয় উদর। মেয়েটা বিড়বিড় করে কিছু বলেই যাচ্ছে। ইহাম সেসব কিছুই যেন শুনতে পারছে না। অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে হৃদয়টা শান্ত হয়ে যাচ্ছে। এক নজরে তাকিয়ে আছে লাল শাড়ির ফাঁকে উঁকি দেওয়া ফর্শা কোমল উদরের পানে। ভিজে টাওয়ালটা ডাইনিং টেবিলে রেখে পা বাড়িয়ে মায়রার সম্মুখে যায়।
সব কাজ টাজ করে মায়রা পাঁচটা মুরগি নিয়ে পড়েছে বিপাকে। কোনোদিন মুরগি কাটেনি সে। ওসব গন্ধ নাকে এলেই পেট উগলে আসত তার। মা হাঁস মুরগি কাটার সময় সোজা সে নিজের রুমে চলে যেত। গন্ধ যেন না লাগে তাই বদ্ধ রুমেও স্প্রে করত একটু পর পর। আর এখন কিনা এই মুরগী নিয়েই সে বসে আছে। তার এমন বিরক্তিকর সময়ে উদরে শীতল স্পর্শ পেতেই ভড়কে যায় মায়রা। চোখ বড়বড় করে তাকায় সে। কিছু বুঝে উঠার আগেই কিচেন কাউন্টারের উপর তার কোমর চেঁপে ধরে তুলে নেয় ইহাম। আচমকা পেটে হীম শীতল ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল মায়রার। সারাশরীরে বিদ্যুৎ চমকে উঠল। গলা টেনে নিশ্বাসটাও আটকে নিল অতর্কিত হামলায়। সেই সাথে ক্ষিপ্র মুঠোতে পুরে নিলো ইহামের চুল।
অস্থির ইহামের অবাধ্য হাত অনবরত ছুটে চলে মোলায়েম জমিনে। ছোট্টছোট্ট ওষ্ঠের পরশ একেবারে কাবু করে নেয় মায়রাকে। ভেতরের আন্দোলিত ধ্বনিতে পিষ্ট হয়ে যায় অন্তঃকরণ। শরীরটা কেমন আনচান করে উঠে।
ঠোঁটের কাছটায় মুখ এনে বলে উঠে ইহাম, “আমায় এতটা উন্মাদ কিভাবে বানালি তুই মায়রা? শুধু তোর নামের পরে নিজেকে পাগল পাগল লাগে আমার। নিজেকে কেমন হারিয়ে বসি কেন আমি? কোন মোহমায়ায় বেঁধেছিস আমায়?”
অধরে ইহামের ছোঁয়া আর বেসামাল ভাবে ছুটে চলা হাতের কারণে খেঁই হারিয়ে ফেলে মায়রাও। কোনো জবাব দিতে পারে না সে। থেমে থেমেই নিশ্বাসটা আটকে ধরে বুকের মাঝে। শিরা শিরা যেন আগুন ধরিয়েছে ইহাম।
“যবে থেকে জীবনের আঙ্গিনায় ঢুকেছো তবে থেকেই নিজেকে আবিষ্কার করেছি নতুন ভাবে। তোমার নামে এক উন্মাদ পুরুষ হিসেবে।”
মেয়েটা চোখ মুখ খিঁচে রেখেছে। ওষ্ঠপুটের কিনারায় চুমু খেয়ে আধো কন্ঠে ইহাম বলে আবারও, “আই ওয়ান্ট ইউ ব্যাডলি, মায়রা। আই উইল নিড ইউ ইন এভরি মোমেন্ট অফ মাই লাইফ।”
লম্বালম্বা শ্বাস টেনে মায়রা বলে, “ছা ছাড়ুন ক্যাপ্টেন সাহেব।”
“শুহহহ, জাস্ট সে কাছে আসুন নট ছাড়ুন ছেড়ে দিন।”
লজ্জায় মায়রার নাক লাল হয়ে যায়। ঠোঁট টিপে হেসে ইহাম তাতে ছোট্ট কা’মড় বসায়। ইহামের স্পর্শ আরো গভীর হতে থাকলে মায়রা সইতে না পেরে দ্রুত নিজের সামনে ছুড়ি ধরে। মুখ নামিয়ে ঘনঘন নিশ্বাস নেয়। মুখ ফুটে আর কিছু বের হয় না তার। ইহাম কপাল কুঁচকে সরু চোখে চেয়ে বলে,
“আদর করার অপরাধে হাজবেন্টের গলা কেটে ফেলবে নাকি মায়রা?”
লাজুক মায়রা চকিতে চায় ইহামের দিকে। মানুষটার চোখ দুটিতে কেবল মুগ্ধতা আর নেশার তরঙ্গ বইছে। যার জোয়ারে ভেসে যায় মেয়েটা নিজেও। ইহাম মায়রার ছুড়ি ধরা হাত নিজের বুকের বা পাশে রাখে। ভারি গলায় বলে, “তোমার তরে জান কোরবান মেরি জান।”
মায়রা লাজুক লতার মতো নুয়ে যায়। আলতো হেসে দৃষ্টি নত করে থেমে থেমে বলে উঠে, “আমি মুরগি কাটতে জানি না।”
আপনাআপনি ভ্রুদ্বয় সরু হয়ে যায় ইহামের। কপালের রেখা টেনে আশ্চর্য বোধক চাউনিতে চেয়ে থাকে মায়রার দিকে। ভেতর থেকে এমনি বের হয়ে আসে “হোয়াট?” কিসের মাঝে কি? কখন কোন কথা বলতে হয় মেয়েটা কি তাও জানে না নাকি? মুডটাই বিগড়ে দিলো মেয়েটা।
মায়রার কেমন অস্বস্তি হয়। আমতাআমতা করে জানায়, “আমি কখনো মুরগী কাটিনি। তাই জানি না কি করে কাটতে হয়।”
চোখ ঘুরিয়ে ইহাম বেসিনে থাকা ৩ টা লাল মুরগি আর ২ টা পল্টি মুরগির দিকে চায়। অল্প সময় চেয়ে থেকে হঠাৎ বলে বসে, “তোমায় ইচ্ছা হচ্ছে মাথায় তুলে একটা আছাড় মারি মায়রা।”
ভড়কে যায় মায়রা। আকস্মিক কথায় মায়রা চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে ইহাম কে। তার এমন সন্দিগ্ধ চাউনির মানে বুঝে গম্ভীর মুখে জবাব দেয় ইহাম, “মুরগি কাটতে না পারার জন্যে নয়। আমার মুডটা নষ্ট করার জন্যে স্টুপিড গার্ল।”
নত মুখে থাকা মায়রা কে কেমন উদ্বেগ দেখায়। ওভাবেই বসে আঙ্গুলে শাড়ি পেঁচাতে থাকে সে। লোকটাকে কি করে বলে সে কাছে এলেই তার নিশ্বাসটা আটকে আসে। শরীরটা অজানা বেসামাল অনুভূতিতে একেবারে নিজের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়।
সদ্য গোসল করে আসা ইহামের গায়ে কেবল টাউজার। ভিজে চুল গুলিতে হাত গলিয়ে পিছনে নিয়ে পা বাড়িয়ে যায় বেসিনে। বিড়বিড় করে তাকে বলতে শুনা যায়, “মাথামোটা গবেট একটা মেয়ে। কখন কি বলতে হয় তাও জানে না। মুডটাই নষ্ট করে দিলো স্টুপিড।” ছুড়িটা নিয়ে হাতে তুলে নেয় একটা মুরগি। “কোথায় ভেবেছিলাম নতুন ওয়েতে একটু অন্যরকম ভাবে বাসর করব আর বেয়াদব টা তার পিণ্ডি চটকে দিয়েছে।”
কিচেন কাউন্টারের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে মায়রা। ইহামের কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসে মেয়েটা।
“মুরগি কাটা শেষ হলে সোজা বেডরুম।”
ঠোঁট টিপে হেসে মজা নিতে বলে মায়রাও, “এমা আপনি খাবারও খাবেন না বুঝি?”
“তোমাকে খাবো। তাতেই চলবে।”
“আমি কিন্তু শুধু ডিম ভাজি করেছি।”
সরু চোখে তাকায় ইহাম। মায়রা নিজ থেকেই জবাব দেয়, “অল্প গরুর গোশত আছে আম্মুর দেওয়া। আপনার হয়ে যাবে।”
“আর তুমি?”
“আমি শুধু ডিম ভাজি দিয়ে খেয়ে নিতে পারব।”
“তার মানে রান্নাটুকও তোমার আয়ত্তে নেই?”
লজ্জায় শরমে জবাব দিতে পারে না মায়রা। দ্রুত মুখ লুকাতে মাথা নুয়ায় নিঃশব্দে। তা দেখে অব্যক্ত কথাটুক নিজ দায়িত্বে বুঝে ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়ে ইহাম। নিজ থেকে বিড়বিড় করে আবারও, “অল্প বয়সের বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করার ঠ্যালা সামলা ফাহাদ ইহাম চৌধুরী।”
মায়রা আদা রসুন ব্লেন্ডার করছে। এদিকে ইহাম পেয়াজ কুচি করছে। বেচারার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। দৃশ্যটা দেখে মায়রার হাসি পেলো।
“এ কি আপনি কাঁদছেন কেন? বউ পালালো নাকি?”
“তোমার মতো গাধা বউ একটা থাকলে এমনি কাঁদতে হবে। জীবন পুড়ে ছাই। বলদ কোথাকার।”
“আপনি কিন্তু আমায় ইনসাল্ট করছেন।”
“তাড়াতাড়ি রান্নাটা শিখে জামাই কে একটু স্বস্তি দিন ম্যাডাম।”
গাল ফুলিয়ে মায়রা বলল, “দেখি সরুন আমার রান্না আমাকে করতে দিন। আমি পারব।”
মায়রার ভার গাল দুটি দেখে ইহাম ছুড়ি রেখে টেনে আনে নিজের কাছে। টপাটপ দুটি চুমু দিয়ে বলে, “এই টুকুন শরীরে এত তেজ কিসের হুমম?”
“রান্না পারি না বলে আপনি কথা শুনাচ্ছেন” মুখ ভার করে জবাব দেয় মায়রা। তাতে এক গাল গূঢ় হাসে ইহাম। “আমাকে শিখিয়ে দিলে আমি ঠিক নিজ থেকে পারব।”
“বাচ্চা বউ হলে একটা বিশেষ সুবিধা আছে। বলোতো সেটা কি?”
মায়রা ভ্রু উঁচু করে কৌতূহলী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে থাকে।
“নিজের মতো করে গড়ে তুলা যায়। বেশি কিছু না আমি যেভাবে রোমান্স করাটা শিখিয়ে দিবো ততটুক ঠিক করে পারলেই চলবে আমার।”
ঠোঁট খিঁচে মায়রা ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয় ইহাম কে।
“আপনি একটা অসভ্য লোক। সবসময় শুধু লুচ্চামি কথাবার্তা।”
“হাজবেন্ট হই তোমার। অসভ্যতামি করি আর লুচ্চামি যাই বলো ঘরে বউ রেখে কি কাপুষের মতো বাহিরে গিয়ে করবো নাকি?”
দুজনে এক সাথে খেতে বসেছে। ডিম ভাজি রুইমাছ ভোনা, আর গরুর তরকারি। আম্মু কে দেখেছিল গরুর তরকারি থাকলে সেটাকে পেঁয়াজ দিয়ে তেলে একটু বেশি করে ভাজলে খুব মজা লাগে। মায়রা সেটাই করেছে। মাছ ভোনা মুখে দিয়ে মেয়ের চোখ চড়কগাছ।
“আপনি এত ভালো রান্না করতে পারেন ক্যাপ্টেন সাহেব?”
“ভালো লেগেছে?”
“ভীষণ। অনেক মজা হয়েছে।”
“তো চুপচাপ খাও। খেতে বসে এত কথা বলতে নেই।”
আরাম করে মায়রা একের পর এক ভাতের লোকমা দিচ্ছে। রাতে খুব কমই খায় মায়রা ওজন যেন না বাড়ে। কিন্তু তরকারি টা সত্যি বেশ জমপেশ হয়েছে।
“আপনি এত ভালো রান্না কোথা থেকে শিখেছেন?”
“নিজে নিজেই” খেতে খেতে জবাব দেয় ইহাম।
“তাহলে তো ভালোই হলো আপনার কাছ থেকে রান্না শিখে আমি কুক হয়ে যাবো।”
“মনে হচ্ছে তোমার কথা বন্ধ করার জন্য হলেও ঝটপট কয়েকটা চুমুর ব্যবস্থা করতে হবে।”
এই কথা শুনেই মায়রা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। ওষ্ঠপুট নিভৃত করে নেয়। এই কঠিন পাষাণ লোকটা আজকাল যে চুমুখোর হয়েছে দেখা যাবে বলতে দেরি তার গালে আর ঠোঁটের কিনারায় চুমু পড়তে দেরি হবে না।
ফাতেমা বেগম মন মরা হয়ে বসে আছেন। আজ সারাটাদিন এই নীরব একলা বাসায় থাকতে কলিজা ছ্যাঁত ছ্যাঁত করেছে উনার। দম বন্ধ হয়ে আসছিল প্রাণহীন বাসাটায়। যেদিকে চোখ যাচ্ছিল মনে হচ্ছিল এই তো মেয়েটা ঘর জুড়ে হাটছে এটা ওটা খাচ্ছে, বিছানা সোফার কুশন এলোমেলো করে দিচ্ছে। কানে বারবার বাজছে “আম্মু আম্মু” ডাক, এটা ওটা চাইছে।
টিভির সামনে বিবশ মুখে বসে আছেন ফাতেমা বেগম। সারাদিনে মেয়ের চিন্তা আর বিরহে গলা দিয়ে তেমন খাবার নামেনি। উদাস চিত্তে ভেসে উঠে কেবল মেয়ের হাসিমাখা মুখখানা।
নিজেই গ্যাসের চুলায় এক গ্লাস দুধ গরম করে নিয়ে আসেন মহিন সাহেব। টি টেবিলের উপর রেখে পাশেই বসেন স্ত্রীর। কিন্তু স্ত্রী মেয়ের কাতরে এতই ডুবে আছেন যে উনার উপস্থিতও টের পেলেন না। কাঁধে হাত রেখে ক্ষীণ স্বরে বলে, “প্রতিদিন না মেয়ের সাথে চেঁচাতে টিভি দেখা নিয়ে? তুমি দেখবে স্টারজলসা জি বাংলা আর মেয়ে দেখবে হিন্দি সিরিয়াল তা নিয়ে না তোমার আর তার কত কাড়াকাড়ি। গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে বলতে ওর কারণে তুমি সিরিয়াল গুলি শান্তিতে দেখতে পারো না। আজ তো বাসা ফাঁকা টিভিও চলছে। তবে শান্তিতে দেখছো না কেন ফাতেমা?”
স্বামীর কথায় তাকান তিনি ফ্যালফ্যাল করে। মুহূর্তে চোখের পাতায় পানিরা এসে ভিড় করে উনার। হুট করে স্বামীর বুকে মাথা দিয়ে ঝেড়ে দেয় সেই বাঁধ। লঘু কন্ঠে বলে, “আমি শান্তি পাচ্ছি না তুহিনের বাবা। মেয়েটা আমাদের ছেড়ে এত দূর মানতে পারছি না।”
“বোকা নাকি তুমি? মেয়ে বিয়ে দিয়েছি শ্বশুর বাড়ি যাবে না?”
“আমার মেয়েটা কিচ্ছু পারে না। কোনো দিন রান্নাঘরে কোনো কাজ করেনি। সেই মেয়েটা একা কি করে সামলাবে ওখানে?”
“চিন্তা করে না। সব সামলে নিতে পারবে। আর ইহাম তো আছেই।”
ফাতেমা বেগমের ভেতর চিড়ে যায়। মেয়েরা শ্বশুর বাড়ি চলে গেলে সবচেয়ে বেশি পুড়ে মায়ের। সারাদিন মায়ের সাথে তো লাগালাগি আষ্টেপৃষ্ঠে থাকে একটা মেয়ে। সেই ছোট্ট থেকে বড় করে তুলা সেই মেয়েটা বাড়ি ফাঁকা করে চলে গেলে মায়েদের কলিজা যেন ছিঁড়ে নিয়ে যায়।
“রাতে তো খাওনি এই দুধটুক খেয়ে নাও। আর কেঁদো না ফাতেমা। আস্তেআস্তে একা থাকা শিখে যাবে মা মেয়ে।”
দেখা যায় মহিন সাহেবের বুক ফাটে তবুও চোখ ফাটতে চায় না। তিনি কাঁদলে বউটা আরো বেশি করে কাঁদবে। বাবাদের সাথে মেয়েদের বন্ধনটা অদৃশ্য হলেও বেশ গাঢ়। প্রতিটা বাবার রাজকন্যা হয় তার আদরের মেয়ে। একটা মেয়ের ভালোবাসার প্রথম পুরুষ হয় বাবা নামক এই শক্তিশালী বট গাছটা। সমস্ত আবদার পূরণের একমাত্র সাথী যেন ওই বাবাই। সেই রাজকন্যা কেও আদরের সুতা ছিঁড়ে যেতে হয় শ্বশুর বাড়ি। যখন তখন মনটা চাইলেও দেখা যায় না আদরের পুতুলটাকে। মেয়ের মুখটা মনে হতেই চোখ দুটি ছলছল করে উঠে মহিন সাহেবের। বুকটা ভীষণ জ্বলছে উনার। উনার আদরের একমাত্র রাজকন্যা।
“কিরে গালফুলি তুই নাকি হাজবেন্টের সাথে সেনানিবাসে ঘাঁটি গেড়েছিস?”
মায়রা গাল ফুলিয়ে বলে, “বিয়ে যখন দিয়েই দিয়েছো ঘাঁটি এখানে না হোক ওখানে তো পাততেই হবে ভাইয়া।”
“তা বেশ তো। জামাই কে বলিস যেন তোর যত্ন নেয়। আমার ছোট্ট পরীটাকে কোনোরকম কষ্ট দিলে কিন্তু আমি মানব না।”
গলাটা কেমন ভার শুনালো তুহিনের। মিনিট কয়েক ধরে তো স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছিল। হঠাৎ কন্ঠটা বদলে গেল কেন? মায়রা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে ভাই কে। কিছু বলবে তার আগে তুহিন বলে, “ভালোই হলো। বেশ বড় হয়ে গেছিস তুই। নিজের সংসারও হয়ে গিয়েছে। এখন আর বাড়ি ফিরলে তোর সাথে সবকিছু নিয়ে ঝগড়া করতে হবে না।” একটু থামে তুহিন। ঢোক গিলে বলে, “নিজের যত্ন নিবি। সাবধানে থাকবি কিন্তু। খুব ভালো থাক আমার এঞ্জেল।”
খুব দ্রুতই তুহিন কল কেটে দিলো। মায়রা স্পষ্ট দেখেছে ভাইয়ের অশ্রুসিক্ত লাল দুটি চোখ। নিশ্চয় কান্না আটকে এভাবে কথা বলেছে। মায়রার চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি গড়িয়ে পড়ে। ঠোঁট উল্টে আসে কান্নার দরুনে।
ব্যালকুনির দিকে এগিয়ে ইহাম দেখতে পায় মায়রা নাক টানছে। তার আসার শব্দ পেয়ে বুঝি চোখের পানিটুকও মুছে নেয়। ইহাম গিয়েই সরু চোখে শুধায়, “হোয়াট হ্যাপেন্ড মায়রা?” জবাব না দিয়ে মেয়েটা মাথা নিচু করে নাক টানে। ব্যস্ত হয়ে ইহাম জিজ্ঞেস করে ফের, “কি হয়েছে কাঁদছো কেন বোকা মেয়ে?” আহ্লাদী মায়রার আরো কান্না পায়। ইহাম সবটাই বুঝে। বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে, “কাঁদে না মায়রা। তোমায় কতদিন না বলেছি তুমি কাঁদলে আমার রাগ হয়। আমার ভেতরের এই খানটা জ্বলে। প্লিজ কান্না থামাও।”
ইহাম কে জড়িয়ে ধরে মায়রা আস্তেআস্তে নিজেকে ধাতস্থ করে। বুক থেকে মেয়েটাকে তুলে চুলে হাত বুলিয়ে দেয় ইহাম। ছোট্ট আননখানা হাতের তালুতে তুলে নিয়ে বলে, “আব্বু আম্মুর জন্যে খারাপ লাগছে?”
মায়রা মাথা দুলায়।
“মনখারাপ করো না। কিছুদিন পর ছুটিতে তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাবো। তবুও প্লিজ আমার সামনে কান্না করে আমার মেজাজের বারোটা বাজিয়ে দিও না।”
নাক টেনে বলে মায়রা, “তাহলে কি করবেন?”
মুখ বাড়িয়ে দিয়ে জবাব দেয় ইহাম, “কাছে আছে তো তাই যত বেশি রাগাবে তত বেশি আদর করব। তখন সইতে পারবে তো আমার বেয়াদব জান?”
“অসভ্য লোক” বলে মায়রা মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
মায়রা কে লজ্জা পেতে দেখে ইহাম মেয়েটার কোমরের দুই পাশে হাত চেঁপে মুহূর্তে ব্যালকুনির রেলিং এ বসিয়ে দেয়। আচমকা কাজে ভড়কে মায়রা চোখ বড়বড় করে হাত রাখে ইহামের বাহুতে। ইহাম মুখ বাড়িয়ে দিতেই মায়রা পিছনে হেলে চেঁচিয়ে উঠে, “আহহহ পড়ে যাবো তো।”
“এতোই সহজ নাকি?”
অনুভব করে তার পিঠে শক্ত বলিষ্ঠ একটা হাত তাকে আগলে ধরে রেখেছে। টিশার্ট থাকায় মায়রা ইহামের ফুলো মাসেল খামছে রেখেছে।
ফিসফিস করে ইহাম জানায়, “ফাহাদ ইহাম চৌধুরীর হাত থেকে এত সহজেই মুক্তি পেয়ে যাবে মেয়ে? আমার থেকে ফের পালাতে চাইলে এভাবেই নিচে ফেলে দিবো বেয়াদব জান।”
কথা শেষে মায়রার গালে চুমু খায় সে। লাজুক মায়রা বলেই ফেলে, “আপনি সবসময় এমন করেন কেন?”
“বিকজ ইউ আর মাইন। ইউর চিক আর ভেরি সফট অ্যান্ড ফ্লাফি।”
মুখ নুয়ে এল লাজুকলতার মতো, যেন ব্যক্তিগত কঠিন মানুষটার ছোঁয়ায় লাজে লাল হয়ে যাওয়া একটি ফুল। চোখের দৃষ্টি নিভে গেল লাজের আড়ালে।ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি, আর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল বিমোহিত এক রাশ অনুভতিরা। ইহাম তীক্ষ্ণ নজর বুলিয়ে লাজুকলতার নুয়ে থাকা থুঁতনি তে তর্জনী ঠেকিয়ে উঁচু করল। নিজের অবস্থানে বহাল থেকেই কেবল দৃষ্টি নত করে দেখল মেয়েটার কোমল আদুরে ঠোঁটগুলি। এই মেয়ের ওষ্ঠপুটে যেন মাদক মেশানো। এত টানে তাকে। টুক করে মুখ বাড়িয়ে ওষ্ঠপুটের কিনারায় ঠোঁট ছোঁয়ে দেয়। পরক্ষণে কানের পাশে চুল গুঁজে দিয়ে মোটা কন্ঠে বলে,
“আপনায় কিছু কথা বলতে চাই ম্যাডাম একটু মনোযোগ দিয়ে শুনুন।”
সরল চাউনিতে মায়রা একপলক চোখ তুলে তাকাল। ইহাম মায়রার কোমরের দুই পাশে হাত রেখে বলতে লাগল, “আপনার জানা দরকার যেহেতু আপনার হাজবেন্ট স্পেশাল ফোর্সের একজন সোল্জার তাই অনেকসময় দেশের অনেক জায়গায় আমায় অপরেশনের জন্যে যেতে হয়। সে সময়টা হয়তো আপনার একাই থাকতে হবে। একজন সৈনিকের স্ত্রী হিসেবেও আপনাকে শক্তিশালী দৃঢ় মনোবলের হতে হবে ম্যাডাম। আমার পাশে থেকে দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে আপনাকেও হয়তো অনেক সেকরিফাইজ করতে হবে। এতে কি আপনার কোনো সমস্যা আছে ম্যাডাম?”
“পথ কঠিন হলেও ভরসা আর আশ্বাসের মতো যদি আপনার ভালোবাসার হাতটা পাই তবে সে কঠিন পথও আমি পারি দিতে পারব ক্যাপ্টেন সাহেব।”
মায়রার এত বুঝদার একটা কথার জন্যে বোধহয় ইহাম এতদিন অধীর আগ্রহে বসে ছিল। নিজ থেকে মায়রার মুখে এমন কথা শুনে তৃপ্তিতে বুক ফুলে উঠে তার। কিঞ্চিৎ হেসে মেয়েটার মাথার পিছনে হাত ঠেকিয়ে দ্রুতগতিতে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। পরম শান্তিতে গভীর পরশ বুলিয়ে বলে ইহাম,
“একটু রাগী বদমেজাজি হতে পারি তবে পাথর নই মায়রা। অনেক কিছুই বুঝেও হয়তো মুখ ফুটে কিছু বলতে পারি না। কি করব বলো? এত বছরের স্বভাব। শুধু দুজন দুজনকে বুঝে একটু মানিয়ে নিয়েই আমাদের সংসারের দীর্ঘায়ু করতে হবে। বাট মনে রেখো তোমার ক্যাপ্টেন সাহেবের প্রকাশতার ভাষাটা কম হলেও সে তোমায় ছাড়া কেবল উন্মাদ।”
মায়রা হুট করে ঝাপটে ধরে ইহাম কে। খানিক ঝুঁকে কাঁধে মুখ গুঁজে বিড়বিড় করে বলে, “আমি শুধু আপনার ভালোবাসাটুক চাই ক্যাপ্টেন সাহেব। আমাকে কেবল আপনার বুকে ভালোবেসে আগলে রাখবেন।”
“রাখব বউজান। আজীবন রাখব। কথা দিলাম। তুমি আমার হৃদয়ের একমাত্র অধিকারিণী। তুমি আমার প্রাণের স্পন্দন আমার প্রশান্তি মায়রা। যতদিন আমি শ্বাস নেবো আমার বুকে হৃদস্পন্দন চলবে, ততদিন তুমি এখানেই থাকবে। আমার বাহুডোরে আমার হৃদয়ের সবচেয়ে উষ্ণ কোণে। কেউ, কোনো ঝড়, কোনো সময় আমাদের আলাদা করতে পারবে না। আমার উষ্ণ চাদরে সর্বক্ষণ তোমায় জড়িয়ে রাখব আমার জান।”
পরিবেশটা কেমন ছমছমে হয়ে যায়। রাতের আঁধারে খেলা করে ছোট্ট মেঘেরা। মৃদুমন্দ বাতায়ন দুটি শীতল হৃদয়ে পৌঁছে যায়। যারা একে অপরের নিশ্বাসে লেপ্টে থাকে। দুটি শরীরের দুই হৃদপিন্ডের স্পন্দন ধ্বনি যেন একই গতিতে ছুটে চলে। ভেতরে দুজনেরই উথাল ঝড় বয়। অদ্ভুত এক অনুভূতি পা বেয়ে উপরে উঠতে থাকে মায়রার। সেই মিষ্টি অনুভূতির জ্বালাতনে মেয়েটা খামছে ধরে ইহামের টিশার্ট।
নেশায় আসক্ত ব্যাক্তির মতো কেমন মাতাল দেখালো ইহাম কে। বেগতিক হাত ছুটে চলছে মায়রার শরীরের নানান কাতরযুক্ত অঙ্গে। শাড়ির আঁচলের ফাঁকে হাত গলিয়ে মৃদু গতিতে হাত দিয়ে চেঁপে ধরে পেট। তড়িৎ আঁতকে উঠে মেয়েটা আরো প্রবল ভাবে খামছে ধরে ইহামের পিঠ। ছেলেটা কেমন নেশাক্তের মতো গভীর ভাবে ডুবে যায় মায়রার গলায়। ছোটছোট আদরে অস্থির করে তুলে মেয়েটা কে। শ্বাসকষ্টের রোগীর মতো ঘনঘন শ্বাস টানে উদ্দীপিত মায়রা। শরীর আনচান করে উঠে বিদ্যুৎস্পর্শ অনুভূতিতে। মানুষটার আদুরে ছোঁয়ায় ভেতরে যেন তুফান নামে।
মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৫২
গলায় ছোট্ট এক কা’মড় বসাতেই সুখকর মিষ্টি যন্ত্রণায় দাঁত খিঁছে ইহাম কে খামছে ধরে মায়রা। হুট করে মোহাগ্রস্থ ইহাম কোলে তুলে নেয় মায়রাকে। চোখেমুখে দারুন উদ্দীপিত এক নেশা ঘায়েল করেছে তাকে। লজ্জায় তাকাতে পারছে না মেয়েটা। তবুও মানুষটার শক্ত বাহুডোরে নিশ্চুপ থাকে সে। কোলে নিয়েই ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় মায়রার তুলতুলে অধরে। যেন হাড়ির অবশিষ্ট খেজুরের রসও নিগড়ে নিবো তৃষ্ণায়।
হিসহিস করে বলে ইহাম,
“আই ক্যান্ট হোল্ড মাইসেলফ ব্যাক, মায়রা। আই ওয়ান্ট ইউ ডিপলি অ্যাট দিস ভেরি মোমেন্ট।”