চেকমেট পর্ব ৫০

চেকমেট পর্ব ৫০
সারিকা হোসাইন

দুপুরের পরপর রূপকথার জ্বর আরো মাত্রা ছাড়ালো।দু চোখ মেলে পৃথিবী দেখতে পারলো না সে।নাকের ডগা,গাল টকটকে লাল হলো।শরীর হলো উত্তপ্ত তাওয়া।সকালে রূপকথাকে নিয়ে সারফরাজ মজা উড়ালেও এবার সে বেশ চিন্তিত হলো।ডক্টর হ্যানরি কে সকালেই খবর পাঠিয়েছে সারফরাজ।তিনি এসে জ্বর চেক করে মেডিসিন দিয়ে গিয়েছেন।তখন জ্বর ছিলো একশত দুই ডিগ্রি।ওষুধ খাওয়ানোর পরেও রূপকথার জ্বর বেড়ে হলো একশত তিন।মেয়েটার নেতিয়ে পড়া অবস্থা দেখে সারফরাজ এর বুকে দহন শুরু হলো।অসুস্থ মায়া রূপকথার এহেন অবস্থায় বেশ ব্যথিত হলেন সেই সাথে অল্প সেবাও করলেন।রূপকথার মাথায় ঘনঘন জল পট্টি দিলো সারফরাজ,সাথে মুছিয়ে দিলো শরীর।তবুও অবস্থার কোনো উন্নতি নেই।এবার সারফরাজ ভয় পেলো।সারফরাজ এর মন বললো রূপকথাকে ইমিডিয়েটলি হসপিটালে ভর্তি করা প্রয়োজন।

এদিকে মেয়ের চিন্তায় সুফিয়ান চৌধুরীর ঘুম উবে গেলো।কিছুক্ষন বাদে বাদেই ফোন করে খবর নিলেন তিনি।জ্বর এলে মেয়ে কেমন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যায় রেখা সবটা জানেন।তাই আসন্ন শঙ্কায় কেঁদে উঠলেন রেখা।
সারফরাজ হাতের উল্টোপিঠে রূপকথার জ্বর আরেকবার পরখ করে নিলো।এরপর ভয়ার্ত গলায় ডাকলো
“রূপকথা!তুমি ঠিক আছো?রূপ!অ্যাই রূপকথা
কোনো প্রত্যুত্তর করলো না রূপকথা।সারফরাজ আর এক মুহূর্ত সময় অপচয় করলো না।সে রূপকথাকে কম্বল সহ পেঁচিয়ে পাঁজা কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।এরপর লুইস আর ইয়ং এর কাছে মায়ার দায়িত্ব দিয়ে ছুটলো হসপিটাল অভিমুখে।মিনিট চল্লিশ পর একটা হসপিটালে এসে থামলো সারফরাজ এর গাড়ি।রূপকথাকে আবার কোলে তুলে ব্যস্ত পায়ে ইমার্জেন্সি তে এলো সারফরাজ।এরপর উপস্থিত ডিউটি ডক্টর কে বলে উঠলো
“সে অধিক জ্বরে ভুগছে।প্লিজ তার জ্বর কমিয়ে দিন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সারফরাজ এর পাংশু ভয়ার্ত চিন্তিত মুখশ্রী দেখে ডক্টর বুঝতে পারলো অবস্থা সিরিয়াস।ডিউটি ডক্টর দৌড়ে এসে রূপকথার জ্বর পরিমাপ করে আঁতকে উঠলেন।জ্বর একশত চার।রূপকথাকে দ্রুত অবজারভেশন কেবিনে শিফট করলেন তিনি।এরপর সাপোজিটরি,মেডিসিন,সব কিছু নিয়ে ছুটলেন সেখানে।রূপকথার জ্বর সারফরাজ এর কাছে শুরুতেই মামুলি বিষয় ঠেকেছিলো।কিন্তু সারফরাজ এর এখন মনে হচ্ছে এই জ্বরে রূপকথা বোধ হয় বাচঁবেই না।।
হসপিটালের করিডোরে পায়চারি করতে করতে উন্মাদ হয় উঠলো সারফরাজ।চটপটে মেয়েটাকে এরকম নিশ্চুপ,নির্ভার দেখতে তার মোটেও ভালো লাগছে না।

সারফরাজ সারাক্ষন তার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ সে চোখ মেলে পর্যন্ত দেখছে না।রূপকথার অসুস্থতার গাঢ়তা পরিমাপ করে মাথার চুল খামচে ধরলো সারফরাজ।হাসি খুশি চঞ্চল,দুরন্ত মেয়েটাকে সঙ্গে করে কতো স্বপ্ন নিয়ে এতো দূর দেশে নিয়ে এলো সে।সুফিয়ান চৌধুরী কে সারফরাজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো সামান্য তম কষ্ট পর্যন্ত পেতে দেবে না রূপকথাকে।অথচ জ্বরের ঘোরে মেয়েটা দুনিয়া ভুলতে বসেছে।সারফরাজ এর বিক্ষিপ্ত মন কু গাইতে আরম্ভ করলো।মস্তিষ্ক কেমন টনটনে ব্যথায় কাবু হলো।ব্যথা উপশম করতে মাথা চেপে ধরলো সারফরাজ।এরপর সমান তালে চক্কর কাটলো পুরো করিডোর জুড়ে।কতক্ষন সে এভাবে হাটলো তার হিসেব রইলো না।আরো ঘন্টা খানেক পর একজন নার্স এসে জানালো জ্বর কন্ট্রোলে এসেছে।তবুও অবজারভেশন এর জন্য চব্বিশ ঘন্টা হসপিটালে থাকতে হবে।

সারফরাজ এবার একটু নিশ্চিন্ত হলো।করিডোরের ওয়েটিং চেয়ারে বসে চোখ বুজে মাথা হেলিয়ে দিলো।এমন সময় সারফরাজ এর ফোন খানা মৃদু শব্দে বেজে উঠলো।স্ক্রিনে ড্যাভিন এর নম্বর চকচক করছে।জরুরি ফোন ভেবেই কানে তুললো সারফরাজ।হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ড্যাভিন যা বললো তা শুনে কপালের রগ ফুলে উঠলো সারফরাজ এর।সেই সাথে জ্বলে উঠলো বরফ নীল চোখ জোড়া। ইস্পাতের ন্যয় শক্ত হলো চোয়াল।অধিক ক্রোধে সারফরাজ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।এরপর বজ্র কন্ঠে বলে উঠলো
” আসছি।

সারফরাজ এর ড্রাগস কারখানার পরিত্যক্ত একটি কক্ষে পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে সারফরাজ এর একাউন্টেন্স ড্যানিয়েল কে।ভীত ড্যানিয়েল বাঁচার তাগিদে বারবার কাকুতি মিনতি করে যাচ্ছে।কিন্তু নিষ্ঠুর মানব ড্যাভিন কিছুঁই যেনো কানে শুনছে না।
ঘন্টা খানেক পাড় হতেই চোখে মুখে অসামান্য ক্রোধ ফুটিয়ে উপস্থিত হলো সারফরাজ।সারফরাজ কে দেখেই ড্যানিয়েল বলে উঠলো
“বস প্লিজ সেভ মি।হি ইজ অ্যা ডেভিল।আমাকে ফাঁসাতে ইচ্ছে করেই সে এমন নাটক সাজিয়েছে।প্লিজ ডোন্ট ট্রাস্ট হিম।

ড্যানিয়েল এর বাকি কথা গুলো আর শুনতে ইচ্ছে হলো না সারফরাজ এর।ড্যাভিন এর হাত থেকে লোহার রড খানা নিয়ে বেধড়ক আঘাত করলো ড্যানিয়েল এর শরীরে।কোন আঘাত কোথায় গিয়ে লাগলো তার খেয়াল পর্যন্ত রাখলো না সারফরাজ।মারের চোটে চিৎকার করে প্রাণ ভিক্ষার আর্জি জানালো ড্যানিয়েল।কিন্তু নিষ্ঠুর মানব সারফরাজ থামলো না খনকালের জন্য।ড্যানিয়েল কে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে করতে সারফরাজ যখন ক্লান্ত হলো তখন হাত থেকে খসে পড়লো রড খানা।ড্যানিয়েল এর সাদা শরীর ইতোমধ্যে রক্তে রঞ্জিত।সারফরাজ ড্যানিয়েল এর গলা টিপে ধরে হিসহিসিয়ে শুধালো
“আমার সর্বনাশ করার জন্য রুদ্র তোকে কতো টাকা দিয়েছে ড্যানিয়েল?

সারফরাজ এর প্রশ্নে ড্যানিয়েল এর জ্ঞান হারানোর উপক্রম হলো।তারমানে সারফরাজ তার পিঠ পিছে ছুড়ি মারার বিষয়ে সবটা জেনে গিয়েছে।ড্যানিয়েল তবুও সব কিছু চেপে গিয়ে ভয়ার্ত গলায় বললো
“কোথাও ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছে এখানে বস।রুদ্রের সাথে আমার কোন কথা হয়নি আপনার বিষয়ে।ত ত তাছাড়া রুদ্রকে আমি চিনিই না।
ড্যানিয়েল এর মুখের মিথ্যে শুনে সারফরাজ এর মাথা ধরে গেলো।ড্যাভিন এর থেকে নোট ট্যাব নিয়ে উল্টো করে ড্যানিয়েল এর চোখের সামনে মেলে ধরলো সে।

ত্রিশ সেকেন্ডের একটা ভিডিও চলছে তাতে।ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ড্যানিয়েল আর রুদ্ররাজ মুখোমুখি বসে ড্রিংক্স করছে সেই সাথে একটা ব্ল্যাংক চেক এগিয়ে দিচ্ছে রুদ্ররাজ।ড্যানিয়েল খালি চেক পেয়ে মস্ত খুশি।সেই খুশি আরো কয়েক ধাপ বাড়াতে রুদ্ররাজ আদেশ করলো
“Make sure he never breathes again . whatever it costs.
ভিডিও খানা দেখে গলবিল শুকিয়ে উঠলো ড্যানিয়েলের।তার চোখে মরন ভয় স্পষ্ট ফুটে উঠলো। নিজেঁকে নির্দোষ প্রমাণের আর কোনো সাফাই গাইলো না সে।কারন সবটাই এই মুহূর্তে অর্থ হীন।ড্যানিয়েল চোখ বুঝে বহু কষ্টে আওড়ালো

“কিল মি।
সারফরাজ বাঁকা ঠোঁটে হাসলো।এতো সহজেই ড্যানিয়েল কে সে মুক্তি দিবে না।নারকীয় সাজা ভোগ করিয়ে তবেই মুক্তি দেয়া হবে এই বিশ্বাস ঘাতক কে।
সারফরাজ ড্যাভিন এর পানে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বললো
“আই নো ইউ আর হার্টলেস।সো আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু স্যা এনিথিং মোর।

বলেই ড্যানিয়েল এর পানে একপলক ঘৃণিত নজর বুলিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সারফরাজ।সারফরাজ চলে যেতেই অদ্ভুত হাসলো ড্যাভিন।সেই হাসির শব্দে প্রাণ পাখি উড়ে গেলো ড্যানিয়েল এর।চোখের সামনে সাক্ষাৎ নরক দেখতে পেলো সে।মনে মনে জেসুস এর নাম উচ্চারণ করতে চাইলো।কিন্তু তার আগেই ভারী লোহার রড দিয়ে ড্যানিয়েল এর প্রশস্ত বুকে শক্ত বাড়ি বসালো ড্যাভিন।ড্যাভিনের শক্ত হাতের আঘাতে চিৎকার করে উঠলো ড্যানিয়েল।ড্যানিয়েল এর গগন বিদারী চিৎকার ড্যাভিন এর কানে অনন্য প্রশান্তি এনে দিলো।ড্যানিয়েল এর একেকটা চিৎকার ড্যাভিন এর কানে সুরেলা গান হয়ে বাজলো।ড্যাভিন উন্মাদ হয় উঠলো।তার মনে হলো ড্যানিয়েল এর আরো জোরে জোরে চিৎকার করা উচিত।তাই সে ড্যানিয়েল কে শুধালো
“অল্প অল্প করে তোমার গায়ের চামড়া যদি চাকু দিয়ে তুলে নেই তুমি কেমন বোধ করবে ড্যানিয়েল?

বিকেলের আগে আগে রূপকথার পুরো শরীর ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দিলো।জ্বর ছাড়তেই গায়ের সাদা ভারী ব্ল্যাংকেট জাহান্নাম ঠেকলো তার কাছে।দুর্বল পা দিয়ে সেই ব্ল্যাঙ্কেট সরিয়ে চারপাশে নজর বুলালো।হাতে লাগানো স্যালাইন এর সুই,আর বাহ্যিক পরিবেশ চোখে গুঁতো দিয়ে বুঝিয়ে দিলো এটা হসপিটাল।রূপকথার সরু গলা পিপাসায় খরায় ফেটে যাওয়া মাঠের ন্যয় চৌচির হলো।প্রচন্ড পানি পিপাসায় বুক ধরফড় করে উঠলো।চারপাশে চোখ বুলিয়ে পানি খুজলো।বেড সাইড টেবিলে ঝকঝক করছে পানির বোতল।রূপকথা উঠে বসে পানির বোতল হাতে নিতে চাইলো।কিন্তু তার আগেই মাথা ঘুরে উঠলো।রূপকথা ধপ করে বিছানায় পরে মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো।কিছুক্ষন ওভাবেই কাটানোর পর আবার উঠে বসলো।বেড ধরে ধরে কোনো মতে পানির বোতল টা নিতে চাইলো।এমন সময় কেবিনে প্রবেশ করলো একজন নার্স সহ ডক্টর।রূপকথা ডক্টর এর পানে নজর দিতেই ডক্টর চোখ নামিয়ে নিলো।রূপকথা বিষয়টা আমলে না নিয়ে পানি খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।নার্স দৌড়ে গিয়ে পানির বোতলের ক্যাপ খোলে বলে উঠলো

“নিন।
সুন্দরী বিদেশি নার্স এর হাত থেকে বোতল নিয়ে রূপকথা থ্যাঙ্কস জানালো।এরপর কিছুটা ইতস্তত করে শুধালো
“সারফরাজ!
নার্স কোনো প্রত্যুত্তর করলো না।রূপকথা ভাবলো হয়তো নার্স সারফরাজ কে চিনে না।এই দেশে সারফরাজ কোন নাম ব্যবহার করে চলা ফেরা করে সেটাও রূপকথার দুর্বল মস্তিষ্কে খেললো না।রূপকথা হাতের স্যালাইন এর পানে তাকিয়ে ইংরেজি তে জিজ্ঞেস করলো
“বাড়িতে কখন যেতে পারবো ডক্টর?
ডক্টর নিজের এপ্রোন এর পকেট থেকে হাত বের করে শক্ত গলায় বলে উঠলো
“আজই।

ডক্টর এর কন্ঠে চমকে উঠলো রূপকথা।বিস্ফারিত নজরে সামনে তাকাতেই গাঢ় নীল চোখ জোড়া দেখে চিৎকার করে উঠলো রূপকথা।
“প্লিজ হেল্প।সামবডি প্লিজ হেল্প মি।
বলেই ভয়ে কুঁকড়ে কেঁদে উঠলো।চিৎকার করে সারফরাজ কে ও ডাকলো।কিন্তু কোত্থাও নেই সারফরাজ।উপায়ন্তর না পেয়ে বিছানার বালিশ ছুড়ে মারলো রূপকথা।মেডিসিন এর বক্স ছুড়ে মেরে থামাতে চাইলো রুদ্রকে।কিন্তু শীর্ণ দুর্বল দেহ পরাজিত হলো রুদ্রের পেশীবহুল হাতের শক্তির কাছে ।রুদ্ররাজ রূপকথাকে শক্ত হাতে চেপে ধরে রূপকথার ঘাড়ের পেছনে ইনজেকশন পুশ করে নার্স কে আদেশ দিলো
“হুইল চেয়ারে বসিয়ে হসপিটাল এর পেছনের গেটে নিয়ে এসো,,কুইক।
বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো।যাবার আগে ডাস্ট বিনে ছুড়ে ফেললো গায়ের এপ্রোন আর হ্যান্ড গ্লাভস।মুখের মাস্ক টা আরেকটু ঠিক করে হাত ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে লিফট ধরে নেমে এলো নীচে।এরপর সোজা নিজের গাড়িতে।
মোটা টাকার বিনিময়ে নার্স হেলেন রূপকথাকে তুলে দিলো রুদ্রের গাড়িতে।অবচেতন রূপকথা ঠাহর পর্যন্ত করতে পারলো না তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।সে জ্ঞান হারিয়ে এলোমেলো হয়ে পড়ে রইলো গাড়ির ব্যক সিটে।

সন্ধ্যার পরপর সারফরাজ হাসপিটালে ফিরে এলো।এসেই রূপকথার অবজারভেশন কেবিনের সামনে পায়চারি করতে লাগলো।আশেপাশে কোনো নার্স বা ডক্টর কিছুই চোখে পড়লো না।এদিকে রূপকথার অবস্থা জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো সারফরাজ।অবজারভেশন কেবিনে যখন তখন প্রবেশ নিষেধ।তাই সারফরাজ মন চাওয়া সত্ত্বেও সেখানে যেতে পারলো না।আধ ঘন্টা পেরিয়ে যাবার পরেও যখন কাউকেই নজরে এলো না তখন রুলস ভঙ্গ করলো সারফরাজ।বৃহৎ দরজার পাল্লা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে অবজারভেশন কেবিনের সামনে এসে দাড়ালো।দরজা অর্ধেক খোলা।সারফরাজ দরজায় অল্প নক করে দরজা পুরোটা খুলতেই দৃষ্টি পলকহীন হলো সেই সাথে ধক করে উঠলো বুক।

বেডে রূপকথা নেই।পুরো কেবিন হুলুস্থুল এলোমেলো।স্যালাইন এর পাইপ জুড়ে রক্তের দাগ।বিছানা দলিত মথিত।ফ্লোর জুড়ে সুই,সিরিঞ্জ আর ওষধ ছিটিয়ে রয়েছে।
মনের মধ্যে ঝড় বইতে আরম্ভ করলো সারফরাজ এর।অজানা শঙ্কায় চোখ ফেটে জল এলো।তবুও নিজেকে যথেস্ট শক্ত রেখে ছুটলো রিশিপশনে।রিশিপশনে পুরো ঘটনা জানাতেই সকলের চোখ কপালে।রিশিপশন থেকে সারফরাজ কে জানানো হলো ডক্টর নেলসন রূপকথার ট্রিটমেন্ট করছিলেন।মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলো ডক্টরের সাথে।কিন্তু ফোন সুইচড অফ।সারফরাজ এর মনের ভয় এবার ক্রোধে রূপ নিলো।সিসি টিভি ফুটেজ চেক করার জন্য সারফরাজ তর্জন গর্জন শুরু করলো।এরই মধ্যে একজন ক্লিনার খবর নিয়ে এলো ডক্টর নেলসন চেতনা হীন হসপিটালের ওয়াশরুমে পরে রয়েছেন।খবর পাওয়া মাত্র দৌড়ে গিয়ে ডক্টর নেলসন কে তুলে এনে ইমার্জেন্সি বেডে দেয়া হলো।বিভিন্ন কসরতে জ্ঞান ফেরানো হতে না হতেই সারফরাজ এসে ডক্টর নেলসন এর কলার চেপে ধরে বজ্র কন্ঠে ধমকে উঠলো

“রূপকথা কোথায়
সারফরাজ এর চোট কুলাতে কিছুটা সময় লাগলো ডক্টর নেলসনের।তবুও ভদ্রলোক ভনভন মস্তিষ্কে কিছু মনে করার চেষ্টা করলো।এরপর বলে উঠলো
“একজন সুদর্শন যুবক আমার রুমে এসে আমাকে রূপকথার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জিগ্গেস করে।আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান তিনি একজন ডক্টর এবং রূপকথার ফিয়ন্সে।ভদ্রলোকের চোখ জোড়া দেখে আমার অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়।সে রূপকথার সাথে দেখা করতে চায়।আমি তাকে স্পষ্ট নিষেধ করি যে,পেশেন্ট যথেষ্ট অসুস্থ।সে কথা বলার অবস্থায় নেই।

তাছাড়া পেশেন্ট এর ক্লোজ রিলেটিভ ছাড়া অন্য কেউ এলাউড না।
কথাটা শুনে উনার চোখ জোড়া কেমন লাল হয়ে উঠে।উনি আলাপ শেষ করে আমার পানে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ায়।আমি ইতস্তত বোধ নিয়ে হাত বাড়াতেই উনি আমার কলারবোনে আঘাত করে ।মুহূর্তেই আমার মস্তিষ্কে সিজার অনুভুব করি আমি।এরপর আমার আর কিচ্ছুটি মনে নেই।আম রিয়েলি সরি।
সারফরাজ পুরো ঘটনা শুনে বুঝে গেলো কে ঘটিয়েছে এই দুঃসাহসী ঘটনা।বসে বসে আর গল্প শুনলো না সারফরাজ।চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ালো সে।এরপর দৌড়ে সিঁড়ি ধরে নেমে নিজের গাড়িতে উঠলো।গাড়ির টুলবক্সে গান আছে কি না চেক করে ছুটলো লসেঞ্জেলস এর অভিমুখে।

রূপকথার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে নিজেকে ছোট একটা বদ্ধ ঘরে আবিস্কার করলো।অসুস্থ শরীর আরো অসুস্থ হয়ে উঠলো সেই সাথে খিদেয় পেট গুলিয়ে বমি পেলো।বদ্ধ কক্ষের চারপাশে নজর বুলিয়ে উঠে দাঁড়ালো রূপকথা।প্রচন্ড পিপাসা আর ক্ষুধায় তার শরীর নেতিয়ে ঢলে পড়তে চাইছে।বদ্ধ দরজায় এগিয়ে এসে বার কয়েক চাপড় দিলো রূপকথা

“প্লিজ আমাকে যেতে দিন।আমাকে এই ঘর থেকে বের হতে দিন।আমাকে বাড়ি যেতে দিন।হ্যালো শুনছেন?
কথা গুলো বলতে বলতে দরজা ধরে কেঁদে উঠলো রূপকথা।নিজের মা বাবা আর সারফরাজ এর অসহায় মুখটা মনে পড়তেই রূপকথা দ্বিগুন কেঁদে উঠলো।এমন সময় কক্ষের তালা খোলার শব্দ পাওয়া গেলো।রূপকথা দরজা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো আগত মানুষটার।দরজা খুলে কীয়তখন বাদে কক্ষে প্রবেশ করলো রুদ্ররাজ।রুদ্রকে দেখেই রূপকথার চোখের জল থেমে গেলো।নিজেকে এই নোংরা লোকটার সামনে কিছুতেই দুর্বল দেখাতে চায় না রূপকথা।রূপকথাকে নিশ্চুপ দেখে প্রশস্ত হাসলো রুদ্র।এরপর বলে উঠলো
“বাহ !আমাকে দেখে তোমার একটুও ভয় লাগছে না দেখছি।দুদিন সারফরাজ এর সঙ্গ পেয়ে এতোটা সাহসী হয়ে গেলে?গ্রেট ডার্লিং, গ্রেট।তোমাকে এতোটা নির্ভীক আর সাহসী দেখে আমার জাস্ট প্রেম পাচ্ছে।ইচ্ছে করছে চুমু খেতে খেতে পাগল হয়ে যাই।
রূপকথা রুদ্রের পানে ঘৃণিত নজর বুলিয়ে বলে উঠলো

“একবার মার খেয়েও আপনার শিক্ষা হয়নি দেখছি।এতো তাড়াতাড়ি পৃথিবী ছাড়ার শখ?আর মুখের ভাষা এতো নোংরা কি করে হয় একটা মানুষের,?
রুদ্র তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নিজের সফেদ গাল অল্প চুলকালো।এরপর ঠোঁট উল্টে বললো
“কে বলেছে আমি মানুষ?
রূপকথা তাচ্ছিল্য হেসে বলে উঠলো

“ঠিকই।মানুষ রূপী জানোয়ার।আপনার মত জানোয়ার কে খুব শীঘ্রই শিকার করবে সারফরাজ।
“তোমার প্রেমিক আমার একটা লোম পর্যন্ত বাঁকাতে পারবে না বুঝলে?আর পৃথিবী আমি ছাড়ছি না।ছাড়বে সারফরাজ।এবং খুব শীঘ্রই।সারফরাজ কে দুনিয়া ছাড়া করে তোমাকে পুরোটাই লুটে নেবো আমি।সারফরাজ এর রাজ্য,রানী দুই’ই হবে আমার।আহ কি আনন্দদায়ক ই না হবে সারফরাজ এর নৃশংস কষ্টদায়ক মৃত্যুর দৃশ্য।ভেবেই আত্মতৃপ্তি পাচ্ছি।
রূপকথার চূড়ান্ত ঘৃণা জন্মালো এই নিকৃষ্ট মানুষটার প্রতি।সে রুদ্রের মুখে এক দলা থুথু ছুড়ে চিৎকার করে বলে উঠলো

চেকমেট পর্ব ৪৯

“আমাকে লুটার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নেও দেখিস না তুই।সারফরাজ তোর চোখ উপড়ে ফেলবে নয়তো ।
রূপকথার ঐদ্ধত্যে রুদ্রের নাকের পাতা ফুলে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।চোখ জোড়া অধিক লাল হলো অদমনীয় ক্রোধে।নিজেকে সামলাতে না পেরে সপাটে এক চড় বসালো রূপকথার ফর্সা গালে।চড়ের দাপটে রূপকথার গাল ফেটে রুদ্রের হাতের ছাপ উঠে গেলো।অসুস্থ শরীর এই ধাক্কা সামলাতে পারলো না।ছিটকে দেয়ালে বাড়ি খেয়ে কপাল ফেটে রক্ত ধারা গড়ালো রূপকথার।দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রূপকথা অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো
“সারফরাজ তোকে কুকুরের মতো পিটিয়ে মারবে।আর সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়।আমি তোর মৃত্যু দেখতে পাচ্ছি খুব সন্নিকটে।কারন তুই এবার সরাসরি সারফরাজ এর কলিজায় হাত দিয়েছিস।

চেকমেট পর্ব ৫১