তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪৩
নওরিন মুনতাহা হিয়া
অপরিচিত কণ্ঠে কথাটা শুনে অরণ্যর মুখে একটা সয়তানি হাসি ফুটে উঠে, যাক অনেকদিন পর এমন মিথ্যা নাটক থেকে বের হয়ে এসেছে। আড়চোখে একবার অরণ্য রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে, কোথাও ইনায়া আছে কি না। তবে ইনায়া এখন রান্না ঘরে রান্না করছে, আর আয়ান বিছানায় বসে খেলা করছে। তাদের রুমে আয়ানের জন্য অনেক খেলনা রেখেছে ইনায়া, যা অরণ্য আয়ানের হাত ধরিয়ে দেয় আর বলে –
“_____ আয়ান তুমি এখানে খেলো। তোমার মামার জুরুরি কথা আছে, সে একটু বেলকনিতে যাবে “।
_____” ওকে মামা.
° আয়ান সম্মতি দেয় অরণ্যকে, ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে যায় অরণ্য । তার হাতে থাকা ফোনে এখনো কল চালু রয়েছে, যার সাথে সে কথা বলছে সে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক রামিম। অরণ্যর সমস্ত পরিকল্পনার বিষয়ে রামিম যানে, আজ কোমায় থেকে ফিরে আসার খবর শুনে রামিম কল করছে। রামিম আবার বলে –
____ ‘” বস কোমায় থাকতে কেমন লাগে? আর আপনার পরিকল্পনা কিন্তু সার্থক হয়ে। তবে যায় বলেন বস ইনায়া ম্যাম কিন্তু সত্যি প্রচুর চালাক, যদি একটা ভুল হতো তবে সম্পূর্ণ খেলা আপনার বিপক্ষে চলে যেতো
° ফোন কানে রেখে অরণ্য শব্দ করে হেঁসে উঠে। এতো কাঁচা খেলোয়াড় অরণ্য রাজ চৌধুরী নয়, যে তার পরিকল্পনা এতো সহজে অন্য একজন ধরে ফেলবে।অরণ্য তার মুখে সয়তানি হাসি রেখে জবাব দেয় –
____ “- অরণ্য রাজ চৌধুরী এতো সস্তা পরিকল্পনা করে না। তবে তোকে এক্সিডেন্টটা একদম রিয়েল স্টিক করতে বলেছিলাম। তাই বলে কি তুই আমাকে কোমায় পাঠিয়ে দিবি, দুইবছর আমার জীবন থেকে চলে গেছে। যদি সত্যি মারা যেতাম তখন কি হতো?
অরণ্যর কথা শুনে রামিম বলে __
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
____ “- বস সব তো আপনার পরিকল্পনা অনুসারে করছি।আর কি করব বলুন পুলিশ, সাংবাদিক, সকলের যেনো সন্দেহ না হয় এর জন্যই তো এতটা কষ্ট করে সবকিছু সাজাতে হয়েছে। আর আপনার বউ সে সন্দেহ করে যদি সামান্য পরিমাণ ভুল হয়ে যেতে। তবেই সবর্নাশ —–.
____ “- বউটা আমার যথেষ্ট চালাক। তবে অরণ্য রাজ চৌধুরী অভিনয় এতোটা নিখুঁত করে করছে যে। বউ কেনো সম্পূর্ণ পরিবার বিশ্বাস করেছে। ইউ নো হেয়াট অভিনয়ের জন্য অরণ্য রাজ চৌধুরী সেরা ____ “।
____ “- অবশ্যই বস। তবে যায় বলেন বস, আপনার বুদ্ধির কাছে সয়তান বুদ্ধি ও হেরে যাবে। কি অসাধারণ পরিকল্পনা আর দারুণ অভিনয় করেছেন আপনি। গাড়ির দুর্ঘটনা নিজেই করিয়ে, সম্পূর্ণ দোষ আগন্তুক শএুর উপর দিয়েছেন। এমন জায়গায় এক্সিডেন্ট হয়েছে সেখান থেকে হাসপাতাল মাএ দশ মিনিটের দুরত্বে রয়েছে। যদি আপনি আঘাত পান, তবে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। আর এম্বুলেন্স আগে থেকেই রেডি করা হয়েছিলো, যার কারণে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছাতে পেরেছে ____.
_____” হুম যখন এক্সিডেন্ট হয়েছে তখন মাথায় অনেক আঘাত পেয়েছিলাম আমি। যদি বিদেশ থেকে আগে থেকেই ডক্টর নিয়ে না আসতাম, তবে কোমায় না সোজা উপরে চলে যেতাম ___.
____”- অবশ্যই বস রাত প্রায় দুইটার সময় কি ডক্টর পাওয়া যেতো হাসপাতালে। এর জন্যই আগে থেকেই বিদেশ থেকে ছয়জন ডক্টর নিয়ে আসা হয়েছে। যদি আপনার মাথায় বা শরীরে আঘাত লাগে, তবে তারা যেনো ঠিক করতে পারে _____ “।
° হাসপাতাল যেখানে অরণ্য এডমিট থেকেছে সেটা অরণ্য অনেক আগেই কিনে নিয়েছে। যার কারণে সেখানে থাকা সবকিছুর উপর তার নিয়ন্ত্রণ চলে। আদালতে ইনায়া যে প্রমাণ দিয়ে নিজেকে ফাঁসির রায় থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছে, সে সকল প্রমাণ রামিম অগোচরে থেকে ইনায়াকে দিয়েছে। যা সুস্থ থাকা অবস্থায় অরণ্য রেখে গিয়েছে, আর জর্জকে বিপুল পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়েছে যার কারণে সে কেস অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। এসএসে কোম্পানির সমস্ত টাকা এখন ইনায়ার একাউন্টে, যার পরিকল্পনা অরণ্য আগেই করে গেছে। রামিম শুধু অরণ্যর কথা অনুসারে কাজ করে গেছে, আর ইনায়ার আড়ালে থেকে তাকে সাহায্য করেছে।
° সব পরিকল্পনা এতো নিখুঁত করে সাজিয়ে রেখেছে অরণ্য। শুধু ইনায়া নয় প্রতিটা সদস্য তাকে বোকার মতো বিশ্বাস করেছে। এই গল্পে আসল ভিলেন অরণ্য, আবার সেই প্রধান নায়ক। গাড়ি দুর্ঘটনার ফলে ইনায়ার মায়া জন্মে গিয়েছে অরণ্যর প্রতি। রেহানা বেগম তার ছেলেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, সায়মা তার ভাইয়ের থেকে সকল দুরত্ব মিটিয়ে তার কাছে চলে এসেছে। মিলন চৌধুরী আর অরুণা বেগম ঠিক কেমন মানুষ তা অরণ্য যানতে পেরে গেছে। হাসপাতালে ইনায়ার কান্না করা, অরণ্যর জন্য ছটফট করা দেখে বুঝে গেছে ইনায়া অরণ্যকে ভালোবাসে।
° এসএস কোম্পানির সকল মিথ্যা মামলা থেকে ইনায়া মুক্তি পেয়ে গেছে, আর শহরের সকল সংবাদ মাধ্যমে অরণ্যর দুর্ঘটনা অনেক ভয়াবহ করে সম্রচার করা হয়েছে। যার ফলে জনগণ সহ সকলের তার প্রতি মায়া হয়েছে, আর এসএস কোম্পানির কাণ্ডে যারা ইনায়াকে ঘৃণা করত। স্বামী অসুস্থতায় ইনায়ার এমন অবস্থা দেখে তাদের মনে মায়া হয়েছে। সুতরাং সম্পূর্ণ পরিকল্পনা সফল, যাকে বলো হিট.
প্রায় দশ মিনিট বেলকনিতে অবস্থা করে অরণ্য, রামিমের সাথে তার অনেক আগেইকথা বলা শেষ হয় গেছে। হঠাৎ পিছন থেকে এক হাত আষ্টেপৃষ্টেজড়িয়ে ধরে অরণ্যকে। সমগ্র বুক জুড়ে হাতের বন্ধন ঘিরে রয়েছে, যা অনুভব হওয়া মাএই মৃদু হাসি ফুটে উঠে অরণ্যর মুখে। অল্প সময় সে প্রিয়তমার আলিঙ্গন উপভোগ করে। এরপর হাত ধরে তাকে সামনে নিজের কনছে নিয়ে আসে। অরণ্য বলে –
_____ “- কি ব্যাপার ইনায়া আজ স্বামীকে এতো ভালো বাসা দিচ্ছেন? কোথাও শএুর প্রেমে পড়ে যান নি তো?
____ “- শএুর প্রেমে তো অনেকদিন আগেই ধরে গেছি। নিজের সমস্ত নারী সত্তা দিয়ে তাকে স্বামী রূপে গ্রহণ করেছি ___.
বাহিরে থাকা উষ্ণ বাতাসে ইনায়ার কপালে থাকা চুল উড়ছে। যা অরণ্য তার আলতো হাতে কানের পিছনে গুঁজে দেয়। ইনায়া মিটমিট করে তাকিয়ে দেখে যাচ্ছে তার যত্ন করা স্বামী নামক পুরুষকে। এই অচেনা পুরুষকে সে বড্ড ভালোবাসে, যাকে ছাড়া বেঁচে থাকা দায়। ইনায়ার এমন চাহনি দেখে অরণ্য বলে ___
___ “- যদি স্বামীকে ভালোবাসেন তবে তার কাছে ধরা দেন। নিজেকে তার তাকে সমর্পণ করে দেন। একবার আপন করার সুযোগ দেন তাকে —.
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া লজ্জায় লাল হয়ে যায়। প্রিয়তমা স্ত্রী লাজুক গালে হাত রেখে তাকে আরেকটু কাছে নিয়ে আসে। ইনায়া মাথা নিচুঁ করে জবাব দেয় –
____ ” একবার সুস্থ হন এরপর সব হবে ___.
অরণ্য আগ্রহ প্রকাশ করে বলে –
___ ” সত্যি হবে __.
ইনায়া আবার মাথা নিচুঁ করে জবাব দেয় –
___”- হুম হবে ___.
লজ্জা মিশ্রিত মুখে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ইনায়াকে। অরণ্য মুগ্ধ হয়ে অল্প সময় তাকিয়ে থাকে। যেনো সামনে থাকা নারীর রূপে সে ঝলসে যাবে। অরণ্য আনমনে বলে –
___ ” অনেক সুন্দর লাগছে আপনাকে ইনায়া “।
____ ” সত্যি? —
__ “- হুম আমার মাম্মা অনেক বিউটিফুল “।
অরণ্য আর ইনায়ার কথা বলার মধ্যে আয়ান বলে উঠে শব্দটা। এরপর সে আসে ইনায়ার কাছে, সযত্নে আয়ানকে কোলে তুলে নেয় ইনায়া। অরণ্য তাদের কাণ্ড দেখে হেসে ফেলে এরপর বলে –
___ আয়ান বাবু শুধু কি তোমার মাম্মা বিউটিফুল? তোমার মামা বুঝি সুন্দর না?
আয়ান বাচ্চাদের মতো কণ্ঠে বলে উঠে –
___ ” হুম আমার মামা ও অনেক সুদর্শন “।
চৌধুরী বাড়ির সকল সদস্য আজ অরণ্যর বাড়িতে এসেছে। বসার ঘরে সকলে আড্ডা দিচ্ছে। রেহানা বেগম আর অরুণা বেগম রান্না ঘরের সব জিনিসপত্র নিয়ে আসছে। যদিও অরুণা বেগম আত্মীয় তবুও ওনি ঘরের কাজ করছেন। ইনায়া আর সায়মা অন্য সব আয়োজন করছে। ইভান, মিলন সাহেব, আর সায়মার স্বামী তারা একসাথে আড্ডা দিচ্ছে। অরণ্য উপর থেকে তাদের দেখে যাচ্ছে। আজ কতোদিন পর তার সপ্ন সত্যি হয়েছে, তার পরিবার আবার একসাথে হয়েছে। দুইবছর কোমায় থাকা সার্থক হয়েছে।
দুপুরে সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাত ছয়টার দিকে চৌধুরী বাড়ির প্রতৈক সদস্য বিদায় নেয়। সারাদিন সকল কাজ করে ইনায়া এখন বড্ড টার্য়াড। সে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। অরণ্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে ইনায়াকে তার কাছে ডাকে। এরপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। ইনায়া এখন ঘুমিয়ে রয়েছে আর অরণ্য তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রাতের আকাশে চাঁদ দেখায় ব্যস্ত ইভান। অফিসের কাজ থেকে অবসর নিয়েছে আজ সে। হঠাৎ ইভান অনুভব করে তার পাশে একজন নারী অবস্থান করছে। অপরিচিত নারীর শরীর থেকে আসা মিষ্টি সুভাস তার বড্ড পরিচিত। ইভান হাসি মুখে বলে –
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪২
___ ” প্রভা তুমি এতো রাতে ছাদে কেনো? ___
প্রভার শরীর অসুস্থ থাকার কারণে সে অরণ্যর বাড়িতে যাওয়া হয় নাই। প্রভা এক কাপ কফি ইভানের দিকে এগিয়ে দেয়। কফির বড্ড প্রয়োজন এখন ইভানের যা হয়তো প্রভা বুঝে গেছে। প্রভা হেঁসে বলে –
___ ” রাতের আকাশে চাঁদ দেখার জন্য এসেছি ___
__” ভীষণ একা একা লাগ ছিলো আমার। থেকে যাও তুমি __
___” সারাজীবন? ___
ইভান অবাক হয়ে বলে –
___ মানে? __
প্রভা বেখেয়ালি হয়ে বলে ___
___ ” সব কথা বলে না হৃদয় কিছু কথা বুঝে নিতে হয়. __