দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৪০ (২)

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৪০ (২)
আফরোজা আশা

বেলার সব অভিযোগ মনযোগ দিয়ে শুনলো দিগন্ত। নিজের উপরে রাগ উঠলো। পরক্ষনে আবার সব ভুলে ক্রন্দনরত বেলার ফোলা সুন্দর মুখশ্রী দেখে মাথা ঝিম ধরে গেল। কয়েকটা বড় শ্বাস টেনে নিজেকে সংযত করলো দিগন্ত। অতঃপর বেলার আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে আদুরে ভঙ্গিমায় বললো,
‘ বিশ্বাস কর, সোনা। সত্যিই ব্যস্ত ছিলাম। তোর জ্বর এসেছে এটাও জানি না আমি। ’
বেলা আটকা আটকা গলায় বললো, ‘ ন..না আপনি খ..খারপ। আ..আমি আর কথা বলব না। ’

দিগন্ত কি বলবে খুঁজে পেল না। বেলার কন্ঠস্বর,,মুখশ্রী দেখলেই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। হাত দিয়ে ঠোঁট ঘষে চতুর চোখজোড়া ঘুরিয়ে আশপাশের সব মানুষের অবস্থান মেপে নিল। তারপর মিনিটের ব্যবধানে বেলাকে টেনে এনে ওর জীপে বসিয়ে, চোখের পলকে জীপ ছেড়ে দিল দিগন্ত। কান্না থামিয়ে ভেজা পলক ঝাপটাতে ঝাপটাতে দিগন্তের মুখের দিকে চাইলো বেলা। প্রশ্ন করার ফুরসত নেই। এর মাঝেই হেঁচকি উঠে গিয়েছে ওর।
একটানে শহরের বাইরে চলে এলো ওরা। শেষবেলায় একটা নদীর সামনে এসে জীপ থামলো। পুরোটা রাস্তায় বেলা শুধু একবার জিজ্ঞেস করেছিল কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। উত্তর দেয়নি দিগন্ত। বেলাও আর জিজ্ঞেস করেনি। সীটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে নিরবে কেঁদেছে শুধু।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জীপ থেকে নেমে দাঁড়ালো দিগন্ত। বেলাকে নামতে বললো কিন্তু ও গাঁট হয়ে বসে রইলো। বার কয়েক বলার পরও নড়চড় নেই বেলার। বিরক্ত হলো দিগন্ত। চিরচিরে বিরক্ত নিয়ে বেলাকে টেনে-হিঁচড়ে নিচে নামালো। নাছোড়বান্দা বেলা মোচড়ামোচড়ি করে আবারো জীপে উঠতে নিলে দিগন্তের হাত ওকে আটকে দিল। আলগোছে শূন্যে তুলে নিয়ে জীপের সামনে এনে বসিয়ে দিল। দিগন্তের দুহাত বেলার দুপাশে ছড়িয়ে, ওর দিকে হালকা একটু ঝুঁকে বদ্ধ করলো বেলাকে। দুজনের মাঝে দূরত্ব অনেক।

দিগন্তের শক্ত,প্রসস্থ পুরুষালি বদন ঘিরে রেখেছে বেলাকে। ওর এতোটা কাছাকাছি থাকায় ছটফটে বেলা শান্ত হতে বাধ্য হলো। নড়চড়ার উপায় নেই কিন্তু ফোঁপাচ্ছে বেলা। ফোঁপাচ্ছে আর কান্নাভেজা লালভাব চোখজোড়া দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে আছে দিগন্তের দিকে। দিগন্ত শান্ত চোখে বেলার চাহনি দেখে ওর মুখের উপর ফুউ দিল। তাতেও পলক পড়লো না বেলার। অতঃপর বেলার কপালে একটা টোকা মেরে বললো,
‘ আমার আশেপাশে এলেই কেঁদে ভাসাস কেনো? বলেছি না, আমার সামনে কাঁদবি না। তুইও বেয়াদব, তোর কান্নাও বেয়াদব। আমাকে কু-মন্ত্রনা দেয়। আরেকবার চোখের পানি পড়লে তোর কপালে শনি আছে,বেলা পাটোয়ারী। ’
বেলার চোখে টলমলে পানি। শক্ত চোখে দিগন্তের দিকে তাকিয়েই ছিল। দিগন্তের কথা শুনে ঘন ঘন পলক ঝাপটালো। জোরে শ্বাস টেনে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো,পারলো না। আবারো ঠোঁট ভেঙে কেঁদে উঠলো। পরপরই দুহাত তুলে মাত্রাতিরিক্ত আক্রোশ নিয়ে, ঝুঁকে থাকা দিগন্তের চুল শক্তভাবে মুঠো করে ধরলো। জোরে টানা দিতে দিতে হিসহিসিয়ে বললো,

‘ বারবার বলেছি না আমার আপনাকে ভালো লাগে। আপনার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে, বুঝেন না? সবসময় আমার সাথে রাগ-ধমক কেনো? অন্যদের সাথে কত সুন্দর করে কথা বলেন আর আমার সাথে কথা বললেই আপনার দাম বেড়ে যায়। দিনে ফোন দিলেও আজেবাজে কথা বলে ধমকাবেন। রাতে ফোন দিলেও ব্যস্ততা দেখাবেন। কেনো? আমার বেলায় এতো ব্যস্ততা আসে কেনো আপনার? আমাকে কষ্ট দিতে এসব করেন? আমি কষ্ট পাই, কাঁদি তাও আপনাকে ভালো লাগে। আপনি খুব খারাপ লোক। ভালো লাগলেও আর কথা বলবো না আপনার সাথে। ’

এদিকে দাঁত খিঁচিয়ে নিয়েছে দিগন্ত। গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে বেলার ওর চুল টানছে। চুলে টান একটুকুও সহ্য করতে পারে না দিগন্ত। চোখমুখ কুঁচকে নিয়ে বেলার হাতের উপর হাত রেখে ব্যাথাতুর গলায় বললো,
‘ চুলের টান সহ্য হয় না। চুল ছাড়,বেলা। ব্যাথা লাগছে। ’
বেলা ছাড়লো না। বরং আরেকবার জোরে টান মেরে জেদী গলায় বলে উঠলো,
‘ আমারো সহ্য হয় না। মাইশা আপুকে আপনার সাথে একটুও সহ্য হয় না। আমিও ব্যাথা পাই। আপনাকে না কতবার বলেছি ওই মেয়েটার থেকে দূরে থাকবেন। শুনেছেন আমার কথা? শুনেননি। আমিও শুনবো না এখন। ’
দিগন্ত কোনোমতে বেলার হাত টেনেটুনে ছাড়ালো। তারপর ওর দুহাত একসাথে পেঁচিয়ে ধরে নিজের একহাতের মাঝে শক্ত করে ধরলো। আরেকহাত দিয়ে বেলার চোয়াল জোরে চেপে ধরে ঠান্ডা স্বরে বললো,

‘ জেদ কমা। সব জায়গায় মাইশাকে টেনে কথা বলবি না। ওকে নিয়ে তোর বেয়াদবি.. ’
আগুনে ঘি পড়লো এবার। মাইশাকে ভালো বলায় অন্তর বিষিয়ে উঠলো বেলার। হাত ছাড়াতে না পেরে দিগন্তের হাতে কামড় বসলা জোড়ালোভাবে। কথা সম্পূর্ণ করতে পারলো না দিগন্ত। বেলার ধারালো দাঁতের আঘাতে ওর হাত ছেড়ে দিল। ছাড়া পেয়ে দুহাত দিয়ে দিগন্তের বুকে ধাক্কা মেরে রাগে-ক্ষোভে চেঁচিয়ে উঠলো বেলা। দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললো,

‘ হ্যাঁ, আমিই বেয়াদব। আমি খারাপ,একদম ভালো মেয়ে না। কিন্তু ওই মাইশা! একটা রাক্ষসী; খুব খারাপ। বাজে মেয়ে, আমার দিগন্ত ভাইকে নিয়ে নিয়েছে। ছাড়বো না আমি। হাত ভেঙে দিবো। চুল ছিঁড়বো ওর,শয়তান! শাকচুন্নি মেয়ে। কেড়ে নিয়েছে আমার সবকিছু। চুন্নি কোথাকার.. ’
দিগন্ত হতবাকের ন্যায় ফুঁসতে থাকা বেলার দিকে তাকিয়ে আছে। মাত্রাতিরিক্ত হিংসায় হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়েছে বেলার। কি থেকে কি বলছে নিজেও জানে না। মুখে যা আসছে তাই বলে গালি দিচ্ছে মাইশাকে। দিগন্ত ওকে চুপ করাতে গেলে ধাক্কা মেরে ওকে সরিয়ে দিচ্ছে বেলা।

অবাকের চরমে দিগন্ত। বেলার শক্তির সাথে পারছে না ও। এতোটুকু একটা শরীরে কি শক্তি ভর করেছে। বেলা আবারো ধাক্কা মারতে নিবে এমন সময় খপ করে ওর হাত ধরে নিল দিগন্ত। দুহাত বেলার কোমড়ের পেছনে মুচড়ে ধরে ওর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে দিল। একটা ভারী শ্বাস ফেলে হালকা গলায় বলতে শুরু করলো,
‘ হুশসস! শান্ত হো। তোর সাথে কথা বলার জন্যই এদিকে এসেছি। ’
দিগন্তের গরম নিশ্বাস বেলার চোখেমুখে লাগতেই স্থির হয়ে গেল বেলা। কথা থেমে গেল। শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। দিগন্ত ঠান্ডা গলায় আবারো বললো,
‘ কেউ কিছু কেড়ে নেয়নি। সব তোর। ’
দিগন্তের কথা আর ভারী নিশ্বাসের কারণে সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো বেলার। একটা শুকনো ঢোক চেপে কাঁপাকাঁপা গলার প্রশ্ন করলো,
‘ আর আপনি? ’

কপাল ছেড়ে মাথা উঠিয়ে বেলার মুখের দিকে চাইলো দিগন্ত। কেঁদেকেটে চোখের পানি,নাকের পানি এক করেছে মেয়েটা। চোখ,গাল,নাকের ডগা লাল হয়ে ফুলে আছে। বেলার এই রূপ দেখলেই বেসামাল হয়ে যায় দিগন্ত। ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। বুকে পাথর রেখে নিজেকে আটকিয়ে রাখে দিগন্ত। কিন্তু কেন যেন আজ আর পারছে না।
বেলা এখনো উত্তরের আশায় ব্যাকুল হয়ে তাকিয়ে আছে দিগন্তের মুখপানে। সে চাহনি পুরোপুরি ঘায়েল করে ফেললো দিগন্তকে। সব বাঁধা-বিপত্তি খানিকের জন্য ভুলে বসলো ও। শক্ত খসখসে হাতের আজলায় বেলার নরম আদুরে মুখটা আলতোভাবে ধরলো। দুহাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে চোখ-গালের পানি মুছে দিল। ঘাড় হালকা ঝুঁকিয়ে বেলার কপালের মধ্যিখানে একটা উষ্ণ পরশ দিয়ে কোমল স্বরে স্বীকারোক্তি দিয়ে দিল,

‘ আমিও তোর। ’
দিগন্তের বলা কথাটা কর্ণকুহুরে পৌঁছাতেই থমকে গেল বেলা। পরপরই ঠোঁট উল্টে দিগন্তের গলা দুহাতে পেঁচিয়ে ধরলো। ঘাড়ে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদলো কিয়ৎক্ষন। কিছু বললো না দিগন্ত। নিরবে বেলার চুলের ভাজে হাত রেখে ওকে শান্ত করতে চাইলো। মন খুলে কাঁদার পর দিগন্তের শার্ট টেনে চোখমুখ মুছলো বেলা। তারপর ভারী নাক টেনে বললো,
‘ আমি জানতাম আমার মতো আপনারও আমাকে ভালো লাগে। শুধু শুধু মাঝখানে মাইশা রাক্ষসিটা এসে…’
আবার মাইশাকে টানে বাজেভাবে বলায় ধমকে উঠলো দিগন্ত,
‘ বেলায়ায়া! ’
ফোলা চোখমুখ একেবারে কুঁকচে নিল বেলা। অভিযোগের স্বরে বললো,
‘ এভাবে ডাকবেন না তো। এটা শুনতে ভালো লাগে না আমার। ’

ভ্রুঁ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো দিগন্ত,
‘ কিভাবে ডাকবো বলে দেন। ’
সময় ব্যয় না করে চট করে বললো বেলা, ‘ কিভাবে আবার! প্রেমিকরা যেভাবে প্রেমিকাকে ডাকে সেভাবে ডাকবে। ’
চোখ সরু করে দিগন্ত বললো,
‘ আমি কি তোর প্রেমিক লাগি? ’
‘ হুম ’ বলে উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সায় দিল বেলা। দিগন্ত ঠোঁট কামড়ে ধরে বেলার ভাবভঙ্গি দেখলো। তারপর ওর থেকে দূরে সরতে সরতে বললো,
‘ ছোট মানুষ প্রেমিক-প্রেমিকার কি বুঝিস তুই? যার মাধ্যে ভালোলাগা আর ভালোবাসার পাথক্য জানা নেই, সে এসেছে দিগন্ত তালুকদারের প্রেমিকা হতে। নাদানের ঘরের নাদান! ভালোবাসতে শেখ আগে তারপর এসব দাবি করিস। ’

গোল গোল চোখে কয়েক পলক ঝাপটে বেলা বললো,
‘ ভালো লাগে তো। সত্যিই খুব ভালো লাগে। কিন্তু ভালো কিভাবে বাসে দিগন্ত ভাই? এখন কি করবো? ’
দিগন্ত বাঁকা হাসলো। নদীর দিকে চোখ ফিরিয়ে করে বললো,
‘ বাড়ি গিয়ে তোর বাপকে বলবি আমি দিগন্ত তালুকদারকে বিয়ে করবো। ’
না বুঝেই দিগন্তের কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলে উঠলো বেলা,
‘ আচ্ছা। ’
‘ কি আচ্ছা? ’

‘ বাড়ি ফিরে আমার বাপকে বলবো আমি দিগন্ত তালুকদারকে বিয়ে করবো। ’
বলার কিছু সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বেলা কথাটা ঠিকভাবে ধরতে পারলো। তাতক্ষনাৎ চোখ বড় বড় করে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে হড়বড়িয়ে বললো,
‘ এহহ! কি বলতে বলছেন? আমি পারবো না। আব্বু মানবে না। না বাবা না! একদম পারবো না আমি। দিগন্ত ভাইই! আপনি বলিয়েন। আমি আছি তো। ’
ভ্রুঁ গুটিয়ে বেলার দিকে বাঁকাভাবে তাকালো দিগন্ত। বিড়বিড়িয়ে বললো,
‘ বেয়াদব। আমার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবে। ’

সন্ধ্যা নামার কিছু সময় পর পাটোয়ারী বাড়িতে হাজির হলো দিহান, জয়নাল আর জুনায়েদ তালুকদার। মিতালী আর বাণী ওবাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল মাত্র। তার আগেই ওরা এসেছে দেখে অবাক হলো। এদিকে,এতোদিন পর বোন জামাই আর মেয়ে জামাই এসেছে বলে ওদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হলো রহমান। কিন্তু কিছুক্ষন পর জুনায়েদের কথা শুনে রহমানের আন্তরিকতার রূপ পাল্টে গেল। হাসৌজ্জ্বল মুখে ঘোর ছায়া নামলো। জুনায়েদ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো,

‘ বড় মেয়ে তো আছেই সেখানে,সুখে আছে। আরেক মেয়েকে দিতে অসুবিধা হবার কথা না। ’
রহমান চোখমুখ শক্ত করে কিছুক্ষন বসে থাকলো। চোখ তুলে বাড়ির মেয়ে সদস্যদের ভেতরে যেতে বললো। মিতালী যেতে না চাইলেও, বড় ভাইয়ের আদেশ অমান্য করলো না। এদিকে বেলা জুনায়েদের কথা শুনেছে। মনে মনে ভীষণ খুশি, সাথে ভয় পাচ্ছে রহমান যদি নাকোচ করে দেয়। ড্রয়িং রুম ছেড়ে সবাই চলে গেল। ওদের সাথে দিহানও গেল।
ড্রয়িংরুমে এখন রহমান,রাসেল, জুনায়েদ আর জয়নাল এর উপস্থিতি। পরিবেশ নিরব। রহমান থমথমে গলায় বললো,

‘ মাফ করবেন তালুকদার সাহেব। আপনার চাওয়া পূরণ করা সম্ভব না। আমি আগেই একজনের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আবার,মেয়ে আমার ছোট। পড়াশোনাসহ পুরো ক্যারিয়ার গুছিয়ে দেওয়া বাকি। বড় দুইমেয়েকে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। ছোটজনকেও সেভাবেই গড়বো। আপনাদের এবারের আবদার আমি রাখতে পারছি না। ’
রহমানের ফিরিয়ে দেওয়াতে আঁতে ঘা লাগলো জুনায়েদের। তবুও নিজের লাভ-ক্ষতির হিসেব কোষে বেশ কিছুক্ষন জোরাজোরি করলো। বিশেষ লাভ হলো না। রহমান নিজের কথায় অটল। এক পর্যায়ে গিয়ে জুনায়েদ আর রহমানের কথা কাটাকাটির সৃষ্টি হলো। জুনায়েদ আর জয়নাল রহমানকে অনেক কড়া কথা শোনাতে শুরু করলো। মেয়ের বাবা হিসেবে এতোক্ষন রয়ে সয়ে ভদ্রভাবে কথা বললেও জুনায়েদের দাপুটে অপমানসূচক ভাবভঙ্গিমায় রেগে গেছে রহমান। দুপক্ষের জড়ালো আওয়াজে উপর থেকে বাকিরাও ছুটে এলো।
জুনায়েদ প্রচুর কথা শোনাচ্ছে রহমানকে। রহমান রাগে কাঁপছে। ভার গলায় জুনায়েদকে বলে উঠলো,

‘ আমি জহিরুল ভাইকে কথা দিয়ে দিয়েছি তার ভাতিজার সাথে বেলার বিয়ে দিবো। দুদিন বাদে সে বাড়িতে আমার আরেক মেয়ে যাবে। এখন আমার কিছু করার নেই। আপনাদের অন্যায় আবদার রাখা সম্ভব না। তাছাড়া আপনাদের ছেলে বেপরোয়া,ছন্নছাড়া। এরকম ছেলের হাতে আমি মেয়ে দিবো না। যে ছেলেকে আমি বেলার জন্য বেছেছি সে ওয়েল এডুকেটেড,প্রফেশনাল। আপনার ছেলের মতো বেকার নয়। অযথা কথা বাড়িয়ে আমাদের ভালো সম্পর্ক নষ্ট করছেন আপনি। ’

জুনায়েদ চুপ করে গিয়েছে। রহমানের মুখে ওপর নাকোচ করায় রাগে চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। রহমানের সব কথা শুনে জয়নাল এবার কথা বাড়ানোর সুযোগ পেল। ত্যাড়ছা ভাবে বললো,
‘ ভুলে যাবেন না রহমান ভাই আপনার বাড়ির দুই মেয়ে আমাদের বাড়িতে থাকে। বেশ তবে মিতালী আর বাণীকেও রেখে দেন আপনার কাছে। যতদিন না আমাদের প্রস্তাব মেনে নিচ্ছেন ততদিন বোন আর মেয়েকে নিজের কাছেই রাখেন। প্রয়োজন পড়লে আমি আমার ছেলেকে আবার বিয়ে দিবো। ’

জুনায়েদ বিস্তর হেসে ভাইয়ের দিকে তাকালো। এদিকে রহমানের মুখে চুপসে গেল। মেয়ে,বোনের জন্য বিপাকে পড়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো সে। জুনায়েদ আর জয়নাল উঠে দাঁড়ালো দিহানকে কড়া গলায় বললো ওদের সাথে যেতে। দিহান মায়ের দিকে তাকিয়ে কাঁচুমাচু করছে। বাণীকে ছেড়ে ও যাবে না। জয়নাল হুংকার ছুড়লো দিহানের উপর। দিহান গাঁইগুঁই করে বাপ-চাচার পাশে এসে দাঁড়ালো।

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৪০

মিতালী রাগী চোখে জয়নালের দিকে তাকিয়ে আছে। বউয়ের নজর একপলক দেখে চোখ সরিয়ে নিল জয়নাল। পরে সামলাবে মিতালীকে। বাণী কাঁদছে। পরিবেশ পরিস্থিতি গুমোট। জুনায়েদরা হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে সময় দিয়ে গেল সিদ্ধান্ত বদলানোর। সাথে হুমকিস্বরূপ ছেলে আর ভাইয়ের নতুন করে বিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে গেল।

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৪১