একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৯
Mousumi Akter
ছোঁয়া রেস্টুরেন্ট থেকে খানিকটা দূরে একটি ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কি যেন বুঝাচ্ছে ছেলেটাকে। সারাহ উঁকি মেরে দেখল ছোঁয়া তার দেবর ওশানের সাথে কথা বলছে। কি আশ্চর্যজনক ব্যাপার! ছোঁয়া ওশানের সাথে কেন কথা বলছে? ছোঁয়া কি ওশান কে চিনে? সারাহ’র চোখ দু’টো কপালে উঠল। দুনিয়াতে এত মানুষ থাকতে ওশান কেন? ওশানের সাথে ছোঁয়া কি বলছে। এত লম্পট ধরণের ছেলের সাথে ছোঁয়ার কীসের কথা? কিছুক্ষণ পরে তন্ময় উঠে এলো। সারাহ’র পাশে দাঁড়িয়ে খেয়াল করল, ছোঁয়া একটি ছেলের সাথে কথা বলছে। ছেলেটিকে দেখে তন্ময় অবাক হল, ভ্রু যুগল সুঁচালো করে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে রইলো।
এই ছেলেটি তো গতকাল তাদের আশেপাশে ঘুরছিলো। ছেলেটিকে দেখে বেশ সন্দেহজনক লাগে। মনে হয়, নেশাখোর বা গাজা খোর কিন্তু সে তাদের ফলো করছে কেন গতকাল থেকে। অনেকবার তন্ময় খেয়াল করেছে ছেলেটি সব সময় তাদের আশে পাশেই ছিলো। ছোঁয়া কি ছেলেটিকে কি কোনভাবে চিনে নাকি? ছেলেটি কেন ওদের ফলো করছে? ছোঁয়ার বাবা কি কোনভাবে ছেলেটিকে পাঠিয়েছে? তাই যদি হবে তাহলে ফোন কল এলে ছোঁয়া কেন উঠে গেল? ওই ছেলেটির সাথেই বা কেন কথা বলছে? যেন মনে হচ্ছে ছেলেটিকে ছোঁয়া আগেই চিনে। কাহিনী কী? ছেলেটিকে কি ছোঁয়ার বাবা কোনো ক্ষতি করার জন্য লাগিয়ে দিয়েছে। তন্ময়ের মাথা কাজ করছে না। নানা রকম দুঃচিন্তা ঘিরে ধরেছে তার মস্তিষ্কে। তবে এবার যা কিছুই হয়ে যাক না কেন সে ছোঁয়াকে হারাতে দিবেনা। নিজের করে ধরে রাখবে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সারাহ তন্ময়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু পৃথিবীর কোনো হুঁশ জ্ঞাণ তার নেই। সারাহ’র চোখ জোড়ায় দুনিয়ার কৌতুহল। তার শরীরের মাঝে অদ্ভুত একটা কম্পন হচ্ছে। বুকের মাঝে হাতুড়ি পেটানোর ন্যায় পেটাচ্ছে।
তন্ময় খেয়াল করলো অবাক করা চোখে সারাহ ওই ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে। গভীর ধ্যানে মগ্ন সে। চোখের পলক পড়ছে না। তন্ময় সারাহ’র দিকে তাকিয়ে একটা তুডি বাজিয়ে বলল,
“কোথায় হারিয়ে গিয়েছিস? কার কথা ভাবছিস?”
তন্ময়ের কথায় সারাহ’র ধ্যান ভাঙল। তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” যার সাথে ছোঁয়া কথা বলছে তাকে চিনিস?”
তন্ময় বলল,
“গতকাল ছেলেটা আমাদের খুব ফলো করছিলো। আমাদের আশেপাশে ঘুরছিলো। কিন্তু কেন সেটা জানিনা?”
সারাহ বেশ চিন্তিত কণ্ঠে বলল,
” তাহলে ছোঁয়া কথা বলছে কেন?”
তন্ময় বলল,
” সেটাই বুঝছি না।”
সারাহ বলল,
“তুই তুই কি কিছু জানিস ছেলেটার সম্পর্কে? সে কি কোনোভাবে ছোঁয়ার পরিচিত? ”
তন্ময় বলল,
“না তো। যখন ছেলেটা আমাদের আশেপাশে ঘুরছিলো তখন ছোঁয়া ছেলেটিকে ইগনোর করছিলো। কিন্তু ছেলেটা খুব সন্দেহজনক ছিলো। কি যেন একটা গড়মিল লাগছে।”
সারাহ বলল,
” খুব চিন্তা হচ্ছে। ছেলেটিকে দেখেই ফালতু লাগছে। ছোঁয়া কেন কথা বলছে?”
সারাহ’র চেহারায় দুঃশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। বেশ বিচলিত দেখাচ্ছে তাকে। গভীর দুঃচিন্তাগ্রস্ত। ছোঁয়া ছেলেটির সঙ্গে কথা বলছে তা নিয়ে যতটুকু চিন্তা তন্ময়ের করার কথা তার চেয়ে হাজারগুন চিন্তা সারাহ করছে। সারাহকে ভীষণ অস্থির দেখাচ্ছে। ভীষণ উদিগ্ন হয়ে আছে। চেহারায় অস্থিরতা। এই চিন্তার কারণ বুঝতে পারছে না তন্ময়। সে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে সারাহ’র দিকে। সারাহ কেন এত চিন্তিত? চিন্তা করলে সে করবে, সারাহ কেন এত চিন্তা করছে? তন্ময় সারাহর বিচলিত চেহারা দেখে বলল,
” সারাহ এ্যানি প্রব্লেম?ছেলেটাকে চিনিস? এত দুঃশ্চিন্তায় কেন তুই?”
সারাহ অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি দিয়ে বলল,
“না চিনি না। ছোঁয়াকে ডাক দে। ”
এরই মাঝে ছোঁয়া পিছন ফিরে তাকালো। তন্ময়কে দেখে বেশ ঘাবড়ে গেল ছোঁয়া। ছেলেটি ও ওখান থেকে চলে গেলো। ছোঁয়া আসতেই সারাহ প্রশ্ন করল,
“সারাহ এটা কে? চিনিস তুই?”
ছোঁয়া বলল,
“চিনি না। কাল থেকে পিছ পিছ ঘুরঘুর করছে। বারবার বিরক্ত করছিলো। তাই ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সমস্যা কি? আমাদের পেছনে ঘুরছে কেন? ছেলেটি বলল,
আমাকে নাকি ওর চেনা চেনা লাগছে তাই পিছ পিছ ঘুরছে। জিজ্ঞেস করল, আমার বাড়ি বরিশাল কিনা? বললাম, না বাড়ি যশোর। ছেলেটি বলল, পরিচিত লাগছিলো আপনাকে তাই ঘুরছিলাম। পরে আমি বললাম না আমি আপনার পরিচিত না। একটা থ্রেট দিয়ে দিলাম আর বললাম, আমার আশপাশে ঘুরলে পুলিশে দিয়ে দিবো।”
সারাহ চিন্তিত মুখে বলল,
” ওহ!”
ছোঁয়া বলল,
” আচ্ছা তুই ছেলেটিকে নিয়ে কেন এত টেনশন করছিস?”
” তুই যদি আবার আমার বন্ধুকে ঠকাস. আমার তন্ময়কে নিয়ে চিন্তা, তোকে নিয়ে নয়।”
ছোঁয়া বলল ,
“আমি তোদের সাথে অকারণ থাকি। আমাকে কেউ ভালবাসেনা। সব ভালবাসা তন্ময়ের জন্য।”
“তোকে তন্ময় যতটা ভালবাসে, সবাই মিলেও ভালবাসতে পারব না।”
তন্ময় বলল,
” এজন্য আমি সব সময় সারাহ কে সাপোর্ট করি। আমার হয়ে কথা বলার জন্য সারাহ আছে। ”
ওরা সবাই এবার রেস্টুরেন্টে বসল। সবাই শুটকি ভর্তা আর সামুদ্রিক মাছ অর্ডার করল। এরই মাঝে সারাহ ওর পায়ের উপর ভারী কিছু অনুভব করল। কারো পা সারাহ’র পায়ের ওপর। সারাহ টেবিলের নিচে উঁকি মেরে দেখলো, কারো পা সারাহ এর পায়ের উপর। সারাহ সাথে সাথে টেবিলের নিচে মাথা ঢুকালো। দেখল মৃন্ময় এর পা। পা ধরে খুব জোরে চিমটি কেটে বলল,
” চোর ধরেছি।”
মৃন্ময় বলল,
” ওরে বাপরে। আমার পায়ে মনে হয় সা* পে কা-ম-ড় দিয়েছে। ”
দ্বীপ, তন্ময়, ছোঁয়া সবাই উঁকি মারলো।
দ্বীপ বলল,
” সারাহ তুই ওর পায়ে খামচি মেরেছিস কেন? সদ্য বিবাহিত ছেলেটা ল্যাংড়া হয়ে যাবে। তখন ওর বউকে কে দেখবে। ছাড় ছাড়। ”
সারাহ বলল,
“ও তরীকে ভেবে ওর হাতির মত পা আমার পায়ের উপর তুলে দিয়েছে, কত বড় অসভ্য বেয়াদব। এত বড় বেয়াদব দুনিয়ায় পাওয়া পাওয়া যাবে না। বউ এর ঠ্যাং এর উপর ঠ্যাং দিতে পারিস নি এখন রেস্টুরেন্টে এসে অসভ্যতা করছিস।”
মৃন্ময় বলল,
” এসব রোমান্স তুই বুঝবি না। তোর বিয়ে হয়েছে একটা বুড়ো মানুষের সাথে তুই এসব কি বুঝবি। ”
সারাহ বলল,
“খবরদার বুড়ো বলবি না।”
” আমি বুড়ো বলছি কোথায়? তুইতো সারাজীবন বলে আসিস বুড়ো।”
” আরে আমি বলি বলি তাই বলে তোরা বলবি? আমি ছেড়ে দিবোনা মোটেও।”
হাসি ঠাট্টা করতে করতে ওদের খাওয়া শেষ হল। খাওয়া শেষ হলে সমুদ্রের পানিতে গেল গোসলের উদ্দেশ্য৷ পানিতে ভিজবে, ছবি তুলবে, আনন্দে হৈ হুল্লোড় করবে৷ আড্ডা দিতে দিতে ওরা সমুদ্রে চলে গেল। কিছুক্ষণ সমুদ্রে দৌঁড় ঝাপের পর তন্ময় আর ছোঁয়া হারিয়ে গেল কোথায় যেন। দ্বীপ বলল,
” কাহিনী কী ভাই? তন্ময়ের বুকে সমুদ্রের চেয়েও প্রেম উথাল পাথাল করছে। হুট হাট করে হারিয়ে যাচ্ছে ছোঁয়াকে নিয়ে। ”
সারাহ বলল,
” আগামিকাল সকালে চলে যাবে। এত টাইম পাবে কই আর ঘুরাঘুরির। একটু ঘুরছে ঘুরুক না। যশোর গিয়ে তো বিয়ে শাদী করে সংসার শুরু করবে। আর ঘোরাঘুরি হবে না। ”
মৃন্ময় বলল,
” আমার বাপ আর ছোঁয়ার বাপ হেব্বি ভিলেন ভাই। এই ছোঁয়ার বাপ কি যে ক্যাচাল লাগাবে সেই নিয়ে চিন্তায় আছি। ”
দ্বীপ বলল,
” ক্যাচাল লাগালে কি হবে। তোর মত আমরা বুক পেতে দাঁড়াবো। ”
এরই মাঝে বোট এসে বলল,
” সমুদ্রের মাঝে যাইবেন? ছয়জন হয়েছে আর চারজন লাগবে।”
দ্বীপ বলল,
” যাবো চলেন।”
সারাহ বোটে উঠেই বলল,
” এ ভাই আমার ভ-য় লাগে।”
দ্বীপ বলল,
” তোর ও ভ-য় আছে।”
বলেই ওরা চারজন বোটে উঠল। হঠাৎ তরী কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করছে। মুখে কেমন যন্ত্রণার ছাপ। মৃন্ময় মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
” কি হয়েছে?”
তরী কিছু লুকাচ্ছে। বলতে পারছেনা। কিন্তু পেটে হাত দিয়ে রেখেছে। মৃন্ময় তরীর পেটের দিকে তাকিয়ে বলল,
” পেটে কিছু হয়েছে?”
তরী অসহায় মুখে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” পেটে খুব ব্যাথা। ”
” দাঁড়াও নেমে গিয়ে ব্যাথার ওষুধ কিনে দিবো।”
তরী মাথা নিচু করে বলল,
” অন্য সমস্যা।”
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৮
মৃন্ময় বুঝল না। না বুঝে প্রশ্ন করল,
” কি সমস্যা?”
তরী মুখ ভার করে বলল,
” কিছুনা।”
