উত্তল তরঙ্গ পর্ব ২২

উত্তল তরঙ্গ পর্ব ২২
দিশা মনি

নিয়ার কথা শুনে আহির অবাক চোখে তার দিকে তাকায় ছোট্ট একটা মেয়ে তার মুখে কি সুন্দর কথা। অথচ তার মেয়ে আহিরার ব্যবহার কতটা বাজে। নিয়া এরপর আহিরের দিকে একটা চকলেট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“যদি তোমার মন খারাপ থাকে তাহলে এই চকলেট টা খেয়ে নিও আঙ্কেল। মনটা একদম ভালো হয়ে যাবে।”
আহির জিজ্ঞেস করে,

“তুমি কিভাবে বুঝলে আমার মন খারাপ?”
“জানি না কিন্তু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে কেন জানি না আমার বারবার মনে হচ্ছে তুমি কোন কারণ নিয়ে মন খারাপ করে আছ।”
আহিরের নিয়ার প্রতি টানটা আরো গভীর হয়৷ সে বুঝতে পারে না কেন এভাবে একটা অচেনা মেয়ের প্রতি তার এতোটা টান অনুভব হচ্ছে। আহিরের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে নিয়ার পাশে এসে দাঁড়ায় তাজিব। সে এসেই নিয়াকে বলে,
“এখানে কি করছ নিয়া? চলো আমার সাথে বাসায় যাবার সময় হয়ে গেছে।”
“আচ্ছা, ভাইয়া। আঙ্কেল, আপনি ভালো থাকবেন।”
বলেই নিয়া তাজিবের সাথে চলে যায়। আহির নিয়ার যাওয়ার পানেই তাকিয়ে থাকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আহিরা, মুমিনুল পাটোয়ারী সহ আহির চলে এসেছে ঢাকায়। এখন থেকে তারা এখানেই থাকবে। নাতাশাও তাদের সাথে দেখা করতে এসেছে। আহির আহিরাকে জিজ্ঞেস করে,
“আমাদের নতুন বাসা তোমার পছন্দ হয়েছে তো প্রিন্সেস?”
“হুম, নট ব্যাড। বাট, আমি আরো ভালো কিছু আশা করেছিলাম।”
নাতাশা বিড়বিড় করে বলে,
“উম..তেজ দেখে বাঁচি না। তোকেও যদি আহির তোর মা আর অন্য একটা বোনের সাথে ঘাড়ধাক্কা করে জন্মের পরই বের করে দিত তাহলে এসব ঢং বেরিয়ে যেত।”
মুমিনুল পাটোয়ারী বলেন,

“বেশ, এখন তাহলে আমরা একটু বিশ্রাম নেই। এত ধকল করে এলাম।”
“জ্বি।”
বলেই আহির আহিরাকে কোলে নিয়ে বলে,
“চলো আমি আমার প্রিন্সেসকে তার রুমে নিয়ে যাই।”
আহিরা সেরকম কোন আগ্রহ দেখায় না। আহির চুপচাপ আহিরাকে তার রুমে নিয়ে যায়৷ আহির রুমে পৌঁছে দিয়ে আহিরাকে বলে,
“এখন একটু ঘুমিয়ে নাও।”
“নো, আমাকে ফোনটা দাও তো পাপা। আমি একটু কার্টুন দেখব।”
“ঠিক আছে, এই নাও তোমার ফোন। কাল সকাল সকাল নতুন স্কুলে যাবে। তাই বেশি রাত অব্দি ফোন চালিও না, কেমন?”
“হুম, জানি জানি। আমাকে এত জ্ঞান দিতে হবে না। আমি তো আর নাদান বাচ্চা নই। আমি সব জানি। আমি হলাম স্মার্ট বাচ্চা।”
আহির নিজের মেয়ের মুখে এমন কড়া শব্দ শুনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। না চাইতেও তার মনে পড়ে নিয়ার কথা, তার মিষ্টি ব্যবহারের কথা।

নিয়া স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। নেহা তাকে তৈরি করে দিচ্ছে। সে নিজেই নিয়াকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসবে। নিয়াকে রেডি করিয়ে দিয়ে নেহা বলে,
“শোনো, স্কুলে একদম ভালো মেয়ে থাকবে যেমন সব সময় থাকবে। আর টিফিন টাইমে কিন্তু বাইরের কোন খাবার খাবে না। তোমাকে আমি যেই খাবার প্যাকিং করে দিয়েছি, সেটাই খাবে। বুঝতে পারলে?”
নিয়া মাথা নাড়ায়। নেহা নিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“গুড গার্ল। এখন প্রস্তুত হও স্কুলে যাওয়ার জন্য।”
নেহা এরপর নিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য।
নিয়াকে সিএনজি করে স্কুলের সামনে নামিয়ে দিয়ে নেহা আবার চলে যায় তার অফিসের দিকে। নিয়া আপন মনে ক্লাসের দিকে চলে যায়। কিছু সময় পর একটা বড় মার্সিডিজ গাড়ি এসে থামে স্কুলের সামনে। সেই গাড়ি থেকে নামে আহির। অতঃপর আহিরাকেও কোলে করে গাড়ি থেকে নামায়। আহিরা সামনে দিকে তাকিয়ে ছিল। আহির আহিরাকে বলে,

“এই হলো তোমার নিউ স্কুল।”
আহিরা বলে,
“বাহ, স্কুলটা ভালোই আছে। ৮ আউট অফ ১০।”
“চলো তোমাকে আমি তোমার ক্লাসে পৌঁছে দিয়ে আছি।”
“ওকে কুইক।”
“ক্লাসে কেউ যদি তোমায় বিরক্ত করে আমায় বলবে।”
“কার এমন সাহস আছে যে আহিরা পাটোয়ারীকে বিরক্ত করবে? যদি কেউ করেও তাকে সামলানোর জন্য আমি একাই যথেষ্ট।”
বলেই আহিরা ভাব নিয়ে তাকায়। অতঃপর আহির তাকে ক্লাসে পৌঁছে দেয়। আহিরা একদম সামনে একটা ফাকা সিট দেখে বসে পড়ে।

নেহা অফিসের সব কাজ শেষে বের হতে নেবে এমন সময় হঠাৎ করে শাহরিয়ার কায়সার তার পথ আটকে দাঁড়ায়। নেহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে স্যার?”
“কোথায় যাচ্ছ তুমি?”
“আমার সব কাজ কমপ্লিট, এখন তো লাঞ্চ ব্রেক তাই একটু বাইরে যাচ্ছি।”
“যদি লাঞ্চ করতেই হয় তাহলে এখানে বসেই করো কারণ এখন অফিসে লাঞ্চ ব্রেক এক ঘন্টা থেকে কমিয়ে ৩০ মিনিট করা হয়েছে।”
“মানে? কি বলছেন এসব।”
“যা সত্য তাই বলছি।”
“এটা তো একদম ঠিক না। আমাকে এখন আমার মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে।”
“দেখো, এই অফিস আমার। তাই এখানে শুধু আমার নিয়ম চলবে। তুমি আমাকে প্রশ্ন করার কেউ নও। এখানে জব করতে হলে অফিসের নিয়ম মেনে করতে হবে। তোমার একার জন্য তো নিয়ম বদলাবে না।”
নেহা বলে,
“আমাকে নিজের মেয়েকে নিতে যেতেই হবে।”
“বেশ, যেখানে খুশি যাও। কিন্তু ৩০ মিনিটের মধ্যে যদি না ফেরো দেন..বুঝতেই পারছ কি হবে।”
নেহা আর বেশি কিছু না ভেবে বেরিয়ে যায়।

আহিরা স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আহির এখনো তাকে নিতে আসেনি। এতে আহিরার ভীষণ বিরক্ত ফিল হচ্ছে। নিয়া ঠিক তার পাশেই দাঁড়িয়ে। আহিরা তার অহংকারী স্বভাবের জন্য প্রথম দিন কারো সাথেই বন্ধুত্ব বানায় নি। চুপচাপই ছিল। আহিরা নিজের স্মার্টওয়াচের দিকে তাকিয়ে বলে,
“পাপা কখন আসবে,,,ধুর ভালো লাগে না।”
এমন সময় আহিরা দেখতে পায় তাদের স্কুলের সামনেই একটা বড় ফাস্টফুডের দোকান আছে। তবে সেটা রাস্তার বিপরীত পাশে। আহিরার হাতে অলটাইম কিছু টাকা থাকেই। তাই সে ভাবে রাস্তা পার হয়ে ওদিকে গিয়ে ফাস্টফুড কিনবে। আহিরা রাস্তার দিকে পা বাড়াতে নেবে এমন সময় নিয়া এসে তাকে আটকে বলে,
“তুমি নতুন মেয়েটা না? কোথায় যাচ্ছ? আমার আম্মু বলে এভাবে রাস্তা পার হওয়া ঠিক নয়।”
আহিরা নিয়ার পা থেকে মাথা সম্পূর্ণ ভালো ভাবে দেখে নেয়। আজ প্রথমবার দুই বোন একে অপরের মুখোমুখি হলো। অথচ কেউই একে অপরের পরিচয় জানে না। আহিরা একটা ঝটকা দিয়ে নিয়ার হাতটা নিজের থেকে সরিয়ে নিয়ে বলে,

“ডোন্ট ডেয়ার টু গিভ মি এডভাইস। আমি আহিরা, আমার কাছে এসব রাস্তা পার হওয়া কোন ব্যাপার না।”
বলেই আহিরা এগিয়ে যেতে থাকে। অর্ধেক রাস্তা সে বেশ ভালো ভাবেই পার হয়ে নেয়। নিয়া দুশ্চিন্তার সাথে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আহিরা একবার নিয়ার দিকে তাকায় অবজ্ঞার চোখে। যেন বুঝিয়ে দেয়, দেখো আমি পারি।
এমন সময় হঠাৎ সামনে তাকাতেই সে খেয়াল করে তার দিকে একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে। আহিরা এবার ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। সে ভয়ে নিজের দুই চোখ বন্ধ করে ন্য। গাড়িটা তাকে ধাক্কা দিতেই যাবে এমন সময় হঠাৎ করে নেহা এসে আহিরাকে গাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে আনে।
আহিরা ধীরে ধীরে নিজের দুই চোখ খুলে নেহাকে দেখতে পায়। নেহা ভীষণ দুশ্চিন্তার সাথে আহিরার গায়ে হাত বুলিয়ে বলে,

উত্তল তরঙ্গ পর্ব ২১

“তুমি ঠিক আছো তো বাচ্চা? তোমার কিছু হয় নি তো? কোথাও লাগে নি তো?”
আহিরা অবাক চোখে নেহার দিকে তাকিয়ে থাকে। নেহাও আহিরার দিকে তাকিয়ে যেন অদ্ভুত এক টান অনুভব করে!

উত্তল তরঙ্গ পর্ব ২৩