তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪৮

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪৮
নওরিন মুনতাহা হিয়া

রেস্টুরেন্ট থেকে খাবারের অর্ডারের অর্ডার করে ইভান। ইনায়া অনেক সময় আগে খাবার অর্ডার করে ছিলো, যার ফলে ওর খাবার এখন রেডি হয়ে গেছে। ইভান ইনায়াকে ডাকার জন্য সমুদ্রর কাছে যায়, তবে দূর দুরন্ত পর্য়ন্ত ইনায়াকে না দেখে অবাক হয়ে যায়। প্রায় পাঁচ মিনিট আগে এখানে সমুদ্রর পানির শব্দ জলচ্ছাসের সাথে খেলা করছিলো হঠাৎ কোথায় চলে গেলো। খাবার অর্ডার করেছে সেটা না নিয়ে রির্সোটে ফিরে যাওয়ার কথা না, কেনো যানি ইভানের মনে সন্দেহ হয়। সমুদ্রর আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় সে ইনায়াকে খুঁজতে থাকে,তবে কোথাও ইনায়ার সন্ধান পায় না।

°★ ঘুমন্ত অবস্থায় এমন কথা শুনে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে অরণ্য। ফোনের স্কিনে খেয়াল করে দেখে, অপরিচিত শএু কল করেছে। শএুর প্রতিটা কথা যখন অরণ্য বুঝতে পারে, তখন সে চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে। বিছানা ছেড়ে উঠে যায়, ওয়াশরুমে যায় ইনায়া সেখানে আছে কি না দেখতে। কালকে যেমন ইনায়া সারপ্রাইজ দিয়েছে, আজ ও তার কোনো পরিকল্পনা করছে না কি তা যানতে রুমে থেকে বের হয়। অরণ্য প্রায় সব জায়গায় খুঁজে কিন্তু কোথাও ইনায়া নেই, তার লোক সহ প্রতৈকে ইনায়ার খোঁজ করে। অরণ্য রিসাের্ট থেকে বের হয়ে সমুদ্রর কাছে যায়, সেখানে খুঁজতে থাকে। কারণ রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে ইনায়া সমুদ্রর কাছ৷ গিয়েছে।
°★ সমুদ্রর কাছে হাজার হাজার মানুষ রয়েছে, কিন্তু কোথাও ইনায়া নাই। প্রতৈক মানুষকে ইনায়ার ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে, কোথাও দেখেছে কি না কিন্তু প্রতৈকে না করে দেয়। অন্যদিকে ইভান অরণ্যকে দেখে এগিয়ে আসে তার কাছে, এরপর বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

______ “- অরণ্য ইনায়া কোথায়? রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার করে বাহিরে সমুদ্রর কাছে এসেছিলো। হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো? তোমার সাথে কি ইনায়ার দেখা হয়েছে?
°★ ইভানের কথা শুনে অরণ্য তার দিকে তাকায়৷ সকাল নয়টার সময় ইনায়ার ঘুম ভেঙেছে, রাতে কিছু না খাওয়ার কারণে তার হয়তো খিদে পেয়েছে। যার কারণে রিসাের্ট থেকে বের হয়ে সমুদ্রের কাছে এই রেস্টুরেন্টে এসেছে। খাবার অর্ডার করে কিন্তু খাবার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে সে সমুদ্রের কাছে চলে আসে। তখন ইভানের সাথে দেখা হয় তার, ইভান যখন রেস্টুরেন্টে নিজের খাবার নিতে যায়।

তখনই ইনায়ার কিডন্যাপ হয়, আর এরপর অরণ্যর কাছে ফোন করে। অরণ্য মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে, তার এখন নিজের প্রতি নিজের রাগ হচ্ছে। সে কি করে এতোটা কেয়ারলেস হতে পারে, ইনায়া রুম থেকে বের হয়ে কোথায় যাচ্ছে তা সে কেনো খেয়াল রাখতে পারে নাই।
°°★ অরণ্যর সাথে থাকা বর্ডিগাড কি করছিলো, তাদের কি এখানে হানিমুনে নিয়ে আসা হয়েছে। ইনায়ার প্রতি নজর রাখার জন্য এসেছে তারা, কিন্তু সমুদ্রর মধ্যে এতো মানুষের ভিড়ে ইনায়াকে কিডন্যাপ করে নিয়ে চলে গেলো কিন্তু কেউ কিছু করতে পারল না। বডিগার্ড সকলে আশেপাশে খুঁজে যাচ্ছে, কিন্তু অনেক সময় ধরে খোঁজার পর ও ইনায়ার কোনো দেখা না পেয়ে তারা ফিরে আসে অরণ্যর কাছে এরপর বলে ———-

———— “- বস ইনায়া ম্যামকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? এখন কি করব? পুলিশ হল করব? ——–
°°★ অরণ্য তার বডিগার্ডের কথা শুনো দাঁত কটমট করে তাদের দিকে তাকায়। যেনো এখুনি সবাইকে খুন করে মাটির নিচে পুঁতে দিবে। ইভান তাদের কথা শুনে অবাক হয়, অরণ্যকে স্যার বলো ডাকছে কেনো? মালদ্বীপে আসার সময় কি অরণ্য বডিগার্ড নিয়ে এসেছে কিন্তু কেনো?

অরণ্যর শরীরে এখন রাগে জ্বল যাচ্ছে, তার হাতে থাকা ফোনে সময় দেখে তার ভয় আর রাগ দুইটাই হচ্ছে। ঘড়িতে প্রায় সকাল ১০:০০ বাজে, শএুর কথা অনুয়ায়ী দুপুর বারোটার মধ্যে সে ইনায়াকে খুন করে ফেলবে। খুন শব্দটা উচ্চারণ করতে গেলে অরণ্যর ভয় করছে, সে ইনায়াকে ছাড়া কি করে বাচঁবে। যদি ইনায়া মৃত্যু হয় তবে যে অরণ্যর ও মৃত্যু হবে। কারণ ইনায়াকে ছাড়া বেঁচে থাকা তার দ্বারা অসম্ভব, ওই অষ্টাদশী নারীকে যে সে অনেক ভালোবাসে। অরণ্য একবার হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছে, আরেকবার তার বডিগার্ডকে আশেপাশে খুঁজতে বলছে।
°★ অরণ্যর এমন অবস্থা দেখে ইভান ওকে সান্তনা দেয় আর বলে —

______ “- অরণ্য ইনায়া মনে হয় কোথাও হারিয়ে গেছে? সমুদ্রে এতো মানুষের ভিড়ে হয়তো, পথ ভুলে কোনো অজানা রাস্তায় চলে গেছে। থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে রিপোর্ট দিলে তারা ইনায়াকে খুঁজে বের করবে.
°★ ইভানের কথা শুনে অরণ্য শান্ত হয় নাই, কারণ সে যারে ইনায়া হারিয়ে যায় নাই ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আর ইনায়া এখন অনেক বিপদে হয়েছে, যদি এখুনি তাকে খুঁজে না পাওয়া যায় তবে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলবে ইনায়াকে। অরণ্য বলে ———

_______”- ইনায়া হারিয়ে যায় নাই বরং ওর ওর কিডন্যাপ করা হয়েছে? আর ইনায়ার জীবন এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যদি এখুনি ওর খোঁজ না পাওয়া যায়, তবে ওরা মেরে ফেলবে আমার ইনায়াকে ——–.
°★ অরণ্যর এমন কথা শুনে ইভান সম্পূর্ণ শকড হয়ে যায়। ইনায়াকে কিডন্যাপ করা হয়েছে কথাটা যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না, কারণ বিজনেস বা ব্যক্তিগত জীবনে তার কোনো শএু নেই। ইনায়া যথেষ্ট সাহসী আর মিশুক একজন মানুষ, যার সাথে ব্যবসা বা অন্য যেকোন বিষয়ে কেউ শএুতা করবে না। আর অরণ্য কি করে যানল ইনায়ার কিডন্যাপ হয়ে গেছে, তবে কি অরণ্য যানে কে ইনায়াকে কিডন্যাপ করেছে । এর জন্য মালদ্বীপে সাথে করে বডিগার্ড নিয়ে এসেছে, কিন্তু কে এই শএু সে ইনায়াকে খুন করতে চাই। যার জন্য মালদ্বীপে তাদের হানিমুনে চলে এসেছে, ইভান বলে ———

———– “- ইনায়া কিডন্যাপ হয়ে গেছে মানে? তুমি কি করে জানলে সেটা? আর ইনায়ার সাথে তো কারো শএুতা নেই, তবে কে তাকে খুন করার চেষ্টা করবে? তুমি কি তার পরিচয় যানো? আসল অপরাধী কে?
°°★ এতোবছর অরণ্য বাড়ির প্রতৈক সদস্যর কাছ থেকে শএুর পরিচয় লুকিয়ে রেখেছে কিন্তু আর নয়। আগন্তুক শএু যে কোনো অপরিচিত মানুষ নয়, বরং তাদের আপনজন তা সকলের জানা দরকার। আর ইভান চৌধুরী বাড়ির সন্তান তাই তার জানার অধিকার রয়েছে সবকিছু বিষয়ে। অরণ্য শান্ত হয়ে বলে ———–

———- “- ওনি শুধু ইনায়ার শএু নয় বরং আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় শএু। ঘরের শএু বিভীষণ, আমাদের প্রিয় ফুফু। বিদেশে এতো বছর তুমি যার কাছে থেকে পড়াশোনা করেছো, যে বক্ত্যি এতো বছর ধরে তোমার মনে ইনায়ার প্রতি বিষ ঢেলে গেছে। যার কারণে ঘৃণা আর রাগে তুমি ইনায়াকে ডিভোর্স দিয়েছ। আমার বাবা এক্সিডেন্টর জন্য দায়ী ওনি, ইনায়ার মা বাবার হত্যা কারী ওনি। এসএস কোম্পানির ঔষধে বিষ মিশিয়ে হাজারো অসহায় বাচ্চার খুনি হানিয়া বেগম আমাদের ফুপি “————

°°★ অরণ্যর কথা ইভান বিশ্বাস করে না , অসম্ভব তার ফুপি এমন কাজ কখনো করতে পারে না। যিনি পনেরো বছর তাকে মায়ের ভালোবাসা, আদর, দিয়ে বড়ো করেছেন ওনি এতো নিকৃষ্ট হতে পারেন না। তবে ফুপি সবসময় ইনায়ার নামে বাজে কথা বলত, অরূণা বেগম ইনায়ার জন্য ইভানকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। সবকিছু মূলে ইনায়া রয়েছে, এইসব বলতো যার কারণে ইভানের মনে ইনায়ার প্রতি ঘৃণা জন্মাতে থাকে। ইভান ব্রেন ওয়াশ করে, যার ফলে সে দেশে ফিরে এসে ইনায়াকে ডিভোর্স দেয়। কিন্তু তার ফুপি খুনি হতে পারে না, নিজের ভাইকে হত্যা করার মতো এমন জঘন্য অপরাধ ওনি করতে পারে না। ইভান দ্রুত বলে ——

—— “- অসম্ভব অরণ্য আমার ফুপি এতো জঘন্য আর নিচুঁ কাজ করতে পারে না। আর চাচ্চুতো ওনার আপনার ভাই, তাহলে কেনো তাকে খুন করতে যাবে ওনি। ইনায়ার বাবা আর মা ছিলেন ফুপির সবচেয়ে ভালো বন্ধু তাদের বা কেনো খুন করবেন। ইনায়ার সাথে তার কি শএুতা থাকতে পারে?
°★ অন্যদিকে ইনায়া অজ্ঞান করে গাড়ি করে একটা গো ডাউনে নিয়ে যাওয়া হয়, তার চোখ মুখ এখন কাপড় দিয়ে বাঁধা। ইনায়াকে নিয়ে গিয়ে এখন, চেয়ারের সাথে বেঁধে দেয়। শক্ত দড়ি দিয়ে। অন্যদিকে অরণ্যর হঠাৎ করে মনে পড়ে, সে গত তিনদিন আগে ইনায়াকে হাতের ঘড়ি গিফট করেছে। যার মধ্যে জিপিএস ট্যাকার লাগানো ছিলো, ইনায়ার সেফটির জন্য এমন করেছে। অরণ্য ফোন বের করো তাড়াতাড়ি রামিমকে কল করে –

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪৭

_____” রামিম ইনায়ার হাতে থাকা ঘড়ির লোকেশন ট্র্যাক কর। ও কোথায় রয়েছে সেটা জানতে হবে আমাদের?
—— ” ওকে বস _____.
°★ ইনায়ার মাথায় এখন বন্ধুক হাত করে দাঁড়িয়ে রয়েছে একজন মহিলা। ঘড়িতে প্রায় বারোটা বেজে গেছে, ইনায়ার জ্ঞান ফিরে নাই এখনো। আর একটু সময় পর ইনায়ার মৃত্যু নিশ্চত।

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪৯