তাজমহল পর্ব ৩৬
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
রওশনআরার গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া। পটিয়া থেকে আসতে বেশ সময় লেগে গিয়েছে। দীর্ঘ জার্নির পর শাইনা একেবারেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। বাড়িতে পৌঁছাতেই নতুন বউকে সবাই ঘরে তুলল, মিষ্টি মুখ করালো।
খবর পেয়ে আশেপাশের অনেক প্রতিবেশীও ছুটে এলো বউকে দেখতে। পাশের বিল্ডিংয়ের একজন বলল, “আরে! রওশনআপার শ্বশুরবাড়িতে যখন গিয়েছিলাম তখনও তো মনে হয় মেয়েটাকে দেখেছিলাম।”
রওশনআরা হাসিমুখে বললেন, “হ্যাঁ, ঠিক ধরেছ। ও তো আমার আশেপাশেই থাকত। আমরা এক বাড়িরই মানুষ।”
তখনই অন্য এক প্রতিবেশী হেসে বলল,“আপা পাশের বাড়ি থেকেই ছেলের জন্য বউ নিয়ে এসেছে কাছে কাছে রাখার জন্য। বড় বউটা যেহেতু বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকে।”
রওশনআরা হাসলেন। আবার আরেকজন বলল,
“বউ-শাশুড়ি একদম মিলে গেছে। মা-মেয়ে মনে হচ্ছে।”
রওশনআরা স্নিগ্ধ কণ্ঠে বললেন,“আমার কাছে যখন নিয়ে এসেছি তখন আমার মতো হয়ে যেতে হবে।”
শাইনা কথাটা শুনে একবার শাশুড়ির দিকে তাকাল। রওশনআরা হাত বাড়িয়ে তার মাথার পেছনে আলতো করে বুলিয়ে দিলেন।
তারপর বললেন,“ভেতরে যাও। তিতলি তুমি ওকে নিয়ে যাও। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিক।”
খাওয়াদাওয়ার আয়োজন আগে থেকেই করে রাখা। তৌসিফ জুসের গ্লাস নিয়ে বসে পড়েছে। তিতলি তার পাশে সোফায় পা তুলে বসে ফোন টিপছে। তৌসিফ খেয়াল করেনি সেটা। খেয়াল করলে কান বরাবর একটা দিয়ে বসবে।
শাইনা এখনো কিছু খাওয়াদাওয়া করেনি। হিজাব খুলে মুখ ধুয়ে ফেলেছে সে। সানস্ক্রিন দিয়ে একটু লুজ পাউডার দিয়ে সিম্পল একটা সাজ দিয়ে আঁচলটা মাথায় টেনে নিয়েছে। তিতলি তৌসিফের ফোনে গেম খেলতে খেলতে তখুনি তার ঘরে ঢুকলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বলল,”নাশতা খেতে আসো। সবাই বসে আছে। বিশেষ করে…
শাইনা তার মুখের দিকে তাকালো। তিতলি হেসে বলল,”তোমার পেয়ারিলাল।”
শাইনা তার পিঠে চড় বসিয়ে বলল,”পাজি।”
তৌসিফ চেঁচাচ্ছে।
“তিতলিনী আমার ফোন!”
তিতলি দাঁতে দাঁত চেপে ইচ্ছেমতো গেইম খেলতে লাগলো। যেন ফোনটা তৌসিফের হাতে যাওয়ার আগে সে তার কার্য উদ্ধার করছে। শাইনা বলল,
“তোমার ফোন কোথায়?”
“আমার ফোনটা ফালতু। কখন থেকে বলছি একটা আইফোন দাও। কেউ দেয় না। ওদের মেয়েকে ঠিকই দিয়েছে। আমি তো আর ওদের মেয়ে কেউ নই। হুহ!”
শাইনা হাসলো। বলল,”পাগল! তুমি তোমার ভাইয়াকে বলো।”
“মেঝ ভাইয়াকে?”
“হু।”
“মাইর একটাও মাটিতে পড়বে না। ও একটা বাঁদর।”
শাইনা বলল,”বাঁদর বলেছ? আমি বলে দেব?”
তিতলি তার হাত ধরে ফেলে বলল,”ও ভাই না।”
শাইনা হাসতে লাগলো তার কথা শুনে। নাশতা খাওয়ার জন্য ডাইনিংয়ের উদ্দেশে যাচ্ছিল তারা। তখুনি তাজদার হেঁটে আসতে লাগলো। শাইনা আর তিতলিকে সে দেখেনি। শাইনা গলা ঝাড়লো।
সাথে সাথে তাজদার তার দিকে তাকালো। তিতলি সরু চোখে দুজনের কান্ডকারখানা দেখে ফুড়ুৎ এক দৌড় দিয়ে তৌসিফের কাছে চলে গেল। ফোনটা তার কোলে রেখে তৌসিফের মাথার পেছনে সোফায় দুহাতের ভর রেখে বলল,
“ভাইয়ে শাইনা আর মেঝ ভাইয়া কিভাবে কথা বলে জানো?”
তৌসিফের ভ্রু কুঁচকে গেল।
“কিভাবে?”
তিতলি তার পাশে গিয়ে বসলো। বলল,
“আমার দিকে তাকাও।”
তৌসিফ তার দিকে তাকালো। তিতলি মুখের কাছে হাত এনে বলল,”উহুম উহুম!”
তৌসিফের কপাল আরও কুঁচকে গেল। তিতলি চোখ উল্টে তাকিয়ে বলল,”তারপর এভাবে তাকায়। এভাবে। আমিও বিয়ের পর তোমাদের দুলা ভাইয়ের সাথে এভাবে কথা বলবো। এভাবে তাকাবো।”
তৌসিফ বলল,”ভাই রে ভাই রে এরা কারা।”
তিতলি তৌসিফের পিঠ চাপড়ে দিতে দিতে বলল,”ভাই রে ভাই রে আমি রে। তোর বউয়ের ননদ রে। যা তাড়াতাড়ি বিয়ে কর। তৌসিফ বড় বোনের কথা শোন।”
তৌসিফ চেঁচিয়ে বলল,”বড় আম্মু ও কত্তবড় সাহস দেখো আমার নাম ধরছে। ভাই আমার হাত চললে তুই সোজা লাশ।”
তিতলি সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,”তৌসিফ এত রাগ করিস না বাবা। এত রাগ শরীরের জন্য ভালো নয়।”
বলেই তৌসিফের পিঠ চাপড়ে দিয়ে চলে গেল সে।
নাশতা খাওয়াদাওয়া হচ্ছিল একসাথে। শাইনা বর আর শ্বাশুড়ির মাঝখানে বসে অল্প অল্প করে খাচ্ছিল। ঠিক তখুনি পাশের বাসা থেকে আসা এক মামি বলল,
“তাজ তোমার মতোই দেখতে বউটা কোথায় পেলে। তোমার চেহারার সাথে কত মিল।”
তাজদার শাইনার দিকে তাকালো। শাইনাও তার দিকে তাকালো। তাজদার ডান ভ্রু’টা তুলে বিড়বিড় করলো,”আমি বেশি সুন্দর।”
শাইনা ঠোঁট না নড়েমতো বলল,”সবাই জানে কে বেশি সুন্দর।”
তাজদার বলল,”আমার চয়েস সুন্দর মমতাজ। অস্বীকার করতে পারো না।”
সবাই বলাবলি করলো বিয়ের পর এমন এক চেহারা হয়ে যায় অনেকের। অনেকেই তো বলেও ফেলে ভাইবোন নাকি। তাজদার প্রতিবেশী মামিদের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেল। ওরা সবাই বলছে, তুমি তখন এখানে এলে আর যেতে চাইতে না। সবাই কি ভয়টাই না পেত। আগের তাজের সাথে এই তাজের মিলই নেই।
ছোট মামি বলল, আমি তখন নতুন বউ এই বাড়িতে। বড় আপার মেঝ ছেলে এসেছে বললেই আমার ভয় হতো। মা তো সারাক্ষণ ওর পেছনে লেগে থাকতো।
রওশনআরা চুপ করে শুনছেন। ওরা যা বলছে তা সত্য। তাজ তখন মামার বাড়ি ছাড়া আর কোথাও বেড়াতে যেত না। এখানে এলে অবশ্য তার মামা মামিরা সবাই আতঙ্কে থাকতো কখন কোথায় কি হয়ে যায়। কিন্তু মা থাকায় রওশনআরা একটু স্বস্তিতে থাকতো তখন।
তাজদার কথাগুলো শুনছে মনোযোগ দিয়ে। এগুলো মিথ্যে হওয়ার সুযোগ নেই। নানু এসে চেয়ারে বসেছেন অনেক কষ্টে। নাতি আর নাতবউকে মন দিয়ে দেখছেন। নাতিকে বললেন,
“তোমার বউ দেখে আমার মন ভরে গেছে নানুভাই। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। খুব ভালো লাগছে।”
তাজদার মাথা দুলিয়ে বলল,”মনে হচ্ছে আমারও।”
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। বড় মামি বলল,”আহা, তুমি কিন্তু মেয়েটাকে লজ্জা দিচ্ছ তাজ।”
শাইনান আলতো করে হাসলো শুধু। তিতলি ফিসফিস করে বলল,”ওই দেখো ওই দেখো লজ্জা পাচ্ছে।”
শাইনা তাকে চোখ রাঙালো। তাসনুভা খেতে খেতে মাঝেমধ্যে শাইনা আর তার ভাইকে দেখছে। আর মুখ মোচড়াচ্ছে। তিতলি তা দেখে তৌসিফকে বলল,”ওই শয়তানি দেখো মুখটাকে কেমন করে রেখেছে। জীবনেও তো একটা প্রেমট্রেম করতে পারলো না। বিয়েও করছেনা। বেয়াদব মেয়েটাকে নিয়ে জ্বালায় আছি। শুধুমাত্র ওর কারণে আমার বিয়েটা আটকে থাকবে। তোমার বিয়েও।”
তৌসিফ বলল,”যথার্থ বলেছিস। এত সত্যি কথা বলিতে নাই। দূরে যা বইন। ঘাড়ের উপর চেপে বসিস সবসময়।”
তিতলি তার পেছন থেকে সরে গেল।
তাজদার নানু আর মামাদের সাথে গভীর মনোযোগ দিয়ে কথা বলছে। আলাপটা একেবারেই পারিবারিক, তাই কাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেটা শাইনার পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি। টিস্যু ঠোঁটের ফাঁকে ধরে হালকা চাপ দিয়ে সে ঠোঁটের ভেজা মুছতে মুছতে তাজদারের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনতে লাগলো। কথাগুলো বুঝছে না যদিও। তবুও শুনতে তার ভালো লাগছিল।
এদিকে তৌসিফ আর তিতলি চতুরতার সাথে পুরো দৃশ্যটাই গোপনে ভিডিও করে রাখল।
বিকেল নামেছে ধীরে ধীরে। দিঘী মানে সেই বিশাল পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাই।
চারদিকে সাদা মাটির সরু বাঁধানো পথ, বাতাসে ভেসে আসছে শীতল ছোঁয়া।
পানির উপর রোদ ঢলে পড়েছে তিরতিরে আলো হয়ে। চারপাশে বিশাল বিশাল গাছ। কেটে রাখা মোটা গুঁড়িগুলো শুয়ে আছে মাটির উপর। গাছের পাতার ফাঁক গলে হাওয়া সাঁই সাঁই শব্দ তুলে বইছে।
দিঘীর পাড়ে ঘুরতে এসেছে সবাই মিলে। বর্ষাকালে সাধারণত এদিকে কেউ তেমন আসে না, কিন্তু আজকের আবহাওয়া বেশ মনোরম। কাঁদাও শুকিয়ে গেছে এদিকটায়। তাজদারের কাছে এ জায়গাটা ভীষণ প্রিয়। শৈশবের অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই দিঘী, এই বাগানবাড়ির সঙ্গে। চারপাশের জমি-বাড়ি সবই ওর নানাভাইয়ের সম্পত্তি।
শাইনা আগে শুধু দাদীমার মুখে শুনেছে ওই বাড়ির বড় বউয়ের বাপের বাড়ির অঢেল ধনসম্পদের কথা। কত টাকা, কত ঐশ্বর্য!
কিন্তু আজ স্বচক্ষে দেখে সে বুঝতে পারলো সবটা। তার মনে হলো এত সমৃদ্ধশালী পরিবারের মেয়ে হওয়ার পরেও বড়আম্মু অনেকটা নিরংহকারী। বরং যতটুকু অহংকার আছে ততটুকুই তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই।
রওশনআরা এদিক-সেদিক সবকিছু ঘুরে ঘুরে শাইনাকে দেখালেন। হঠাৎ থেমে গিয়ে তাজদারকে একবার দেখলেন। শাইনাকে বললেন,
“একবার যাও ওর কাছে। নাহলে আবার মনে করবে আম্মু শুধু ওকে নিয়েই ঘুরছে।”
শাইনা থমকে গেল। মায়ের সাথে ঘোরাঘুরি করলে ছেলে কিছু মনে করবে এমন অদ্ভুত কথাও হতে পারে! তার কাছে ব্যাপারটা একেবারেই বিস্ময়কর লাগলো।
শাইনাকে যেতে হলো না। তিতলি নিজেই শাইনাকে টেনে নিয়ে গেল। দুটো গাছের ডালে রশি বেঁধে দোলনা বাঁধা হয়েছে। তিতলি সেখানে চড়তে চড়তে শাইনা আর তৌসিফকে বলল,
“মেঝ ভাইয়ার চেহারাটা একবার দেখো। ও মনে মনে বলছে বউ নিয়ে একটু ঘুরতেও পারলাম না।”
শাইনার ইশারায় সে আর তৌসিফ একসাথে তাকাল তাজদারের দিকে। মামাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সে, গম্ভীর ভঙ্গিতে কথাবার্তা বলছে। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কপালে হালকা ভাঁজ পড়েছে। সেই দৃশ্য দেখে শাইনা আর তৌসিফ একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
তিতলি দোলনায় বসে হেসে বলল তৌসিফকে, “ভাইয়ে পেছন থেকে একটু ধাক্কা দাও না।
তৌসিফ ফোনটা পকেটে রেখে ধীরে ধীরে তার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর দোলনাটা অনেকটা পেছনে টেনে নিয়ে হঠাৎ ছেড়ে দিল।
ঝটকা খেয়ে দোলনা আকাশ ছুঁয়ে উঠলো। তিতলি ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল, “ও আল্লাহ!”
ধাক্কাটা এতটাই তীব্র ছিল যে ভারসাম্য রাখতে না পেরে তিতলি দোলনা থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ল।
শাইনার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল। মুহূর্তেই চারপাশ নিস্তব্ধ।
তিতলি দলা মোচড়া হয়ে মাটিতে পড়ে রইলো নিস্তেজ আর কাতর ভঙ্গিতে।
রওশনআরা তার ভাইয়ের বউদের অন্যদিকে চলে গেছে হাঁটতে হাঁটতে। উনি খেয়াল করেননি। তাজদার খেয়াল করেছে। গর্জে জানতে চাইল,
“বেশি ব্যাথা পেয়েছে? ওকে তোল।”
তৌসিফ দৌড়ে গিয়ে তিতলি তুলে নিল। শাইনা ছুটে গেল। তৌসিফ তিতলিকে কোলে তুলে নিয়ে দৌড়াতে লাগলো। তিতলি ব্যাথা পেয়ে কাঁদছে আর বলছে, তৌসিপ্পে কুত্তা!
তৌসিফ তাকে নিয়ে বাড়ির পুকুর ঘাটে নেমে গেল। মুখে, আর মাথায় পানি দিল। হাত ধুয়ে দিল। হাতে পায়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছে তিতলি। ওর ওড়না দিয়ে মুখটা মুছিয়ে দিয়ে বলল,
“বেশি ব্যাথা পাসনি। নাটক করবিনা।”
তিতলি কাঁদছে। তৌসিফ গালে দুপাশে হাত রেখে আলতো করে হাত বুলিয়ে আদর করে দিয়ে বলল,”ওরে আমার টুকটুকি কাঁদিস না কাঁদিস না। এই দেখ আমার দিকে। কুট্টি কুট্টি ভাইয়ের দিকে তাকা। বেশি ব্যাথা পেয়েছিস? আচ্ছা তোকে চকলেট আইসক্রিম খাওয়াবো।”
তিতলি তখনো কাঁদছে। তৌসিফ আর না পেরে বলল,”আচ্ছা তোকে একটা ফোন কিনে দেব।”
তিতলি কান্না থামিয়ে দিয়ে জিগ্যেস করলো,”কখন?”
“কিছুদন পর।”
তিতলি কেঁদে উঠে বলল,”এখন তোমার ফোনটা দাও।”
তৌসিফ পকেট থেকে ফোনটা বের করে তার হাতে দিল। তিতলি ফোনটা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল সেখান থেকে। তৌসিফ কোমরে হাত চেপে তার যাওয়ার পথে চেয়ে রইলো। অভিনয়ে নারী সেরারেহ!
শাইনা দোলনায় বসেছিল। তাজদার তার মামাদের সাথে কথা বলতে বলতে সেখানে এল। মামারা বলল,”বৌমা কেমন লাগছে এখানে এসে?”
শাইনা হেসে বলল,”জি ভালো লাগছে। জায়গাটা এত সুন্দর জানতে পারলে আরো আগে আসতাম।”
“থাকো কয়েকদিন। তোমার বর কিন্তু থাকার মানুষ নয়। বউয়ের জন্য হলেও থাকতে রাজী হবে।”
শাইনা হাসিমুখে মাথা নাড়লো। তাজদারের দিকে তাকাতেই ঠোঁটের হাসিটা মিলিয়ে গেল।
বড়মামা বললেন,”তাজ এসো বাজার থেকে ঘুরে আসি।”
বলেই চলে যাচ্ছিলেন কি মনে করে আবার থেমে গিয়ে শাইনার দিকে তাকালেন। বললেন,
“বাজার তো সারারাত থাকবে। তুমি কিছুক্ষণ থাকো।”
তাজদার বলল,”না যাচ্ছি..
“না না থাকো। পরে আমাকে ফোন দিও।”
উনারা চলে গেলেন। তাজদার একটা গাছের মোটা গুঁড়ির উপর গিয়ে বসলো। শাইনা দোলনায় বসে হাতের চুড়িগুলো দেখছে। তাজদার ফুল পাতাদের দেখতে দেখতে হঠাৎ শাইনার দিকে তাকালো। ওভাবে কপাল কুঁচকে শাইনার দিকে চেয়ে রইলো। শাইনা একদম অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। নিজের বউকে কেউ এভাবে দেখে নাকি? আশ্চর্য তো!
সে সাহস করে কপাল কুঁচকে তাকালো তাজদারের দিকে। বলল,
“আপনার কথা একরকম, কাজ একরকম।”
তাজদার সাথে সাথে জানতে চাইল,”কিভাবে?”
“ওই যে নাশতা খাওয়ার সময় বলেছিলেন আপনি বেশি সুন্দর?”
“তো?”
“কিন্তু আপনার আচার-আচরণ বলে আমি বেশি সুন্দর।”
তাজদার ধীরেধীরে মাথা দুলিয়ে বলল,
“তুমি সুন্দর না হলে আমি এমনি এমনি বিয়ে করিনি। মাঝেমধ্যে খুব নাটকীয় কথাবার্তা বলো। এমনি এমনি কাউকে পছন্দ হয়?”
শাইনা বলল,”তা ঠিক বলেছেন। মেয়েদের জীবনটাই নাটকীয়।”
তাজদার ডান ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,”কি?”
শাইনা স্পষ্ট করে বলল,”মানে মেয়েরা ভালো থাকার অভিনয় করতে পারলেই জীবনের অর্ধেক সমস্যা সলভ।”
তাজদার জানতে চাইল,”তুমিও ভালো থাকার অভিনয় করছো?”
শাইনা মুখ ফিরিয়ে নিল এবার। দোলনায় দুলতে দুলতে তার মাথা থেকে শাড়ির আঁচল পড়ে গেছে। আঁচলটাও হাওয়ায় দুলছে দোলনার সাথে সাথে।
তাজদার হাঁটতে হাঁটতে কখন যে দোলনার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে শাইনা খেয়ালও করেনি। সে হুট করে খেয়াল করলো তার চুলের কাঠিটা কেউ ধরে টান মেরেছে। ফলস্বরূপ চুল খুলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পিঠে। কিছু বুঝে উঠার আগেই দোলনাটা ধাক্কা দিল তাজদার। শাইনা দোলনা শক্ত করে ধরে চিৎকার করতে লাগলো।
“কি করছেন!”
তাজদার তাকে থামতেই দিচ্ছে না। বরং কানের কাছে সুড়সুড়ি দিতেই শাইনা হাসছে সইতে না পেরে।
তাকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে তাজদার গাছের গুঁড়ির উপর গিয়ে বসে পড়লো। শাইনার রাগও হচ্ছে, ভয়ও হচ্ছে আবার হাসিও পাচ্ছে। তাজদার তাকে দেখে বলল,
“লোকে দেখলে বলবে দোলনায় লম্বাচুলো শাড়িপরা কোন পেত্নী বসে দোল খাচ্ছে।”
শাইনা বলল,”থামান বলছি।”
তাজদার থামালো না। বরং আরও জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল,”একটি প্রশ্নের উত্তর বলতে পারলো থামাবো।”
“কি?”
তাজমহল পর্ব ৩৫
“মৌলিক চাহিদাগুলো কত প্রকার ও কি কি?”
শাইনা বলল,”খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা।”
তাজদার তার দোলনাটা থামিয়ে দিল। শাইনা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো তার দিকে। তাজদার বলল,”আমার আরও একটি মৌলিক চাহিদা আছে। তুমি হাসবে, আমি শুধু আর শুধুই দেখবো। ব্যস।”