কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৩৫

কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৩৫
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি

তুশি ঝড়ের বেগে ছুটছিল। মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে খসে পড়া উল্কার মতো গতি! ঠিক তক্ষুনি সামনে পড়লেন হাসনা। ছুটন্ত মেয়েটার দুই বাহু কেমন থাবা মেরে ধরলেন দুহাতে। অধৈর্য চিত্তে বললেন,
“ আরে বু তুই উটছস? আমি সক্কাল তে তরে খুঁজতাছি!”
তুশি যাচ্ছিল মিশনে। ইয়াসিরকে ভালোবাসার কথা বলতে যাওয়ার মিশন। ভীষণ জরুরি এই কাজের মধ্যে আচমকা বিঘ্ন পেয়ে ভড়কে গেল কিছুটা। দাদির রুগ্ন মুখখানা দেখে চোখ ঝাপটাল কয়েকবার। পরপরই হড়বড় করে বলল,
“ উফ দাদি,তোমার সাথে আমি পরে কথা বলব। আপাতত ছাড়ো,আমার খুব তাড়া আছে।”
“ কীয়ের তারা? পায়খানায় যাইতাছোস?”
তুশি নাক সিটকে বলল,

“ ইস ছিঃ! তোমাকে না কতবার বলেছি,পায়খানা বলবে না? ওয়াশরুম দাদি ওয়াশরুম। অন্তত টয়লেট বলো।”
“ ওডি আমার মুহে আহে না।”
“ যাক গে,সব কথার এক কথা আমাকে এখন যেতে হবে। সরো দাদি সরে দাঁড়াও। আমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছি। এই কাজে আমাকে সফল হতেই হবে।”
তুশি দাদির হাতটা নিয়ে মাথা রাখল। মুখভঙ্গি খুব গুরুতর,
“ আমাকে একটু দোয়া করে দাও তো,দাদি।”
হাসনা কিছুই বুঝতে পারছেন না। বোকা বোকা কণ্ঠে বললেন,
“ পায়খানায় যাইতে আবার দোয়া লাগে?”
তুশি ক্লান্ত চোখে চাইল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ আমি তোমার পায়াখানায় যাচ্ছি না দাদি।”
“ তাইলে কই যাস?”
“ বললাম না, জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে? আর কোনো কথা নয়। নাস্তা করেছ?”
হাসনা মাথা নাড়লেন দুদিকে।
তুশি মূহুর্তে তার শরীরটা খাবার রুমের দিকে ঘুরিয়ে দিলো। বলল,
“ তাহলে যাও,কুইক। আই গো টু মাই মিশন।”
মেয়েটা আবার ছুটল। দুমদাম আওয়াজ তুলে বেঁয়ে চলল একেকটা সিঁড়ি। হাসনা সাবধান করলেন,
“ আরে আস্তে আস্তে যা, বু। পইরা দাঁত ভাঙবো তো।”
তুশি শুনল না। দৌড়ে ইয়াসিরের রুমের পথ ধরল। হাসনা মাথা নেড়ে শ্বাস ফেললেন। তারপর গুটিগুটি পায়ে এগোলেন খাবার রুমের দিকে। টেবিল আপাতত ফাঁকা। তনিমা,রেহনূমা দুজনেই আছেন। ওনাকে দেখেই বললেন,

“ খালা উঠেছেন? আসুন,খেতে আসুন।”
সংকোচ নিয়ে হাসলেন হাসনা। তুশিকে ছাড়া বাড়িতে তার চেনা কেউ নেই। তাই কেমন লজ্জা লজ্জা করছে। রেহণূমা চেয়ার টেনে দিলেন। শুধালেন,
“ ঘুম ভালো হয়েছে,খালা?”
ঘাড় কাত করলেন তিনি,
“ হ।”
দোনামনা করে বসতেই, সামনের সিরামিকের প্লেটটায় পরোটা- মাংস পড়ল। হাসনা অবাক চোখে চেয়ে রইলেন ফলের রস ভরতি বড়ো জগটার দিকে। সারা টেবিলে খাবারের ছড়াছড়ি। এত এত খাবার এরা শুধু সকালেই খায়? আর এই বাড়ির মেয়ে হয়ে তুশি কিনা সারাজীবন ভোরে এক মুঠো জল-মুড়ি খেয়ে কাটিয়ে দিলো? হতভাগী মেয়েটার মায়ায় হাসনার বুকখানা ফের হুহু করে ওঠে। আলগোছে আঁচল মুড়িয়ে চোখ মুছলেন তিনি। কিন্তু দেখে ফেললেন তনিমা। আশ্চর্য হয়ে বললেন,

“ ওমা,আপনি কাঁদছেন কেন?”
“ এমনে, আপনেগো আন্তরিকতা দেইখা।”
রেহনূমা বললেন,
“ এ আবার কী কথা,খালা? আপনি আমাদের মেহমান। মেহমানের কদর করব না?”
হাসনা একটু হাসলেন। বললেন,
“ আইচ্ছা। আমি একলা খামু? আর কেউ খাইব না?”
“ এ বাড়িতে ছুটির দিন ছাড়া সবাইকে এক টেবিলে পাওয়া মুশকিল। যে যখন নামে,সে খেয়ে চলে যায়। আর ভাইজান তো অসুস্থ,তাই ঘরে খাবেন। মাও অতটা নিচে আসা-যাওয়া করেন না। ইউশা,মিন্তুর খাওয়াও শেষ। আপনি খান,বাকিরা আস্তে আস্তে নামবে। তুশি কি উঠেছে,খালা?”
“ হ, দ্যাকলাম তো। ডাকলাম,কইল আইতাছি।”

পানসে মুখে মাথা নাড়লেন রেহণুমা। মেয়েটার জন্যে তিনি খুব যত্নে ফ্রুট কাস্টার্ড করেছেন। গতবার যখন বানালেন, একেবারে বাটি চেটেপুটে খেয়েছিল। এখন তো মায়ের ওপর তার সসীম রাগ, খাবে তো?
হাসনা প্রশ্ন করলেন তক্ষুনি, কণ্ঠে নম্রতা,
“ আপনেগো বাইতে আর কেডা কেডা থাহে?”
তনিমা বললেন,
“ এইতো,আমরা দুই জা আর আমাদের স্বামী,বাচ্চাকাচ্চা। তবে আমাদের সাথে আমার ননদের মেয়েও থাকে। ওর মা বাবা বিদেশে থাকে তো! মেয়েটা আবার ওর নানুকে ছাড়া থাকতে পারে না। ওরা অবশ্য আজ বিকেলেই চলে আসবে।”
হাসনা মাথা ঝাঁকালেন। তুষ্ট কণ্ঠে বললেন,

“ আপনেরা অনেক ভালো মানুষ। এত্ত বলোক মাইনষের আমি এরাম বড়ো মন-মানসিকতা দেহিনাই। আমি একটা অনুরোদ করলে কি রাকবেন?”
“ জি,বলুন না!”
বৃদ্ধা বড়ো ব্যাকুল কণ্ঠে বললেন,
“ আমি কি তুশিরে মাজে মাজে দ্যাকতে আইতে পারমু?”
রেহনূমা- তনিমা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। পরপরই হেসে ফেললেন দুজনে। বললেন,
“ এটা একটা কথা হলো? আপনি ওর দাদি। আপনি আসবেন না তো কে আসবে?”
রেহনূমা বললেন,
“ আপনার যখন ইচ্ছে হবে তখনই আসবেন। সৈয়দ বাড়ি আপনার জন্যে একেবারে উন্মুক্ত।”
হাসনার বুক ভরে গেল। মাথা নাড়লেন খুশি মনে। গত রাত থেকে এই ব্যাপারটা নিয়ে খচখচ লাগছিল খুব! এবার শান্তিতে খাওয়া যাবে!

তুশির স্ফূর্ত গতির ব্রেক কষল ইয়াসিরের দোরগোড়ায় এসে। ঠোঁটে ঠোঁটে চেপে পর্দা সরিয়ে এক চোখ দিয়ে তাকাল ভেতরে। ইয়াসির ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে। পরনে বারগ্যান্ডি শার্ট। এক্ষুনি বের হবে হয়ত। পারফিউম ছড়াচ্ছে গায়ে। এত কড়া ঘ্রাণ! তুশির অন্তঃপটের সাথে সাথে মাথাটাও ধরে গেল নেশাতে। বড়ো করে শ্বাস টানল সে। এই ঘ্রাণ ও কালকেও পেয়েছে,মানুষটা জড়িয়ে ধরার সময়।
ফের ওই দৃশ্য তুশির চোখের পর্দায় ভেসে উঠল। লজ্জায় লাল হলো গাল। পুরন্ত ঠোঁটজোড়া আপনা-আপনি সরল দুদিকে। কাল ইয়াসির বুঝিয়েছে,তুশির প্রতি তার অনুভূতি আছে। মায়া আছে,টান আছে,কোথাও হয়ত ভালোবাসাও আছে। আর সেই সাহস থেকেই এখানে এসে দাঁড়িয়েছে ও। নাহ,আর সময় নষ্ট নয়। আজ ভেতরের সবটা উগড়ে দেবে তুশি। বলবে,তার মনের কথা।
তুশি বিড়বিড় করে প্র‍্যাকটিস করল। মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে ভাবল,

“ ভেতরে যাব। ওনার সামনে দাঁড়াব। একদম সোজা চোখে চোখ রেখে বলব,
“ আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
বলা শেষ, সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে বেরিয়ে আসব আবার। বোঝাব,আমি খুব লজ্জা পাচ্ছি। ওনাকে পালটা কিছু বলার সুযোগই দেবো না। তারপর বুক ভরে দম টানল তুশি। মাথা নামিয়ে উঁকি দিয়ে বলল,
“ টুকি,
আমি একটু এই ঘরে ঢুকি?”
ইয়াসিরের ব্যস্ত হাত থামল। গুছিয়ে গেল ভ্রু জোড়া। হতভম্ব চিত্তে ঘাড় হালকা ভেঙে দেখল দোরের দিকটা। বুঝতে অসুবিধে হলো না,এটা কার গলা। গালের ভেতর জিভ ঠেলে নিঃশব্দে হাসল সে। অথচ গম্ভীর গলায় বলল,

“ কেন, এই ঘরে কী কাজ?”
তুশি সুরুৎ করে ঢুকে আসে। আজ যেন তার মতো সাহসী কেউ নেই। বুক টানটান করে বলে,
“ কোনো কাজ নেই। আসলে বাবা বলেছেন, এখন থেকে বাড়িটা আমারও। আমি চাইলে যখন-তখন এদিক সেদিক যেতেই পারি। আর সেই এদিক সেদিকের মধ্যে তো আপনার ঘরটাও পড়ে। তাই আমি এবার থেকে ইচ্ছে হলেই আপনার ঘরে আসব।”
পুরোপুরি শরীর ঘুরিয়ে ফিরল ইয়াসির। ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

“ তাই?”
হাসি হাসি মুখে সদর্পে মাথা নাড়ল তুশি। ইয়াসির আশেপাশে তাকাল।
ও আগ বাড়িয়ে বলল,
“ আমাকে বসতে দেয়ার জন্যে চেয়ার খুঁজছেন? লাগবে না,লাগবে না। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারি।”
ইয়াসির ফোস করে শ্বাস ফেলে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলল। রিভলবার হাতে নিয়ে ফিরতেই, আতঙ্কে ছিটকে পিছিয়ে গেল মেয়েটা। চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,
“ এটা, এটা কেন বের করেছেন?”
“ বলো এবার,কী বলছিলে?”
তুশি সজোরে মাথা নাড়ল।
“ না না কিছু না। আমি,আমি যাই…”
মেয়েটা ফিরতে নিলে,ইয়াসির বলল,

“ ভয় নেই। তোমার মতো চোরকে গুলি করে আমি আমার রিভলবারের অপমান করব না।”
তুশির মেজাজ চটে গেল এবার। সরু নাক ফুলে উঠল রাগে। অথচ মিনমিন করে বলল,
“ সব সময় চোর চোর করবেন না। কোনো একটা লেভেলে কিন্তু আমিও টোলেন্টেড।”
ইয়াসির দুই ভ্রু উঁচায়,কণ্ঠে বিদ্রুপ,
“ ট্যালেন্টেড? তাহলে তো সেই কোনো একটা লেভেলে সবাই রবীন্দ্রনাথ, সবাই নজরুল। আর কিছু?”
অপমানে চুপসে গেল তুশি। তর্কে জেতার মতো যুক্তি তার ভাণ্ডারে এই মূহুর্তে নেই। ইয়াসির তাড়া দেয়,
“ এনিথিং এলস?”
“ হুঁ?”
“ আমি বের হব। কোনো দরকার?”
তুশির যেন হুশ ফিরল। সতর্ক চিত্তে ভাবল,
“ এ বাবা,আমি তো অন্য কাজে এসেছিলাম।”
সহসা উদ্বেগ নিয়ে বলল,

“ জি,মানে হ্যাঁ। আমি, আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।”
বলতে বলতে তুশির হাবভাবের একটা বিস্তর পরিবর্তন স্পষ্ট লক্ষ্য করল ইয়াসির। অমনি মুখভঙ্গি বদলে গেল তার। সূক্ষ্ণ,তীক্ষ্ণ চোখটায় অস্বস্তির মেলা বসল। ঠোঁট শক্ত করে, খুব ছোটো শব্দে বলল,
“ বলো।”
তুশির অভিব্যক্তি পাল্টেছে। চঞ্চল-উজ্জ্বল মুখশ্রী মিইয়েছে লাজে। কানের পিঠে চুল গুজে চিবুকটাকে বুকে নামিয়ে নিলো । মিহি স্বরে বলল,
“ আমি আসলে,আমি আমি আমি, আসলে আমি..
তুশি ঢোক গিলল। কথা বেরোচ্ছে না। মনে হচ্ছে দুনিয়ার সকল লজ্জা কাঁধে এসে বসেছে। জড়োতার একটা লম্বা হাত চেপে ধরেছে শ্বাসনালী। কী আশ্চর্য, ওতো প্র‍্যাকটিস করে এসেছিল। মেয়েটা ফের চেষ্টা করল। থেমে থেমে বলল,

“ আমি আসলে আমি আপনাকে আম ঐ আমি..আমি মানে আমি, আমি ঐ ইয়ে আমি..
ইয়াসির ধৈর্যের খেই হারাল। কড়কড়ে রুক্ষ স্বরে বলল,
“ আমি কী?”
ধমকটা হাতুড়ি হয়ে তুশির বুকে বাড়ি মারল। ভয়ডরে মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল,
“ আমি ভাত খাব।”
ইয়াসির ভ্যাবাচ্যাকা খায়,
“ হ্যাঁ?”
“ না না, আমি রুটি খাব।”
“ কীহ?”
তুশি জিভ কাটল। হতবুদ্ধি চোখে চেয়ে আছে ইয়াসির। ঐ দৃষ্টিতে আরো গুলিয়ে গেল মেয়েটা। হাড়েহাড়ে বুঝল, যতটা সহজ ভেবেছিল, এসব ভালোবাসাবাসি ততটাই কঠিন। আর তার চেয়েও কঠিন এগুলো মুখ ফুটে বলা। যা এই মূহুর্তে তুশির পক্ষে অসম্ভব। লজ্জা আর ব্যর্থতা নিয়ে মেয়েটা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। কিচ্ছু না বলে বেরিয়ে এলো ছুটে। ব্যাপারটায় আরো বোকা বনে গেল ইয়াসির। এলোমেলো চোখের পাতা ফেলে,গলা তুলে ডাকল,
“ অ্যাই মেয়ে ,আশ্চর্য…. অ্যাই চোর…”

ডাক শুনেও থামল না তুশি। একেবারে বৈশাখের হাওয়ার মতো দূরন্ত গতিতে নেমে এলো নিচে । খাবার টেবিলের ওখান থেকে তনিমা ডাকলেন। হাসনাও ডাকলেন দু বার। কিন্তু, কিছুতেই ওর পথ রোধ করা গেল না। এক ছুটে সোজা নিজের রুমে ঢুকল তুশি। ইউশা তখন নেই। গিয়েছে হয়ত কোথাও। ফাঁকা ঘরে তুশির রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গেল। নিজের ওপর বিরক্তিতে চৌচির হলো মাথাটা। ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে গিয়ে কী লাভ হলো? একটা টু শব্দও তো করতে পারল না! তুশি বুঝল না এই রাগ এখন কার ওপর ঝাড়বে। গজগজ করতে করতে টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। খাতা কলম বের করল দুমদাম করে। দাঁত চেপে,ঝুঁকে ঝুঁকে লিখল,

“ তুশিরে তুশি
খা গরুর ভুষি,
বলতে তো পারলি না,বিটকেল তোমায় ভালোবাসি!”
তারপর কাগজটা খাতা থেকে এক টানে ছিঁড়ে,মুঠোর ভেতর দুমড়েমুচড়ে মাথার ওপর দিয়ে পেছনে ছুড়ে ফেলল সে। তক্ষুণি এক জোড়া বুট পরা এসে চৌকাঠে থামল। দলা করা কাগজটা গিয়ে পড়ল ঠিক তার সামনে। একটু থমকাল ইয়াসির। বিভ্রান্ত চিত্তে নিচু হয়ে তুলল কাগজটা। ভাঁজ খুলে পড়তেই,চোখ জোড়া বেঁকে বসল আরো।
প্রশ্ন ছুড়ল কৌতূহলে,

“ বিটকেল কে?”
তুশি এপাশ ফিরে ফুঁসছিল। কণ্ঠ শুনে চমকে পিছু ফিরল সহসা। ইয়াসিরকে দেখেই ভীষণ বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠে গেল। এই রে,বিটকেলই জিজ্ঞেস করছে বিটকেল কে? এখন কী বলবে ও? তবে ইয়াসির উত্তরের আশায় নেই। কাগজটা ফের পড়ল সে। ঠান্ডা চোখ তুলে আরেক পল দেখল তুশির ঘামে চ্যাটচ্যাটে মুখ। কিছু বুঝল কিনা জানা নেই,আচমকা কপাল টানটান করে ফেলল ইয়াসির। বদলে গেল চোয়াল। গাঢ়,ভারি অস্বস্তিতে লেপ্টে এলো চাউনিরা । শক্তপোক্ত চিবুক হঠাৎই কেমন থম ধরে গেল। তুরন্ত কাগজটা ফেলে দিয়ে হনহনে পায়ে চলে গেল ইয়াসির। তুশি বিভ্রান্ত হয়! ছুটে এসে, দরজার কাঠ দুহাতে আগলে ঝুলে পড়ে। ততক্ষণে সদর দরজা পার করে চলে যাচ্ছে ইয়াসির। তনিমা ব্যস্ত গলায় পিছু ডেকে বললেন,

কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৩৪ (২)

“ সার্থ শোন,কিছু কথা ছিল!”
ছেলেটা থামেনি। খুব থমথমে স্বরে জানিয়ে দিলো,
“ রাতে।”
কিন্তু সবটা তুশির মাথার ওপর দিয়ে গেল। এমন করলেন কেন উনি? উনি কী কিছু বুঝেছেন? বুঝে কি রেগে গেলেন,নাকি লজ্জা পেলেন? মেয়েটা প্রশ্নের এত জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করতে পারল না। ইয়াসিরের মতো পাথর গোটা জন্মে ও দুটো দেখেনি। এই লোকের মন বোঝার চেয়ে,শাকিব খান কখন কোন মেয়েকে ভালোবাসে সেটা বোঝা সহজ!
ঠোঁট ফুলিয়ে, ধপাস করে গিয়েই বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল তুশি। এখন কপালে কোন শনি আছে,কে জানে!

কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৩৬