তরঙ্গে তোমার ছোঁয়া পর্ব ৫৭

তরঙ্গে তোমার ছোঁয়া পর্ব ৫৭
ফারহানা নিঝুম

নিজেকে ভালোবাসতে পারলেই জীবন সুন্দর,এই কথাটি সম্পূর্ণ ভাবে মেনে নিয়েছে নূপুর। আজকাল খুব একটা মনে পড়ে না সাইফুল কে,মাহির ফ্যামিলি সবাই কে নিয়ে তার কে টে যায়। মাঝে মধ্যে নিহালের সাথে টুকটাক কথা হয় তার।নিহালও খুব একটা কষ্ট দেয় না নূপুর কে। আড়াল থেকে ভালোবেসে যায় তাকে। যত্ন নেয়।কে বলেছে ভালোবাসলে পেতেই হবে?না পেয়ে কি দূর থেকে ভালোবাসা যায় না?নিহাল হয়তো এভাবেই সারা জীবন ভালোবেসে যাবে!

কিন্তু সেটা হয়তো চায়নি নূপুর ,তাই তো জোরপূর্বক বলেছে যাতে পৃথা কে বিয়ের কথাটা জানিয়ে দেয়।
বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে কল করলো পৃথার নাম্বারে। বেশ কয়েকবার মেয়েটার সাথে কথা হয়েছে তার। তাকে অনেক সম্মান করে মেয়েটা বুঝতেই দেয়নি সে যাকে ভালোবাসে তার ভালোবাসা হচ্ছে নূপুর।
বড় নির্বিঘ্নে কথা চালিয়ে গেছে তার সাথে।
বাসে বসে আছে পৃথা , বাড়ির পথ ধরেছে বাস।‌ আরো পনেরো মিনিটের মতো লাগবে সময়।
ফোনে রিং হতেই কানে চাপলো তা।
“হ্যাঁ নূপুর আপু বলুন। কেমন আছেন আপনি?”
নূপুর মৃদু হেসে বলল ‌।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমি ভালো আছি আর তোমার দিনটা ভালো করে দিতে ফোন করেছি।”
কিঞ্চিৎ অবাক হলো পৃথা , কি বলতে ফোন করেছে নূপুর? কোথাও নিহাল আর নূপুরের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়নি তো?
বুকের ভেতর ধুকপুক ধুকপুক করছে মেয়েটার। কেমন মিহিয়ে যাচ্ছে সে।
“তোমার জন্য দারুন একটা খবর আছে পৃথা।”
ফাঁকা ঢোক গিলে পৃথা , মিনমিনে গলায় শুধোয়।
“কি খবর আপু?”
নূপুর এক গাল হেসে বলল।
“আজকে নিহাল ভাইয়া তোমার সাথে কথা বলবে। বোধহয় ফোন দেবে। তুমি কিন্তু আজকের দিনটা ভোটেও মিস করো না।”

নূপুরের কথায় বড় উৎকন্ঠা দেখালো মেয়েটাকে।
“নিহাল আমার সাথে দেখা করবে?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ হতে পারে আজকের পর তোমাদের সম্পর্কটা বদলে যায়?”
অভ্যন্তরে একটুকরো শীতল হাওয়া বয়ে গেল। তবে কি নিহাল তার মনে একটুখানি আশ্রয় দেবে মেয়েটাকে?
ভালোবেসে কাছে টেনে নেবে?
মিনিট দশেক পর আবারো ফোন বেজে উঠল। এবারে কল করেছে নিহাল।
আজকে নিহাল আবারো সেই বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে , অপেক্ষা করে চলেছে ভীত নয়নের রমণীর।
“হ্যালো।”

শুকনো ঢোক গিললো পৃথা ,রিনরিনে গলায় বলল।
“জ্বি বলুন।”
নিহাল কপাল কুঁচকে নিল , লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বলল।
“অপেক্ষা করছি তাড়াতাড়ি এসো। আজকে অনেক জরুরী কথা বলব তোমাকে।”
পৃথার ছোট্ট মন পুলকিত হলো , ভেতরের ভালোবাসা পাওয়ার লোভ মাথা ছাড়া দিয়ে উঠলো। আকস্মিক নিহালের উদ্দেশ্যে বলে উঠে।
“আপনি কি আমাকে একটু ভালোবাসবেন নিহাল? ভালোবাসা বিহিন আমিটা ম’রে যাচ্ছি ধুঁকে ধুঁকে।”
কন্ঠনালি কেঁপে উঠলো নিহালের।আলতো করে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিলো সে।
“পৃথা।”

“একটু ভালোবাসবেন আমায়? আপনি বিহিন এই অবহেলিত আমিটা বড় অসহায়।”
নিহাল হাসলো ,বড় ইচ্ছে করলো বলতে। জানি না ভালোবাসতে পারবো কিনা কিন্তু কেউ যদি ভালোবাসি শুনে বেঁচে যায় তাহলে তা বলতে দোষ কোথায়?
“পৃথা আমি তোমাকে….
ছোট্ট সরু রাস্তা। অথচ তাতে অবলীলায় চলছে বিশাল আকৃতির বাস আর ট্রাক, যেনো সা’পের গলায় ঢুকে পড়া পাহাড়ি পাথর।
আচমকা সামনে থেকে আসা নীল রঙের বাসটা প্রবল শক্তিতে ধাক্কা খেলো কালো বাসটার সাথে। মুহূর্তেই ভয়াবহ শব্দে কেঁপে উঠল চারদিক। দুটো বাস যেন পাষাণের ঘুষিতে ছিটকে পড়লো দু’দিকে। ভেতরে বসে থাকা মানুষগুলো তখন চিৎকার আর য’ন্ত্রণার সাগরে কাতরাচ্ছে।

আজকে সামনের দিকে বসেছিল পৃথা। সেই সামনের আসনটাই হয়ে গেল তার মৃ’ত্যুফাঁদ। ধাক্কার সাথে সাথে মাথা সজোরে আছড়ে পড়লো সামনের কাঁচে। মুহূর্তেই ভেঙে গুঁড়িয়ে ছড়িয়ে পড়লো অসংখ্য কাঁচের টুকরো। ড্রাইভার আর সে দু’জনেই রক্তা’ক্ত হয়ে গেল। কাঁচ যেন তাদের চামড়া ভেদ করে অন্তর পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে।
তার মুঠোয় ধরা ফোনটা ধপ করে ছিটকে কোথাও মিলিয়ে গেল। ফোনটার সাথে মিলিয়ে গেল কত না আশা, কত না প্রতীক্ষা। বুকের ভেতর হাহাকার করতে লাগলো পৃথার শেষবার শুধু শুনতে চেয়েছিলো একটি শব্দ, “ভালোবাসি”। অথচ সেই শব্দ শোনার আগেই নিয়তির দরজা বন্ধ হয়ে গেল তার জন্য।
মাথার ডান বরাবর ঢুকে থাকা কাঁচের বড় টুকরো থেকে র’ক্তধারা নেমে এলো। চারপাশে আ’গুন লেগে গেলো দ্বিতীয় বাসটায়। পৃথার স্নিগ্ধ উজ্জল মুখ থেঁতলে গেল, একটি চোখ আর চেনার উপায় নেই। তবুও তার দু’চোখ খোলা রইলো শেষ দৃশ্যটা যেন দেখতে চেয়েছিলো সে।

পরণের সাদা জামাটা মুহূর্তেই লাল রঙে ভিজে উঠলো। র’ক্তের অশ্রুতে লেখা হলো এক অনন্ত বেদনা। ভালোবাসাহীন জীবনের পৃথা অবশেষে সব ছেড়ে চলে গেল। পৃথিবীর মায়া, মানুষজনের হাহাকার, ব্যথায় ভরা সব কিছু থেকে মুক্তি নিয়ে নিঃশ্বাস ফেললো শেষবারের মতো। কেঁপে কেঁপে উঠলো তার শরীর টা , থেঁতলে যাওয়া একটি চোখ তবুও একটি বার আশা করেছিল নিহালের আদুরে মুখখানি যদি দেখতে পেতো সে! অতঃপর তা বোধহয় হলো না , কাঁপতে কাঁপতে দম ছাড়লো , অবশেষে তার মুক্তি। আর কাউকে কখনো বলবে না “ভালোবাসি আপনাকে আমাকে একটু ভালোবাসবেন?”

রাস্তায় দাঁড়ানো মানুষজন ছুটোছুটি করছে। কেউ ফোন করছে ফায়ার সার্ভিসে, কেউ ব্যস্ত অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে। আ’গুনের ভেতরে আটকে থাকা যাত্রীদের বাঁচানোর জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে অপরিচিত মানুষগুলো।
তবুও একজন রমণীর চোখে সেই অপেক্ষার আক্ষেপই অমোঘ হয়ে রয়ে গেলো শেষে।
হসপিটালের মর্গে নিথর দেহ টা কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। মুখের উপর থেকে সরানো হলো সাদা কাপড় টা। এখনো কেমন তাকিয়ে আছে।
নিহাল অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসে। যাকেই আপন করতে চায় সে কেন দূরে চলে যায়?
তবে এবারে উল্টো হলো মেয়েটা হাজার চেয়েও তাকে ভালোবাসি বলাতে পারলো না।
থেঁতলে যাওয়া মুখটা একটুখানি ছুঁয়ে ফেলল নিহাল। নিশ্চয়ই এর আগে উজ্জ্বল স্নিগ্ধ দেখাচ্ছিল তার হাসি?‌খুব করে একটিবার ডাকতে ইচ্ছে করলো।
“পৃথা উঠো , আমি তোমাকে আজকে তোমার সবচেয়ে পছন্দের প্রিয় শব্দটি বলব।”
কিন্তু মেয়েটা তো আর উঠবে না। উঠবে না কখনো । নিহালের বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো। সে পৃথার অপরাধী , নিশ্চয়ই আশেপাশে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে সে। আর অভিযোগ জানাচ্ছে।
“আপনি কেন আমাকে একটু ভালোবাসি বললেন না নিহাল? বেঁচে থাকাকালীন আমি ভালোবাসা পাইনি ,মরে গিয়েও দেখুন কিভাবে মর্গে পড়ে আছি!”
কিছু চরিত্র কথা বলে ,বার বার বলে তারা আড়ালে আবডালে কাউকে ভালোবেসে ধুঁ’কে ধুঁ’কে ম’রে…..
~পৃথা
~ফারহানা নিঝুম

দীর্ঘ ছয় মাস পর ফিরছে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তাশফিন শেখ। বড়সড় একটি মিশনে ছিলো সে।
ফারাহ সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে, তাঁদের বিয়ের প্রায় আড়াই বছর হতে চললো।যখন প্রথম বার বিয়ে হয়েছে সেই হিসেব করে ফারাহ। যদি দ্বিতীয় বিয়েটা ধরা হয় তাহলে দেড় বছর হয়ে গেছে। পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছে ফারাহ।তাশফিন না থাকাকালীন বেশিভাগ সময় পড়াশোনা করেই কাটতো তার।
মনের মধ্যে আনন্দের শেষ নেই,আজ ঠিক গুনে গুনে ছয়টি মাস পর তার অবাধ্য লুচু লেফটেন্যান্ট কমান্ডার বাড়ি ফিরছে। ভাবতেই বুকের ভেতর ধুকপুক করছে ফারাহর। দিনটা স্পেশাল করতে চায়, মজার ব্যাপার হলো আজ তার জন্মদিন। জন্মদিনে বেশ বড়সড় সারপ্রাইজ দিতে চায় তাশফিন। পরিবারের অগোচরে নিজেদের রুমে ফারাহ সাজিয়ে নিয়েছে। নিজেদের ছোট ছোট ছবি গুলো দেয়ালে লাগিয়েছে। বিছানা থেকে শুরু করে ব্যালকনি অব্দি নিজের মন মতো সাজিয়ে নিয়েছে। এমন টা নয় যে পরিবারের লোকজন জানলে তাকে কিছু বলবে! উঁহু কেউ কিছু বলবে না, কিন্তু ফারাহর তো একটু হলেও লজ্জা লাগে।তাই কাউকে বলতে চায় না।
ব্যালকনিতে ছোটখাটো টেবিল সাজিয়েছে ফারাহ,তাশফিনের সঙ্গে একান্তই সময় কাটাতে চায় সে

“হ্যা বল?”
“ভাই তুই কই? আন্টি কল করেছে বললো এখনো ফিরিস নি?”
আরিয়ানের কথায় হাসলো তাশফিন। নিহাল, আরিয়ান সে তিনজনে একসাথে ফিরছে। অথচ তাশফিন বাড়ি না ফিরে অন্য কোথাও গিয়েছে।
“চিল ইয়ার আছি আশেপাশে, একটু পরেই ফিরছি।”
আরিয়ান গাড়িতে রয়েছে আপাতত।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই।
“তাহলে ওদের বলে দে ফোন করে? আঙ্কেল আন্টি নিশ্চয়ই টেনশন করবেন!”
তাশফিন কিছুটা একটা ভেবে বললো।
“এক কাজ করো মা কে কল করে বল আজকে আমি আসছি না,কাল সকালে আসবো!”
ভ্রুদ্বয় কুঞ্চিত করে তাকালো আরিয়ান।এটা কেমন কথা?
“কি বলছিস তুই?আসবি না মানে?”
“তুই জাস্ট ফোন করে বলে দে।”
“ওকে।”
আরিয়ান ঠিক কিছুই বুঝতে পারছে না তাশফিন ঠিক কি করতে চাইছে? যথারীতি রুবেনা শেখ কে ফোন করে বার্তা পৌঁছে দিলো আরিয়ান।
ছেলে আসবে না শুনে মন খারাপ হচ্ছে রুবেনা শেখের।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি ফিরে এসেছে আরিয়ান।বহু দিন পর স্নেহা কে দেখতে।বুকের গভীরে যেন হাওয়া ভরা ঢেউ উঠছে একের পর এক। অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিটি শিরায় উপশিরায়। আরিয়ানের দৃষ্টিতে একমাত্র কাঙ্ক্ষিত প্রতিচ্ছবি সেই মুখটি। মনটা যেন ছটফট করছে, শুধু একবার তাকে দেখবে বলে।বাড়ির চৌহদ্দিতে পা রাখতেই চোখে পড়ল সদর দরজাটা হালকা খোলা। মুহূর্তেই হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে গেলো। কী এক অজানা উত্তেজনা, অস্থির ভঙ্গিতে সে এগিয়ে যেতে লাগল দরজার দিকে। প্রতিটি পদক্ষেপ যেন গুনে গুনে হাঁটছে, তবু তাড়াহুড়ো থামছে না।হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই মুখটি সেই প্রিয় চোখজোড়া তার সামনে আসবে। ভেতরের ব্যাকুলতা তখন উপছে পড়ছে।

“স্নেহা?স্নে..
হুড়মুড়িয়ে কিছু একটা বুকে এসে ভারী খেলো আরিয়ানের বুকে।
“স্নেহা?”
“ভালোবাসি আপনাকে অনেক ভালোবাসি, আপনাকে মিস করেছি।খুব মিস করেছি।”
স্নেহার মুখে ভালোবাসার কথাটি শুনে চমকে উঠে আরিয়ান। নিজের চোখ করে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। সত্যি কি?
“স্নেহা? ঠিক আছো?”
“হুঁ।”
আরিয়ান ঝাপটে ধরে স্নেহা কে।
“আমি তো সেই কবে থেকে ভালোবাসি।শুধু তোমার মুখ থেকে শোনার অপেক্ষায় ছিলাম। আজকে আমার আনন্দের দিন।”
লাজুক হাসে স্নেহা,আজকে তো তারও খুশির দিন।
“উফ্ স্নেহা আমি ভাবতে পারছি তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি সত্যি ভীষণ খুশি।”
স্নেহা একই ভাবে জড়িয়ে ধরে বসে আছে আরিয়ান কে।ভালোবাসা পেতে হলে ভাগ্য লাগে।সে ভীষণ ভাগ্যবতী তাই তো সে আরিয়ানের ভালোবাসা পেয়েছে।

নিকষ কালো আঁধারে আচ্ছন্ন হয়ে আছে আকাশটা। নিঃসঙ্গতার এক চাদরে ঢাকা পড়েছে সমস্ত দিগন্ত। মাঝ আকাশে থম ধরে ঝুলে আছে একটা বড়সড় উজ্জ্বল চাঁদ নীরব অথচ গম্ভীর। চারদিক নিস্তব্ধ, যেন চারপাশের নিস্তব্ধতা ফারাহর হৃদয়ের হাহাকারকেই প্রতিধ্বনিত করছে।একাকী একটা রুমে, এক কোণে চুপ করে বসে আছে ফারাহ। চোখে ঘন বি’ষাদ আর বুকের ভেতর জমে থাকা অস্থিরতা তাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে ধীরে ধীরে। আর মাত্র কিছু ঘন্টা পরেই তার জন্মদিন। এই বিশেষ দিনটায় সে চেয়েছিল প্রিয়জন তাশফিন তার পাশে থাকবে। তার কণ্ঠে শুনবে শুভেচ্ছা, চোখে দেখবে সেই অদ্ভুত মায়া যা শুধুই তাশফিনের জন্য। কিন্তু লোকটা আসবে না।কিন্তু না, তাশফিন জানিয়ে দিয়েছে সে আসবে না। বাড়ির সবার সামনে বলে দিয়েছে স্পষ্ট করে। সেই শব্দগুলো যেন আজও কানে বাজছে ফারাহর। কষ্ট হচ্ছে তার খুব।

আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে গেছে তা বুঝতেই পারেনি ফারাহ।
ঘড়ির কাঁটায় বারোটা ছুঁই ছুঁই করছে। কানের কাছে তপ্ত নিঃশ্বাস পড়তেই নড়ে চড়ে ফারাহ
কেউ ফিসফিসিয়ে বলে।
“হ্যাপি বার্থডে সুখ।মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্য ডে।”
হকচকিয়ে উঠে বসলো ফারাহ। নিজের চোখের সামনে তাশফিন কে দেখে ভড়কালো সে।ভূত দেখার মতো করে তাকিয়ে আছে। ফারাহ কে অবাক করে দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো তাশফিন।
“মিসেস শেখ হ্যাপি বার্থডে।”
এক রাশ বিস্ময় নিয়ে বলল ফারাহ।
“আপনি কখন এলেন? আপনি তো বলেছিলেন..
“সারপ্রাইজ জান। আপনার জন্য সারপ্রাইজ।”
“বাড়ির বাকিরা জানে? ওদের বলতে হবে!”
অধর বাঁকিয়ে হাসলো তাশফিন, ফারাহর গালে হাত রেখে মৃদু স্বরে বলল।
“অলরেডি জানিয়ে দিয়েছি।ওরা নিচেই আছে।”
“তাহলে চলুন নিচে যাই।”
“উঁহু ,আই নিড সাম স্পেস ফর নাউ।”
থমকে গেল ফারাহ।তার চোখের চাহনি অন্য রকম। সর্বাঙ্গ কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
“ম্যাডাম চলুন কেক কা’টা যাক?”

হাঁটু গলিয়ে পাঁজা কোলে তুলে নিল ফারাহ কে তাশফিন।ধীর পায়ে অগ্রসর হচ্ছে ব্যালকনির দিকে। টেবিলের উপর কেক রাখা রয়েছে।কেক কাটার ছু’রি তুলে হাতে দিলো ফারাহর! পিটপিট চোখ করে তাকাচ্ছে ফারাহ। অদ্ভুত হাসলো তাশফিন।চোখে ইশারা করে কা’টতে। ফারাহ কেক কে টে এখ পিস তুলে মুখে এগিয়ে দিলো তাশফিনের।মুখ সরিয়ে নিলো সে! হাতটা উল্টো করে ফারাহ কে খাইয়ে দিলো।
“আপনি খাবেন না?”
“হোয়াই নট?”
তাশফিন এগিয়ে এলো এক পা,হাত রাখলো বুকের কাছে।একটা একটা করে বাটন খুলতে লাগল। আঁতকে উঠে ফারাহ। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সে। উন্মুক্ত তাশফিন কে দেখে বুক কাঁপে দুরু দুরু। হাতের মাংসপেশী গুলো বেরিয়েছে, প্রশস্ত চওড়া বুক স্পষ্ট।
“আপনি এটা… দেখুন আজকে রা
“নো মোর ওয়ার্ড’স জান।নিড ইউ ব্যাডলি সুখ।”

পা পিছিয়ে যাচ্ছে ফারাহর।তাশফিনের ভাবসাব মোটেও ভালো লাগছে তার কাছে। পালাতে চাইলো ফারাহ, কিন্তু তার আগেই শক্ত হাতের বাঁধনে আটকা পড়ে। ছটপট করে ফারাহ।
“দেখুন প্লিজ লেফটেন্যান্ট সাহেব আজকে না। ছেড়ে দিন ছেড়ে দিন।”
“নো ওয়ে জান।নাউ আই উইল ইট ইউ।”
অকস্মাৎ তাশফিনের হাতে কামড়ে দিলো ফারাহ,ছেড়ে দিলো তাশফিন।ছাড়া পেতেই ছুটে ছাদের দিকে এগুতে লাগলো ফারাহ।গা দুলিয়ে হেসে ফেলল তাশফিন।
নিজ মনেই বিড়বিড় করে বলল।
“উফ্ জান এটা কি করলে?ছাদে?নট ব্যাড।”
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগলো ফারাহ,যাক বাবা বেঁচে গেছে সে।না হলে রুমে থাকলে লোকটা বড্ড পাগলামি করতো।
শেষ নিঃশ্বাস টানতেই অনাবৃত বক্ষে পুরুষ্ট হাতের লেপন পেয়ে চমকে উঠে সে। সম্পূর্ণ কেকের অংশ মাখিয়ে দিয়েছে তাকে।চমকে উঠে ফারাহ।

“ল.. লেফটেন্যান্ট সাহেব এটা কি করলেন?”
কানের কাছে ওষ্ঠো ছুঁইয়ে তাশফিন ফিসফিসিয়ে বললো।
“বাঁচতে পারলে না জান।আই’ম গিভিং ইউ আ গ্যারান্টি টুনাইট ইজ গোইং টু বি টেরিফাইং ফর ইউ।”
থরথরিয়ে কাঁপছে ফারাহ শুকনো ঢোক গিলে বলল।
“দেখুন এটা ছাদ,এই খোলা ছাদে আপনি..
“ওয়েট!”
তাশফিন পিছিয়ে গিয়ে ছাদের দরজা টা লক করে দিলো। থতমত খেয়ে গেল ফারাহ।ছাদে এসে মারাত্মক ভুল করেছে সে।তাশফিন হাতের মুঠোয় এক গাদা কেক নিয়ে এগিয়ে আসছে। পরপর ফারাহ ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে।
“প্লিজ প্লিজ আসবেন না। আমি কিন্তু….
“আই ওয়ান্ট ইউ সো ব্যাডলি রাইট নাও, জান।”

ফারাহ ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে হাত পা কাঁপছে। বাঁকা হাসলো তাশফিন, ফিসফিসিয়ে হাস্কিটুনে বলল।
“আমার তরফ থেকে স্পেশাল বার্থ ডে গিফট নেবে না সুখ? ডোন্ট ওয়ারি আই’ল বি অ্যা পারফেক্ট জেন্টলম্যান।”
ঝড়ের বেগে এসে তাকে সম্পূর্ণ রূপে কেকে লেপ্টে দিলো তাশফিন। আকস্মিক ভাবে তাকে পেঁচিয়ে ধরেছে তাশফিন। ঠোঁটের ভাঁজে ঠোঁট গুঁজে আঁকড়ে ধরে তাকে। পরপর নেমে আসে অনাবৃত বক্ষে পুরুষ্ট ওষ্ঠো ছোঁয়ায়, লেপ্টে থাকা কেকের অংশ মাখামাখি অবস্থা। নিজের আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে তাকে। দু’জনে মিলে মিশে একাকার।পরপে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তাকে নিচে,তাশফিন কে উপরে আসতে দেখে কেঁপে উঠলো ফারাহ। তাকে কোনো প্রকাশ সুযোগ দেয়া হয় নি।

তরঙ্গে তোমার ছোঁয়া পর্ব ৫৬

খোলা আকাশ টা হা করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। চাঁদটা যেনো লজ্জায় লুকিয়ে পড়ে মেঘের আড়ালে।সেও বুঝি তাশফিনের উন্মা’দনা দেখে লাজুক হাসে।তাশফিনের অবাধ্য হাতের স্পর্শে গোঙাতে লাগলো ফারাহ, হিমশিম খায় পুরুষ কে সামলে গিয়ে।

তরঙ্গে তোমার ছোঁয়া পর্ব ৫৮