নূরজাহানের সংসার পর্ব ৯

নূরজাহানের সংসার পর্ব ৯
শ্রীমতি প্রজ্ঞা মঞ্জরী

স্নেহের মারজানা,
আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিস।আশা করি স্বামী-সন্তান নিয়ে তুই ভীষণ ভালো আছিস।কত বছর হয়ে গেছে তোর সাথে দেখা হয়না।সম্ভবত যেদিন বরিশাল থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ঢাকায় চলে এলাম,সেদিনই তোর সাথে শেষবারের মতো দেখা হয়েছিল আমার।মা গত হলেন তার ছয় বছর পরেই।গ্রামের সাথে সেইযে সব সম্পর্ক চুকেবুকে গেলো আর ওমুখো হইনি।তবে তোর চাচাতো ভাই রফিকের সাথে আমার সেদিন দেখা হয়েছিলো।বললো ঢাকায় কোনো বিশেষ কাজে এসেছিলো।ওর থেকে তোর নাম্বারটা নিয়ে রেখেছিলাম।

এই চিঠিটা যখন তুই হাতে পাবি তখন হয়তো আমি আর নেই। কারণ আমি বেঁচে থাকাকালীন এই চিঠি তোর হাতে পড়ার সম্ভাবনা কম।আমার মেয়েটাকে দিয়ে তোকে চিঠিটা পাঠালাম।ও নিজেই গেছে তোর কাছে?নাকি তোর ঠিকানায় ডাকে পাঠিয়েছে?
এবার আসল কথায় আসি। আমার জীবনের কোনো কিছুই তোর অজানা নয়।আমার সাবিলার সাথে বিয়ে হওয়া,আমার মেয়ে নূরজাহান,আমাদের ডিভোর্স,এরপর দ্বিতীয়বার রাহেলাকে বিয়ে করা সব তোর জানা।রাহেলা আমার বিয়ের এক বছরের মধ্যে ফাহিমের জন্ম।রাহেলা নূরকে কখনো অত্যাচার করেনি;আমার সামনে করেনি।নূরের মুখেও কখনো রাহেলাকে নিয়ে কোনো অভিযোগ শুনিনি। রাহেলা নূরকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসে;এমনটাই জানতাম আমি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তবে,আমার এই ধারণা;গত বারো বছরের সংসার সবই যে মিথ্যে ছিলো তা আমি একটু আগেই জানতে পারি।আজ কারো সাথে রাহেলার ফোনের কথোপকথন আমায় একদম ভেঙ্গে দিয়েছে। ওপাশের ব্যক্তিটা কে ছিলো আমার জানা নেই,তবে রাহেলার সাথে তাকে বলছিলো সে শুধু নিজের কলঙ্ক ঢাকতে আমায় বিয়ে করেছিলো।আমার নূরকে নাকি সে অপছন্দ করে, ঘৃণা করে। আমার নূর নাকি তার জন্য সতীনের ফেলে যাওয়া কাঁটা। আরো ভয়ঙ্কর বিষয় কি জানিস? আমার ফাহিম; আমার সন্তান নয়। যাকে আমি এগারোটা বছর নিজের সন্তান ভেবে লালন পালন করলাম সে আমার সন্তান নয়? সে হয়তো রাহেলা আর অন্য কারো অবৈধ বা বৈধতার ফসল।

আমার মনে হচ্ছে আমি খুব শীঘ্রই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে চলেছি।কিন্তু আমার নূর আমি চলে যাওয়ার পর একদম এতিম হয়ে যাবে।জানিনা রাহেলা ওর সাথে ঠিক কি করবে,তবে ভালো কিছু যে করবে না তা আমি নিশ্চিত। আমার ওই মেয়েটা যে এতিমের মতো মা ছাড়া বড় হয়েছে,তাকে রাহেলা কি করে ঘৃণা করে বলতে পারিস মারজু?
আমার এই খামের মধ্যে একটা চেক আছে।চেকটায় লেখা একাউন্ট নাম্বারে আমার পেনশনে এককালীন পাওয়া টাকাটা আছে।তোকে আমি চিনি,বিশ্বাস করি।আমি জানি তোর হাতে এই চেক এলে তুই আমার নূরকে তার প্রাপ্যটা পাইয়ে দিবি।নূরের হাতে আমি চেকটা সরাসরি দেইনি,কারণ ওকে কিছু দিলে ও তা রাহেলার কাছে আমানত হিসেবে দেয়।

আমার মেয়েটাকে দেখে রাখিস মারজু।একটা ভালো ছেলে দেখে ওর বিয়ে দিয়ে দিস যদি আমি বেঁচে না থাকি।আর বেঁচে গেলে তো নিজেই আমার মেয়েটাকে একজন রাজপুত্রের হাতে তুলে দিব।আমার মেয়েটা যে জনমদুখিনী। একটু সুখ আর ভালোবাসার বড্ড কাঙাল ও।
আমি আমার পত্রের ইতি টানছি।রাহেলাকে আজ আমি প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারিনি তার এসব কার্যকলাপ নিয়ে।ভবিষ্যতে সেই সুযোগ পাবো কিনা জানিনা। যদি না পাই তবে আমার হয়ে তুই সবটা খুঁজে বের করিস বোন।
ইতি,
তোর ভাইজান।

চিঠির পাতাটা নূরের চোখের পানিতে ভিজে যাচ্ছে। বার বার চোখজোড়া মুছছে সে।চিঠিটা পড়া শেষ হলে সেটা বুকের সাথে মিশিয়ে সশব্দে কেঁদে ওঠে নূর।অর্ণব দৌঁড়ে গিয়ে নূরের পাশে দাঁড়াতেই অর্ণবের কোমর পেঁচিয়ে ধরে কাঁদতে থাকে নূর। ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলে ওঠে,
“বাবা….আমার বাবা। কত কষ্ট, কত কথা বুকের মধ্যে নিয়ে চলে গেছো তুমি বাবা? আমায় কেন বললে না বাবা?তোমায় ঠকিয়েছে যারা তাদের শাস্তি কেন দিয়ে গেলে না বাবা?ও বাবা কোথায় গেলে তুমি? তোমার নূর তোমায় খুব মিস করছে বাবা। আমায় এতিম করে রেখে গেলে বাবা,আজ নিজেকে সত্যিকারের এতিম লাগছে বাবা। মাথার উপর মা-বাবা হাত নেই,আমার কান্নায় কেউ বলার মতো নেই-কাঁদিস না মা। বাবা আছে তো।”

নূরের আহাজারি দেখে মারজানা খাতুন শাড়ির আঁচলটা মুখে গুঁজে নীরবে চোখের জল ফেলছেন। নূরের আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। বসার ঘর থেকে তাসিন,স্নেহা,সোহেল আর স্নেহার বাবা উপস্থিত হলেন নূরের ঘরটায়।নূরের এভাবে “বাবা, বাবা” করে করা আর্তনাদে স্নেহা কেঁদেই ফেললো।চোখ বেয়ে অবাধ জলের স্রোত বেয়ে চললো তার। এদিকে তাসিন বিস্ময়ে হা হয়ে আছে। স্নেহার এমন কান্না দেখে তাসিন বলে ওঠে, “সবাই মিলে কান্না না করে ভাবীকে সামলান।”
স্নেহা তৎক্ষণাৎ ঘুরে তাকায় তাসিনের দিকে।

এদিকে অর্ণব নূরকে কিছুতেই থামাতে পারছে না।সে বার বার নূরকে বোঝাচ্ছে এভাবে কান্না করা এই মূহুর্তে তার জন্য ক্ষতিকর;কিন্তু নূর তা শুনছে না। অর্ণব।এরবার অস্থির হয়ে পড়লো।নূরকে এক ঝটকায় পাঁজাকোলে নিয়ে বলে ওঠে, “আপনারা প্লিজ একটু বাইরে যাবেন?ও এখন কান্না না থামালে ভীষণ বিপদ।”
অর্ণবের এমন কাণ্ডে বাকি সবাই অবাক হলেও তাসিন নির্বিকার। সে এখনো স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। স্নেহা অর্ণবের কথা শুনে রুম থেকে বের হতে নিবে এমন সময় তাসিনের দিকে চোখ যায় তার।তাসিনের এমন গভীর পর্যবেক্ষণে ভ্রু কুচকে বিরক্তিভরা দৃষ্টি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় সে।সবাই বেরিয়ে গেলে তাসিন সবার শেষে বের হয়।যাওয়ার আগে ডোর লক করে দিয়ে যায়।

অর্ণব নূরকে কোলে নিয়ে বিছানার উপর বসে।নূরকে নিজের কোলের উপর বসিয়ে নূরের মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে রাখে।নূরের কান্নার বেগ কমে এসেছে।অর্ণব একটু পর পর চুমু খাচ্ছে নূরের হাতে, কখনো কপালে, কখনো চুলের ভাজে।
“নিজেকে সামলাও নূরজাহান।এখনো অনেকটা সত্য বের করা বাকি।”
“মামণি এমন কেন করলেন?এতোটা নিখুঁত অভিনয় ও মানুষ করতে পারে!”

অর্ণব নূরের কপালে চুমু খায়। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ওঠে, “মানুষের মধ্যেও কাল সাপের মতো বিষ থাকে নূরজাহান।সবার মধ্যে একটা পশু থাকে,যেটা আমরা দমন করি নিজের প্রবৃত্তি আর লোভ-লালসাকে দাবিয়ে রাখার মাধ্যমে।তবে সবাই তা পারেনা নূরজাহান। এখন তোমায় শক্ত থাকতে হবে,কাল হয়তো আরো বড় কোনো অপ্রীতিকর সত্যের মুখোমুখি হবে তুমি।নিজেকে প্রস্তুত কর নূরজাহান।”
নূর হালকা মাথা নাড়ায়।অত:পর অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে থাকে কিছুক্ষণ।
অর্ণব নূরকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কান্নার দরুন ফর্সা মুখটা, নাকের অগ্রভাগ লাল হয়ে গেছে।চোখ মুখ হালকা ফুলে গেছে।

অর্ণব নূরের কামিজের ফাঁকে হাত গলিয়ে তার উন্মুক্ত কোমর স্পর্শ করে।অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ পেয়ে ঝট করে চোখ খোলে নূর।অর্ণবের বুক থেকে মাথা তুলে তার চোখে চোখ রাখে। অর্ণব ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে নূরের গালে টুপ করে চুমু খায়।অর্ণবের এমন কাণ্ডে অবাক হয় নূর;লজ্জাও পায় খানিকটা।
“তোমায় কি ভীষণ আদুরে লাগছে জাহান।বড্ড প্রেম পাচ্ছে আমার।”
নতুন সম্বোধনে অবাক দৃষ্টিতে অর্ণবের দিকে তাকায় নূর। সে মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবে এমন সময় অর্ণব নিজের তর্জনী আঙ্গুল নূরের ঠোঁটে রেখে তাকে থামিয়ে দেয়।

এক লহমাহ দখল করে নেয় নূরের ওষ্ঠপুট। নূর এমনটা হবে আঁচ করতে পেরেছিলো বোধ হয়। তাই সে ঘাবড়ে না গিয়ে অর্ণবের সাথে সায় দেয়। অর্ণব এবার অপ্রতিরোধ্য। নিজের অধিকার আদায়ে সে বরাবরই সচেতন। নিজের পুরুষালী ঠোঁটের দখলদারিত্ব কায়েম করতে থাকে নূরের ঠোঁটে।
অন্যদিকে অর্ণবের নূরের ঠোঁটের উপর এমন দখলদারিত্বতে নূর পাগলপ্রায়।অর্ণবের অবাধ্য হাতের বিচরণ তাকে বেসামাল করে তুলছে। সে শক্ত করে খামচে ধরে অর্ণবের শার্টের কাঁধের অংশ।
অর্ণব ধীরে ধীরে নূরের ঠোঁট ছাড়ে।নূরকে বিছানায় শুইয়ে নূরের গলার ভাঁজে মুখ ডুবিয়ে রাখে কিছুক্ষণ। ঘ্রাণ নিতে থাকে নূরের শরীরের।অত:পর নূরের গলায়, ঘাঁড়ে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে।
নূরের হাত-পা অবশ হয়ে আসছে।সে এক হাতে অর্ণবের ঘাঁড়ের কাছে খামচে ধরে অন্য হাতে তার শার্ট খুলতে উদ্যত হয়।

নূরের পাগলামি দেখে অর্ণব হেসে ফেলে,নূরের গলা থেকে মুখ উঁচিয়ে বলে ওঠে, “ইয়্যু আর টু ফাস্ট জাহান।”
নূর লজ্জা পায় অর্ণবের কথায়।হাতটা আলগা হয়ে আসে অর্ণবের শার্টের বোতাম থেকে।ঠোঁট কামড়ে লাজুক হেসে বলে ওঠে, “আপনি এমন ঠোঁটকাটা স্বভাবের হলেন কবে থেকে?”
“যবে থেকে তুমি এমন ডেস্পারেট হলে, তবে থেকে।” বলেই নিজের কাজে মন দেয় অর্ণব। নূরকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সন্তর্পণে তার ঠোঁট দু’টোর উপর দখল নেয়। ধীরে ধীরে নূরের পুরো শরীরে নিজের দখলদারিত্ব চালায় অর্ণব।

রাতের শেষভাগে স্ত্রীর অনাবৃত শরীরটায় নিজের শার্ট টা পড়িয়ে নেয় অর্ণব;অত:পর চাদরে মুড়িয়ে নিজের বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।নূর তখন গভীর ঘুমে।নূরের কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়িয়ে তৃপ্তির হাসি দেয় অর্ণব।অত:পর ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেয় নিজেও।
দীর্ঘ একরাত-একদিন পর প্রেয়সীর সান্নিধ্য পেয়ে শান্তির ঘুম দেয় অর্ণব।
ঘড়ির কাঁটায় সকাল প্রায় নয়টা বাজে।ভোরের আলো ফুটেছে অনেক্ষণ আগেই।নূরের ঘুম এখনো ভাঙ্গেনি।অর্ণবের ঘুম ভাঙ্গলে সে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ঘড়িতে নয়টার বেশি বেজে গেছে দেখে নূরের কপালে চুমু দিয়ে তাকে ডাকতে থাকে।

“নূরজাহান?উঠে পড়।নয়টা বেজে গেছে।আমাদের ঢাকা ফিরতে হবে আবার।”
নূর উঠছেনা দেখে জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে দেয় অর্ণব।মুখের উপর সূর্যের সোনালী রশ্মি পড়তেই চোখ মুখ কুচকে নেয় নূর।অত:পর পিটিপিট করে চোখ মেলে তাকায়।
অর্ণব এগিয়ে এসে হাত ধরে নূরকে উঠিয়ে বসার।এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলে ওঠে, “যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।নাস্তা করবে,তারপর ওষুধ আছে তোমার।আবার আমাদের ঢাকাও ফিরতে হবে।”
নূর স্মিত হেসে মাথা নাড়ায়।অর্ণব হালকা করে তার ঠোঁটে চুমু খায়।

নূর খাট থেকে উঠে ব্যাগ থেকে এক সেট কাপড় বের করে,তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলেই অর্ণব বলে ওঠে, “মাঝে মাঝে এমন সিনারিও দেখিও জাহান।ড্যাম গর্জিয়াস।”
নূর অবাক হয়ে ঘুরে তাকায় অর্ণবের দিকে।”কিসে সিনারিও?”
অর্ণব কথা বলেনা।চোখ দিয়ে নূরের দিকে ইশারা করে। নূর নিজের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে যায়। তার পড়নে অর্ণবের শার্টটা,যেটা সে গতকাল পড়া ছিলো। নূরের আর বুঝতে বাকি রয়না কিছু।
“আপনি একটা যাচ্ছেতাই।”
“নাহ,আমি তোমার একমাত্র জামাই।”
নূর এক দৌঁড় দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। অর্ণব ও রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ডাইনিং এ মারজানার সাথে দেখা হয় অর্ণবের। তিনি নাস্তা সাজাচ্ছিলেন টেবিলে।
“ফুপ্পি,আজ আমি নূরকে নিয়ে ঢাকা ফিরবো।আপনিও যাবেন আমাদের সাথে?”

“শুধু তোমার ফুপ্পি নয়,আমরা সবাই যাবো তোমাদের সাথে।আমি গাড়ি ঠিক করে রেখেছি।নাস্তা করেই বেড়িয়ে পড়বো আমরা।” মারজানার স্বামী খালিদ অর্ণবের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলেন।
মারজানা ও সায় জানালেন স্বামীর কথায়। এমন সময় তাসিন বেরিয়ে এলো গেস্টরুম থেকে।মারজানা খাতুন সবাইকে নাস্তার জন্য বসতে বললেন।
“নূর কোথায় জামাই?ও খেতে আসলো না?”
“ঘুম থেকে উঠতে দেরি করেছে ফুপ্পি।ফ্রেশ হতে গেছে।চলে আসবে এক্ষুণি।”
অর্ণবের কথায় স্নেহা বলে ওঠে, “মা সবাইকে খেতে দেও,আমি নূরকে ডেকে আনছি।”
মারজানা সবাইকে খেতে দিলেন।একটু পরেই স্নেহা হাজির হলো নূরকে নিয়ে। অর্ণবের পাশের চেয়ারটায় নূর বসলে অর্ণব নিজেই নূরকে খাবার বেড়ে দিলো।

মারজানা খাতুন পরোটা,আলুর-দম,খাসির মাংস আরো কয়েক ধরনের ফল রেখেছিলেন সকালের নাস্তায়। অর্ণব পরোটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে কখনো আলুর-দম তো কখনো খাসির মাংসের ঝোলে মাখিয়ে খাইয়ে দিচ্ছিলো নূরকে। সবার সামনে এভাবে খাইয়ে দেওয়ায় অস্বস্তি হচ্ছিলো নূরের। এমনিতেও অর্ণব ছুটির দিন গুলোয় নূরকে এক বেলা হলেও নিজের হাতে খাইয়ে দিতো। তবে সেটা সবার সামনে নয়;নিজেদের ঘরে খাবার এনে।
“আমায় দিন,আমি পারবো খেতে।” নিচু গলায় বলে ওঠে নূর।
“আমি খাইয়ে দিচ্ছি,চুপচাপ খাও।”

অর্ণবের মৃদু ধমকে আর কিছু বললো না নূর;খেয়ে নিলো চুপচাপ। খাওয়া শেষে তাসিন,অর্ণব আর খালিদ সাহেব সোফায় বসে গল্প করছিলেন।স্নেহার ভাই সোহেল পাশে বসে সব শুনছিলো আর মাঝে মাঝে সাহিলকে নানান ধরণের প্রশ্ন করছিলো।তাসিনের সাথে সোহেলের বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। কয়েক ঘন্টা ব্যবধানেই সোহেল এখন আর পাইলট হতে চায়না,এইম ইন লাইফ চেইঞ্জ করে সেটা তাসিনের মতো পুলিশ অফিসার করে নিয়েছে।
স্নেহা আর অর্ণব রুম থেকে রেডি হয়ে বের হয়,মারজানা খাতুনও রেডি হয়ে বের হয়। অর্ণব এগিয়ে নূরের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নেয়।

নূরজাহানের সংসার পর্ব ৮

খালিদ সাহেব জানান গাড়ি চলে এসেছে। সবাই নিচে নেমে গাড়িতে ওঠে।গাড়িতে ওঠার আগে অর্ণব নূরের হাত ধরে বলে ওঠে, “আজ যেই সত্যিই বের হোক না কেন! তুমি সবসময় মনে রাখবে তুমি একা না নূরজাহান।তোমার স্বামী, তোমার সন্তানদের পিতা এই অধম পুরুষ সব সময় তোমার পাশে আছে।স্টে স্ট্রং বউ।” নূর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। অত:পর গাড়িতে উঠে রওনা হয় ঢাকার উদ্দেশ্যে।

নূরজাহানের সংসার পর্ব ১০