নূরজাহানের সংসার পর্ব ১০
শ্রীমতি প্রজ্ঞা মঞ্জরী
সূর্য এখন মাথার উপর বসে খাড়া ভাবে কিরণ দিচ্ছে। নিজের অসহনীয় তাপে মোটামোটি ঝলসে দিচ্ছে পুরো শহরটা।কেউ কেউ মাথায় ছাতা ধরে হাঁটছেন,যাচ্ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে।ছুটে চলেছেন অদম্য গতিতে;দৃঢ় পায়ে। এ শহরে সবাই আসে ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে।কিন্তু ভাগ্য কয়জনের সুপ্রসন্ন হয়?কতজনই বা পারে ভিটেমাটি ছেড়ে এই ইট-কাঠ-পাথরের শহরে এসে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে?আপন সত্ত্বার বলিদান দিয়েই এগোতে থাকে।যার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কেউ জানেনা।
ঢাকার নিত্য দিনের সঙ্গী এই ট্রাফিকজ্যাম। দু’মিনিটের রাস্তা দশ মিনিট করে যেওয়ার ক্ষমতা আছে এই মহাশয়ের।গাড়ির ভিতর অস্থির চিত্তে বসে আছে নূর।এতো গরম,জ্যাম,এই গাড়ির বদ্ধ পরিবেশ সবমিলিয়ে বিরক্ত ঠেকছে তার।গত আধা ঘন্টা ধরে গাড়িটা একই যায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।এমন সময়ে এতো জ্যাম কি করে হলো বুঝে আসেনা নূরের। এদিকে এসি চললেও ঘেমে যাচ্ছে নূর। মনের ভিতরের উত্তেজনা আর চিন্তা কিছুতেই দমাতে পারছেনা সে।
অর্ণব খেয়াল করলো নূরের অভিব্যক্তি। ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে মুখ খুলে নূরের সামনে ধরলো।
নূর মাথা ঘুরিয়ে গাড়ির বাইরে দেখছিলো।অর্ণব পানির বোতলটা সামনে ধরায় ঘাড় ঘুরিয়ে বোতলটা হাতে নেয় নূর।এটাই তার দরকার ছিলো।ছোট ছোট চুমুকে পানি খেয়ে বোতলটা অর্ণবের হাতে ধরিয়ে দেয়।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
-“খারাপ লাগছে নূরজাহান? নেমে যাবো গাড়ি থেকে?”
নূর না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো, “আমি ঠিক আছি,জ্যাম কখন ছাড়বে?”
-“এইতো ছেড়ে দিয়েছে ভাবী।রাস্তা ক্লিয়ার,এখনি গাড়ি চলতে শুরু করবে।” নূরের কথার জবাবে ফ্রন্টসিট থেকে বলে উঠলো তাসিন।
মিনিট দু’য়েকের মাথায়ই জ্যাম ঠেলে গাড়ি এগোতে শুরু করলো।
দুপুরের জন্য রান্না করছিলো রাহেলা।ছেলে ফাহিম স্কুলে আছে এখন।রান্নাঘরে তরকারি কষাতে কষাতে কলিংবেলের আওয়াজ পেলে কিছুটা পানি দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখলেন রাহেলা। ব্যস্ত ভঙ্গিতে শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দরজা খুলে দিলেন।
“ওহ্ তুই?”
“হ্যাঁ আমি।এমন সময় আর কে আসবে?”
“তাও ঠিক।আয় আয় ভিতরে আয়।” বলেই দরজার বাইরে থাকা রমণীকে ভিতরে নিয়ে এলো রাহেলা।
“কিরে রাহেলা? তোর মেয়ে জামাই কি তোর মেয়ের খোঁজ পেয়েছে?”
এমন কথায় রাহেলা যেন একটু বিরক্ত বোধ করলো। বেশ তেজ দেখিয়ে বলে উঠলো,
“আমি কি জানি?আর ও আমার মেয়ে হলো কবে থেকে? সৎ মেয়ে বল।” বলেই রান্না ঘরে চলে গেলো রাহেলা।
“আমি যে তোর বাসায় এতো ঘন ঘন আসি! রাগ করিস নাকি?”
“রাগ করলে আর আসবি না?”
“আসবো না কেন? আগেই আসতে পারতাম কিন্তু তোর জামাই আর মেয়ে;মানে সৎ মেয়ে আরকি। এরা আমায় দেখলে সব ধরে ফেলতো।”
“এখন আর সমস্যা নেই।ওই বেটাও মরছে আর মেয়েটাও কোথাও চলে গেছে।এবার আমি শান্তিতে থাকতে পারবো। আমার ফাহিমের অধিকার পুরোটা এবার পাবে ও।”
রাহেলার কথায় রমণীটি ব্যাঙ্গাত্তক হাসি দেয়।
“কিসের অধিকার রাহেলা? ফাহিম তো তোর অবৈধ সম্পর্কের ফসল। যেটা তুই ইকবালের ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দিয়েছিলি।ইকবাল বেচারা তোকে বিশ্বাস করে মরার আগ অবধি ঠকলো।”
রাহেলার চোখে ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠলো।সে যেই জঘন্য অতীত কারো সামনে আনতে চায় না সেটাই বলে উঠেছে রমণীটি।
রাহেলা কিছু বলতে যাবে এমন সময় আবারো কলিংবেল বেজে ওঠে। রাহেলা তরকারিতে ঝোল দিয়ে এসে দরজা খোলে।
সামনে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব;তার পাশেই মারজানা। মারজানার চিনতে অসুবিধা হলো না রাহেলাকে। কিন্তু একটু দূরেই সোফায় বসে থাকা রমণী যে এতক্ষণ রাহেলার সাথে গল্প করছিলো,তাকে দেখে চমকে ওঠে মারজানা। অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে, “সাবিলা ভাবী?”
সাবিলা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেছে মারজানাকে দেখে।সে যেন প্রস্তুত ছিলো না এমন কিছুর জন্য।অর্ণব নূরের হাত ধরে নিজের পিছন থেকে সামনে এনে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে।নূর চোখ তুলে সাবিলাকে দেখে অবাক হয়।সে ধীর পায়ে সাবিলার সামনে যেয়ে বলে, “মা?তুমি?”
সাবিলা এবার ভয় পেয়ে যান।নূরকে সামনে দেখে ভাবতে থাকেন কি উত্তর দেবেন মেয়েকে।
“তুমি এখানে কি করছো মা? এতো বছরে তো একবারের জন্যও আসোনি।আজ হঠাৎ এখানে?”
অন্যদিকে তাসিন আর অর্ণব সাবিলাকে দেখে প্রথমে অবাক না হলেও নূরের মুখে মা ডাক শুনে তারা দু’জনেই অবাক হয়। গতকাল যেই দুইবার অর্ণব নূরদের বাসায় এসেছে এর মধ্যে একবার সাবিলাকে দেখেছে অর্ণব। অর্ণব নিজেও জানতো না রাহেলা নূরের আপন মা নয়।
নূরের বাবা নূরের সমস্ত একাডেমিক কাগজে মায়ের স্থানে রাহেলার নাম দিয়েছিলেন।যেন ভবিষ্যতে কখনো তাকে কেউ প্রশ্ন না করতে পারে তার মায়ের নাম সার্টিফিকেটে সাবিলা কিন্তু তার ভাইয়ের সার্টিফিকেটে কেন রাহেলা দেওয়া। ফলস্বরুপ অর্ণব আর নূরের কাবিনের সময় ও মায়ের নামের স্থানে রাহেলার নামটাই ছিলো।
“উনি শুধু আজ আসেননি নূরজাহান।গতকালও আমি ওনাকে এই বাড়িতে দেখেছি।গতকাল সকালে তোমার খোঁজ নিতে আমি যখন এসেছিলাম;উনি তখন এখানেই ছিলেন। মাঝে আমি আর তাসিন যখন একসাথে আসলাম তখন ওনাকে না দেখলেও ড্রয়িংরুমে দুটো কোল্ড ড্রিংস এর গ্লাস আর স্ন্যাকস দেখে তাসিন আমায় বলেছিলো ঘরে তোমার মামণি ছাড়াও অন্য কেউ আছে। এখন মনে হচ্ছে উনিই ছিলেন।”
নূর অবাক হয় অর্ণবের কথায়।সাবিলা এখনো একটা কথাও বলেননি।
নূর এবার রাহেলার সামনে যায়।রাহেলার ইতমধ্যেই ভয়ে ঘাম ছুটে গেছে।
“মামণি?তুমি জানতে অর্ণব বিবাহিত?ওর একটা বাচ্চাও আছে?”
রাহেলা উত্তর দেয়না।
“উত্তর দাও মামণি।তোমার উত্তরের উপর আজ অনেক কিছু নির্ভর করছে।”
“নাহ!আমি জানতাম না।অর্ণবের সাথে আমার এসব কথা হয়নি।” রাহেলার এমন অকপটে মিথ্যে বলা শুনে অর্ণবের চোয়াক শক্ত হয়ে যায়। সে রেগে কিছু একটা বলতে নিবে এমন সময় তাসিন তাকে সামলায়।
“কিছু করিস না ভাই। ভাবীকে সবটা জানতে দে।”
“ওই মহিলা মুখের উপর মিথ্যে বলছে।আবার চোখে পানি এনে নূরকে ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করছে।”
“ভাবী এতো উইক না অর্ণব।সে যথেষ্ট বুদ্ধিমতী নারী।লেট হার হ্যান্ডেল। বাড়াবাড়ি হলে আমরা তো আছি।”
নূর এবার রাহেলাকে প্রশ্ন করে, “তুমি অর্ণবকে বলেছিলে যে আমি বন্ধ্যা? কোনোদিন বাচ্চার মা হতে পারবো না?”
রাহেলা এবারো এ কথা অস্বীকার করে।
“অর্ণব আমাকে বলেনি ওর বাচ্চা আছে।আমি বলিনি তুমি বন্ধ্যা। মায়ের কথা বিশ্বাস করো।অর্ণব একটা ঠক।ওর কথা শুনো না।মায়ের কথা শুনো।”
নূরের চোখে এবার ক্রোধ ফুটে ওঠে। “খবরদার আর একবার আমার স্বামীকে ঠক বা প্রতারক বললে আমি ভুলে যাবো আপনি আমার প্রয়াত বাবার স্ত্রী এবং আমার সৎমা।আপনার মতো জঘন্য মহিলা আমি আর একটাও দেখিনি। আপনি নারী নামের কলঙ্ক।আমার বাবার এতো বছরের বিশ্বাস আপনি ধ্বংস করেছেন।আমার বাবা আপনাকে বিশ্বাস করেছিলো।আপনি কি করলেন? নিজের অবৈধ সন্তানকে আমার বাবার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন। আমার বাবা নিঃস্বার্থ ভাবে আপনাকে ভালোবেসেছে,সম্মান করেছে।আপনার অবৈধ পাপের ফসলকে নিজের নাম দিয়েছে,সমাজে যায়গা করে দিয়েছে।আর আপনি? আপনি সেই মানুষটার সাথে প্রতারণা করলেন। আমার বাবা আপনার কাছে আমায় আমানত হিসেবে রেখেছিলেন।আপনি কি করলেন?আমার জীবনটা বিষিয়ে তুললেন।আমাকে আমার স্বামীর কাছে বন্ধ্যা উপাধি দিয়ে বিয়ে দিলেন।আপনি একটা কালসাপ।কালসাপ আপনি।”
নূরের কথায় রাহেলা বুঝতে পারে নূরের কাছে সবটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। কিন্তু নিজের ঘাড়ে কিছুতেই সে দোষ নিবে না।
“আমি তোমার সাথে এসব কিছুই করিনি নূর।তোমার মা,তোমার মা সাবিলা আমায় এসব করতে বলেছিলো।আমি অপারগ ছিলাম।”
সাবিলা যেন হতভম্ভ হয়ে পড়লেন রাহেলার কথায়। সাবিলাও কম যায়না।সেও বলে উঠলো, “মুখ সামলে রাহেলা।এসব কিছু আমার একার প্ল্যান ছিলোনা।তুই-ই ছিলি মাস্টার প্ল্যানার। আমার আগে তোর বুদ্ধি ছিলো এসব।”
“ইকবালকে ফাঁসানোর প্ল্যান তোর ছিলো সাবিলা।নূরকে অর্ণবের সাথে বিয়ে দেওয়ার প্ল্যানও তোর ছিলো।”
“আমি কখনো বলিনি নূরকে বন্ধ্যা বলতে। তুই নিজেই অর্ণবকে বলেছিলি নূর বন্ধ্যা।”
সাবিলা আর রাহেলা একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকে।
এমন সময় রাহেলার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় পড়ে। উপস্থিত সকলে হতভম্ভ হয়ে যায়। মারজানা খাতুন থাপ্পড় দিয়েছেন রাহেলাকে।
“তুই যে একটা নষ্টা মেয়ে তা বুঝতে আমার বাকি নেই। নাটক না করে সত্যি কথাটা বল। নাহলে আমার মুখের থেকে যে হাত বেশি চলে তা একটা থাপ্পড়েই আশা করি বুঝে গেছিস।”
রাহেলা যেন ক্রোধে ফাটছে।
এরই মধ্যে সাবিলা বলে ওঠে, “আমি বলছি সবটা।রাহেলা আর আমি ছোটবেলার বান্ধবী।আমার দাদা বাড়ির পাশে ওর নানু বাড়ি।ইকবালের সাথে আমার ডিভোর্সে আমার ইগো হার্ট হয়।ও আমায় চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল ও নূরের আইডিয়াল বাবা হবে।কিন্তু আমি ভেবে নিয়েছিলাম এমনটা আমি হতে দিবো না। কয়েক বছর পর যখন শুনলাম ইকবালের মা শয্যাশায়ী আর সে ইকবালের আবার বিয়ে দিবে তখন আমার মনে হয়েছিলো এবার আমার রিভেঞ্জ পূরণ করা যাবে।সেদিন বিকেলে রাহেলার সাথে আমার দেখা হয়। ও আমায় বলে ওদের গ্রামের এক ছেলের সাথে ওর সম্পর্ক ছিলো আর তা শারীরিক সম্পর্কেও গড়িয়েছে।এখন সে প্রেগন্যান্ট। বাড়িতে জানাজানি করতে চায় না।তাই সে বাচ্চাটা এবরশন করে ফেলবে।সেই মূহুর্তে আমি প্ল্যান করি রাহেলাকে কোনোভাবে যদি ইকবালের কাঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া যায়।
রাহেলার তখন ভালোই বয়স।এতো বয়সী একটা মেয়ের বিয়ে হয়না বললে সিম্প্যাথি পাওয়া সম্ভব, আর ইকবালও বলেছে সে এমন মেয়েকে বিয়ে করবে যার নূরকে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা আছে।আমি রাহেলার কাছে প্রস্তাব রাখি,যেন সে ইকবালকে বিয়ে করে।আমি জানতাম রাহেলা স্বার্থান্বেষী মেয়ে, কিন্তু ওর এপিয়ারেন্স ভালো।বাইরের সবাই ওকে ভালো মেয়ে হিসেবে চেনে।রাহেলা আমার কথায় এক লহমায় রাজি হয়ে যায়।আমিও লোকজন লাগিয়ে রাহেলার কথাটা ইকবালের মায়ের কানে তুলে দেই।আমার প্ল্যান সাকসেসফুল হয়। ইকবাল আর রাহেলার বিয়ে হয়ে যায়। আর প্ল্যান মোতাবেক রাহেলা বিয়ের রাতেই ইকবালকে কাছে টেনে নেয়,তাই এক মাসে মাথায় রাহেলার প্রেগন্যান্ট হওয়া নিয়ে কেউই সন্দেহ করেনা।”
এতটুকু বলে থেমে যায় সাবিলা।নূর অবাক হয়ে সবটা শুনলো।সে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।তার মা?তার নিজের মা এতোটা জঘন্য?লজ্জায়, ঘৃণায় নূরের গা গুলিয়ে আসছে।অথচ সাবিলা কি সাবলীলভাবে দাঁড়িয়ে আছে।কোনো অনুসূচনা নেই তার মধ্যে।
“আমার সাথে যা হয়েছে সেটাও কি আপনি জানতেন সাবিলা সুলতানা?”
নূরের মুখে এমন সম্বোধন শুনে সবাই অবাক হয়।
সাবিলা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। নূর কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।অর্ণব এগিয়ে এসে নূরকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
“আপনি না মা? আমাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন?ছয়টা বছর তো আপনার সাথে থেকেছিলাম। কি করে পারলেন এসব করতে?”
সাবিলা কথা বলেনা।
“আপনি জানেন?আপনি একজন অভিশপ্ত মানুষ।আমার বাবার আর আমার জীবনে এসে আমাদের জীবনটা ধ্বংস করে দিচ্ছিলেন।চলে গিয়েও শান্তি দিলেন না।আরেকটা অভিশাপ ঢুকিয়ে দিয়ে গেলেন।যার কারণে আমি এতিম হয়ে গেলাম। আপনি তো সেই কবেই আমার মন থেকে উঠে গেছিলেন।আজ থেকে আমার কাছে আপনি মৃত।আপনার মতো মা আল্লাহ কাউকে না দিক।আপনি এখনো একা কেন জানেন?আমার বাবার রুহের হায় লেগেছে আপনার।অভিশাপ দেওয়ার মতো মানুষ তিনি নন।কিন্তু আল্লাহর মুমিন বান্দার রুহের হায় লাগলে যে কারো ধ্বংস অনিবার্য। আপনি আজীবন একাই থাকবেন।আপনার পাপ আপনাকে একাকিত্বের লেলিহান শিখায় পুড়িয়ে একটু একটু করে মারবে।পুড়তে আপনি ইতমধ্যেই শুরু করেছেন।আপনার ভালো হবেনা।আমার বাবাকে কষ্ট দিয়েছেন,আল্লাহ আপনার বিচার করবেই।” কঠিন গলায় সাবিলাকে কথা গুলো বলে ওঠে নূর।
“আর আপনি।আপনি তো শুরু থেকেই জ্বলছেন।স্রষ্টার লানত পড়েছে আপনার উপর।একটা অবৈধ সম্পর্কের ফসল আপনি দুনিয়াতে এনেছেন।আপনার মতো নষ্টা মহিলার সাথে কথা বলতেও আমার বিবেকে বাঁধা দেয়। ছিহঃ” রাহেলার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলেই ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় নূর।
অর্ণব ভেবেছিলো নূর ইমোশনাল হয়ে পড়ব,কান্নাকাটি করবে।কিন্তু নূর কঠোর হয়ে সবটা সামলে নিচ্ছে দেখে স্বস্তি পেল অর্ণব।
“আপনার মতো জঘন্য মহিলাকে আমি কখনো মা সম্বোধন করতাম ভাবলেই ঘৃণা হচ্ছে আমার। আপনি কারো মা হওয়ার যোগ্যতাই রাখেন না। একজন মা কখনো একজন সন্তানকে এমন নরক যন্তণা ভোগ করাতে পারেনা;হোক সে নিজের সন্তান বা সন্তানতুল্য কেউ।” রাহেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে অর্ণব।
রাহেলা এবার নিজের আসল রুপে ফেরে।হিংস্র দৃষ্টিতে তাকায় নূরের দিকে;চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
“আরে এই মেয়েকে যে আমি আরো আগে মেরেই ফেলিনি সেটা ওর ভাগ্য। বিয়ের একমাস পরেই ওকে মেরে ফেলতে ফেয়েছিলাম কিন্তু দোতলার সিঁড়ি থেকে পড়েও এই মেয়ে বেঁচে গেলো।কই মাছের জান একদম। ওর বাপকে মারার পর ওকেও মেরে ফেলতে চেয়েছিলা,কিন্তু ওর বাপ এই বাড়িটা ওর নামে লিখে গেছে।আমার ফাহিম আর আমি কি বানের জলে ভেসে এসেছি? আমার ছেলের আর আমার অধিকার আছে এই বাড়িতে।তাই কৌশলে ওর থেকে বাড়িটা নিজের নামে লিখিয়ে ওকে অর্ণবের সাথে বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমার ভুল হয়েছে ওর বাপের মতো ওকেও যদি মেরে ফেলতাম। তাহলে আজকে এমন দিন আমায় দেখতে হতোনা।”
রাহেলার কথায় যেন উপস্থিত সকলের হুশ উঁড়ে গেলো।ড্রয়িংরুমের যোজ্ঞের আগুনের ন্যায় জ্বলতে থাকা আগুনে আরেক ফোঁটা ঘি পড়লো বোধ হয়।
নূর অর্ণবের থেকে একটু সরে এসে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু তার বাবা তো স্ট্রোক করেছিলেন।রাহেলা কিভাবে তার বাবাকে মারবে?
“বাবা স্ট্রোক করেছিলেন।আপনি কিভাবে এসবের সাথে সম্পৃক্ত?”
“স্ট্রোক?” বলেই জোরে হেসে ওঠে রাহেলা।
“তোর ব*লদ বাপকে আমি ওষুধ দিয়েছিলাম।সেদিন রাতে তোর বাপ আমার আর সাবিলার কথা শুনে নিয়েছিলো।আমি ওকে দেখে ফেলি কিন্তু তাতে বেশ দেরি হয়ে যায়।তোর ব*লদ বাপটা কিচ্ছু বললো না আমাকে।শেষে ওর প্রেসারের ওষুধটা চেইঞ্জ করে দিলাম। প্রতিরাতে আমিই ওকে ওষুধ খাওয়াতাম। সেদিনও তাই করি। কিন্তু ওষুধটা চেইঞ্জ করে হাই প্রেসারের ওষুধে যায়গায় লো প্রেসারর ওষুধটা দেই।এতে ওর ব্লাড প্রেসার বেড়ে রাতেই স্ট্রোক করে বসে।”
নূরজাহানের সংসার পর্ব ৯
নূর সহ উপস্থিত সবাই এমনকি সাবিলাও রাহেলার কথায় হতবাক হয়ে যায়।সে নিজেও জানতো না রাহেলা ইকবালকে খুন করেছে।
নূর এবার এত বড় শকে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। তার বাবাকে খুন করা হয়েছে? আর তাও করেছে তার বাবারই দ্বিতীয় স্ত্রী?একজন স্ত্রী তার স্বামীকে খুন করলো?এতসব ভাবনার মাঝে হাতে টান পড়লো নূরের। রাহেলা এক টানে নূরকে নিজের কাছে নিয়ে নূরের গলায় একটা ধারালো ছুড়ি ধরে দাবিয়ে দিল নূরের গলায়।
“নূরজাহান”অর্ণবের চিৎকারের আওয়াজ ভাসতে থাকলো বাতাসে।