এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬
কাফাতুন নেছা কবিতা
তামিমের এক লাইন টেক্সট দেখে সুবহা আতকে উঠে
”সি ইউ টু নাইট! ”
মানে তামিম আসবে রাতে তার সাথে দেখা করতে? সুবহা কী করবে কিছুই বুঝতে পারে না। একদিকে তামিমের ভয় আরেক দিকে তার পরিবারের। কোথায় যাবে সে?
——সরকার বাড়ি———-
ইলেকশনের প্রচারণা শেষে তানভীর সরকার বেশ ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ছোটো বড় সকল নেতাদের নিয়ে সবে মাত্র খেতে বসেছিলো সরকার বাড়ির বিশাল ডাইনিং এ। আর তাদের খাবার পরিবেশ করছেন সরকার বাড়ির কর্তী আয়েশা সরকার। নরম স্বভাবের আয়শা সরকার ছেলে বলতে অঙ্গান।ছেলের সম্পর্কে কেউ বিন্দু পরিমাণের কটু কথা বললে ও তার চোখের বিষ হয়ে যায় সে।
ইলেকশনের প্রায় প্রতি রাতেই আয়েশা সরকার নিজের হাতে রান্না করে নেতাদের খাওয়ান। এখন এটি একটি পরম্পরায় পরিনত হয়েছে বলা যায়।
” গিন্নি আপনার ছেলে কী ফিরেছে!”
আয়শা সরকার মুচকি হেসে বলেন,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” কর্তা আপনার ছেলে কী কখনো আপনার আগে ফিরেছে”
তানভীর সরকার একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে খাওয়াতে মনোযোগী হন। তামিম যে কখনো ফিরবে এটা একমাত্র তামিমই জানেন। শত চেষ্টা করে ও তামিমকে ঘরে আটকে রাখতে পারেনি তারা।
খাওয়া-দাওয়ার মাঝেই তামিমের জীপ আসার শব্দ ভেসে আসে। তানভীর সরকার সদর দরজার বাইরে তাকিয়ে থাকেন। ছেলে যেহেতু এসেছে তাহলে একসাথেই খাবেন বলে। কিন্তু তামিমকে দেখে তার চিন্তার অবনতি ঘটে।
সরকার বাড়ির মুল ফটক হতে তামিম সরকার আসছে। এক হাতে একটি মানুষের কা’টা মাথা আরেক হাতে তার চিরচেনা সেই গোল্ডেন চা’পাতি যা র’ক্তে রঞ্জিত আর চোখে কালো চশমা যাতে একটু র’ক্তের ছিটাফোঁটা লেগে আছে, তা নিয়ে তামিম সরকার বাড়িতে প্রবেশ করে। তামিমের এমন ভয়ংকর দৃশ্য দেখা মাত্র নেতারা খাবার থুয়ে দাড়িয়ে যান! যে যার মুখোমুখি হয়ে তাকায়। ভয়ে ঘাম ছুটে যায় তাদের।
তামিম সেই কা’টা মাথা নিয়ে তার আব্বাজানের
সামনে দাড়ায়, আর ঘার ঘুরিয়ে তার মাকে দেখে,,
” আম্মাজান আপনি অন্দরমহলে যান। এখানে থাকলে রাতে ঘুমাতে পারবেন না!”
আয়েশা বেগম ছেলের কথা মতো ভিতরে চলে যান।কিন্তু তার ছলছল নয়ন বলছে অন্য কথা।
তামিম তার আব্বাজানের পায়ের নিচে বসে আর কা’টা মাথাটা রেখে দেয়, দিয়েই নেতাদের দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকান
” আপনারা ব্যলেট পেপারে ভোটে জিতেন আর আমি জিতি পাওয়ারে।। রাজনীতির নামে আমি চলি না, রাজনীতি আমার নামে চলে! আমার আব্বাজানের বিরুদ্ধে যে দাড়াবে তার দশা এমনই হবে!”
তানভীর সরকার তামিমের মুখ বরাবর হাঁটু পেরে বসেন, আর মাথায় হাত দিয়ে বলেন,,,
” কিছু খেয়েছেন বাবাজান?”
” না আব্বা খায় নাই এখনোও।”
” ফ্রেশ হয়ে আসেন, আমি অপেক্ষা করছি!”
” জ্বী ঠিক আছে! ”
তামিম কাটা মা’থাটা তার আব্বাজানের পায়ের নিচে রেখেই নিজের কক্ষে চলে যায়। আর লম্বা একটা সাওয়ার নেই।
তামিম যাওয়া মাত্র কর্মচারিদের দিয়ে পুরো সরকার বাড়ি পরিষ্কার করিয়ে নেন তানভীর সরকার।আর ছেলের জন্য অপেক্ষা করেন।
তামিম বেশ কিছু ক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে একটা সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে নিচে চলে আসেন।তামিম আসা মাত্র ভয়ে নেতারা দাড়িয়ে যায়!
” কলিজায় ভয় থাকা ভালো। কিন্তু ভয়টা যেনো তামিম সরকারের নামই হয়!”
তামিম চেয়ার টানতে টানতে বাকি নেতাদের উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেন।
তামিম বসা মাত্র তানভীর সরকার তার গ্লাসে পানি ঢেলে দেয় আর নিজের হাত দিয়ে ছেলেকে খাওয়াতে থাকে।আর বাকি নেতাদের ও খেতে বলেন।
” বাবাজান রাতে বাসায় থাকবেন তো?”
তামিম পানি খেতে খেতে বলে……..
” না আব্বাজান! আজকে একজন বিশেষ মানুষের সাথে দেখা করতে যাবো।তারে না দেখলে আমার ঘুম আসে না!”
তানভীর বেশ আগ্রহ নিয়ে সেই বিষয় মানুষের কথা শুনতে চায়…..
” তা বাবাজান সেই বিশেষ মানুষের কথা কী কিছু জানতে পারি!”
” আব্বজান আগে আমি সিউর হয়ে নেই সে কতটুকু আমার বিশেষ মানুষ।তারপর বাড়িতে তুলে আনবো নে!”
তামিম তার বাবার পাঞ্জাবিতে নিজের মুখ মুছে বাইরে চলে যায়। তানভীর সরকার দেশের প্রধানমন্ত্রী হলে ও ছেলের কাছে একদম সাধারণ মানুষ। নিজে ছেলেকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে নিজের পাঞ্জাবি দিয়ে মুখ ও মুছে দেন।
সুবহা ভয়ে আর আতঙ্কে ঘুমোতে পারে না। ল্যাম লাইট জ্বালিয়ে পড়তে থাকে। কলেজ নেই তো কি হয়েছে। বই তো আছে। আর যায় হোক পড়াশোনা তো বাদ দেওয়া যাবে না! সুবহা খুব মনোযোগ সহকারে পড়ছিলো। পড়তে পড়তে হঠাৎ সামনে চোখ যায় সুবহার। সামনে চোখ যেতেই কারেন্টের ঝটকা খাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যায় সুবহার।
তামিম তার সামনের চেয়ারে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। তাকে দেখা মাত্র সুবহার হ্রদ স্পন্দ বেড়ে যায়। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে। কিন্তু তামিম কখন আসলো? আর কখন থেকেই বা বসে আছে। সুবহার মা-বাবা কেন কিছু বললো না! সব মিলিয়ে সুবহা খুব ভয় পায়। তামিম চুপচাপ সুবহার সামনে বসে থাকে।
” কী পড়ছো?”
সুবহা ধীরে ধীরে বলে….” একাউন্টিন!”
তামিম সুবহার বই নিয়ে বন্ধ করে সাইটে রাখে আর সুবহার চেয়ার টেনে নিজের চেয়ারের কাছে নেই।
” বইয়ের হিসাবের পাশাপাশি আমার মনের হিসাবটা ও রাখো!”
সুবহা তামিমের কথা শুনে চোখ নিচে নামিয়ে ফেলে।
তামিম হঠাৎ ঠান্ডা গলায় বলে………….
“তুমি জানো, আমি কাকে ভয় পাই?”
সুবহার চোখেমুখে আতঙ্ক জমে যায়! যাকে সবাই ভয় পায়, সে আবার কাকে ভয় পায়!
”নিজের রাগকে। আমি রেগে গেলে ভিতরের জানো’য়ারটা আর থামে না।”
তামিম নিজের মুখ সুবহার কানের কাছে নিয়ে আস্তে আস্তে করে বলে……….
“তোমাকে ভালোবাসি বলে এখনো মেরে ফেলিনি। কিন্তু তুমি যদি কখনো পালাতে চাও, এই ভালোবাসাই তোমার মৃ’ত্যু কারণ হবে!”
তামিমের কথা শুনে সুবহার চোখে পানি চলে আসে। সুবহার চোখে পানি দেখে তামিম তা নিজের হাতে মুছে দেয় আর সুবহার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলে..
” আমাকে নিজের শত্রু বানাবে তো ম’রবে। গ্রহণ করো আমাকে। তোমাকে আজকের রাতটা সময় দিলাম।কালকে বিকেল ৫ টায় আমি তোমার উত্তরের অপেক্ষা করবো। ”
সুবহা শুধু মাথা নিচু করে তামিমের কথা শোনে।ভয়ে তার ভিতর থেকে কোনো কথায় বের হয় না! তামিম উঠে দাড়ায় আর দরজার কাছে যায়। যেয়ে ঘুরে আবার আসে সুবহার কাছে। এসে একটু ঝুঁকে সুবহার মুখ বরাবর!
” তোমাকে একটা চু’ম্মা দেই? ”
” জ্বী?”
তামিম সুবহার গালে চু’মু দেই
” উত্তর টা যে হ্যাঁ হয় সুন্দরী! না-হলে পরশুদিন বুড়িগঙ্গার ঘাটে তোমার পরিবারের লা’শ ভাসবে!”
তামিম চলে যায় সুবহার রুম থেকে। আর সুবহা পাথর মূর্তির মতো ওখানেই দাড়িয়ে থাকে। সে তামিমকে মন থেকে মানতে পারছে না আবার না মেনে ও যেতে পারছে না। খুব ভয় আর দোটানায় পারে যায় সুবহা। সারারাত আর দু-চোখের পাতা এক করতে পারে না সে।
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫
তামিম সুবহাদের বাড়ি থেকে এসে সোজা সরকার বাড়ি চলে যায়। আর নিজের রুমে যেয়ে সেদিনের সুবহার নাচের ভিডিও টা বড় স্ক্রিনে ছেড়ে দেয়। তামিম খুব মনোযোগ সহকারে সুবহার নাচের ভিডিও দেখতে থাকে।
” পরী! আমার মতো নির্দয় মানুষকে বস করেছো তুমি। তোমার আর নিস্তার নেই আমার হাত থেকে! ”