চেকমেট পর্ব ৫৪

চেকমেট পর্ব ৫৪
সারিকা হোসাইন

টানা ছয় ঘন্টা পর সারফরাজ পিটপিট চোখ মেলে তাকালো।বাম হাতটা কেমন ভারী হয়ে রয়েছে।বুকে টনটনে ব্যথা করছে।শ্বাস নিতেও যেনো কষ্ট হচ্ছে।ক্লান্ত চোখে চারপাশে নজর বুলালো সারফরাজ।তার ডান হাতের মুঠোয় রূপকথার ছোট সরু হাত খানা বন্দি।ঘুমে অচেতন সে।স্যালাইন পাস হচ্ছে ধীর গতিতে।প্রচন্ড পিপাসায় সারফরাজ এর গলা শুকিয়ে উঠলো।বিক্ষিপ্ত মস্তিষ্ক কোনো কিছু গুছিয়ে উঠতে পারলো না।সুবহান চৌধুরীর হাভেলি থেকে হসপিটালে কিভাবে এলো সে তা ভোঁতা মস্তিষ্কে খেললো না।সারফরাজ গলার সমস্ত আওয়াজ বাড়িয়ে কথা বলতে চাইলো।কিন্তু গলবিল যেনো আজ অবরোধ ঘোষণা করেছে সারফরাজ এর বিরুদ্ধে।তবুও গলার শিরা ফুলিয়ে সারফরাজ ডাকলো

“লুইস…আমাকে এখানে এনেছে কে?
সারফরাজ তার ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজ নিজেই যেনো শুনতে পেলো না।তাই আরেকবার জোর গলায় ডাকলো
“অভি…
সারফরাজ এর ডাকে কেউ এলো না।শুধু দৌড়ে এলো নার্স সমেত ডক্টর।
তারা সারফরাজ কে পেইন কিলার ইনজেকশন পুশ করলো ঝটপট।এরপর নিষেধের স্বরে জানালো
“প্লিজ শক্তি দিয়ে কথা বলবেন না।রিস্ক এখনো পুরোপুরি কাটেনি।দু দুটো বুলেট সার্জারি করে বের করা হয়েছে আপনার শরীর থেকে।
বলেই ডক্টর সারফরাজ এর স্যালাইন চেক করে নার্স কে নির্দেশ দিলেন

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“পেশেন্ট আজ নরমাল পানীয় জাতীয় খাবার খাবে।কাল থেকে শক্ত খাবার দিতে হবে।আর কোনো ভাবেই যেনো উত্তেজিত না হয়।সেরকম কিছু হলে ঘুমের ইনজেকশন দিতে বিলম্ব করবেন না।
বলেই ডক্টর চলে গেলো।ডক্টরের কথা বোধ গম্য হতে সময় লাগলো সারফরাজ এর।কিন্তু যখন গত রাতের বিভীষিকাময় স্মৃতি মস্তিষ্কে হানা দিলো তখন তার বুকে অসহনীয় ব্যথা আরম্ভ হলো।গলার কাছে কান্না দলা পাকিয়ে আটকে রইলো।লুইসের নিথর ফ্যাকাসে দেহ টা চোখের সামনে পরিস্কার হলো।হঠাৎ অভিরূপ এর জন্য সারফরাজ তড়পাতে লাগলো।বহু কষ্টে হাতের ইশারায় কাতর হয়ে সারফরাজ ফিসফিস করে শুধালো

“অভিরূপ!
নার্স বুঝলো সারফরাজ এর উৎকণ্ঠা।সে সারফরাজ কে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়ে উত্তর করলো
“উনার এখনো জ্ঞান ফেরেনি।কিন্তু রিস্ক কেটে গিয়েছে।আশা করছি রাতের মধ্যে জ্ঞান ফিরবে।আপনি প্লিজ ঘুমান।
বলেই নার্স চলে গেলো।গিয়ে অপেক্ষা রত সুফিয়ান চৌধুরী কে জানালো
“পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে।রাতে দেখা করতে পারবেন।আপাতত তাকে রেস্ট করতে দিন।
রেখা বসা থেকে উঠে ব্যস্ত গলায় সিক্ত কন্ঠে শুধালো
“আমার মেয়ে?
“ঘুমুচ্ছে।মনে হচ্ছে রাতের আগে জেগে উঠবে না।শরীর বেশ দুর্বল।উনি জতো ঘুমাবেন ততো উনার জন্যই ভালো।টেনশন করবেন না।আসছি।কোনো প্রবলেম হলে ইনফর্ম করবেন।
বলেই নার্স চলে গেলো।

দুপুর গড়িয়ে বিকেলের প্রারম্ভ।নেলিকে এখনো হসপিটাল থেকে বাইরে বের করা যায়নি।সে একই জায়গায় বসে বসে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে শুধু।আমজাদ হায়দার জোর করে মেয়েকে এক বিন্দু পানি পর্যন্ত খাওয়াতে পারেন নি।সেলিনা মেয়েকে অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে শেষমেশ ব্যর্থ হয়ে তজবিহ জপছেন।
হসপিটাল এর বেডে চিত হয়ে শুয়ে আছে সারফরাজ।লুইস এর মৃত্যুর জন্য তার নিজেকেই দায়ী মনে হচ্ছে।রুদ্ররাজ সারফরাজ এর শিকার ছিলো।বাঘ সিংহের যুদ্ধে লুইস কে এনে মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছে সে।এই ভুলের মাশুল কি করে চুকাবে তা সারফরাজ জানে না।এরিকাকে কি বলে সারফরাজ সান্তনা দেবে তাও তার অজানা।আর লুইসের পরিবার?লুইসের মা আর ছোট অটিজমে আক্রান্ত ভাই টাকে কিভাবে সারফরাজ জানাবে তাদের ভালোবাসার লুইস আর বেঁচে নেই?লুইসের মায়ের শেষ ভরসাই তো ছিলো লুইস।মিসেস লুনা ছেলের গুলিবিদ্ধ চেহারা সইতে পারবে তো?

সারফরাজ এর মস্তিষ্ক চিরবিড়িয়ে উঠলো।জীবন অর্থহীন লাগছে।যদি অভিরূপ এর কিছু হয়ে যেতো তখন অভির মাকে কি জবাব দিতো সে?
সারফরাজ এর ফ্যাকাসে বরফ নীল চোখে জল উপচালো।চোখের কোন গড়িয়ে সাদা বালিশে বিলীন হলো সেই জল।আচমকা রূপকথা ঘুমের ঘোরে শক্ত করে চেপে ধরলো সারফরাজ এর হাত।এরপর বিড়বিড় করে কেঁদে বলে উঠলো

“আমাকে রেখে যেও না সারফরাজ।এক যুগ অপেক্ষা করতে করতে আমি ক্লান্ত।এবার যদি তুমি হারিয়ে যাও তবে মরে যাবো আমি।তুমি হীন আমি নিঃস্ব ।দোহাই লাগে যেও না।যেও না।না
কান্না আর ঘোর প্রলাপে বড় বড় করে চোখ মেলে তাকালো রূপকথা।ব্যস্ত ভয়ার্ত ভঙ্গিতে পাশ ফিরে সারফরাজ কে চেতনা অবস্থায় দেখে দুর্বল শরীর টেনে হিচড়ে সারফরাজ এর কাছে এসে সারফরাজ এর পেট জড়িয়ে হুহু করে কেঁদে উঠলো।
সারফরাজ হাত বাড়িয়ে রূপকথার চোখের জল পর্যন্ত মুছিয়ে দিতে পারলো না। ধীর গলায় শুধু বললো

“কোত্থাও যাবো না তোমাকে ফেলে।প্রমিস।কিন্তু মরন এলে ভিন্ন কথা।ওখানে আমার হাত নেই।
রূপকথা উঠে বসে সারফরাজ এর মুখ চেপে ধরে কপালে চুমু আকলো।এরপর বুকের ব্যন্ডেজ এর উপর হাত বুলিয়ে সিক্ত গলায় শুধালো
“এমন ভয়ানক কথা বলো না।তোমার অনুপস্থিতি আমি সইতে পারবো না।তার আগে আমার মরন হোক।
“সারফরাজ সিক্ত চোখে রূপকথার পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“সেদিনের সেই ছোট মেয়েটা আজ কেমন বড় বড় কথা বলছে দেখো।যদি জানতাম এই মেয়ে এমন বড় হয়ে আমাকে ফাঁসাবে তাহলে জীবনেও সঙ্গে করে আনতাম না।এতো এতো ভালোবাসার প্রতিদান কি করে দেবো আমি বলোতো?
রূপকথা সারফরাজ এর পানে সজল তাকিয়ে বলে উঠলো

“কোনো প্রতিদান চাই না আমার।আমার শুধু তোমাকে দরকার।আর কিচ্ছু না।
এরপর সারফরাজ এর ব্যন্ডেজ আলতো ছুঁয়ে শুধালো
“অনেক কষ্ট হচ্ছে না?
সারফরাজ অল্প মাথা ঝাঁকালো।এরপর বলে উঠলো
“প্রচন্ড পিপাসা পেয়েছে আমার।
রূপকথা স্যালাইন এর সুই হাত থেকে টেনে খুলে বেড থেকে নামলো।এরপর ইন্টারকমে ফোন করে নার্স ডেকে আনলো।দৌড়ে নার্স এসে ড্রপার দিয়ে অল্প পানি সারফরাজ এর ঠোঁটের কাছে ফেললো।সারফরাজ নাক ফুলিয়ে ধমকাতে চাইলো নার্স কে।কিন্তু আজ সে শক্তি তার নেই।সারফরাজ ফিসফিস করে শুধালো
“আপনি মজা লুটছেন সিস্টার?রেগে গেলে কিন্তু ফল খুব খারাপ হবে।কিডন্যাপ করে জঙ্গলে নিয়ে ফেলে আসবো বলে দিলাম।
নার্স বিনয়ী স্বরে বলে উঠলো

“আপনি এই মুহূর্তে ঢকঢক করে পানি খেতে পারবেন না স্যার।আমায় ক্ষমা করুন।এভাবে অল্প অল্পই খেতে হবে।
সারফরাজ চোখ বুঝে কথাটা হজম করে বলে উঠলো
“আমার হাতের স্যালাইন খুলে দিন।আমি উঠে বসতে চাই।এভাবে অসাড় মানুষের মতো শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।
নার্স মাথা নত করে ইতস্তত জবাব দিলো

“এসব কিছুই করা সম্ভব নয় স্যার।আপনার নিজেরই সমস্যা হবে।
সারফরাজ এবার চটে গেলো।কমজোর গলায় সে ধমকে উঠলো
“আপনার ডক্টর কে ডাকুন।নয়তো আমি তান্ডব নাচাবো এই হসপিটালে বলে দিলাম।একজন সাধারন মেয়ে মানুষ হয়ে আমার সকল ওর্ডার ডিক্লাইন করছেন।দম আছে বলতে হবে।
নার্স মাথা ঝাকিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো।নার্স চলে যেতেই রূপকথা সারফরাজ এর মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত হতে অনুরোধ করলো।এরপর নরম গলায় বললো

“এই মুহূর্তে তোমার হাইপার হওয়া একদম ঠিক হচ্চে না।তাছাড়া বুকে কতবড় ব্যান্ডেজ তুমি দেখেছো?বুকে চাপ লাগলে তুমিই ব্যথা পাবে।
সারফরাজ কিছু উত্তর করবার আগেই ডক্টর এলেন।এসে সারফরাজ এর উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন
“আপনি প্লিজ অবুঝ বাচ্চার মতো বিহেভ করবেন না মিস্টার সারফরাজ।এখনই হাঁটা চলা উঠা বসার সময় হয়নি।আপনি বুকে গুলি খেয়েছেন।আরেকটু হলেই ফুসফুস ড্যামেজ হতো।আল্লাহ আপনার সহায় ছিলেন।নরমাল সিচুয়েশন জটিল করবেন না প্লিজ।
বলেই নার্স কে বেড নির্দেশ করে বলে উঠলেন

“উনার বেড হুইল ঘুরিয়ে মাথাটা অল্প উঁচু করে দিন।আর সন্ধ্যার পর চিনি ছাড়া র‍্য চা আর একটা ভেজিটেবল স্যুপ দিবেন।
বলেই প্রেসার চেক করে চলে গেলেন ডক্টর।
নার্স বেড টা একটু উঁচু করে রূপকথাকে বলে উঠলো
“আপনি পেশেন্ট এর সাথে একটু কম কথা বলবেন ম্যম প্লিজ।উনার কথা বলাও নিষেধ।
বলেই ভয়ে ভয়ে কেটে পড়লো নার্স।
সারফরাজ চোখ বুঝে চোয়াল শক্ত করলো।হসপিটালের এতো এতো নিষেধাজ্ঞা তার শুনতে মোটেও ইচ্ছে করছে না আর।সে রূপকথাকে বলে উঠলো
“নার্সের কথা বাদ দাও।তুমি আপাতত একটা গান গাও।খুব বোরিং লাগছে।বমি পাচ্ছে।মাংস দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে।গত কাল দুপুরে একটু ভাত খেয়েছিলাম।আজ রাত হতে চললো।ওসব স্যুপ টুপ ঘাস পাতার রস খেয়ে আমার রাত যাবে না ।
রূপকথা সারফরাজ এর কঠিন মুখের পানে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।সারফরাজ রূপকথার পানে তাকিয়ে বলে উঠলো

“কি হলো গান গাঁও।ঐযে জ্বরের ঘোরে বলা বিখ্যাত যৌবনের গান গুলো।ওসব গানে বেশ এনার্জি আছে বুঝলে।
রূপকথা কিছুটা লাজুক হয়ে চট করে বলে উঠলো
“আমি অসুস্থ।গান টান আপাতত মনে নেই।আর কি সব যৌবন তৌবন।ওসব পঁচা গান আমি বলি না।
“তবে নাচো।
‘সারফরাজ আমি অসুস্থ।আমার হালাত দেখেছো?
“তাইলে চুমু খাও।এটাতে কোনো পরিশ্রম নেই।কোনো ক্যালরিরও লস নেই।
রূপকথা মহা ফ্যাসাদে পড়লো।তবুও ঘষে ঘষে সারফরাজ এর পাশে গিয়ে গালে একটা চুমু খেলো।এরপর সরে এলো স্বস্থানে।
সারফরাজ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো

“আমার ঠোঁটে কি ঠাটা পরেছে?
রূপকথা চারপাশে নজর বুলিয়ে ঠোঁটে টুপ করে একটা চুমু খেলো।
সারফরাজ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে উঠলো
“তুমি বোধ হয় শুনোনি আমার পিপাসায় গলা ফেটে যাচ্ছে।সব যদি ভেঙেই বলতে হয় তবে প্রেমিকা দিয়ে কি বা*লটা হবে শুনি?
রূপকথা ঠোঁট টিপে ফাঁকা ঢোক গিললো।এরপর ফ্যাকাসে মুখে সারফরাজ এর ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে আকড়ে ধরলো।নির্লজ্জ সারফরাজ ফায়দা লুটতে মরিয়া হয়ে উঠলো।হাতের স্যালাইন এর সুই ছুড়ে ফেলে রূপকথাকে শক্ত করে বুকে জড়াতে ইচ্ছে হলো।কিন্তু নিরুপায় রইলো।এদিকে রূপকথার দম বন্ধ হবার জোগাড় হলো।কিন্তু সারফরাজ কোন দয়া দেখালো না।সময় কতো হলো তারও হিসেব কসলো না।রূপকথার যখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা তখন সারফরাজ ছেড়ে দিলো রূপকথার ঠোঁটের দখল।এরপর ক্লান্ত গলায় বলে উঠলো
‘রাতে আরেকবার এসো তো।আপাতত পানি ছাড়া চলে যাবে কয়েক ঘন্টা।
রূপকথা তার লাল হয়ে আসা ঠোঁটে হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠলো

“তুমি মানুষ নাকি অন্যকিছু?
সারফরাজ বালিশে মাথা হেলিয়ে চোখ বুজে বলে উঠলো
‘আমি জোঁক।সব শুষে নেবো।
“জোঁকে আমার ভয় আছে।
“আমি মানুষ রূপী জোঁক।এই জোঁক তোমায় ভয় দেখাবে না।সুখের সাগরে ভাসাবে।সময় এলে সব টের পাবে।যাও দূরে যাও।আমার গরম লাগছে।হার্ট এট্যাক হচ্ছে।তোমাকে নিয়ে এক্সারসাইজ করতে ইচ্ছে করছে।
রূপকথা কপাল কুঁচকে বলে উঠলো
“এক্সারসাইজ?এটা এক্সারসাইজ করার সময়?
সারফরাজ দুস্টু চোখে রূপকথাকে একবার দেখলো।এরপর দুস্টু বাঁকা হেসে বললো
“এটা অন্য এক্সারসাইজ।বুঝবে না।সব তোমার বাপের দোষ।যাও ঘুমাও।

সন্ধ্যার পর পর অভিরূপের জ্ঞান ফিরলো।অভিরূপের জ্ঞান ফিরতেই অভির মা নামাজে বসলেন।অভির বোন অন্তু কেঁদে ডক্টর কে অনুরোধ করলো
“ভাইয়াকে প্লিজ একবার দেখতে চাই।কোনো কথা বলবো না।শুধু দূর থেকে দেখেই চলে আসবো।
ডক্টর রাজি হলেন।আইসিইউ এর বাইরের দরজায় অভির বোনকে দাঁড় করালেন।কাঁচের দরজার ফাঁক দিয়ে যেটুকু দেখা গেলো অন্তু সেটুকু দেখেই চোখের জল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো।নেলি সুফিয়ান চৌধুরীর হাত চেপে ধরে কেঁদে বলে উঠলো

“মামা আমাকে একবার ভেতরে যাবার সুযোগ করে দাও।আমি ওকে কাছ থেকে দেখতে চাই।ও সত্যিই শ্বাস নিচ্ছে নাকি ডক্টর মিথ্যে সান্তনা দিচ্ছে আমি নিজে চোখে দেখতে চাই।আমার উপর একটু দয়া করো মামা।তুমি বললেই ডক্টর রাজি হবে।
সুফিয়ান নেলির মাথায় হাত বুলিয়ে আশ্বস্ত করলেন।এরপর ডক্টর কে সাথে নিয়ে নেলিকে ভিজিটিং ইউনিফর্ম পরিয়ে অভির কেবিনে ঢুকিয়ে দিলেন।ভীরু পায়ে অভির কাছে এগিয়ে গেলো নেলি।এরপর গ্লাভস সমেত হাত অভির বুকে রাখলো আলতো করে।অক্সিজেন মাস্ক এর সাহায্যে শ্বাস নিচ্ছে অভিরূপ।বুকটা অল্প উঠানামা করছে।নেলি স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে অভির হাতের তর্জনী আঙ্গুল আস্তে করে ধরলো।অভিরূপ ফ্যালফ্যাল করে নেলির পানে তাকালো।ডক্টর নেলিকে বলে উঠলো

“বাইরে চলুন।
নেলি মাথা ঝাকিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো।কিন্তু অভি শক্ত করে টেনে ধরলো নেলির আঙ্গুল। থেমে গেলো নেলি।ডক্টর অভির পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“আপনার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল মিস্টার অভি।কোনো অবস্থাতেই পেশেন্ট এর রুমে কেউ এলাউড নয় এই মুহূর্তে।উনি অনেক রিকোয়েস্ট করে এসেছেন।আপনি রেস্ট নিন।সব কিছু ঠিক থাকলে কাল আপনাকে কেবিনে শিফট করবো।তখন কথা বলতে পারবেন।

চেকমেট পর্ব ৫৩

ডক্টর কথা গুলো শেষ করে নেলিকে তাগাদা দিলো।নেলি কম্পিত পা বাড়ালো অসহায় চোখ মুখে।ধীরে ধীরে অভির হাত থেকে নেলির হাত ছুটে গেলো।অভি নিঃশব্দে চোখের জল ফেললো।আজ সে মরে গেলে এই পাগল মেয়েটাকে সামলানোর ক্ষমতা কার ছিলো?

চেকমেট পর্ব ৫৫