প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ২০
সাইয়্যারা খান
নেশা এক ভয়ংকর ব্যাধি। এই ব্যাধিতে যে একবার পড়ে সে আর উঠে দাঁড়াতে পারে না। এই নেশারঝোঁক মানুষকে সর্বনিম্ন থেকে সর্বনিকৃষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়। কেউ নেশাখোর হয় স্বেচ্ছায়, কেউ হয় দায়ে পরে। জীবনের কঠিন পরিস্থিতি যখন সামাল দিতে অক্ষম হয় তখনই তারা পৃথিবীর মাঝে নতুন পৃথিবী গড়তে চায়। সেই পৃথিবী খালি চোখে দেখা যায় না। এক অদ্ভুত ঘোরের প্রয়োজন হয় সেই রঙিন দুনিয়া দেখতে। মাদকদ্রব্য হলো সেই দুনিয়ায় পৌঁছানোর সড়ক। সেই সড়কে হেঁটে হেঁটে রঙিন দুনিয়ায় পৌঁছানো গেলেও ফিরে আসা কঠিন৷ সেখান থেকে চাইলেই ফিরে আসা যায় না বরং যখন ঐ দুনিয়া থেকে ডাক আসে তখন সড়ক খুঁজতে পা’গল হয়ে যায় ঐ ব্যাক্তি।
তুহিনও আজ সড়কের খোঁজে বেরিয়েছিলো। তার নেশা নেওয়ার মূল কারণটার সমাপ্তি ঘটেছিলো গতকাল। রঙিন দুনিয়ায় বুদ হয়ে থাকার আর প্রয়োজনীতা নেই তার কিন্তু চাইলেও হুট করে ছাড়তে পারছে না তুহিন। ওর শরীরে অস্বাভাবিক এক অনুভূতি হয়। মাদক দিয়ে শুরু হওয়া নেশা আর মাদকে সীমাবদ্ধ তো ছিলো না। ধীরে ধীরে তুহিন ড্রাগ নিয়েছে। দামী দামী ক্ষতিকারক পদার্থ নিজের শরীরে বিভিন্ন ভাবে প্রবেশ করিয়েছে। শুধু মাত্র মুক্তি পাওয়ার জন্য। বেঁচে থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা তার জন্য কষ্টকর ছিলো তাই তো রঙিন দুনিয়ায় ডুবে থেকেছে। মাথায় একটা আঘাত লাগায় ধীরে ধীরে জ্ঞান হারায় তুহিন। মড়মড় একটা শব্দ হয় তখন। শুকনো পাতা বিছানো মাটির উপর পরে রয় তার ডান পাশের গালটা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কালো চাদরে নিজের মুখ ঢেকে রাখা পুরুষটা তখন ঢোক গিলে। বড়লোকের পুত্র আজ মাটিতে পরে আছে আজ। তার একার পক্ষে তুহিনের মতো তাগড়া পুরুষের শরীর তুলা সম্ভব না কিন্তু কাজটা তাকে একাই করতে হবে। উপরমহল থেকে এটাই আদেশ। তুহিনের দুই পা ধরে টেনে নিতে থাকে সে। সামনেই ঘাট। ওই ঘাটে কিলবিলি করছে মাগুর মাছ। তুহিনকে ওখানে ফেলতে হবে শুধু। ওখান থেকে আবার তুলতেও হবে। এত বড় শরীর মাগুর গুলো যদি শেষ করতে না পারে, তাই তো বড় বড় ড্রাম ভর্তি করে চুন রাখা। চুন পানিতে ভেজানো আছে। ওটায় তুহিনের শরীরটা ঢুকিয়ে ড্রামের মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। হাড় সহ জ্বলে যাবে তাহলে। ভাবতে ভাবতে সে টানছে তুহিনকে। তার শরীর কিছুটা দূর্বল। ততটা শক্তিশালী না সে। ঘাট পাড়ে এনেই হাঁপাতে লাগলো যেন। মাটির উপর বসে কালো কুচকুচে পানির দিকে তাকালো। ফাঁকা ঢোক গিললো একবার। কাজটা তার করতেই হবে। দুনিয়া টাকার উপর চলে। মায়া দয়া দেখানোর সময় কারোই নেই কিন্তু…। একটা কিন্তু রয়ে যাচ্ছে। মায়া নাহয় নাই দেখালো, নিমকহারামি কিভাবে করবে? এদের ঘরের নুন তো অগুনিতবার খেয়েছে সে।
মাথা ঝেড়ে সব বাদ দিয়ে উঠে পুণরায় তুহিনের পা ধরে টানলো। জ্ঞান ফেরার আগেই কাজ সারতে হবে। অনেকদিন ধরে কাজটা বাকি পরে আছে।
পলক এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তার আর তুহিনের ছবিটার দিকে। জীবনটা এমন ছিলো না৷ তার জীবনটাকে এমন বানানো হয়েছে। দায় কিছুটা তার, বাকিটা অন্যদের। তুহিনটা ওকে ভালোবাসে। ও বুঝে, জানে। ভালোবেসে যেদিন বিয়ে করলো কারো পরিবারই তো মানতে চাইলো না। পালিয়ে করেছিলো বিয়েটা। কেউ মানলো না। তুহিনের বাবা সরাসরি সেদিন প্রত্যাখান করেছিলো। ছেলেটা কি দারুন ভাবে পলকের হাতটা ধরে রেখেছিলো। কত আদর, কত প্রেম। কত একাকী রাতে চাঁদ দেখা হলো। দিন গুলো ফুরালো, রাতগুলোও হারিয়ে গেলো। পলক তো ভেবেছিলো আজ তুহিন যাবে না। নিজের ভুলে সে হারিয়েছিলো তুহনকে। আজ না গেলেও তো হতো। পলক জানে, নেশার টান উঠলে মানুষ পা’গল হয়ে যায়। ছুটে যায় নেশার খোঁজে কিন্তু এই তুহিন তো এক প্রেমসুধা পানের পর পলকের মুখে হাত বুলিয়ে বলেছিলো,
“তুমি আমার নেশা পলক। তুমি নামক নেশায় নেশাক্ত আমি মরে যেতে চাই।”
মানুষের নেশার চাইতেও বড় নেশা বুঝি তুহিন পেলো তাই তো পলক নামক নেশাটাকে ভুলে গেলো। কি অদ্ভুত অদ্ভুত নামগুলো সেদিন বললো। পলক তো শুধু শুনেছিলো। কত কত নেশাদ্রব্য তার তুহিন চেনে, সেবন করে। আকাশের চাঁদটা দেখে পলকের চোখ দিয়ে পানি গড়ালো। এই নেশা বাদে যাতে তুহিন নারী নেশায় না জড়ায় তার জন্য নিজেকে কতটাই না গুছিয়ে রাখে। নারী নেশায় না জড়ালেও তুহিনটা মরণব্যাধি নেশায় জড়ালোই।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা পৌষকে আচমকা বাহু ধরে টেনে ভেতরে নিলো তৌসিফ। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে গেলো পৌষ৷ বুকে থুতু দিয়ে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলো,
“কি?”
তৌসিফ থাই লাগালো। তখনও পৌষর এক বাহু ওর হাতের মাঝে। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“না করেছিলাম না রাতে বারান্দায় না আসতে।”
“আসলে কি হবে? আশ্চর্য!”
“নিষেধ শুনতে হবে পৌষরাত। আমি যেটা না বলব সেটা শুনতেই হবে। কানে ঢুকেছে কথা।”
পৌষ দুইপা পেছালো। তৌসিফ বাহুটা ছাড়ে নি৷ কথাগুলো বেশ জোরে বলেছে ও। চোখ দুটো আকাশে থাকা চাঁদের ন্যায় লাল। এলোমেলো দেখাচ্ছে ওকে। পৌষের ভয় লাগছে। বুকটা অসম্ভব ভাবে ওঠানামায় ব্যস্ত। এই লোকটাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? ভালোই তো ছিলো। মেহমান যাওয়ার পরপরই কোথায় জানি গেলো। পৌষকে শুধু বলেছে ও যাতে ঘুমিয়ে যায়। ঘুম না আসায় পৌষ দাঁড়িয়ে ছিলো বারান্দায়। তাতে এত রাগ দেখানোর কি হলো বুঝে এলো না। ঠোঁট কামড়ে মাথাটা নিচু করে আছে পৌষ। ভয়ে হাত ছাড়তেও বলতে পারছে না। হাতে ব্যথা করছে প্রচুর। হাতের নরম জায়গাটা খুব শক্ত করে ধরেছে তৌসিফ। হাতের চাপ আরেকটু বাড়াতেই ব্যথায় শরীর মুচড়ালো পৌষ। তৌসিফ তাকালো ওর দিকে। হাতটা ছেড়ে দিয়েও তাকালো। মেয়েটা কাঁদলো না কেন? ব্যথাটা কম পায় নি তৌসিফ তা জানে। দুই পা এগিয়ে পৌষর দুই হাতের কব্জি ধরতেই মাথা নিচু করা পৌষ জিজ্ঞেস করে,
“আবার মারবেন?”
“আমি মেরেছি তোমাকে?”
“নাহ।”
“তাহলে যে বললে?”
“ব্যথা পেয়েছি তাই বললাম।”
“এখানে এসো। এসো, বসো।”
বলে পৌষকে বসালো খাটের উপর। পোশাক বদলায় নি মেয়েটা। তৌসিফ ওর পাশে বসলো গা ঘেঁষে। পৌষ সরতে চাইলো অবশ্য। অচেনা একটা মানুষের সাথে এক বিছানায় একরাত ঘুমিয়েছিলো এক ঘোরের মাঝে। এতটা কাছাকাছি ভাব ততটাও ভালো ঠেকছে না ওর নিকট। তৌসিফ পৌষর পরণের কামিজের ঢোলা হাতাটা তুলতে নিলেই পৌষ ছিটকে সরলো। অবাকতা নিয়েই বললো,
“কি করতে চাইছেন?”
“যেটা ভাববো সেটা করতে চাইছি না আপাতত।”
তৌসিফের মুখে বাঁকা হাসি। পৌষকে ধরে বসালো আবারও। হাতের কাপড় সরিয়ে নিজের চেপে ধরা জায়গাটা তার উদ্দেশ্য হলেও থেমে গেলো তৌসিফ। এই মেয়ের হাতে এত কিসের দাগ? তৌসিফ কুনুই পর্যন্ত তুললো। উল্টেপাল্টে দেখলো। পৌষ চুপচাপ দাঁত চেপে বসে আছে। ওর ডান হাতটা সব ভাবে দেখছে তৌসিফ। প্রতিটা স্পর্শ গায়ে কাটা দিচ্ছে যেন। মাঝেমধ্যে হাত বুলাচ্ছে পুরাতন কিছু দাগে। এর মাঝেই তৌসিফ প্রশ্ন করে,
“তোমার চাচিরা মারতো পৌষরাত?”
অদ্ভুত শোনালো কষ্টস্বর। কি হলো তৌসিফের? কি ছিলো তার পুরুষালী কণ্ঠে? কিছুটা আর্তনাদ, যার সাথে মিশ্রণ ঘটেছে ক্ষোভের। পৌষ বুঝলো না ওর হাতের সামান্য দাগ কাউকে এতটা ব্যাস্ত করতে করতে সক্ষম? এই দাগ গুলোর পেছনে এক এতিম মেয়ের অভিশাপ হওয়া জন্মের গল্প লুকায়িত। প্রতিটা দাগের গল্প আছে। পৌষকে চুপ দেখে তৌসিফের কণ্ঠস্বর চড়াও হলো,
“কথা বলো! চাচিরা মেরেছে?”
“কোনটা?”
“আশ্চর্য পৌষরাত! কোনটা মানে? তোমার হাতে এসব কাটাছিঁটা কিসের?”
“কাটা দাগ গুলো কেটে গিয়ে হয়েছে। ছিঁটা গুলো একেকসময় একেক ভাবে লেগেছে। চাচিরা আমাকে মারে না সহজে।”
“কঠিন হলে? তখন মারতো?”
“কি জানি।”
তৌসিফ চোখ বুজলো। পৌষের হাতটা তখনও ওর হাতে। ও জানে না কেন কিন্তু খারাপ লাগছে। এক অচেনা, অজানা মেয়ের জন্য খারাপ লাগছে। এই মেয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে তৌসিফ অবগত বহু বছর ধরে কিন্তু ভালোবাসার মতো জটিল সম্পর্ক কখনোই ছিলো না। না এক তরফা, না দুই তরফা। তৌসিফ কি করলো, ও আচমকা পৌষের হাতটা টেনে ওকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো। হতভম্ব, হতবাক পৌষ বিমূঢ় হয়ে রইলো। কিংকর্তব্য ভাব যেন সরছেই না৷ এই লোক ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছে কেন? আর তার বুকটাই বা এভাবে ধুকপুক ধুকপুক করছে কেন? খানিকটা সময় যেন ওভাবেই পার হলো। পৌষকে কখনো কেউ বুকে জড়িয়ে ধরে নি। হেমন্ত হাজার আদর করুক, সর্বোচ্চ মাথায় হাত রাখলো তাও কদাচিৎ। সেঝ চাচি তা দেখেই তো কতশত কটু বাক্য পৌষকে বলতো কিন্তু আজ বোধহয় কেউ দেখলেও কিছু বলবে না। পৌষের শরীরটা মৃদু মৃদু কাঁপতে লাগলো। তৌসিফের এক হাত ওর পিঠ আঁকড়ে আরেক হাত মাথায় বুলাচ্ছে। পৌষের অনুভূতি গুলো কাঁচা। অগোছালো। তৌসিফের এভাবে জড়িয়ে ধরা ওর অনুভূতিহীন সত্ত্বাটাকে খানিকটা নাড়িয়ে দিলো। ইশ, এখন কাঁদলে বোধহয় মানাতো কিন্তু পৌষ তো কাঁদতে পারছে না। কান্না নামক ব্যাপার-স্যাপারই ধরে না ওর সাথে তবে ও বুকে রইলো।
তৌসিফ ওকে ছাড়লো পাক্কা পাঁচ মিনিট পর। ছেড়ে ওর কপালের চুল গুলো কানে গুঁজতে গুঁজতে বললো,
“সন্ধ্যার পর বারান্দায় যেও না কখনো। সব কথার উত্তর থাকে না। এটারও নেই।”
পৌষ কথা বললো না। তৌসিফ নিজের মতো হাতা তুলে কুনুই এর উপরে দেখলো। ততটাও লাগে নি তবে সামান্য লাল হয়েছে। সেখানটায় হাত বুলিয়ে নরম স্বরে বললো,
“এটার জন্য দুঃখীত। যাও চেঞ্জ করে এসো। এটা পরে ঘুমালে তো আরাম পাবে না।”
নিজের পরণে থাকা পাকিস্তানি থ্রি পিসটার দিকে তাকালো পৌষ। যথেষ্ট আরামদায়ক। তৌসিফ তালুকদারের আলমারিতেই ছিলো। পৌষ জানে না এগুলো কার তাই প্রশ্ন করলো,
“এই পোশাক গুলো কার?”
কপাল কুঁচকে তৌসিফ বললো,
“যার গায়ে আছে তার।”
“আমাদের বিয়ে তো হুট করে হলো। আপনি কেনার সময় পেলেন?”
“পেলাম তো। নিজের বউয়ের জন্য এতটুকু করব না?”
পৌষ উসখুস করলো। তার আরো একটা প্রশ্ন আছে কিন্তু করতে পারছে না। তৌসিফ তার কাপড়ের মাপ জানলো কিভাবে তাও কিনা এতটা যথার্থ। এক কথায় যাকে বলে, ‘খাপে খাপ মাইনকার বাপ’। কিছুটা জড়তার কারণে প্রশ্নটা করা হলো না তবে পৌষ উঠে গেলেও ভাবলো, এই প্রশ্ন সে তৌসিফকে করবে।
পৌষ কাপড় বদলে আসা মাত্রই তৌসিফ গোসল করতে চলে গেলো। সন্দেহের চোখে তাকিয়ে রইলো পৌষ বন্ধ দরজায়। এত রাতে লোকটা গোসল কেন করছে? উত্তরটা নিজেই পেলো, এই লোকের এক বিরল অসুখ আছে। সেই অসুখের নাম খুঁতখুঁতানি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত মানুষ সারাক্ষণই খুঁতখুঁত করতে থাকে।
খাটে হেলান দিয়ে পৌষ ভাবছিলো সেসব। মনটা নিমিষেই খারাপও হয়ে আসে। বুকে অস্থির অস্থির লাগে। বাসার কথা ভীষণ পরছে এই মূহুর্তে। রাত বাড়লেই ক্ষুধাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। এই যে এখনও ক্ষুধা লাগছে। নিজের পেটে দুটো খোঁচা দিয়ে পৌষ শাসালো,
“কত খাবি আর? সেঝ চাচি তাই তো রাক্ষসী বলে তোকে। কেন একেবারে বেশি খেতে পারিস না? বারবার কেন ডাকিস আমাকে? একেবারে পেটপুরে খেতে পারলে তো এখন এমন লাগতো না। এটা কি বাসা আমার? এখানে এত রাতে খাবার কই পাই আমি?”
“এটা তোমারই বাসা।”
ভেজা শরীরে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটাকে অদ্ভুত সুন্দর দেখালো। পৌষ যেন তাকিয়েই রইলো তার পানে। পরণে তার শুধু টাউজার। ভেজা বুকটায় পশম লেপ্টে। সে এগিয়ে এলো পৌষর কাছে। একটু ঝুঁকে পৌষের কানের কাছে ভেজা ওষ্ঠ ছুঁয়ে শুধালো,
“একবার বলেছি না এটা তোমার বাসা?”
শিউড়ে উঠে মাথা নাড়ে পৌষ। তৌসিফ উঠে সরে যায়। হাতে থাকা ভেজা টাওয়াল পৌষের দিকে ছুঁড়ে বলে,
“মাথা মুছে দাও।”
কি আশ্চর্য কথাবার্তা। মাথা একজনের মুছবে নাকি আরেকজন। ক্যান ভাই, তুই কি ইনি নাকি মিনি? ওদের নাহয় মাথা মুছে দিতে হয় কিন্তু এমন দামড়া ব্যাটাকে মুছে দিতে কার মন চায়? না করার সাহস হলো না বিধায় পৌষ উঠে দাঁড়ালো। খিটমিট করা গলায় বললো,
“নাগাল পাই না।”
“কোলে নিব?”
“বসলেই হয়।”
তৌসিফ বসে। কিছুটা অবাকও হয়। এত সুন্দর প্রস্তাব দিলো কোলে উঠার। উঠলো তো নাই একটু লজ্জাও পেলো না। কেমন বউ এটা? লজ্জটজ্জার বালাই নেই। পৌষ তখন রগড়ে রগড়ে ওর মাথা মুছছে। তৌসিফ তারাহুরো করে বললো,
“হয়েছে হয়েছে আর লাগবে না।”
পৌষ মনে মনে শয়তানি হাসি দিলো। তৌসিফ নিজের চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বাইরে গিয়ে বুয়াকে ডেকে পাস্তা দিতে বলে ঘরে আসতেই দেখলো পৌষ ওর টয়লা ঝাড়া দিয়ে শুকা দিবে। তৌসিফ তা দেখেই বললো,
“ওটা ধুতে দিয়ে দাও পৌষরাত।”
বাথরুমে তয়লা রেখে আসতেই তৌসিফ ওকে জানালো,
“কাল আপা আসবে।”
“নিশ্চিত আমাকে দেখতে।”
“তা তো বটেই।”
“এবার কোন অভিনব পদ্ধতিতে দেখবে?”
তৌসিফ ওকে এক টানে নিজের কাছে নিলো। পৌষ চোখ নামিয়ে নিলো। তৌসিফ তা দেখে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। মুখে বললো,
“আমার বউ আমি দেখব হানি। তায়েফা আপা আমার আপন বড় বোন। আমেরিকা থেকে আসছে,তোমাকে তো বলেছিলাম। তোতাপাখি আমার, তার সামনে উল্টোপাল্টা কিছু বলো না।”
দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় পৌষের। এই তৌসিফ ব্যাটা মানুষ হয়েও সুগন্ধিযুক্ত কোন কিছু দিয়ে গোসল করে এসেছে। ঘ্রাণে টিকা যাচ্ছে না। দরজায় ঠকঠক শব্দ হতেই তৌসিফ ওকে ছাড়লো। গলা ঝেড়ে বললো,
“এসো।”
বুয়া হাফ প্লেট পাস্তা আর পানি দিয়ে চলে গেলো। পৌষের হেলদোল নেই। খাবার দেখলে লজ্জা পেতে নেই। বিছানায় পা তুলে বসে প্লেট কোলে তুললো ও। তৌসিফ গায়ে টিশার্ট জড়াতে জড়াতে বললো,
“বরকে সাধলে না?”
“জামাই খাবেন?”
“নো, হানি। তুমি খাও। আমি দেখি।”
“আপনারই খাবার ভাই। মন চাইলে খান। নজর টজর দিয়েন না।”
তৌসিফ চমকে উঠে বললো,
“কে বলেছে তোমাকে?”
চমকালো পৌষ নিজেও। বললো,
“কি?”
“ভাই ডাকলে যে?”
“অহ। আরে ভাই, এটা তো সাধারণ ডাক। জাতীয় ডাক। জামাই ই লাগেন। তিন অক্ষর বলে জামাই বানালাম না সেদিন?”
প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১৯
তৌসিফ একটু স্বস্তি পেলো তবুও বললো,
“নজর নাহয় না দিলাম। ব্যথা হলে আমার দোষ দিও না কিন্তু।”
“বালাইসাট! পৌষের রোগবালাই নেই।”