এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৭
কাফাতুন নেছা কবিতা
নিরজন রাত, হালকা মৃদু বাতাস, যেনো ঝড় হওয়ার পূর্ব মুহূর্তের আভাস দিচ্ছে। বাতাসে বাসাতে যেনো মিশে যাচ্ছে প্রেমের উষ্ণতা!
তামীম সুবহাকে তার কোলে বসিয়ে ওইভাবেই জড়ি’য়ে ধরে রাখলো। বাতাসের বেগ বাড়ার সাথে সাথে তামীমের মনের তীব্র বাসনা গুলো ও যেনো বাড়তে লাগলো।
এক পর্যায়ে হালকা বৃষ্টি নামা শুরু করলো। আজকে প্রকৃতি যেনো বিশাল বাধা হয়ে দাড়িয়েছে তামীমের প্রেমে।
বৃষ্টি নামার সাথো সাথে তামীম সুবহাকে নিয়ে ছাউনিতে দাড়ায়, হালকা ভিজে গেছে সুবহা। সুবহার ভেজা মুখটা দেখে তামীম শুকনো ঢোক গিললো। এই বুঝি তার দ্বারা কোনো অঘটন ঘটলো বলে।
তামীম সুবহার হাত ধরে এক টান দিয়ে তাকে নিজের খুব কাছে আনলো।
” বিয়েটা করা উচিত ছিলো রাতপরী!”
তামীমের এমন ঘোর লাগানো কথা, আর নেশা’ক্ত চোখের অর্থ বুঝতে পারে সুবহা।
” বাড়ি যাবো! ”
” আমি ও চায় তুমি বাড়ি চলো! আমার বাড়ির দরজা সব সময় খোলা তোমার জন্য! ”
“আমাদের বাড়ি যাবো!”
” আমাদের বাড়ির কথায় বলছি!”
তামীমের এমন তালবেতাল কথাগুলো শুনে সুবহার কপালে কিং চিত চিন্তার ভাজ পরে।
বাতাসের গতীর বেগ অনুসরণ করে বৃষ্টিটা ও যেনো তার গতি বাড়াতে থাকলো। আর অন্য দিকে তামীমের বাসনা ও।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হঠাৎ তামীম সুবহাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাড়ায়, আর সাকিবকে কল দিতে ছাতা আনতে বলে।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে ছাতা নিয়ে হাজির হয় সাকিব। আর তামীমকে দিয়ে আবার প্রস্থান করে।
তামীম ছাতা নিয়ে সুবহার হাত ধরে বৃষ্টিতে নেমে পড়ে। বৃষ্টির মধ্যে ছাতা নিয়ে হাটায় খানিকটা অন্য রকম লাগছে সুবহার কাছে। একহাতে সুবহার হাত, অন্য হাতে ছাতা। থেকে থেকে মৃদু কম্পিত বাতাস, আজকে প্রকৃতি যেনো তামীমকে উসকে দিচ্ছে সুবহার আরো কাছে যাওয়ার জন্য।
” আমার খুব ইচ্ছে ছিলো, বউকে নিয়ে এইভাবে বৃষ্টিতে হাঁটবো। কিন্তু তুমি তো বিয়ে করলা না, তাই প্রেমিকাকে নিয়ে হাটতে হচ্ছে। ”
তামীমের ও যে খু*ন খারা’বি বাদ দিয়ে এমন অদ্ভুত ইচ্ছে হয়, সেটা জানা ছিলো না সুবহার।
হাটতে হাটতে এক পর্যায়ে গাড়ির সামনে আসে তামীম সুবহাকে নিয়ে। সুবহাকে গাড়িতে বসিয়ে তামীম তার পাশের সিটে বসে পরে।
পাশে বসতেই তামীম সুবহার হাত ধরে ফেলে।
” আমি ছাড়া অন্য কেউ হাত ধরছিলো কখনো?”
হঠাৎ এমন প্রশ্ন শোনাতে খানিকটা সংকোচে পরে যায় সুবহা। মাথা নেড়ে না বুঝায়।
” ধরলে এখনই তোমার একটা হাত কা*টা পড়তো!”
তামীমের ঠান্ডা মেজাজে ভয়ংকর হুমকি শুনে ভয় পায় সুবহা। সুবহাকে ভয় পেতে দেখে তামীম তার ঠোঁটের কিনারায় হাসি টেনে আনে।
সারা রাস্তা সুবহা তামীম চুপচাপ থাকলে ও তামীমরের কড়া নজর ছিলো সুবহার উপরে।
আনুমানিক রাত ৩ টার দিকে সুবহাকে বাড়িতে নামিয়ে দিতে যায় তামীম।
সুবহা নেমে ছাতা ধরে পা টিপে টিপে হেটে আসতে থাকে ভিতরে।
” সুবহা?”
তামীমের ডাক শুনে দাড়ায় সুবহা। পিছনে তাকাতে দেখে তামীম এগিয়ে আসছে। বৃষ্টির সাথে সাথে বাতাসের বেগ জোরালো হওয়ায় থেকে থেকে ছাতা উল্টে যাচ্ছিলো সুবহার। আর বৃষ্টির ফোঁটা গুলো তার চোখে, মুখে আছড়ে পরছিলো।
সুবহা চোখ মুখের পানি মুছতেই তামীম এসে তার সামনে দাড়ায় আর নিজের ছাতা ফেলে দিয়ে মাথা নিচু করে সুবহার ছাতায় ঢুকে পড়ে। তামীম সুবহার ছাতার ভিতরে ঢোকাতে দু-হাতে শক্ত করে ধরে ছাতাটি সুবহা। আর সাথে সাথে তামীম সুবহার গাল ধরে সুবহার ঠোঁ’টে নিজের ঠোঁ’ট বসিয়ে দেয়।
আচমকা এমন হওয়াতে সুবহা নিজের ছাতার ডান্ডি আরো শক্ত করে চেপে ধরে, আর তামীম কোনো হেলদোল ছাড়ায়, সোজা হয়ে দাড়িয়ে সুবহাকে কি’স করতে থাকে।
তামীমের এমন কান্ডে তার পঞ্চ পান্ডব একজন আরেক জনের চোখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেলেন।
” এইডা আমি কী দেখলাম রে শা’লার ভাইরা!”
” চুপ কর বেডা! তুই কিছু দেখোস নাই!”
” হো, সাকিব্বাহ, মাহির ঠিক কয়ছে, তুই কিছু দেখোস নাই! আমরা ও দেখিনাই ভাই যে ভাবিরে চু’ম্মা দিছে।
” হো মানিক্কাহ, ঠিক কয়ছোস, ভাই যে ভাবির ছাতার ভিতরে ঢুইকা চু’ম্মা দিছে এইডা তো দেখিই নাই। ”
” আরে টাকলা মফিস, ভাবির ছাতার রং যে কালা মানিকের মতো কালা এটা ও তো দেখি নাই! ”
” তুই আমারে আবার কালা কয়লি ভোটকা রফিক!”
” আদর কয়রা কয়ছি ডার্লিং! ”
” বা*লের ডার্লিং তুমি আমার! বেটা লুই’চ্চা, চরি’ত্রহীন!”
কিছু ক্ষণ পর তামীম সুবহাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে বসে। যাওয়ার সময় একটু ও পিছনে ফিরে তাকায়নি সে। আর সুবহা ও তাড়াতাড়ি বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে।
গাড়িতে উঠে তামীম অন্য মনস্ক হয়ে পরে। আর তার পঞ্চ পান্ডব একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতে থাকে।
মাহির হাতের কনই দিয়ে সাকিবকে ইশারা করে…
” দেখ! ভাই মুচকি মুচকি হাসতাছে!”
” নয়া নয়া প্রেরেমে সব্বাই মুচকি হাছে, কয়দিন পর দুই চুক্ষু ভাছে!”
সাকিবের কথা তামীমের ও কান অব্দি গেলো।
” এই মাঝরাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে হাইটা সরকার বাড়িতে যাইতে কেমন লাগবো রে সাকিব?”
” ভাই আসতাগফিরুল্লাহ, নাওজো বিল্লাহ আর কয়তাম না!”
গাড়িতে উপস্থিত সকলে হেসে উঠলো। প্রায় ১৫ বছর ধরে তারা একসাথে আছে। এদের মধ্যে কারো পরিবার নেই। সবাই অনাথ। বিভিন্ন সময় এক একজন তামীমের সাথে যুক্ত হয়। তারপর থেকে খান বাড়িতেই থাকে তারা। পাঁচ জনই দেখতে সুন্দর আর হ্যানসাম হলে ও শরীরে গঠন আর রং অনুযায়ী একজন আরেকজনকে সব সময়ই অদ্ভুত নামে ডাকে। এদের পরিবার বলতে একমাত্র তামীমই আছে। এমন অনেক দিন গেছে তামীম নিজের হাতে ভাত মেখে এদের মুখে তুলে দিয়েছে। তামীম খুব রাগি আর ভয়ংকর প্রকৃতির মানুষ হলে ও কোথাও না কোথাও এদের বড় ভাইয়ের মতোই। এরা পাঁচ জনই তামীমের নিজের ভাইয়ের সমান।
——-পরের দিন———
খুব সকালে তামীম লন্ডনে চলে যায় সাথে তার পঞ্চ পান্ডব ও যায়। অবশ্য যাওয়ার আগে সুবহাকে ছোট্ট একটি টেক্সট করেছিলো বটে
তামীম লন্ডনে চলে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো একপ্রকার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সুবহা।
প্রায় প্রতিটা মুহূর্ত তার ওপরে নজরদারি, সেই ভয়মিশ্রিত ভালোবাসা থেকে যেন হঠাৎ মুক্তি পায় সে।
প্রথমবারের মতো নিজের মতো করে নিঃশ্বাস নেয়।
এই নিস্তব্ধতা, এই স্বাধীনতা যেন এক রকম আনন্দেই ভরিয়ে তোলে সুবহাকে।
এভাবে দু-দিন কেটে যায় তামীম সুবহার থেকে আলাদা। উফ কী শান্তি। সুবহা নিজের মন মতো চলতে শুরু করে।
অন্য দিকে লন্ডনে যেয়েই তামীম তার কাজে লেগে পরে। প্রায় সকল নেতাদের উচ্চ দা*মে কিনে ফেলে তামীম। এখন চাইলে ও আর কেউ তামীমের আব্বাজানের বিরুদ্ধে বাইরে স্লোগান ও তুলবে না।আর বর্হিরবিশ্বে তার আব্বাজানের নাম ও খারাপ হবে না।
এভাবেই দু-দিন ধরে কারো সাথে যোগাযোগ না করে মনোযোগ দিয়ে নিজের কাজ করতে থাকে তামীম।
দিন শেষে নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে তামীম। আর গ্যালারিতে ঢুকে সুবহার ছবি বের করে।
” কোথায় পাবো বল! কোন খানে তুই!”
তামীম সুবহার ছবি দেখতে দেখতে অন্য মনস্ক হয়ে কথাগুলো বলতে থাকে। তারপর ঘড়িতে দেখে কয়টা বাজে। এখন তো বাংলাদেশে গভীর রাত। তাই আর ফোন দেয়নি সুবহাকে তামীম। তারপর সুবহার ছবিতে চু*মু খায় তামীম।ঠিক তখনই সাকিব আসে তামীমের পিছনে।
” কী খাইতাছেন ভাই?”
” তোর চল্লি’শার খানা!”
তামীমের তার রাতপরীর ছবিতে চু’মু খাওয়ার সময় এমন বাঁধা পাওয়ায় একটু বিরক্ত হয় তামীম। তারপর হনহনিয়ে যেতে থাকে।ঠিক তখনই বাকি চারজন চলে আসে।
” তুই শা*লা ভাইয়ের প্রেরেমে বহুত বাঁধা দেস।!”
” উফ কষ্ট! ”
” হো! মজা লো শালা*র ভাইরা! ”
—- ৪ দিন পর — কলেজ ফেয়ারওয়েল—
ফেয়ারওয়েলের দিন সবাই মিলে ঠিক করে শাড়ি পড়বে সবাই। তাই একই রংয়ের শাড়ি পড়ে সকলে। আর সুবহাকে জোর করে।
সুবহা অনেক না না করেও শেষে রাজি হয়ে যায়। আর কী করার আছে। কলেজ শেষ হলে এই স্মৃতি গুলোই মনে থাকবে তাদের। তাই সুবহা ও রাজি হয়ে যায়।
কাজল-লিপস্টিকে একটু সাজে,হিজাবটা আজ ভুলেই যায় সে।ভাবনার মধ্যে ছিল না তামিম!
কারণ সে তো এখন অনেক দূরে!
কলেজে ঢুকতেই সবাই অবাক হয় খুব। এই নতুন কলেজ সুবহাকে এমন ভাবে কেউ দেখেনি। তাই শাড়ি পরিহিত সুবহাকে দেখে সবার নজর পরে তার উপরে।
সুবহাকে আজকে যেন একদম অন্যরকম লাগছে!
তামীমের রাতপরী যেন আজ রঙিন পরীর রূপে রূপান্তরিত হয়েছে।
কিন্তু সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না…
এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৬
দূপুরে ফাংশন শেষে ফেরার সময় কয়েকজন বাইকওয়ালা ছেলেরা সুবহা এবং তার বান্ধবীদের পিছনে লাগে।আর সকলে মিলে গোল করে তাদের ঘিরে ধরে।
” এই কেউ নজর দিবি না! এই চিক’নি আমার!
সুবহার দিকে আঙ্গুল তাক করে একজন বখা’টে কথাগুলো বলতে থাকে।
”বাহ, শাড়িতে একদম মাখন!”
একজন ছেলেকে আর পেরে ওঠে না, সে হুট করে এগিয়ে এসে সুবহার কোমরের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়…