এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৩
কাফাতুন নেছা কবিতা
” মাঝে মাঝে মনে হয়, আপনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পুরুষ তামিম! কিন্তু তারপরই আপনার হাতের দিকে তাকালে আমি র’ক্ত ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না! কীভাবে ভালোবাসবো আপনাকে তামিম?”
সুবহা সারা রাস্তা নিজের মনের সাথে লড়ায় করতে থাকে। ভালোবাসা পবিত্র জিনিস! ভালোবাসা হয় মন থেকে। কিন্তু, যেই ভালোবাসায় ভয় থাকে, সেটা কী আদোও কোনো ভালোবাসা? এমন ভালোবাসা তো কেউ চায় না!
ছোটোবেলা থেকে আরশি নগরের দু-টো বিখ্যাত জিনিসের সাথে পরিচিত ছিলো সুবহা! শুধু সুবহা নয়, দেশের প্রায় সকল মানুষই পরিচিত!
এক, সরকারবাড়ি, যেখানে দেশের প্রধান মন্ত্রী তানভির সরকারের বসবাস! যদিও প্রধান মন্ত্রীরা গণভবন ছাড়া কোথাও থাকে না। কিন্তু তানভীর সরকার ছিলো নিজের বাস ভবনে। কারণ একজন মন্ত্রী চাইলেই নিজের বাস ভবনে থাকতে পারেন, কিন্তু তার জন্য প্রযোজ্য ভি. আই. পি নিরাপত্তা, যেটা তানভীর সরকারের ছিলো! তাই আরশি নগরের সবাই পরিচিত এই সরকার বাড়ির সাথে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দ্বিতীয়, তামিম সরকার,, প্রধান মন্ত্রীর ছেলে হওয়ার সুবাদে, যাকে আরশি নগরের যুবরাজ এবং দেশে যুবকদের আইডল ধরা হয়,কিন্তু তামিমের নৃশংসতার কথা জানে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। কিন্তু কথায় আছে, যেখানে টাকায় সব চলে, সেখানে আইন কালো কাপড় পরিধান করে চলে বিষয়টি ঠিক তাই! সুবহার বয়সের থেকে বেশি মানুষের জীবন নি’য়েছে তামিম! যেটা সুবহার ও অজানা নয়!
আপনি যতই স্ট্রং হন না কেন, একজন মন্ত্রীর ছেলে এবং এমপির কাছে আপনার এই সাহসীকতা টিকবে না! যেমন টা হয়েছিল সুবহার ক্ষেত্রে! তামিমের নৃশংসতার কথা সুবহা সেদিন শুনে যেদিন,পুরো দেশে খবর চলে, মন্ত্রীর ছেলে এমপি হয়েছে! অবশ্য একজন প্রাপ্ত বয়স্ক যার বয়স ২৫ শের উর্ধ্বে, সে মন্ত্রীর ছেলে হলে ও এমপি হতে পারবে। এটা বড় কথা নয়, বড় কথা ছিলো, সেদিন নিউজে তামিমের বিরোধী দলের একটি পুরো দলের মানুষের লা’শ বুড়ি গঙ্গায় পাওয়া যায়! তদন্ত চলে, মা’মলা ও হয়, কিন্তু দিন শেষে ফলাফল শূন্য! তাদের মা’রার অভিযোগে ধরে পড়ে একজন, কিন্তু সে, যে আসল অপরাধী নয়, সেটা বুঝতে কারো অসুবিধা হয় না!
আরশি নগরের ছোটো থেকে বড় প্রায় সকলেই তামিমকে ভয় পায়, তার বেপরোয়া জীবন সম্পর্কে সঠিক ঙ্গান সকলের রয়েছে । তাই যখনই নিউজে কোনো খবর আসতো, তখনই সুবহা তামিমকে অমানু’ষের উপাধি দিতো!
বিশেষ করে নির্বাচনের প্রচারণায় যখন সালমান হকের টুক’রো টুক’রো মৃত দেহ পানিতে পাওয়া যায়, সেদিন ও সুবহার পরিবার তামিমকে নিয়ে আলোচনা করে! তখন আরো বেশি ভয় ঢুকে যায় সুবহার মনে। সে মনে মনে সব সময় দোয়া করতো যেনো, তামিমের সাথে তার দেখা না হয়, কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সেই তামিমের সাথেই সুবহার কপাল মিলে গেলো।
রাত ঠিক ১০ টার কাছাকাছি সুবহা বাড়ি চলে আসে। তামিমের গাড়ি তাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
সুবহা বাড়ি এসে কলিং বেল চাপতেই দরজা খুব তাড়াতাড়ি খুলে দেয়, তার মা! আর সুবহাকে ভিতরে নিয়ে আসে।
সুবহা ভিতরে আসতেই তার মা তাকে টেনে নিয়ে বাথরুমে নিয়ে যায়, তার সতি’ত্ব আছে কী-না সেটা দেখার জন্য! সুবহার বাবা তখনও হল রুমেই বসে ছিলো!
প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে যখন বাইরে থাকে, তাও এমন হিংস্র একজন মানুষের সাথে তখন স্বাভাবিক ভাবেই বাবা-মায়ের চিন্তা চলে আসে! যেটা সুবহার বাবা মায়ের ও হয়েছিলো!
যেই মেয়ে কখনো সন্ধার পর বাড়ির বাইরে থাকে না, সেই মেয়েকে আজকে এসব কি দেখতে হচ্ছে!
সুবহার মা বের হয়ে তার বাবাকে আস্তত্ত করে কোনো অঘটন ঘটেনি! অপরদিকে সুবহা চুপচাপ দাড়িয়ে নিজের বাবা-মায়ের এমন অভি মূর্তি দেখে পাথরের মতো হয়ে যায়।
সুবহার মা সুবহাকে নিজের রুমে যেতে বলে, সুবহা ও চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়।
” সুবহার মা, মেয়ের প্রয়োজনীও জিনিসপত্র ব্যাগ ভর্তি করো!”
” হঠাৎ? ”
” যা বলছি তাই করো। পরশুদিন সুবহাকে চিটাগং নিয়ে যেয়ে…! ”
” যেয়ে কী?”
” পরের টা পরে!”
রুমে এসে সুবহা আয়নার সামনে দাড়িয়ে পড়ে! নিজেকে খুব ভালো ভাবে দেখতে থাকে। তারপর নিজের ওড়না নিয়ে মুখে হাতে ঘসতে শুরু করে। মনে হয় যে কত ময়লা লেগে আছে তার শরীরে।
সুবহা খুব কান্নায় ভেঙে পড়ে। এমন দিন দেখবে তা কল্পনাতে ও ভাবেনি। নিজের মা-বাবার চোখে নিচে নেমে পড়ার মতো কষ্ট হয়তো পৃথিবীতে আর দুটো নেই। তাদের চোখে চোখ মিলাতে ও সুবহার লজ্জা করছে খুব। নিজেকে নোংরা কীটপতঙ্গের মতো লাগছে তার কাছে। কিন্তু কী করার! আজকে সে যে নিরুপায়।
সুবহার কান্নার মাঝেই তামিমের ভিডিও কল আসে। তামিমের কল দেখে সুবহা চোখের পানি মুছে, চুল ঠিক করে রিসিভ করে।
কল রিসিভ হতেই তামিম ভ্রু কুঁচকায়।
” কাঁদছো কেন?”
তামিমের এমন গম্ভীর গলা শুনে সুবহা সুবহা কী বলবে কিছুই বুঝতে পারে না!
” কেউ কিছু বলেছে?”
” নাহ!”
” আমাকে কী আসতে হবে?”
তামিম আসলে যে শিকদার বাড়িতে আরো একটি তুফান শুরু হবে সেটার আচ সুবহা বাড়িতে প্রবেশ করতেই পেয়েছে।
” আসলে জ্বর জ্বর লাগছে একটু, আর হাত ও একটু ব্যাথা করছে, তাই মুখ এমন লাগছে!”
সুবহার নরম ঠান্ডা গলার আওয়াজ ও তামিমের কাছে খটকা লাগে! কিন্তু রাতপরী তো তার কাছে মিথ্যা বলবে না, তাই সন্দেহ করে ও করে না তামিম!
” আচ্ছা! আমি ডাক্তার পাঠাচ্ছি! ”
” নাহ! নাহ! ডাক্তার লাগবে না! ”
” কেন লাগবে না?”
” আমি ঠিক আছি!”
” কিন্তু আমি ঠিক নাই! আমি ডাক্তার পাঠাচ্ছি! ”
তামিম তার কথায় অটল। একবার যেটা বলবে সেটা করেই ছাড়বে! কিন্তু এতো রাতে আর কোনো সন্দেহের শিকার হতে চায় না সুবহা!
” তামিম!”
সুবহার হঠাৎ তামিমের নাম ধরে ডাকাটা তামিমের মতো নির্দয় মানুষের মনে ও প্রশান্তি বয়ে আনে!
” বলুন ম্যাডাম!”
” বিয়েটা কী…”!
” শুক্রবারেই হবে!”
” আমি তো এখন ও সুস্থ নই!”
” আমি করে দিবো Don’t worry!”
তামিমের এমন কাট কাট কথায় সুবহা বুঝতে পারে তাকে আটকানো সহজ নয়! ঝড় তুফান আসলেও তামিম তার কথায় অটল। কিন্তু সুবহা তো কিছুতেই মানতে পারবে না এই বিয়েটা!
সুবহাকে চুপ থাকতে দেখে তামিম বুঝতে পারে সে কিছু বলতে চায়!
” কিছু বলবা রাতপরী!”
সুবহা মাথা নেড়ে না, তামিম ও আর সুবহাকে ঘাটায় না! সে ফোন রেখে দিয়ে, তিনজন লেডি ডাক্তারকে সুবহাদের বাসায় পাঠাতে বলে।আর নিজে সুবহার ছবিগুলো স্ক্রোল করতে থাকে!
তামিমের এখন প্রধান কাজ হলো একটু পরপর সুবহার ছবি দেখা! সুবহার মাঝে তামিম কী দেখেছে সেটা সে ও জানে না! কিন্তু সুবহাকে না পেলে তামিম সব কিছু শেষ করতে দু সেকেন্ড ও ভাববে না,এটা তামিম ও বুঝে গেছে।
———–রাত ১০:৪৫ মিনিটে তিন জন লেডি ডাক্তার আসে শিকদার বাড়িতে। তারা এসে সুবহার হাত ড্রেসিং করে দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা চেক করে মেডিসিন দিয়ে চলে যায়! যতক্ষণ ডাক্তার ছিলো ততক্ষণ সুবহার মা ও ছিলো তাদের সাথে, তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে।
সুবহার খুব অনুসূচনা হয় নিজের এমন করুন দষা দেখে। সে চুপচাপ সব সহ্য করে নেই।
ডাক্তাররা চলে গেলে সুবহা কিছু ক্ষণ একা থাকে তার রুমে। তারপর তার মা-বাবা একসাথে প্রবেশ করে রুমে।
সুবহার মা-বাবা এসে তার পাশে বসে। এতো সুন্দর মেয়েটার মুখ এতো মলিন দেখে ভিতর অব্দি কেঁপে উঠে সুবহার বাবার!
” তোকে আমি সন্দেহ করি না মা!”
বাবার হঠাৎ এমন কথায় মুখ তুলে তাকায় সুবহা তার বাবার দিকে! তার বাবা ও সুবহার মাথায় হাত রাখে।
” আমি তোকে বিশ্বাস করি সুবহা! কিন্তু আমি নিরুপায় মা! যেদিন তোর নিজের সন্তান হবে সেদিন বুঝবি! সন্তানদের আগলে রাখা কতটা কষ্টের!”
সুবহার বাবার কথা শুনে সুবহার চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি চলে আসে!
” তুই তামিম সরকারকে কল দিয়ে বল বিয়েটা কিছু দিন পিছিয়ে দিতে। ”
কথাটি বলেই সুবহার বাবা উঠে চলে যায় সাথে তার মা ও! কিন্তু সুবহা তো জানে কোনো লাভ নেই। তামিম কোনো দিন ও পিছিয়ে দিবে না বিয়েটা!
সুবহা কি করবে কিছু বুঝতে পারে না! এক দিকে তামিম আরেকদিকে তার পরিবার! খুব দোটানায় পড়ে যায় সুবহা!
———সরকার বাড়ি——–
আজকের ঘটনার পর একটার পর একটা প্রেস ব্রিফিং করতে থাকে ডিআইজি এবং অন্যরা। কিন্তু সকলে জানতে ইচ্ছুক তানভীর সরকার ঠিক আছে কী-না! তানভির সরকার পাওয়ারে আসার পর সব থেকে বেশি সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়েছে উনি। তাই ছেলে যেমনই হোক, বাবাকে সবাই পছন্দ করে।
প্রেস ব্রিফিং এর জন্য তৈরি হচ্ছিল তানভীর সরকার। ঠিক তখনই তামিম এবং তার পঞ্চ পান্ডব এসে হাজির হয়!
তামিমকে দেখা মাত্র অনেকেই ঘামতে শুরু করে, আর দোয়া করতো থাকে এই শেষ প্রহরে যেনো আর র’ক্ত দেখতে না হয়।
তামিম এসেই তার আব্বাজানের সাথে দাড়ায়! পুরো প্রেস ব্রিফিং এ তামিম তানভীর সরকারের পিছনে ছায়া মুর্তির মতো দাড়িয়ে থাকে।
প্রায় ২০ মিনিট ধরে লাইভ চলে।তারপর সব কিছু বন্ধ করে তানভীর সরকার ছেলেকে নিয়ে খেতে বসে।
বরাবরের মতো এবারও নিজের খাতেই খাওয়াচ্ছে তানভীর সরকার ছেলেকে! পাশে আয়েশা বেগম বসা!
ছেলে বাড়ি আসলে আয়েশা বেগম সকল কিছু বাদ দিয়ে তার পিছনেই থাকে!
” যার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তার সাথে দেখা হলো?”
তানভির সরকারের মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে মৃদু হাসি দেয় তামিম!
” জ্বী আব্বা জান! ”
” আপনি কী শরম পাচ্ছেন বাবাজান? তামিম সরকার ও শরম পায়?”
তামিম তার দিকে তাকিয়ে বলে….
” আব্বাজান, তামিম এতো বড় ও হয় নাই যে নিজের বাবার মুখে নিজের প্রেমিকার কথা শুনে একটু লাজ লজ্জা পাবে না! আপনি আমার আব্বা গুরুজন! আপনার সাথে কথা বলতে গেলে ও আমি হিসাব করে কথা বলি! সেখানে নিজের প্রেমের কথা একটু লজ্জা দেয় আব্বা! ”
এমপি তামিম সরকার পর্ব ২২
বাবার প্রতি ছেলের এতো শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা দেখে তানভীর সরকার এবং আয়েশা সরকারের মন জুড়ে যায়! তামিম বেপরোয়া হলে ও নিজের বাবা-মায়ের সামনে ঠিক থাকে এটায় অনেক।
তামিমের এমন পরিস্থিতিতে এক বাক্যে বলা যায়, জাতে মা’তাল, কিন্তু তালে ঠিক!