এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৭
কাফাতুন নেছা কবিতা
একজন প্রধান মন্ত্রীর ছেলে কখনো সেলিব্রিটিদের থেকে কম হয় না! তাদের প্রতিটি চলাফেরা কথাবার্তা সকল কিছুই হয় যুবকদের কাছে অনুপ্রেরণা! কিন্তু তামিমের বেলায় বিষয়টি ছিলো ভিন্ন। দেশের সকল মানুষ তাকে জন নেতা, সাধারণ মানুষের নেতা প্রধানমন্ত্রী তানভির সরকারের ছেলে কম, কুক্ষাত সন্রা’শি এমপি তামিম সরকার নামেই বেশি চিনতো। সাধারণত একজন এমপির এতো পাওয়ার থাকে না যে পুরো এলাকা জ্বা’লাতে পারবে! কিন্তু একজন মন্ত্রীর ছেলে দেশ পু’ড়িয়ে দিলে ও কিছু হয় না! সবাই এটাকে সামান্য এক্সিডেন্ট ভেবে ভুলে যায়!
তামিমের বয়সের থেকে তার খু’নের সংখ্যা বেশি! এমন কেউ নেই যে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলবে। সুবহার ছেলেবেলার ভয় ছিলো তামিম! আরশি নগরে জন্মের সুবাদে সে বেশ কয়েকবার তামিমের পোস্টার এমন খোলা জীপ নিয়ে তামিমকে রাস্তায় যেতে দেখেছে। তামিমকে সুবহা যতবারই দেখতো মুখ ঢেকে ফেলতো।কারণ লোকমুখে শোনা আছে তামিমের পাপের কথা! সুবহা কখনো ভাবেনি, তার ভয়ই তার কাল হবে। সেই ২৬ মার্চ তার জীবনের সব থেকে খারাপ অধ্যায় শুরু হবে।
সুবহা এখন ও চিন্তা করে যদি ২৬শে মার্চে সে কলেজ প্রোগ্রামে না যেতো, তাহলে হয়তো তামিমের চোখেই পড়তো না! তার জীবনটা ও এমন হতো না! আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই হতো তার জীবন!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তামিম এবং তার পঞ্চ পান্ডব সোজা সরকার বাড়িতে চলে আসে। সরকার বাড়িতে আসতেই দেখা যায়, পুরো সরকার বাড়ি খুব সুন্দর করে সজ্জিত! খানিকটা বিদেশি ধরনের ডেকোরেশন। তামিম বরাবরই খাটি দেশি মানুষ! এসব বিদেশি কালচার তার খুব একটা পছন্দ না! তাও বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কখনো একটি কথাও বলে না তামিম।
তামিমের জীপ ভেতরে ঢুকতেই তার উপরে ফুল বর্ষণ হতে থাকে। তার পঞ্চ পান্ডব নেমে সোজা নাচতে শুরু করে বাকিদের সাথে।
তানভির সরকার এবং আয়েশা সরকার তামিম আসার কথা শুনে বাইরে চলে আসে। নিজের বাবা-মাকে এতো খুশি দেখে তামিমের পা দুটো জমে যায়! কী সুন্দর হাসি তার মা-বাবার মুখে!
“আব্বাজান!”
তানভির সরকার এবং আয়েশা সরকার দু’জনে তামিমের পাশে দাড়িয়ে যায়! তানভির সরকার সোজা তামিমকে বুকে জড়িয়ে নেই।
” আমি অনেক খুশি বাবাজান! সব থেকে বেশি খুশি আজকে আমি! আমার একমাত্র ছেলে বিয়ে করতে যাচ্ছে! ”
তামিম চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নেই। তানভির সরকারকে খুব কমই এভাবে হাসতে দেখেছে তামিম। তার চোখ হয়তো একটু ঝাপসা হয়ে এসে ও আসলো না! কারণ তামিম সরকার কখনো কাঁদে না! সে কাঁদায়!
” আমি আজকের মতো খুশি হয়নি কখনো বাবাজান! আপনার বিয়ে নিয়ে আমার অনেক শখ ছিলো!”
তামিম খুব মনোযোগ সহকারে তার আব্বাজানের কথা শুনে! আহা! কী খুশি লোকটা আজকে।মনে হচ্ছে ঈদের চাঁদ উঠেছে! আর ভোর হলেই ঈদের আনন্দ বয়ে যাবে চারপাশে।
” আব্বা জান! আপনি খুশি তো?”
তানভির সরকার তামিমের দু-গালে হাত দিয়ে তার কপালে চু’মু খায়!
” আপনি জন্মের সময় ও এতোটায় খুশি হয়েছিলাম! ”
আয়েশা সরকার তানভির সরকারকে সরিয়ে ছেলের সামনে দাড়ায়!
” আমার সোনা- মানিক এতো ভিজলি কীভাবে? বিয়ের দিন কী অসুস্থ্য থাকতে চাস?”
” ওই একটু ভিজলাম আর কি আম্মা!”
” বাবা আমার বউ মারে নিয়ে আসতি সোজা! ওরে দেখার জন্য তো আর তরই সইছে না আমার!”
” আনবো আম্মা! পরশুদিনই আনবো!”
তামিম চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে পুরো সরকার বাড়ি এতোটায় মনোযোগ সহকারে সাজানো হয়েছে যে চোখ সরানো মুশকিল!
” আব্বা জান, একটা ইচ্ছে ছিলো আমার!”
” জ্বী বাবা জান বলেন!”
” আমি মসজিদে বিয়ে করতে চায়!”
” মাশাআল্লাহ! সেতো ভালো কথা!”
” আব্বা জান, শুধু তার পরিবার আর আমার পরিবার! আর বেশি কাউকে চায় না!”
” তা করা তো সব থেকে ভালো! কিন্তু আমরা আনন্দ করতে পারবো তো সরকার বাড়িতে?”
তামিম তার বাবার কথা শুনে মাথা নিচু করে হেসে সম্মতি দিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়!
” দেখছেন কর্তা! আমার তামিম কতো পরিবর্তন হয়ছে!”
আয়েশা সরকারের কথা শুনে তানভির সরকার বুক ভরে নিঃশ্বাস নেই।
” জ্বী গিন্নি! অনেকটায়! আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া আমার ছেলে খু’ন করে আজ বাড়ি ফেরেনি!”
রাত ১:৪৫ মিনিট! পুরো শিকদার বাড়িতে আজ গা ছমছমে পরিবেশ বিরাজ করছে!
ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে কিছু ক্ষণের মধ্যে সুবহাকে তার জন্মভূমি ত্যাগ করতে হবে!
সময় যতটা ঘনিয়ে আসছে, সুবহার ভয় ও ততটায় বেড়ে যাচ্ছে! সাথে তার হ্রদ স্পন্দ ও! এই কয়দিনে তামিম সম্পর্কে তার ভালো ধারণা হয়ে গেছে! এসবের শেষ পরিনতি কী সেটা ও সুবহার জানা! কিন্তু শেষ চেষ্টা তো করতেই হবে!
” সুবহা!”
বাবার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে সুবহার! এখনো হাত-পা কাপছে তার!
” আয়!”
সুবহার বাবা তার হাত ধরে নিচে নিয়ে আসে। কিন্তু সরদ দরজায় তামিমের লোকেরা থাকায়, তারা পিছনের দরজায় চলে যায়! তামিম আগে থেকেই রাতের বেলা গার্ডদের সুবহার বাড়ির সামনে পাহাড়ায় রাখতো, যেদিন থেকে সুবহাকে তামিম প্রথম দেখেছিলো তার পরের দিন রাত থেকেই তামিম এই ব্যবস্থা করে রাখে।
সুবহার বাবা সুবহাকে পিছনের দরজা দিয়ে বের করে দেয়! এবং নিজেরা ও এক এক করে বের হয়ে যায়। তাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে একটি কালো বড় গাড়ি দাড়ানো ছিলো! সুবহা সহ তার পরিবার গাড়িতে খুবই বিচক্ষণতার সাথে উঠে বসে।
সুবহার ধ্যান এখন ও শুধুই তামিমের পরবর্তী পদক্ষেপের উপরে। কারণ সুবহা জানে তামিম জানলে ঠিক কী কী হবে তার সাথে!
একদিকে পুরো আকাশে আতোষ বাজি ফুটছিলো, অপর দিকে তামিমের প্রেয়সী তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলো।
আজকের আকাশটা যেন আরশিনগরে বয়ে আসা নতুন বিপদের ইংগিত দিচ্ছিলো!
——-সরকার বাড়ি————
টিভির বড় স্ক্রিনে সুবহার আর নিজের ছবি ছেড়ে দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তামিম। হাতে তার ড্রিংক’সের গ্লাস! খুব কম সময় এমন যায় যখন তামিম নিজের বাড়িতে বসে এসব ছাইপাঁশ খায়! তামিম যেদিন নে’শা করে বা খুব বেশি ঘোরে থাকে সেদিন সে বাড়ি ফিরে না!
নিজের বাবা-মায়ের সামনে তামিম কখনো মা’তাল হয়ে ফেরেনি! আর না উচ্চু আওয়াজে কথা বলেছে! হাজারটা খারাপ দিক থাকলে ও নিজের বাবা-মায়ের সামনে তামিম ভুলে ও কোনো বেয়াদবি করেনি! কিন্তু আজকে তামিম ড্রিংক’স করছে! নাহ! এটা কষ্টের নয় বরং সুখের!
হঠাৎ এক পর্যায়ে গ্লাসটি টি-টেবিলে রেখে তামিম টিভির স্ক্রিনে সামনে দাড়ায়, আর সুবহার ছবি বরাবর চু’মু দেই!
” মিলন হবে কতো দিনে! আমার মনের মানুষ এলো সনে!”
তামিম স্ক্রিনে সুবহার ছবিটি ধরতে থাকে। আহা! কী নিদারুণ চাওয়া তার!
পৃথিবীতে খুব কম মানুষই আছে, যাদের কেউ মন থেকে চায়! যাদের জন্য সব কিছু উলোটপালোট করে দেই! সুবহা ও সেই সৌভাগ্য মানদের মধ্যে পড়ে। তামিম তাকে ঠিক কতটা চায় সেটা তামিম নিজে ও জানে না!
সারা রাস্তা সুবহা এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরশি নগরের রাস্তা যতটা ছেড়ে যাচ্ছে, ততটায় সুবহার বুক ভারি হয়ে আসে। শুধু একটায় চিন্তা সুবহার মাথায়! তামিম জানলে কী হবে!
সুবহার চিন্তার মাঝেই তার ফোন একটু কেঁপে উঠে! ভাইব্রেট করার ফলে কেউ টের পাইনি তার ফোনের নোটিফিকেশন!
সুবহা পাশে তাকিয়ে দেখে তার মা ঘুমে আছে, বাবা ও ঝিমাচ্ছে! আর ভাই সেতো অনেক আগেই ঘুমিয়ে পরে গেছে!
সুবহা একটু একটু করে ফোন অন করে দেখে!
” কবে আমার বউ হবা সুবহা! আর তো দেরি সই না!”
তামিমের এই এক লাইন টেক্সটেই সুবহার চিন্তার পরিমাণ আরো শতগুন বেড়ে যায়! তামিম তাকে ছাড়বে না, আর সে তামিমের সাথে থাকতে চায় না! পরিস্থিতি যে তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, সে জানে না!!
ঠিক ভোরবেলা সুবহাদের গাড়ি থামে একটু গহিন জঙ্গলের ভেতরে। এটা চিটাগং না-কি অন্য কোথাও, সুবহা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না! একটি রিসোর্টে এসে গাড়ি থামে সুবহাদের। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে সুবহার পরিবার নামে গাড়ি থেকে! কিন্তু সুবহা এক ফোঁটা ও ঘুমাইনি! তার চোখের ঘুম গায়েব হয়ে গেছে!
সুবহারা নামতেই কিছু লোক এসে ফুলের মালা নিয়ে তাদের বরণ করে নেই। সুবহা ঠিক বুঝতে পারে না, এখানে হচ্ছে টা কী! তামিমের ভয় তার মনে এতোটায় জেঁকে বসেছিলো যে, তেমন কোনো কিছু খেয়াল করে না সে।
পরিবারের সাথে ভিতরে চলে যায় সে। ভিতরে যেতেই কিছু মেয়ে মানুষ আসে তার সামনে।
” বাহ! কী মিষ্টি আমার ভাবি!”
একটি অপরিচিত মেয়ের মুখে ভাবি ডাক শুনে বেশ অবাক হয় সুবহা! সে তার মায়ের দিকে তাকায়!
” আঙ্কেল ওকে আমরা নিয়ে যায়! দুপুরের মধ্যে রেডি করতে হবে!”
” কী রেডি করবেন আপনারা আমাকে?”
” ওমা! বিয়ের কনেকে সুন্দর করে রেডি করবো না?”
” কার বিয়ে?”
” কেন তোমার আর আকাশ ভাইয়ার!”
সরকার বাড়িতে আয়োজনের ধুম পরেছে! তামিম সরকারের বিয়ে বলে কথা! আয়োজনের কী শেষ আছে! তানভির সরকার খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সকল কিছু নিজে দেখে। এতো লোক থাকার পর ও তানভির সরকার নিজেই সব করছে।
আয়েশা সরকার ও লেগে আছে কাজে। ছেলের বিয়ে নিয়ে তার আহ্লাদের শেষ নেই! ছেলের বউয়ের জন্য ১০০ ভরি গহনা হয়তো আনিয়েছে উনি। যদি ও এতো কিছু সুবহাকে পড়াবে না! তাও আহ্লাদের তো শেষ নেই!
সবাই যখন যে যার মতো কাজে ব্যস্ত ঠিক তখনই তামিম হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামে। তামিম নামতে নামতে তার পঞ্চ পান্ডব ও কোথায় থেকে এসে হাজির হয়!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৬
” এই সাকিব…..”
” এই লন ভাই!”
তামিম সাকিবকে ডাকা মাত্র সে তামিমের গোল্ডেন চাপা’তিটি তার দিকে ছুড়ে মা’রে। তামিম সেটা ক্যাচ ধরে হাঁটতে থাকে।
তানভির সরকার নিচেই দাড়িয়ে ছিলো!তামিম নিচে নেমে তানভীর সরকারের সামনে দাড়ায়!
” চিন্তা কয়রেন না আব্বা! আমি বউ নিয়া আসতাছি!”
