মায়াকুমারী পর্ব ৫৫
মেহেরিন আনজারা
অভ্যাসবশত আযানের সঙ্গে সঙ্গে ঘুম থেকে উঠে গিয়েছিলেন আসাদ সাহেব সঙ্গে দিলরুবা খাতুনও। নামাজ-কালাম,জিকির-আযকার করলেন। তবে বেশ অনেকক্ষণ হলেও দিলরুবা খাতুনকে দেখতে পেলেন না। ঘড়ির দিকে তাকালেন। ঔষধ খাওয়ার-ও সময় হয়ে গিয়েছে প্রায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে রইলেন। বেশ কিছুক্ষণ ওইভাবেই কেটে গেল। এবার সোজা হয়ে বসলেন।
“দিলরুবা! দিলরুবা!”
সাড়াশব্দ পেলেন না।
“দিলরুবা! ও দিলরুবা! কই গো!”
এবারও সাড়াশব্দ পেলেন না। অসন্তুষ্ট হলেন তিনি। কখন যে রুম থেকে বেরোল এখনও ফিরল না। আর দিন তো নিশু-দ্যুতি দু’জন-ও এসে দেখে যায়; কী লাগবে জিজ্ঞেস করে,ঔষধের দিকে খেয়াল রাখে অথচ আজ কেউ নেই। অপ্রসন্ন হলেন। এতগুলো মানুষ গায়েব হলো কোথায়?
“দিলরুবা! দিলরুবা কই গেলে?”
এবারও সাঁড়া পেলেন না। ঘরদোর ঝাড়ু দিয়ে,সবকিছু পরিপাটি করে গুছিয়ে কিচেনে কাজ করতে লাগল রিনা। উনার ডাক শুনতেই ছুটে গেল।
“কী হইছে,খালুজান?”
“এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো বুঝি,রিনা?”
“কী লাগবো কন?”
“দিলরুবা কই?”
হসপিটালের কথা বলতে গিয়েও থেমে গেল রিনা।মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।
“খালাম্মা তো পলাইছে।”
“কী?”
“হ,খালুজান।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“কীসব আজেবাজে কথা বলছিস! মাথা ঠিক আছে তোর?”
“আরে আছে। হুনেন,ওই যে পাঁচ তলায় নতুন ভাড়াইট্টা আইসে,সুন্দর স্যুট-প্যান্ট পইড়া অফিসে যায় হেই খালুর লগেই খালাম্মা পলাইছে।”
অবিশ্বাস্য নয়নে তাকালেন।
“আজেবাজে কথা কম বল। ফাজিল কোথাকার। দিলরুবা কই,আসতে বল।”
রিনা ভীষণ সিরিয়াস ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল,”কইলাম তো পলাইছে। প্রেম করছিল অনেকদিন ধইরা। আজকাইকা সোনাদানা,গয়নাগাটি নিয়া টুপ কইরা চইলা গেছে গা।”
“আবারও সেই একই কথা। চড়িয়ে গাল লাল করে দিবো তোর।”
মেজাজ খারাপ হলো উনার। যদিও রিনার সাথে কখনোই এমন করে কথা বলেন না তিনি। তবে স্ত্রীর ব্যাপারে ওমন কথা শুনতেও নারাজ তিনি।
“খালুজান,গাল লাল করেন আর না কালা,আমি কিন্তু হাঁচাই কইতেছি। ওই খালুডা আপনার থেইকা মেলা সুন্দর। শেভ করা গাল,চকচকে বুট,একদম সুপারহিরো! শাকিপ খান!”
বিরক্তিতে চোখ সরিয়ে নিলেন তিনি।
“চুপ কর! দিলরুবা এমন না।”
“খালুজান,প্রেমে পড়লে মাইয়া-মানুষ অনেক কিছুই কইরা ফালাইতে পারে। কালই তো আমি দেখলাম,ছাঁদে দাঁড়ায়া কথা কইতেছিলো দুইজন। কী কইছে জানেন,‘তুমি ছাড়া আমার বাঁচা মুশকিল।’ এখন আপনারে ফাঁকি দিয়া প্রেমিকের লগে চইলা গেছে গা।”
“চুপ! বাজে কথা শোনার সময় নেই আমার। অসভ্য একটা।”
রিনা এবার চোখ গোল গোল করে রহস্যময় ভঙ্গিতে বলল,”আমি যদি মিথ্যা কই,তয় আমার মাথায় বাজ পড়ুক। দেখবেন খালু,কিছু দিন পর খালাম্মার বিয়ের কার্ড আইবো। কী মজা হইবো! আমি লাল শাড়ি পিন্দুম!”
চোখ-মুখ শক্ত করলেন।
“সামনে থেকে ভাগ! ফাজিল!”
বেরিয়ে যেতে যেতে রিনা বিরক্ত স্বরে বলল,”যাইতাছি যাইতাছি.. হাঁচা কথার ভাত নাই।”
রিনা চলে যেতেই ঘরে নিস্তব্ধতা নেমে এলো। আসাদ সাহেব চোখ বুজলেন। নিজের ভিতরেই আশ্বাস দিলেন,”না,দিলরুবা কখনো এমন করবে না.. অসম্ভব!”
কিন্তু সময় গড়াতে লাগল,তবু তিনি এলেন না। বুকের ভিতর চিনচিন করতে লাগল। দুশ্চিন্তা জন্ম নিলো। এবার বুকের ভিতর হালকা এক আশঙ্কা জন্ম নিলো। সত্যিই কি তিনি পালিয়ে গিয়েছেন? হঠাৎই বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। বুকের ভিতর ধুকপুক করে কাঁপতে লাগল। মস্তিষ্কের ক্যানভাসে ভেসে উঠল চিরল-বিরল দাঁতের হাসি,চোখে সরলতা আর লাজুক মাধুর্যমাখা এক তরুণীর মুখ। অল্প বয়সেই উনার সাথে বিয়ে হয়েছিল দিলরুবা খাতুনের। বয়স তখন হয়তো পনের কি ষোল। স্মৃতিগুলো হু-হু করে ভেসে উঠল অক্ষিপটে। এই তো সেদিনের কথা। এক চাঁদনী রাতে যখন বাড়ির সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন তখন দু’জন চুপিচুপি ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। গ্রামের ধূলো মাখা সরু পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে থৈথৈ ভেসে আসা জ্যোৎস্নার আলোয় পৃথিবীটা যেন সোনালি পরশে ঢেকে গিয়েছিল। ঝোপঝাড় থেকে ভেসে আসছিল ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। হঠাৎ ঝোপের ভেতর থেকে কয়েকটা জোনাকি উড়ে এসে উনাদের চারপাশে ঝিলমিল আলো ছড়াল। আনন্দিত হয়ে দিলরুবা খাতুন বললেন,”দেখুন,মনে হচ্ছে আকাশের তারা নেমে এসেছে আমাদের হাতে খেলা করতে।”
উনার কণ্ঠে ছিল শিশুসুলভ বিস্ময়। আসাদ সাহেব মৃদু হেসে বললেন,”যদি তারাগুলো সত্যিই নেমে আসতো,তবে আমি একটা চিরকাল তোমার কপালে বেঁধে দিতাম,দিলরুবা।”
দু’জন হাওয়ার দোলায় থমকে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ চাঁদ দেখেছিলেন বড় বড় গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে। বাতাসে ভেসে আসছিল সুগন্ধি হাসনাহেনা আর লেবুফুলের মাদকতাময় সুবাস। সেই সুগন্ধে চারদিক যেন অদৃশ্য মোহে ভরে উঠেছিল। রাতজাগা হুতোমপেঁচা দূরের তালগাছের মাথায় বসে ডাক দিচ্ছিল,যেন রাতের নীরবতাকে আরও গভীর করে তুলছিল। ফিরে এসে ঘরের পেছনে দুটো সুপারি গাছের মাঝে দড়ি বেঁধে একটি দোলনা বানালেন।
“এসো,দেখো তোমার জন্য বানালাম।”
লাজুক হেসে দোলনায় বসলেন দিলরুবা খাতুন। আসাদ সাহেব পেছন থেকে মৃদু দোল দিতে দিতে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকালেন। জ্যোৎস্নায় ভিজে ওঠা সেই মুখে হাসির ঝিলিক,এক অপার্থিব রূপ যেন ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন উনার মনে হয়েছিল,এই নারীকে তিনি সারাজীবন কাছে রাখবেন,কোনোদিন ছাড়বেন না। হাত বাড়িয়ে বললেন,”প্রতিশ্রুতি দাও,কখনো আমাকে ফেলে কোথাও চলে যাবে না।”
উনার হাত মুঠোয় নিয়ে উত্তর দিয়েছিলেন,”আপনি আমার নিঃশ্বাসের মতো। নিঃশ্বাস ফেলে কি কখনো বাঁচা যায়?”
দু’জনের হাত মিলে গেল,মাথা হেলান দিলো কাঁধে। চারপাশে জোনাকির আলো,বাতাসে লেবুফুলের সুগন্ধি আর থৈথৈ জ্যোৎস্নায় ভরা রাত- সেই মুহূর্তে উনাদের ভালোবাসা যেন সময়কে থামিয়ে দিয়েছিল। আজ অব্ধি দাম্পত্য জীবনে উনাদের কখনো বড় কোনো ঝগড়া হয়নি। আসাদ সাহেব বরাবরই বুঝদার আর দিলরুবা খাতুন নরম,কোমল এবং সহজ-সরল স্বভাবের মানুষ। হাজারটা বকা খেলেও ফিরতি উত্তর দিতেন না,শুধু নীরবে হেসে যেতেন। এখন বয়স হয়েছে,ধৈর্যও কমে গিয়েছে। ছেলে-মেয়ে বিবাহের উপযুক্ত হয়েছে,দুই ছেলে বিয়ে করেছে। মাথার চুল না পাকলেও মেজাজ খিটখিটে হয়ে গিয়েছে। এখন সাহস করে মুখের উপর দু’চারটা কথা শুনিয়ে দেয়। নিশু অনেকটা তার ফুপির মতোই- চেহারায় উনিশ-বিশ মিল আছে। তবে স্বভাবে একটু ভিন্ন। নিশু আহ্লাদী,নরম কিন্তু ইমম্যাচিওর। খুব সহজেই ইমোশনাল হয়ে পড়ে। বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ির আগেই তার ভিতরে এই নরম আবেগটা গেঁথে গিয়েছিল। স্মৃতির ঝাঁপি থেকে আসাদ সাহেব যখন আবার বর্তমানে ফিরে এলেন,বুকের ভিতর অস্বস্তি আরও বেড়ে গেল। ভাবলেন,সত্যিই কি প্রতিশ্রুতি ভেঙে দিলো দিলরুবা? সত্যিই কি পালিয়ে গিয়েছে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরভর্তি নিস্তব্ধতায় কান পেতে রইলেন তিনি। এবার অস্থির হয়ে উঠলেন। ধীরে ধীরে দরজা ঠেলে বেরিয়ে সিঁড়ির মুখে দাঁড়ালেন। যেন নীরবতা আরও গাঢ় হয়ে উঠল। কোথাও কোনো শব্দ নেই। চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে আছে।
“দিলরুবা! দিলরুবা!”
কোথাও কোনো সাড়া নেই। অন্তরে শঙ্কার ঢেউ তীব্র হয়ে উঠল। সত্যিই কি চলে গিয়েছে? নাকি অন্য কিছু? দ্বিধা নিয়ে চতু্র্দিকে তাকালেন। কোথাও কেউ নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে ঢুকলেন। ড্রেসিং টেবিলের উপর চোখ পড়তেই দেখলেন একজোড়া সোনার বালা পড়ে আছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন। বালাজোড়া হাতে তুলে নিলেন। হৃদয় আদ্র হয়ে চোখ ভিজে এলো,তবু চাহনিতে ভর করে এক অদ্ভুত কোমলতা। বয়স বেড়েছে দু’জনেরই,কপালের ভাঁজ আর চোখের কোণের বলিরেখা তার প্রমাণ। তবু তিনি যখন স্ত্রীর দিকে তাকান,যেন কালের কোনো ছাপই চোখে পড়ে না। গলায় একখানি সোনার চেইন ঝলমল করে উঠে বাতি কিংবা সূর্যের আলোয়। সেই আলোয় যেন উনার বুকের গভীরে একটুখানি আলো জ্বলে ওঠে। কতটা সরল,কতটা অনাড়ম্বর অথচ মায়াবী লাগে স্ত্রীকে। কানে ছোট্ট মাঝারি ঝুমকার দোল খাওয়া,হাসির সঙ্গে সোনালি রোদের মতো ঝলকায়। হাতে জোড়া বালা- একটা নয়,দু’জোড়া। হাঁটাচলার সঙ্গে সুর তুলে টুংটাং শব্দ তোলে,যেন প্রতিটি শব্দে উনার প্রাণ ভরে ওঠে। নিজের অজান্তেই মৃদু দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলেন,”আল্লাহ.. এই বয়সেও এত মায়াবী লাগতে পারে একটা মানুষকে!”
তারপর নিঃশব্দে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকেন। পঞ্চাশ বছরের জীবন উনার কাঁধে ভারী হয়ে আছে অথচ পয়তাল্লিশ বছরের দিলরুবা খাতুন যেন এখনও সেই তরুণী,যাকে একদিন সুপারি গাছের দোলনায় দোল খাইয়ে তিনি বলেছিলেন,”কখনো ছেড়ে যেও না।”
এখনও তাই মনে হয়,সেই প্রতিশ্রুতি যেন সোনার বালা,ঝুমকা আর গলার চেইনের মতোই মায়াবী হয়ে উনার চোখে প্রতিবার নতুন করে ঝলমল করে ওঠে।
হসপিটালের করিডরে হু-হু করে শীতল হাওয়া বইছে। সাদা আলোয় ঝলমল করা দেয়ালগুলো যেন আরও ভীতিকর মনে হচ্ছে। সেই সময় দ্রুত পায়ে পৌঁছালেন দিলরুবা খাতুন। মুখভর্তি উৎকণ্ঠা,চোখে আতঙ্কের ছায়া। রিসিপশনের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ পূর্বে এডমিট হওয়া ধূসরের কথা জিজ্ঞেস করতেই রিসেপশনিস্ট বই খুলে কেবিন নাম্বার বলে দিতেই তিনি আর এক মুহূর্তও নষ্ট না করে দ্রুত ছুটে গেলেন সেদিকে। করিডরের মোড়ে পৌঁছাতেই দেখলেন দেয়ালের ধারে ভেঙে পড়া তিনটি মুখ। দ্যুতি ও বুশরা একসঙ্গে বসে আছে,চোখ দুটো ফুলে লাল। ধ্রুব পায়চারি করছে পাথরের মতো মুখে,চোখে শূন্য দৃষ্টি। তাদের নিস্তব্ধতা যেন আরও ভারী হয়ে উঠল। কেবল ভেতর থেকে ভেসে আসছে যন্ত্রের বীপ..বীপ শব্দ আর ডাক্তারদের হুঙ্কার। দিলরুবা খাতুন কাঁপতে কাঁপতে কাঁচের দরজার দিকে তাকালেন। ভেতরে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো ধূসরকে ঘিরে ডাক্তার-নার্সদের দৌড়ঝাঁপ দেখা যাচ্ছে। তার বুক ওঠা-নামা করছে যন্ত্রণার ছন্দে। চারপাশে তার শরীরে লেগে আছে যন্ত্রপাতি।
“আ..আমার ছেলের কী হয়েছে?”
কণ্ঠের ভিতর কাঁপন স্পষ্ট। উনাকে দেখতেই থমকাল ধ্রুব। ধাতস্থ করল নিজেকে।
“আম্মা,কেন এলে তুমি?”
“আমার ছেলের কী হয়েছে?”
“কিচ্ছু হয়নি আম্মা। অহেতুক ঘাবড়াচ্ছ কেন?”
“কিছু না হলে কেন হসপিটালে নিয়ে এলি?”
“জ্বর এসেছে,ঠিক হয়ে যাবে।”
“আমি বিশ্বাস করি না। আমার ছেলে জ্বরে কাবু হওয়ার মানুষ নয়।”
“আম্মা,তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না?”
অসহায় চোখে তাকালেন তিনি। মায়ের মন তো! মায়ের মন কি আর গলে ওমন কথায়।
“মায়ের কাছে মিথ্যা বলো না,বাবা।”
চোখের জল মুছে মাকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরল।
“ধুর আম্মা,একদম টেনশন করো না; সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু দোয়া করো।”
হু-হু করে বুক ভেঙে এলো। ফুঁপিয়ে কাঁদেন তিনি। মনে মনে দোয়া করলেন,”হে আল্লাহ,আমার ছেলেকে বাঁচাও! ও তো এখনও বাঁচার মতো বয়স পায়নি। আমি মরলে সমস্যা নেই কিন্তু আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও! আমার আয়ু আমার ছেলেকে দাও।”
চোখের জলে ভিজে গেল দু-গাল। কাঁচের দরজার দিকে তাকিয়ে বললেন,”আমি একবার দেখতে চাই। একবার যেতে দে আমাকে। ডাক্তারদের বল,আমি ভেতরে যাব!”
“আম্মা,তুমি শান্ত থাকো। অল্পতেই ভেঙে পড়ো না,ঘাবড়ানোর মতো কিছু হয়নি।”
“না রে বাবা! তুই আমাকে শান্ত করতে মিথ্যা বলছিস। আমি মায়ের চোখে বুঝতে পারছি ওর অবস্থা ভালো নয়। আমি আমার ছেলেকে একবার দেখতে চাই। ও একা ভেতরে কষ্ট পাচ্ছে।”
ধ্রুব কণ্ঠ নরম করল,যেন নিজের ভিতরের ভয়ের পাহাড় আড়াল করছে,”আম্মা,এখন ভেতরে ঢুকতে দিবে না। ডাক্তাররা চেষ্টা করছে। তুমি যদি ভেঙে পড়ো তাহলে আমরা সবাই শেষ হয়ে যাব। তুমি শক্ত থাকো,প্লিজ। তুমি শুধু দোয়া করো,আম্মা। ওর কিছু হবে না। দেখো- আমি আছি,আমরা সবাই আছি। আর সঙ্গে তোমার দোয়া আছে।”
“আমি ওকে একবার ডাকতে চাই.. ও শুনলে সাঁড়া দিবে।”
“আম্মা,এখন যদি তুমি ভেঙে পড়ো তাহলে নিশু,দ্যুতি,বুশরা সবাই একেবারে শেষ হয়ে যাবে। তুমি আমাদের ভরসা দাও। ধূসর শক্ত ছেলে,ওর কিছু হবে না।”
মায়ের ভেজা চোখে তখন শুধু একটাই আর্তি- ভেতরে গিয়ে ছেলেকে একবার দেখে আসার। করিডরে হাহাকার আর কান্নার ভারী আবহ। তবুও দিলরুবা খাতুন বারবার বলছেন,”আমি ভেতরে যাব.. আমার ছেলেকে একবার ডাকতে চাই।”
ধ্রুব যতই বোঝাক,ততই উনার কান্না বাড়ছে। হঠাৎ করেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন সেই তরুণ ডাক্তার। গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলছে,মুখভর্তি ঘাম,কণ্ঠে তাঁড়া,”আপনারা এখন ভেতরে যেতে পারবেন না। পেশেন্টকে এখন ক্রিটিক্যাল কেয়ারে রাখা হয়েছে।”
দিলরুবা খাতুন ছুটে গিয়ে প্রায় আঁকড়ে ধরলেন ডাক্তারকে।
“ডাক্তার সাহেব,আমি ওর মা! আমাকে একবার যেতে দাও। আমার ছেলেটা একা ভেতরে কষ্ট পাচ্ছে।”
ডাক্তার শান্ত কণ্ঠে বললেন,”আমরা বুঝতে পারছি আপনার কষ্ট। কিন্তু এই মুহূর্তে কাউকে ভেতরে ঢোকানো বিপজ্জনক। রোগীর প্রতিটি শ্বাস এখন যন্ত্রের ওপর নির্ভর করছে। আপনাদের দোয়া ও মানসিক শক্তিই ওর সবচেয়ে বড় ভরসা।”
ধ্রুব মায়ের কাঁধে হাত রাখল।
“শুনছো তো,আম্মা? ডাক্তাররাই সব করছে। তুমি শুধু দোয়া করো।”
দিলরুবা খাতুন কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
“আমি আমার ছেলেকে দেখতে চাই.. ও যদি আমাকে একবারও না দেখে যায়,আমি কীভাবে বাঁচব?”
ডাক্তার গভীর শ্বাস নিয়ে বললেন,”আমরা চেষ্টা করব,যদি রোগীর অবস্থা একটু স্থিতিশীল হয়,আপনাকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভেতরে ঢুকতে দিবো। এখন দয়া করে আমাদের কাজ করতে দিন।”
দিলরুবা খাতুন দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরছে,ঠোঁটে কেবল একটাই প্রার্থনা,”আল্লাহ.. আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও।”
করিডর তখন আরও নিস্তব্ধ হয়ে উঠল,শুধু যন্ত্রপাতির বীপ..বীপ শব্দ যেন বুকের ভিতরে অশনি সংকেত বাজিয়ে চলল।
কোমরে কাপড় গুঁজে কাজে ব্যস্ত রিনা। হঠাৎ কাচ ভাঙার শব্দ শুনতেই ভড়কে গেল। ছুটে নিশুদের রুমে গেল।
“হায় আল্লাহ! এডি কী করতাছেন?”
একটা কাচ ভাঙা হাতে তুলে নিতেই ভড়কে গেল রিনা।
“কী করতাছেন?”
নিশু কিছু বলল না। ঘাবড়ায় রিনা। ছুটে ধীরাজকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল।
“ছোড ভাইজান,তাত্তাড়ি আহেন,বড় আফায় কেমন করতাছে!”
“মানে?”
“আগের মতো পাগল হইয়া গেছে গা।”
“কী?”
“আরে আহেন তাত্তাড়ি।”
একপ্রকার ঘুম চোখে ছুটে এলো ধীরাজ। নিশুর হাতে কাচ ভাঙা দেখতেই আতঙ্কিত হলো।
“আপু,কী করছো?”
নিশু তাকায়।
“কী হয়েছে তোমার?”
“খেলছিলাম।”
“ভাইয়াকে ডাকো,রিনা আপা।”
“হেরা কেউ নাই।”
“মানে?”
“মাইজ্জা ভাইয়ের অসুখ হইছে হসপিটালে নিয়া গেল গা।”
চমকায় ধীরাজ।
“কখন?”
“হইছে কিছুক্ষণ।”
ধীরাজ কৌশলে কাচের টুকরোটা নিয়ে ফেলল।
“এই অবস্থা কেন তোমার?”
“পাগল হইয়া গেছে গা। আগের মতো আবোলতাবোল কাম করতাছে।”
“বাজে কথা কম বলো,রিনা আপা। নিশুর হাত ধরে লিভিং স্পেসে নিয়ে গেল ধীরাজ।
“এখানে বসো,কোথাও যেও না।”
সোফায় বসল নিশু। ধীরাজ ফোন এনে ধ্রুবকে কল দিলো কিন্তু পিক করল না। ধূসরের ফোনে কল দিতেই দ্যুতি পিক করল।
“হ্যালো!”
“আপু,কই তুই?”
“হসপিটালে।”
“এই শোন,নিশু আপু তো উল্টাপাল্টা কাজ করছে।”
“মানে?”
“আরেহ কী অবস্থা! ভাইয়াকে আসতে বলো। আমি কী করব বুঝতে পারছি না।”
“আচ্ছা।”
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দ্যুতি বলল,”ভাইয়া তাড়াতাড়ি বাসায় যাও।”
“কেন?”
“আসলেই নিশু ডিমেনশিয়ার পেশেন্ট। সম্ভবত আবারও দেখা দিয়েছে। ধীরাজ ফোন করে সবে বলল।”
চমকায় ধ্রুব।
“কী?”
“সত্যি ভাইয়া। তাড়াতাড়ি যাও। ও উল্টাপাল্টা কাজ করছে।”
শ্বাস আঁটকে এলো ধ্রুবর। একদিকে তার মা ভেঙে পড়েছে,আরেকদিকে ভাই,আরেকদিকে বোন,আরেকদিকে বউ। ঠিক কী করবে ধ্রুব বুঝতে পারল না। বিপদ এলে বুঝি চারদিক থেকে আসে। হায় আল্লাহ এ কেমন বিপদ! ওদের-ও বা একা রেখে কীভাবে আসবে? ইফতেখার মির্জা যদি বুশরা আর দ্যুতির কোনো ক্ষতি করে কিংবা ধূসরকে মেরে ফেলে কোনোভাবে তাহলে? আজ-কাল টাকা আর ক্ষমতা থাকলে কী না হয়? শ্বাস ফেলতে ভুলে গেল ধ্রুব। মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দিলো। তবুও স্থির রইল। তরুণ ডাক্তারটির সঙ্গে কথা বলে দিলরুবা খাতুন এবং ওদের দু’জনকে রেখে এলো। ডাক্তার আশ্বাস দিলো সমস্যা হবে না। দিলরুবা খাতুন এখনও অনবরত কাঁদছেন। উনাকে কিছু বলল না। তবে সবটা সামলে দ্রুত গাড়িতে উঠে নিজেই ড্রাইভ করতে লাগল তড়িৎ গতিতে। নিশু নীরব হয়ে বসে রইল। একপলক তাকিয়ে আরেক সোফায় শুয়ে পড়তেই চোখ লেগে এলো ধীরাজের। কিছুক্ষণ পর নিশু উঠে কিচেনে ঢুকতেই ভড়কে গেল রিনা।
“আপনে আবার কী আকাম করতে আইলেন?”
“খিদে লেগেছে।”
“ডাইনিংয়ে যাইয়া বসেন নাস্তা দিতাছি।”
ঘি দিয়ে পরোটা সেঁকতে লাগল রিনা। নিশু কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। আরেক স্টোভে ফ্র্যাইপ্যান বসিয়ে তেল দিলো রিনা। তার আগেই নিশু ডিম দিয়ে তাতে দু-তিন চামচ হলুদ,মরিচ,লবণ এবং চিনি দিয়ে খুন্তি দিয়ে নাড়তে লাগল।
“আল্লাহ.. এডি কী করতাছেন?”
“ডিম ভাজি।”
“ডিম এমনে ভাজে কেও?”
“আমি ভাজি। আমার থেকে শিখো।”
“ধুরু! আউল ফাউল কাম। আমি দিতাছি। যান গা।”
হাত থেকে নিয়ে নিলো রিনা। ভয়ে আছে কখন আবার উল্টাপাল্টা কী করে বসে। কিচেন থেকে বেরিয়ে ছাঁদের দিকে চলে গেল নিশু। সোজা ট্যাঙ্কির উপর উঠে বসল। ঠিক তখনই তাহমিদ শার্ট রোদে দিতে এলো। নিশুকে ট্যাঙ্কির উপর বসে থাকতে দেখে চমকে উঠল।
“হ্যালো মিস,আপনি ওখানে কী করছেন?”
কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় নিশু।
“তাতে আপনার বাপের কী?”
বিস্ময়ে চোখ বড় করল তাহমিদ। যেই মেয়ে তাকে দেখলেই লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে কাঁপতে থাকে আর আজ সে কিনা এমন কথা বলছে! অবিশ্বাস্য নয়নে তাকাল।
“পড়ে যাবেন,নামুন।”
“এই,আপনার কী সমস্যা?”
“আশ্চর্য! আপনি এমন অদ্ভুত আচরণ করছেন কেন?”
“বদলোক কোথাকার! মেয়েমানুষ দেখলেই ছ্যাঁছড়ার মতো তাকিয়ে থাকে,বলা বলার জন্য ছোঁকছোঁক করে লজ্জা করে না?”
ট্যাঙ্কির ঢাকনা খুলে ছুঁড়ে মারল তাহমিদের দিকে। বিষম খেয়ে হতভম্ব চোখে তাকাল।
“ইয়ে,মানে নেমে যান প্লিজ। আপনি পড়ে যাবেন।”
“তাতে আপনার কী? নিজের চরকায় তেল দেন। অসভ্য পোলা কোথাকার!”
নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল তাহমিদ। বুঝতে পারল না নিশু হঠাৎ এমন আচরণ করছে কেন! তাহমিদের চোখে বিস্ময়ের উন্মাদ ছাপ। অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে রইল। জ্বীন-ভূতে ইহজীবনে বিশ্বাস না করলেও আজ করতে বাধ্য হলো। কী করবে ঠিক ভেবে পেল না। কাউকে ডাকতে গেলে যদি নিচে লাফ দেয় তাহলে?ফোনটাও আনেনি সঙ্গে করে। একেই বলে বুঝি মাইনক্যা চিপা!
দিলরুবা খাতুন চোখ বুজে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছেন। গাল বেয়ে টুপটাপ নেমে আসছে অশ্রুধারা। উনার পাশে নিঃশব্দ সঙ্গী হয়ে বসে আছে দ্যুতি ও বুশরা। বুশরার বুক কাঁপছে কান্নায়; অশ্রুর ভিতরেই যেন আঁটকে আছে তার সমস্ত ভাঙা স্বপ্ন। বাবা-মা,ভাই,পড়াশোনা আর ক্যারিয়ার- সব কিছু ছেড়ে ধূসরের জীবনে এসেছে। অথচ এখন ধূসরের জীবনটাই শঙ্কায় রয়েছে। যেন এক অদৃশ্য আঁধারে ঢেকে গিয়েছে তার সুন্দর গোছালো জীবন। ভবিষ্যৎ কোন পথে গড়াবে,কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের জল মুছে নিলো দ্যুতি। ভিতরে তোলপাড় করা আবেগকে সামলে নিলো সাহসের মতো কিছু কথা মনে সাজিয়ে। একরাশ বেদনার মাঝেও ওর অন্তর কণ্ঠে ভরসার সুর খুঁজে আনল,যেন অস্থিরতার অন্ধকারে সামান্য আলো দেখাতে পারে প্রিয় বান্ধবীকে। বুশরার হাত ধরে জানালার পাশে নিয়ে গেল।
“তোর সঙ্গে কিছু কথা রয়েছে,বুশরা।”
অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকাল সে।
“নিশুকে ভুল বুঝিস না।”
“কেন?”
“শোন,তোর ভাইকে আঘাত করার কারণে তোর বাবা আমাদের নামে মামলা করেছেন। তা শুনে আমার বাবাও তোর ভাইয়ের নামে মামলা করেছে। আশা করি বুঝতে পেরেছিস দুই পরিবারের জটিলতা।”
চুপচাপ মাথা নাড়ল বুশরা।
“ওই জটিলতার মধ্যে,তোর বাবা তোকে ফোর্স করে তোর কাজিনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল আর তুই সু’ইসাইড এটেম্প করলি। আমার ভাই প্রায় একটা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সামলে তোকে উদ্ধার করে আনল। অর্থাৎ এ-টু-জেড সবটাই তো তুইই ভালো জানিস। এছাড়াও তোর এমন পরিস্থিতি জানার পর আমার মেজ ভাই যে তোকে বিয়ে করবে তা একদমই নয়। কারণ তোদের মধ্যে কোনো অ্যাফেয়ার ছিল না,আর আমার ভাইও পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে বিয়ে করতো না। এছাড়াও আমার ভাই বেকার। কোন মুখে তোর বাবার কাছে তোকে চাইবে বা তোর দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে করবে!
ধর আমার ভাই যদি তোকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সর্বপ্রথম পড়াশোনা শেষ করে,জব খুঁজতে হবে। এরপর ভাগ্য সহায় হলে জব পাবে তারপর না হয় ধর বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে। প্রস্তাব দিলেও আদোও তোর বাবা কি আমার ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে দিতো বল?সে বাদেও পড়াশোনা শেষ করে জব খুঁজে,স্বাবলম্বী হতে হতে ততদিনে তোর কী অবস্থা হতো বল! তোর বাবা কি তোকে আমার ভাইয়ের জন্য এতদিন ধরে রাখবে নাকি! সে যাইহোক,একটা কথা হলো,বিয়ে ছাড়া তোকে আমাদের সঙ্গে রাখাটাও হচ্ছে ভীষণ বিপদজ্জনক। তার কারণ তোর বাবার ক্ষমতার কাছে আমরা কিচ্ছু না। তিনি যেভাবেই হোক,তোকে নিয়ে যেতেনই। আশা করি আমার চেয়েও তোর বাবার সম্পর্কে তোর ভালোই ধারণা রয়েছে। সে যাইহোক,কথাগুলো বলার কারণ তোর সুরক্ষার জন্য আমরা প্ল্যান করেছিলাম।”
চমকে তাকায় বুশরা।
“কীসের?”
“লাল শাড়ি পরে,ওমনভাবে সেজেগুজে তুই আমাদের সারপ্রাইজ দিবি অর্থাৎ নিশুকে জেলাশফিল করার জন্য যে তুই একটা নাটক করবি সেটা সম্পর্কে আমরা পূর্ব থেকেই অবগত ছিলাম।”
“মানে?”
“কেবিনের মধ্যে প্রথম থেকে বিয়ে অব্ধি তোর সঙ্গে যা করেছে নিশু সবই আমাদের প্ল্যান ছিল।”
চমকিত নয়নে তাকায় বুশরা।
“নয়তো বিয়েটা সহজ ছিল না। না ভাইয়া তোকে বিয়ে করতো,আর না আমার বাবা-মা চুপচাপ সবটা দেখতো। অর্থাৎ একটা ঘোরের মধ্যে তোদের বিয়ে হয়েছিল। বোকামেয়ে,তোকে আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি। এ-ও জানি তুই আমার মেজ ভাইয়ের জন্য পাগল। তোর চাইতে আমার ভাইকে আর কেউ এত বেশি ভালোবাসবে না বলে আমরা তোকে হারাতে চাইনি। সবচেয়ে বড় কথা,আমরা তোকে আজীবন আমাদের কাছেই রেখে দিতে চেয়েছিলাম। তোর অন্য বাড়িতে বিয়ে হবে,আমাদের থেকে সারা জীবনের জন্য দূরে চলে যাবি এটা আমরা মানতে নারাজ তাই তো এমন প্ল্যান।”
বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল বুশরা।
“সে যাইহোক,আমি যে তোকে বলে দিয়েছি এটা নিশুকে বলিস না।”
“কেন?”
“কারণ আমরা প্রমিজ করেছি কেউ কাউকে বলব না। তবুও তোকে বলে ফেললাম। নিশু শুনলে কষ্ট পাবে।”
“বলব না।”
“আর শোন,কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবি তোদের লাভ ম্যারেজ। বিশেষ করে আব্বু-আম্মুকে। তাহলে কেউ আর নিশুকে ভুল বুঝবে না।”
“আচ্ছা।”
“নয়তো ভাইয়ার আজকের এই সিচুয়েশনের জন্য সবাই নিশুকে দোষারোপ করবে। আশা করি বুঝতে পেরেছিস?”
“হ্যাঁ।”
গোপনে স্বস্তির শ্বাস ফেলল দ্যুতি।
মায়াকুমারী পর্ব ৫৪ (২)
“ভাইয়ার এই সিচুয়েশন নিশু নিজেও নিতে পারেনি। সম্ভবত ভারসাম্য হারিয়ে আবারও ওর মেমোরিলস হয়েছে। ভাইয়ার এই অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি হার্ট হয়েছে নিশু।”
দ্যুতির দিকে তাকায় বুশরা। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো দ্যুতির।
“ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারে না বড্ড সংবেদনশীল এবং অনেক আবেগপ্রবণ মেয়ে।”
হাত বাড়িয়ে বুশরার চোখের জল মুছে দিলো।
“কাঁদিস না,প্রার্থনা কর যেন সবাই সুস্থ হয়ে যায়।”