তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৪
তানিশা সুলতানা
বিরক্ত আবরার চোখ মুখ কুঁচকে আসমান পানে তাকায়। মেজাজ তুরুঙ্গে। এই মুহুর্তে সিয়াম নামক প্রাণীটিকে লাথি মেরে ছাঁদ থেকে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে। আমান ঠিকই বলে ইডিয়টটার আসলেই টুনটুনি নেই।
আদ্রিতা যেনো সুযোগ পেয়ে গেলো। এক লাফে উঠে দরজা খুলে দেয়।
অসহায় সিয়ামের পানে তাকিয়ে বলে
“ভাইয়া কি হয়েছে?
সিয়াম মাথা নিচু করে কবিতার সুরে বলে
” বউ দেখে করছে ভয়
আজকে না কি আমাদের বাসর?
সবাই কয়।
আমি সিয়াম ভালা ছেলে জানে না কেউ
মনের মধ্যে জেগে উঠেছে প্রেম যমুনার ঢেউ।
আদ্রিতা কবিতার আগামাথা কিছুই বোঝে না৷
পেছন থেকে আমান দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“শালা ক্যামেরা লাগিয়েছি বুঝলি কেমনে?
সিয়াম লাজুক হাসে। কল্পনার করে কিছু মুহুর্তের আগের ঘটনা।
সকলেই যখন কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো সিয়াম দরজা আটকে এদিক সেদিক ঘুরতে থাকে। ইশারা বলে
” বিয়ে তো করলাম। বাবা মা মেনে না নিলে?
সিয়াম জবাব দেয় না। মূলত সে ইশারার কথা শুনতেই পায় নি। খাটের তলা থেকে শুরু করে প্রতিটা ফুল ভালো করে চেক করে। অবশেষে ফ্যানের ওপর ছোটখাটো এক খানা ক্যামেরা দেখতে পায়।
শয়তান বন্ধু গুলা বাসর রাতেও শান্তি দিবে না চতুর সিয়াম ঠিকই বুঝতে পেরেছিলো।
বিরক্ত ইশারা বলে ওঠে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আমার সাথে কথা বলছেন না কেনো?
সিয়াম শুকনো ঢোক গিলে বলে
” আমি বাসর করবো না ইশারা। কালকে যদি তুমি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাও তাহলে আমি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবো না।
ক্ষমা করে দিও বোইন।
বলেই দরজা খুলে দৌড়ে চলে যায়। ইশারা নিজের কপালে নিজেই তিন চারটা থাপ্পড় মারে।
বিরবির করে বলে
“হাদারামকে বিয়ে করলাম।
আবরার নিজের জুতো খানা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমান ইভান এবং আহাদ ক্যামেরা খানা খুলছে। ইশারা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ এতোটাও দুষ্টু হয় জানা ছিলো না তার। সিয়াম একটু পরপরই খিল খিল করে হেসে উঠছে।
হালার বেডা হালারা বাসর দেখবে। তোদের বাসর গুলে খাইয়ে দিবো। শয়তানের দল।
” আর কোনো কাহিনি দেখলে সবাইকে লাথি মেরে ছাঁদ থেকে ফেলে দিবো।
পাখি চলো।
বলেই আদ্রিতার হাত খানা ধরে আবরার। এবং বড় বড় পা ফেলে প্রস্থান করে। সিয়াম ইশারার কাঁধে হাত রেখে বলে
“তাড়াতাড়ি বের হ তোরা। বাসর করতে হবে। ফুল গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে।
যেতে যেতে আমান বলে
“শালা তোর পাখি ছোট।
সিয়াম জবাব দেয়
” তোর টিশাকে একদিন পাঠাইস। পাখি দেখিয়ে দিবোনি।
রাত তিনটার সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আরিফ। তিন তিনটে বাচ্চাকে অনাথ করে বাবা নামক বটগাছটা পরপারে পাড়ি জমায়।
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে ডাক্তারের হাত ধরে অনুরোধ করে বলেছেন
“আমার বাচ্চা দুটোকে কোনো ভালো এতিম খানায় দিয়ে আসিয়েন। নিজের বলতে আমার কিছুই নেই। ওদের জন্য দোয়া ছাড়া আর কিছুই রেখে যেতে পারলাম না আমি।
ডাক্তার আশা নিঃসন্তান। বিয়ের তেরো হয়ে গেলো এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্তান হয় নি। হাজব্যান্ডকে বহুবার বলেছিলো “একটা বাচ্চা দত্তক এনে দিতে” কিন্তু তিনি আনে নি। বলেছে “আরও কিছুদিন দেখি”
এই অসহায় বাবার মৃত্যুতে ডাক্তার আশা কেনো জানি খুশি হয়।
আর মনে মনে ভেবে ফেলে “এই বাচ্চা দুটোকে আমি নিবো। কে বলেছে ওদের কেউ নেই? আমি আছি”
আরিফের আত্নীয় স্বজন কারো কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। কেউ পরিচয় বলতে পারে না। হাসপাতালের মর্গে অযত্নে ফেলে রাখা হয়। সকাল হলে কিছু ডাক্তার মিলে কাছাকাছি গোরস্থানে কবর দিবে বলে জানায় আশা।
এবং সেই রাতেই বাচ্চা দুটো নিয়ে নিজ বাসায় চলে যায়।
আদ্রিতা ভয়ে ভয়ে আবরারের পাশে শুয়ে পড়ে। লোকটা যখন শান্ত হয়ে শুয়ে থাকে তখন তাকে অন্য রকম সুন্দর দেখায়। এক্কেবারে চকলেট বয়। আদ্রিতার ইচ্ছে করে কামড়ে খেয়ে নিতে। কিন্তু খাওয়া তো যাবে না তাই বুকের ওপর হাত দিয়ে মৃদু স্বরে বলে
“আবরার আপনাকে তুমি করে ডাকি?
আবরার গম্ভীর স্বরে জবাব দেয়
” নো
আপনিই ভালো।
“কেনো?
“তোমার সমবয়সী আমি? না কি ফ্রেন্ড?
আদ্রিতা মুখ বাঁকায়। মনে মনে বলে “শালা খবিশ” মুখ খুললেই গলগল করে তেঁতো বেরিয়ে আসে।
আবরার আদ্রিতার দুই হাত বালিশের সঙ্গে চেপে ধরে চুমু খায় নাকে। একটু দ্রুতই ঘটে যায় ঘটনা খানা।
হাঙ্কি স্বরে বলে
“ইন্টি**মেন্ট হওয়ার সময় ডাকতে পারো। আই ডোন্ট মাইন্ড।
আদ্রিতা বড় বড় চোখ করে বলে
” আবরার আমি অসুস্থ। আজকে কিন্তু
আবরার বিশ্বাস করলো না। সে কপালে ভাজ ফেলে ওষ্ঠের ভাজে ওষ্ঠ পুরে দেয়। ডান হাত খানা শাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। প্রসস্থ হাতের চাপে শিওর ওঠে আদ্রিতা। তলপেট মোচর দিতে থাকে। ব্যাথা যেনো বেড়ে গেলো। এদিকে দম বন্ধ হয়ে আসছে। লোকটা মেরে ফেলবে না কি?
আবরারের থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে আদ্রিতা।
বিরক্ত আবরার ওষ্ঠ ছেড়ে ধমকের স্বরে বলে
“হোয়াট ইজ ইউওর প্রবলেম? রোমাঞ্চ করতে আসলেই সাপের মতো করতে থাকো কেনো? ভালো লাগে না আমার ছোঁয়া?
আদ্রিতা ভয়ে ভয়ে বলে
” আ…..আমি সত্যিই অসুস্থ। প্লিজজ রাগ করিয়েন না।
আবরার চেক করে। শিওর হতেই অশ্লীল গালি আওড়ায়। তারপর নরম স্বরে বলে
“সহ্য করে নিতে পারবে না? প্লিজজ সোনা একটু খানি।
আদ্রিতা অনবরত মাথা নারিয়ে “না” বোঝায়।
“জান প্লিজজজ। এই ক্যান নট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।
সহ্য করো পাখি।
আদ্রিতা কেঁদে ফেলে।
আবরার কপাল কুঁচকে বলে
“কয়দিন?
” আজকে সকাল থেকে।
“ধুররর” বলেই আদ্রিতার ওপর থেকে সরে যায়। বালিশের কোণা থেকে ফোন নিয়ে চলে যেতে নেয়।
আদ্রিতা বলে
“কোথায় যাছেন?
আবরার জবাব দেয়
” সাত দিন পরে কথা বলতে আসিও। সিডিউল করার আগে বললে কি হতো?
বলেই ছাঁদের অন্য কোণায় চলে যায়। আদ্রিতা কপাল কুঁচকায়।
“আশ্চর্য সে কখন সিডিউল করলো?
খারাপ বেডা। অশ্লীল
মুখ বাঁকিয়ে শুয়ে পড়ে আদ্রিতা। ওনার সাথে কথা না বললে মনে হয় ওর ভাঙা ঘড় পড়ে যাবে।
বলবে না কথা।
” আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি ইশারা। তুমি যতটা জানো তার থেকেও বেশি। তুমি ছাড়া কখনো কোনো নারীকে ভালোবাসি নি।
আমি এতিম। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে মাও তাই। কোনোদিন কেউ খোঁজ নেয় না। ওদের আমার প্রয়োজনও নেই। তুমি শুধু সারাজীবন থেকে যেয়ো আমার হয়ে। আমার আর কিছু লাগবে না।
ইশারা হাত বুলিয়ে দেয় সিয়ামের চুলে। এবং অপর হাত দ্বারা সিয়ামের হাত এনে নিজের পেটের ওপর রাখে।
“ইশারা
আমি যদি তোমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করি তুমি কি রাগ করবে?
ইশারা মাথা নারিয়ে “না” বোঝায়।
সিয়াম আবার বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৩
“বুইঝো কিন্তু।
এবার ইশারা জবাব দেয় না। সিয়াম লাইট অফ করে ইশারার ঠোঁটে চুমু খায়।
ভালোবাসার সাগরে ডুবে যায় দুজন। সিয়ামের বাসর করার স্বপ্ন পূরণ হয়। নিজের উন্মাদায় মক্ত করে ফেলে ইশারাকে। নিজেকেও নতুন করে আবিষ্কার করে। এতোটা বেপরোয়া ছিলো সিয়াম?
ছিলো না তো।
নিজের এই উত্তেজনা অস্বাভাবিক কন্ঠস্বর আকুল আবেদন। সবটাই যেনো নতুন।