এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩৮

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩৮
কাফাতুন নেছা কবিতা

শখের নারীর জন্য পুরো দেশে লাল রং নিষিদ্ধ করলো এমপি তামিম সরকার! তামিম ভাষণ দেওয়ার এক পর্যায়ে হঠাৎ একটি উড়ন্ত কা’টা হাত এসে তামিমের সামনে পড়ে। উপস্থিত সকলে একটু অবাক হয়ে যায়! কারণ তামিম ছাড়া সচারাচর এসব কাটাকাটিতে তেমন কেউ এক্সপার্ট না! কিন্তু সুবহার প্রেমে তো তামিম এখন মোটামুটি ঠান্ডা মেজাজের মানুষে পরিনত হয়েছে তাহলে কে করলো?
পঞ্চ পান্ডব তামিমের দিকে তাকায়! দেখে তামিমের মুখে সেই চিরচেনা সা’ইকো হাসি!তার মানে তামিম জানে এটা কার কাজ!
ভীরের মধ্যে দিয়ে একজন লম্বা চুল ওয়ালা ব্যক্তি মুখে পান চিবোতে চিবোতে এক হাতে একজন ব্যক্তির পা ধরে টেনে হিছড়ে নিয়ে আসছে তামিমের দিকে। তাকে দেখা মাত্র তামিমের মুখের রহস্য জনক হাসিটা আরো রহস্যে পরিনত হয়!

” আব্বে সা’লা কো’পা শামসু দেহি!”
” আয় হায় কো’পা ভাই আইসে রে!”
কো’পা শামসু, তামিমের ডান হাত বলা হয় যাকে! পেশায় একজন কোশায় ছিলো সে!চোখের সামনে ১১ বছর আগে নিজের পুরো পরিবারকে ম’রতে দেখে সে, হয়তো সে ও ম’রতো, কিন্তু তামিম সেদিন নিজের আব্বা জানের সাথে সাথে শাসমুকে ও বাচিয়ে নেই! কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকায় তামিম হারায় নিজের ভাইকে আর শামসু হারায় নিজের পুরো পরিবারকে। বাবার সাথে থেকে থেকে সে যেই স্কেলে গ’রু কা’টা শিখেছিলো ঠিক সেই স্টাইলেই পরে মানুষদের পরপারে পাঠায়! তাই তাকে কো’পা শাসমু নাম উপাধি দেওয়া হয়!
বিগত ৬ মাস ধরে কো’পা শাসমু গায়েব ছিলো! কারণ তামিমের নির্দেশ! তামিম তাকে বিশেষ কাজে পাঠিয়ে রাখে! পঞ্চ পান্ডব তাকে পাগলা শামসু বলেই ডাকে!
কো’পা শামসু এসে সোজা হাঁটু পেরে বসে তামিমের পায়ে চু’মু খায়!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” ভাই! কাজ শেষ! ”
তামিম শামসুর মাথায় হাত রাখে!
” এখন আমার কাজ শুরু!”
তামিম সামনে থাকা লোকটির কাছে যায়! তারপর তার পা থেকে মাথা অব্দি দেখে!
” আমার নাম কী?”
” এমপি…এমপি তামিম সরকার! ”
তামিম লোকটার বু’কে লাথি দিয়ে ফেলে দেয়! আর খুব জোড়ে গর্জে উঠে!
” তানভীর সরকারের ছেলে তামিম সরকার!”
আজ প্রায় ৫-৬ দিন পর সেই চিরচেনা ভয়ংকর তামিমের রূপ ভেসে উঠলো সকলের সামনে!তামিম ক্ষেপেছে তো আরশিনগরে র’ক্তের বন্যা বয়েছে! আবার কয়েকদিনের নীরবতা! আবার কয়েক দিনের ভয়ের রাজত্ব!

” মাহিরররররররর….!”
” এই লন ভাই!”
মাহির তামিমের গোল্ডেন চাপা’তি এগিয়ে দেই, আর নিজে পিছনে সরে পরে! কারণ মাহির এখন জানে এখানে ঠিক কী হতে যাচ্ছে!
” আমার আব্বার পোস্টারে মু’তে দেশ ছাড়বি আর ভাববি কেউ কিছু জানবো না! তোর কলিজা কতো বড়! একটু বের কর তো মেপে দেখবো!”
তামিম ঝাপিয়ে পড়ে সামনে পড়ে থাকা লোকটির উপরে! আর চারপাশে নীরবতা পালন হয়! এখন শুধু একজনের গোঙানির আওয়াজ ছাড়া আর তেমন কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না!
১৭ মিনিট পর তামিম ঠান্ডা হয়ে মাটিতে বসে পড়ে!
” এই সাকিবববব…!”
” এই যে ভাই!”
সাকিব তামিমের সিগা’র ধরে তার সামনে দেয়। তামিম মাটিতে বসেই সি’গারে ফু দিতে থাকে!
” ওর লা’শ কু’ত্তা দিয়ে খাওয়া! কোনো হুদিস যেন না থাকে!”
তামিম উঠে তার জীপ নিয়ে পোড়া বাড়িতে রওনা দেই! সাথে তার কয়েকজন লোক যায়, আর কয়েকজন লোক থাকে লা’শ গায়েব করার জন্য!

রাত ১১ টা ৪৫ মিনিট!
তামিম সহ তার সকল লোকরা পোড়া বাড়িতে বসে থাকে! তামি বেঞ্চে বসা, আর তার পায়ের নিচে তার ছেলেরা বসা! তামিম চুপচাপ বসে থাকে বেঞ্চে!
” ওকালে পাকিলে বা*ল কাঁদতে হবে চিরোকাল!”
হঠাৎ সাকিবের এমন কথায় তামিম সহ সকলে তাকায় সাকিবের দিকে!
” কার বা*ল পাকছে?”
”মাহিরের ভাই!”
সকলে এক সাথে মাহিরের দিকে তাকায়!
” ভাই, আমি কিছু জানি না! কী-রে বো’মার বাচ্চা আমারে ফাঁসাস কেন?””
” আমার প্রথ্‌থম ভালোবাসা তোর লাইগা অসম্পূর্ণ হওয়া গেছে! ”
পাশ থেকে কালা মানিক ও চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায় তার দিকে। মাহির যে সাকিব আর মানিকের সাথে এতো বড় ছলনা করবে কেউ বুঝতে পারেনি!

” ভালোবাসা কী এতো সস্তা রে! শা’লা বহুত মারাত্মক জিনিস! একবার মনে আসে আর সারাজীবনের কষ্ট দিয়া যায়!”
তামিমের এমন কথার অর্থ সকলে বুঝে যায়! তামিম মানুষ খারাপ হলে ও যে একজন ব্যার্থ প্রেমিক সেটা সকলেরই জানা এখন!
মাহির উঠে গাড়ি থেকে দো-তারা নিয়ে তামিমের হাতে দেই, আর সকলে মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে থাকে তামিমের দিকে। তামিম দো-তারা হাতে নিয়ে আকাশের দিকে তাকায়! তারপর চোখ বন্ধ করে দো-তারা বাজানো শুরু করে!
” সোনার ময়না ঘরে থুইয়া,সোনার ময়না ঘরে থুইয়া,
বাইরে তালা লাগাইছে………!
রোশিক আমার… মন বানধিয়া পিঞ্জর বানাইছে…! হাইরে রশিক আমার মন বানধিয়া পিঞ্জর বানাইছে! ”
সকলে তামিমের সাথে সাথে গানে তাল মিলাতে থাকে।শেষ রাতের দিকে তামিম এবং তার পঞ্চ পান্ডব প্রায়ই এমন গানের আসর জমাতো! অবশ্য সেগুলো হতো সুখের! কিন্তু আজকের গানের আসর টা সুখ কম! বেদনা বেশি! একজন ব্যর্থ প্রেমিকের বেদনা!

রাত, ১:৫৬ মিনিট!
সুবহা তখন ও নিজের ভাইয়ের কাছে! নার্সরা থাকার পর ও সুবহা নিজের হাতে তার ভাইয়ের সকল কাজ করতে থাকে! সুবহা আগে থেকেই তার মায়ের সাথে মোটামুটি সকল কাজ করতো। বেশির ভাগ সময়ই তার মা তাকে সাহায্য করতো! কিন্তু আজকে সুবহা, সব নিজের হাতেই করছে,কারো সাহায্য ছাড়া! ঠান্ডা স্বভাবের মেয়েটা আজ এক হাতে নিজের ভাইয়ের সমস্ত কাজ করছে!
ঘড়ির কাটা বলছে রাত ২ টো বাজতে ২ মিনিটের বাকি! সুবহা উঠে তামিমের রুমে আসতে থাকে! এতোক্ষণে হয়তো তামিম এসে ঘুমিয়ে পড়েছে!
সুবহা মনের মাঝে এক আকাশ সমান দ্বিধা নিয়ে রুমে প্রবেশ করে! ঘরে ঢুকেই সুবহা বুঝতে পারে তামিম এখনো আসেনি! যাক বাঁচা গেলো!

সুবহা ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে নিজের সমস্ত গয়না খুলে ড্রেসিং এ রেখে দেয়! তারপর একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে শাড়ির পিং খুলতে থাকে! তারপর হঠাৎ করেই সুবহার মনে পড়ে যায় সেই পুরোনো দিনগুলোর কথা!
স্কুল, কলেজের বিভিন্ন প্রোগ্রাম শেষে বাড়ি ফিরেই মায়ের কাছে চলে যেতো! সারাদিনের গল্প বলতো, আর তার মা শাড়ি খুলতে সাহায্য করতো! কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন! নেই কোনো আনন্দ। রয়েছে শুধু একরাশ হতাশা!
সুবহা নিজের মনের চিন্তার সাথে লড়াই করতে করতে শাড়ির পিং খুলতে থাকে! জামদানী শাড়ি হওয়াতে বেশ বিপাকে পড়তে হয় তাকে! সকালে তামিমের মা শাড়ি পড়িয়ে তো দিয়েছিলেন, কিন্তু এতো রাতে তো আর তিনি আসবেন না সাহায্য করতে!

সুবহা নিজের চিন্তার মাঝেই আনমনে পিং গুলো খুলতে থাকে! ঠিক তখনই তামিম ঘরে প্রবেশ করে! তামিম রুমে ঢুকতেই উন্মু’ক্ত পেটে সুবহাকে শাড়ির কুঁচি গুলো খুলতে দেখে!
জীবনের প্রথম বার তামিম কোনো নারীকে এইভাবেই দেখলো, তাও তার শখের নারী! যাকে সে দুনিয়ার সকলের চোখ থেকে আলাদা রাখতে চায়!
তামিমের এডামস অ্যাপেল উঠা নামা করতে থাকে! সে রুমের দরজা লক করে ফেলে! এক পা এক পা করে সুবহার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে!
সুবহা প্রায় নিজের শা’ড়ির প্যাচ ভাঙ্গাতেই তামিম তার পিছনে এসে দাড়ায়!
তীব্র বিশ্রী ম’দের গন্ধ নাকে আসতেই শুকনো ঢোক গিলে সুবহা! সে বুঝে যায় তার পিছনে কে! তামিম সুবহার উন্মুক্ত পে’টে খুব শক্ত করে চেপে ধরে! আর কাঁধে মাথা রেখে সুবহার শরী’রে ঘ্রাণ নিতে থাকে! সুবহা তামিমের হাত সরিয়ে সামনে যেতে চায়, কিন্তু তামিম তাকে আরো শক্ত করে চে’পে ধরে! সুবহার চুল সরিয়ে তার কাঁধে চু’মু দেই! ঘৃণায় চোখ বন্ধ করে ফেলে সুবহা!
তামিম সুবহাকে ঘুড়িয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেই! তারপর শক্ত করে একহাতে সুবহার কোমর ধরে আরেক হাতে তার গাল ধরে, ঠোঁ’টে ঠোঁ’ট বসিয়ে দেই!

সুবহা ও নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে, কিন্তু তামিমের শক্তির কাছে বার বার হেরে যায়!
এক পর্যায়ে সুবহা খুব জোড়ে তামিমকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়, আর তাড়াতাড়ি করে মুখ ধরে ওয়াশরুমে চলে যায়! তামিম ও সুবহার পিছু পিছু ভিতরে চলে যায়!
প্রচন্ড ব’মি করতে থাকে সুবহা! তামিম এসে সুবহার পিঠে হাত বুলাতে থাকে! আর না’ভি শক্ত করে ধরে!
” তুই যা, আমি পরিষ্কার করতাছি!”
কোনো কথা না বাড়িয়ে সুবহা চুপচাপ রুমে চলে যায়! সারাদিনের ক্লান্তি আর এখন ব’মি সব মিলিয়ে খুবই ক্লান্ত হয়ে যায় সুবহা!
কিছু ক্ষণ পর তামিম সুবহার জন্য নাইট সুট নিয়ে বাইরে আসে! এসে চুপচাপ সুবহার পাশে বসে!
” ম’দের গন্ধই নিতে পারোস না, আমাকে সারাজীবন সামলাবি কীভাবে? ”
” আপনার সাথে সারাজীবন থাকবে কে!”
” পালাবি?”
” ধরুন তাই!”
” তোকে ভালোবাসি বলে বাঁচাইয়া রাখছি! যেদিন পালাবি, সেদিনই নিজের হাতে তোকে দা’ফন করার ব্যবস্থা করবো!”
সুবহা চোখ বন্ধ করে ফেলে! টলমলিয়ে পানি পড়তে থাকে তার চোখ দিয়ে!
” কান্নার এখনো কিছুই করি নাই রাত পরী! কিন্তু করবো যে না এটা ভাবিস না! তোর বেইমানীর কথা ভুলি নাই আমি!”

” মে’রে ফেলুন একবারে!”
তামিম খুব জোড়ে সুবহার গ’লা টি:পে ধরে!
” ম’রার খুব শখ না তোর? আমার হাতেই তুই ম’রবি!”
তামিম খুব জোড়ে সুবহাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে নিজে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে!
” একটা ম’দখোর, মা’তাল, খু’নির সাথে থাকার চাইতে ম’রা ভালো!!”
——রাত ৩ টা!
আবহাওয়া জানান দিচ্ছে রাতের শেষ ভাগ চলছে! তামিম সরকার বাড়ির ছাদে চুপচাপ একা বসে থাকে! হঠাৎ কাঁধে কারো হাত পড়তেই একটু চমকে যায় সে!
” আপনি ঘুমান নাই আব্বা! ”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩৭

তানভীর সরকার তামিমের সাথে ফ্লোরে বসে পড়ে!
” সন্তানের চোখে ঘুম নাই, বাবা কীভাবে ঘুমায় বলেন! ”
তামিম কোনো কথা না বলে চুপচাপ থাকে!
” কী হয়েছে? ”
” কিছু না আব্বা জান! ”
তানভির সরকার তামিমের মাথায় হাত দেই,
” কী হয়েছে! ”
” সে আমারে ভালোবাসে নাই আব্বা! সে আমারে ভালোবাসে নাই!”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩৯