এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪২
কাফাতুন নেছা কবিতা
তামিম নিচে নেমে এসে সাকিব আর মানিককে আদেশ করে সুবহার ফ্রেন্ডের বাড়ি দিয়ে আসতে! তামিম নিজে ও খুব রেগে পার্টি অফিসে চলে যায়!
সাকিব আর মানিক নিজেদের বাইক নিয়ে দাড়িয়ে থাকে! কলী আর কাকলীকে বসিয়ে রোমান্টিক হিরোদের মতো করে বাড়ি নিয়ে যাবে!
” শোন মানিক্কাহ, কলী যখন আইবো তুই আমার নামে তারিফ করবি! কবি আমি এতো সুন্দর কেন! আমার পিছনে এতো মেয়ে ঘুড়ে কেন!”
” আর তুই আমার নামে তারিফ করবি! কবি আমার মতো নিষ্পাপ পোলা আরশিনগরে নাই! এতো পরিষ্কার কেন আমার মন!”
সাকিব আর মানিক দু-জনেই সুন্দর মতো ডায়লক মুখস্থ করে রাখে! এই যাত্রায় মেয়ে পটিয়েই ছাড়বে! কিন্তু বাকি তিন জন ও যে লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের এসব কান্ডকারখানা দেখছিলো তা ঘুন অক্ষরে ও টের পাইনি তারা!
” আমরা নারী হীন জীবন কাটামু আর ওরা গার্লফ্রেন্ডের চু’ম্মা খাইবো! এইডা কী মানা যায়? ”
” একদম!”
” ছেমরি দুইডা আইলেই এট্যা’ক! ”
কলী আর কাকলী তামিমের মায়ের থেকে সুন্দর মতো বিদায় নিয়ে আসে! তারা অনেকক্ষণ সুবহার জন্য দাড়িয়ে ছিলো নিচে! কিন্তু সুবহা নিচে না আসাতে তারা আর বেশি দেরি করেনি! তামিম চলে যাওয়ার ২০ মিনিট পর তারা ও বের হয়ে চলে আসে!
কলী আর কাকলী বের হতেই সাকিব আর মানিক দু-জন দু-জনের মুখের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব জয়কারী হাসি দেয়! যখনই তারা কাছাকাছি এসে দাড়ায় তখনই বাকি তিনজন এসে হাজির হয়!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” কীরে বোমা সাকিব, আর কালা মানিক, আজকে কাউরে উড়াইলি না তো’রা!”
কলী আর কাকলী ফিক করে হেসে উঠে তারপর সাথে সাথে হাসি মুখ বন্ধ করে ফেলে!
সাকিব আর মানিক দু-জন একজন আরেকজনের দিকে তাকায় কিন্তু কোনো রিয়েকশন দেয় না!
” কলী তুমি আমার! ”
” আর কাকলী তুমি আমার! ”
সাকিব আর মানিকের কথা শুনে কলী আর কাকলী ভ্রু কুঁচকে তাকায়!
” মানে তুমি আমার বাইকে আসো, আর কাকলী তুমি ওর বাইকে যাও! ”
কলী আর কাকলী কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ উঠে বসে! সাকিব আর মানিক ও বাকি তিনজনকে দেখে প্রচুর ভাব নিয়ে হাসি দিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়!
” দেখছোস মাহির, দেখছোস! ওরা আমাগো আগে মাইয়া পাইয়া গেলো!”
” ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়! বন্ধু যখন মেয়ে লইয়া আমাগো চোখের সামনে দিয়া বাইক লইয়া ভাইগ্গা যায়, ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়! “”
মাহিরের এমন অদ্ভুত গান শুনে টাকলা মফিস আর পেট মোটা রফিক নিজেদের পায়ের সেন্ডেল খুলে তার পিছনে দৌড় লাগায়! এতো গরমে এমন ফালতু গান শুনলে যে কেউ রাগে শেষ হয়ে যাবে! তারা দু-জন ও এখন রাগে শেষ।
প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে কলী আর কাকলীকে তাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় নামিয়ে দিতে! কিন্তু শুধু নামিয়ে দিয়ে তো আর হবে না মেয়ে তো আর এমনি এমনি পটবে না!
” তোমরা দাড়াও আমরা একটু আসতাছি!”
জোড়া বলদ রাস্তার ধারের দোকান থেকে দু-টো আইসক্রিম কিনে নিয়ে আসে! আর কলী এবং কাকলীর সামনে ধরে।
” না! না! ভাইয়া লাগবে না!”
” জ্বী ভাইয়া লাগবে না!”
সাকিব কলীর হাতে আর কাকলীর হাতে মানিক আইসক্রিম ধরিয়ে দেই!
” আরে নেও! কতো গরম!”
” তোমরা এতো সুন্দর! গরমে ঘামলে কেমন লাগে আইসক্রিম খাও!”
দু-জনেই জোড় করে তাদের দু-জনের হাতে আইসক্রিম দিয়ে দেই! প্রথম না না করলে ও পরে তারা নিয়ে নেই!
” আবার কবে বের হবা?”
” আর তো বের হওয়া হবে না ভাইয়া!”
কলীর কথা শুনে সাকিবের একটু মন খারাপ হয়! ওরা বের না হলে প্রেমটা হবে কীভাবে!
” কেন বের হবা না কেন? কেউ কিছু বলছে? আমারে কও খালি, এখন উড়া’য় দিতাছি! ”
” নাহ! ভাইয়া কেউ কিছু বলে নি! আসলে আমাদের বিয়ে তো সামনে তাই!”
সাকিব আর মানিক যেনো এই মুহুর্তে বিশাল বড় একটা ছ্যাকা খেয়ে গেলো!
” দু-জনের একসাথে? ”
” জ্বী ভাইয়া!”
সাকিব আর মানিক দু-জন দু-জনের মুখের দিকে তাকায়! তারপর খুব করে যে যার আইসক্রিম নিয়ে নেই তাদের হাত থেকে!
” আইসক্রিম ফেরত দে ছেমরি!”
” তুই ও দেহহহহ!”
যে যার মতো আইসক্রিম নিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জায়গা ত্যাগ করে! আর কলী এবং কাকলী বোকার মতো রোদে দাড়িয়েই থাকে! কী থেকে কী হয়ে গেলো? আইসক্রিম দিয়ে আবার নিয়ে নিলো কেন এটাই তারা বুঝলো না!
সারা রাস্তা মুভ প্রচন্ড ভার করে আসে তারা দু-জন! এসেই পার্টি অফিসে চলে যায়! সবাই তখন সবে মাত্র আসছিলো অফিসে!
তাদের দেখা মাত্র তারা দাড়িয়ে পড়ে!
” কী-রে? ভাইয়া থেকে ছাইয়া হলি?”
” তোর বা*ল, যা সর বেটা!”
মানিক আর সাকিব এক জন আরেকজনের গলা ধরে উপরে উঠতে থাকে! তাদের সাথে বাকি রা ও উপরে উঠতে থাকে!
উপরে আসতেই সকলের কানে জিনিস ভাঙ্গার প্রচন্ড আওয়াজ আসতে থাকে! সকলে তামিমের কক্ষের সামনে দাড়ায়! কিন্তু ভেতর থেকে দরজা বন্ধ থাকায় তারা তেমন কিছু করতে পারে না! তামিমকে ডাকা ছাড়া!
——- কিছু ক্ষণ আগে——–
তামিমের রাগ কতটা ভয়ংকর সেটা সকলেরই জানা, এমন কী সুবহার ও! তারপর সে এমন কিছু করবেই যাতে তামিম তার উপরে নিজের আক্রোশ বের করে!
তামিম খুব জোড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়! কে এলো, কে থাকলো সেদিকে কোনো ধ্যানই নেই তার!
পার্টি অফিসে এসেই তামিম নিজের কক্ষে ঢুকে পড়ে! তারপর টেবিলে উপস্থিত সকল কিছু ছুড়ে নিচে ফেলে দেই! একটি হকিস্টিক দিয়ে সব কিছু ভাঙ্গতে শুরু করে!
এক পর্যায়ে চুপচাপ ফ্লোরে বসে থাকে! আর সিগা’রের ধোয়া উড়াতে থাকে!
” একটু ভালোবাসলে কী ক্ষতি হয়তো সুবহা! একটু কী ভালোবাসা যেতো না আমাকে?”
——-বর্তমান———–
তামিম খুব জোড়ে কথাগুলো বলতে থাকে! আর বাইরে সবাই দাড়িয়ে কথাগুলো শুনতে থাকে! প্রেমিক তামিম তাদের কাছে বড্ড বেমানান! এই তামিমকে তো তারা চিনে না!
তামিম দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে!
” বাংলাদেশের সব থেকে বেস্ট স্কিন ডাক্তারকে ধইরা নিয়ায়!”
তামিম বলতে দেরি, তার পঞ্চ পান্ডবদের কাজে নামতে দেরি নেই! ততক্ষণে লোক আনিয়ে তামিমের কক্ষ আবারো সুন্দর মতো সাজানো হয়!
তামিম ও কনফারেন্স রুমে বসে থাকে।
৩০-৪৫ মিনিট পর ডাক্তারকে নিয়ে হাজির হয় তারা! ডাক্তার সুন্দর মতো সালাম দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে!
” কতদিন সময় লাগবে দাগ যেতে?”
” ৪ দিন স্যার!”
” জ্বলবে?”
” জ্বী না স্যার!”
তামিম উঠে ডাক্তারের কাছ থেকে মেডিসিন নিয়ে নেই!
” যত বিন্দু পরিমাণের ও ওর গাল জ্বলে তোর পুরো শরীরে আগু’ন জ্বালিয়ে দিবো!”
ডাক্তার রোমাল দিয়ে ঘাম মুছতে থাকে! তামিম উঠে মেডিসিন নিয়ে বেরিয়ে পরে! মন বাসায় রেখে বাইরে কাজ করা যায় না!
তামিম চলে যাওয়ার পর পর তামিমের মা সুবহার রুমে আসে! সুবহা তখন চুপচাপ খাটের এক পাশে বসে ছিলো!
আয়েশা বেগম এসে সুবহার মাথায় হাত রাখে! সুবহা ও ছলছল নয়নে তাকাই তার দিকে! তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে!
” গালে কী খুব জলছে মা?”
সুবহা কোনো কথা না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে হুম করে!
আয়েশা বেগম নিচ থেকে আইস কিউব আনিয়ে সুবহার গালে দিতে থাকে!
” আমার ছেলেটা তোমার জন্য পাগল!”
সুবহা কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকে!
” আমার বাজান এমন ছিলো না জানো! খুবই নম্র-ভদ্র ছিলো আমার সোনা! কখনো বড় দের মুখের উপরে কথা ও বলেনি সে! আর আজকে দেখো! প্রতিদিন লা’শের বন্যা ফালাইতাছে!”
” আপনারা উনাকে কেন বাঁধা দিচ্ছেন না?”
” তামিম এই পথে আমাদের জন্যই গেছে! ”
আয়েশা বেগমের শেষের কথা শুনে সুবহার চোখ বড় বড় হয়ে উঠে! বা-মামার জন্য সন্তান খু’নি হয় এটা প্রথমবার শুনলো সে!
” তোমার কাছে একটা অনুরোধ করবো মা?”
” আপনি আমার মা হন! অনুরোধ কেন, আদেশ করুন!”
” আমার ছেলেকে তুমি আগলে রাখবা?”
সুবহার মুখ চুপসে যায়! এটা তো সত্যি সে তামিমকে যমের মতো ভয়! সে তার থেকে মুক্তি চাই! তাহলে আগলে রাখবে কী-রে!
” বউ পারে না এমন কোনো কাজ নাই! আমি মা হইয়া তোমার কাছে ভিক্ষা চাইতাছি সুবহা! প্লিজ! ”
আয়েশা সরকার এবার না পারতে কান্নায় ভেঙে পরে!
” তুমি ছাড়া এখন আমার আর কোনো উপায় নাই! আমি তোমার পায়ে….!”
” ছি! ছি! মা!! কী করছেন এগুলো?’
” আমার পোলারে তুমি ফিরাইয়া দাও সুবহা!”
একজন মা তার সন্তানের জন্য যে কতটা নিচু হতে পারে সেটা আয়েশা সরকারকে দেখলে বুঝা যায়!
” আমি কথা দিচ্ছি!”
‘” সত্যি মা?”
” জ্বী!”
————রাত ১২-৩৫ মিনিট! ———-
সুবহা ফ্রেশ হয়ে সবে মাত্র বিছানায় বসেছিলো, আর তখনই তামিম রুমে প্রবেশ করে! অন্য মনস্ক থাকায় তামিম যে এসেছে সেটা সুবহা লক্ষ্য করেনি!
তামিম রুমে ঢুকেই দেখে একটি জলজ্যান্ত পরী তার বিছানায় চুল ছেড়ে দিয়ে বসে আছে! শুকনো ঢোক গিলে তামিম!
” এতো সুন্দর মেয়ে আমার বউ!আজকে মনে হয় আবার হার্ট অ্যাটাক হবে!”
তামিম এসে সুবহার গা ঘেসে বসে! তামিম বসতেই সুবহা একটু নড়েচড়ে বসে! তামিম সুন্দর মতো মলম বের করে সুবহার গালে লাগাতে শুরু করে। থেকে থেকে ফুঁ ও দিতে থাকে!
” সরি!”
সুবহা চোখ বড় বড় করে তামিমের দিকে! একেই বলে জু’তো মেরে গরু দান!
” তোমার আশেপাশে কেউ থাকলে আমার মাথা ঠিক থাকে না সকাল!”
” কিন্তু কলী তো মেয়ে ছিলো!”
” তাও আমার হিংসা হয়তাছিলো! আমার বউ আমি ছুঁইলাম না অন্যরা গাল ধরে ফেললো!”
” একজন মেয়ে ধরেছিলো গাল! এতে ও আপনার সমস্যা! ”
” ছেলে-মেয়ে বুঝি না! তুমি শুধু আমার! ”
” আপনি তো সাই’কো কিংশুকের থেকে ও খারাপ!”
” কেন? আমি কী আমার বউরে জী:বন্ত কবর দিছি না-কি? ”
সুবহা বুক থেকে একটু কাপড় সরিয়ে গু’লি লাগার চিহ্ন দেখায়!
” ওটা তো আমি রাগে গু’লি মারছিলাম সুবহা! মন থেকে মারি নাই!”
সুবহা খানিকটা বদলের মতো তাকিয়ে থাকে তামিমের দিকে! মন থেকে মারেনি তাতেই দুটো! মারলে না-জানি কয়টা খেতে হতো তাকে।
তামিম ফুঁ দিয়ে মলম লাগাতে লাগাতে সুবহার খুব কাছে চলে আসে! এতোটা কাছে যে সুবহা তামিমের নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারছিলো! গলা শুকিয়ে আসে সুবহার!
তামিম যে উজ্জল শ্যামলার মধ্যে মা’রাত্মক সুন্দর দেখতে তা সুবহা ও অস্বীকার করে না! তামিম কাছে এলে সুবহার ভেতরে ও একটা চাহিদা কাজ করে তাকে কাছা পাওয়ার! কিন্তু তামিমের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে বার বার সুবহা নিজের অনুভূতি দাবিয়ে রাখে!
” হাতে কী হয়েছে? ”
” এমনি কেটে গেছে!”
” এমনি ও হাত কাটে?”
সুবহা উঠে ফাস্ট এইড বক্স বের করে! তারপর সুন্দর মতো তামিমের হাত ডেসিং করতে থাকে! তামিম ও চুপচাপ বসে থাকে!
” আমাকে মেরে যদি নিজেকে কষ্ট দেন, তাহলে মে’রে লাভ কী?”
তামিম সুবহার গাল ধরে মুখ উপরে তুলে!
” আমি তোমাকে ভালোবাসি সুবহা! খুব ভালোবাসি! ”
সুবহা আর কথা না বাড়িয়ে তামিমের হাত নিয়ে তাতে ব্যান্ডেজ করা শুরু করে! তারপর ফাস্টএইড বক্স রেখে পাশে শুয়ে পড়ে!
তামিম একটা বালিশ নিয়ে চুপচাপ সোফাতে যেতে থাকে!
” ঘুমাবেন না?”
” আমি সোফায় ঘুমাইতাছিস্! তুই এখানে ঘুমা!”
সুবহা কিছু ক্ষণ চুপ থেকে আবার শুয়ে পড়ে!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪১
” বিছানা অনেক বড়! শুয়ে পড়ুন!”
সুবহার বলতে দেরি তামিমের বেহায়ার মতো শুতে দেরি নেই! তামিম লাইট অফ করে চুপচাপ শুয়ে পড়ে! কিন্তু ঘুমায়না! সুবহা ও চুপচাপ শুয়ে থাকে! সে ও ঘুমাই না!