এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৫
কাফাতুন নেছা কবিতা
” তামিম? ”
” জ্বী, পরী!”
” আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?”
” হ্যাঁ?”
” থ্যাংক ইউ!”
সুবহা খুব শক্ত করে তামিমকে জড়িয়ে ধরে! এতোটাই শক্ত করে ধরে যে তামিম রীতিমতো বোকা বনে যায়! তার পরী তাকে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরেছে! তাও তার স্টাইলে, পারমিশন নিয়ে! তামিমের শরীরের অনুভূতি গুলো আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে!
” তুমি কী নে’শা করছো বউ!”
” তামিমের নে’শায় ধরেছে আমাকে! ”
সুবহা এমন আবেগ ভর্তি কথায় তামিম ও আর নিজের মধ্যে থাকে না! তামিম ও খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুবহাকে! তামিমের হাত সুবহার শরীরে বিচরণ হওয়া শুরু করতে করতে থেমে যায়!
” যা করছো ভেবে করছো তো পরী!”
” ভালোবাসা ভেবে চিন্তে হয় না তামিম!”
” বুঝো কিন্তু! আমি সিরিয়াস হলে আর সারা জীবন মুক্তি পাবা না!”
সুবহা তামিমকে ছেড়ে দিয়ে তার টিশার্টের ভেতরে ঢুকে পড়ে! আর তামিমের বুক বরাবর কি’স করে! তামিম চোখ বন্ধ করে ফেলে!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” তোমার আর নিস্তার নেই পরী! ৮ সেকেন্ড ও সময় পাবা না আর!”
তামিম সুবহাকে নিজের টিশার্ট থেকে বের করে কোলে তুলে নেই! সুবহা ও নিজের পা দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তামিমের কোমর!
” প্রতিরাতে কাঁদার জন্য রেডি হয়ে যাও পরী!”
তামিমের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না সুবহা নিজ থেকে তার এতো কাছে এসেছে! যাকে পাওয়ার জন্য তামিম এতো কিছু করলো সে নিজ থেকে ধরা দিচ্ছে! কোনো জোরাজোরি ছাড়ায়! তামিম যেনো সুবহার চোখে হারিয়ে যাচ্ছে! আজকে সুবহার চোখে তীব্র বাসনা দেখতে পাচ্ছে তামিম!
সুবহা কোনো কথা না বলে তামিমের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দেই! খুব শক্ত করে তামিমের গলা ধরে! সুবহাকে এতো উন্মাদ হতে দেখে তামিম ও মুডে চলে। সে ও সুবহার সাথে উষ্ঠাধরের লড়াইয়ে নেমে পড়ে!সুবহার ওজন কম হওয়ায় তাকে কোলে নিয়ে থাকতে কোনো সমস্যাই হয়নি তামিমের! বরং আরো ভালোই হয়েছে!
তামিম পুরোপুরি মত্ত থাকে সুবহার মাঝে! সুবহার হাত ও তামিমের শরীরে বিচরণ হতে থাকে! একজন আরেকজকের সাথে এতোটাই মিশে ছিলো যে অন্ধকারে কেউ বলবে না তারা দু-জন এখানে!
হঠাৎ কয়েকটা পায়ের কদম তাদের দিকে এগিয়ে আসতেই দু-জনের ধ্যান ফিরে আসে! হসপিটালের ছাদে তারা যে অঘটন ঘটাতে যাচ্ছিল সেদিকে কোনো ধ্যানই ছিলো না তাদের!
তামিম সুবহাকে কোল থেকে নামিয়ে তার ড্রেস ঠিক করতে থাকে! সুবহা ও তামিমের টিশার্ট ঠিক করে দেয়!
” বাকিটা বাড়ি যেয়ে!”
সুবহা রীতিমতো তামিমকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিচে নামতে থাকে!
” আমার মন তো ফেরত দিয়ে যা ছেমরি!”
তামিম হাসতে থাকে সুবহার লজ্জা পাওয়া দেখে! সে যে এতোক্ষণ নিজের মধ্যে ছিলো না তা সুবহাকে দেখলেই বোঝা যায়! ।।
সুবহা যেতেই তামিমের পঞ্চ পান্ডব এসে হাজির হয়! পথে সুবহার সাথে তাদের দেখা হলে ও সবাই মাথা নিচু করে ফেলে! সুবহা ও শরমে লাল হয়ে যায়! কোনো রকম লিফটে উঠে!
” ভাই আপনি এতো ঘামছেন কেন! কী করতাছিলেন!”
তামিম দরজার দিকে তাকিয়ে খুব নেশাত্ত গ’লাতে বলে।
” এক্সোসাইজ”
তামিম মাহিরের পকেট থেকে তার কালো চশমা বের করে পড়ে ফেলে! আর মুখের ঘাম মুছতে মুছতে যেতে থাকে!
” এতো রাতে ভাই-ভাবি ছাদে কীসের ব্যায়াম করতাছিলো!”
” প্রিরিতের ব্যায়াম সাকিব! প্রিরিতের!”
পঞ্চ পান্ডব যে যার মতো লজ্জায় পড়ে যায়!
” শরম! শরম এসব বলতে হয় না শা*লা!’
” না শুধু করতে হয়!”
সুবহা একাই লিফটে উঠে! তার ভাইয়ের কেবিন ছিলো ৩ নং ফ্লোরে! আর সে ছিলো ১৪ নং ফ্লোরে! মোটামুটি এতো রাতে লিফটে থাকতে ভয় লাগছিলো তার! ছোটোবেলা অনেক শুনতো! গভীর রাতে আত্মা গুলো হসপিটালের লিফটে ও উঠে! মনে মনে দোয়া কালাম পড়তে থাকে সুবহা! আর যায় হোক ভু্ূতের সাথে যেনো সাক্ষাৎ না হয়!!
হঠাৎ ১২ ফ্লোরে আসতেই লিফট বন্ধ হয়ে যায়! সুবহার কলিজার পানি শুকিয়ে যায়! আজকে আর ভুতের সাথে দেখা হওয়া থেকে কেউ তাকে বাঁচাতে পারবে না!
ডোর অপেন হতেই সুবহা দেখে তামিম দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! তারপর তামিম ভেতরে ঢুক পরে! তামিম ঢুকেই একদম ফাস্ট ফ্লোরের বাটন ক্লিক করে!
” এতো তাড়াতাড়ি নিচে এলেন কীভাবে? ”
তামিম কোনো কথা না বলে সুবহার কোমর জাপ্টে ধরে!
” তেমার ভালোবাসার পাওয়ার বেইবি!”
” বেইবি?”
” আমার বেবি, একমাত্র বেবি! আসো পাপ্পা দেই!”
” তামিমমম! এটা হস…..!”
” হুসসস! রোমান্সে একদম ডিস্টার্ব করবে না! না-হলে মে’রে নিজের হাতে কব’র দিবো!”
” থ্রেট দিচ্ছেন?”
” ধরো তাই!”
” ভয় পেলাম না!”
তামিম হেঁসে আবার সুবহার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে
দেই!
সুবহা ও তামিমের থেকে কম কীসে! সে ও তামিমের সাথে মেতে উঠে!
হঠাৎ ৩ নং ফ্লোরে আসতেই লিফট বন্ধ হয়ে যায়! তামিম ও সুবহাকে ছেড়ে দেয়! সুবহা ও মনে মনে আফসোস করে। তামিম আসার আগে সে যে ৩ নং ফ্লোরে ক্লিক করে রেখেছিলে সেটা ক্যানসল করতেই মনে নেই তার!
তামিম কোনো কথা না বলে সুবহাকে কোলে তুলে নেই! আর তাকে বলে চুপচাপ থাকতে, কোনো কথা বলতে না!
তামিম সুবহাকে নিয়ে সোজা তার ভাইয়ের কেবিনে ঢুকে যেখানে তার আম্মা উপস্থিত ছিলো!
” কী হয়েছে বাপ! সুবহা তোর কোলে কেন? আজকে ও হার্ট অ্যাটাক করছে?”
” না আম্মা,, পড়ে যেয়ে ব্যাথা পাইছে পায়ে! চলেন আপনাদের বাড়ি নিয়ে যায়! ”
” কিন্তু ওর ভাইয়ের কাছে! ”
” নার্স, ডাক্তার, বডিগার্ড সবাই আছে আম্মা! কাল সকালে দু-জন আইসেন!”
আয়েশা বেগম তেমন কিছু চিন্তা না করে রাজি হয়ে যায়! রাত প্রায় ১:২০ মিনিট! এখনো অনেক রাত বাকি! সুবহার ভাইয়ের অবস্থা ও অনেকটাই ভালো! সবাই একসাথে না থেকে বাড়ি যাওয়ায় উত্তম!
তামিম বডিগার্ড সহ আয়েশা বেগমকে পাঠিয়ে দেই বাড়ির উদ্দেশ্যে! আর সুবহাকে নিয়ে খোলা জীপের কাছে যায়! জীপের কাছে যেতেই তামিম দেখে তার পঞ্চ পান্ডব সেখানে আগে থেকেই বসা! শুধু সামনে তামিমের সিট রয়েছে!
” ভাই, ভাবিসাপের লাইগা গাড়ি আনামু? এখানে সিট তো ৫ জনের আমাগো! ”
” ওর ব্যক্তিগত সিট আছে! ”
তামিম সুবহাকে কোলে নিয়ে সামনের সিটে বসে পড়ে। তামিম সুবহাকে নিয়ে বসতেই বাকিরা সিটি বাজাতে থাকে! ভিষণ লজ্জা পায় সুবহা! তামিম ও খুব এনজয় করে বিষয়টি!
” চুপ কর শা’লার ভাইরা! আমার বউ শরম পাইতাছে!”
” আজকে একটা বউ নাই দেইখা, কাউরে কোলে নিবার পারি না!”
” আজ অব্দি একটা মাইয়া পটাইতে পারে নাই, সে আবার বউ খুজে। কর রঙ্গ দেখাবি রে মানিক!”
” বোমমমমমমমমমমমমমাাাাাাা!”
” কাললললললললললললা'”
সাকিব আর মানিকের কান্ড দেখে সুবহা ও হেঁসে ফেলে!
” ওরা একটু জা’উরা বুঝছো বউ, কিন্তু দিল অনেক ভালো!”
” বুঝলাম না,, ভাই তারিফ করলো না-কি অপমান! ”
সাকিবের কথা শুনে তামিম সহ বাকিরা আবার অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে! তাদের সাথে সুবহা ও তাল মেলাতে থাকে!
গাড়ি চলতে চলতে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়! মাহির নেমে চেক করে গাড়িতে পেট্রোল নেই!
” ভাই গাড়িতে তেল শেষ! ”
” অশিক্ষিত ওইটারে পেট্রোল কই!”
” তোর সাউ*****!”
” ছি::: নোংরা ছেলে!”
তামিমের কোলে যে সুবহা বসা, এটা সাকিব আর মাহির ভুলেই গেছিলো! পরক্ষণেই তারা নিজেদের জী’প কাটে!
” ভাবিসাপ কিছু মনে কয়রেন না আমরা নাদান মানুষ! ”
সুবহা ও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়! সকলে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে! সুবহা তামিম ও! তারা ফোন দিয়ে নতুন গাড়ির ব্যবস্থা করতে থাকে! আর অন্য দিকে তামিম সুবহাকে নিয়ে একটু দূরে দাড়ায়!
ল্যাম্পপোস্টের আলোতে চারপাশটা মোটা ভালোই দেখা যাচ্ছে! আরশিনগর যে একটা উন্নত শহর সেটা রাতের বেলা বের হলেই বোঝা যায়!
রাতের ঠান্ডা আরশি নগরের সাথে দিনের কোলাহল পূর্ণ আরশি নগরের কোনো মিল নেই বললেই চলে!
গাড়িটা ও এমন জায়গায় দাড় করার চারপাশে খোলা মাঠ, বাঁশ ঝাড়, আর গাছপালায় ভরা!
পঞ্চ পান্ডব সুন্দর মতো তাদের কাজ করতে থাকে, আর তামিম সুবহা দূরে দাড়িয়ে রাতের প্রকৃতি দেখতে থাকে!
” আমি তো এখানে বাঁশ ঝাড় ছাড়া কিছুই দেখতাছি না সুবহা! ”
” কেন? আপনি কী অন্য কিছু খুজছিলেন?”
” আয় বাঁশ ঝাড়ে যায়!”
” কীহহহহহহ!”
তামিম হঠাৎ করে সুবহার হাত ধরে টান দিয়ে বাঁশ ঝাড়ের দিকে নিয়ে যেতে থাকে! আর অন্য দিকে সুবহা ও তামিমের হাত ধরে তাকে থামানোর চেষ্টা করে!রীতিমতো একজন আরেকজনের হাত ধরে টানাটানি করতে থাকে!
” এমন করিস না বোনই, আমার তর সইতাছে!”
” তাই বলে বাঁশ ঝাড়ে?”
” আরে বেডি চুপচাপ আয়!”
” আরেহহ! আপনি আমার হাত ছাড়েন ভাই!”
” স্বামী ডাকলে যাইতে হয়!”
” তাই বলে বাঁশ ঝাড়ে!”
” আরেহ আয় বেডি! কেউ দেখবে না!”
তামিম সুবহার হাত ধরে টানে, অন্য দিকে সুবহা তামিমের হাত ধরে টানে! দু-জনের মধ্যে রীতিমতো যুদ্ধ হতে থাকে! কিন্তু তামিমের শক্তির কাছে সুবহার শক্তি কিছুই না! তাই তামিমের রীতিমতো সুবহাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে!
‘” আই হাই! দেখছোস নি কারবার! ভাই ভাবিরে মা’ইরা বাঁ’শ ঝাড়ে পুততে যাইতাছে!”
সাকিব খুব জোড়ে জোড়েই কথাগুলো বলতে থাকে!
” যেমনেই হোক ভাবিরে বাঁচাইতে হইবো! লাগা দৌড় শা’লার ভাইরা!””
পাঁচ জনই চোখ বন্ধ করে ঘোড়ার স্পিডে দৌড় লাগাই! আর ৩ মিনিটের মাথায় সুবহা তামিমের কাছে পৌঁছে গোল হয়ে দাড়ায়!
‘” ভাই, আমরা থাকতে আপনে ভাবিরে মাই’রা বাঁশ ঝাড়ে চাপা দিতে পারবেন না!”
” হো ভাই, লাগলে আপনের পায়ের তলায় বো’ম ফালামু!”
তামিম আর সুবহা চুপচাপ মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকে! তার এই পাঁচ পাগলের কথা শুনে তামিম চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে!
” আমি আমার বউরে বাঁশ ঝাড়ে পুঁততে যাইতাছিলাম?”
” হো ভাই! আমরা নিজ চোক্ষে দেখছি!”
” কে বলছে এইটা?”
” সাকিব্বাহ! ”
তামিম সুবহার হাত ছেড়ে দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে লাঠি খুঁজতে থাকে! তারপর একটা চিকন কোমচি পায়ের তলায় পেয়ে যায়! তামিম সেটা নিয়ে নেই!
” ভাই ক্ষেপছে! পালারে শা’লার ভাইরা!”
পাচ জন পাঁচ দিকে দৌড় লাগায়! তামিম ও লাঠি নিয়ে তাদের তারা করতে থাকে! সুবহা প্রথম বার তামিম আর তার লোকদের এসব পাগলামি দেখছিলো! হাসতে হাসতে সুবহার শরীরে কম্পন শুরু হয়ে যায়!সুবহা ও তামিমের পিছু নেই! তাকে আটকানোর জন্য!! কিন্তু তারা পাঁচ জনই তাদের মতো পাগলামো করতে ব্যস্ত!
সাকিব আর মাহির সোজা পুকুরে ঝাপ দেই! আর মানিক, রফিক, মফিস গাছে উঠে! পড়ে। তামিম সোজা পুকুরের সামনে দাড়িয়ে পড়ে! সুবহা চলে আসে সেখানে!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৪
” ভাই পানি অনেক ঠান্ডা! ”
“” ও ভাবি, আমাগো বাঁচান! “”
” আজকে তোগো ছাল তুলে ছাড়বো!”