তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ১৩

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ১৩
অহনা আক্তার

এরশাদ তালুকদারের রুমে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে মুসকান। কারণ একটাই ফারিশ তাকে পরীক্ষা দিতে দিবেনা বলেছে। নাতনির কান্না দেখে এরশাদ তালুকদার ক্ষেপে গেলেন। উত্তেজিত কণ্ঠে ফারিশকে বললেন,
— আমার নাতনি কাঁদছে কেন এভাবে ? তুমি কি বলেছো ওকে?
পেন্টের পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে দাঁড়ালো ফারিশ। মুসকান কে তীক্ষ্ণ চোখে একবার পরক করে সরু গলায় বলল,

— আপনার নাতনি কবে না কাঁদে? উঠতে কাঁদে, বসতে কাঁদে, কথা বললে কাঁদে, কথা না বললে কাঁদে, খেতে গেলে কাঁদে, ঘুমাতে গেলে কাঁদে, চু*মু দিলে কাঁদে,
আ/দর দিলেও কাঁদে, মনে হয় কাঁদার উপর পিএইচডি আগে থেকেই করিয়ে রেখেছেন।
ফারিশের কথা শুনে মুসকান কাঁদার মাঝে বিসম খেয়ে ওঠলো। চোখ বড়সড় করে সমানে কাশতে শুরু করল। এরশাদ তালুকদার দ্রুত নাতনির দিকে পানি ভর্তি গ্লাস এগিয়ে দিলেন। নাতনির পিঠে হালকা চাপড় মেরে কাশি থামানোর চেষ্টা করলেন। নিজেও থতমত খেয়ে বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— এসব কি অ’সভ্যের মতো কথা বলছো?
— যা সত্যি তাই বলছি। বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করুন আপনার নাতনি কে,, শুধু শুধু কাঁদছে কেন?’
— তুমি নাকি বলেছো আমার নাতনি কে আর পড়তে দিবে না?
ফারিশের ভাবলেশহীন জবাব,
— হ্যা বলেছি। বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর পড়ে কি লাভ। বাচ্চা কাচ্চাকে এ বি সি ডি শিখাতে পারলেই হলো।
এরশাদ তালুকদার তেতে উঠলেন,
— তুমি কে আমার নাতনি কে পড়তে না দেওয়ার?
— কেন আপনার সুন্দরী নাতনির একমাত্র সুদর্শন হাসবেন্ড। নিজে বিয়ে করিয়ে নিজেই ভুলে গেছেন?
এরশাদ তালুকদারের রাগ শেখরে পৌঁছে গেল। উচ্চস্বরে বলল,
— আগে যদি জানতাম তুমি এমন অ’সভ্য তাহলে আমি কখনোই আমার নাতনি কে তোমার সাথে বিয়ে দিতাম না।
— এখনতো জানেন । এবার নাতনি দিয়ে দেন আমি বাড়ি চলে যাই।
— অ’সভ্য ছেলে..

এরশাদ তালুকদার রেগে ফারিশের দিকে এগুতে নিলে জামিল আব্বাজান বলে ঘরে ঢুকে। জামিলের পিছু পিছু বাড়ির সকলেই হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে। সবগুলো এতোক্ষণ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আড়ি পেতে তাদের কথা শুনছিল। জিন্নাত গিয়ে সরাসরি ভাতিজার পাশে দাঁড়ালো। শাসানো স্বরে বলল,
— এতো কথা বলিস কেন? চুপ থাকতে পারলি না! আব্বাজান মুখে মুখে কথা বলা পছন্দ করেন না। রেগে যান।
ফারিশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
— তো আমি কি করব? আমি কি বলেছি রেগে যেতে!
জিন্নাত মুখ লটকালো। এই ছেলেকে কিছু বলাও বেকার।
ভয়ে মুসাকনের কান্না কখনই বন্ধ হয়েগেছে। ফারিশ যে দাদুর মুখে মুখে এভাবে কথা বলবে এটা সে স্বপ্নেও কল্পনা করেনি।
জামিল নরম ভয়েসে তার আব্বাজান কে ঠান্ডা করার চেষ্টা করল,

— আপনি থামেন আব্বাজান। এতো উত্তেজিত হবেন না।
এরশাদ তালুকদার আরো রেগে যান,
— রাখ তোর থামাথামি। মুসকান লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় সেখানে এই ছেলে বাঁধা দেওয়ার কে?
এবার ফারিশও ক্ষেপে গেল। ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে বলল,
— স্বামীর পা থাকতে নিজের পায়ে দাঁড়াবে কেন? শুধু শুধু স্কুল যাবে, কলেজে যাবে, নিত্যনতুন মানুষদের সাথে পরিচয় হবে, নতুন নতুন বন্ধুবান্ধব হবে! আমিতো দূরে থাকবো! ওহ এখানে থেকে পড়াশোনা করবে.… বয়স কম এমন ওতো হতে পারে কারো সাথে প্রণয়ে জড়িয়ে গেলো! তারপর আমার কি হবে? আমি আমার বাচ্চা বউ নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে পারবো না।

মুসকান তব্দা খেয়ে গেলো। ঘরের সকলেই হা করে আছে। ঘরভর্তি মানুষের সামনে কি এক বোমা ফাটিয়ে দিল ফারিশ। মুসকান আড়চোখে তার দাদুর দিকে একবার তাকালো। তিনিও তার মতো তব্দা খেয়ে বসে আছে। এই লোকটা আসলেও নি’র্লজ্জ। মুখে যা আসে তাই বলে। সে কি প্রেম করার জন্য পড়ালেখা করবে নাকি। সেতো পড়তে ভালো লাগে তাই পড়বে। তাকে বিন্দুমাত্রও বিশ্বাস করেনা লোকটা ছিঃ,ছিহ!
ঠোঁট ভিজিয়ে বোকা হাসল জামিল। আব্বাজানের দিকে তাকিয়ে নমনীয় কণ্ঠে বলল,
— ওহতো ভুল কিছু বলেনি আব্বাজান?ভেবে দেখা উচিৎ!
ছেলেকে এক ধমক দেন এরশাদ তালুকদার। ফারিশের দিকে তাকিয়ে খিটখিটিয়ে বলেন,

— দাদু তুমি নিশ্চয়ই তোমার বউ নিয়ে একা চিন্তিত নও। আমরাও চিন্তা করি। আর আমি আমার নাতনিকে চোখ বুঝে বিশ্বাসও করি। আমার নাতনি কখনো ভুল পথে পা বাড়াবে না।
ফারিশ কিছু বলতে নিলে এরশাদ তালুকদার তাকে হাত উঠিয়ে থামিয়ে দেন। কড়াকড়ি ভাবে বলে দেন,
— আমার নাতনির কোনো ইচ্ছা আমি অপূর্ণ রাখিনি এটাও রাখবো না। সে যতটুকু পড়তে চায় পড়বে।
ফারিশ আর দাঁড়ায় না। রেগেমেগে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

দুরুদুরু বুক নিয়ে নিজের রুমের দিকে এগুচ্ছে মুসকান। ফারিশ রেগে তার রুমেই বসে আছে। দাদুর জেদের সাথে পেরে ওঠেনি বলে সাংঘাতিক ক্ষেপে আছে। মুসকান আলতো পায়ে হেঁটে গিয়ে ফারিশের পাশে দাঁড়ায়। ফারিশ তখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শার্টের কলার ঠিক করছে। কিছুক্ষণের মাঝেই বেড়িয়ে পরবে। মুসকান আমতা আমতা করছে। কিছু বলতে চাইছে অথচ বলার সাহস পাচ্ছে না। ফারিশ বাঁকা চোখে তাকায়। চুলগুলো সেট করতে করতে বলে,

— কিছু বলবে?
মুসকান সাহস পেলো। আলতো স্বরে বলল,
— আপনি কি এখনি চলে যাবেন?
— থেকে কি করবো?
মুসকানের চোখ ভরে ওঠলো,
— আমি ওরকম করব না বিশ্বাস করেন।
ফারিশ শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়,
— কি রকম?
— ওই যে কোনো ছেলের সাথে প..প্রণয়ে…
— এর চিন্তাও যেন মাথায় না আসে !! মেরে হাড্ডিগুস্ত আলাদা করে ফেলব।
মুসকান ঢুক গিলল,

— আবার কবে আসবেন?
— আসবো না।
মুসকানের চোখের কার্নিস ফুলে ওঠছে,
— এমন করছেন কেন?
— কেমন করছি?
— সত্যিই কি আর আসবেন না?
— এলে কি খাওয়াবে?
— কি খেতে চান বলেন?
— মধু,,,,,
মুসকান থম মেরে গেলো। ফারিশ বাঁকা হেসে বলল,

— কি হলো খাওয়াবে তো মধুওও? আশা করি কোন মধু বুঝতে পারছো?
মুসকান স্তব্ধতায় কেঁপে ওঠলো । গাল দুটি জলে ওঠলো সাথে সাথে। ফারিশ দুষ্টু কণ্ঠে বলল,
— কাল আসবো মধু খেতে। রেডি রেখো…
মুসকান বলার মতো কিছুই খোঁজে পেল না। কেবল শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে রইলো। শরীরের প্রতিটি পশম শিরশির করছে তার।
ফারিশ আর লজ্জা দিল না। কথা ঘুরিয়ে বলল,
— এক্সাম আর কতোদিন চলবে?
— এইমাস পুরোটা।
— কালকে আছে?
মুসকান উপর নিচ মাথা দুলালো। ফারিশ ডানেবামে খোঁজে নিজের ফোনটা হাতে নিল। মুসকানের দিকে বারিয়ে দিয়ে বলল,

— ধরো। এটা তোমার। দু’বারের বেশি কল দিয়ে যদি না পাই তোমার দাদু ফাদুর জেদ মানবো না। যেথায় থাকবে সেথায় গিয়ে থা*প্পড়িয়ে আসব।
মুসকান ঝাঁকি দিয়ে হাত সরিয়ে ফেলল। দ্রুততার সহিত বলল,
— আমি আপনার এই যন্ত্রে ভুলেও স্পর্শ করব না। এটাকে আমার থেকে দূরে সরান।
ফারিশের কপালের মধ্যাহ্নে ভাজ পরে,
— কেন?
— আপনার মনে নেই এটার জন্য যে আপনি আমাকে কতোগুলো ধমক দিয়েছিলেন! কিভাবে বকে ছিলেন!
সেদিনই আমি প্রতিজ্ঞা করেছি আপনার ফোনে ভুলেও হাত লাগাবো না।
ফারিশ ক্ষীণ হাসে। ঠোঁট উঁচিয়ে বলে,

— আরে ওটাতো অন্যায় করেছিলে তাই বকে ছিলাম। এখনতো আমি নিজে দিচ্ছি। এটা এখন থেকে তোমার কাছেই থাকবে। বেশিদিন হয়নি কিনেছি যে। আমার এক বন্ধুকে দিয়ে বাইরে থেকে আনিয়েছি। এখন গিয়ে নতুন ফোন কিনে আবার তোমাকে দিয়ে যেতে বেশ সময় লেগে যাবে। তাছাড়া আমিও ব্যস্ত থাকবো। আসা সম্ভব নয়। তার চেয়ে ভালো এটা রাখো। আমি নতুন সিম টিম সব লাগিয়ে দিয়েছি।
— কিন্তু আমি এতো দামি ফোন দিয়ে কি করব?
ফারিশ ধমকে বলল,

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ১২

— পিরিত করবে স্বামীর সাথে ধরো !!
ফারিশের ধমক খেয়ে ফামুসকান ত্বরিতে ফোনটা হাতে নিল। ফারিশ মৃদু হাসল। আলতো করে মুসকানের গাল দুটোতে হাত রেখে কপালে চু’মু দিল। শান্ত স্বরে বলল,
— রাতে কল দিবো। ভালো করে এক্সাম দিও। ভালো থেকো। আর আমাকে অনেক অনেক মিস করো কেমন। আসছি।
ফারিশ চলে গেলো। মুসকানকে ভাসিয়ে দিয়ে গেলো নতুন এক অনুভূতির সাগরে..

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ১৪