ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ১
মাহিরা ইসলাম মাহী
আদ্রিত তার ক্লাসমেট মাহফুজ কে সবার সামনে বেদম পিটিয়ে নাক ফাটিয়ে ফেলার জোগাড় প্রায়। গার্জিয়ান কল করা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিস্তব্ধ-তাসফি এবং মাহীন-বাসন্তী অপরাধী মুখ করে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে।
আদ্রিত কে যখন প্রশ্ন করা হলো সে কেন মেরেছে মাহফুজ কে।
আদ্রিত শিরদাঁড়া উঁচু করে তেজী কন্ঠে বলে উঠলো,
“ ওও মাহরিসার হাত কেন ধরবে? কে পারমিশন দিয়েছে ওকে?হু আর ইউ?”
প্রধান শিক্ষক সহ নিস্তব্ধ-তাসফি, মাহীন-বাসন্তী হতবাক হয়ে চেয়ে রয় বারো বছরের আদ্রিতের মুখশ্রীপানে।ছেলেটা একদম ভাবলেশহীন মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে দুই হাত পিছু মুড়ে।
তাকে দেখে এক ফোঁটাও বোঝার উপায় নেই সে খানিকক্ষণ আগে একজনকে মেরে নাক ফাটিয়ে কি কেলেংকারী টাই না ঘটিয়েছে।
তাসফি ধমকে উঠলো ছেলেকে।
“ শাটআপ।এটা তোমার কেমন ব্যবহার আদ্রিত? সরি বলো।স্যারকে সরি বলো।সরি বলো মাহফুজ কে।”
আদ্রিত এক ফোঁটাও নড়লো না জায়গা থেকে, আর না তো মাথা নুয়ালো।আর না তো সরির ‘স’ টাও উচ্চারণ করলো।
নিস্তব্ধ ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
“ আ’ম এক্সটেমলি সরি স্যার।আসলে ছোট মানুষ বুঝতে পারে নি।এরকম ভুল আর রিপিট হবে না আমরা কথা দিচ্ছি আপনাকে।”
প্রধান শিক্ষক গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“ দেখুন ডাক্তার নিস্তব্ধ আমরা বুঝতে পারছি আপনাদের ব্যাপারটা।কিন্তু এরকম হলে কিন্তু বিপদ হয়ে যাবে।এমনিতে আদ্রিত যথেষ্ট বিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট বাট দু দুবার একই কাজ করা তো স্বাভাবিক কিছু নয় তাই না? এর আগেও একবার সে কিন্তু একই কাজ করেছে নিস্তব্ধ।
এর আগেও সে ক্লাস ফোরের একজন স্টুডেন্ট কে সকলের সামনে থাপ্পড় মেরেছে। তার অপরাধ ছিল মাহরিসার আর্টের খাতায় হাত দেওয়া।“
তাসফি আকুতি করে বলল,
“ দেখুন স্যার আমরা বুঝতে পারছি। সামনেই ওর পরিক্ষা আর তো দুটো মাস।প্লিজ স্যার আমাদের উপর ভরসা রাখুন ভবিষ্যতে এ কাজের পুনরাবৃত্তি হবে না আমরা কথা দিচ্ছি।এখন তো ওকে কোথাও ট্রান্সফার করাও সম্ভব নয়। “
আদ্রিত চোয়াল শক্ত করে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ আর আমি কোথাও ট্রান্সফার হচ্ছিও না মা।”
নিস্তব্ধ ছেলের পানে রাগী চোখে চেয়ে সুধালো,
“ বড়রা কথা বলছে আদ্রিত।তোমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে? কি হলো স্পিক আপ।
বড়দের মাঝে কথা বলতে নেই, শিখায়নি তোমায়? সরি বলো?”
“ সরি পাপা।”
“ স্যারকে সরি বলো, এরকম আর করবে না প্রমিস করো।”
আদ্রিত বললো না।
তাসফি উঠে এসে ছেলের গালে ঠাস করে চর মারলো। চোখ লাল করে বলল,
“ কি হলো? সরি বলো স্যারকে।প্রমিস করো।”
“ সরি।তবে প্রমিস করতে পারছি না।আর ওই ইডিয়েট টাকে সরি বলার প্রশ্নই আসে না।”
বলেই আদ্রিত তাসফির হাত ছাড়িয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল।
নিস্তব্ধ-তাসফি দুজনেই হতাশ শ্বাস ছাড়লো।
তাসফি আজকাল ছেলেকে নিয়ে বড্ড চিন্তায় থাকে।তার মনে হচ্ছে ছেলেটা তার দিন দিন বড় হচ্ছে আর নিজের সামনে একটা অদৃশ্য দেওয়াল গড়ে তুলছে।যেখানে তাদের সকল শাসন চলে।কিন্তু আদ্রিতের নিজে গড়া অনুভুতির মাঝে তাদের শাসন চলে না। তখন ছেলেটা যেটা করবে সেটাই সঠিক।
আদ্রিত মাহরিসার প্রতি যে অনুভূতি দেখায় অন্য কারো প্রতি তা দেখায় না। এমনকি নিজের বোনের বিষয়েও এতটা নাক গলায় না যতটা না সে মাহরিসার বেলায় গলায়।বিষয়টা তাকে বড় ভাবনায় ফেলে।এগুলো তো ভালো লক্ষণ নয় মোটেও।
মাহরিসা এক পাশে দাঁড়িয়ে ভয়ে কান্না করেই যাচ্ছে। আহাঃ! তার জন্য আদু ভাইয়ের এখন কত বকা খেতে হচ্ছে। তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে কি না।
মাহীন নিস্তব্ধ কে বলল,
“ চিন্তা করিস না দোস্ত সব ঠিক হয়ে যাবে।আমরা বোঝাবো ওকে।বাচ্চা তো বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে।”
বাসন্তী আর মাহীন মাহরিসা কে নিয়ে বেরিয়ে গেল কক্ষ ছেড়ে।
নিস্তব্ধ তাসফিও স্যারকে সালাম জানিয়ে বেরিয়ে এলো একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তার কথা দিয়ে।
তারা সে কথা কতটুকু রাখতে পারবে কে জানে।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে তাসফি নিস্তব্ধকে হুশিয়ারি দিয়ে বলল,
“ বাড়ি গিয়ে ছেলেকে শাসন করবেন।সব হয়েছে আপনার লায় পেয়ে পেয়ে।।আপনি ভাবতে পারছেন আদ্রিতের জন্য মাহরিসা কতটা ভয় পেয়ে আছে। কীভাবে কান্না করছিলো বেচারী।”
নিস্তব্ধ অসহায় কন্ঠে বলল,
“ আমি আর কি করতে পারি বলো।”
তাসফি নিস্তব্ধ’র পানে লাল চোখে চেয়ে সুধালো,
“ আমি কি করতে পারি মানে।ছেলেকে দুটো চর থাপ্পড় মেরে ঠিক করবেন।”
“এই কথায় কথায় ছেলে মেয়ের গায়ে হাত তোলা বন্ধ করলে হয় না জান?”
“ না হয় না।”
“ কেন হয় না? ছেলেকে একটু আদর করে বোঝাতে পারো তো নরম স্বরে।”
“ পারবো না।”
নিস্তব্ধ দুষ্টু হেসে সুধালো,
“ কেন পারবে না শুনি? এই যে আমি রেগে গেলে আমায় জরিয়ে ধরে আদর দাও তখন কি করে পারো?”
“ এই থামবেন আপনি? সব সময় অসভ্য অসভ্য কথাবার্তা। ভালো হবেন কবে?”
“ ইহজনমে নয়ে পরকালেও নয়ে তোমার সনে এই নিস্তব্ধ ইয়াসার সর্বোক্ষণ তোঁতাপাখি বুঝলে।”
“আসছে।”
নিস্তব্ধ তাসফির কাঁধ আলতো জরিয়ে ধরে মুচকি হেসে বলল,
“ তুমি কি এখনও বুঝতে পারো নি বউ আদ্রিতের অনুভূতি। “
তাসফি অবাক কন্ঠে বলল,
“ অনুভুতি বুঝবো মানে? এইটুকু বয়সে কিসের অনুভূতি? “
“ অনুভূতি এক অন্য রকম অনুভুতি যা বিয়ের পর তোমায় প্রথম দেখে আমার হয়েছিল ভালো না বেসেও, সেই অনুভূতি। এই অনুভূতি জন্মাতে বয়সের পরিপক্ব হতে হয় না বউ।”
তাসফি তার ডাক্তার সাহেবের কাঁধে মাথা রেখে সুধালো,
“ কিন্তু সেই অনুভূতি যে বড্ড ভয়ংকর ডাক্তার সাহেব।মাহরিসা অবুঝ,আদ্রিতের পাগলামো তে সে ভয় পাবে।ওর কাছে আদ্রিতের ব্যবহার ভয়ংকর লাগতে পারে।”
নিস্তব্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“ কিছু করার নেই বউ। মাঝে মাঝে আমাদের চোখের সামনে দেখানো অনুভুতির জেয়ার ভুল পথেও চালিত হয়।সব সময় যে আমাদের ভাবনা সত্য হবে এমনটাও নয়।সবটাই জানেন ওই ওপর ওয়ালা।”
তাসফি শক্ত চোয়ালে চেয়ে বলল,
“ আদ্রিতের ব্যবহার মাহরিসার জীবনে যেন কোনো প্রভাব না ফেলে তার ব্যবস্তা আমি করবো ডাক্তার সাহেব।আর কিছু বছর যাক ছেলেটা আমার একটু বড় হোক।
পরের দিন মাহরিসা স্কুলে এলো না।
এর পরের দিন সে স্কলে আসতেই আদ্রিত তার হাত চেপে ধরে বলল,
“ কাল আসিস নি কেন? আমার থেকে পালাতে চেষ্টা করছিলি?”
মাহরিসা কাঁদো কাঁদো মুখ করে ঠোঁট কামড়ে মাথা নেড়ে বলল,
“ না তো।আম্মু নিয়ে আসে নি আদু ভাই।”
“ তুই কি আমায় আদু ভাই ডাকা বন্ধ করবি না?”
“ পারি না”
“ কেন পারিস না? তুই কি এখনো ফিডার খাস?
মাহরিসা সরল মনে বলল
“ খাই না।মাঝে মাঝে সুজি খাই।”
তার মনে কি আর তার আদু ভাইয়ের মত এত প্যাচগোজ আছে নাকি।
“ হ্যাঁ সেই তো তুই তো সুজি খাবিই।সুজি কুমারি কি না। ক্লাসে বসে বসে তো ঠিকই গড়গড় করে ‘সরু অ’ ‘সরে আ’ ক, খ গ,ঘ, ১,২ A,B,C,D আওড়াস। তখন পারিস কেমন করে সেগুলো।
“ পারিনা তো মিস শিখিয়ে দেয়।”
“ ঠিক আছে আমি এখন শিখিয়ে দিচ্ছি শেখ।বল আদ্রিত।”
“ আদ্রুত।”
“ আদ্রুত নয় বল আ।”
“ আ”
“ এরপর দ্রি।”
“ দি।”
“ এরপর ত।”
“ তো।”
“ এবারে বল আ দ্রি ত।”
“ আদিত।”
“ বা’ল বলো? বল আদ্রিত।”
মাহরিসা ঠোঁট উল্টে বলল,
“ আদু ভাইয়া।”
“ থাপড়ে তোমার গাল লাল করে দেব বেয়াদব। ফাজলামো করো তুমি আমার সঙ্গে? “
“ সত্তি করি না।”
“ চুপপ স্টুপিড।”
“ টুপিট।”
“ শাটআপ।”
“ সাটাআপ।”
আদ্রিত মাহরিসার দিকে চোখ লাল করে চাইলো।
মাহরিসা কাঁদো কাঁদো মুখ করে আবার খিলখিল করে হেসে দিলো।
এই যে সে হাসছে।তার আদু ভাইকে রাগাতেই তার ভীষণ ভালো লাগে। তার আদু ভাই যখন তার দিকে রেগে তাকায় তার তখন নাচতে ইচ্ছে করে।কেন এত ভালো লাগে?
মাহরিসা দৌঁড় দিতে নিতেই আদ্রিত তার হাত ধরে বলল,
“ মাহফুজ কে সেদিন মারার জন্য কাঁদছিলি তুই? খারাপ লেগেছে তোর ওর জন্য। “
মাহরিসা ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়লো।
“ লাগেনি।”
“ তো কাঁদছিলি কেন?”
মাহরিসা জবাব দিলো না।
“আদু ভাইয়া পেছনে হাম্বা ।”
আদ্রিত পেছনে চাইতেই মাহরিসা তার হাত ছাড়িয়ে দিলো দৌঁড়।
আদ্রিত তার পানে কটমট করে চেয়ে বিরবিরালো,
“ আজ যাবি না নানা বাড়ি? তখন তোকে মজা বোঝাবো।বেয়াদব।”
সন্ধ্যা আদ্রিত নিজের রুমে বসে পড়ছিলো।
আজ ওসমান ভিলায় সুজন, মাহীন সবাই এসেছে। তার এত হাঙ্গামা পছন্দ নয়।
মাহরিসা তার নাদুসনুদুস শরীরে হাতে একখানা আদর্শলিপি বই নিয়ে তার রুমে ঢুকে আদ্রিতের সামনে নিজের বইখানা রেখে সুধালো,
“ আদু ভাইয়া পড়িয়ে দাও। “
আদ্রিত তার হঠাৎ আগমনে বিরক্ত হয়ে বলল,
“ পারবো না। আমার পড়া আছে।আমাকে না ডিস্টার্ব করলে শান্তি হয় না, না তোর?
মাহরিসা নিজের অবস্থা আরো গেড়ে বসতে আদ্রিতের বিছানায় উঠে বসলো,
“আম্মু বলেছে আমাকে ডিসপাত না করে আদু ভাইয়ের কাছে বই নিয়ে যা পড়তে।”
“ ওটা ডিসপাত নয় বেয়াদব ডিস্টার্ব হবে।”
“ আমার ডিসপাতই ভালো।নাও পড়িয়ে দাও।
আম্মু বলল তেমার আদ্রিত ভাইয়া অনেক বিলিকান্ট তার কাছে যাও।”
“ বিলিকান্ট নয় ইডিয়েট ব্রিলিয়ান্ট।তুই আমার সামনে থেকে যাবি? নয়তো এই স্কেল দিয়ে বাড়ি দিয়ে তোর মাথা ফাটাবো।”
মাহরিসা কাঁদো কাঁদো মুখ করে নাক টেনে বলল,
“ পড়িয়ে দাও আদু ভাইয়া।মিস মারবে। “
আদ্রিত এবারে নড়েচড়ে বসলো,
“ সত্যি বলছিস তো? সত্যিই মারতে চেয়েছে? নাকি বানিয়ে বানিয়ে বলছিস?
“ মারবে সত্যিই।সত্তিই।এই যে এত্ত কানি মারবে দেখ।”
মাহরিসা নিজের দুই হাত ছড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা করবে।
আদ্রিত ঠোঁট চেপে হাসলো।
“ ঠিকআছে পড়।”
আদ্রিত ক, খ পড়ানো ধরতেই মাহরিসা নাকের সর্দি আদ্রিতের পরনের টি-শার্টে মুছে দিলো।
আদ্রিত তার পানে আগুন চোখে তাকালো।যেন এক্ষুনি ভষ্ম করে দিবে তাকে। চিৎকার করে বলল,
“ ইয়াক।এক্ষুনি বের হ আমার রুম থেকে।এক্ষুনি মানে এক্ষুনি। “
মাহরিসা ভয়ে কেঁপে উঠে ততক্ষণাৎ বই ফেলে দৌঁড় লাগালো।
“ অভদ্র মেয়ে। ছিঃ। তার টি-শার্ট টাই নোংরা করে দিলো।”
আদ্রিত রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
নিলয় সাহেব সোফায় বসে পেপার পড়ছেন।
মাহরিসা আদ্রিতের রুম থেকে বের হয়ে কাশফির সঙ্গে খেলছে।
নিলয় সাহেবের অপর পাশে সাদাফ আর নিস্তব্ধতা বসে আছে।
দুজনের হাতেই নুডলস এর বাটি।
নিস্তব্ধতা ফোনে রিলস দেখছে এক মনে আর ফোনের দিকে চেয়েই কাটা চামছে উঠিয়ে মাঝে মাঝে খানিকটা নুডুলস গালে দিচ্ছে।
কিন্তু সাদাফ সে খাচ্ছে না।
তার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে। নিরিবিলির বাচ্চা নিরিবিলি তার সঙ্গে কথা না বলে ফোন দেখবে কি জন্য।
সাদাফ নিঃশব্দে বাটি হাতে উঠে দাঁড়ালো।
টিপটিপ পায়ে সে নিস্তব্ধতার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।
নিস্তব্ধতার মাথায় প্রায় কোমর ছুঁই ছুঁই চুল।
সাদাফ নিঃশব্দে লম্বা নুডুলস গুলো একে একে নিস্তব্ধতার মাথায় সাজাতে লাগলো।
অথচ মেয়েটা কিচ্ছু টের পাচ্ছে না সে এতটাই ফোনে মগ্ন।
সাজানো শেষ হতেই সে নিস্তব্ধতার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত ভাজ করে বলল,
“ কাশফি দেখ তোর নিস্তব্ধতা আপুর মাথার চুল পেকে গিয়েছে সব। যা ধান নিয়ে আয় তো।একএক করে উঠিয়ে দিয়ে সাফ করে দেই।
নিস্তব্ধতা চট করে সামনে তাকালো।
সঙ্গে সঙ্গে মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠলো।
“সজনেডাঁটার বাচ্চা আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।”
নিস্তব্ধতা সাদাফের পেছনে ছুটতে লাগলো।
সাদাফ ছুটতে ছুটতে নিলয় সাহেবের পেছনে এসে দাঁড়ালো।
“দাদু আমায় বাঁচাও প্লিজ।রাক্ষসী রাণী কটকটির হাত থেকে আমায় প্লিজ বাঁচাও। “
“দাদু প্লিজ তুমি ওকে আমার হাতে দিয়ে দাও।আমার মাথার পাকা চুল আজ আমি ওকে খাওয়াবো।”
দুটোতে আবার ছুটতে শুরু করলেন নিলয় সাহেব
বুঝে পেলেন না কাকে রেখে কাকে থামাবেন।”
“ কি হচ্ছে এখানে?”
অনিমা বেগমের হুংকারে দুজনে সঙ্গে সঙ্গে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
অনিমা বেগম এগিয়ে এসে দুজনের দিকে চেয়ে বললেন
“ কি সমস্যা। তোমরা ছোটাছুটি করছো কেন?আর নিহারীকা নুডুলস কি মাথায় রাখার বস্তু? নাকি খাবার জন্য তৈরি করা হয়েছে। “
নিস্তব্ধতা সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়ালো এখন সে কি কি করে বলবে সাদাফের বাচ্চা তার মাথায় এই কেলেংকারী ঘটিয়েছে।দাদুন কখনো বিশ্বাস করবে না।
“ কি হলো উত্তর দাও?”
সাদাফ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো,
“ দাদুন ও আামায় বলল ওর নাকি মাথার চুলগুলো সাদা বানাতে খুব ইচ্ছে তাই তো আমি ওগুলো ওর মাথায় রেখে দিলাম।
এই দেখ আমার মাথায় চুল নেই।আমাকে সুন্দর লাগছে নাকি, ওকে বলো?”
“দাদুভাই তোমায় বলেছিলাম নিস্তব্ধতার কথা শুনবেনা।দুজনে একটুও দুষ্টুমি করবেনা।কিন্তু তোমরা কি করেছ?দাদুনের কথা শুনছ?উহু শুনো নি। তো সেই মেতাবেক এখন তো শাস্তি পেতেই হবে।টিট ফর ট্যাট তাই না দিদিভাই?দুজনে এক পা খাড়া করে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকো বিশ মিনিট।”
নিলয় সাহেব গিন্নির কথায় হাসলেন।
সেই একমাত্র পারে দুটো বিচ্ছুকে সায়েস্তা করতে।
নিস্তব্ধতা সাদাফের দিকে দাঁত কেলিয়ে হাসলো “বেশ হয়েছে এখন কেমন লাগছে। “
“ অনেক ভালো লাগছে”
“ কচু লাগছে।মিথ্যুক কোথাকার।”
আদ্রিতের এসএসসি পরিক্ষার পরের একদিনের ঘটনা।
মাত্রই সে কলেজে পদার্পন করেছে।
বছর পরে সেই গন্ডিও পার করে ফেলবে অনায়াসে।
অনেক গুলো দিন পর আদ্রিত আর মাহরিসার দেখা।
আদ্রিত ভ্রু কুঁচকে সোফায় জড়সড় হয়ে বসে থাকা মাহরিসা কে দেখলো।
মেয়েটা দিন দিন কেমন। ফুলে ফেঁপে উঠছে ঠিক বর্ষায় বাড়া জোয়ারের পানির ন্যায়।
মেয়েটা কথায় কথায় আগের মতন আর ঠোঁট উল্টায় না। কেন উল্টায় না? মেয়েটার কাচুমাচু মুখ দেখতে যে তার আদু ভাইয়ের ভালো লাগে না সেটা কি বোকা মেয়েটা বোঝে না? যাকে কিছু বলার সঙ্গে সঙ্গে কাঁদো কাঁদো মুখ করে,ঠোঁট উল্টে তাকাতো তার তো সেই ছোট মাহরিসা কেই ভালো লাগতো।কেন বুঝে না বোকা মেয়েটা।
আদ্রিতের হৃদয়ের উথাল-পাতাল ঢেউ তোলানো ধ্বনি কি মেয়েটা শুনতে পায়না? কেন পায় না?
আদ্রিত গম্ভীর স্বরে বলল,
“ যা তো আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়।”
জড়সড় হয়ে বসে থাকা মাহরিসা হঠাৎ আদ্রিতের আদেশে চমকে সামনে তাকালো।
আদ্রিতের গম্ভীরর মুখশ্রী দেখে সে আরো চুপসে গেল।
সে আসলে এতক্ষণ আদ্রিতকে দেখেই ভয় পাচ্ছিলো।
আদু ভাইয়া ছোট্ট সময়ের মত আবার তাকে ধমকাবে না তো কথায় কথায়।
মাহরিসা ভয়ে ভয়ে গ্লাসে পানি এনে দিলো।
আদ্রিত গ্লাস হাতে নিতে নিতে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“ ক্লাস সিক্সে পড়িস।এখনই ছেলেদের সঙ্গে এত ঢলাঢলি কিসের তোর?”
মাহরিসা চমকে উঠলো,
“ মা..নে,মা..নে ওও আমার ক্লাসমেট।”
“ তো ছেলে ক্লাসমেটের সঙ্গে তোর এত কি?”
“ আদু ভাইয়া.. আ..আসলে…”
“ সাট আপ। তোকে নিষেধ করেছি না আদু ভাই ডাকতে? আদু কি হ্যাঁ?এখনে বাচ্চা তুই? সুজি তো এখন নিশ্চয়ই খাস না।”
মাহরিসার চোখ ছলছল করে উঠলো।
“ ছেলেদের সঙ্গে যেন তোকে ঢলাঢলি করতে না দেখি? বড় হসনি তুই? নিজের ভালো বুঝিস না।তোর কি মনে হয় সব ছেলে মেয়ে তোর মতো অবলা।”
মাহরিসা মাথা নিচু করে মাথা নাড়লো।
“ আর মিশবি ওদের সঙ্গে?”
মাহরিসা মিহি কন্ঠে বলল,
“ আর মিশবো না।”
“গুড।”
মাহরিসা ছটফটে মনে দ্রুত পালালো আদ্রিতের চক্ষু গোচর হতে।
উফফ।বড় বাঁচা বেঁচে গেছে সে আজ। তার আদু ভাই কেন এমন করে তার সঙ্গে কে জানে।
একটুখানি,এত্তখানি আদুরে স্বরে কথা বললে কি এমন ক্ষতি হবে।মহাভারত তো আর অশুদ্ধ হবে না। তার খাবারে তেলাপোকা ও পায়খানা করবে না।