এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৮
কাফাতুন নেছা কবিতা
সকালের রোদ নেমে এসেছে পাহাড় বেয়ে। হালকা হিমেল হাওয়া বইছে, বাতাসে ফুলের গন্ধ। সুবজ ঘেরা রাস্তা ধরে সাইকেল চালাচ্ছে সুবহা। তার পরনে একটি ফ্লোরাল প্রিন্টের শর্ট গাউন, গাউনটি নড়ে উঠছে হাওয়ায়। চুলগুলো খোলা, আর মুখে এক নির্মল হাসি।
আজ ১ মাস ১৫ দিন হলো সুবহা সুইজারল্যান্ডের গ্রিন্ডেলওয়াল্ডে এসেছে!
গ্রিন্ডেলওয়াল্ড যেনো পরীর রাজ্য। চারদিকে পাহাড়ে ঢাকা, পেছনে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল ইগার পর্বত, যেটা সব সময়েই তুষারে মোড়ানো। গ্রামের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে ছোট ছোট পথ—ল!কখনো পাথরের, কখনো সবুজ ঘাসের। বাড়িগুলো কাঠের তৈরি, জানালার পাশে ঝুলছে রঙিন ফুল।
এই ১মাস ১৫ দিনে সুবহার প্রতিদিন বিকেল বেলার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে সাইকেল চালানো! নিজেকে নতুন রূপে আবিষ্কার করেছে সে! মুক্ত পাখির মতো আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে সুবহা! তাকে থামানোর জন্য কেউ নেই! তামিম নামক নরপি’শাচ থেকে অবশেষে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছে সে। তামিমের হাত থেকে পালানো এতো সোজা ছিলো না! জীবনের সব থেকে কঠিন কাজ বোধ হয় ছিলো নিজকে তামিমের হাত থেকে রক্ষা করা!
বিকেল প্রায় ৫:৩০ মিনিট! প্রতিদিনের মতো সুবহা চার্জে চলে যায় ফাদার ডি-ক্রুজার সাথে দেখা করতে! সুইজারল্যান্ডে ফাদার ডি-ক্রুজা সুবহার তৃতীয় ভালো বন্ধ! যার সাথে প্রতিদিন সে বিকেলবেলা দেখা করতে যায়! আর বকুনি খায়, শীত বস্র না পড়ার জন্য! অবশ্য গ্রিন্ডেলওয়াল্ডে তেমন একটা শীত নেই এখন! বসন্তের আগে শীত কম থাকে! আর চারপাশটা ভরে যায় সবুজ সমারোহে! ছোটো ছোটো ডেইজি এবং নাম না জানা ঘাসফুলে!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” গুড ইভিনিং ফাদার!”
” গুড ইভিনিং মাই চাইল্ড! কাম!”
ফাদার ডি-ক্রুজা ইশারা করে সুবহাকে ভিতরে বসতে বলে! চার্জের পার্থনার শেষে যখন সবাই চলে যায় তখন সুবহা আসে ফাদারের সাথে দেখা করতে! তারপর খুশগল্পে মেতে উঠে! অবশ্য সুবহা একা নয় তার ফুফাতো ভাই-বোন রকি এবং রোজ ও আসে তার সাথে! তারা সুইজারল্যান্ডেরই বংশ ভূত নাগরিক!
” ফাদার! হয়ার ইজ ইজাবেল?”
” সি, প্লে ইউথ এ্যানাশথেশিয়া আউট সাইট!”
” ওকে!”
ইজাবেল এবং এন্যাশথেশিয়া হলো চার্জের বেড়াল! দু-জনেই সুবহার খুব পছন্দের! সুবহা প্রায় তাদের খাবার দেই! চার্জ থেকে সুবহাদের বাড়ি ৭-৮ মিনিটের রাস্তা! তাই সুবহা প্রতিদিনই আসে এখানে!
সুবহা আর ফাদার কথা বলছিলো, ঠিক তখনই সুবহার চোখেমুখে আয়নার ঝলকানি লাগে! খুবই বিরক্ত নিয়ে তাকায় সুবহা সেখানে! এটাতে সুবহা এখন অভ্যস্ত! রিক চার্জে এলে ফাদার তাকে খুবই ঙ্গান মুলক কথা শোনাই! যা তার পছন্দ নয়! তাই সে আয়না দিয়ে সুবহাকে ডাকে।
” ফাদার!! আই হ্যাভ টু গো নাও!”
ফাদার ইশারা করে সুবহাকে যাওয়ার জন্য বলে! সুবহা তাড়াতাড়ি বাইরে এসে একদম রিকের সামনে দাঁড়ায়!
” থাপ্প’ড় একটা ও মাটিতে পড়বে না বাদর!”
” ওই বুড়োর কথা না শুনে, তোর হাতে থা’প্পড় খাওয়া ও ভালো সিস!”
সুবহা একটা ঝাপটি মা’রে রিকের মাথায়! তারপর সাইকেল নিয়ে যেতে থাকে! এখন তাদের ড্রয়িং ক্লাসে যাওয়ার সময়!
” রোজ কোথায়?”
” আই ডোন্ট নো! মেবি ইন দ্যা ক্লাস! ”
” ইউ শুডেন্ট লেট হার গো এল্যোন!”
” মাদার বাংলাদেশীর মতো কথা বলা শুরু করিস না! উই আর গেটিং লেট!”
সুবহা আর কোনো কথা বাড়ায় না! রিককে কিছু বলে লাভ নেই! ছেলেটা এমনই ঘাড় ত্যাড়া স্বভাবের!
সুবহা আর রিক আর্ট ক্লাসের একদম কাছে আসতেই তার পা দুটো অটোমেটিক থমকে যায়!
বাতাসের সাথে সাথে সুপরিচিত সুঘ্রাণ ভেসে আসতে থাকে! সুবহার কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়তে থাকে! ঘ্রাণটা ধীরে ধীরে তার অতি নিকটে আসতে থাকে! সুবহা ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকাতে থাকে।
কিন্তু না তেমন কাউকে দেখতে পায় না! শুধু একটা রোলস-রয়েস দাড়িয়ে থাকতে দেখে তাদের থেকে একটু দূরে! এতো দামি গাড়ি এখানে সহজে তো দেখা মেলে না, তাই খুব সুক্ষ নজরে দেখে গাড়িটিকে সুবহা! হয়তো সেখান থেকেই পারফিউমের ঘ্রাণ টি ও আসছে! জরুরি তো নয়, এই ব্রেন্ডের পারফিউম শুধু তামিমই ব্যবহার করবে!
সুবহা সব থেকে বেশি অবাক হয় যেটা দেখে সেটা হলো গাড়ির ঠিক সামনে বরাবর কাই-কেন কুকুরকে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে! এই প্রজাতির কুকুর গুলো খুবই আক্রান্ত স্বভাবের হয়!
” দেখেছিস সিস! কতো দামি ব্রান্ডের গাড়ি! ”
সুবহা কিছু না বলে শুধু ঘ্রাণ ওয়ালা ব্যক্তিটিকে খুঁজে যাচ্ছিল! আর মনে মনে দোয়া করছিলো, সেই ব্যক্তিটি যেনো তামিম না হয়!
” সিস?”
রকি সুবহাকে হালকা ধাক্কা দেই! সুবহা ও কিছু না বলে রকির হাত ধরে তাকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়!
” তুই এতো ঘামছিস কেন সিস?’
” কই না-তো?”
” আবার ও কী তামিমের স্বপ্ন দেখেছিস?”
তামিমের নাম শুনতেই সুবহার পিলে চমকে উঠে। এই একটা নামই আপাতত সুবহার রাত-দিনের ভয় বাড়ানোর কারণ! সে যেভাবে তামিমকে ধোঁকা দিয়ে এসেছে! তামিম যে তাকে কোনো দিন ও মাফ করবে না সেটা ও সে জানে!
তামিমের নাম শুনতেই সুবহার ১ মাস ১৫ দিন আগের কথা মনে পড়ে যায়! কীভাবে সে তামিমের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলো সেটা শুধু সেই জানে ভালো মতো!
১ মাস ১৫ দিন আগে
” চলো বাড়ি চলো! ”
তামিম সুবহাকে কোলে তুলে নেই! সুবহা ও তামিমের গলা চেপে ধরে!
” আস্তে তামিম! আমার পেট ব্যাথা!”
” কী হয়েছে বউ? তোমার পেট ব্যাথা কেন করছে হঠাৎ! ডাক্তার কী বলেছে! দেখাই ছো তো?”
” আসলে… গার্লস প্রব্লেম!”
” মানে আজকে ও আর আমার হালাল হওয়া হলো!”
সুবহা নিজের দৃষ্টিতে মাটিতে রাখে!
” সরি তামিম!”
” এতে সরি বলার কিছু নেই পরী! তোমরা মায়ের জাত! এটার মাধ্যমেই তোমরা আমাদের মতো যুবকদের জন্ম দাও! এটা লজ্জার কিছু না! বরং সরকারের উচিত প্রতিটি জায়গায় মেয়েদের জন্য এসময়ে ছুটির ব্যস্তা করা!”
” সরকার তো আপনার আব্বাজান নিজেই!”
তামিম সুবহার কথা শুনে হেসে দেই!
” আমার সাথে থেকে থেকে তোমার ব্রেন একটু হলে ও ভালো হচ্ছে! ”
তামিম সুবহাকে নিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে বসে! আর সুবহাকে নিজের কোলে বসাই!
” কাকা গাড়ি আস্তে আস্তে চালাবেন! আমার বউ অসুস্থ্য!”
তামিমের নির্দেশ মতো গাড়ি এতো ধীরে ধীরে চালানো হয় যে একটা সাইকেলের গতি ও এর সামনে বেশি বলে মনে হবে!
সুবহা খুব বিরক্ত হয়ে যায় তামিমের এই কান্ডে। সে ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলে রেগেমেগে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে!
” বউ, এভাবে নামলা কেন? শরীর কী বেশি খারাপ লাগছে? এম্বুলেন্স ডাকবো?”‘
” পিরি’য়ড হয়েছে তামিম! প্রেগন্যান্ট না আমি!”
” তাতে কী! এই সময় কতো কষ্ট হয় মেয়েদের! সচেতন স্বামী হিসেবে সেবা করবো না?”
” তাই বলে গরুর গাড়ির মতো গাড়ি চালাতে হবে?”
সুবহা খুব রেগে হাটা শুরু করে! তামিম ও তার পিছু নেই!
” আরে বউ! এই সময় এইভাবে হাঁটা ঠিক না!”
” আরে ভাই আমি প্রেগন্যান্ট না!”
তামিম কোনো কথা না বলেই সুবহাকে নিজের কাঁধে তুলে নেই! আর তার পঞ্চ পান্ডব তাদের দৃশ্য দেখে জীপে বসে বসে!
” আজকে যদি একটা বউ থাকতো! কোলে নিয়ে ঘুরতাম! ”
” তোর কালা মুখ দেখলেই তো মেয়েরা ভয় পাই! আবার বউ! মানুষের শক ও! ”
“বোমমমমমমমাাাা!”
” কালললললললাাাা!”
” চুপ থাক তোরা! দেখ ভাই ভাবিরে কান্দে নিছে! সিউর আছাড় মার’,বো!”
পঞ্চ পান্ডব একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি করে জীপ থেকে নেমে তামিমের সামনে দাড়ায়!
” কী সমস্যা তোগো?”
” ভাই আমরা থাকতে আপনে ভাবিসাপরে আছাড় মা’রতে পারবেন না!”
তামিম কিছু না বলে উপরে তাকায়!
” হে খোদা! আমাকে উঠাইয়া নাও! না-হলে দড়ি পাঠাও আমি আসতাছি!”
তামিমের কথা শুনে তারা বুঝে যায় আজকে ও তাদের চিন্তা ভুল! তাই ভালো ছেলের মতো পাঁচ জনই দৌড়ে জীপে বসে পরে! আর তামিম সুবহাকে নিয়ে গাড়িতে বসে পরে! সারা রাস্তা সুবহা তামিমের সাথে তেমন কোনো কথা বলেনি! কিন্তু তামিমের নিজের মুখ সচল রেখেছিলো!
বাড়ি এসে তামিম সুবহাকে তাদের রুমে নিয়ে আসে। আশেপাশে সবাই থাকার পর ও তামিম তেমন একটা পাত্তা দেয়নি কাউকে। কারণ তার আব্বাজান বাসায় নেই! আর আব্বাজান না থাকলে তামিম একটু আকটু অভদ্র হয়ে চলে!
সুবহাকে বসিয়ে তামিম নিচে নেমে পড়ে দ্রুত! ২০-২৫ মিনিট পর গরম গরম খাবার নিয়ে উপরে উঠে আসে তামিম!
তামিম রুমে এসে দেখে সুবহা চুপচাপ বসে আছে ফ্রেশ হয়ে! তামিম টি-টেবিলে খাবার রেখে সুবহার পাশে এসে বসে! তারপর হট ওয়াটার ব্যাগ সুবহার পেটে ধরে!
” আমি করছি!”
” করতে দাও পরী!৷ বউয়ের সেবা করা উত্তম পুরুষের লক্ষ্মণ! যেই শা*লা নিজের বউয়ের সেবা করে না, সে জীবনে উন্নতি করতে পারে না!”
সুবহা তামিমের কথাটা মুচকি হেসে উঠে! তামিম ও সুবহার কপালে, গালে চু’মু দেই!
” জানো পরী! যেদিন তোমাকে প্রথমবার দেখছিলাম সেদিনই মনে হয়েছি! আরে এতো আমার বউ! বাইরে কী করে!”
সুবহা শুধু ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থাকে তামিমের দিকে! ভয়ংকর তামিমকে তো চিনে সকলে! কিন্তু আজকে একজন স্বামী তামিম সুবহার সামনে বসে আছে!
” তোমাকে দেখলেই আমার বউ বউ ফিলিং আসতো!তামিমের বউ!”
তামিম সুবহার হাত ধরে টেনে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেই! খুব শক্ত করে ধরে সুবহাকে!
” আমাকে ঠকাইয়ো না পরী! ম’রে যাবো তোমাকে ছাড়া!”
সুবহা নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে!
” ঠোকাবো না তামিম! ”
তামিম সুন্দর মতো সুবহাকে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দেই! তারপর তাকে শুইয়ে দেয়! তারপর তামিম ডিনার করার জন্য নিচে চলে যায়! তানভীর সরকার তামিমের জন্য অপেক্ষা করে ! ছেলে ছাড়া তানভীর সরকার রাতে তামিম কে ছাড়া খুব কমই খেয়েছেন! তামিম ও সুবহাকে রেস্ট নিতে দিয়ে চলে যায়!
তামিম চলে যাওয়ার পরই সুবহা উঠে বসে! আর তামিমের ফোন হাতে নেই! কিছু ক্ষণ পর ফোন রেখে আবার শুয়ে পড়ে!
তামিম উপরে এসে দেখে, সুবহা হাত-পা কুকরিয়ে শুয়ে আছে! মেয়েটা নিজের ধ্যান ইদানীং একটু কমই রাখে!
তামিম সুবহার শরীরে কম্ফোর্টার দিয়ে দেই! তারপর নিজে ফ্রেশ হয়ে সুবহার পাশে শুয়ে পড়ে! এক পর্যায়ে তামিম সুবহার কোমর ধরে তাকে জাপ্টে ধরে শুয়ে পড়ে!
” আমার পরী! খুব ভালোবাসি তোমাকে!”
তামিম ও চুপচাপ ঘুমিয়ে পরে সুবহাকে ধরে! তামিম গভীর ঘুমে মন্গ হতেই সুবহা তার চোখ খুলে! তারপর আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে!
পরদিন সকালে তামিম সুবহার ভাইকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেই! আর নিজে নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে! এমপি নির্বাচন হতে এখন মাত্র দু-দিন বাকি! তামিমের ব্যস্ততার শেষ নেই! কিন্তু এই ব্যস্ততার মাঝেও তামিম ঠিকই সুবহার খেলায় রাখে! তাকে দামি ব্রান্ডের কয়েকটা ফোন ও কিনে দেই তামিম!একটু পর পর ভিডিও কল করতে থাকে! যেনো সুবহার এটা মনে না হয় যে রাজনীতি তার থেকে বেশি ইম্পরট্যান্ট তামিমের জীবনে!তামিম এই দুই দিন রাতে বাইরের থেকেছে! কিন্তু সুবহাকে এক ঘন্টা পর পর কল করতে ভুলেনি!
—- অবশেষে নির্বাচনের দিন চলে আসে! ৩রা নভেম্বর! এমপি নির্বাচনের সেই বিশেষ দিন! যেদিন তামিম আবার আরশি নগরের এমপি নির্বাচিত হবে! তামিম সকালে বাড়ি আসে সুবহাকে দেখার জন্য!
” আজকে সারাদিন আমি বিজি থাকবো! একদম রাতের দিকে বাড়ি ফিরবো, ততক্ষণ নিজের খেয়াল রাখতে পারবা না?”
” পারবো তামিম!”
” জয়ী হলে গিফট হিসেবে কিন্তু তোমাকে লাগবে আমার সারারাত!”
সুবহা মাথা নেড়ে হ্যা বুঝাই!
” বেশি করে খাওয়া দাওয়া করো সারাদিন! রাতে অনেক হার্ড ওয়ার্ক করতে হবে আমাদের! ”
তামিম সুবহার গালে চু’মু দিয়ে চলে যায়! আর সুবহা ও তাকে সাবধানে যেতে বলে!
তামিম চলে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পর সুবহা আয়েশা বেগমের কাছে চলে যায়! নিজের বাড়িতে যাওয়ার জন্য আবদার করে! আয়েশা বেগম শুরুতে না করলে ও সুবহার জোরাজোরিতে এক পর্যায়ে রাজি হয়ে যায়!
তখন রাত ১০ টা ৪৫ মিনিট! বিপুল ভোটে তামিমের জয়ের খবর সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে! তামিম এবং তার আব্বাজান তখন একসাথেই ছিলো! সবাই আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে! তার পঞ্চ পান্ডব ও নাচানাচি শুরু করে দেই! তামিম সুবহাকে কল করে তার জয়ের খবর বলার জন্য! কিন্তু বার বার সুবহার ফোন বন্ধ আসে! তামিম সুবহার সবগুলো ফোনে কল দিয়ে দেখে! কিন্তু সব গুলোই বন্ধ আসে! তারপর তামিম আয়েশা বেগমকে কল করে জানতে পারে সুবহা শিকদার বাড়িতে গেছে!
তামিম কিছু ক্ষণ বাইরে থেকে রাত ১১ টার দিকে সুবহাকে নিতে বেরিয়ে পরে! হয়তো বউটার মন খুবই খারাপ এতোদিন পর বাড়ি গেছে! হয়তো পূরানো স্মৃতি গুলো তাকে জেঁকে ধরে বসেছে!
তামিম এসে কয়েক বার বেল বাজায়! কিন্তু দরজা খোলে না কেউ! তারা একটু জোরে দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়!
” সুবহা…..কই তুমি! তোমার স্বামী আসছে নিতে!”
” সুবহা! বেডি মানুষ বাপের বাড়ি আসলে জামাইয়ের কথা আর মনে রাখে না! শয়তান ছেমরি একটা!”
তামিম সোজা সুবহার রুমে চলে যায়! হয়তো সুবহা সেখানেই আছে! কিন্তু সারা ঘর খুঁজে ও তামিম সুবহাকে কোথাও পায়না! তারপর খেলায় করে সুবহার ঘাটে একটা কাগজ রাখা! তার উপরে চাপা দেওয়া আছে বক্স!
তামিম বক্সটা খুলে দেখে সুবহাকে দেওয়া তার মায়ের বালা দুটো বক্সে রাখা! তামিমের মুখ তখনই গম্ভীর হয়ে যায়! তারপর নিচে রাখা কাগজ টা তুলে দেখে!
খুব জোরে জোরে হাসতে থাকে তামিম! তামিমের হাসি শুনে তার পঞ্চ পান্ডব উপরে চলে আসে!
” সে আমার হয়ে ও হইলো না!”
তামিম মুখ শক্ত করে নিজের কালো চশমা আবার পড়ে ফেলে! তারপর তার লোকদের এক ট্রাক ভর্তি ক্যারাসিনের ড্রাম আনতে বলে!
সুবহাদের পুরো বাড়িতে ক্যারোসিন ঢেলে দেওয়া হয়!
” পুরো আরশি নগর দেখবে, তামিম সরকারের সাথে বেইমানির ফল!”
জলন্ত সিগার ক্যারোসিনে ফেলে দেই তামিম! দাউ দাউ করে জ্ব’লতে থাকে পুরো শিকার বাড়ি!
” পুরো শহরে কারফিউ জারি করে দিতে বল রাষ্ট্রপতিকে! আমি ও দেখি বেইমানি নারির দৌড় করদূর!”
তামিম তার গাড়ি নিয়ে সোজা পোড়া বাড়িতে চলে আসে!তারপর হকিস্টি’ক দিয়ে সুবহার মূর্তি ভাঙ্গ’তে থাকে! তামিম ভেবেছিলো আজকে সুবহাকে সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু সুবহা তামিমকে এমন সারপ্রাইজ দিলো তামিম সোজা তার মূর্তি ভেঙে ফেললো!
” তামিম!”
তানভির সরকারের ডাক শুনে চুপচাপ দাড়িয়ে পড়ে তামিম! তামিমের পঞ্চ পান্ডব তানভীর সরকারকে আগেই ফোন করে সব বলে দেই!
তানভীর সরকার খবরটি শোনা মাত্র তামিমের কাছে চলে আসে!
” তামিম!”
তানভির সরকার তামিমের কাঁধে হাত রাখে! তানভির সরকার তামিমের কাঁধে হাত রাখতেই তামিম হকি’স্টিক ফেলে দিয়ে তানভীর সরকারকে জড়িয়ে ধরে!
” আমারে ভালো বাসলে কী হতো তার আব্বা! একটু কী ভালোবাসা যেতে না আমাকে! ”
তানভির সরকার তামিমের কথার উত্তরে কী বলবে কিছু খুঁজে পাইনা! শুধু তামিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে!
” আমার তামিম সিংহ! আশা করি বাকিটা বুঝে গেছেন আপনি!”
তামিম তার আব্বাজানকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ায়!
” সে যদি পাতালে ও লুকিয়ে থাকে, সেখান থেকে ও আমি তাকে নিয়ে আসবো! তার বেইমানির শাস্তি পুরো দেশ দেখবে!”
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৭
বর্তমান
” সিস কী হলো?”
” কিছু না!”
সুবহা তার অতীতে ঢুকে পড়ে ছিলো! কিন্তু না আর নয়! সে আর অতীত নিয়ে ভাববে না! আর যায় হোক তামিম তো এখানে আর আসবে না! সুবহা প্রায় ৬-৭ টা দেশ পরিবর্তন করে এখানে এসেছে! তামিম তাকে এতো সহজে খুঁজতে পারবে না!
সুবহা খুব মনোযোগ সহকারে ক্লাস করতে থাকে! এসব অতীত নিয়ে ভাবার মতো সময় নিয়ে তার!
———” যত দূরে যাও না পাখি! আমি তোমাকে নজরেই রাখি!”…..