এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৯
কাফাতুন নেছা কবিতা
” ভালোবাসা খুবই খারাপ জিনিস! যখন ধরে দেহ থেকে প্রাণ নিয়ে চলে যায়! ”
নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে, কথাগুলো বলতে থাকে তামিম! আজকে তার পঞ্চ পান্ডবের মুখে নেই কোনো হাসির জৌলুশ নেই! সারাদিন হাসি-তামাশাতে মেতে থাকা পাঁচই আজকে নীরব দর্শকদের মতো দাড়িয়ে আছে তামিমের দিকে তাকিয়ে!
” যারে মন দিলাম, প্রাণ দিলাম, নিজের সর্বস্ব দিয়ে দিলাম, সেই করলো বেইমানি! আহারে নারীজাতি কতো ভয়ংকর অভিনয় রে! ”
তামিম উচ্চ স্বরে হেসে উঠে! তারপর সেই দিনের কথা মনে করে!
দিনটি ছিলো ২৬ শে মার্চ_সোমবার- বেলা ১০:৪৭ মিনিট!
নির্বাচনের প্রচারণা করতে গিয়ে রেললাইনের ধারে একটি মেয়েকে দেখে তামিমের চোখ আটকে যায়! রিক্সায় ছিলো মেয়েটি! সিন গ্রিন কালারের শাড়ি পড়া! চুল তার এতো ঘন আর লম্বা ছিলো রোদে সামাল দিতে বেশ হিমসিম খাচ্ছিল! তামিম তার চোশমা খুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে! মুখ এতোটাই মায়াবি তাকে দেখার পর তামিমের মন জুড়ে যায়! তামিম মনে মনে বলে ”এতো আমার বউ! বাড়ির বাইরে কী করছে!”
হঠাৎ করেই তাকে নিয়ে একটা অধিকার বোধ অনুভব করে তামিম! কিন্তু হঠাৎ করেই ভীরের মধ্যে হারিয়ে যায় মেয়েটি! নাম না জানা মেয়েটির নাম দেই ” পরী ”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তামিম সারা রাস্তা মেয়েটির বর্ননা মনে মনে অনুকরণ করতে থাকে! যদি না পায় পরে, ছবি আঁকিয়ে পুরো আরশি নগরে বা দেশের প্রতিটি কোনে কোনে খোঁজ নেওয়াবে। তামিম এটা ও ভেবে রাখে যদি তার বয়ফ্রেন্ড বা স্বামী থাকে, তাদের পর’পারে পাঠিয়ে হলে ও নিজের করে নিবে মেয়েটিকে!
অনুষ্ঠানের মাঝ পথে হঠাৎ করেই এক দল নৃত্য প্রদর্শনকারীরা মঞ্চে উঠে! তামিম তেমন পাত্তা না দিলে ও মনের ভুলে তাকিয়ে দেখে সেই হারিয়ে যাওয়া তার পরী! একটা প্রশান্তি বয়ে চলে তামিমের মনে!
নাচ শেষ হতেই তামিম তাকে নিজের ‘ লেডি ‘ বলে ঘোষণা দেই! যেই ঘোষণা শুনে কলেজের প্রতিটি দেওয়াল ও কেঁপে উঠে! ” আজকের পর থেকে ওর কাছে যদি কাউকে দেখি, সে যেনো নিজ দায়িত্বে নিজের কা’ফনের কাপড় কিনে রাখে!”
সেদিন তামিম সুবহার নাম জানতো না! কিন্তু তাকে নিজের ‘ লেডি’ বলে ঘোষণা দিয়ে দেয়! আর যাওয়ার সময় তাকে ‘ এই পরী! আই লাভ ইউ!” বলে তার ভালোবাসা জানিয়ে দেই!
সুবহার নাচের ভিডিও ফোনে নেওয়ার পর থেকে হাজার বারের বেশি তামিম জুম করে করে সেই ভিডিও দেখে! তারপর ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার পরিচয় থেকে শুরু করে সব ডিটেইলস জেনে নেই!
তারপর থেকে শুরু হয় তামিমের পাগলামি! কখনো সুবহার জন্য কলেজ উ’ড়িয়ে দেওয়া! আবার কখনো নিজের লোকদের বোরখা পরিয়ে গার্লস কলেজে ক্লাস করতে পাঠানো! সবই ছিলো তামিমের পাগলামির অন্তর্ভুক্ত! কিন্তু কখনো সুবহাকে জোর করে উল্টো পাল্টা কিছু করতে চাইনি! তামিম যতবারই সুবহাকে দেখে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতো, ততবারই সুবহাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দিতো! যদি আবেগে তার দ্বারা ভুল কিছু হয়ে যায়! আর সুবহা তাকে ভুল বুঝে ছেড়ে চলে যায়! তামিম সব সময় একটাই ভয় পেতো! যদি সুবহা তাকে ছেড়ে চলে যায়! তখন?
তাই তামিম জোর করে তাকে বিয়ের জন্য রাজি করায়!
তামিম সরকার কখনো কাঁদে না! কিন্তু মে মাসের ৩ তারিখে কেঁদেছিলো! যেদিন তামিম সুবহার গা’লে প্রথম বার থাপ্প’ড় মে’রেছিলো! আর তার চুল কেটে দিয়েছিলো! হ্যাঁ তামিম সরকার সেদিন কেঁদে ছিলো! কারণ তার শখের নারীর গায়ে হাত তুলেছিলো সেদিন! আর সুবহা তার সামনেই কেঁদে ছিলো নিজের কাটা চুল গুলো ধরে! তামিমের মন চাইছিলো সুবহার পা ধরতে! ধরে বলতে,” সরি বউ! ভুল হয়ে গেছে! তুই প্লিজ এই ভুলের জন্য আমাকে ছেড়ে যাস না!”
কিন্তু না! তামিম এ কথাটি বলেনি! তামিম সরকার শক্ত মনের মানুষ! সে কখনো নিচু হয়না! তাই বের করে দিয়েছিলো সুবহাকে নিজের চেম্বার থেকে! তারপর নিজের হাত কাঁচে বা’রি মেরে কেটে ফেলেছিলো!
তামিমের জন্য সব থেকে কষ্টের দিন ছিলো জুলাই মাসের ১৭ তারিখ!!
যখন সে সুবহার বিয়ের কথা শুনে! তামিমের পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যায়! এই বুঝি তার পরী তাকে ছেড়ে চলে গেলো! এই বুঝি সব শেষ! পরী কি আর তার হবে না? সে কী আর সুবহাকে সকাল বলে ডাকতে পারবে না??
তামিম সেই ভয়েই সুবহাকে গু’লি করে! কিন্তু নিজে শান্তি পায়নি! নিজের শরীর থেকে রক্ত দেয় সুবহাকে বাঁচানোর জন্য! পুরো হসপিটাল সাথে করে আনে! যদি রাগের বসে তার পরীকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলে! আর তাকে ছেড়ে চিরতরে চলে যায়!
তামিম নিজের দম হাতে নিয়ে খুব শক্ত হয়ে বসে ছিলো! যখন শুনলো সুবহা ঠিক আছে! তামিম যেনো স্বত্তি ফিরে পায়! তামিমের মন চাইছিলো সুবহাকে ধরে কাঁদতে! তাকে বুকের ভেতরে লুকিয়ে রাখতে! কিন্তু তাতো সম্ভব নয়! তাই তামিম সুবহার উপরে আরো নজরদারি বাড়িয়ে দেয়!
তামিম সরকার আরো বেশি কষ্ট পায়, যেদিন সুবহা বমি করে তাকে কি’স করার জন্য! সেদিন তামিম সরকার তার আব্বাজানকে হাসতে হাসতে বলেছিলো
” সে আমারে ভালোবাসে নাই আব্বা! সে আমারে ভালোবাসে নাই! ”
সেদিন তামিম সরকার খুব হেঁসে ছিলো! হয়তো একেই বলে বুক ফাটে তবু মুখ ফাটে না!
তামিমের জীবনে সব থেকে খুশির দিন ছিলো যেদিন তার পরী নিজ থেকে ধরা দিতে চেয়েছিলো! তামিম চাইলেই সেদিন জোর করতে পারতো! কিন্তু না, করেনি! সে তার পরীকে সম্মান করে! জোর করলে যদি তাকে ছেড়ে চলে যায়!
তামিম বার বার তাকে একটা এক কথায় বলতো,” আমারে ঠকাইয়ো না পরী! তোমাকে নিজের হাতে মা’রতে খুব কষ্ট হবে আমার!”
এই থ্রেটের মধ্যে ও ছিলো তামিমের আকুল আবেদন! এক ব্যার্থ প্রেমিকের তার প্রেমিকার প্রতি নিঃস্বার্থ ভাবে একটাই চাওয়া! তার পরী যেনো তাকে ছেড়ে না যায়!
কিন্তু আজ তার পরী তাকে ছেড়ে চলে গেলো! তাও ডির্ভোস পেপারে সাইন করে! তামিম পেপার টি নিয়ে খুব জোরে হাসতে থাকে! কিন্তু তার মন ততক্ষণে ভেগে নিঃস্ব হয়ে গেছিলো!
পুরো শহরে কারফিউ জারি করে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে তামিম তার পরীকে! যদি পেয়ে যায়, তার হাতে পায়ে ধরে হলে ও ফিরিয়ে আনবে! তামিম সরকার নিজের মাথা নোয়াবে! কিন্তু না কোথাও পাইনি তামিম তার শখের বউকে!
খোঁজ নিয়ে যখন জানতে পারে সুবহা নেপাল চলে গেছে তামিম সাথে সাথে তার প্রাইভেট জেট নিয়ে নেপাল চলে যায়! পুরো শহরে খোঁজ করে।কিন্তু পায় নি! হাই সিকিউরিটি থাকার পর ও ইন্ডিয়া এয়ারলাইনস থেকে সুবহার পরবর্তী ডেসটিনেশন সম্পর্কে তামিম খোঁজ করে জানতে পারে, সুবহা একদিন নেপালে থেকে তার পরের দিন চলে যায় দুবাইয়ে! তামিম সেখানে ও চলে যায়! এতো বড় শহর! হাই সিকিউরিটি জোন! তারপর নিজের বাবার সব পাওয়ার খাটিয়ে একটু ক্লু পায় তামিম সুবহা সেখানে ও নেই! ৪ দিন থেকে চলে গেছে আমেরিকাতে! তামিম খুব আশা নিয়ে আমেরিকাতে ও চলে যায়! কিন্তু তার পরী সেখানে ও ছিলো না!
ক্লান্ত মন আর শরীর নিয়ে তামিম ২১ দিন পর সরকার বাড়িতে ফিরে আসে!
নিজের ঘরে ঢুকেই সুবহার ছবির সামনে দাড়ায়
” বুক পিঞ্জিরায় রেখেছিলাম, কত যত্নে পাখি,, সেই তুই উড়ে গিয়ে আমাকে দিলি ফাঁকি! ”
তামিম স্ব জড়ে সুবহার ছবিতে ফুল দানি ছুড়ে মা’রে! আর খুব জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে থাকে সুবহার নাম নিয়ে!
” তুই কেমনে আমারে ঠকাইলি সুবহা! তুই কেমনে আমারে ঠকাইলি! ”
তামিমের আর্তনাদের আওয়াজের স্বাক্ষী তার পুরো ঘরের দেওয়াল! রক্তাক্ত হাত নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়ে তামিম! কিছু ক্ষণ পর তার চোখ দুটো ও বন্ধ হয়ে যায়!
দু-দিন পর তামিমের সেন্স ফিরে! চোখ খুলতেই তামিমের প্রথম বাক্য ছিলো
” আব্বা আমার সুবহাকে খুজে পাইছেন আপনি?”
কিন্তু না, তানভীর সরকারের মুখে সেদিন কোনো কথা ছিলো না! থাকবে কীভাবে? সে তো পাইনি সুবহাকে! কিন্তু কীভাবে কি হয়েছিলো সেটার পুরো খবর আছে তার কাছে!
তানভীর সরকার ছেলের মাথায় হাত রেখে তার সামনে বেশ কিছু কল রেকর্ড আর সিসি টিভি ফুটেজ তুলে ধরে!
তামিম সুবহাকে হারিয়ে এতোটাই পাগল হয়ে গেছিলো যে এসব বিষয়ে তার ধ্যানই ছিলো না!
তামিমের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে! কিন্তু না!! এখন কিছু করা যাবে না!
সংসদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হবে ১১ দিন পর! তার ঠিক একদিন পর শপথ গ্রহণ! তীরে এসে তরি ডোবালে হবে না!
তামিম আবার শান্ত হয়ে যায়!
ডিসেম্বর- ২১ তারিখ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তানভীর সরকার আবারো মন্ত্রীত্ব ফিরে পান! আর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতা ফিরে পান!
আজকে সব কিছু পাওয়ার পর ও তামিম সরকার তাও নিঃস্ব!
” মানুষের শখের কত কী হয়! আর আমার শখের বউ ছিলো! তামিমের শখের বউ! ”
তামিম আবারো নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াতে থাকে!
” চলে গেছে রে আমার শখের নারী চলে গেছে! ”
তামিম উচ্চস্বরে হাসতে থাকে!
”পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্ট লোকটা ও একটা মেয়েকে ভালোবেসে নিঃস্ব হয়ে পথে পথে ঘুরছে! ”
তামিমের পঞ্চ পান্ডবের চোখে পানি টলমল! তামিমের হাহাকার তাদের হৃদয়ে ও ছুয়ে গেছে! এই হাহাকার শেষ হবার নয়!!
মাহির গাড়ি থেকে দোতারা টি এনে মাটিতে বসে বাজানো শুরু করে!
তামিম ও তার সিগারটি ফেলে দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে! তামিম বসার সাথে সাথে বাকিরা ও বসে পরে!
তামিম দোতারাটি হাতে নিয়ে উপরে তাকিয়ে বাজাতে থাকে……..!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৮
**কইয়ো কইয়ো কইয়োরে ভ্রমর,
কৃষ্ণরে বুঝাইয়া —
কইয়ো কইয়ো কইয়োরে ভ্রমর
কৃষ্ণরে বুঝাইয়া…..
মুই রাধা মইরা যামু…………
কৃষ্ণ-হারা হইয়া… রে ভ্রমোর, কইয়ো গিয়া…**