ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ১০
মাহিরা ইসলাম মাহী
আদ্রিত কে ছেড়ে দিয়ে নীবিড় বেরিয়ে পরেছে পুনরায় হসপিটাল থেকে।
সে কি এক স্থানে বসে থাকার মানুষ উহু মোটেও নয়।
বাসন্তী রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
“ বাঁদরটা কি শান্ত হয়ে এক জায়গায় থাকার মানুষ। সারাদিন টইটই করে না ঘুরলে ওর হয় নাকি।পেটের ভাত হজম হবে না তো।
আদ্রিত বাজান হারামী টার জন্য মেয়ে খোঁজ বাবা।ওকে বিয়ে দিয়ে ঘরে পঙ্গু করে রাখবো। দেখি কি করে বাহিরে গিয়ে মানুষের অকাম কুকাম করতে পারে।”
আদ্রিত মাহরিসার পানে চেয়ে প্রত্যুত্তর করলো,
“ মেয়ে কে রেখে ছেলেকে বিয়ে দেবে কেমন করে ফুপি। তোমার মেয়ের জন্য আগে পাত্র খুঁজি কি বলো?”
আসলেই তো।বাসন্তীর চোখে মুখে ফুটে উঠলো চিন্তার লেশ।
“ বলছিস? আগে মারু কে বিয়ে দেব?”
আদ্রিত জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে সুধালো,
“ অবশ্যই। তোমার মেয়ের বয়স তো কম হলো না।অলরেডি টুয়েন্টি প্লাস। মেয়ে মানুষ দিন যত যাবে তত বুড়ি হবে।
পাত্র লাগলে বলিও কিন্তু ফুপি, পাত্র কিন্তু রেডিই আছে।তুমি বললেই সে হ্যাঁ বলে দেবে কনফার্ম ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ বলছিস? তোর ফুফার সঙ্গে কথা বলে দেখি। কি বলে সে।কি বলিস। তবে ওর পড়াশোনা? “
“ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।পড়াশোনা নিয়ে তুমি কোনো টেনশনই করো না ফুপি।বিয়ের পর পড়াশোনা করবে। সমস্যা কোথায়।শুধু শুধু দেরিতে বিয়ে দিয়ে তোমার মেয়ে জামাইকে কষ্টে রেখে কি লাভ আছে বলো?’
বাসন্তী আরো চিন্তায় পরলো।নাহ এভাবে তো মেয়ে জামাইকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই।
“ না না আমাদের জন্য বেচারা শুধু শুধু কেন কষ্ট পাবে। ঠিকই তো।আমি আজই বাড়ি গিয়ে তোর ফুফার সঙ্গে কথা বলবো।দাঁড়া”
আদ্রিত দুঃখ পাওয়ার ভঙ্গিতে ঠোঁট গোল করে মাথা নাড়লো।
দুই ফুফু ভাতিজার কথা শুনে মাহরিসা চোখ বড় বড় করে চাইলো।
কত্তবড় বদমাশ লোক তার বিয়ের ঘটকালি করে।
অসভ্য কোথাকার। বলে কিনা সে দিন যাবে আর বুড়ি হবে? তাতে তোর কিরে বজ্জাত। আমি বুড়ি আর জুয়ান হই তোর কি।
হারামী কোথাকার তোকে আমি টিকটিকির সরবত করে খাওয়াবো রে হাদা। তোর চা’য়ে আমি লবন মেশাবো হারামজাদা।
তোর পারফিউম আমি বুড়িগঙ্গায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসবো পাদ্রিতের বাচ্চা পাদ্রিত।তোকে কে বলেছে আমার বিয়ের ঘটকালি করতে।
আমার বিয়ের ঘটকালি আমি নিজে করবো।তুই কে তা কারার।
মনে মনে হাজারটা গালি আদ্রিতের পানে ছুঁড়ে সে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে উঠলো,
“ নাআআআআআ।মা আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করবো না।শুনো মা বিয়ের পর কোনো পড়া শোনা হয় না। দজ্জাল শ্বাশুড়ি শুধু সারাদিন আমায় দিয়ে ঘরই পরিষ্কার করাবে।আমার আর মেডিকেলে বই পড়ে পরিষ্কার করার দরকার পরবে না।
আর আমি এখন বিয়ে করবো না মানে না।”
আদ্রিত বাঁকা হাসলো।নিরীহ বাচ্চার ন্যায় সুধালো,
“ ফুপি ওকে জিজ্ঞেস করোতো কারো সঙ্গে লটরপটর করে কি না। বিয়ে করতে চায় না কেন। মেয়েকে দেখে শুনে রেখেছ তো? কখন আবার কি ঘটিয়ে ফেলো যুগ জামানা তো ভালো না বুঝলে?
বাসন্তী চোখ বড় বড় করে চাইলো মেয়ের পানে,
“ বলিস কি।কি সাংঘাতিক। “
মাহরিসা তেঁতে উঠলো,
“ এই আপনি একদম বাজে কথা বলবেন না আদ্রিত ভাই। “
আদ্রিত মুখ নাড়িয়ে কৌতুক করে সুধালো,
“ এখন আদ্রিত? গ্রেইট…?”
মাহরিসা শুষ্ক ঢোক গিললো।
বাসন্তী মাহরিসার পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে সুধালো,
“ এই একদম সত্যি কথা বলতো তোর আসলেই এমন কিছু নেই তো?”
মাহরিসা মায়ের পানে করুণ চোখে চাইলো।
অসভ্য, বেয়াদব,ইতরটা তার মায়ের মনে কি সন্দেহ ঢুকিয়ে দিলো।
এখন এই নিয়ে সারাদিন এই ভদ্রমহিলা তার সঙ্গে খিচখিচ করবে উফফ।
মাহরিসা বেডে বসা নিস্তব্ধতার পানে করুণ চোখে চাইলো।
তার চোখে মুখে না বলা আকুতি।
নিস্তব্ধতা নিজেও ভাইয়ের এমন কথার বিপরীতে বারবার হোঁচট খাচ্ছে। কাহিনি কি।তার ভাই কিনা শেষে করছে বিয়ের ঘটকালি।বাহ বেশ ইন্টারেস্টিং তো।
বাবা কে জানাতে হবে দেখছি।
নিস্তব্ধতা বাসন্তীর উদ্দেশ্যে বলল,
“ আরে আরে থামো ফুপি।আমি জানি ওর ওরকম কিছু নেই।আমায় বলে তো ওও সব।”
“ তুই শিওর তো?”
নিস্তব্ধতা মাথা নাড়লো।
তবুও বাসন্তী চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে রইলো মাহরিসার পানে।
“ ফুপি তোমার বরের সঙ্গে কথা বলে তবে জানিয়ো আমায়।”
আদ্রিত বেরিয়ে যাওয়ার সময় মাহরিসার পাশ ঘেসে যেতে যেতে ফিসফিস করে বলে গেল,
“ বেস্ট অফ লাক।আই গেস তোর বিয়ে কনফার্ম।”
মাহরিসার ইচ্ছে হলো লোকটার শার্টের কলার ধরে একটান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলতে।অসহ্য। কে বলেছে তাকে তার বিয়ে ঠিক করতে।
হাহ।
নাওমী আজ হস্টেলে ফিরে নিজের রুমে ঢুকতেই তার রাগ তরতর করে বেড়ে আকাশ ছুলো।
এক রুমে তারা দুজন থাকে।সে আর নিধি।
মেয়েটা প্রচন্ড রকমের পিচাশ।
নাওমী দেখলো ছোট্ট একটু রুমে তাও আবার সমস্ত কিছু এলোমেলো। অথচ নিধি নামের মেয়েটা দিব্বি বসে বসে ফোন টিপতিছে।
সকালে বের হওয়ার সময় সে সব গুছিয়ে রেখে গেছে।
নাওমীর ইচ্ছে ঠাস করে মেয়েটার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে।
নাওমী তো মুখ বুঝে সব সহ্য করে চুপ করে থাকার মেয়ে নয়। নিধি যদি এই দুদিন তাকে নরম পেয়ে জেঁকে বসে তবে এবারে তো তার গরম দেখাতেই হবে।প্রতিদিন একই কাজের পুনরাবৃত্তি সে কিছুতেই সহ্য করবে না।
সে এতটাও ভালো মানুষ নয়। উচিত জায়গায় উচিত জবাব দিতে তার চুপায় একটুও বাঁধে না। নাওমী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ আমার ব্যাগে কে হাত দিয়েছে?”
নিধি ফোন দেখতে দেখতে জবাব দিলো,
“আমার গামছা টা খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই তোমারটা নিয়েছি।”
নাওমীর গা গুলিয়ে উঠলো। একজনের টা অপরজন কি করে ব্যবহার করতে পারে।সে দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সংবরণের চেষ্টা চালালো,
“ দুপুরে খেয়েছ এটো থালাবাসন আমার বিছানায় কেন রেখেছ?”
“ ও ওও, আমার বিছানায় রাখলে তো নোংরা হয়ে যাবে তাই তোমার টায় রেখেছি।”
“ ওও আচ্ছা আচ্ছা তোমার বিছানায় রাখলে নোংরা হবে আর আমার বিছানায় রাখলে নোংরা হবে না? “
নিধি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কানে হেডফোন দিতে দিতে বলল,
“ কি বললে শুনতে পাইনি? তোমার বিছানায় রেখেছি তুমি তো ছিলে না।“
নাওমী মেজাজ হারালো।
চট করে নিজের বিছানার উপর রাখা নিধির থালাবাসন ওর বিছানায় ছুঁড়ে ফেলল।
বিছানা ময়লা পানিতে একাকার হলো।
এতেই নাওমী খান্ত হলো না।
নিধির কানের হেডফোনটা নিয়ে টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলল।
নিধি হতবিহবল দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।
এমনিতেই তার মেজাজ খিঁচিয়ে আছে।নাওমী চিৎকার করে বলল,
“ ফারদার যদি আমার সঙ্গে টেক্কা দিতে এসেছো পরেরবার ময়লা পানি তোমার বিছানায় নয় তোমার মাথায় ঢালবো।ফাজলামো করো তুমি আমার সাথে? রুমের মাঝে খারাবের প্যাকেট ফেলে রাখো সেগুলো আমি পরিষ্কার করি। আমার গামছা দিয়ে তুমি গোসল করবে।
আমার বিছনায় তোমার খাওয়া এটো প্লেট রাখবে।ফালতু মনে হয় তোমার আমায়। কিছু বলিনা দেখো কি মাথা কিনে নিয়েছ?
বেয়াদব মেয়ে কোথা কার।
ফালতু যত্তসব। এই মেয়ে এই তুমি আমায় কোনো দিন দেখেছ তোমার মতো ফালতু কাজ গুলো করতে?”
“ ইউ.. তোমার সাহস কি করে হয় আমার সঙ্গে এই মিস বিহ্যাব গুলো করার?তুমি জানো আমি কে?”
নাওমী বলল,
“ তুমি যেই হও না কেন, আমি আর তোমার সঙ্গে এই রুমে থাকছিনা। আমি আজই অথরিটি কে জানাবো।”
“ জানাও কে নিষেধ করেছে তোমায়। তোমার সঙ্গে থাকতে আমি মরে যাচ্ছি না তো। “
পাশের রুমে সিনিয়র আপু লতা দুজনের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বেরিয়ে এলো।
লতা নাওমীকে শান্ত করতে চেষ্টা করলো।
লতা আপুর কথায় ধীরে ধীরে নাওমী শান্ত ওও হলো।
লতা মেয়েটা বোধহয় জাদু জানে। নাওমীর তো তাই মনে হয়। একদম কিরকম করে বড় বোনের মত আদর করে সবসময় তাকে।
লতা নিধি কে ধমক দিয়ে বলল,
“ এই মেয়ে সব সময় এই অকাম গুলো কেন করো? নিজের কাজগুলো নিজে করতে পরো না?”
“ শুনুন আপু আপনি না এর মধ্যে নাক গলাবেন না।”
“ চুপ থাকো তুমি মেয়ে। এর মাঝে নাক গলাবেন না মানে। এক থাপ্পড়ে না সব দাঁত ফেলে দেব তোমার বেয়দব আবার মুখে মুখে তর্ক করে।”
লতা নাওমীকে শান্ত করে নিজের রুমে নিয়ে গেল।
নিধি রাগে পাশে থাকা টেবিলের বই ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলল।
সন্ধ্যার পর সাদাফ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো হসপিটালে।
ততক্ষণে মাহরিসা ওরা সবাই চলে গিয়েছে নিজ নিবাসে।কেবিন তখন ফাঁকা। নিস্তব্ধতা তখন একাই চোখ বুঁজে বসে ছিল।
সাদাফের কপালে চিন্তা গাঢ় রেখা দৃশ্যমান।
সাদাফের কন্ঠে শত বিরক্তি,
“ কি ব্যাপার নিরু তুই এই পঁচা মার্কা হসপিটালে পরে আছিস আর আমি তোকে সারা দুনিয়া খুঁজে বেড়াচ্ছি। “
নিস্তব্ধতা কৌতুল করে বলল,
“ ওও আচ্ছা তুই আমায় সারা দুনিয়া খুঁজে বেড়াচ্ছিস? ভালো খুব ভালো।
আমায় খোঁজার আগে নিজের ফোনটা একবার চেক করেছিলিস তো?”
সাদাফ সঙ্গে সঙ্গে জ্বী কামড় দিয়ে মাথা চুলকালো।
নিস্তব্ধতা কঠোর স্বরে বলল,
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৯
“ তুই আমার সামনে থেকে যা। এক্ষুনি যাবি।এক্ষুনি মানে এক্ষুনি। “
সাদাফ নিস্তব্ধতার পাশে গিয়ে বসে দাঁত কেলিয়ে হেসে সুধালো,
“ সত্যিই দেখিনি দোস্ত। ওসব কথা পরে আগে তুই বল তোর এমন জিরাফের শরীর নিয়ে পরলি কেমন করে?অবশ্য পরতেই পারিস তুই তো বাতাসের আগে দৌঁড়াস।”
“ এই একদম ফালতু কথা বলবি না সজনেডাঁটার বাচ্চা। “
“আমি না বললে আর কে বলবে বল?”
“ তোর আত্মা বলবে ইডিয়ট।”