এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৫

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৫
কাফাতুন নেছা কবিতা

” কোন হাত দিয়ে ডির্ভোস পেপারে সাইন করছিলি বউ?”
তামিম সুবহার ডান হাতের আঙ্গুল গুলো অনেক সুন্দর মতো দেখতে থাকে! নেড়েচেড়ে সুবহার হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে। এক হাত দিয়ে খুব শক্ত করে সুবহার কোমর জাপ্টে ধরে থাকে! আর অন্য হাত দিয়ে সুবহার হাত গুলো দেখতে থাকে! সুবহা যে উঠে পালাবে তার ও কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে! দরজা লক করা আর তামিম তাকে সাপের মতো পেচিয়ে ধরে রেখেছে!
তামিম সাইট থেকে একটা ছোটো সাইজের ছু’ড়ি নিয়ে সুবহার মুখ বরাবর ধরে!

” গ’লা কাট!”
সুবহা চোখ বড় বড় করে তামিমের দিকে তাকায়! তামিম ও সুন্দর মতো সুবহার দিকে তাকিয়ে থাকে!
” যেই হাত দিয়ে সাইন করেছিলি, সেই হাত দিয়ে নিজেই নিজের গ’লা কাটবি!”
তামিম এতো সহজ ভাবে কথাটি বললো, যেন এসব কিছুই না তার জন্য!
সুবহা তখন ও তামিমের দিকে তাকিয়ে ছিলো! তার দৃষ্টিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি! কথায় আছে অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর! সুবহার ক্ষেত্রে ও বিষয়টি ছিলো ঠিক তাই! কয়েক সেকেন্ডের জন্য সুবহার মনে হচ্ছিল এটা তামিম নয়!
৪৫ দিন দূরে থেকে কী সুবহা এতোটাই ভুল করলো যার জন্য এখন তাকে নিজেই নিজের জীবন নিতে হবে?
” জ্বলদি কর রে সুবহা! তোকে মা’টি দিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে আমার!”
” আমার অপরাধ? ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই একটা কথায় কাল হলো সুবহার জন্য! ৪৫ দিন দূরে থাকা কী অপরাধ নয়? তামিমের এতো কষ্ট পাওয়া কী অপরাধ নয়? ২২ দিন খুঁজে ও সুবহাকে না পেয়ে তামিম যখন পাগল হয়ে নিজের হাতের রগ কে’টে মৃত্যু বরন করতে চেয়েছিলো এটা কী সুবহার অপরাধ নয়? না-কি তামিমের কষ্ট টা সুবহার চোখেই পড়লো না?এতোটাই সস্তা চোখে দেখলো সুবহা তামিমের কষ্টকে?
কিন্তু তামিম সরকার তো জাতে মা’তাল হলে ও তাল ঠিক! হিসাব বরাবর করেই ছাড়ে। শুধু মাত্র ভালোবাসে বলে যে সে সুবহাকে ছেড়ে দিবে, এটা ভাবাই ছিলো সুবহার বোকামিতে পিএইচডি করার মতো!

” আহহহহহহ!”
তামিম সুবহার হাত ধরে তার আঙ্গুলের একটু অংশ কে’টে দেই, ডুকরে কেঁদে উঠে সুবহা!
” কষ্ট লাগছে? আমার ও লেগেছিলো!”
” আই হেট ইউ তামিমমমমম!”
খুব জোরে চেচিয়ে উঠে সুবহা! তামিম সুবহার কা’টা হাত চেপে ধরে আরো ব্যাথা দেয়!
”আহহহহহহ!”
” তুই এমনিতে ও আমাকে ভালোবাসবি না!আই নো! কিন্তু আমি যে তোকে অনেক ভালোবাসি! এখন কী হবে পরী? হুমমমম! তোকে মে’রে আমি ম’রে যায়! কী বলিস?”

” আমি ম’রে গেলো ও আপনাকে ভালোবাসবো না! আমি ঘৃণা করি আপনাকে! আমি পশু!”
তামিম খুব জোরে জোরে হাসতে থাকে! তামিমের হাসিটা সুবহার কানে কর্কশভাবে লাগলো!
” বাসবি! বাসবি! তুই আমাকে ঠিকই ভালোবাসবি! না বেসে যাবি কই! ”
সুবহার হাত সামনে নিয়ে আসে তামিম, তারপর সেই কা’টা অংশ দিয়েই যেখানে সাইন করেছিলো, সেই অংশটি মুছে দেই সুবহার রক্ত দিয়ে! এতেই তামিম শান্ত হয়নি!
কাগজের অবশিষ্ট সাদা অংশে সুবহার কা’টা আঙ্গুল দিয়েই বেশ কয়েকবার ” আই লাভ ইউ তামিম!” লেখায়! সুবহার আই হেট ইউ তামিম বলাটা তামিমের ঠিক পছন্দ হয়নি! তাই সুবহার রক্ত দিয়েই বেশ কয়েকবার ” আই লাভ ইউ তামিম ” লেখায় তামিম সরকার!

সুবহা অনেক চেষ্টা করে উঠে দাড়ানোর তামিমকে থামানোর, তাকে ধাক্কা দেওয়ার, কিন্তু না! কোনো কিছুই কাজে দেয়নি! বন্ধ দরজার আড়ালে তার কন্ঠস্বর ও বন্ধ হয়ে যায়! তামিমের ও কোনো নড়চড় হয়নি! সে নিজের মতো করে সুবহাকে শাস্তি দিতে ব্যস্ত! সুবহার আকুতি মিনতি, কান্না কোনো কিছুই তার মনের পরিবর্তন করতে পারে না!
এটাই তো তামিম সরকার! এটাই তার চিরচেনা ভয়ংকর রূপ! তামিম যতবার রেগেছে ততবার কারো না কারো বিপদ এসেছে! ততবার কেউ না কেউ নিজের ভয়ংকর মৃ’ত্যর দৃশ্য নিজ চোখে দেখেছে! আজকে হয়তো সুবহার পালা ছিলো! ঘরের বউ বলে যে তামিম সরকার তাকে ছেড়ে দিবে এটা ভাবা ও বোকামি!
অনেক ধস্তাধস্তি করে ও সুবহা নিজেকে ছাড়াতে পারে না! এক পর্যায়ে ঢোলে পরে তামিমের বুকে! তামিম ও কিছু না বলে সুবহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে!

” ছেলে মানুষ সহজে কাঁদে না! কিন্তু আমি কেঁদে ছিলাম তোর জন্য! ”
তামিম সুবহার অবচেতন মুখটি নিজের মুখ বরাবর নিয়ে আসে!
” ভালো তো সবাই বাসতে পারে ! কিন্তু ভালোবেসে বরবাদ কয়জন হতে পারে?”
তামিম শব্দ করে সুবহার ঠোঁটে চু’মু খায়! বেশ অনেক ক্ষণ ধরে রাখে তার ঠোঁট সুবহার ঠোঁটে! তামিমের চোখ দিয়ে ও পানি গড়িয়ে পরে! প্রায় ১২-১৩ মিনিটের মতো তামিম নিজের ঠোঁট সুবহার ঠোঁটে বসিয়ে রাখে!
” আমি বরবাদ হয়ে গেছি তোর প্রেমে সুবহা! আমি পাগল হয়ে গেছি! তোকে কাছে রাখার জন্য আমি ১ কোটি মানুষকে ও পরপারে পাঠাতে পারি! দরকার হলে তোকে নিজের হাতে দা’ফন করবো, কিন্তু অন্য কারো হতে দিবো না! আমাকে ছাড়তে দিবো না তোকে! ”,
তামিম উঠে সুবহাকে বিছানায় শুয়ে দেই, তারপর শক্ত করে সুবহার হাত নিজের বুকে চেপে ধরে!
” তুই চাইলে আমার , না চাইলে ও তুই আমার! তুই শুধুই তামিম সরকারের! আমি না ম’রা অব্দি তুই রেহায় পাবি না! ”

ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে রাত ১১:৫৬! একটু একটু করে চোখ খুলতে থাকে সুবহা! চোখ খুলেই নিজেকে সকালের সেই ঘরে আবিষ্কার করে! মাথাটা হালকা ঝিম ঝিম করছে! সারা দুপুর -বিকেল-সন্ধা পেরিয়ে রাত এখন ১২ টার কাছাকাছি! সুবহা পুরোপুরি নিজের চোখ খুলে!

রাতে প্রচন্ড ঠান্ডা হয় সুইজারল্যান্ডে! সেই ঠান্ডার ভাব খোলা জালানা দিয়ে ও একটু একটু করে আসতে থাকে! সুবহা উঠতে যাবে তখনই হাতে কিছু একটার টান অনুভব করে! মোটামুটি বেশ জোরেই টান লাগে হাতে!
সুবহা পাশে তাকিয়ে দেখে তামিম উদোম শরীরে তার পাশে উল্টো হয়ে শুয়ে আছে! কম্ফোটার থেকে তামিমের উদোম শরীর বের হয়ে যায় সুবহা উঠে হালকা বসাতে! পরক্ষণেই সুবহা নিজের হাতে তাকিয়ে দেখে হ্যান্ডকাফ লাগানো! এক পাশ তামিমের হাতে লাগালো আর এক পাশ তার হাতে লাগানো! সুবহা বসে নিজেই নিজের মাথায় হাত রাখে! তখনই চোখ যায় তার শরীরে! শর্ট নাইট সুট পড়া! সুবহা তো ফ্রক পড়েছিলো তাহলে নাইট সুট? তখনই সুবহা অনুভব করে তার দাঁতের ব্যাথা ও তেমন নেই বললেই চলে! যেই দুটো দাত মারিতে ঢুকে গেছিলো সেগুলো ও ঠিকঠাক রিপেয়ার করা! গালে হাত যেতেই সুবহা নিজের কাটা আঙ্গুলের দিকে তাকায়! সুন্দর মতো ব্যান্ডেজ করা!

সুবহা বুঝতে পারে এগুলো কার কাজ! কিন্তু যতটুকু সুবহা জানে এতো সহজে তো দাঁতের ব্যাথা যায় না! তাহলে তারটা গেলো কীভাবে? সুবহা আস্তে আস্তে করে নিজের পায়ের দিকে তাকায়! পায়ে ও ব্যান্ডেজ করা!
সুবহার এমন নড়াচড়া তে ঘুম আলগা হয়ে আসে তামিমের! এক টান দিয়ে সুবহাকে নিজের বুকের উপরে ফেলে দেই! আর তাকে জড়িয়ে ধরে খুব শক্ত করে!

এক কম্ফোর্টারের ভেতরে তামিম সুবহা শুয়ে থাকে! তামিম ঘুমিয়ে গেলে ও সুবহার চোখে ঘুম নেই বললেই চলে! সে তামিমের হাত যত ছড়ানোর চেষ্টা করে! ততই তামিম তাকে শক্ত করে ধরে! এক পর্যায়ে সুবহা চুপচাপ তামিমের বুকে মাথা দিয়েই শুয়ে থাকে। সুবহার হাত তামিমের হাতের সাথে লাগানো বিধায় হাত বাকা হয়ে যায় সুবহার! তাই বেশি নড়াচড়া করে নিজেকে আর কষ্ট দিতে চায় না সুবহা! তাই চুপচাপ শুয়ে থাকে! সুবহা চুপ হতেই তামিম সুবহার হাত থেকে ক্যান্ডকাফটি খুলে ফেলে! সুবহার হাতে ব্যাথা পাচ্ছিল এটা তামিম বুঝতে পারে!
হ্যান্ডকাফ খুলতেই সুবহা চোখ খুলে ফেলে আর তামিমের ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে!
বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পর সুবহা বুঝতে পারে তামিম এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন! সুবহা একটু একটু করে তামিমের হাত সরিয়ে পা টিপে টিপে দরজার কাছে চলে যায়! সুবহা জানে না দরজার পিন কী! তাও মনে সাহস নিয়ে পাসওয়ার্ড টাইপ করার জন্য হাত বাড়ায় সামনে! সামনে হাত বাড়াতেই সুবহা অনুভব করে তার পিছনে কেউ দাড়িয়ে আছে! পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে আসতেই সুবহা বুঝে যায় এটা ভুত নয় তামিম সরকার নিজেই!
তামিম সুবহার শরীর ঘেসে দাড়ায়!

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৪

কোনো কথা না বলে চুপচাপ ওভাবেই দাড়িয়ে থাকে তামিম! শুকনো ঢোক গিলে সুবহা! কথায় আছে ঝড় আসার আগে পরিবেশ একটু ঠান্ডা হয়! তাহলে কী এটা ঝড় আসার আগাম মুহুর্ত!!
তামিমের এক হাত সুবহার কোমরে চলে যায়! আর হাত দরজায় দিয়ে সুবহাকে ঘিরে ধরে! অনেক টা সাহস সঞ্চয় করে সুবহা আস্তে আস্তে তামিমের উদ্দেশ্যে বলে….
” আপনি আরো অনেক ভালো মেয়ে পাবেন!”
” তোকেই লাগবে!”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৬