তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ২৩

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ২৩
অহনা আক্তার

রাত হয়েছে অনেক। জিন্নাত ঔষধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে। নিজের রুমে পায়চারি করতে করতে চেচাচ্ছেন জহির। ছেলের বোঝানো তে হাল্কা ঠান্ডা হলেও ঘরে এসে স্ত্রীর সামনে রাগে গরগর করছেন।
— কতো বড় স্পর্দা! আমার বোনের গায়ে হাত তুলে !! ওর ওই হাত আমি কে*টে রেখে দিব। সকালটা হোক শুধু। ওদের বাপ, বেটার কলিজা কে*টে নদীতে ভাসিয়ে দিব।
তাজমহল ঢুক গিলে। স্বামী রেগে থাকলে তার সাথে কথা বলতে সাহস পাননা তিনি। তবুও কোনোরকমে বলেন,
— আপনি এতো উত্তেজিত কেন হচ্ছেন? একটু শান্ত হয়ে বসুন। বিশ্রাম নিন। বাইরে থেকে এসেছেন নিশ্চয়ই ক্লান্ত….
আর বলতে পারে না তাজমহল। স্বামীর তাকানোতে গলায় কথা আটকে যায়। চোখ লাল করে এমন ভাবে তাকিয়েছে জহির যে তাজমহলের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। শক্ত কণ্ঠে চেঁচাল জহির,
— শান্ত হতে বলছো তুমি আমায়? ওই অ*মানুষটা কিভাবে মে*রেছে আমার বোন কে দেখোনি তুমি ? ওকে শাস্তি দেওয়া না পর্যন্ত শান্ত হবো না আমি। সারারাত ঘুম আসবে না আমার!
তাজমহল আর কোনো কথা বললেন না। বলার সাহসই হলো না। স্বামী আর ছেলে আজ সমান তালে রেগে! কাল যে কি হবে,,,

ভয়ে এক কোনায় কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুসকান। পরনের শাড়ি এখনো খোলেনি। ফ্রেশ হওয়ার সময় ইতো পায়নি। ফারিশের রাগান্বিত রূপ দেখে বারবার ঢুক গিলছে সে। সোফায় পা ছড়িয়ে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ফারিশ। মুসকান দুরুদুরু বুক নিয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল। কিছু বলার আগেই ফারিশের গম্ভীর স্বর শুনতে পেল,
— রিশাদ তোমায় উত্ত্যক্ত করতো?
মুসকান আঁতকে উঠল। কথা বলতে চাইছে তবে কিছু বলতে পারছে না। ফারিশ মাথা তুলে তাকাল। চোখের দৃষ্টি ভয়ংকর। মুসকান কাঁপল। অপরাধীর মতো মাথা নুইয়ে ফেলল। ফারিশের গলার স্বর এবার আরো গম্ভীর হলো,,
— আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমায়?
মুসকান রীতিমতো ঘামছে। হাত-পা কাঁপছে। কম্পিত কণ্ঠে উত্তর দিল,
— ও..ওই..আরকি!
ফারিশ সাথে সাথে সটান হয়ে দাঁড়াল। মুসকানের দুগাল চেপে ধরে নিজের দিকে মুখ ফেরালো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আমার দিকে তাকানোর সাহস নেই?
হালকা চোখ খুলে ককিয়ে ওঠে মুসকান। মুখের ওপর অজস্র শ্বাস প্রশ্বাসের অস্তিত্ব অনুভব করছে। ফারিশ জোর গলায় ধমকালো,
— আমায় বলোনি কেন? ওইদিন রান্না ঘরে রিশাদই কিছু করেছিল তাই না ?? উত্তর দিচ্ছ না কেন? খবরদার চুপ করে থাকবানা!
ফারিশের রাগান্বিত ধমকে ফুপিয়ে ওঠে মুসকান।
লম্বা শ্বাস ফেলে ফারিশ। গলার স্বর নামায়। অত্যন্ত শান্ত কণ্ঠে বলে,
— এতো টুকু, জাস্ট এতোটুকুও ভরসা করোনা তুমি আমায়! এমন একটা বিষয় আমার থেকে লুকিয়ে গেলে ? হোয়াই মুসকান? আমি কি এখনো তোমার বিশ্বস্ত পুরুষ হতে পারিনি?
গাল বেয়ে টুপটাপ পানি পরে মুসকানের। ভেজা কণ্ঠে বলে,

— তেমন কিছুই না…
— কেমন কিছুই না! ক্রোধ যেন মুহুর্তে মাথায় চড়ে গেল ফারিশের। বিকট শব্দে পায়ের কাছে থাকা টি-টেবিলটায় লা*থি মে’রে ফেলে দিল। চিৎকার করে বলল,,,,
— কেমন কিছুই না বলো ?? ওই বা*স্টা’র্ডের সাহস কি করে হলো তোমার দিকে ন’জর দেয়ার !! হাউ ডেয়ার হি? ওর চোখ উ’পড়ে ফেলব আমি !! ইউ আর ওনলি মাইন। আমি ছাড়া আর কারো অধিকার নেই তোমাকে পাওয়ার !! ❝ তোমার মুগ্ধতায় ❞ শুধু আমি আটকাবো অন্য কেউ নয় !!
ফারিশের ভয়ংকর গলার স্বর আর অপ্রত্যাশিত রূঢ় ব্যবহারে স্থির থাকতে পারল না মুসকান। মনের মধ্যে যেমন ভালো লাগা কাজ করছে তেমন ভয়ও। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ধুপধাপ পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ফারিশ।
মুসকানও ফারিশকে ডাকতে ডাকতে তার পিছনে ছুটে গেল,
— শুনুন? এতো রাতে কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
ফারিশের বড় বড় কদমের সাথে মুসকান দৌড়েও নাগাল পেল না।

সুইমিংপুলে নেমেছে ফারিশ। স্বচ্ছ পানিতে তার সাদা শার্টটাই যেন ভেসে। কোমরে হাত দিয়ে বড় বড় শ্বাস ফেলছে মুসকান। ফারিশের পিছে ছোটে এসে ক্লান্ত সে। মেজাজ বিগড়ে গেল মুহূর্তেই। খিটখিটিয়ে বলল,
— আপনি ভিতরে আমার উপর চেচামেচি করে এখানে এসে সুইমিং করছেন?
ফারিশ কোনো উত্তর দিল না। মুসকান চেঁচাল,
— এই যে আপনাকে বলছি আমি! এটা কোনো সাঁতার কাটার সময় নয়। সৃজন পরিবর্তন হচ্ছে ঠান্ডা লেগে যাবে জলদি উঠে আসুন।
ফারিশ মুসকানের কোনো কথাই কানে তুলছে না। নিজের মতো সুইমিং করে যাচ্ছে। মুসকান আর কিছুক্ষন ডাকাডাকি করে চুপচাপ কিনারায় দাঁড়িয়ে রইল। পাক্কা বিশ মিনিট পর ফারিশ মুসকানের দিকটায় এসে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। মুসকান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

— কী?
— টাওয়াল টা দাও।
পাশ থেকে টাওয়াল টা নিয়ে ফারিশের দিকে বাড়িয়ে দিতেই ফারিশ টাওয়ালসহ মুসকানের হাত ধরে টেনে তাকেও সুইমিং পুলে এনে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে মুসকানের সমস্ত শরীর ভিজে চুবচুবে হয়ে গেল। ফারিশ মুসকানের কোমর ধরে তাকে শরীরের সাথে মিশিয়ে ডুব দিল পানির মাঝে। কয়েক সেকেন্ডর জন্য মুসকানের শ্বাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। পানি থেকে মাথা উঠালে মুসকান ঘনঘন নিশ্বাস নিয়ে ফারিশ কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারিশ আবার ডুব দিল। পরপর কয়েকটা ডুব দিয়ে উঠতেই মুসকান ফারিশের গলা জাপটে ধরে শ্বাসের উপর শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,

— আ..আর নাহ প্লিজ ম..মরে যাব।
পানির মাঝেই ফারিশ মুসকানের শাড়ির ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে তার কোমর খা’মচে ধরল। মুসকান সাথে সাথে অস্ফুট স্বরে ‘আহ্’ করে উঠল।
একহাতে মুসকানের কানের কাছ থেকে ভেজা চুল গুলো সরিয়ে সেখানে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল ফারিশ,
— আর কখনো আমার থেকে কিছু লোকাবে?
মুসকান কটমটিয়ে তাকাল। দাঁতে দাঁত ঘষে বলল,
— আপনি একটা…. ‘আহহহ’….
ফারিশ এবার আগের থেকেও বেশি জোরে চেপে ধরেছে।
মুসকানের চোখে পানি জমে। অভিমানি গলায় বলে,

— আপনি এমন কেন?
— আমার প্রশ্নের উত্তর এটা নয়।
— এতো রাগ?
— রাগের দেখেছো কি!
–‘ আই লাভ ইউ ‘
মুহুর্তেই ফারিশের চেহারার রং পাল্টে গেল। ঠোঁটে স্মিত হাসির দেখা মিলল,
— কি বললে শুনিনি?
মুসকান ফারিশের বুকে কিল বসায়। ফারিশ হাসে। মুসকানকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে বলে,
— বড্ড বেশিই চালাক হয়ে গেছ। এতো গ’রম একটা মোড মিনিটেই চেঞ্জ করে দিলে। এবার যে অন্যকিছু করতে ইচ্ছে করছে!
মুসকান স্নিগ্ধ হাসে। হাতে থাকা রেশমি চুড়ি গুলোর রিনিঝিনি শব্দ তুলে বলে,
–‘ কী ‘
ফারিশের দুষ্ট স্বর,
— রুমে চলো প্রেক্টিকেলি বুঝাচ্ছি।

মাঝরাতে ভেজার ফলে ঠান্ডা লেগে গেছে মুসকানের। বারংবার হাঁচি দিচ্ছে। গায়ে হালকা জ্বরও এসেছে। তাজমহল মুসকানের অবস্থা দেখে তাকে আজকে আর রান্না ঘরে জায়গা দিল না। চুপচাপ সোফায় বসিয়ে কড়া লিকারের চা খেতে দিল। জিন্নাত আর ফাইজা আগে থেকেই সোফায় বসে কথা বলছে। মুসকানও তাদের কথায় সামিল হলো। ফারিশ এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। মুসকানই ডাক দেয়নি। সারাদিন ব্যস্ততায় থাকে। একটু ঘুমালে ক্ষতি কি। জ্বরের কারণে মুসকানের শরীরটা আজ খুব দুর্বল লাগছে। সে গিয়ে তার ফুপিমণির কাঁধে মাথা এলিয়ে চোখ বুঝলো। জিন্নাত মুসকানের কপালে হাত দিয়ে টেম্পারেচার চেক করে,

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ২২

— গায়েতো ভালোই উত্তাপ দেখতে পারছি! জ্বরটা বাঁধালি কি করে বলতো?
মুসকান প্রসঙ্গ বদলায়। টিশু দিয়ে নাক ঘষে বলে,
— মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তো ফুপিমণি। দুর্বল লাগছে।
জিন্নাত অবিলম্বে মুসকানের মাথায় হাত বুলাতে থাকে। বিড়বিড় করে বকতে বকতে বলে,
— লাগবেইতো? খাওয়া দাওয়া ভালো করে না করলে দুর্বল লাগবে না তো কি লাগবে! একদমই নিজের খেয়াল রাখে না।
মুসকানের তার ফুপিমণির কথা শুনে বলতে ইচ্ছে করছে, — আমি খেলেও কি না খেলেও কি ! তোমার ভাতিজার জ্বালায় এমনিতেও সুস্থ থাকবো না…

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ২৪