তাজমহল পর্ব ৪৫
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
শাইনার কান্না থামছেনা দেখে তাজদার এবার অধৈর্য হয়ে উঠলো। তার একটা শার্ট চোখের পানিতে ভিজিয়েও মেয়েটা শান্ত হচ্ছে না?
সে শাইনাকে ছেড়ে দিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো বিরক্ত মুখে। ঠোঁটদুটো শক্ত হয়ে আছে। মুখে অনেককিছু আসছে কিন্তু বলতে পারছেনা।
বাইরে থেকে ডাকাডাকি ভেসে আসছে। শাইনা দরজার দিকে তাকিয়ে চোখমুখ মুছে নিচ্ছে। আবারও চোখ ভিজে উঠছে।
তাজদার শাইনার কব্জি চেপে ধরে তার মুখোমুখি টেনে আনলো। শাইনা নিজেকে সামলে নিয়ে তার মুখের দিকে তাকালো। চোখমুখ ফুলে গেছে ইতোমধ্যে। তাজদার অসম্ভব শীতল কণ্ঠে বলল,
“সত্যিটা জানার পর তুমি আমার সাথে যেতে? বলো। যেতে আমার সাথে? তুমি আমাকে বাধ্য করেছ কাজটা করতে।
আমি চেয়েছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দেব। কিন্তু তার আগেই তুমি জেনে গিয়েছ। আমি এটা করেছি যাতে তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাওয়ার পথে আর কোনো বাঁধা না আসে।
একদম কাঁদবে না। তোমার কান্না দেখে মনে হচ্ছে আমি তোমাকে মেরে হাঁড়গোড় ভেঙে দিয়েছি।
দ্য ফ্যাক্ট ইজ তুমি নিজেই এমন কোনো ঘটনা চেয়েছিলে যাতে তোমার যাওয়াটা ব্লক হয়ে যায়। মিথ্যে বলবে না। সত্যি করে বলো তুমি এমনটা চাওনি?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শাইনা চোখে জল নিয়ে অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। তাজদার বলল,
“হ্যাভ ইউ এভার ট্রাইড টু আন্ডারস্ট্যান্ড মি মমতাজ? তুমি রিলেশনশিপটা শুধু একটা প্যাকেজ হিসাবে নিয়েছ সুপারফিশিয়াল কমফোর্ট, জিরো কমমিটমেন্ট। নো পুল টু-ওয়ার্ড দিস লাইফ, নো পুল টু-ওয়ার্ড মি। তোমার দিকে মানুষ আঙুল তুলবে তাই তুমি বাচ্চাটা নিয়ে দায়মুক্ত হয়েছ। বাচ্চাটা তোমার একটা কম্পেনসেশন ছিল, কারণ বাচ্চা থাকলে লন্ডন যাওয়ার কথাটা টলানো যাবে। এটাই ফ্যাক্ট যে বাচ্চা নেওয়ায় তুমি যতটা অসন্তুষ্ট হয়েছিলে বাচ্চা এলে লন্ডনে যেতে হবে না বুঝতে পেরে তুমি তারচেয়ে বেশি খুশি হয়েছ।”
শাইনার কব্জিটার উপর তার আঙুলের ছাপ আরও ভালোভাবে পড়লো। কপালটা ঘেমে উঠেছে। শ্বাস পড়ছে অস্থিরভাবে। শাইনাকে চেপে ধরে রেখে বলল,
“তুমি আমাকে কখনোই চাওনি, না এখনো চাইছো। আমি তোমার কাছ থেকে দূরে গেলে তুমি বরঞ্চ খুশিই হও। সত্যি কথা হচ্ছে তুমি আমাকে দু-চোখে সহ্য করতে পারো না। এটাও জেনে রাখো তুমি আমার কাছ থেকে দূরে গেলে আমি মরে যাব এই ধরণের মানুষও আমি না। তুমি যদি ভাবো তুমি আমাকে ভালোবাসো না। আর আমি সেটা পাওয়ার জন্য মরে যাচ্ছি তাহলে ভুল ভাবনার মধ্যে আছ। তুমি না বাসলে, আমিও ঠিক তাই।
মনে আছে তুমি বলেছিলে, মেপে ঝেপে ভালোবাসা হয় না? অ্যাবসোলিউটলি। লাভ ইজ়ন’ট আ ম্যাথস ইকুয়েশন, ইটস আ ফিলিং পিওর, র-অ, আনপ্ল্যান্ড। মনের উপর জোরজবরদস্তি চলে না। আমি কোনো নাটক চাই না, কোনো ভাড়াটে আবেগও নয়। মনকে জোর করা যায় না।
আমি এতদিন যা দিয়েছি সেটা এক্সট্রা জেনারোসিটি ছিল আর তুমি সেটা নিতে পারোনি। তাই আজ থেকে আমি আর ওভার-গিভ করব না। যেটা তুমি দু-হাত ভরে নিতে পারোনি সেটা আর কখনো দেব না।
তুমি চলে যাবে? নো!
আমি নিজেই তোমাকে রাখব না।
আমাদের সংসারটা এখন থেকে এভাবেই চলবে। একটা মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের উপর।
এটা কোনো ক্যাজুয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট নয়। নন-নেগোশিয়েবল। বাচ্চাটা যেহেতু এসেছে, আমি চাই না সে কোনো চ্যালেঞ্জ ফেস করুক। সো তুমি এনশিউর করবে সে যেন হেলথি এন্ড সেফ থাকে, আর আমি বাবা হিসেবে আমার রেসপনসিবিলিটিজ ফুলফিল করব। তুমি মা হিসেবে যেটুকু করতে হবে করবে, নো কম্প্রোমাইজ। তুমি এটাই চেয়েছো বরাবর যাতে আমি তোমার কাছে কোনো এক্সট্রা এক্সপেকটেশন না রাখি। এন্ড হিয়ার মি ক্লিয়ারলি এটাই হবে। যদি বাচ্চা না আসতো তাহলে হয়তো সিদ্ধান্তটা অন্যরকম হতো। যেহেতু ও এসে গেছে আমার সিদ্ধান্তটা তোমাকে মানতে হবে। এখন যাও।”
শাইনাকে ছেড়ে দিল সে। শাইনা দরজার দিকে এগোচ্ছিল। পেছন থেকে তাজদার বলল,
“ডাক্তারের ফিসটা বিকাশে সেন্ড করে দেব।”
শাইনা কথাটা শুনে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। তিতলি আর তৌসিফ কথা বলতে বলতে এদিকটায় আসছিল। শাইনাকে দেখে দুজনেই থেমে গেল। শাইনার চেহারার অবস্থা দেখে আর কোনো প্রশ্ন করার সাহস করলো না।
আফসার সাহেব শাইনাকে দেখে কথা থামিয়ে দিলেন। রওশনআরা বলল,”এইতো এসেছে। ও খাওয়াদাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ওর মাকে বলবেন একটু বোঝাতে। এখন থেকে খাওয়াদাওয়া কমিয়ে দিলে সমস্যা হবে।”
আনোয়ারা বেগম এসে শাইনার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আফসার সাহেবকে বললেন,”আফসার যা হয়েছে তা নিয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। নতুন সংসার তাই এরকম হচ্ছে। কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। এইসব লোকেমুখে জানাজানি হলে মানসম্মান কিছু থাকবে না। ওকে লন্ডনে যেতে দেবনা ভেবে তাজ এমনটা করেছে। আশরাফ আর আনিসকে তুমি একটু বুঝিয়ে বলো।”
তারপর তিনি শাইনাকেও বুঝ দিলেন।
“ক্ষমা ছাড়া সংসার বাঁচে না, আর সংসার ক্ষমা ছাড়া টিকে না। ও অতিরিক্ত করে ফেলেছে এটা আমরা মানছি। তুমি এতদিনে তো বুঝে গেছ ও নিজে যেটা ভালো মনে করে সেটা করে। মনে এত ক্ষোভ রেখো না। এই সময়টা অনেক দামী। যাও তোমার বাবার সাথে। আর তাজের সাথে কথাবার্তা বলা বন্ধ রেখো না। ও তোমার বাচ্চার বাবা। কথা অনেক সমস্যার সমাধান। কথা না বললে সমস্যা আরও বাড়ে।”
তাদের কথাবার্তা চলছিল তখুনি সেখানে তাজদার এল। চোখ ঘুরিয়ে সবার দিকে একেএকে তাকালো। আফসার সাহেবের মুখে কোনো কথা রইল না তাকে বলার মতো। ছেলেটা এই স্বভাবের জেনেও মেয়ে দিয়ে দেওয়াটা ভুল ছিল সেটা এখন উপলব্ধি হলেও তো কিছু করার নেই। এতবড় অন্যায় করার পরও এভাবে শক্ত শক্ত কথা কিভাবে বলছে তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। মেয়েটাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরও যদি এমন করে? নিজের মেয়েকে তো তিনি চেনেন। না খেয়েদেয়ে শুয়ে থাকবে জামাই কিছু বললে। তারপর বড় রোগভোগ হয়ে যাবে। বাচ্চাটার ক্ষতি হবে। তারচেয়ে ভালো তাদের কাছে থাকুক। বাচ্চাটাও একটু বড় হোক তখন ভাবা যাবে।
তাজদার ঠান্ডা কণ্ঠে তিতলিকে বলল, “উনার ব্যাগপত্র গুছিয়ে সাথে দিয়ে দাও।”
রওশনআরা, জোহরা বেগম আর আনোয়ারা বেগম একে অপরের দিকে তাকাল। তাদের এতক্ষণের সব চেষ্টাই মুহূর্তের মধ্যে বিফলে গেল তাজদারের একটা কথায়।
আনোয়ারা বেগম বললেন,”ব্যাগপত্র ও নিজেই গোছগাছ করে নিয়ে যাবে। ওর আসাযাওয়া থাকবে এখানে। তুমি কোথায় যাবে বলেছিলে না? সেখানে যাও।”
তাজদার শাইনার দিকে কোণা চোখে তাকাল একবার। তারপর চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। পথে আনিসের সাথে দেখা হলে। আনিস বলল,
“চা খাবি? চল দোকানে বসে চা খাই।”
তাজদার ভেবেছিল সে হয়তো ওই ব্যাপারটা নিয়ে তাকে কঠোরভাবে আজ কিছু না কিছু বলবে। কিন্তু আনিস তেমন কিছুই বললো না। টেনে নিয়ে তার সাথে।
চা খেতে খেতে বললো, “বোনটাকে তোর হাতে যখন দিয়ে ফেলেছি তখন ভালোমন্দ সব তোর হাতেই। আমরা তোর উপর তখনই কথা বলবে যখন তুই ভুল হবি। তোর সিদ্ধান্তগুলো ভুল হবে। এখন যা হওয়ার হয়ে গেছে এগুলোকে আর বাড়তে দিস না। যেটা ভালো হবে সেটা কর। আম্মা আব্বা রাজী ছিল ওকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে। কিন্তু বড়আম্মাসহ ওরা সবাই এখন টেনশন করছে ও সেখানে গিয়ে কিভাবে থাকবে এটা নিয়ে। ওখানে কাজের লোকও রাখতে পারবি না। ও রান্নাবান্না করে খেতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছে সবাই। তোর উচিত সবার সাথে বসে এটা ক্লিয়ার করা। আমি শাইনার দোষ দেখছিনা কোথাও। ও তোর সাথে যাবে বলেই তো পরীক্ষাটা দিয়েছে তাই না?”
তাজদার চায়ের কাপে বিতৃষ্ণা নিয়ে চুমুক দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, সেটা সবাইকে দেখানোর জন্য যে ও আমার কথা মেনে চলছে। তথাকথিত ভালো বউ হওয়ার চেষ্টা বৈকি অন্য কিছু না। আম্মু আব্বুকে কি বলেছে ওকে জিগ্যেস করে নিস। ওদের বলেছে এককথা, আমাকে বলেছে এককথা। ওদের বলেনি ও আমার সাথে যাবেই। একবারও ওদের বলেনি ও আমার সাথে যেতে চায়। তোর বোন আসলে যেতেই চায় না। আমি তাই ওকে আর জোর করবো না।”
“তুই রাগ থেকে কথাটা বলছিস?”
“না, আমি অনেক ভেবে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি।”
আনিস হতাশ হয়ে তার দিকে তাকালো। তাজদার চায়ের বিল মিটানোর সময় দোকানদারকে বলল,
“চিনিতে পিঁপড়া ছিল। এই দোকানে আর কোনোদিন আসবো না।”
টাকা নেওয়ার সময় দোকানদারের মুখ হাঁ হয়ে গেল। আনিস তার হাতে আরও দশটাকা হাতে গুঁজে দিয়ে হাসিমুখে বলল, “ওর কাপে সত্যি পিঁপড়ে ছিল। আমি সামনে ছিলাম বলে কোনো সিনক্রিয়েট ছাড়া খেয়ে নিয়েছে। কিছু মনে করো না। এটা রাখো।”
তাজদার তার আগেই বেরিয়ে গেল। সে বুঝে গেছে তার উপর একটা বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে শাইনার মমতাজের। এটা ঠিক না হওয়ার আগে বাচ্চার কথা ভাবাটা ঠিক হয়নি।
অবশ্য দেশে পা রাখার পর থেকে সে একটার পর একটা ভুল করে গিয়েছে। তার সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিল দেশে পা রাখার পর নেওয়া সিদ্ধান্তটি।
ছোটবেলায় যেমন সে পাত্তা দিত না, শাইনা মমতাজ এবার ঠিক সেই পুরনো ভঙ্গিতেই তার শোধ চুকিয়ে দিল।
সে এটাও বুঝে ফেলেছে কেউ কিছু না চাইলে তাকে আগ বাড়িয়ে কিছু দিতে নেই। হাত বাড়ালে, তখনই হাতে হাত রাখতে হয়। নইলে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয় ছুটে এসে হাত ধরার মতো মুহূর্তের জন্য।
শাইনার ঘ্রাণশক্তি এতটা প্রখর হয়েছে যে তার সাবানের গন্ধটা পর্যন্ত সহ্য হচ্ছে না। বমির উপর আমি। সারাক্ষণ শুয়ে শুয়ে থাকছে।
বিকেলে শাওন দরজা একটু ঠেলে ঘরে উঁকি দিয়ে মজা করে বললো,
“তুমি দেখছি বমিতে ভাসিয়ে দিবি আমাদের। ওই বাড়ি ছেড়ে এখানে কেন এসেছিস? জামাইকে একা জ্বালিয়ে শান্তি হচ্ছিল না?”
শাইনা আম্মা বলে ডাক দিতেই শাওন একদৌড়ে পালিয়ে গেল। দাদীমা এসে বলল,
“ম্যা ম্যা করিস না? নিজেই মা হতে যাচ্ছিস। ও ভুল কি বলছে? সারাদিন তো আছিস ওয়াক ওয়াক করতে। বাপের মতো মাথাভর্তি চুল আসবে তোর ছানা। বাছার মাথায় চুল ভর্তি থাকলে মা এমন বমি করে।”
শাইনা কথাটা শোনামাত্রই বলল,”আমি কি টাকলা?”
“সেটা কখন বললাম? তোর জামাইয়ের মাথায় চুল বেশি তাই বললাম। মেয়ে হলে বাপের মতোই হবে।”
“তোমাকে বলছে কেউ?”
“ওমা! বাচ্চা তার বাপের মতো হবে না? নাকি এখন অস্বীকার করবি বাচ্চাটা পেটে এমনিএমনি চলে আসছে।”
শাইনা শক্তি যোগাড় করে চেঁচিয়ে উঠলো,”আম্মা তোমার শ্বাশুড়িকে যেতে বলো এখান থেকে।”
দাদীমা মুখ মোচড় দিয়ে বলল,”ঢঙ, জামাই সহ্য হয় না আবার তার ছানা পেটে নিয়ে ঘুরছে। ওরে ঢঙী। এমন কত ঢঙ দেখলাম জীবনে।”
শাইনা চিৎকার করে বলল,”বুড়ি আমি মাথা ফাটাবো তোমার। আম্মারে!”
শাহিদা বেগম হন্তদন্ত পায়ে ছুটে এল। দাদীমা হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন। শাহিদা বেগম বললেন, ও বাড়িতে এলে আপনি ওকে শান্তি দেন না আম্মা। মেয়েটা আপনার জন্যই আর আসতে চাইবে না এখানে। মুরব্বি মানুষ হয়ে কীসব কথা বলেন ওর সাথে?”
“আমি বলতে পারবো তাই বলি। তুমি আমাকে শিখাইয়ো না।”
সাবরিনা শাহিদা বেগমকে ডাকলো তখুনি।
“আম্মা কোথায় আপনি? বড়আম্মা এসেছে। আম্মা?”
শাহিদা বেগম যেতে যেতে বললেন,”হ্যাঁ, বসতে বলো। মেহমান পেছন দরজা দিয়ে এল কেন?”
রওশনআরা ভেতরে চলে এল। দাদীমা বললেন,”ফুতের বউ দেখতে চলে এলে নাকি রায়হানের মা?”
রওশনআরা হালকা হাসলেন। বললেন,”হ্যাঁ সেজেগুজে সামনের দরজা দিয়ে আসতে অনেক কাহিনি করতে হয়। ঘুমাচ্ছে নাকি? ঘুমালে ঘুমাক।”
“না জেগে আছে। এমনি শুয়ে আছে। দুপুরে ভালো করে খায়নি। এই মেয়েকে নিয়ে আমি করবো জানিনা। আসেন।”
রওশনআরা বললেন,”তাজ যেহেতু চলে যাবে ওর দাদার বাৎসরিক ফাতেহাটা তাই এই মাসেই দিয়ে দিচ্ছি। মেজবানের দাওয়াত আগে থেকেই দিয়ে রাখলাম। ওইদিন শাইনাকে বাড়িতে থাকতে হবে। মেহমান আসবে তাই।”
বলতে বলতে দুজন শাইনার ঘরে ঢুকলো। শাইনা শোয়া থেকে উঠে বসলো। ওড়না খুঁজে নিয়ে মাথায় কাপড় দিল। রওশনআরা বলল,
“তুমি শুয়ে থাকো। উঠতে হবে না। যে কথাটা বলতে এসেছি মেজবানের দিন বাড়িতে থাকতে হবে তোমাকে। তাই সকালে চলে যেও।”
শাইনা মাথা দোলালো। রওশনআরা দরজা টেনে দিলেন। শাইনা ওড়না ছুঁড়ে মেরে আবারও শুয়ে পড়লো।
ফোনটা হাতে নিতেই মেসেঞ্জারে দেখলো তাজদার সিদ্দিকীর নামের পাশে সবুজ বাতি জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। ইনবক্সে ঢুকতেই শাইনা দেখলো তার নিকনেম চেঞ্জ করেছে।
তার নিকনেম সেট করেছে সরি দিয়ে। শাইনা ফোনটা রেখে দিল। কিছুক্ষণ পর টুং করে নোটিফিকেশন এল মেসেজের। শাইনা ক্লিক করতেই তাজদার সিদ্দিকীর ইনবক্সে নিয়ে গেল। সেখানে লেখা আছে,
তাজমহল পর্ব ৪৪
“সরি ফর এভরিথিং। বাট নট সরি ফর বেবি। কারণ ও আসায় তোমারই বেশি লাভ হয়েছে। টেক কেয়ার অফ ইয়োরসেলফ। আমি যতদিন দেশে থাকবো ততদিন তুমি আমার সামনে আসবে না। এলে কাঁচা চিবিয়ে খাব।”
তাই পরদিন তার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আনতে গিয়ে শাইনা খুব ভয়ে ভয়ে ছিল।