তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ৩৪
অহনা আক্তার
দিন গিয়ে রাত হলো। ঘড়ির কাটায় রাত ১২ টা ২৫ মিনিট। ফারিশের কোনো খবর নেই। সেই সকালে রেগেমেগে বাসা থেকে বের হয়েছে। একটা ফোনও করেনি। সারাদিন কিছু খেয়েছে কিনা তাও জানা নেই। মুসকান চিন্তিত হয়ে রুমে পায়চারি করছে। ফোন দিয়ে ফেলেছে কয়েক শত বার। কোনো নাম গন্ধ নেই। তাজমহল জহিরের কাছেও ফোন দিয়ে খোঁজ নিয়েছে ছেলের। ইন্ডাস্ট্রিতে যায়নি আজকে। না গিয়েছে নিজের কাজে। ফারিশের বন্ধুদেরও ফোন দিয়ে তার খোঁজ নেওয়া হয়েছে। কেউই বলতে পারেনা ফারিশ কোথায়। স্বামীর চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছে মুসকান। যত রাগ করোক কখনো এমন করেনি। সাথে সাথেই সব মিটিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আজ কেন তাকে টেনশন দিয়ে মা’রছে!
হাতের ফোনটা দিয়ে আবারও ফারিশের নাম্বারে কল দিল মুসকান। রিং হচ্ছে কিন্তু তুলছে না। চোখ ভরে পানি আসে তাঁর। লোকটা হঠাৎ এতো নির্দয় হয়ে গেল কি করে। তার এতগুলো কল দেখেও তুলছে না। চোখ মুছে মেসেজ করে মুসকান,
” আমি জানি আপনি ইচ্ছে করেই আমার ফোন তুলছেন না। এমন কেন করছেন? এখনো বাসায় কেন আসছেন না?”
ফারিশের কাছ থেকে কোনো রিপ্লাই আসলো না। বেশ অনেকক্ষণ মুসকান ব্যাকুল হয়ে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে রইল। যদি একটা টেক্সট আসে। কিন্তু আসেনি। আফসোস! মুসকান আবারও মেসেজ করলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” আপনি কি আজকে বাসায় আসবেন না? আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি?”
রিপ্লাই আসতে না দেখে কয়েক মিনিট পর আবার করল, ” আপনার বেবিরাও কিন্তু আমার সাথে অপেক্ষা করছে ”
নিরবে কিছুক্ষণ চোখের জল ফেলে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো মুসকান। কাঁটা ঘুরে ১২ টা ৫৫ মিনিট। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের লাইট নিভিয়ে ফেলল মুসকান। কাত হয়ে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে লাস্ট একটা টেক্সট করল, ” আপনি যদি আজকে বাসায় না আসেন কাল সকালে কিন্তু আমায় আর পাবেন না। একেবারের জন্য দাদুর বাড়িতে চলে যাব। ”
এতোগুলো মেসেজের একটা রিপ্লাইও করেনি ফারিশ। রাগে,দুঃখে বালিশের পাশে ফোন রেখে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল মুসকান। চোখের জলে বালিশ ভিজে যাচ্ছে..
ঘড়ির কাটা যখন দেড়টা ছুঁইছুঁই তখন বাড়িতে আসে ফারিশ। অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না বলে লাইট ওন করল। রুম জুরে আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়তেই চোখের সামনে ভেসে উঠল মুসকানের কান্না ভেজা স্নিগ্ধ মায়াবী মুখশ্রী। ধক করে উঠল ফারিশের বুকটা। মুসকান ঘুমাচ্ছে। কিন্তু চোখের পানি এখনো শুকায়নি। মুসকানের মেসেজ গুলো পেয়েই ছোটে এসেছে ফারিশ। বাড়িতে আসার ইচ্ছে না থাকলেও আসতে হয়েছে। মুসকান এক হাত ভাজ করে তার উপর মাথা রেখে কাত হয়ে ঘুমাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎই চোখ লেগে গেছে তার। ফারিশ নিঃশব্দে মুসকানের মুখের দিকটায় এসে দাঁড়ায়। হাঁটু ভেঙে বসে গভীরে নজর বুলাতে থাকে। মুসকানের মুখটা খুব ছোট দেখাচ্ছে। চেহারাই বলে দিচ্ছে আজ সারাদিন কাঁদা ছাড়া আর কিছু করেনি। ফারিশের চোখ জোড়া লালচে।
এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যে চোখের পলকও পড়ছে না। তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজের শুষ্ক ঠোঁট জোড়া এগিয়ে নিয়ে সন্তপর্ণে মুসকানের ললাটে রাখে ফারিশ। আস্তে আস্তে ভেজা চোখ, গাল, ঠোঁট সব ছুঁয়ে দেয়। মুসকানের ঘুম গভীর। ফারিশের আলতো ছুঁয়া সে মোটেও টের পায়নি। মুসকানের গালের একপাশের পড়ে থাকা ছোট্ট চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে দিতেই ফারিশের চোখে পড়ে হালকা কালচে হয়ে যাওয়া আঙুলের লম্বা দাগ টায়। অতি তীক্ষ্ণ করে না তাকালে দাগ টা কারো চোখেই পড়বে না। ফারিশ কপাল কুচকে দাগটা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। মুহূর্তেই মনে পড়ে যায় তার সকালের করা কর্মকান্ড। চরম আশ্চর্য হয়ে ভাবতে থাকে,, কতটা শক্ত করে ধরেছিল যে দাগ পরে গেছে। ফারিশ দ্রুত মুসকানের জামার হাতা টেনে উপরে তুলে। সেখানে তো আরো শক্ত করে ধরেছিল। ফারিশের ধারণা ভুল হয়নি। মুসকান বাহুতে বসে যাওয়া আঙুলের ছাপ গুলো আরো প্রখর। বুকটা জ্বলে উঠল ফারিশের। রাগের মাথায় এতটা রোড আচরণ করেছে যে মুসকান আ’ঘাত পেয়েছে তাও বুঝতে পারেনি। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফ্লোরেই পা’ঞ্চ মা’রল ফারিশ । এতো জোরে মে’রেছে যে শব্দ শুনে মুসকান উঠে পড়েছে।
— আপনি কখন এলেন? (অবাক হয়ে বলল মুসকান)
ফারিশ জবাব না দিয়ে উঠে গেল। ড্রেসিং টেবিলের ডয়ার থেকে ঔষধ নিয়ে এসে মুসকানের পাশে বসল। মুসকান চোখ গোল করে ফারিশের কান্ড দেখছে। ফারিশ ঔষধটা আঙুলে নিয়ে মুসকানের গালে লাগাতে গেলে মুসকান মাথা পিছিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করল,
— কি করছেন?
ফারিশ চোখ গরম করে তাকাতেই মুসকান চুপ হয়ে গেল। গালে ঔষধ লাগানো শেষে ফারিশ মুসকানের বাহুতেও ঔষধ লাগিয়ে দিল। মুসকান মুখ গোমড়া করে বিড়বিড় করছে, ‘আ’ঘাত দিয়ে এখন মলম লাগানো হচ্ছে!’
ফারিশ পুরোটাই শুনল। গম্ভীর স্বরে বলল,
— আ’ঘাত দেওয়ার মতো কাজ করো কেন?
— আমি কাউকে আ’ঘাত দেয়ার মতো কাজ করিনি। কেউ ভুল বুঝলে আমার কি?
ফারিশ কোনো কথা না বলে উঠে গেল। মুসকান গলা চড়িয়ে বলল,
— আপনি আমার ফোন কেন তুলেন নি?
ফারিশের নির্ভেদ স্বর,
— তোমার ফোন তুলার অনেক মানুষ রয়েছে। তাই প্রয়োজন মনে করিনি।
মুসকান বিছানা থেকে নেমে পড়লো। ফারিশের খোঁচা দিয়ে বলা কথা গুলো বেশ বুঝতে পারল। কিন্তু কথার পিঠে আর কথা বলল না। বেশি খোঁচাখোঁচি করতে গেলে রিশাদের কল দেয়ার আসল কারণ বের হয়ে যাবে। তার থেকে দু’একটা ধারাল বাণী হজম করে নেয়াও উত্তম। বাড়িতে এসেছে এই অনেক। সে ধীর পায়ে হেঁটে ফারিশের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারিশ ওয়াশরুমে চলে গেল। মুসকান অসহায়ের মতো হা করে দাঁড়িয়ে রইল সেখান টায়।
ফাইজার চোখে ঘুম নেই। বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পলকহীন সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ সারাদিন সে মায়ের পিছন পিছন ঘুরঘুর করেছে ফোনের জন্য। কিন্তু তাজমহল দেয়নি। কড়াকড়ি ভাবে বলে দিয়েছে হাজার ঘুরেও লাভ নেই। সে ফোন দিবে না। এমনিতে যতই বলুক রিশাদের সাথে কোনো কথা বলবে না, যোগাযোগ করবে না। দু’দিন ধরে কথা বলতে না পেরে তার নিজেরই ধম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফাইজা ঠিক করল কাল যে করে হোক বাবা কে বলে মায়ের থেকে নিজের ফোন উদ্ধার করবে। প্রয়োজনে দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা মায়ের আঁচল ধরে পড়ে থাকবে। তবুও ফোন চাইইই।
হাতমুখ ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই মুসকান কে তোয়ালে হাতে আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল ফারিশ। সে চুপচাপ মুসকানের হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে বলল,
— এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
মুসকান মিহি কণ্ঠে উত্তর দিল,
— আপনার জন্যই তো..
— দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না আমার জন্য। গিয়ে শুয়ে পড়ো।
— খাবেন না? খাবার দেবো?
— না।
মুসকান আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারিশের দিকে। আর একটা কথাও বলে নি ফারিশ। সোজাসুজি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। মুসকানও হতাশ হয়ে লাইট নিভিয়ে ফারিশের পাশে শুয়ে পড়ল। মুসকান পাশে শুতেই ফারিশ অপর পাশে মুখ ঘুরিয়ে কাত হয়ে শুলো। দৃষ্টি জোড়া ছলছল করে উঠল মুসকানের। সে অনেকক্ষণ বাম হাতের তালুতে গাল রেখে ফারিশের সুঠাম দেহি পিঠটার দিকে তাকিয়ে রইল। আবারো চোখ ছাপিয়ে জল আসলো মুসকানের। এমন করছে কেন লোকটা! তাকে এভাবে অবজ্ঞা কেন করছে। তার যে কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছে না। মুসকান বিছানা ছুঁয়ে ছুঁয়ে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিতেই আবার পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে আনলো। সাহস হচ্ছে না বুকে। যদি ক্ষেপে যায় ! তবুও ভয় আর অনুশোচনা নিয়ে ফারিশের পিঠে হাত রাখল মুসকান। সাথে সাথে ফারিশের কর্কশ স্বর ভেসে আসলো,
— কি চাই?
তড়িৎ গতিতে হাত সরিয়ে নিল মুসকান। কাঁপা স্বরে বলল,
— ম..মনে হচ্ছে আপনার মাথা ব্যথা। আমি কি টিপে দিব?
বজ্রপাতের ন্যায় মুসকানের দিকে ঘুরে তার উপর ঝুঁকে আসে ফারিশ। দুই হাত বালিশে চেপে ধরে মুসকানের দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে বলে,
— এতো কিছু বুঝো তাহলে এটা কেন বুঝো না তোমাকে অন্য পুরুষের সাথে কথা বলতে দেখলে আমার কষ্ট হয়। হৃদপিণ্ডে র’ক্তক্ষরণ হয়। রিশাদের মাঝে কি পেয়েছো তুমি যার জন্য আমাকে ঠকাচ্ছ?
‘ ডু ইউ লাইক রিশাদ ?? ‘
— ছিঃ কি বলছেন এসব?
আচমকা ফারিশ মুসকানের ঠোঁ’টে ঠোঁ’ট মিলিয়ে দিল। হঠাৎ করা ফারিশের কর্মকান্ডে মুসকান হতবিহ্বল হয়ে চোখ বড় করে ফেলল। ধীরে ধীরে বুঝতে পারল ফারিশ নিজের সমস্ত রা*গ, ক্ষো*ভ তার ঠোঁ’টের উপর মিটাচ্ছে। কয়েক মিনিট পার হতেই মুসকান ঠোঁ’টের জ্বলনে ছটফট করতে লাগল। হাত নড়াচড়া করার চেষ্টা করছে কিন্তু ফারিশের চেপে ধরে রাখার জন্য পারছে না।
দীর্ঘসময় পর মুসকানের ঠোঁ’ট ছাড়ল ফারিশ। ছাঁড়া পেয়ে মুসকান বড়বড় করে নিশ্বাস নিচ্ছল। এর ফাঁকেই ফারিশ মুসকানের কামিজের ফালি উঠিয়ে ভরা পে*টটায় অসংখ্য চু*মু দিতে লাগল। হালকা করে পে*টে কান পেতে বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বলল,
তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ৩৩
— আমার কলিজারা কেমন আছে? ভালো আছে তো? জানো তোমাদের মাম্মা না খুব পঁচা। তোমাদের পাপাকে ক’ষ্ট দেয়। আগে তোমরা আসো তারপর আমরা তিনজনে মিলে মাম্মার সাথে ফাইট করব কেমন।
ফারিশের অভিযোগ শুনে ফিক করে হেসে দিল মুসকান। তৎক্ষণাৎ ফারিশের চাহনি দেখে ঢুক গিলে ঠোঁ’ট চেপে ধরল। এখনো সাংঘাতিক ভাবে জ্বলছে তার দুটি অধর….