আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৬২
সালমা খাতুন
আগের দিন রাতে রুবি মায়ার জন্য মায়ার রুমে খাবার নিয়ে গেলে, মায়া সেটা কিছুতেই খাই না। আরমান যখন রুবিকে কল করেছিল, তখন রুবি মায়ার ঘরেই ছিল। মায়া দেখেছে যে, রুবিকে আরমান কল দিয়েছে। এবং মায়া ওদের দুজনের কথোপকথন শুনেছে। মায়া আরমানের উপর রাগ করেছিল, তাই আরমানের পাঠানো খাবার কিছুতেই খাইনি।
এদিকে রুবিও সকলের সাথে রাতের খাবার খাইনি ছিল। তাই আরমানকে ম্যাসেজ এ জানিয়ে দেয় যে মায়া খাইনি, এবং সেই খাবার টা ও নিজে খেয়ে নেয়। আরমান রাতে রুবিকে মায়ার সাথেই থাকতে বলেছিল, শুধু রাতে না, আরমানের আদেশ ছিল রুবি যেনো এক মূহুর্তের জন্যেও মায়াকে একা না ছাড়ে। সেই অনুযায়ী রুবি মায়ার পাশেই শুয়ে পড়ে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিছুক্ষণ পর আরমান, দরজার এক্সট্রা চাবি দিয়ে মায়ার রুমে প্রবেশ করে। এবং মায়াকে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। এরপর সিঁড়ি বেয়ে সোজা ছাদে চলে যায়। আসলে মায়া রেগে ছিল আরমানের উপর, আর আরমান মায়ার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য ওকে ওর ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। সারটা রাত মায়া আর আরমান খোলা আকাশের নিচে কাটাই। আরমান চেয়েছিল মায়াকে রুমে দিয়ে আসতে, কিন্তু মায়া রাজী হয়নি। ওর কথা, আজকের এই রাতটা আরমানের সংস্পর্শে থেকে কাটাতে চাই, এই খোলা আকাশের নিচে।
এদিকে রুবি আরমানকে এইভাবে মায়াকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে দেখে মুচকি হাসে। ও তখনো ঘুমায়নি। ঘুমাবে কিভাবে? ওর যে শরীর টা প্রচন্ড খারাপ লাগতে শুরু করেছে, হঠাৎ করেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুবির শরীরের অস্বস্তি বাড়তে থাকে, গরম লাগতে শুরু করে। বিছানার চাদর ছিটকে ফেলে দেয় গায়ে থেকে, এসির টেম্পারেচার বাড়িয়ে দেয়। তবুও ওর অস্বস্তি কাটছে না, শরীরে কেমন জানি একধরনের জ্বলন অনুভব করে। মাথা ঘুরতে শুরু করে, কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় রুবি। শরীরে প্রচন্ড অস্বস্তি হওয়ার কারণে, নিজেই নিজের শরীরের পোশাক খুলে ফেললো।
হাত দিয়ে আঁচড় কাটতে শুরু করলো নিজের শরীরে, বিছানায় ছটফট করতে শুরু করলো রুবি।
ঠিক তখনি অন্ধকারে ঢাকা ওই রুমের দরজা ঠেলে প্রবেশ করে আসিফ। ও মায়ার এই রুমের জন্য আগে থেকেই একটা ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়েছিল, কিন্তু সেটার কোনো প্রয়োজন পড়লো না। কারণ দরজা লক করা ছিল না, আগে থেকেই খোলা ছিল। আসিফ রুমে ঢুকে একবার পিছন ফিরে চায়, তারপর একটা বাঁকা হাসি দেয়। চেমেলি নামের মেয়েটি দরজা টা বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়। আসিফ এগিয়ে যায় বিছানার দিকে, পুরো রুম অন্ধকার থাকার জন্য বিছানায় থাকা মানুষটির মুখ দেখতে পাই না ও, আর দেখার প্রয়োজনও মনে করে না। ঝাঁপিয়ে পড়ে রুবির উপর। এদিকে রুবি নেশার ঘোরে থাকায় বুঝতে পারে না ওর সাথে কি হচ্ছে, কিন্তু ধীরে ধীরে ওর শরীরের জ্বলন কমে আসে। শরীরের অস্বস্তি ভাবটা ধীরে ধীরে স্বস্তিতে পরিনত হয়। ভাগ্যের নিষ্ঠুর খেলায়, নিজের অজান্তেই কলঙ্কিত হয় রুবি আসিফের দ্বারা।
বিয়ের দিন সকালে….
চ্যামেলি নামের মেয়েটি পুরো ড্রয়িংরুম চেঁচামেচি করে মাথায় তুলে ফেলে। ভোর থেকেই শুরু হয়েছিল বিয়ের আয়োজন, গ্রামের মানুষরাও উপস্থিত ছিল জমিদার বাড়িতে। সকলকে ডেকে মায়ার রুমের সামনে নিয়ে যায় চ্যামেলি।
চ্যামিলি:- “দেখুন আপনারা সবাই নতুন বউয়ের রঙ্গলীলা। সকালে বিয়ে, আর রাতে পরপুরুষ নিয়ে শরীরের জ্বলন মিটাচ্ছে।”
সাবিনা বেগম ধমকে উঠলেন, “এই মেয়ে!! সকাল সকাল কি শুরু করেছো? হ্যাঁ? মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছো!!”
চ্যামেলি:- “মুখে যা আসছে তাই বলি নি মেমসাহেব, নিজের চোখে যা দেখেছি সেটাই বলছি। আপনার ছেলের ভাগ্য ভালো, তাই বিয়ের আগেই আপনার হবু বৌয়ের আসল রুপ সামনে চলে এলো। ওই মেয়ে একটা চরিত্রহীন, এই দেখুন।”
কথা শেষ করেই দরজা খুলে ফেললো চ্যামিলি। ভিতরের দৃশ্য দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলো। আসিফের মুখ স্পষ্ট দৃশ্যমান, ও বাঁ দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে আছে, অর্ধনগ্ন অবস্থায়। কোমর অবধি চাদর টানা। আর সবার ধারণা অনুযায়ী মায়াও নগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছে, ডান দিকে মুখ করে। ওরও শরীরে একটা চাদর তবে ওর মুখ দেখা যাচ্ছে না, চুল দিয়ে ঢাকা। দুজনেরই পোশাক মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আরমানের বাড়ির সবাই মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলে, সবাই ভাবে ওটা হয়তো মায়াই শুয়ে আছে।
এরপর শুরু হয় গ্রামের মানুষের বিভিন্ন কটু কথা। আরমানের দাদি ছিঃ ছিঃ করে বলে উঠে, “ছিঃ বড়ো বৌমা ছিঃ, এ কেমন মাইয়ার লগে ছেলের বিয়া দিছিলা? কতটা চরিত্রহীন মাইয়া হইলে
বিয়ার আগের দিন রাইতে ভাসুরের সাথে রাইত কাটাই, বলো তো? ছিঃ আমার বাড়িতে এমন নোংরামি, ভাবতেই ঘেন্না লাগছে। হুনছিলাম যে, দাদুভাই নাকি নিজে পছন্দ কইরা ছিল এই মাইয়াকে?”
মিসেস সাবিনা বেগম মাথা নিচু করে রেখেছেন, উনার চোখ ছলছল করছে। বাড়ির পুরুষ গুলো ভিতরের দৃশ্য একবার দেখেই সরে পড়েছে। ঠিক তখনি শোনা গেলো আরমানের গম্ভীর কণ্ঠস্বর, “কি হয়েছে? এখানে এতো ভীড় কেনো?”
আরমানের গলা শুনে সবাই ঘুরে তাকালো, দাদি আহাজারি করে বলে উঠলেন, “সব্বনাশ হয়ে গেছে রে দাদু ভাই! সব্বনাশ হয়ে গেছে! মান সম্মান সব শেষ। দেখ তোর হবু বউ কি আকাম কইরাছে।”
ওপর তলার সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে, আরমানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে মায়া জিজ্ঞাসা করলো, “আমি আবার কি আকাম করলাম।”
সবাই মায়াকে দেখে থতমত খেয়ে গেলো যেনো। সামিরা অবাক গলায় বলল, “ভাবি মনি! তুমি এখানে? তাহলে তোমার বিছানায় ওটা কে?”
চ্যামেলি তো পুরোই হতভম্ব, বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। এরপর তাকালো রুমের দিকে, বিছানায় শুয়ে থাকা মেয়েটির মুখ চুলে ঢাকা।
চ্যামেলি অবাক গলায় বলল, “আপনি এখানে? আপনার তো বিছানায় থাকার কথা ছিল, তাহলে ওই মেয়েটা কে?”
আরমান বিরক্ত গলায় বলল, “কেউ কি বলবে, আসলে হয়েছে টা কি?”
কেউ কিছু বলল না, শুধু সবাই সরে গিয়ে আরমানকে রাস্তা করে দিলো, রুমের দৃশ্য দেখার জন্য। ইতিমধ্যেই চ্যামেলি ছুটে গিয়েছে। বিছানায় পড়ে থাকা মেয়েটির চুল গুলো সরিয়ে দিতেই রুবির মুখ দৃশ্যমান হয়। আরো একবার চমকে উঠে সবাই, আর এই দিকে আরমানের মুখের ভঙ্গি শক্ত হয়ে উঠে। যা বোঝার বুঝে যায় ও। গটগট পায়ে রুমে প্রবেশ করে, আসিফের মাথার চুল মুঠো করে ধরে ওকে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়।
আসিফ এতোক্ষণ জেগেই ছিল, ওর ঘুম ভেঙেছে অনেক্ষন হলো। ঘুমের ভান ধরে পড়েছিল, এমন নাটক করলো, যেনো এখনি ঘুম ভাঙ্গলো ওর। তাড়াতাড়ি করে ওর গায়ে থাকা চাদর টা কোমরে পেঁচিয়ে নিলো। আরমান ওকে বিছানা থেকে টেনে নামিয়ে, শক্ত হাতে ওর মুখে ঘুষি মারলো। একটা ঘুষিতেই নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলো আসিফের। আসিফ আরমানের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো। ও তখনো জানে না যে মায়ার জায়গায় রুবি আছে। আসিফ শান্ত গলায় আরমানের দিকে ঘুরে থেকেই, বিছানার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল, “দেখ আরমান, আমাকে মেরে তোর কোনো লাভ নেই। ওর সাথে আমার অনেক দিনের সম্পর্ক। তাই ভালো হবে আমাদের মাঝখান থেকে তুই সরে যা।”
আরমানের চোখ জ্বলছে রাগে, চোয়ালের পেশি টান টান হয়ে উঠেছে। খুব জোড়ে আরো একটা ঘুষি মারলো ও আসিফের মুখে, “রুবির সাথে তোর অনেক দিনের সম্পর্ক? তা ঠিক কত দিনের?”
আসিফ:- “রুবির সাথে কেন আমার সম্পর্ক থাকতে যাবে? সম্পর্ক তো….”
কথটা বলতে বলতেই পিছনে ঘুরলো আসিফ। কিন্তু মুখের কথা টা ও শেষ করতে পারলো না, মায়ার জায়গায় রুবিকে দেখে। আসিফের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো, বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল রুবির দিকে। সবার চেঁচামেচি শুনে রুবির অনেক আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেছে। প্রথমে ও কিছুই বুঝতে পারে না কি হচ্ছে ওর সাথে। তারপর ও অনুভব করে নিজের নগ্ন শরীর, ধীরে ধীরে মনে পড়ে কাল রাতের কথা। চাদরটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বিছানার এক কোণে কুঁকড়ি হয়ে বসে পড়ে ও, চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়তে থাকে।
এদিকে আবির ছুটে এসে দাঁড়ায় দরজার সামনে, ওরও পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। প্রথমে শুনে কিছুই বিশ্বাস হয়নি ওর, কিন্তু এখন নিজের চোখে সামনের দৃশ্য দেখে দুই পা পিছিয়ে যায়। যেনো ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে। আবিরও রাগে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে ছুটে গিয়ে আসিফকে মারতে শুরু করে। আরমান শান্ত চোখে তাকিয়ে দেখে শুধু, আয়ান ছুটে এসে আবিরকে আঁটাকায়, সেই সাথে আসিফের মা ও ছুটে আসে।
গ্রামের সবাই অনেক কটু কথা বলে রুবির জন্য। তাদের বক্তব্য, ছেলেটাকে মেরে কি লাভ? মেয়েটা সাই দিয়েছে বলেই তো ছেলেটা সুযোগ পেয়েছে। আর আসিফ তো প্রথমেই বলল, ওদের অনেকদিনের সম্পর্ক। তাই বড়ো রা সবাই সিদ্ধান্ত নিলো, আসিফ আর রুবি বিয়ে দেওয়া হোক আজকেই। প্রথমে আরমান কিছুতেই রাজী হলো না, সবার সিদ্ধান্তে।
এই গ্রামেই রুবির বাড়ি। রুবির বাবা মা কে ডাকা হয়, সবার সিদ্ধান্তে উনারাও রাজি হয়। আজকেই বিয়ে হবে। কিন্তু রুবি এই সবকিছু মেনে নিতে পারে না, আবার কাউকে কিছু বলতেও পারে না। যেনো একটা পাথরে রূপান্তরিত হয়েছে ও। রুবি সুইসাইড করতে যায়, সকলের আড়ালে। কিন্তু আবির ঠিকই বুঝতে পারে, রুবির ভাবনা।
তিনতলায় কেউ থাকে না। ঠিক সময়ে খুঁজে খুঁজে পৌঁছে যায় ও তিনতলার একটা স্টোর রুমে। ততক্ষণে রুবি গলায় ফাঁস লাগিয়ে ছটফট করতে শুরু করেছে। দরজা লক করার ভাবনাটাও রুবির মাথায় ছিল না, তাই খুব সহজেই রুমে প্রবেশ করে আবির। অনেক কষ্টে রুবিকে নামিয়ে থাপ্পড় মারে ওর গালে, আবিরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে রুবি। আবার হঠাৎই ছিটকে সরে গিয়ে পাগলের মতো করতে থাকে।
আবিরকে নিজের শরীরে হাত দিতে দেয় না রুবি।
“ছোঁবেন না! ছোঁবেন না আমায়। আমি..আমি..নষ্টা, কলঙ্কিত। আমার…আমার বাঁচার অধিকার নেই। আমি নোংরা, আপনি পবিত্র। চলে যান আবির বাবু, চলে যান এখান থেকে।”
আবির ধমকে উঠে বলে, “কি পাগলামো শুরু করেছো রুবি? তুমি সবার কাছে নষ্টা কলঙ্কিত হলেও আমার কাছে পবিত্র। আমরা অনেক দূরে চলে যাবো। কেউ খুঁজে পাবে না আমাদের।”
রুবি কাঁদতে কাঁদতে বলে, “না! না! এটা হয় না আবির বাবু। এটা হয় না। আমার শরীরে লেগে আছে এক নোংরা জানুয়ারের স্পর্শ। আপনাকে দেওয়ার মতো আমার কাছে যে আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। সতীত্ব হারিয়েছি আমি আমার।”
আবির অসহায় গলায় বলল, “আমি তোমার শরীর চাই না রুবি। তোমাকে চাই। তোমার শরীরে লেগে থাকা সেই জানুয়ারের নোংরা স্পর্শ আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে মুছে দেবো। তবুও তুমি অন্য কারো হয়ো না।”
রুবি:- “আমি কখনোই অন্য কারো হতে পারবো না আবির বাবু, আর না আমি এই কলঙ্কিনীর উপাধি নিয়ে আপনার হতে পারবো। তাই ভালো হবে এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করি আমি। আমি যে এইভাবে বেঁচে থাকতে পারবো না।”
শোনা গেলো আরমানের চিৎকার, “রুবি!! কি সব বাজে বকছো হ্যাঁ? আমি থাকতে কেউ আলাদা করতে পারবে না তোমাদের।”
আবির অসহায় গলায় বলল, “তুমি না থাকলে আমি কিভাবে বাঁচবো বলো? এই দুনিয়ায় আমারও যে আর কেউ নেই। তোমাকে ভালোবেসে আপন করে নিতে চেয়েছি, কেনো এমন করছো তুমি? চলো আমরা অনেক দূরে চলে যাবো, আরমান সাহায্য করবে আমাদের হ্যাঁ আরমান সাহায্য করবে, তাই না আরমান? প্লিজ ভাই বোঝা ওকে। দেখ না কিসব বকছে পাগলের মতো। জানিস ও গলায় ফাঁস অবধি লাগিয়ে ছিল, সুইসাইড করার জন্য।”
এরপর আবির এবং আরমান অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে রুবিকে, কিন্তু রুবি কিছুতেই ওদের কথা শুনে না। আবির রুবিকে নিয়ে ওই মুহূর্তে অনেক দূরে চলে যেতে চাই, কিন্তু রুবি কিছুতেই রাজী হয় না।
রুবির বাবা মা ও আসে ওই রুমে, মায়া আছে উনাদের সাথে। আরমান উনাদের কেও অনেক বোঝায়, রুবিকে আবিরের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু উনারাও কিছুতেই রাজী হয় না। উনাদের কথা, এখন যদি রুবিকে আবিরের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাহলে আরো দূর্নাম রটবে ওদের নামে। ওরা গ্রামে বাস করতে পারবে না, তাই সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উনারাও চাই আসিফের সাথেই রুবির বিয়ে হোক।
আরমান বলে ও সবকিছু ঠিক করে দেবে, সবকিছুর দায়িত্ব নেবে। উনাদেরকে গ্রামে বাস করতে হবে না, শহরে নিয়ে যাবে। তারপরেও রাজি হয় না ওরা। রুবির বাবা মা রুবিকে বলে,
“যদি তুই নিজের বাপ মায়ের জ্যান্ত মুখ দেখতে চাস তাহলে আজ যেনো আসিফকেই বিয়েটা করে নিস, আর নিজের সুখ চাইলে চলে যেতে পারিস আবিরের সাথে। কিন্তু তার বদলে আমাদেরকে হারাবি চিরকালের মতো।”
এই বলে ওখান থেকে চলে যায় উনারা। আরমান মায়া রুবিকে অনেক বোঝায় যে, ওর বাবা মা কিচ্ছু করবে না, আবিরের সাথে একবার বিয়েটা হয়ে গেলে ঠিকই মেনে নেবে। কিন্তু রুবি কিছুতেই রাজী হয় না। আবিরকে উদ্দেশ্য করে ও বলে,
“আপনার ভালোবাসার গভীরতা ঠিক কতটা তা আমি বুঝি, আবির বাবু…মুখে বলার প্রয়োজন নেই। ভালোবাসা মানেই কি একে অপরের পাশে থাকা বাধ্যতামূলক? না আবির বাবু, দূরে থেকেও ভালোবাসা সম্ভব। হয়তো আমার এই রক্তে মাংসে গড়া শরীরটা আপনার হাতের স্পর্শ থেকে দূরে থাকবে, কিন্তু আমার মনটা, আমার সমস্ত ভাবনা, আমার অনুভূতি গুলো সবসময় আপনাতেই আবদ্ধ থাকবে আবির বাবু।”
কথা গুলো বলতে বলতেই অঝোর ধারায় পানি পড়ছে রুবির চোখ দিয়ে, আবিরের চোখও লাল হয়ে উঠেছে।
আবির:- “ঠিক আছে, তবে তাই হোক। তোমার শরীর কিংবা রুপের জন্য কখনো ভালোবাসিনি তোমায়। কিন্তু কেনো, কিভাবে, কিসের জন্য ভালোবেসেছি সেটাও জানি না। শুধু তোমাকে নিজের কাছে যত্ন করে আগলে রাখতে চেয়েছে, তোমার মধ্যে আমি আমার ভালো থাকাটা দেখতে পেয়েছি। হুম দূরে থেকেও ভালোবাসা যায়, কিন্তু কাছে থাকার যেই সুখময় অনুভূতি সেটা অনুভব করা যায়া না।”
থামলো আবির, মুখ তুলে চাইল রুবির দিকে। আবিরের চোখ লাল হয়ে আছে, চোখ টলমল করছে, কিছুতেই চোখের পানি গুলো পড়তে দিচ্ছে না ও। ভাঙ্গা গলায় আবারও বলল।
“এতো বোঝানোর পরেও বুঝলে না তুমি। ভালোবাসি তোমাকে, তোমার শরীর টাকে নয়। এই হাতে না পেলেও চলবে, তোমার শরীরের স্পর্শ। দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো আমি তোমাকে। শুধু চাই শেষ পর্যন্ত যেন তুমি ভালো থেকো। কথা দাও, আমার শরীর ছুঁয়ে। আর কখনো আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করবে না।”
রুবি এগিয়ে এলো আবিরের দিকে, হালকা করে হাত রাখলো আবিরের হাতে, যেন আবিরকে ছুঁয়ে দিলেই আবিরও অপবিত্র হয়ে যাবে। রুবির চোখ থেকে তখনও গড়গড় করে পানি পড়ছে, “কথা দিলাম আবির বাবু, আর কখনো আত্মহত্যা করার চেষ্টা করবো না। তবে আপনিও এগিয়ে যাবেন নিজের জীবনে। আমার জন্য নিজের জীবন টা নষ্ট করবেন না।”
আবির এক ঝটকায় রুবিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। আর নিজেকে আটকাতে পারলো না আবির, চোখের পানি ছেড়ে দিলো। ফুঁপিয়ে উঠলো ও, ভাঙ্গা আওয়াজ কোনো রকমে বলল, “পারবো না আমি নিজের জীবনে এগিয়ে যেতে রুবি, কখনোই পারবো না। তুমি ছাড়া আমি যে অসম্পূর্ণ। তুমি নিষ্ঠুর রুবি! ভীষণ নিষ্ঠুর! তোমার ভালোবাসা নিষ্ঠুর।”
কথা গুলো কাঁদতে কাঁদতে বলল আবির, আরমান অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। এভাবে কখনোই ভেঙে পড়তে দেখেনি ও ছেলেটাকে। আরমানের বুকের ভিতরটাও মুচড়ে উঠছে, সব সময় হাসি খুশি থাকা ছেলেটাকে আজ এই প্রথম বার এভাবে কাঁদতে দেখলো আরমান। মায়ার চোখেও অশ্রু। আবির মুখ তুলল, রুবির কাঁধে থেকে।
“জানি অধিকার নেই, তবুও এই টুকু অধিকার না হয় ভালোবাসার মানুষটির থেকে ছিনিয়ে নিলাম।”
কথাটা কান্না ভেজা গলায় বলে, আবির রুবির কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিলো।
“চাইলে এভাবেই মানুষটিকেও ছিনিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু আমি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে জোড় করে পেতে চাই না, সম্মান জানায় তার সিদ্ধান্তকে। ভালো থেকো বোকা পাখি। আর যদি কোনোদিনও আফসোস হয় নিজের সিদ্ধান্তের উপর, যদি মনে হয় এই অনাথ ছেলেটা তোমাকে বেশি ভালো রাখতে পারতো, যদি কষ্ট পাও এবং একবারের জন্যও মনে হয় আবিরের বুকে ফেরার কথা, (রুবিকে ছেড়ে দিয়ে নিজের দুই হাত দুই দিকে মেলে দিয়ে বলল) তাহলে নির্দ্বিধায় ফিরে এসো এই আবিরের বুকে। এই মনের দুয়ার শুধু তোমার জন্যই খোলা রাখবো.. শুধু তোমারি থাকবো.. শুধু তোমারি থাকবো… ভালোবাসি বোকা পাখি, আর যতো দিন বাঁচবো এই বোকা পাখিটাকেই ভালোবেসে যাবো।”
কথা গুলো বলে চোখের পানি মুছে বেরিয়ে গেলো আবির। রুবি ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ে, বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পড়লো হাউমাউ করে। মায়া গিয়ে রুবিকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো। আরমান একবার তাকালো আবিরের চলে যাওয়ার দিকে আর একবার রুবির দিকে। আজকের এই পরিস্থিতিতে নিজেকে প্রচন্ড অসহায় অনুভব হচ্ছে আরমানের। খুব কাছের দুটো মানুষের জন্য চেয়েও কিছু করতে পারছে না ও।
বর্তমান….
আয়ান রুমে প্রবেশ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তাকালো বিছানায় ওর জন্য ঘোমটা দিয়ে বসে অপেক্ষারত মাইশার দিকে। ধীরে পায়ে এগিয়ে গেলো ও বেডের কাছে, প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে একটা ছোটো বক্স বের করে, মাইশার থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে বসলো। ছোটো বক্সটা থেকে বের করলো, একটা ডায়মন্ডের ফিঙ্গার রিং। মুখে কোনো শব্দ না করেই, মাইশার বাঁ হাত টা টেনে নিজের হাতে নিয়ে রিংটা পরিয়ে দিলো মাইশার অনামিকা আঙ্গুলে। রিং পড়ানো শেষ হতে আবারও যত্ন সহকারে মাইশার হাত মাইশার কোলের উপর রাখলো। এরপর গম্ভীর স্বরে বলল, “এইসব হাবিজাবি পড়ে বসে না থেকে, এগুলো খুলে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়েছে।”
কথাটা বলেই আয়ান উঠে গেলো বিছানা থেকে, এরপর একটা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে রেখে ফ্লোরেই শুয়ে পড়লো।
চিত হয়ে, চোখে একটা হাত চাপা দিয়ে শুয়ে আছে আয়ান। কিছুক্ষণ পরেই ও অনুভব করলো, ওর পায়ে কারোর হাতের স্পর্শ, আর তার সাথে টপটপ করে পানি পড়ছে ওর পায়ে। ধরফর করে উঠে বসলো আয়ান, পায়ের কাছে মাইশা বসে ছিল। হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো ও। কাঁদতে কাঁদতেই বলল, “দয়া করে আর মুখ ফিরিয়ে থাকবেন না। এবার অন্তত ক্ষমা করে দিন আমায়, আমি যে আর এই মরন যন্ত্রনা সহ্য করতে পারছি না। এবার একটু রেহাই দিন আমায়।”
আয়ান মাইশাকে ধরে বলল, “আরে তুমি এইভাবে কাঁদছো কেনো? তোমাকে কমফোর্টেবল ফিল করানোর জন্যই তো বিছানা ছেড়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম আমি।”
মাইশা:- “দরকার নেই আমার এমন কমফোর্টেবল ফিল করার, আপনি বিছানায় চলুন। দোহাই লাগে আপনার, আমাকে আর এভাবে কষ্ট দিবেন না প্লিজ। ফিরিয়ে দিন আমার আগের আয়ানকে। এই আয়ানকে যে একদম মানাই না। আমি আমার আগের আয়ানকে ফিরে পেতে চাই। আগের সেই হাসি খুশি দুষ্টু আয়ানকে ফিরে পেতে চাই।”
কাঁদতে কাঁদতেই কথা গুলো বলল মাইশা। আয়ান একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল, “আগের আয়ানকে ফেরত চাইছো, আবার বিছানাতেও যেতে বলছো, মনে আছে তো আমাদের এখনের সম্পর্ক? সহ্য করতে পারবে তো সেই আগের আয়ানের টর্চার?”
মাইশা কাঁদতে কাঁদতেই কোনো কিছু না বুঝেই বলল, “হুম এখন তো আমারা স্বামী স্ত্রী। অতো কিছু জানি না, আপনি প্লিজ আবার আগের মতো হয়ে যান। কত স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন আজকের এই রাতের জন্য, তাহলে এখন কেনো দূরে ঠেলে দিচ্ছেন আমায়? আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না।”
আয়ান:- “আচ্ছা আবারও রূপান্তরিত হলাম আগের আয়ানে। আর দূরে রাখবো না তোমায়। তুমি তোমার পাওনা শাস্তি যথেষ্ট পরিমাণে পেয়ে গেছো।”
মাইশার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠলো। চোখের পানি মুছে হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করলো, “সত্যি ক্ষমা করে দিয়েছেন আমায়? আর দূরে সরিয়ে রাখবেন না তো? আবারও আগের মতো কাছে টেনে নিবেন আমায়?”
আয়ান একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল, “কাছে টেনে নেবো না, এই যে নিলাম।”
বলেই এক ঝটকায় মাইশাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে, মাইশার মেয়েলি ঠোঁটে নিজের পুরুষালী ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। মাইশা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো আয়ানের বন্ধ চোখের দিকে। আয়ান তো নিজের মনে, মিষ্টি সুধা পান করতে ব্যাস্ত। কিছুক্ষণ পরেই আয়ান নিজেকে মাইশার থেকে সরিয়ে নিয়ে বলল, “এই শক্ত ফ্লোরে বসে থেকে মজা আসছে না, চলো বিছানায় যায়।”
বলেই আয়ান মাইশাকে কোলে তুলে নিলো, মাইশা লজ্জায় মুখ লুকালো আয়ানের বুকে। এরপর আয়ান মাইশাকে দুষ্টুমি করে বিছানায় ফেলে দিলো, উপর থেকে। নরম বিছানা হওয়ার জন্য মাইশার ব্যাথা লাগলো না, বরং ড্রপ খেলো ও। আয়ান দুষ্টু হেসে বিছানায় লাফিয়ে উঠলো। বলল, “ চলো শুরু করা যাক, আজকের রাতের জন্য দেখা স্বপ্ন গুলো।”
মাইশা লজ্জায় উল্টো দিকে ফিরে গেলো। ওর এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে আয়ান ওকে ক্ষমা করে দিয়ে মেনে নিয়েছে। হ্যাঁ আয়ান সব ভুলে মেনে নিয়েছে মাইশা কে, আরমানের কথায়। আরমান অনেক বুঝিয়েছে ওকে আগের দিন রাতে। আয়ানও আর কষ্টে দেখতে পারছিল না নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে, প্রথমে ভেবেছিল মাইশাকে আর কখনো মেনে নেবে না। কিন্তু মাইশার সত্যিই আগের থেকে পরিবর্তন হয়েছে, আয়ান অনেক কষ্ট দিয়েছে মেয়েটাকে, সব মুখ বুজে সহ্য করেছে ও। তাই নিজেও আর দূরে সরিয়ে রাখতে পারলো না মাইশাকে। অবশেষে নিজেই কাছে টেনে নিলো ও। দুটো মনের সাথে দেহেরও মিলন হলো আজ।
অন্য দিকে সামিরা আবিরের রুমের দরজার লক খুলে, নিঃশব্দে রুমের ভিতর প্রবেশ করলো ও। কিন্তু ওর যখনি চোখ পড়লো বিছানার দিকে, সাথে সাথে আঁতকে উঠলো। বিছানায় আবির শুয়ে আছে, মাথায়, হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ। গায়ে এখনো সেই সকালের সাদা শার্ট টাই পড়ে আছে, যাতে লেগে আছে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। মাথার চুল এলোমেলো, পুরো বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে আবিরকে। সামিরার চোখ ছলছল করে উঠলো। ধীর পায়ে এগিয়ে আবিরের পাশে বসলো ও। সাথে সাথে একটা বিদঘুটে গন্ধ নাকে এসে লাগল, দুই হাতে নাক মুখ চেপে ধরলো ও।
শোনা গেলো আবিরের কন্ঠ স্বর, চোখ বন্ধ রেখেই একইভাবে পড়ে থেকে বলল, “চলে যা সামিরা, সহ্য করতে পারবি না। একেবারে দেশি মদ খেয়েছি, জানিস তো এই গ্রামের দেশি মদ গুলো পঁচা পানি দিয়ে তৈরি।”
কথাটা বলেই আবির বাঁকা হাসলো। সামিরা নিজের নাকা মুখ থেকে হাত সরিয়ে, একটা হাত আবিরের মাথায় রাখলো। ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিতে বলল, “তোমার মুখ থেকে শামুক নামটাই মানায় আবির ভাইয়া, সামিরা নামটা নয়।”
আবির তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “তুই ও তো আবুল ভাইয়ার জায়গায় আবির ভাইয়া ডাকছিস।”
সামিরা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললো ও। কাঁদতে কাঁদতেই বলল, “তোমার অবস্থা দেখে সব এলোমেলো লাগছে ভাইয়া। কি অবস্থা করেছো নিজের, দেখেছো একবার?”
আবির শোয়া থেকে উঠে বসলো, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “আরে তুই কেনো কান্না করছিস? আমার অবস্থা দেখেই তোর এলোমেলো লাগছে? আর আমার পুরো জীবনটাই যে এলোমেলো হয়ে গেলো?”
আবিরের চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে। মুখে বেশ কিছু জায়গায় কাটা ছেঁড়ার দাগ। ব্যান্ডেজ গুলোও লাল রক্তে ভিজে গেছে। সামিরা কাঁদতে কাঁদতেই বলল, “অতো কিছু বুঝি না, শুধু এইটুকু জানি উপর ওয়ালা যা কিছু করেন ভালোর জন্যই করেন। তুমি প্লিজ এভাবে নিজেকে কষ্ট দিও না, তোমাকে এভাবে দেখতে একদম ভালো লাগে না আমার।”
আবির সামিরার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল, “আরে এমন বাচ্চাদের মতো কাঁদছিস কেনো তুই? আমি তো বেঁচে আছি, এখনো মারা যায় নি। মারা গেলে না হয় এমন ফ্যাচফ্যাচ করে নাকের জলে চোখের জলে মিশিয়ে কাঁদিস।”
আবিরের কথা শুনে, আরো জোড়ে আওয়াজ করে কান্না শুরু করলো সামিরা।
আবির:- “আরে! আরে! থাম প্লিজ। তোর কান্নার আওয়াজে লোক জড়ো হয়ে যাবে তো আমার রুমে। তখন আবার আমাকে ধরে সবাই মারতে শুরু করবো, শাহরিয়ার ফ্যামিলির আদুরে বাচ্চা টাকে কাঁদানোর জন্য।”
সামিরা চোখ নাক মুছে বলল, “আমি মোটেও বাচ্চা নয়।”
আবির:- “হুম তুই তো পাকা বুড়ি। তাই তো এতো রাতে কোনো কিছু না ভেবেই, বড়ো ভাইয়ার কথায় আমার রুমে চলে এসেছিস। তোকে আরমান পাঠিয়েছে তাই না? শালা নিজের বাসর রাতেও আমার কথা ভুলেনি, ঠিকই মনে রেখেছে।”
সামিরা কৌতুহল গলায় জিজ্ঞাসা করলো, “তুমি কিভাবে জানলে যে ভাইয়া আমাকে পাঠিয়েছে তোমার রুমে?”
আবির হেসে বলল, “সেই ছোটো থেকে আছি ওর সাথে, এতোটুকু যদি না বুঝি তাহলে ওই গম্ভীর কাঠখোট্টা মানুষটার বন্ধু কিভাবে হলাম?”
এরপর আবির সামিরার দিকে তাকিয়ে অসহায় গলায় বলল, “আচ্ছা শোন না! আমি জানি আরমান হয়তো তোকে আমাকে বাইরে যেতে দিতে নিষেধ করেছে, নিশ্চয় বলেছে আমার উপর নজর রাখতে। প্লিজ একবার বাইরে যেতে দিবি? এই চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসছে। আরমান ভাবছে, বাইরে গেলেই আমি নিজের ক্ষতি করবো, কিন্তু পাগলটা এটা ভাবছে না যে আমি নিজের ক্ষতি করতে চাইলে তো এই চারদেয়ালের মাঝে বন্দী থেকেও করতে পারি।”
সামিরা ভীতু গলায় বলল, “কিন্তু তোমার অবস্থা এখন ভালো নয়, গায়ে জ্বরও এসেছে দেখছি। ভাইয়া জানতে পারলে বকবে আমায়।”
আবির:- “ও এখন এই বাড়িতে নেই তাই জানতেও পারবে না।”
সামিরা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো, “তুমি কিভাবে জানলে যে ভাইয়া বাড়িতে নেই।”
আবির দুষ্টু হেসে, “আমি জানবো না তো কে জানবে শুনি?”
সামিরা:- “হুম সেটাই! আচ্ছা তুমি কিছুক্ষণ ওয়েট করো আমি এখনি আসছি।”
বলেই সামিরা রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলো, আবির পিছন থেকে ডাকলেও শুনলো না মেয়েটা। দরজা খুলা তাই আবির বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো, কিন্তু কি মনে করে আবারও বিছানায় বসে পড়লো। এইভাবে বেরিয়ে গেলে মেয়েটা কষ্ট পাবে। খুব বেশি দেরি হল না সামিরার আবার ছুটে আসতে। হাতে একটা মোটা শীতের চাদর। হাঁপাতে হাঁপাতে সেটা আবিরের গায়ে জড়িয়ে দিলো।
সামিরা:- “এবার বাইরে যেতে পারো। তবে হ্যাঁ সাথে আমিও যাবো। ভাইয়ার আদেশ কিছুতেই একা ছাড়া যাবে না তোমায়। আর আমি ভাইয়ার কথা অমান্য করতে পারবো না।”
আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “আচ্ছা ঠিক আছে চল।”
বলেই উঠে দাঁড়াতে গেলে, পড়ে যেতে নিলো আবির। কিন্তু সামিরা ধরে ফেললো, “দেখেছো! ঠিক মতো হাঁটতেও পারছো না, এই অবস্থায় বাইরে না যাওয়া টাই ঠিক।”
আবির:- “আরে ঠিক আছি আমি, অসুবিধা নেই। আসলে নেশা টা এখনো কাটেনি। তুই কাছে আসিস না, গন্ধ সহ্য করতে পারবি না।”
আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৬১
সামিরা:- “কেনো খাও এই ছাইপাশ, যদি না সহ্য করতে পারো?”
আবির এই কথার কোনো উত্তর দিলো না, শুধু একটু হাসলো। যেই হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে হাজারো কষ্ট, যা মুখে বলার নয়। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আবির, পিছু পিছু সামিরাও গেলো।