চেকমেট পর্ব ৫৬
সারিকা হোসাইন
লুইসের লাশের কফিন নিয়ে লুইসের ছোট বাড়িটার আঙিনায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইয়ং আর সারফরাজ।লুইসের বৃদ্ধ মা কে এখনো জানানো হয়নি লুইস যে আর বেঁচে নেই।লুইসের অবর্তমানে এরিকা এসে লুইসের মায়ের আর ভাইয়ের যত্ন নেয়।
সারফরাজ কে থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লুইসের ভাই অবাক হয়ে হাত পা নেড়ে উত্তেজনা প্রকাশ করলো।মুখে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না।ছেলের এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে লুইসের মা লুনা উকি দিয়ে বাইরে তাকালেন।সারফরাজ কে কালো পোশাকে দেখে বৃদ্ধা কিছুটা ভরকালেন।এরপর দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন।বাড়ির আঙিনায় কাঠের চারকোনা বাক্স থেকে লুনা অবাক ভয়ার্ত গলায় শুধালো
“হুয়াট হ্যাপেন্ড?হোয়ার ইজ মাই সান?
লুইসের ভাই ও এলোমেলো পায়ে এসে ঘটনা বোঝার জন্য কাঠের বাক্সের পানে তাকিয়ে রইলো।এরিকা হাতের কাজ শেষ করে বাইরে এসে বাক্স আর নিশ্চুপ ইয়ং কে দেখে ব্যস্ত গলায় শুধালো
“ইয়ং !হ্যাজ লুইস নট কাম ?
এরিকার প্রশ্নের জবাবে ইয়ং কি উত্তর দেবে ভেবে পেলো না।তার ভেতর ঠেলে কান্না পাচ্ছে।এবার এরিকা সারফরাজ এর ফ্যাকাসে মুখের পানে তাকালো।এরপর কম্পিত গলায় ডাকলো
“মিস্টার!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এরিকার ডাকে সারফরাজ হকচকিয়ে উঠলো।এরিকার বাদামি চোখে নিজের নীল দৃষ্টি মেলালো সারফরাজ।মেয়েটি কেমন সন্দিহান প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে সারফরাজ এর পানে।সারফরাজ তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে কফিনে তাকালো।এরিকা বোধ হয় বুঝলো কিছু।সে নিঃশব্দে চোখের জল ছেড়ে ইয়ং এর সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা গলায় শুধালো
“ইজ ইট ট্রু?
ইয়ং আর চোখের জল লুকাতে পারলো না।জোরে চিৎকার করে উঠলো।ইয়ংয়ের চিৎকারে সব কিছু স্পষ্ট হয়ে গেলো।এরিকা কফিনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে শুধু ঈষৎ বিড়বিড় করলো
“লুইস।
এরপর শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে লুটিয়ে পড়লো মাটিতে।এরিকার জ্ঞান হারানো দেখে লুনা ঘাবড়ে গিয়ে চিৎকার করে উঠলো।লুইসের অবুঝ বুদ্ধি হীন ভাই এক হাতে কফিন ধরে ঝাকাতে লাগলো অন্য দিকে এরিকার মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগলো।লুনা হতভম্ব হয়ে দেখতে লাগলো এই দৃশ্য।এই মুহূর্তে তার কি করা উচিত তার জানা নেই।সে দুর্বল শরীরে সারফরাজ এর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো
“ইজ মাই সান নো লঙ্গার আ্যলাইভ?
সারফরাজ চোখের জল ছেড়ে দিয়ে লুনার হাত চেপে ধরে বলে উঠলো
“প্লিজ ফরগিভ মি।আই কুড নট সেভ হীম।
লুনা স্তব্ধ হয়ে সারফরাজ এর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে কফিনের কাছে গিয়ে বসলো।এরপর গগন কাঁপিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো
“সান, হ্যাভ ইউ রিটার্ন্ড টু মাদার আফটার ডায়িং?
লুইসের ভাই মায়ের কান্নায় আরো জোরে জোরে কাঁদতে আরম্ভ করলো।ইয়ং দৌড়ে গিয়ে এরিকা কে কোলে তুলে ঘরে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিল।এরপর চোখে মুখে পানির ছিটা দিলো।তবুও চোখ খুললো না এরিকা।সারফরাজ কল করে চার্চের ফাদার ডাকলো।সঙ্গে এলো ড্যাভিন আর ব্রাউনি।ড্যাভিন এর কোলে এঞ্জেলো।সারফরাজ কে দেখে এঞ্জেলো আজ ঘেউ ঘেউ করলো না।হয়তো বুঝলো মনিবের মন কষ্টে জর্জরিত।
সারফরাজ লুইসের ষোল বছরের ছোট ভাইটাকে বুকে আগলে নিলো।ব্রাউনি লুনা কে টেনে বুকে নিয়ে নানান শান্তনার বাণী শুনালো।কিন্তু মাতৃহৃদয় কি এসবে ঠান্ডা হয়?যেই সন্তানের উষ্ণ দেহ বুকে জড়িয়ে চোখ বুজে স্বস্তির শ্বাস টানা যেতো সেই সন্তান আজ নিথর বরফ খন্ড।না তাকে ছুঁয়ে আদর করা যাচ্ছে না বুকে জড়ানো যাচ্ছে।লুনা মাটিতে লুটিয়ে কাঁদলেন।এই ছেলেকে নিয়েই এতদিন বেঁচে ছিলেন তিনি।বিধাতা তাকে যেই আরেক সন্তান দিয়েছেন তাকে নিয়ে নেই কোনো আশা ভরসা।লুইস হীন জীবন কি করে চলবে?আর এরিকা?তার কি হবে?তার এতো বছরের অপেক্ষা?
সারফরাজ চারপাশের পরিস্থিতি দেখে ইয়ংয়ের হাত জড়িয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠলো।এরপর হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে অনুরোধ এর স্বরে বলে উঠলো
“ইয়ং শেষ বারের মতো তোমায় আমি ওর্ডার দিচ্ছি।তুমি এরিকা কে বিয়ে করবে।লুইসের পরিবার কে নিজের পরিবারের মতো ট্রিট করবে।প্লিজ আমাকে ফিরিও না।
অনাথ ইয়ং একটা পরিবারের জন্য অনেক কেঁদেছে।একাকিত্ব দুর্বিষহ জীবন টানতে না পেরে বেশ কয়েকবার সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছে।এরপর হঠাৎ একদিন সারফরাজ এর সাথে তার দেখা।নিজের জীবন বাজি রেখে রি মানুষ টাকে বাচিয়েছিলো সে।কারন তার জীবন ছিলো অর্থহীন।সেদিনই ইয়ং কে নিজের বিশ্বস্ত দেহ রক্ষী হিসেৰে গ্রহণ করে সারফরাজ।তার এই অনিশ্চিত জীবনে কোনো ভালোবাসার মানুষ ও আসেনি।এসবের অবশ্য এখন পরোয়া করে না ইয়ং।সারফরাজ এর জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেই পুরোটা জীবন কাটিয়ে দিতে চায় সে।
সারফরাজ এর অনুরোধে কি উত্তর দেবে ভেবে পেলো না ইয়ং।সারফরাজ আজ চিৎকার করলো না।দ্বিতীয় বারের মতো আবার লুইসের কাঁধ চেপে অনুনয় করলো
“প্লিজ ইয়ং।আমাকে ফিরিয়ে দিও না।লুইসের পরিবারের এই ভগ্ন দশা সহ্য করতে পারছি না আমি।এসবের জন্য নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে।
ইয়ং তপ্ত শ্বাস ফেলে মাথা ঝাঁকালো।এরপর লুনার কাছে গিয়ে লুনাকে আর লুইসের ভাইকে বুকে জড়িয়ে বলে উঠলো
“ফ্রম টুডে আই আ্যম ইউর লুইস।
বেশি সময় লুইসের দেহ এভাবে রাখা হলো না।শেষ বারের মতো লুইসের পরিবারকে লুইসের মুখটা দেখিয়ে আয়োজন করা হলো
ফিউনারলের।
কালো পোশাকে নিজেদের আবৃত করলো প্রত্যেকে।এরপর হাতে তুলে নিলো সাদা গোলাপ।লুইসের কফিনে কালো পোশাকে সুন্দর করে সাজানো হলো লুইসকে।বুকের উপর দেয়া হলো একটা লম্বা ডাটি সহ সাদা গোলাপ।এরপর কফিনের ঢাকনা বন্ধ করে চলতে লাগলো সমাধি স্থলে।
মুহূর্তেই ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশ ভারী হয়ে বৃষ্টি ঝরতে লাগলো।বৃষ্টির পানে তাকিয়ে ফাদার জ্যাস তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে উঠলো
“ম্যা গড হ্যাভ মার্সি অন দ্যা সৌল অফ দ্যা ডিপার্টেড।
সারফরাজ এর সমস্ত শুভাকাংখী,বন্ধু,বিজনেস পার্টনার, সকলেই এলো লুইসের শেষ যাত্রায়।কালো ছাতায় ঢেকে গেলো পথ।যারা লুইসের সান্নিধ্যে ছিলো তারা শোকে পাথরের ন্যয় রইলো।
বৃষ্টি যেনো আজ পবিত্র এই আত্মার মুক্তিতে ব্যাথিত হলো।সে শুয়ে নিয়ে গেলো সকল অপবিত্রতা।
এরিকার হাহাকার, লুনার চিৎকার আর লুইসের ভাইয়ের করুন আহাজারিতে সমাধিস্ত হলো লুইসের কফিন।ইয়ংয়ের কাছে লুইসের পরিবারের দায়িত্ব সমর্পণ করলো সারফরাজ।অসহায় লুনা যেনো অথৈ সমুদ্রে নাগাল খুঁজে পেলেন।প্রাণ প্রিয় পুত্রকে হারিয়ে ইয়ং কে বুকে টেনে নিলেন।কষ্টে পাথর হয়ে রইলো শুধু এরিকা।সারফরাজ এরিকার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে স্বাভাবিক হতে অনুরোধ জানালো।
এরিকার কানে বাজতে লাগলো লুইসের দেয়া শেষ প্রতিশ্রুতি
“এবার এসেই তোমায় ঘরে তুলবো।একেবারে নিজের করে নেবো।আর কোনো দূরত্ব রবে না আমাদের।
কিন্তু আফসোস।তাদের মধ্যে আজ থেকে যোজন যোজনের দূরত্ব।
নিজের অফিসে এসে আরাম করে বসলো সারফরাজ।দেহ রক্ষীর কাজ থেকে ইয়ংকে মুক্ত করে দিয়েছে সে।ইয়ং সারফরাজ এর ডায়মন্ড কোম্পানি তে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে।স্যালারিও বেশ বড়।রুদ্ররাজ হীন সারফরাজ কে ক্ষতি করার আর কেউ নেই।সারফরাজ কে ছাড়াই ড্যাভিন আর ব্রাউনি মিলে কোম্পানি দেখভাল করেছে।এক কানা কড়িও এদিক সেদিক হয় নি।ড্যাভিন আর ব্রাউনি কে নিজের কেবিনে ডাকলো সারফরাজ।এরপর কোম্পানির দায়িত্ব আরো কিছুদিনের জন্য তাদের হাতে তুলে দিয়ে অনুরোধ করলো
“আর মাত্র কয়েকটা দিন।তোমাদের ম্যাডাম কে ঘরে তুলেই ফিরে আসবো।অভিরূপ এর অবস্থা খুব খারাপ।নয়তো ওকেই দিতাম সমস্ত ভার।
ব্রাউনি আর ড্যাভিন মাথা দুলিয়ে রাজি হলো।সারফরাজ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট প্রকাশ করে নিজের ফরেস্ট হাউজে ফিরে এলো।এরপর কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে দরকারি সমস্ত জিনিস লাগেজে গুছালো।দুদিন পরেই তাকে ফিরতে হবে দেশে।রূপকথা দশ বারো দিন ধরে কোনো প্রকার যোগাযোগ করছে না।বাবা মেয়েকে শায়েস্তা করার জন্য সারফরাজ ও কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বিষয়টা ঘেঁটে গেছে।রূপকথার চাল চলন সুবিধার মনে হচ্ছে না।নিশ্চিত সারফরাজ এর নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানোর কোন ফন্দি এটেছে এই মেয়ে।তবে এখন উপায় কি?রূপকথাই যদি বেঁকে বসে ?জি যদি সারফরাজ কে ফেলে অন্য কাউকে বিয়েতে মত দেয়?না না যে হতে পারে না।এমন হলে রূপকথার গলা কেটে নেবে সারফরাজ ।যেই ঠোঁটে সারফরাজ চুমু একেছে সেই ঠোঁটে নজর বুলানোর ধৃষ্টতা কারোর হয়নি এখনো।
নানাবিধ ভাবনা ভেবে রূপকথাকে কল করলো সারফরাজ।বাংলাদেশ এ এখন গভীর রাত।সারফরাজ এর মনে হলো রূপকথা হয়তো গভীর ঘুমে তলিয়েছে।কিন্তু সারফরাজ এর সমস্ত হুশ উড়ে গেলো এতো রাতে রূপকথার ফোন এনগেজ দেখে।বার কয়েক রূপকথার নম্বর ডায়াল করলো সারফরাজ।ফোন ব্যস্ত।সারফরাজ এর মাথায় আগুন ধরে গেলো।মাথা কাজ করা বন্ধ হলো।দিশা ন পেয়ে সুফিয়ান চৌধুরীর নম্বর কল করলেন।রিং কেটে যাবে যাবে মুহূর্তে ফোন তুললেন সুফিয়ান।এরপর ঘুম ঘুম গলায় বললেন
“কিরে হতচ্ছাড়া!তোর যন্ত্রনায় কি কোনো দিনও রাতে ঘুমাতে পারবো না?
সারফরাজ ভীত গলায় উত্তেজিত ভঙ্গিতে বললো
“আপনার মেয়ে এতো রাতে ব্যস্ত কার সাথে?
“সে জেনে তোর কি কাজ?আমার মেয়ের সাথে তোর কিসের লেনাদেনা?এই মাসেই বিয়ে করবি বলে আমার মেয়েকে না সেদিন তাড়িয়ে দিলি?
সারফরাজ এর এবার কেঁদে দেবার জোগাড় হলো।সে কম্পিত গলায় বললো
“চোদানির পোয়া শশুর আব্বা আমি মজা করছি না আপনার সাথে।আমার প্রেসার ফল করছে।হার্ট এট্যাক হয়ে যাচ্চে।
“তাতে আমার কি?তুই মরে যা।
“আপনাকে আর আপনার মেয়েকে খুন করে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেবো আমি।
“দে।
সারফরাজ এবার তেঁতে উঠলো।সে গর্জে শুধালো
“এতো রাতে কার সাথে কথা বলছে রূপকথা?
সুফিয়ান চৌধুরী স্বাভাবিক গলায় বললেন
“আমার বন্ধুর ছেলে বুঝলি?ছেলে বিশাল বড় ডক্টর।ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করেছে।তুই আগেই কেটে পড়েছিস খুশি হয়েছি।এবার ফোন কেটে আমাকে ঘুমুতে দে।নয়তো তোর পাছা লাল করে ফেলবো।
বলেই ফোন কেটে বন্ধ করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমুলেন সুফিয়ান চৌধুরী।এদিকে সারফরাজ এর কাছে সব কিছু শূলের মতো বিধতে লাগলো।তার ইচ্ছে হলো চিৎকার করে কাঁদতে।
সারফরাজ এর মনে হলো এখানে এসে সে ফেঁসে গিয়েছে।কিছুতেই তার শান্তি লাগছে না।
বিছানা থেকে উঠে পুরো ঘরে পায়চারি করতে আরম্ভ করলো সারফরাজ।এরপর গর্জে গর্জে ডাকলো
“রূপকথা প্রাণে মেরে ফেলবো বলে দিলাম।
সকালে ঘুম ভেঙে উঠে নিজের ফোন বন্ধ পেয়ে অবাক হলো রূপকথা।রাতেই ফুল চার্জ করে ঘুমিয়েছিলো।এখন অফ হলো কি করে?রূপকথার পাশে মরার মতো পরে পরে ঘুমাচ্ছে নেলি।রূপকথা নেলিকে পা দিয়ে লাথি দিলো।নড়েচড়ে উঠলো নেলি।কিন্তু চোখ খুললো না।রূপকথা আবার কুনুই দিয়ে গুঁতো দিলো।নেলি এবার বিরক্তি নিয়ে চোখ খুললো।রূপকথা কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো
“আমার ফোন নিয়েছিলি?.
নেলি চোখ বুজে উত্তর করলো
“গত রাতে আমার ফোন বন্ধ হয়ে গেছিলো।পরে তোর ফোনে কল করেছিলো অভিরূপ।সারা রাত কথা বলে তোর টাও বন্ধ হয়ে গেছে।চার্জ দিতে মনে ছিল না।সরি।
বলেই ফসফস করে শ্বাস নিলো নেলি।এরপর আবার বলে উঠলো
“ভাইয়া সারা রাতে দুশো ছাপ্পান্ন টা কল করেছে।আমি টের পাইনি।
সারফরাজ এতগুলো কল করেছে শুনে ভয়ে তন্দ্রা ছুটলো রূপকথার।পরক্ষনেই চোখে মুখে অদ্ভুত এক শয়তানি ফুটে উঠলো।সে ফোন চার্জ দিলো না ।ওভাবেই বন্ধ করে রাখলো।এরপর মনে মনে বলে উঠলো
“আমাকে অপমান করে বের করে দেয়া নাহ?দেখাচ্ছি মজা।
চারদিন পর পড়িমরি করে ঢাকা ফিরলো সারফরাজ।ফিরেই গাড়ি নিয়ে ছুটলো সুফিয়ান চৌধুরীর বাসায়।সকালে ঘুম থেকে উঠে কেবলই এক পাশের গোফে কালি লাগিয়েছেন সুফিয়ান চৌধুরী।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আজ জরুরি বৈঠক আছে তার।কোমরে পেঁচানো সাদা তোয়ালে।রেখা এখনও উঠেনি।এতো সকালে উঠার অভ্যাস নেই ভদ্র মহিলার।রূপকথা বন্ধুদের সাথে ট্যুরে গিয়েছে সিলেট।বাড়িতে সেরকম কোনো ঝামেলা নেই।তাই গুনগুন করে গান গাইছেন আর কলপ লাগাচ্ছেন।এমন সময় ধড়াস করে খোলে গেলো দরজা।দরজার শব্দে চমকে উঠলেন সুফিয়ান চৌধুরী।কলপ ফেলে ধমকে উঠলেন
“কে রে ওখানে?
সারফরাজ তেড়ে এসে সুফিয়ান চৌধুরীর কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে বলে উঠলো
“আপনার মেয়ে কোথায়?
সুফিয়ান কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে কলপ লাগাতে লাগাতে উত্তর করলেন
“বন্দুক তোর পেছনে গুঁজে দেবো হতচ্ছাড়া।
সারফরাজ আবার বললো
“আপনার মেয়েকে ডাকুন।
সুফিয়ান গানের ভলিয়ম বাড়ালেন
“যদি থাকিতে না চায়?কি লাভ হইবো শিকল বেড়ি দিয়া পাখির পায়।
সুফিয়ান চৌধুরীর গানে সারফরাজ এর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।সে হনহন করে রূপকথার কক্ষে গেলো।কক্ষে রূপকথা নেই।বাথরুমের দরজা ও খোলা।সারফরাজ দৌড়ে এসে শুধালো
“রূপকথা বাসায় নেই?
“নাহ নেই।রূপকথা হানি মুনে গেছে শৈশবের সাথে।দেখেছিস না কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড এর জন্য ফোন বন্ধ রেখেছে।এবার তুই আরামসে বিয়ে কর,নিকাহ কর,সাঙ্গা কর যা খুশি তাই কর।আমাদের কোনো আপত্তি নেই বাপু।
সারফরাজ ধরে আসা গলায় বললো
“আপনি মজা করছেন তাই না? প্রমান দেখান দেখি।নইলে বিশ্বাস করবো না।
কলপের বাটি বেসিনের উপর রেখে সুফিয়ান চৌধুরী ফোন করলো রূপকথার ক্লোজ ফ্রেন্ড নিকিতার কাছে।সোফিয়ান চৌধুরী জানেন এখানে ফোন করলে রূপকথাই ধরবে।তাই ফোন কানে তুললেন।হলো ও তাই।ঘুম ঘমু গলায় ফোন ধরলো রূপকথা।পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে তার শরীর বেশ ক্লান্ত হয়ে রয়েছে।
“হ্যা বাবা বলো।এতো সকালে কেনো ঘুম ভাঙালে ফোন দিয়ে?
সুফিয়ান দুস্টু হাসলেন সারফরাজ এর পানে তাকিয়ে।এরপর নাটকীয় ধীর ভঙ্গিমায় হাসি হাসি মুখে বলে উঠলেন
“তুই আর শৈশব যে হানিমুনে গেছিস এটা সারফরাজ বিশ্বাস করতে পারছে না।প্রমান চায়।তাদের একটা ছবি দে তো।
শৈশব সুফিয়ান চৌধুরীর বন্ধুর ছেলে।তাদের কটেজেই গিয়ে উঠেছে রূপকথা।ছেলেটা রূপকথার চাইতে বারো বছরের বড়।রূপকথাকে সে আপন ছোট বোনের নজরে দেখে।শৈশব ই রূপকথাকে আর তার বন্ধুদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সিলেট দেখাচ্চে।সুফিয়ান চৌধুরীর বন্ধু চেয়ে ছিল রূপকথা তাদের বাড়িতেই থাকুক।কিন্তু রূপকথা রাজি হয়নি।কারন হোটেলের মতো কম্ফোর্টেবল পরিবেশ মানুষের বাড়িতে পাওয়া যায় না।তাছাড়া শৈশবের বউ , বাচ্চাও রয়েছে।রূপকথা ঠোঁট বাকিয়ে হেসে শৈশবের সাথে ক্লোজ তোলা কিছু ছবি সুফিয়ান চৌধুরীর নম্বরে পাঠালো।এতেও ক্ষান্ত হলো না।নিকিতাকে ক্বলম্বলের ভেতর জড়িয়ে কাপল স্টাইলে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলো।
কাপল ছবি দেখে সুফিয়ান চৌধুরীর ও হার্ট এট্যাক হবার অবস্থা হলো।কিন্তু সারফরাজ এর সামনে কুল রইলেন।এরপর মোবাইল খানা সারফরাজ এর হাতে দিয়ে বলে উঠলো
চেকমেট পর্ব ৫৫
“নিজ চোখে মন ভরে দেখ।
সারফরাজ অবিশ্বাস্য চোখে ছবি গুলো দেখে সুফিয়ান চৌধুরী কে ধামকি দিলো
“আপনার মেয়ে আজই বিধবা হবে।স্বামীর লাশ কবরে ঢোকানোর আগেই আবার লাল শাড়িতে সাজবে।গেলাম আমি সিলেট।