ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩৬

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩৬
মাহিরা ইসলাম মাহী

আকাশ চিরে সন্ধ্যা নামবে নামবে ভাব।
আদ্রিত গাড়ি থামায় নদীর তীরে।
নদীর নামটা কি মাহরিসা জানে না।
সন্ধ্যা নামায় আশে পাশে মানুষের আনাগোনা নেই একদমি।
শূন্য তীরে নেমে দাঁড়ায় দু’জন কপোত-কপোতী।
পাড়ে জন্মেছে দূর্বা ঘাসের আস্তরণ। সবুজের সমাহার সেথায়।
আদ্রিত নেমে নিজ ডান হাত এগিয়ে দেয় প্রিয়তমার দিকে।

“ আয়।”
মাহরিসা অবাক নয়নে চেয়ে।
কাঁপা কাঁপা হাতে সে নিজ হাত রাখলো আদ্রিতের হাতের পাতায়।
শীতল হাতের স্পর্শ পেতেই বুকের মাঝে সজোড়ে বারি মেরে উঠলো বোধহয়। হয়তো সে এমন মৃগীরুগীর ন্যায় কেঁপে উঠবে কেন?
শক্ত মুঠো করে ধরলো আদ্রিত অর্ধাঙ্গিনীর সে নরম- কোমল হাত খানা।
আদ্রিতের মনে হলো একমুঠো তুলো নিজ হাতে বন্দী করেছে বোধহয় সে।
দূর্বাঘাসের আস্তরণের ভীরে মাটি খোঁজা বৃথা।
কেউ সেই চেষ্টা টুকু ও করলো না।
বরং অর্ধাঙ্গিনীকে নিয়ে জাপ্টে বসে পরলো আদ্রিত ঘাসের উপর।
মাহরিসা দুরুদুরু বুকে টিপটিপ করে আঁড়চোখে চায় মানুষটার রাগী মুখশ্রীর পানে।সরাসরি তাকানোর সাহস হয় না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ভয়ে গলা শুকিয়ে তার কাঠকাঠ। তীব্র অস্থিরতা অনুভব করছে মাহরিসা।কেন এখানে নিয়ে এলো আদ্রিত তাকে।কি উদ্দেশ্যে?
সূর্যিমামা ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে কোনো অতল গহ্বরে।
নিজ কোমরে কামিজের ফাঁক গলিয়ে আদ্রিতের শীতল হাতের ছোঁয়া অনুভব করে মাহরিসা চোখ বড়সড় করে তাকায়।
“ কি..কি করছো আদু ভাইয়া? “
“ আপাতত কিছু করছি না।জানতে চাইছি।”
“ মা..মানে।”
আদ্রিত মাহরিসার কাজল কালো চোখে চোখ রাখে।
“ ইদানীং আমায় ইগনোর করছিস কেন? কি কারণে? তোর বাপের সম্পত্তির ভাগ বসাবো তোর থেকে? এত দ্রুত সম্পর্কের সমীকরণ ভুলে গেলি মেরিগোল্ড? “
আদ্রিতের কন্ঠে রাগ,ক্ষোভ, অভিমান,হতাশার সংমিশ্রণ।
মাহরিসা বুঝতে সক্ষম হলো সে ব্যকুলতা।

“ আদু ভাইয়া আমি…”
“ তুই কি?”
“ আমি..”
“ আমি আমি করছিস কেন বেয়াদব থাপ্পড়ে গাল ফাটাবো তোর।ফাজলামো করো আমার সঙ্গে?
বিয়ে করেছি বা** ফেলাতে ইডিয়েট।
তোমার ঘোড়ারডিমের ইগনোর দেখার জন্য বিয়ে করেছি?বল।জবাব দে।”
ধমকের দরুণ চক্ষু হতে টপটপ করে পানি পরে মাহরিসার গাল বেয়ে।
“ আমি ইচ্ছে করে করিনি আদু ভাইয়া। বাবা-মায়ের আমায় নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল আর আমি…”
“ তুই কি? তুই কি হ্যাঁ? তোর বাবা -মায়ের শুধু স্বপ্ন ছিলো আর আমার স্বপ্ন? আমার স্বপ্ন কে যে তোরা ভেঙে দুমড়েমুচড়ে ফেলে দিয়েছিস সেই বেলা।
আমার কথা ভেবেছিস তুই কখনো?”

“ আপনার স্বপ্ন? “
মাহরিসা চমকে চায়।
আদ্রিত জবাব দেয় না।নিশ্চুপে চেয়ে রয় দীর্ঘক্ষণ রমণীর ডাগরডাগর হরিণী আঁখিদ্বয়ে।
কথা ঘুরায় দ্রুত।
“ তোর কি মনে হয় তোর বাপ কে আমি ভয় পাই?
চল এখনি চল।এসব লুকোচুরি খেলতে ভালো লাগছে না। চল আজই ওসমান ভিলায় নেব তোকে। বিয়ে করেছি লুকোচুরি খেলতে নয়।হা-ডুডু খেলতে।”
তীব্র আক্রোশে আদ্রিত অর্ধাঙ্গিনীর হাত টানে।
মাহরিসা আঁতকে উঠে।
মনে হচ্ছে আদ্রিত আজ তাকে কিছুতেই ছাঁড়তে রাজী নয়।ভয়ে গলা,মুখ শুকিয়ে তার এতটুকুনু হয়।
“ এখনি নয় আদ্রিত ভাই… প্লিজ.”
“ বাট হুয়াই,সমস্যা কি তোর? কিসের সমস্যা বল? তোর হাসবেন্ড কে মুর্খ মনে হয়? বেকার? নেশাখোর? কোনটা?”
মাহরিসা মাথা নাড়ায়।

“ এখনি বলতে চাইনা।”
“ ইগনোর করছিস কেন? আমার সামনে ঠাস ঠাস করে দরজা লাগাস তুই এত সাহস দিয়েছে কে তোকে? তুই বুঝিস না আমি কি চাই? বুঝিস না আমার চোখের ভাষা? সব মুখে বলতে হবে? তুই বুঝিস না ওসব আবেগের কথা আমার আসে না।আমাকে মানায় না ওসবে।বুঝিস না তুই মেরিগোল্ড?”
মাহরিসা কেঁপে উঠে।প্রত্যেকবার মেরিগোল্ড ডাকটায় অদ্ভুত শিহরণ জাগে মাহরিসার হৃদয়ে।
এত সুন্দর নাম যে নিজ অর্ধাঙ্গিনীকে দিতে পারে, এত গভীর অনুভুতি মিশ্রিত স্বরে যে ডাকতে পারে সে কেন নিজ অনুভূতি শেয়ার করে পারে না?কেন?”
“ জবাব দে কেন ইগনোর করছিস। আমার সম্পদ আমাকে দেওয়ার থেকে বঞ্চিত করতে পারিস না তুই, আমি দেইনি তোকে সেই অধিকার।”

গভীর চোখে তাকায় আদ্রিত।
কোমরে থাকা আদ্রিতের হাতের বাঁধন শক্ত হয়।কেঁপে উঠে মাহরিসা।
তার আদু ভাইয়ের চোখের ভাষা বুঝতে একদমি অসুবিধা হয় না তার।
“ বাবা-মায়ের অগোচরে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাইনা আদ্রিত ভাই।”
আদ্রিত ঠোঁট কামড়ে হাসে।
এগিয়ে আসে অর্ধাঙ্গিনীর পানে।কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস করে সুধালো,
“ হোয়াট ডু ইউ মিন বাই শারীরিক সম্পর্ক মেরিগোল্ড? “
মাহরিসা থতমত খায়।
কি জবাব দেবে সে এখন?
অসভ্য ডাক্তার যে লাগামহীন পাগলা ঘোড়া সেজেছে ইদানীং। এর হেতু কি হতে পারে?সে? নাকি অন্য কোনো জাদু মন্ত্র?

“ বল? তুই কি চাইছিস তোর বাপের সামনে তোকে আমি চুমু খাই?”
মাহরিসা মুখ হা হয়ে গেল চরম বিস্ময়ে।তার অনুভূতি লিখে প্রকাশ করা দায়।এতটা অসভ্য, নেগেটিভ মাইন্ডের কি করে হতে পারে একটা মানুষ।
“ ওকে। ফাইন।আজ রাতেই চুমু খাবো তোর বাপ…”
বাকি কথাটুকু শেষ করতে দেয় না মাহরিসা। দু হাত দিয়ে চেপে ধরে সে আদ্রিতের মুখ।
মুখে বিরবির করে,
“ অসভ্য,অসভ্য, অসভ্য, ফেল্টুস,ডাক্তার বর ।”

কাশফি নীলাদ্র’র থেকে একটু খানি দূরে দূরে থাকছে।এমন নয় সে তার নীল সমুদ্র কে ইগনোর করছে।উহু এমনটা মোটেও নয়।
মূল কথা সে লজ্জা পাচ্ছে। সেদিন হুট করে তার মাঝে লজ্জার উদয় ঘটেছে। তারা উড়তে শুরু করেছে ডানা মেলে।তারা আর থামাথামির নাম নিচ্ছে না।কি মুশকিল।
এই বেয়াদব লজ্জা গুলোকে কি করবে সে এখন।
নীলাদ্র’র সেই রাজকুমারের গল্পের পরবর্তী টুকু জানতে তীব্র ইচ্ছা থাকলে লজ্জারাঙা হৃদয় তার কথা শুনে সারা দিচ্ছে না তার কি দোষ।
ক্যামপাসে বসেছিল তিন বান্ধবী। অদিতি নিষ্প্রাণ ভঙ্গিতে নাওমীর গায়ের সঙ্গে মাথা এলিয়ে বসে।
নাওমী মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তিত।
সময়কাটে খানিকক্ষণ। রোদ্দুরের প্রখরতা বাড়ে সমানতালে।
জাওয়াদ এগিয়ে আসে ক্যামপাসে দাঁড়িয়ে থাকা নাওমী, অদিতি আর কাশফির পানে।

“ নাওমী তোমার কনটাক্ট নম্বর বলো।”
নাওমী বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে চেয়ে জাওয়াদের নির্লিপ্ত বার্তায়।
ইয়া খোদা এই জাওরাটা এবারে তার বান্ধবী কে ছেড়ে তার নম্বর কেন চাইছে।
মতলব কি এই প্রফেসরের।
লক্ষণ তো সুবিধার নয়।প্রথমে তার বান্ধবী এরপর সিনিয়র আপু। এখন সোজা সে? আয়হায়।
নাওমী চোঁরা চোখে চায় জাওয়াদের দিকে।
জাওয়াদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার পানেই চেয়ে।
তার পাশে অদিতি মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে।
জাওয়াদ এই পর্যায়ে ধমকে উঠলো,
“ কি সমস্যা নাওমী।প্রফেসরের কথা কানে যায়নি।অভদ্রতা কেন করছো।”
নাওমী থতমত খায়।অগত্যা তাকে নম্বর দিতেই হয়।
জাওয়াদ চলে যায়।পাঁচ মিনিট পর তার ফোনে মেসেজ টোন বেঁজে উঠে।
মেসেজ ওপেন করে প্রফেসর জাওয়াদের অনাকাঙ্ক্ষিত মেসেজের দিকে চোখ বড় বড় করে চেয়ে সে।
এই জাওরা ব্যাডায় তো বহুত জাওরা।
গাছেরও খায়,তলার ওও কুড়াতে চায়।আশ্চর্য।

ভার্সিটির সামনে এসে সুজন নিজ বাইক থামায়।
এদিকটা দিয়ে যাচ্ছিলো।ভাবলো একবারে মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই যাক।
গেটের সামনে বাইক থামাতেই তার বাইকের সামনে একটি সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ ছিটকে এসে পড়লো।
সুজন চোখ বড় বড় করে চাইলো।
পাশে তাকিয়ে দেখলো।
বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা অসভ্য। তার আশেপাশে আরো মেয়ে-ছেলে।
সুজন বিরবির করে,
“আজ কালকার মেয়ে-ছেলে গুলো এত অসভ্য, অভদ্র হয়েছে।দেখ কি রকম তার মুখের উপর সিগারেট টা ছুঁড়ে মারলো।
আবার মেয়ে -ছেলে সঙ্গে করে দাঁড়িয়ে দেখ।”
সুজনের ভেতরকার সত্তা হইহই করে উঠলো,

“ কেন রে হতভাগা পান্ডার বাপ তোর মেয়ে-ছেলে বন্ধু ছিল না বুঝি? তোরা আড্ডা দিস নি একসঙ্গে কলেজে?”
“ তুই বেশি বুঝিস না আত্তা।আরে আমাদের জেনারেশন আর এখনকার জেনারেশন কি আর এক হলো নাকি।আমাদের সময়কার বন্ধুত্বের জোড় কতখানি ছিলো জানিস? আমরা বন্ধুরা এখনো আলাদা হইনি। আর এরা? কেউ গাড়ির নিচে পরলে তাকে হসপিটালের না নিয়ে ফেলেই চলে যাবে। এই হচ্ছে এখনকার বন্ধুত্বের জোড়।এমন বন্ধুর দরকার টা কি।”
“ হ্যাঁ তুই তো সব জানিস।সব বুঝিস।তাই তো তোর ছেলে এখন তোর মতো ভালোবাইসা ও অবুঝের ভাণ ধরে পরে থাকে।
সবকটা হয়েছে বাপের মতন।”
সুজন ভীষণ করে হুমকি-ধামকি দিয়ে তার ভেতরকার সত্তাকে থামানোর চেষ্টায়।
সুজন বাইক থেকে নেমে এগিয়ে গেল দলটার দিকে।
নীলাদ্র’র দিকে আঙুল তুলে ধমকে উঠে বলল,

“ এই ছেলে এই, চোখ নেই সাথে? বড়দের সম্মান করতে পারো না? এভাবে মানুষজনের গায়ে সিগারেট ফেলছো।অসভ্য ছেলে।”
নীলাদ্র চোখ তুলে একপলক সুজনের দিকে চাইলো।
নিজ ঠোঁটের দিকে ছেলেটার দৃষ্টি দেখে সুজন থতমত খায়।
“ এই বেয়াদব ছেলে আমার ঠোঁটের দিকে চেয়ে কি দেখছো। “
নীলাদ্র সুজনের আরো কাছে এগিয়ে এসে শ্বাস নিলো।
“ সিগারেট দিনে একটু কমিয়ে খাবেন বুঝলেন তো আঙ্কেল। আপনার ঠোঁট টা খুব বাজে ভাবে পুড়ে গেছে বুঝলেন। কা..লো স্পট পরে গেছে।
আম্মাজান দেখলে কিন্তু ভীষণ রাগ করবে।”
সুজন হতবাক দৃষ্টিতে চেয়ে।ধমকে উঠে,

“এই ছেলে কিসের আম্মাজান।”
নীলাদ্র জবাব দেয় না।
“ আর আম্মাজানের কাছে যাওয়ার আগে মুখে স্প্রে করে নেবেন কেমন। সিগারেটের গন্ধ আসছে ভীষণ।”
“ সাটআপ অসভ্য ছেলে। মা-বাবা শিক্ষা দেয়নি তোমায়? বড়দের সঙ্গে কি করে কথা বলতে হয় জানো না?”
“ দেয়নি তো।আপনি দিয়ে দিন না আঙ্কেল প্লিজ।”
“ বাবা…”
মেয়ের ডাকে সুজন পিছু ঘুরে চায়।
কাশফি নীলাদ্র’র সঙ্গে বাবাকে দেখে শুষ্ক ঢোক গিলে।
নীলাদ্র না জানার ভাণ ধরে,

“ তোমার বাবা কাশি?”
“ এই ছেলে কিসের কাশি?”
“ হুপিং কাশি, সর্দি-কাশি আঙ্কেল, তাইনা কাশি?”
কাশফি অবুঝের ন্যায় মাথা নাড়ায়।
“সাটআপ।বেয়াদ্দব ছেলে। আমার মেয়ের আশপাশে যেন তোমায় না দেখি।সাবধান।”
কাশফি আঁতকে উঠে চায় তার নীল সমুদ্রের পানে।
নীলাদ্র বাঁকা হাসে।
সুজন নিজ বাইকে উঠে নিজ পেছনে বসতে ইশারা দেয় মেয়েকে।
কাশফি বাবার ভয়ে জড়সড় হয়ে পেছনে উঠে বসে।
ভয়ে তার গলা শুকিয়ে কাঠকাঠ।
নীলসমুদ্রর তার বাবার সঙ্গে এত তর্ক করার দরকার টা ছিলো কি? আশ্চর্য।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে চেয়ে রয় নীলাদ্র কাশফির যাওয়ার পানে।
কাশফও আঁড়চোখে পিছু ফিরে দেখতে চেষ্টা করে তার নীল সমুদ্র কে।
নীলাদ্র পুনরায় সিগারেট ধরায়।ঠেসে ধরে নিজ মুখে।সুখ টান দেয়। বিষাক্ত ধোঁয়া ছাড়ে গগনে।
তিয়াশার একদমি ভালোলাগে না নীলাদ্রর আজকের বাড়াবাড়ি।
এই কাশফি মেয়েটাকে নিয়ে নীলাদ্র সবসময় একটু বেশি বেশি বুঝে।
এর কারণ কি।

ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফেরার শেষ ধাপে।
নাওমী করিডর পেরুচ্ছিলো।
“ মিস নাউডুবা চশমিশ দাঁড়াও।এই মেয়ে দাঁড়াতে বলেছি তোমায়।”
পেছন থেকে নীবিড়ের পুরুষালী কন্ঠে নাওমী থামার বদলে হাঁটার গতি বরং বাড়ায়।
“ নাউডুবা চশমিশ তোমায় দাঁড়াতে বলেছি।”
নাওমী দাঁড়ায় না।
মনে মনে নীবিড়ের উদ্দেশ্যে সে হাজারটা গালি ছুঁড়ে।
“ দাঁড়াবো না মহিষের বাচ্চা। তাতে আপনার কি? আপনার কথার তোয়াক্কা করতে এই নাওমীর বয়েই গেছে।
কচু ক্ষেতল গিয়ে গায়ে কচু লাগান অসভ্য, বাদর।”
নীবিড় রাগে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে যায়।কারন ততক্ষণে নাওমী গেট পেরিয়ে রিক্সায় চরে বসেছে।
“ অভদ্র মেয়ে কি ভেবেছে তার থেকে পালিয়ে বাঁচবে? উঁহু একদমি নয়।চশমিশ ভুলে বসেছে সে থাকছে তারই আস্তানায়।”

রাত বাড়ে সেই সঙ্গে বাড়ে নিস্তব্ধতার মনের অস্থিরতা।
ডায়াল করে সাদাফের নম্বরে।সাদাফের ঘুম ঘুম কন্ঠস্বর।
“ এখুনি ওসমান ভিলার সামনে আয়। এখনি মানে এখনি। খবরদার মুখ না ধুয়ে তোর পিচাশ মার্কা মুখশ্রী নিয়ে আমার সামনে আসবি না।অঘটন ঘটে যাবে।”
“ কি সমস্যা? নীরু আমি…”
সাদাফ কে কথা শেষ করতে দেয় না নিস্তব্ধতা ফোন কেটে দেয়।
আলগোছে চুল টেনে ধরে উঠে বসে সাদাফ।
সাদাফ বের হতে গেলে বাঁধে বিপত্তি।
আশা পানি নিতে এসেছিল ড্রয়িংরুমে।
ছেলেকে চুপিচুপি বের হতে দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে।
“ এতরাতে কোথায় যাচ্ছিস রে হতভাগা?”
সাদাফ চমকে পিছু চায়।

“ মা আমি…”
“ ঘরে যা কোথাও যাওয়া হবে না তোর।
“ মা তুমি বুঝতে পারছো না ন.. মানে আমার বন্ধু ওয়েট করছে।”
“ কোনো দরকার নেই এত রাতে যাওয়ার। সকালে যাবে।”
“ যেতে হবে মা।প্লিজ বোঝো।”
সাদাফ প্রকার জোড় করেই আশাকে রেখে বেরিয়ে যায়।
বাইক যখন ওসমান ভিলার সামনে থামে।
দেখতে পায় নীরু ইতোমধ্যে নেমে এসেছে।
“বিয়ের খুব বড্ড শখ হয়েছে তোর তাই না রে সজনেডাঁটার বাচ্চা? “
“ তা তো অবশ্যই। তোর মতো মানুষকে দেখে শেখা উচিত।
তুই বিয়ে করছিস আমার করতে দোষ কোথায় বল?”
“ হোয়াট ডু ইউ মিন বাই তোর মতো।তোর মতো মানে কি হ্যাঁ? তোর মতো মানে কি?”
নিস্তব্ধতা সাদাফের কলার চেপে ধরলো।

“ বিয়ে করার বড্ড শখ হয়েছে তোর তাইনা হুম।তোর বিয়ের শখ আজীবনের জন্য মেটাবো।সামনে আমার মতো একটা দামড়া মেয়ে থাকতে ভার্সিটিতে কচি মেয়ে খোজা হচ্ছে তাইনা? তো আমি বসে বসে বুড়ি হচ্ছি কার জন্য? তোর সালার জন্য ইডিয়েট।বিয়ে করার বড্ড শখ হয়েছে তোর তাইনা হুম।তোর বিয়ের শখ আজীবনের জন্য মেটাবো।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩৫

চল বিয়ে করবো।কচি নয় এই বুড়িকেই তোর বিয়ে করতে হবে।”
সাদাফের কানে যেন কেউ বোমা বিস্ফোরণ করলো।
প্রচন্ড বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে চেয়ে সে নিস্তব্ধতার পানে।
নীরু সাদাফের হাত টানে প্রচন্ড আক্রোশে।
“ আয়। তোর বিয়ের সাধ ঘুচাবো আজ।”

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩৭